#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
ত্রিপঞ্চাশৎ পর্ব (৫৩ পর্ব)
সকাল দশটা, কলেজে ক্লাস করাচ্ছে আহনাফ। বেশ কয়েকবার কল আসলেও ফোন সাইলেন্ট থাকায় সে দেখেনি। গালিব বারে বারে ওকে কল করছে।
রোমি খন্দকারের থেকে আনা ভিডিওটা গালিবকে পাঠিয়েছিল আহনাফ। আহনাফের সন্দেহের উপর ভিত্তি করে শাফিনের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ইন্সপেক্টর ফজলে রাব্বি, জেলার বিল্লাল হোসেনকে গ্রে°ফ°তার করা হয়েছে। ওরা অপ°রাধ স্বীকার করেছে, ওদের ভাষ্য অনুযায়ী শাফিন এখন কুমিল্লাতে আছে এবং সে নার্গিস পারভিন ও রোমি খন্দকারকে না মে°রে কিছুতেই শান্ত হবে না, আর সাথে মৃত্তিকা তো আছেই।
ক্লাস শেষে বেরিয়ে ফোনে এতোগুলো কল দেখে একটু চিন্তিত হয়ে পড়ে আহনাফ। আবার দুইটা ভয়েস ম্যাসেজও আছে।
আহনাফ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ম্যাসেজ দুটি চালু করে,
“শাফিন কুমিল্লাতে আছে, জেলার বিল্লাল হোসেনকে আজকে ঠাকুরগাঁও থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। দুজন ক°ড়া নজরে আছে, পালানোর কোনো রাস্তা খোলা নেই। আজকে র্যাবের দুইটা টিম শাফিনকে খুঁজতে কুমিল্লা যাবে, তবে আপনি আর আপনার ফ্যামিলি একটু সাবধানে থাকবেন। নার্গিস পারভিন ও রোমি খন্দকারের জীবনও ঝুঁকির মধ্যে আছে।”
ম্যাসেজগুলো শুনে আহনাফ একটু থম মে°রে যায়। শাফিন কুমিল্লায় আছে, এইটুকু ওর চিন্তার জন্য যথেষ্ট।
ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস নিচ্ছে সারাহ্। বড় আবায়া পড়ে নিজের শরীর আবৃত করে রেখেছে। আহনাফ এসে ক্লাসরুমের দরজা বরাবর বারান্দার গ্রিলে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।
সারাহ্ ওকে দেখেনি, সে মনোযোগ দিয়ে একটা গাণিতিক সমস্যা সমাধান করছে। ক্লাসের কয়েকজন ছাত্রী ওকে খেয়াল করে৷
একজন সারাহ্-কে ডেকে বলে,
“ম্যাম, স্যার এসেছেন।”
সারাহ্ কপাল কুঁচকে দরজার দিকে তাকালো। তারপর ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলে,
“এখন কি স্যারের ক্লাস?”
“নো ম্যাম।”
সারাহ্ ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসে বলল,
“এখানে আসার কি দরকার?”
“আমার সাথে বাসায় যাবে, আগে একদম কলেজ থেকে বের হবে না।”
আহনাফ চলে যেতে নিলে সারাহ্ ওকে ডেকে বলে,
“কেন?”
“যা বলেছি শুনো।”
সারাহ্ ক্লাসে ফিরে আসে। আহনাফের এসব আচরণ ওর একদম অদ্ভুত লাগে। হুট করে একটা কথা বলল আর ওকে তাই করতে হবে।
______________________________________
মমতাজ বেগমের সাথে দেখা করতে এসেছে মৃত্তিকা। মমতাজ বেগম বিছানায় শুয়ে আছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি অসুস্থ।
“বড়মণি, কি হয়েছে?”
মমতাজ বেগম ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
“ঘুম হচ্ছে না, তাই মাথাব্য°থা করছে অনেক।”
মৃত্তিকা গিয়ে উনার পাশে বসে। একমাসের বেশি সময় ধরে উনাকে প্রতিদিন ঘুমের ওষুধ খাওয়াচ্ছে মৃত্তিকা। একটু একটু করে মাত্রা বাড়িয়েছে, আর এটা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে এখন তা ছাড়া উনার ঘুমই হয় না। দুইরাত না দেয়ার ফলে উনি ঘুমাতে পারেনি।
মৃত্তিকা সহানুভূতির সুরে বলে,
“চা করে দিবো?”
“হ্যাঁ, দাও।”
মৃত্তিকা গিয়ে চা করে আনে। তবে এবারে তাতে আর ঘুমের ওষুধ মেশায়নি। মমতাজ বেগম চা পান করা শুরু করে।
মৃত্তিকা উনার মুখোমুখি বসে বলল,
“বড়মণি, একটা কথা বলি?”
