#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
পঞ্চপঞ্চাশৎ পর্ব (৫৫ পর্ব)
“তাহসিনার সিলেট যাওয়ার আবদারটা মূলত শাফিনের কারণেই হয়েছিল। শাফিন ওকে কিছু ভিডিও দেখায়। তাহসিনা একটু বিলাসিতা পছন্দ করতো, তার ভালো লাগে এসব। তাই একপ্রকার জে°দ ধরেই সে সিলেট যায়।
রিসোর্টে বিয়ের আগের দিন খুব ঝা°মেলা করে তাহমিনা। শাফিনের সাথে দু°র্ব্যবহার করে, আবার ওকে চ°ড় মা°রে। সত্যি বলতে ওদেরকে মা°রার ইচ্ছা তখনও আমার ছিল না। তবে নিজেকে বাঁচাতে আমি শাফিনের প্রস্তাবে রাজি হই।
পার্লার থেকে বের হওয়ার আগে রিপা আমাকে কল দিয়েছিল। বলেছিল, তাহসিনাকে নাকি খুব সুন্দর লাগছে। ওরা খুব আনন্দে আছে, কিছুক্ষণ পরই চলে আসবে।
ওরা যে আসতে পারবে না তা আমি জানতাম। রাস্তা থেকে ওদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়৷ দুইবোনকে মা°রার পরও রিপা অনেকক্ষণ বেঁচে ছিল। শাফিনরা পাঁচজন ছিল। শাফিন, জামিল, দুলাল, কবির, আরেকজন কে ছিল আমি জানি না। রিপা নিজের হাতের বাঁধন খুলে ফেলেছিল, কবিরকে ওখানেই মে°রে ফেলে সে।
তবে তারপর আর রিপা বাঁচে না। তিনজনকে আবারো গাড়িতে তুলে দেয়। কবিরকে উল্টোদিকের গাড়ির ড্রাইভার সাজিয়ে দেয়, একদম পারফেক্ট এ°ক্সি°ডেন্ট লুক আসে৷ কেউ তোমরা বুঝতে পারোনি।”
মৃত্তিকাকে রোমি খন্দকার ও নার্গিস পারভিনের সাথে শাফিনে শ°ত্রু°তা নিয়েও সবটা বলেছে মমতাজ বেগম। তিনটা খু°নের বর্ণনাও করে। মৃত্তিকা শুধু শুনছে আর থেমে থেমে ছোট ছোট প্রশ্ন করছে।
“পঞ্চম মানুষটা কে?”
“জানা নেই আমার।”
মৃত্তিকা আর কিছু জিজ্ঞাসা না করলেও মমতাজ বেগম বলে,
“আমি কখনো চাইনি তাহমিনার ভালো কোথাও বিয়ে হোক। তাইতো ইমতিয়াজের মতো ছেলেকে আমি পছন্দ করেছিলাম। মূলত শাফিন আমাকে ওর খোঁজ দিয়েছিল।”
মৃত্তিকার কপাল কুঁচকে যায়। বলে,
“ইমতিয়াজকে শাফিন আগে থেকে চেনে?”
“হ্যাঁ চেনে। আমি লুৎফরকে রাজি করেছিলাম। ইমতিয়াজের সম্পর্কে অনেক খোঁজখবর নিয়ে যখন দেখলেন ছেলেটা ভালো, তখন উনি তাহমিনা সাথে কথা বলে। তাহমিনারও পছন্দ হয়, তবে ফ্যামিলি না থাকায় তাহমিনা একটু ইতস্তত করে। তবে বিয়ের পর ওদের সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকে।”
মৃত্তিকা ভ°য়ে একটা ঢোক গিলে। ইমতিয়াজ কি শাফিনের সাথে জড়িত? এমন একটা ভ°য়ং°কর প্রশ্ন মৃত্তিকার মনে ঘুরছে।
“তাহমিনার মৃ°ত্যুর পর ইমতিয়াজকে আবারও বিয়ে দিতে চেয়েছিল শাফিন। মেয়েও নাকি দেখেছিল, তবে ইমতিয়াজ রাজি হয়নি। শাফিন কেন এটা চেয়েছিল তা আমাকে জানায়নি।”
মমতাজের কথায় মৃত্তিকা আবারো একটু হকচকিয়ে গেল। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
“শাফিন এখন কোথায়?”
