কাজল_কালো_ভ্রমর #পর্ব১৪ #Raiha_Zubair_Ripte

0
348

#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব১৪
#Raiha_Zubair_Ripte

সামিরা পড়ার টেবিলে বসে পরিসংখ্যান সাবজেক্টের অংক করার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই পেড়ে উঠছে না,সব সাবজেক্ট এর থেকে এই পরিসংখ্যান সাবজেক্ট টাকে বেশি ভয় পায় সামিরা। শ’খানেক বকছে যে এই পরিসংখ্যান সাবজেক্ট ইন্টারমিডিয়েটে দিছে।

_ ইশ নাইন টেনে কি সহজ ছিলো গণিতের পরিসংখ্যান অংক গুলো আর এগুলো কি কঠিন বাপ্রে।

কথা গুলো বলতেই টেবিলে বইয়ের পাশে রাখা ফোনটা বেজে উঠে। সামিরা বইটা বন্ধ করে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে অভির নাম জ্বল জ্বল করছে ফোনের স্কিনে। মূহুর্তে একরাশ লজ্জা হানা দিলো সামিরার মুখটিতে। কাঁপা কাঁপা হাতে কল টা রিসিভ করে শুধায়,,

_ আসসালামু আলাইকুম।

_ আলাইকুম আসসালাম, তা কি করো এতো রাতে ঘুমাও নি এখনো?

_ আসলে সামনে তো এক্সাম তাই কয়েকটা অংক করছিলাম,কিন্তু পারছি না এই সাবজেক্ট এর কিছুই মাথায় ঢুকে না।

_ আচ্ছা কোন সাবজেক্টে সমস্যা তোমার।

_ পরিসংখ্যানে।

_ তুমি কমার্সের স্টুডেন্ট?

_ হ্যাঁ কমার্সের স্টুডেন্ট আমি।

_ আরে আমি ও তো কমার্সের স্টুডেন্ট সো প্যারা নিয়ো না তোমার এক্সাম হতে তো আরো চার মাস বাকি আছে,আমি শিখিয়ে দিবো তোমায়।

সামিরা অবাক হয়ে বলে,,

_ কিহ! আপনি কি এখন আমায় পড়াবেন নাকি?

_ হ্যাঁ কেনো কোনো সমস্যা নাকি?

_ না তেমন সমস্যা না কিন্তু এটা কি ঠিক।

_ কেনো বেঠিকের কি হলো,আমি চাই না আমার বউ ফেইল করে আমার মান সম্মান ডোবাক তাই সময় থাকতে সেটা হওয়া থেকে আটকাবো।

_ আপনার কি আমায় ফেলটু ছাত্রী মনে হয় নাকি হ্যাঁ শুনে রাখুন আমি এসএসসি তে প্লাস এনেছি হু।

_ এটা তোমার মাধ্যমিক পরীক্ষা না এটা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সো এখানে তোমার ঐ সহজ সহজ পড়া থাকবে না আর তেমন সময় ও পাবে না,এই চার মাস কিভাবে চলে যাবে টের ও পাবা না,আর শোনো যেটা বলার জন্য ফোন দিছিলাম।

_ হ্যাঁ বলুন।

_ কাল একবার বিকেলে বের হতে পারবে বাসা থেকে?

_ কেনো?

_ আসলে তোমায় নিয়ে একটু ঘুরাঘুরি করতাম। সাথে মিহিকা কেও আনতে পারো সমস্যা নাই।

_ আচ্ছা দেখি ট্রাই করবো।

_ আচ্ছা একটা কথা বলি অন্য ভাবে নিয়ো না।

_ আপনি নির্দ্বিধায় বলুন।

_ না থাক রাখি তুমি আর রাত জেগে না পড়ে ঘুমাও আর চিন্তা করো না এই সাবজেক্ট নিয়ে।

_ আচ্ছা রাখি তাহলে।

_ হুম ভালোবাসি বউ জান।

অভির মুখে বউ জান শুনে ফিক করে হেঁসে উঠলো সামিরা। সামিরার হাসির আওয়াজে ভ্রু কুঁচকে আসে অভির।

_ কি ব্যাপার হাসলে কেনো আমি কি কোনো জোক্স বলছি নাকি।

_ এটা কি জোক্সের থেকেও কিছু কম ছিলো নাকি।

_ জোক্স মনে হলো কেনো তোমায় ভালোবাসি তাই বলে দিলাম।

_ আচ্ছা এখন তাহলে রাখি ঘুম ধরছে প্রচুর।

_ আচ্ছা নেক্সট টাইম হাসলে দাঁত গুলো ভেঙে রেখে দিবো।

অভির কথা শুনে নিরবে হেঁসে ফোন রেখে দেয়।

মিহিকা এতোক্ষণ সামিরার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলো। আস্তে আস্তে পা ফেলে রুমে ঢুকে সামিরার দু বাহু ধরে ভয় দেখায়।

আচমকা দু বাহুতে ধরে ঝাঁকাতে ভয় পেয়ে যায় সামিরা পেছন ফিরে মিহিকাকে দেখে বুকে হাত দিয়ে বলে,,

