কাজল_কালো_ভ্রমর #পর্ব৫ #Raiha_Zubair_Ripte

0
341

#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব৫
#Raiha_Zubair_Ripte

আহিল সোজা বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়িতে গিয়ে বসে,পিছু পিছু অভিও গিয়ে তার পাশের সিটে বসে পড়ে। অভি বসা মাত্রই আহিল খুব স্পিডে গাড়ি চালাতে শুরু করলো। অভি বুঝতে পেরে গেছে আহিল প্রচন্ড রেগে আছে,এখন কিছু বলা মানেই হিতে বিপরীত হওয়া।

বেশ খানেক পর একটা নিস্তব্ধ খোলা মাঠের সামনে গাড়ি এনে থামায় আহিল। গাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা সামনে হেঁটে বট গাছের সাথে থাকা বেঞ্চটা তে গিয়ে বসে।

অভিও গাড়ি থেকে বেরিয়ে সেই বেঞ্চটা তে এসে আহিলের পাশে বসে।

বেশ খানিক নিরবতা থেকে অভি মুখ খুলে,

_ কি রে এবার কি রাগ কমলো তোর, শুধু শুধু এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো।

আহিল ঘাড় টা হালকা কাত করে অভির পানে চেয়ে সরোষ গলায় বলে,,

_ এটা কি রেগে যাওয়ার বিষয় না? দাদি কিভাবে পারলো ঐ রাস’কেল টাকে বাসায় জায়গা দিতে। আমার তো ওকে দেখলেই রাগে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।

অভি নিরেট কন্ঠ গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে,

_ দাদি তো কিছু ভুল করে নি আহিল। তার জায়গায় সে ঠিকই আছে।

আকস্মিক প্রগাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অভির পানে,,

_ তুই কি বলতে চাইছিস দাদি কাজ টা ঠিক করছে। ও একটা মেয়েকে বিয়ের আসরে অসম্মান করে তারই বোন কে কিভাবে বিয়ে করে।

অভি আহিলের পিঠে হাত রাখে,

_ ব্যাপার টা অন্য দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা কর আহিল। দাদি কি করতো সাহিল কে কি বাড়ি থেকে বের করে দিতো,তাহলে ওরা কোথায় থাকতো,খেতো কি ভেবে দেখেছিস একবার ও। দাদি এতোটা নির্বোধ না নিশ্চয়ই কিছু একটা ভেবেই এই কাজ করছে।

আহিল অভির কথা গুলো মন দিয়ে শুনে তপ্ত শ্বাস ফেলে সামনে থাকা ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের খেলা দেখতে লাগলো।

অভি আহিল কে একবার পর্যবেক্ষণ করে ফের শুধালো।

_ আহিল মনে আছে কালকের সেই মেয়ে গুলোর কথা।

আহিল সামনে থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে অভির দিকে প্রশ্নাত্মক চাহনি নিক্ষেপ করলো।

আহিলের চাহনি দেখে অভি আবার বলতে লাগলো।

_ আরে ঐ যে যেই মেয়েগুলো যাদের সাথে কথা-কাটাকাটি হলো। গাড়ির নিচে আরেকটু হলেই চাপা পড়ে যেতো।

_ হ্যাঁ মনে পড়ছে,তো হঠাৎ ওদের কথা বলছিস কেনো বিচ্ছু মেয়ের দল।

_ ওখানে যে মেয়েটার হাতে আইসক্রিম ছিলো,দেখতে শ্যামলা ঐ মেয়েটাই মিহিকা যাকে সাহিল বিয়ে করতে গিয়েছিলে।

আকস্মাত হতচকিত হয় আহিল।

_ তুই জানলি কিভাবে ঐ মেয়ে টাই মিহিকা। আর মেয়েটা তো দেখি পিচ্চি।

_ হ্যাঁ পিচ্চিই বটে কিন্তু প্রখর সাহসী, বুদ্ধিমত্তা। আজ সকালে বললাম না কলেজ থেকে ফোন এসেছিলো।

আহিল হ্যাঁ জানালে অভি আবার বলতে শুরু করে।

_ আমার চাচার মেয়ে রাফিয়া আছে না ওর নামে নালিশ এসেছিলো কলেজ থেকে। রাফিয়া মিহিকাকে কথায় কথায় পিন্চ মেরে কথা বলতো ওর গায়ের রং নিয়ে। তার মধ্যে আবার পরশু বিয়ে ভেঙে গেছে সেটা নিয়ে কথা শুনাতে গেলে মিহিকা ঠাটিয়ে চ’ড় বসায় রাফিয়ার গালে। এই বিষয় নিয়ে আমায় আর মিহিকার বাবা কে ডাকা হয় কলেজে। সেখান থেকেই চিনলাম আজ।