মমতাজ বেগম একটু হাসলেন, বলেন,
“ওকে তোমরা পাবে না। ওর জে°দের কাছে সবাইকে হার মানতে হবে। ও যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছে রোমি আর নার্গিসকে মা°রবে, তারমানে ওরা ম°রবেই। তোমাকে শেষ করার কথা তো আরো আগেই বাবাকে দিয়েছিলাম।”
মৃত্তিকা মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“তোমরা জীবনেও শুধরাবে না?”
মমতাজ বেগম মাথা নেড়ে অন্যদিকে তাকায়। তারপর বলে,
“তোমার প্রেগন্যান্সির কথাও জানিয়ে দিয়েছি। তোমার অবস্থাও তাহমিনার মতো হবে।”
“আমি প্রেগন্যান্ট নই বড়মণি, শাফিনকে ধরার এটাই বড় সুযোগ।”
মৃত্তিকা বেরিয়ে যেতে নিলে মমতাজ বেগম আবারো বলেন,
“কেন? ইমতিয়াজ কি ভালোবেসে স্পর্শ করেনি? মিথ্যা কেন বলতে হলো?”
মৃত্তিকা কিছু না বলে বেরিয়ে যায়। ইমতিয়াজ ওকে ভালোবাসুক কিংবা না বাসুক, ও ইমতিয়াজকে ভালোবাসে। কিন্তু শাফিনের সাথে যুক্ত থাকলে, ওকেও শেষ করতে এক মিনিটও ভাববে না সে।
______________________________________
আজ বৃহস্পতিবার হওয়ায় কলেজ তাড়াতাড়ি ছুটি হয়েছে, এখন মাত্র বারোটা বেজেছে।
বাসায় যাওয়ার পথে সারাহ্ বলে,
“আপনি বলেছিলেন আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন, কিন্তু গেলেন না।”
আহনাফ একটু হেসে বলল,
“পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক, আমরা যাবো।”
“জীবনে তো এমন সময় বহু আসবে, তাই বলে কি ঘরব°ন্দী থাকবো নাকি?”
“ঐশী, জে°দ করো না।”
সারাহ্ মুখ ভে°ঙচিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। আহনাফ হেসে বলে,
“আজকের আকাশটা দেখেছো? সুন্দর না?”
“কোথায় সুন্দর?”
ধ°মক দিয়ে বলে সারাহ্।
“আহা, দেখছো না মেঘলা আকাশ, কি রকম কালো কালো মেঘ থরে বিথরে সেজে আছে? আবার কি মৃদুমন্দ একটা বাতাস বইছে? তোমার মনে হচ্ছে না, আজকের দিনটা খিচুড়ি খেয়ে আরামে ঘুমানোর দিন?”
“ওই আপনি দুইটা কাজই পারেন। কাজের মধ্যে দুই, খাই আর শুই।”
আহনাফ হো হো করে হেসে উঠে, তারপর বলে,
“আজকের দিনটা ঘুমানোর দিন, ঘুরাঘুরি নয়। ঘুরাঘুরির জন্য রোদ ঝলমলে দিনের দরকার।”
সারাহ্-র রাগ তবুও ভা°ঙে না। আহনাফ সিএনজি চালককে বলে,
“মামা, একটু রসমালাইয়ের দোকানের সামনে দাঁড় করিয়েন তো।”
চালক ওর কথা মত একটা মিষ্টির দোকানের সামনে সিএনজি থামায়। আহনাফ নেমে দোকানের ভিতরে যায়, উদ্দেশ্য সারাহ্-র পছন্দের কিছু মিষ্টি কেনা। আজকাল সে মিষ্টি খুব খাচ্ছে।
এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়, একদম হুট করে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হল। সিএনজির পর্দা নামিয়ে দেয়া হয়। সারাহ্ অপেক্ষা করছে আহনাফের জন্য।
হুট করে একজন মাস্ক পরা লোক এসে সিএনজিতে উঠে বসে। সারাহ্ চমকে উঠে বলে,
“পুরো সিএনজি রিজার্ভ করা, আপনি নেমে যান।”
“নামার জন্য তো আমি আসিনি।”
বলেই সারাহ্-র গলার কাছে পি°স্ত°ল ধরে লোকটি।
চালককে বলে,
“সিএনজি চালাও। না হলে তোমার যাত্রী যাবে আর তুমিও।”
প্রাণের ভয়ে সিএনজি চালানো শুরু করে দেয় চালক। আহনাফ দৌড়ে বেরিয়ে আসলো। পেছন থেকে আহনাফ চেঁচিয়ে বলছে,
“থামাও।”
সিএনজি থামলো না, চলে গেল। আহনাফও অন্য আরেকটি সিএনজি নিয়ে পিছু ধরলো, সাথে গাড়ির নাম্বারটাই দেখে রেখেছে।
বৃষ্টি পড়ছে, কুমিল্লা শহর, জ্যাম থাকাটাই স্বাভাবিক। সব সিএনজিতে পর্দা দেয়া, সবই দেখতে একরকম। খুব স্বাভাবিকভাবে সারাহ্-র সিএনজি কিছুক্ষণ পর আহনাফ আর খুঁজে পেল না। কিন্তু সে হাল ছাড়েনি, এদিকওদিক ঠিকই খুঁজে বেড়াচ্ছে।
এদিকে সারাহ্ স্থির হয়ে বসে আছে, যেন কিছুই হয়নি। ওর পাশে থাকা লোকটি বলে,
“তুমি ভ°য় পাচ্ছ না।”
“না তো, এক আল্লাহ্ ছাড়া আর কাউকে ভ°য় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট।”
পি°স্ত°ল দিয়ে সারাহ্-র গলায় খোঁ°চা দিয়ে লোকটি বলে,
“খুব তো বড় বড় কথা বলছো। এখন মে°রে এখান থেকে ধা°ক্কা দিয়ে ফেলে দেই, কে বাঁচাবে তোমাকে? তোমার আহনাফ?”
