#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব৬
#Raiha_Zubair_Ripte
একের পর এক হাঁচি দেওয়ার তালে আছে মিহিকা। কাল বৃষ্টিতে ভেজার দরুন ঠান্ডা জ্বরে নাজেহাল। সামিরা বিছানার এক প্রান্তে বসে মিহিকাকে পর্যবেক্ষণ করছে। মিহিকার কপালে হাত দিয়ে তাপমাত্রা চেক করে সামিরা বিরস গলায় বলে,,
_ এবার হয়েছে না ভালো জ্বরে পড়ে থাকা বিছানায়। তোর আর যেতে হবে না আয়ুশ ভাইকে রিসিভ করতে।
সামিরার কথা শুনে আকস্মিক চমকে যায় মিহিকা।
_ কি বললে তুমি আপাই আয়ুশ ভাই আসছে!কখন,কবে আমায় বললে না কেনো।
_ আরে আরে আগে শ্বাস নিয়ে নে ঠিক মতো। আয়ুশ ভাই আজই আসছে বিকেলে, চাচা রাতে বাসায় ফিরে বললো
সামিরার কথা শুনে মন খারাপ করে বিরস গলায় মিহিকা জানান দেয়।
_ বাবা কাল রাতে বলছে আর তুমি আমায় বললে না আপাই এটা কিন্তু ঠিক না। আয়ুশ ভাইকে কত্তো দিন ধরে দেখি না,ভাইয়ার মুখে কতোদিন কাজল ভ্রমর ডাক শুনি না,ভাইয়া বিদেশ যাবার পর তো একদিন ও আমার সাথে কথা বলে নি।
সামিরা মিহিকার মন খারাপ দেখে মিহিকার পিঠে হাত রাখে।
_ আচ্ছা বাবু রাগ করে না, ভাইয়া তো আজ আসছেই, অভিমান,অভিযোগ সব না হয় তার সামনে তুলে ধরো।
______________
এই আরশিয়া সকালের খাবার কোথায় টেবিলে, খাবার না বানিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছ তুমি। এক্ষুনি নিচে আসো বলছি, আমার যেনো দ্বিতীয় বার তোমায় না বলতে হয়। সকাল সকাল হাক ছেড়ে ডাকলেন আরশিয়াকে সাইফা বেগম।
সাইফা বেগমের ডাকে তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়ে আরশিয়া। বিছানা থেকে উঠে সাহিল কে ডাকতে লাগে আরশিয়া।
ঘুমে ডিস্টার্ব হওয়ায় চোখ মুখ কুঁচকে আসে সাহিলের, পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় সাহিল চোখের সামনে আরশিয়া কে দেখে আরশিয়ার হাত তার শরীর থেকে সরিয়ে দেয়।
_ সমস্যা কি তোমার আমায় ডাকতেছো কেনো?
_ আরে তারাতাড়ি উঠো দাদি ডাকতেছে।
কাঁথা টা আরেকটু ভালোভাবে শরীরে টেনে নেয় সাহিল।
_ তোমায় ডাকতেছে তুমি যাও না আমায় ডাকার কি হলো।
_ দাদি রান্নার জন্য ডাকতেছে আমি তো তেমন রান্না বান্না পারি না। এখন কি করবো।
_ গিয়ে দাদিকে বলো তুমি পারো না, আর তা না হলে আমেনা খালা তো আছেই তার থেকে শিখো গিয়ে, আর ডিস্টার্ব করো না আমায় যাও।
আরশিয়া ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে। ডাইনিং টেবিলের দিক চোখ যেতেই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায় আরশিয়া।
সাইফা বেগম রাগী চাহনি নিয়ে আরশিয়ার দিকে চেয়ে রয়,যেনো এই চোখ দিয়েই আরশিয়াকে ভস্ম করে ফেলবে।
_ তুমি কি জমিদারের বেটি যে এতো সকাল পর্যন্ত ঘুমাও, বাড়ির কাজকর্ম কে করবে? আমাদের কি না খেয়ে থাকতে হবে নাকি।
হুংকার দিয়ে বলে উঠেন সাইফা বেগম।
_ কেনো দাদি আমেনা খালা কি নেই এসবের জন্য।
_ আমেনা আজ থেকে আমায় দেখাশোনা করবে আর বাড়ির সব কাজ তুমি করবে, রান্না থেকে শুরু করে।
_ কিন্তু দাদি আমি তো কিছু পারি না,আমার এসব করার অভ্যাস নেই।
মাথা নত করে জবাব দেয় আরশিয়া।
_ সেটা তুমি জানো পরো কি পারো না,আমার নয়টার মধ্যে টেবিলে খাবার চাই মানে চাই।
বলেই চলে যায় সাইফা বেগম।
আরশিয়া একবার সাইফা বেগমের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়।
এয়ারপোর্টে এসে প্রায় আধ ঘন্টা ধরে দাড়িয়ে আছে মিহিকা,সামিরা,আরমান,আরুশি আর টিপু খান।
মিহিকা অসুস্থ শরীর নিয়েই চলে আসে আয়ুশ কে দেখার জন্য।
মিহিকা আর অসুস্থ শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না, তাই পাশে থাকা রেস্টুরেন্টের সামনে বেঞ্চ টাতে গিয়ে বসে পড়ে।