“কি?”
মৃত্তিকা শেষবারের মতো চিন্তা করে, তারপর বলে,
“আমার মনে হচ্ছিলো, তাই কি°ট দিয়ে টেস্ট করেছি। (একটু থেমে) আমি প্রেগন্যান্ট বড়মণি।”
মমতাজ বেগম চা খাওয়া বন্ধ করে দেন। দরজার ওপাশ থেকে তানজিমও কথাটা শুনে। তানজিমের অবাক লাগে বিষয়টা। মমতাজ বেগমকে নিয়ে এতো কথা জেনেও মৃত্তিকা কি করে তাকে এটা বলতে পারলো?
মমতাজ বেগম মৃত্তিকার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক যেন তার পড়ছে না। তারপর হেসে বলল,
“এ তো খুশির খবর, গো°মড়া মুখে বলছো কেন?”
“ভ°য় হচ্ছে।”
“কেন ভ°য় নেই? এটা স্বাভাবিক। (একটু থেমে) ইমতিয়াজ জানে?”
মৃত্তিকা মাথা নেড়ে বলল,
“না।”
“তবে এখন জানিও না, কিছুদিন পর জানাও।”
“জি।”
তানজিম দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। কিছুদিন পর জানাবে কেন? কি হবে এই কিছুদিনে? তানজিম জানে শাফিন আসবে, পশুর মতো আবারো আ°ক্র°মণ করবে মৃত্তিকার উপর।
______________________________________
তিনদিন পর, শাফিনকে পাওয়া যায়নি, খোঁজাখুঁজি করেও না। তবে দেশের এয়ারপোর্ট ও অন্যান্য পোর্টে ক°ড়া নজরদারি চলছে। গালিব আর কাউকে হাতছাড়া করতে দিবে না। এতে আ°ইনের উপর থেকে ভরসা মানুষের উঠে যাবে।
“মৃত্তিকা প্রেগন্যান্ট।”
“তাতে এখন আমার কিচ্ছু আসে যায় না। এই মেয়েটা আমার লাইফটা শেষ করে দিয়েছে। এই মেয়েটাকে মা°রতে গিয়েই প্রথম আমি সন্দেহের জালে পড়েছি।”
“যা হয়েছে, হয়ে গেছে। রোমির কোনো খবর?”
“না, রোমি বাসায় নেই। কোথায় গেছে তা জানা যায়নি। (একটু থেমে) নার্গিসের বাসার আশেপাশে পাহারা জোরালো করেছে আহনাফ।”
“তারমানে তোমাকে ধরার সকল কাজ করা হয়েছে?”
“হুম।”
মমতাজ বেগম ও শাফিন ফোনে কথা বলছে। শাফিন একপ্রকার ফেঁ°সে গেছে, নিজেকে বাঁচানোর এতোদিনের সকল চেষ্টা তার ব্যর্থ হওয়ার পথে।
“অপরূপা কোথায়?”
মমতাজের কথায় শাফিন জবাব দেয়।
“হয়তো ধরা পড়েছে, জানা নেই। রাব্বি, বিল্লাল সবাইকে ধরে ফেলেছে।”
“আমি এখনো বাইরে আছি। এক কাজ করি, আমরা দুজন বেনাপোল দিয়ে ভারতে চলে যাই। আপাতত এছাড়া কোনো উপায় নেই।”
“বেনাপোল দিয়ে যাওয়া যাবে না, টেকনাফ হয়ে মিয়ানমার যাবো আমরা।”
“আচ্ছা, যেভাবেই যাই, আমাকে জানাও।”
“তুমি বাসা থেকে বের হওয়ার বন্দোবস্ত করো।”
খুব স্বাভাবিক স্বরে কথা বলে মমতাজ বেগম ফোন রাখে, উনার ভাব দেখলে মনে হতে পারে এসব কোনো অন্যায় নয় আর উনি যা করেছে সবই ঠিক।
এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠে। দরজা খুলে দেখে, মৃত্তিকা এসেছে।
মৃত্তিকা সোফায় বসে বলল,
“বড়মণি, কোথাও যাচ্ছিলে নাকি?”
ওর কথায় বড়সড় রকমের ভনিতা দেখা যাচ্ছে। মমতাজ বেগম মাথা নেড়ে বলল,
“না তো।”
মৃত্তিকা ব্যাগ থেকে একটা সিরিঞ্জ বের করে বলে,
“ভেবেছিলাম কা°টা দিয়ে কা°টা তুলবো। এখন দেখলাম কা°টা দিয়ে কখনো কা°টা তোলা যায় না, কা°টা তুলতে অন্য যন্ত্রের দরকার হয়।”
মমতাজ বেগম কপাল কুঁচকে বলল,
“মানে? কি বলছো তুমি এসব? আর এই সিরিঞ্জ দিয়ে কি হবে?”