সারাহ্ মুচকি হেসে বলে,
“আমাকে ওই আল্লাহ বাঁচাবে যে ইউসুফ (আঃ)-কে কুয়া থেকে আর ইউনুস (আঃ)-কে মাছের পেট থেকে রক্ষা করেছিল। আমাকে ওই আল্লাহ বাঁচাবে যে ইব্রাহিম (আঃ)-কে অ°গ্নি°কু°ন্ড থেকে আর ইসমাইল (আঃ)-কে ধা°রালো ছু°রি নিচ থেকে রক্ষা করেছিল। আমাকে ওই আল্লাহ বাঁচাবে যে মক্কার কা°ফের মুশ°রিকদের থেকে আমার নবী মুহাম্মদ (সঃ) কে বাঁচিয়েছিল।”
লোকটি ধ°মক দিয়ে উঠে,
“ভ°য় পাও আমাকে, আমি শাফিন।”
সারাহ্ আবারও হাসে। বলে,
“ফে°রা°উন, নম°রুদ অনেক ক্ষমতাধর ছিল, কিন্তু আজ তারা কোথায়? সুতরাং তোমার মত একটা না, হাজার জন শাফিনও যদি আসে, তবেও আমি ভ°য় পাই না।”
শাফিনের রাগ তড়তড় করে বাড়ে। মাস্ক খুলে বাইরে ফেলে দিয়ে চালককে বলে,
“দ্রুত চালাও, সামনে গিয়ে ডানে যাবে।”
সারাহ্ আড়চোখে এদিক-সেদিক দেখতে লাগলো, সে কোথায় আছে আপাতত বুঝতে পারলো না। শাফিন ওর পাশে বসা, ও জানে শাফিন ওকে গু°লি করে কখনোই মা°রবে না।
“কি চাও আমার কাছে, তাই বলো।”
সারাহ্-র শান্ত কথা শুনে শাফিন পি°স্ত°ল দিয়ে আবারো ওর গলায় খোঁ°চা দেয়। তারপর বলে,
“তোমার মাধ্যমে আমি নার্গিস আর আহনাফকে মা°রবো, সাথে পালাবোও। আমি এতোদিন যেহেতু ধরা পড়িনি, তাই আহনাফের মতো কুঁচো চিংড়ির হাতে ধরা দিবো না।”
সারাহ্ আর কোনো জবাব দেয় না। সে ক্রমাগত দুরুদ শরীফ পড়তে থাকে। তার বিশ্বাস আল্লাহ তাকে এতোটা কষ্ট দিবে না, যা সে সহ্য করতে না পারে।
______________________________________
“ভাইয়া, আম্মুকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।”
তানজিমের ভ°য়ার্ত কণ্ঠ শুনে ইমতিয়াজ চমকে উঠে বলে,
“কোথায় যেতে পারে?”
“কাল রাতেও ছিল না, আজও বাসায় নেই। বাবা খুঁজতে গেছে। আম্মুর সব আত্মীয়-স্বজনের বাসায় ফোনও দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোথাও নেই।”
ইমতিয়াজ একটু ভেবে বলে,
“মামানিকে কল দিয়েছিলে?”