মিহিকা রেস্টুরেন্টে থেকে একটা কোল্ড ড্রিংক অর্ডার করে সেটা মুখে দিতে যাবে আর তখনই মিহিকার নাম ধরে ডাকে কেউ,আকস্মিক ডাকায় মুখ ছিটকে হাতে থাকা কোল্ড ড্রিংক টা মাটিতে পড়ে যায়।
আশেপাশে তাকিয়ে কাউকেই দেখতে পায় না মিহিকা। বেঞ্চ থেকে উঠে সামিরার কাছে যেতে নিলেই হঠাৎ কেউ মিহিকার হাত টেনে ধরে।
মিহিকা হাতে টান পেয়ে পিছন ফিরে দেখে ছাব্বিশ বছরের একটি ছেলে তার হাত ধরে রয়েছে। ছেলেটির মুখ ভালোভাবে দেখে বুঝতে পারে এ আর কেউ না তার আয়ুশ ভাই। আয়ুশ কে দেখেই মিহিকা এক চিল্লানি দেয়।
মিহিকার চিল্লানো দেখে ঘাবড়ে যায় আয়ুশ, আসেপাশে তাকিয়ে নেয় একবার। শুখনো ঠোঁটটা জিহবা দিয়ে ভিজিয়ে নেয়।
_ কি রে তুই এভাবে চিল্লাচ্ছিস কেনো পাবলিক প্লেসে। লোকজনের হাতে মা’র খাওয়াবি নাকি ভ্রমর।
মিহিকা আয়ুশের হাত ধরে ঝাঁকাতে থাকে।
_ এই আয়ুশ ভাই এটা তুমি আমার বিশ্বাস ই হচ্ছে না! আমার হাতে একটা চিমটি কাটো না।
মিহিকার বাচ্চা সুলোভ আচারন দেখে আয়ুশ নৈঃশব্দে হেঁসে ফেলে। আলতো করে মিহিকার হাতে চিমটি কাটে আয়ুশ।
মিহিকা সত্যি তার আয়ুশ ভাইকে সামনাসামনি দেখছে।
_ আয়ুশ ভাই এটা তুমিই,আমার যে কি আনন্দ লাগছে তোমায় বলে বোঝাতে পারবো না। ইশ জানো তোমায় কত্তো মিস করছি আমি,তুমি তো ভুলেই গেছো তোমার ভ্রমর কে,একটু ও ভালোবাসো না।
মন খারাপ করে কথাগুলো বলে মিহিকা।
মিহিকার কথা শুনে আয়ুশ বোকাবোকা ফেস করে মিহিকা কে বলে,
_ এটা কি সত্যি আমার ভ্রমর আমায় মিস করছে, আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না,যেই মেয়ে আমায় দু চোখে দেখতে পরতো না যার সাথে উঠতে বসতে ঝগড়া লাগতো সে আমায় মিস করছে আই এম তো অবাক।
_ দূর তুমি মজা নিচ্ছো আয়ুশ ভাই,যাও তোমার সাথে কথা নাই।
সামিরা,আরমান,টিপু, আরুশি এসে আয়ুশের পাশে দাঁড়ায়।
_ বাবারে বাবা আয়ুশ ভাই দেশে এসে আমাদের সাথে দেখা না করেই তার ভ্রমরের সাথে প্রথম দেখা করছে।
পিন্চ মেরে কথাটা বলে সামিরা।
সামিরার কথা শুনে আয়ুশ মুচকি হেঁসে বাবা মায়ের কাছে এগিয়ে যায়।
বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে।
_ কেমন আছো তোমরা মা,বাব।
_ এই তো তুই এসে গেছিস অনেক ভালো লাগছে।
কথাটি বলেন টিপু খান।
_ হ্যাঁ রে বাবা এতোদিন পর মনে হলো তোর বাবা মায়ের কাছে ফেরা উচিত, বিদেশে গিয়ে ভুলে যাস যে দেশে ও কেউ আছে,তোর জন্য দিন রাত চিন্তা করে।
কথাগুলো বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলে আরুশি বেগম।
আয়ুশ এগিয়ে মায়ের চোখের পানি মুছে মা’কে জড়িয়ে ধরে তপ্ত শ্বাস ফেলে।
_ সঠিক সময় হয়নি বলে দেশে আসি নি। এখব মনে হলো এটাই সঠিক সময় দেশে ফেরার,নিজের জিনিস নিজের করে নেবার।
আরুশি বেগম ছেলের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলো না। মা’কে ছেড়ে আরমান সাহেবের সামনে গিয়ে।দাঁড়ালেন আয়ুশ।
_ মামা কেমন আছো?
_ এই তো ভাগ্নে ভালোই আছি।
_ এই তোমরা কি এখানেই দাঁড়িয়ে সব কথাবার্তা বলে শেষ করবে নাকি, চলো বাসায় ফিরি।
মাঝখান থেকে ফোঁড়ন কেটে কথাটি বলে সামিরা।
সবাই সামিরার কথায় সায় জানায়, এর মাঝেই আয়ুশ খেয়াল করে এখানে সবাই থাকলেও তার বোন আরশিয়া নেই।
আয়ুশ তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
_ মা আরশিয়াকে দেখছি না কেনো,ও কি আমায় ভুলে গেলো নাকি যে আমায় নিতে আসলো না।
আয়ুশের কথা শুনে উপস্থিত সবার মুখ কালো হয়ে যায়।
#চলবে
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, আর গল্পটি ভালো লাগলে মন্তব্য করে যাবেন। কয়েকদিন ছোট পর্বই পাবেন অনেক ব্যাস্ততার মধ্যে লিখি,বুঝতেই পারছেন দুদিন বাদেই ঈদ বাসায় কাজ কর্ম করতে হয়। আশা করি আমার সিচুয়েশন বুঝবেন,হ্যাপি রিডিং)