আর কিছু বলতে পারে না, উনার হাতে মৃত্তিকা সিরিঞ্জ ঢু°কিয়ে দেয়। এখানে শরীর অবশ হওয়ার এনে°স্থি°সিয়া ছিল, মমতাজ বেগম আর নড়াচড়া করতে পারে না।
“ভিতরে এসো।”
মৃত্তিকার কথায় তিনজন মেয়ে ভিতরে আসে। ওরা মমতাজ বেগমকে তুলে নিয়ে যায়।
পল্লবীর বাসায় এনে ফেলে উনাকে। পল্লবী জানে এসব। সে মৃত্তিকাকে ঘুমের ওষুধের নাম বলেছিল এবং আজকের এনে°স্থি°সিয়াটুকু উনি দিয়েছে। তিনজন মেয়ে নার্স, পল্লবীর কথায় এইটুকু সাহায্য করেছে।
“অনেক সুযোগ দিয়েছি আর তুমি ক্রমাগত তার অপব্যবহার করেছো। যাক অবশেষে তো একটু কাজে লাগবে।”
এখন অপেক্ষা চলবে কখন মমতাজ বেগম স্বাভাবিক হয়। কারণ শাফিন আর পরিবারের পূর্ব রহস্য সম্পূর্ণটাই এই একজন জানে।
______________________________________
বিকালে সারাহ্-কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে এসেছে আহনাফ, টমছম ব্রিজের কাছে ডি. এইচ হসপিটালে।
ডাক্তারের কথা অনুযায়ী সারাহ্ শারিরীকভাবে একদম ঠিক আছে, তবে ওর মানসিক যত্ন আরও বেশি নিতে হবে।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসে সারাহ্ মাস্ক পড়তে পড়তে বলে,
“উনি কিভাবে জানলো, আমার মানসিক যত্নেরও বেশি নিতে হবে?”
“আরে (একটু হাসে) ওনাদের এসবের আন্দাজ আছে।”
“না, আপনি কিছু বলেছেন।”
“আরে না, আমি কিছু বলিনি আমি তো চুপই ছিলাম।”
সারাহ্ আশেপাশে তাকাতে তাকাতে একটু দূরে ডাক্তার আরিফাকে দেখে আহনাফকে টে°নে বলে,
“ওই যে ডাক্তার আরিফা।”
আহনাফ ওদিকে তাকায় না। সারাহ্-কে বলে,
“তাকিয়ে থেকো না।”
আহনাফ সিএনজি আনার অজুহাতে রাস্তা পার হয়ে অপরদিকে যায়। ওকে আসতে দেখে আরিফা জোরে জোরে হাঁটতে শুরু করে, তবে পালাতে পারে না। আহনাফ তাকে ধরে ফেলে।
র্যাবের তিনজন কর্মকর্তা সিভিল পোশাকে কাছেই ছিল। আহনাফ কাউকে ধরেছে দেখে উনারা এগিয়ে আসে।
“ডা. আরিফা? নজর রাখছেন আমাদের উপর?”
আরিফা হাত ছাড়িয়ে নিয়েও যেতে পারে না। র্যাব সদস্যরা সামনে চলে আসে। আহনাফ বলে,
“উনাকেও নিয়ে যান, শাফিনের আরেকজন যাসুস।”
এখান থেকে র্যাব সদস্যরা সোজা আরিফাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এই কে°ইসের অপ°রা°ধীর অভাব নেই, এতো মানুষ মিলে কি এমন দরকারে নিরীহ জীবনগুলো শেষ করেছে?
আহনাফ সিএনজি নিয়ে সারাহ্-র কাছে এসে বলে,
“এখানে আর কত কত মানুষ আছে, তা এক আল্লাহ্ই ভালো জানে।”
সারাহ্ আলতো করে মাথা নাড়ে। সিএনজিতে বসে সারাহ্ বলে,
“আপনার মনে হয় শাফিন ধরা পড়বে?”