“দিয়েছিলাম, ওখানেও যায়নি। মিউকোপুকে জানিয়েছে, আপুও তাকে খুঁজছে।”
ইমতিয়াজ জমিদার বাড়ির ওই ঘটনার পর থেকে মমতাজ বেগমকে সন্দেহ চোখে দেখে, আবার মৃত্তিকাও নিজের সন্দেহের কথা ইমতিয়াজকে জানিয়েছিল।
“শাফিনের কাছে যায়নি তো?”
ইমতিয়াজের কথায় তানজিম চুপ হয়ে যায়। ইমতিয়াজ আবারো বলে,
“আমার তো তাই মনে হচ্ছে।”
তানজিম সাতপাঁচ না ভেবে সরাসরি ওর সাথে ওর মায়ের কথোপকথন ও অপরূপার যোগাযোগ সম্পর্কে সব বলে দেয়। সব শুনে ইমতিয়াজ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়,
“তবে উনি শাফিনের কাছেই গেছে, আমি নিশ্চিত।”
ফোন রেখে আবারো অফিসের কাজে মন দেয় ইমতিয়াজ। ঠিক এমনসময় ওর পিএ এসে জানায় কোনো একজন সিআইডি অফিসার ওর সাথে দেখা করতে এসেছে।
অনুমতি নিয়ে ভিতরে আসে অফিসার নাইমা। ইমতিয়াজের মুখোমুখি রাখার চেয়ারে বসে বলল,
“বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। তবে আশা করি আপনি আমাদের সাহায্য করবেন।”
ইমতিয়াজ একটু নড়ে চড়ে বসে বলল,
“আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।”
অফিসের নাইমা ইন্সপেক্টর রাব্বি ও জেলার বিল্লাল হোসেনের গ্রে°ফ°তার হওয়ার কথাটি জানিয়ে বলে,
“ওরা দুজন বলেছে ওরা একটা গ্রুপ হয়ে কাজ করেছে। সেই গ্রুপের সবাই মূলত নিজেদের পজিশন নিচ থেকে উপরের দিকে আনার জন্য শাফিনের সাথে যুক্ত ছিল। দুজনের বক্তব্য ছিল এমন যে, টাকা ছাড়া বাংলাদেশে মেধার কোনো দাম নেই, তাই টাকার জন্য ওরা শাফিনকে সাহায্য করেছে। বিনিময়ে টাকা পেয়েছে এবং নিজেদের অবস্থান উঁচু করেছে।”
ইমতিয়াজ মনোযোগ দিয়ে কথা শুনে আর ঘন ঘন ঘাড় নাড়ায়। নাইমা বলে,
“ওদের মধ্যে একটা বড় ভূমিকা রেখেছিল অ্যাডভোকেট বিথী, যে এখন লা°পাত্তা এবং শেষবার অ্যাডভোকেট বিথীর মোবাইলের অবস্থান ও আপনার মোবাইলের অবস্থান একই ছিল।”
এখানে অ°স্বীকার করার উপায় নেই। ইমতিয়াজ বাম হাতে ভ্রূ চুলকে বলে,
“হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। সে আমার কাছেই আছে। আমি তুলে এনেছি।”
“কেন?”
ইমতিয়াজ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“কারন আমি ভেবেছিলাম সে জানে শাফিন কোথায়।”
অফিসার নাইমাও উঠে দাঁড়ায়। বলে,
“ঠিক আছে, আমাকে এখন তার কাছে নিয়ে চলুন। আমরা তাকে নিয়ে যাবো এবং আমাদের মতো করে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।”
ইমতিয়াজ মাথা নেড়ে বলে,
“অবশ্যই তবে তার আগে আপনাদের আরেকটা কাজ করতে হবে।”
“আপনি আমাদের অর্ডার দিবেন?”
“নো, আমি তো অর্ডার দিচ্ছি না, এডভাইস দিচ্ছি।”
নাইমা কপাল কুঁচকে তাকালে, ইমতিয়াজ হাসি হাসি মুখ করে ফাহাদকে ডাকে। ফাহাদ আসলে নাইমাকে বলে,
“আগে আপনারা যাত্রাবাড়ী যাবেন, সেখানে শাফিনের গোপন ঠিকানা আছে। বাসাটা ফাহাদ আপনাদের চিনিয়ে দেবে।”
নাইমা ফাহাদকে জিজ্ঞাসা করে,
“তুমি কি করে ওই ঠিকানা জানো?”
“অপরূপার পিছুপিছু গিয়েছিলাম।”
“অপরূপা কে?”