_ ওহ তুই এভাবে কেউ ভয় দেখায় নাকি।

সামিরার বাহু ছেড়ে বিছানায় বসে শুধায়,,

_ হ্যাঁ ভয় তো পাবেই মন তো পড়ে আছে অভি ভাইয়ার কাছে।

_ দূর কি বলিস আমার মন তার কাছে পড়ে থাকবে কেনো।

_ হয়েছে আর চাপা ছেড়ো না আমি সব শুনছি,কাল কই যাবার প্ল্যান করছিলে তোমরা হুমম।

_ তোর চিন্তা কিসের তুই ও যাচ্ছিস আমাদের সাথে তাই গোয়েন্দা গিরি করা বন্ধ কর। যা অনেক রাত হয়েছে ঘুমো গিয়ে।

_ তুমি ঘুমাও তো দেখো বেলকনি থেকে কি সুন্দর ঠান্ডা বাতাস আসছে আর আজকের চাঁদ টা দেখছো কি আলো ছড়িয়ে দিয়েছে, তুমি বরং ঘুমাও আমি একটু ছাঁদ থেকে চক্কর দিয়ে আসি।

_ পাগল না-কি তুই এই মাঝ রাতে কি-না যাবি ছাঁদে ভুতে ধরবে নি।

_ আমি তোমার মতো ভিতু না তুমি ঘুমাও আমি চলি।

কথাগুলো বলে মিহিকা দৌড়ে ছাঁদে চলে আসে।
বেশ কিছুক্ষণ ছাঁদে পায়চারি করে, হটাৎ বাড়ির পাশে গেটের বাহিরে চোখ যেতেই ভ্রু কুঁচকে আসে মিহিকার কেউ একজন গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটিকে বারবার দেখতে চেয়েও দেখতে পারছে না মিহিকা। তাই তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে দরজা খুলে বাহিরে এসে দেখে কোনো গাড়ি নেই আর না আছে কোনো লোক,মনের ভ্রম মনে করে আবার চলে আসে ঘরে।

আহিলের আজ অফিসে কাজ করতে করতে অনেক দেরি হয়ে যায়,তাড়াতাড়ি বাসায় পৌঁছানোর জন্য সর্ট খাট একটা রাস্তা ধরে, গাড়ি চালানোর সময় মিহিকাদের বাড়ি টা সামনে দেখতেই সেদিনের সেই বৃষ্টির দিনের কথা মনে করে গাড়ি থামায়। গাড়ি থেকে নেমে সোজা ছাঁদের দিকে তাকায়। আজকের মতোও কেউ আছে ছাঁদে দাঁড়িয়ে। আজ খুব আকর্ষিত লাগছে তাকে। কি সুন্দর চাঁদ বিলাশ করছে চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে। আচ্ছা মেয়েটা কি ভয় পাচ্ছে না এভাবে চুল ছেড়ে কি কেও এতো রাতে ছাঁদে আসে। এসব ভবনার মাঝেই হঠাৎ দেখে ছাঁদে থাকা সেই মেয়েটি তার দিকে বারবার উঁকিঝুঁকি মারছে। আহিলের আর বুঝতে বাকি রইলে না মেয়েটি বুঝে গেছে আমি তাকে দেখছি,আচ্ছা এ বাড়িতে তো মিহিকা আর সামিরা থাকে,তাহলে এ সামিরা নাকি মিহিকা?

এসব ভেবে আবার ছাঁদে তাকাতেই দেখে মেয়েটি দৌড়ে সিঁড়ির দিকে যাচ্ছে, আহিল আর কোনোদিকে না চেয়ে গাড়িতে ঢুকে তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।

____________

আরুশি নিজের ঘরে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে,এ বাসায় আসার পর একবারের জন্য ও ফোন দিয়ে খোঁজে নেয় নি সাহিল। দু চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে দু ফোটা অশ্রু। এ সে কাকে ভালোবাসলো,তার কাছে কি আরশিয়ার নামের মেয়েটার একটু ও দাম নেই।

আজ এ বাড়িতে আসার পর থেকে টিপু খান কোনো কথা বলে নি আরশিয়ার সাথে। আরুশি বেগম শত চেয়েও কথা না বলে থাকতে পারে নি, মেয়েকে দেখেই দু হাতে জড়িয়ে ধরে। কতোদিন পর আজ মেয়েটাকে দেখতে পারছে। আরশিয়া মা’কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। আরশিয়া মা’কে ছেড়ে টিপু খানের কাছে গিয়ে দুহাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে পা ধরতে গেলে টিপু খান পা সড়িয়ে এনে রুমে চলে আসে। টিপু খান পারছে না আরুশি বেগমের মতো কেঁদে নিজেকে হালকা করতে, কতো ভালোবাসা আদর স্নেহ দিয়ে বড় করলো মেয়েটাকে আর মেয়েটা এভাবে আঘাত দিয়ে চলে গেলো। সেদিনের করা আরশিয়ার অন্যায় এখনো টিপু খান কে তাড়া করে বেড়ায়।

আরমান সাহেবের সাথে মাথা উঁচু করে আর আগের মতো কথা বলতে ইতস্ত বোধ করে। মিহিকাকেও এখন আর আদর করে ডাক দিতে পারে না।