“অবশ্যই ধরা পড়বে।”
“এসব তো আগেও ট্রাই করেছে।”
আহনাফ ওকে দিকে তাকিয়ে বলল,
“তখন ওই অফিসাররা বাইরে ছিল, আর এখন তাদেরকেই আগে ধরা হয়েছে। (একটু থেমে) আর শাফিনকে পাওয়া মাত্রই ক্র°স ফা°য়ার করা হবে।”
সারাহ্ পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারে না। রোমি খন্দকারের কথাগুলো মিলালে, শাফিনকে আর যাই হোক দেশের আ°ইন আদালত দিয়ে কিছুই করা যাবে না। উনারা চেষ্টা করে দেখেছে, ব্যর্থ হয়েছে এবং এই কারণেই এতোদিন লুকিয়ে রেখেছে।
______________________________________
“তুমি বুঝদার মানুষ, আমার মামের বয়সী। সত্যি বলতে মামের পর তোমাকে আমি তার স্থানই দিয়েছিলাম। তবে তুমি সেটা মর্যাদা রাখোনি বড়মণি।”
মমতাজ বেগম চোখ তুলে মৃত্তিকার দিকে তাকায়। মৃত্তিকা হাতঘড়িতে দেখে রাত আটটা বেজেছে। কপালে চুলগুলো সরিয়ে হিজাব বাঁধতে বাঁধতে বলে,
“বড়জোর আজকের রাতটা সময় দিতে পারি। তুমি চিন্তা করে দেখো।”
একটু নিচু হয়ে মমতাজ বেগমের মুখের সামনে গিয়ে বলে,
“মৃত্তিকার হিং°স্র°তা তুমি দেখো না, প্লিজ। তুমি দশজনকে খু°ন করতে পারো, কিন্তু তোমার একজনকে মা°রতে আমার কলিজা ছিঁ°ড়°তে হবে। তোমাকে খুবই ভালোবাসতাম, এটা তোমার থেকে আশা করিনি আমি। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে তুমি এসবে ছিলে।”
মমতাজ বেগম এখন একটু ঢুলছে, বোঝা যাচ্ছে এনে°স্থি°সিয়ার প্রভাব এখনো কিছুটা রয়ে গেছে। মৃত্তিকা বুঝতে পারে উনার বয়সের তুলনায় এনে°স্থি°সিয়া বেশি পড়েছে।
মৃত্তিকা খাবারের প্লেট এনে মমতাজ বেগমকে একটু একটু করে খাইয়ে দেয় আর বলে,
“বো°মের পরিবর্তে গ্রে°নেট যেমন মা°রতে পারি, তেমন ফুলও ছুঁ°ড়তে পারি। এতো কিছু না করলে বুঝি হতো না?”
“তাহসিনা-তাহমিনা, ওরা আমার সংসার নষ্ট করেছে।”
মৃত্তিকা প্লেটটা পাশে রেখে বলল,
“ওরা কিভাবে তোমার সংসার নষ্ট করেছে?”
“লুৎফরের সাথে আমি ভালোই ছিলাম। আমাদের সংসারের সব ছিল। একটা জিনিসের কম ছিল, তা হলো সন্তান। আমি অপেক্ষা করতে চেয়েছিলাম, চায়নি লুৎফরের মা। ওকে আরেকটা বিয়ে করিয়ে দিলো।”
একটু ঢুলে পড়তে নিলে মৃত্তিকা মমতাজ বেগমকে ধরে সোজা করে বসিয়ে পানি খাওয়ায়। মুখে পানির ছি°টা দিয়ে বলে,
“তাহমিনা-তাহসিনা তোমার মেয়ে না?”
“সৎ মেয়ে, লুৎফরের দ্বিতীয় বউ শারমিলির ঘরে বছর না ঘুরতেই তাহমিনা আসে, তারপর আসে তাহসিনা। আমি বুঝতে পারছিলাম লুৎফর শারমিলিকে অন্যরকম চোখে দেখছিলো, যেন দুজনের জন্য দুরকম নিয়ত তার। শারমিলিকে চোখের হারাতো, তারপর আমি শারমিলিকেই হা°রিয়ে দেই।”
“মে°রে ফেলেছিলে?”
“হ্যাঁ, যেনোতেনো ভাবে না (দুহাত তুলে বলে) মুখে বালিশ চে°পে। সবাই ভেবেছিলো সে ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যা°টাক করেছে।”
মৃত্তিকার আর সহ্য হয়নি, আর কোনো খুনের কথা সে শুনতে পারছে না। মমতাজের গালে একটা চ°ড় বসিয়ে দিয়ে বলে,
“মেয়েগুলোকে ঐদিনই মে°রে দিতে, এত কষ্ট তবে পেতো না।”
পল্লবী দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সকল কথা শুনে। মৃত্তিকা উঠে আসার সময় পল্লবীকে দেখে বলে,
“ফুপ্পিজান, ইমতিয়াজকে বা তোমার ভাইকে এর কথা জানিও না।”
পল্লবী মাথা নাড়ায় বলে,
“ঠিক আছে জানালাম না। তবে লুকিয়ে কয়দিন লাগবে?”