পাশ থেকে ইমতিয়াজ বলে উঠে,
“শাফিনের দ্বিতীয় স্ত্রী। এতোদিনে এইটুকুও বের করতে পারেননি?”
নাইমা রাগি চোখে একবার ইমতিয়াজের দিকে তাকায়। তারপর বলে,
“ফাইন, আমাদের একটা টিম ফাহাদের সাথে যাত্রাবাড়ী যাবে আর আমি যাবো এডভোকেট বিথীকে আনতে।”
“ওকে।”
ইমতিয়াজ প্রস্তাবে রাজি হয়।
নাইমা বেরিয়ে যায়। নিজের টিমকে দুই ভাগে ভাগ করে দেয় সে। আর এদিকে ইমতিয়াজ মৃত্তিকাকে ফোন দিয়ে নাইমার বাসায় আসার কথাটা জানিয়ে দেয়।
______________________________________
দুজন পুলিশ সদস্যের সহায়তায় সেই সিএনজিটি খুঁজে পায় আহনাফ। তবে সেখানে কেউ ছিল না, সিএনজির চালকও আশেপাশে নেই। তাই যেখানে এটি পাওয়া গেছে অর্থাৎ পালপাড়ার পুরো অংশ খুঁজে দেখা হচ্ছে। এমনকি পালপাড়া ব্রিজের নিচেও খোঁজা হচ্ছে।
এটা যে শাফিনের কাজ তা তো আর বলার অবকাশ নেই। আহনাফ জানে শাফিন এতদিন অনেক প্রকারে সারাহ্-কে তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, তবে পারেনি। তাই আজ হয়তো নিজে এসেছে।
দুপুর যায়, বিকেল যায়, সন্ধ্যা যায়, তবে সারাহ্-কে খুঁজে পাওয়া যায় না। আব্বাস সাহেব বাসা থেকে চলে এসেছেন। উনিও দুশ্চিন্তায় ক্রমাগত ছটফট করে যাচ্ছেন।
তবে আহনাফ এখনো নিজের ধৈর্য ধরে রেখেছে। আশেপাশের প্রতিটা ঘর খুঁজে দেখছে কয়েকবার করে। এমন কোনো জায়গা বাকি রাখেনি, যেখানে সে দেখেনি।
অবশেষে গ্রামের শেষাংশে সারাহ্-র চশমা খুঁজে পায় আহনাফ। সারাহ্ তো চশমা ছাড়া ঠিকমতো রাস্তা দেখে চলতেও পারে না।
ভ°য় পেলেও একটুখানি আশা খুঁজে পায় আহনাফ। সে আরো ভিতরে যেতে থাকে। গাছপালার আড়ালে থাকা একটা নিচু ঘর দেখে আহনাফ থামে।
দরজা খোলা দেখে ভিতরে যায় আহনাফ। ঘর পুরো অন্ধকার। টর্চ লাইট জ্বালিয়ে আশেপাশে দেখতে দেখতে একজায়গায় একটা লা°শ দেখে সে। হঠাৎ করে চমকে উঠে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে আবারো লাইট ঘুরায়।
ঘরের এক কোণায় সারাহ্-কে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখে। আহনাফ ছুঁটে গিয়ে ওকে টে°নে নিজের কোলে আনে।
“ঐশী।”
অপরপাশ থেকে কোনো সারাশব্দ আসলো না। সারাহ্-র নাকের কাছে র°ক্ত, ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে মুখ থেকে র°ক্ত বেরিয়ে আসছে।
আহনাফ যেন দেখছে সেদিনের নিস্তব্ধতা, একটা শান্ত মুখ, চিরদিনের মতো চুপ হয়ে যাওয়া একটা মানুষ।
সারাহ্-র গালে হাত দিয়ে কাঁপা কন্ঠে আলতো করে আবারো ডাকে,
“ঐশী?”
সারাহ্-র নাকের কাছে হাত দেয় আহনাফ। চোখ তার বড় হয়ে আসে। মৃ°ত্যু°পুরীর নিস্তব্ধতা ভে°দ করে একটা চিৎকার রুমে প্রতিফলিত হয়,
“ঐশী।”
পেছন থেকে একটা কন্ঠ আসে,
“তবে এসেই পড়েছো, আহনাফ? তাহসিনার পর তোমার ঐশীও আর নেই।”
চলবে…..
(অনেকে উপন্যাসের এন্ডিং নিয়ে চিন্তিত। বুঝতেই পারছেন উপন্যাস শেষের দিকে। মানানসই একটা এন্ডিং দিবো, ইনশাআল্লাহ।)