সাদিয়া বাড়ি ফিরে সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। হাতের সামনে থাকা ফুলদানি টা সোজা ছুঁড়ে মারে ফ্লোরে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে থাকা সব কিছু দু হাত দিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দেয়।

সাদমান হোসাইন বাড়ি ফিরে নিজের মেয়েকে দেখতে না পেরে তার স্ত্রী রুমেল কে জিজ্ঞেস করে সাদিয়ার কথা। রুমেলা জানায়,,

_ তোমার মেয়ে এসে থেকেই ঘরের দরজা বন্ধ করে দিছে ডেকে এসেছি কয়েকবার খুলে নি, তুমি গিয়ে চেষ্টা করে দেখো শোনে না-কি তোমার কথা।

সাদমান হোসাইন হাতে থাকা ব্লেজার টা রুমেলার হাতে দিয়ে সাদিয়ার দরজার সামনে চলে যায়। দরজায় কয়েকবার টুকা দেয়। মেয়ের কোনো সাড়া শব্দ না পেলে সাদমান শুধায়,,

_ দেখো সাদিয়া তুমি যদি দরজা না খুলো তাহলে আমি কিন্তু রাতের ঔষধ ও খাবো না আর ডিনার ও করবো না এখন ভেবে নাও কি করবে তুমি।

মিনিট পাঁচেকের মাথায় সাদিয়া দরজা খুলে বাহিরে আসে। মেয়ের এমন বিধ্বস্ত রূপ দেখে সাদমানের বুকে মোচড় দিয়ে উঠে,তড়িঘড়ি করে মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।

একটা ভরসা যোগ্য আশ্রয় পেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে সাদিয়া। মেয়ের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,,

_ কি হয়েছে মা বলো আমায়,তোমার বাবা কে বলবে না তুমি।

সাদিয়া কোনোরকম কান্না থামিয়ে বলে,,

_ বাবা আমি ঐ চিটার টাকে খুঁজে পেয়েছি, আজ দেখেছি ওকে আমি,ও সত্যি আমায় ঠকিয়েছে বাবা,আমি তো ওকে সত্যি ভালোবাসতাম কিন্তু ও কেনো পারলো না আমায় ভালোবাসতে।

সাদিয়ার কথা শুনে মূহুর্তে চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেলো সাদমান হোসাইনের। কটাক্ষ গলায় জানতে চায়,,

_ কোথায় দেখছো তুমি ওকে,ওর সাহস হয় কি করে আমার মেয়েকে ঠকানোর,এর উপযুক্ত শাস্তি ও পাবে।

সাদিয়া তখনকার সমস্ত ঘটনা খুলে বলে সাদমন কে। সাদমান সমস্ত ঘটনা শুনে বলে তা তুমি কি করতে চাইছো ওর সাথে।

_ ও যেমন আমায় ঠকিয়েছে আমি ও সেম ভাবে ওকে হারাবো, ও যেই মরিচীকার পেছনে ছুটছে সেটা ও কখনোই পাবে না,আমি পেতে দিবো না।

________________

সজিব আরামে বসে লেপটপে কারো ছবি দেখছে।ছবিটা জুম করতে নিবে এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠে। ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানে নেয়।

_ হ্যাঁ বল কি খবর ওদিকের।

ওপর পাশের ব্যাক্তি শুধায়,,

_ স্যার আপনায় যে ফটো গুলে পাঠালাম দেখেছেন সেগুলো।

_ হ্যাঁ দেখলাম কেবল।

_ স্যার যেই মেয়েটা আয়ুশ নামের লোকটার কলার ধরছে ঐ মেয়েটার সাথে নাকি বিদেশে চার বছর রিলেশনে ছিলো। মেয়েটিকে না বলে নাকি চলে আসে বিদেশ থেকে আর এখন মিহিকা নামের একটা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছে আয়ুশ নামের ছেলটি।

_ ওরেব্বাস খেলা তো এবার জমে ঘি,খবর টা দিয়ে তুই আমায় খুশি করে দিলি,আয় আমার বাসায় আজ তুই পুরষ্কার পাবি আর সাথে পার্টি ও করবো।

কথাটা বলে ফোন রেখে দেয় সজিব। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখ টা দেখে নিয়ে বলে,,

_ তোর ভাইকে খুব ভালে মানুষ মনে করছিলাম রে আরশিয়া আমি এ তো দেখি আমার থেকেও দু কাঠি উপরে। বলেই উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো সজিব।

#চলবে

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজ থেকে আমার কলেজ খুলেছে,সো আমি প্রতিদিন গল্প দিতে পারবো না, কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে একটু রেস্ট নিয়ে আবার রান্না বান্না করে গল্প লেখা সাথে পড়াশোনা করা হয়ে উঠে না,তাই একদিন পর পর গল্প পাবেন,আশা করি আমার অবস্থা টাও একটু ভেবে দেখবেন আপনারা। হ্যাপি রিডিং আমার পাঠিকারা চুপিচুপি পড়ে যায় কিন্তু রিয়াক্ট কমেন্ট করে না😓😓)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here