“আগে আমি শাফিনকে চাইছি। সে শীঘ্রই আসবে আমাকে মা°রতে আর তার বোনকে বাঁচিয়ে নিয়ে যেতে।”
মমতাজ বেগম ফ্লোরে পড়ে গিয়ে বলে,
“তুমিও তাহমিনার মত কাঁদবে, চিৎকার করে কাঁদতে, আর এবার আমি সামনে থাকবো।” একই কথা কয়েকবার বলতে থাকে মমতাজ।
মৃত্তিকা বাইরে আসলে পল্লবী ওর পিছু পিছু এসে বলে,
“মিউকো, প্রেগন্যান্সির মি°থ্যা খবরটা ইমতিয়াজ জানলে কিন্তু…”
কথা শেষ না করেই একটু ইতস্তত বোধ করে হাত নাড়ায় পল্লবী।
“ও জানবে না, মমতাজ এখানে আর শাফিন নিশ্চয়ই ইমতিয়াজকে জানাবে না।”
“সব ভালো থাকলেই ভালো। আমি চাইনা তোমার সংসারে কোনো সমস্যা হোক।”
মৃত্তিকা মুচকি হাসে। “তোমার সংসার” কথাটা খুব সুন্দর লেগেছে।
মৃত্তিকা বাসায় আসার বেশ কিছুক্ষণ পর ইমতিয়াজ আসে। মৃত্তিকা অ্যাডভোকেট বিথীর সাথে কথা বলছে। তার এখন আর কিছু জানার নেই, শাফিন কোথায়, কি করছে, কিছু না। কারণ মৃত্তিকা জানে শাফিন ওর কাছেই আসবে। মৃত্তিকা শুধু জানছে, বিথীর কাছে শাফিনের বি°রুদ্ধে আর কোন কোন প্রমাণপত্র আছে।
ইমতিয়াজ মৃত্তিকার পিছন থেকে চোখ ধরে বলে,
“সারপ্রাইজ আছে।”
মৃত্তিকা হেসে ওঠে,
“কি সারপ্রাইজ শুনি?”
“বললে নষ্ট হয়ে যাবে। আমার সাথে এসো।”
চোখ ধরেই মৃত্তিকাকে রুমে নিয়ে আসে ইমতিয়াজ। ঘাড় ঘুরিয়ে ওদের এসব দৃশ্য দেখে অপরূপা। ওর জীবনটাও তো মৃত্তিকার মতো সাজানো গোছানো হতে পারতো। তবে কেন হয়নি?
মৃত্তিকাকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে ইমতিয়াজ বলে,
“আমি না বলা পর্যন্ত চোখ খুলবে না।”
“ওকে।”
মৃত্তিকার মুখে এখনো সেই অমায়িক হাসি।
ব্যাগ থেকে একজোড়া স্বর্ণের বালা বের করে ইমতিয়াজ। মৃত্তিকার দুহাতে বালা দুটি পরিয়ে দিয়ে বলে,
“এবারে চোখ খোলো।”
মৃত্তিকা চোখ খুলে অবাক হয়। সাধারণত সে স্বর্ণ পড়ে না। দুইকানে ছোট ছোট ডায়মন্ডের দুটি রিং, এছাড়া তার সমস্ত শরীরে বাঙালি মেয়েদের মতো গয়না নেই। সে এসব পছন্দ করে না। তবে আজকে ইমতিয়াজের এই বালা দুটি তার খুব পছন্দ হয়েছে।
মৃত্তিকা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাত নেড়েচেড়ে নিজেকে দেখছে। ইমতিয়াজ ওর পিছনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“সুখ সংবাদ তুমি শোনালে বেশি খুশি হতাম। এমনিতেও খুশি আমি।”
মৃত্তিকাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“নিজের খেয়াল রেখো আর বেবিরও।”
মৃত্তিকার চুল সরিয়ে ঘাড়ে চুম্বন করে ইমতিয়াজ ফ্রেশ হতে চলে যায়। মৃত্তিকার পুরো পৃথিবী এক জায়গায় থেমে গেছে। ইমতিয়াজ যদি জানতে পারে এসব কিছু মিথ্যা, তখন সে কিভাবে সহ্য করবে? তার চেয়ে বড় প্রশ্ন, ইমতিয়াজ জানলো কি করে?
মৃত্তিকা চোখ বন্ধ করে। ইমতিয়াজকে হারানোর ভ°য় তার শরীরের প্রত্যেকটা শি°রা উপশি°রায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
চলবে…..