আহিল সামনের দিকে চেয়ে বিরস গলায় বলে,

_ সামনের সপ্তাহে একবার মিহিকাদের বাসায় যেতে হবে। আঙ্কেল আর বাবার মাঝে সব মিটমাট করতে হবে, বাবা এমনিতেই অনেক ভেঙে পরেছে এর মাঝে যদি তাদের সম্পর্ক টা একটু ভালোর দিকে এগোয় তাহলে বাবা অনেক খুশি হবে।

___________________________

প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে মিহিকা তার চাচি কে বলে বলে রাজি করায় তাদের বাসায় যাওয়ার জন্য, প্রথমে মমতাজ বেগম রাজি না হলেও মিহিকার সাথে না পেরে রাজি হয়ে যায় যাওয়ার জন্য।

মিহিকা,আরমান অবশেষে সামিরা আর মমতাজ বেগমকে নিয়ে বাসায় ফিরে। বাসায় ফিরে যে যার রুমে চলে যায় ফ্রেশ হবার জন্য।

বিকেলে পশ্চিম আকাশে ঢলে পরেছে সূর্য, রোদের প্রকোপ ও তেমন নেই, চারদিকে ঠান্ডা বাতাস বইছে আকাশ টাও হালকা মেঘলা, ইদানিং প্রচুর গরম পরে। আজ মনে হয় রহমতে বৃষ্টি নামবে।

ছাঁদের দোলনাটায় বসে আছে মিহিকা, আজকের আবহাওয়া টা তার দারুন লাগছে দমকা হাওয়া তার সারা শরীর কে ক্ষনে ক্ষনে কাঁপিয়ে তুলছে। অবাধ্য চুল গুলো বারংবার মুখের সামনে এসে পড়ছে। চুলগুলো যেন আর বিরক্ত না করতে পারে তাই চুলগুলো কে আলতো হাতে মুঠোয় পুড়ে নিয়ে খোঁপা করে নিলো।

সামিরা মিহিকা কে খুঁজতে খুঁজতে ছাঁদে চলে আসে।

ধপাস করে কেউ দোলানায় বাসাতে মিহিকা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে সামিরা বসেছে।

_ কি ব্যাপার আপাই তোমাকে এতো ক্লান্ত দেখাচ্ছে কেনো।

সামিরা ফুস করে তপ্ত শ্বাস ফেলে।

_ তুই যে ছাঁদে এসেছিস আমায় বলবি না। আমি যে তোকে হন্নে হয়ে খুজতেছি।

মিহিকা দোলনা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ছাঁদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে জবাব দেয়।

_ তুমি কি তোমার ফোন টা চেক করছিলে?

সামিরা হতচকিত কন্ঠে বলে, “না।

_ ফোনটা চেক করলে দেখতে পেতে তোমায় মেসেজ দিয়ে রেখেছি,যে আমি ছাঁদে যাচ্ছি তুমিও চলে আসো।

সামিরা হতবিহ্বল এই কথাটা রুমে গিয়ে বললে কি হতো। কথাটা মনের ভেতরে ই রেখে দিলো সামিরা।

_ তা ছাঁদে এসেছিস কেনো। বৃষ্টি আসতে পারে,চল নিচে যাই।

মিহিকা মাথা নত করে জবাব দেয়।

_ আপাই আমি আজ বৃষ্টি তে ভিজবো প্লিজ তুমি বাবা কে বলো না। বাবা শুনলে রেগে যাবে।

_ চাচা শুনলে যেহেতু রেগেই যাবে তাহলে এমন কাজ করতে চাইছিস কেনো। আর বৃষ্টি তে ভিজে জ্বর আসলে চাচা এমনিতেই যেনে যাবে।

মিহিকা ছাঁদের দেওয়াল ছেড়ে সামিরার সামনে এসে সামিরার দু হাত নিজের হাতের মধ্যে পুরে নেয়। অসহায় কন্ঠে জানান দেয়।

_ আপাই প্লিজ বলো না, আমি বেশিক্ষন ভিজবো না বৃষ্টি তে।

সামিরা মিহিকার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে আলতো করে মিহিকার মাথায় হাত রাখে।

_ আচ্ছা বলবো না তবে বেশি ভিজতে পারবে না নলে রাখলাম।

মিহিকা আচ্ছা বলে সামিরাকে জড়িয়ে ধরে।

_ আমার লক্ষী আপাই তুমি।

হয়েছে ছাড় আর পাম দিতে হবে না। আমি ছাঁদের কাপড় গুলো নিয়ে গেলাম, তুই ও তারাতাড়ি চলে আসিস।

মিহিকা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।

____________________

আহিল অভিকে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে নিজের বাসায় ফেরার পথে ঝোড়ো হওয়া বইতে শুরু করে। রাস্তার ধুলোবালি সব উড়ে বেড়াচ্ছে বাতাসের সাথে সাথে। রাস্তায় মানুষজন ছুটাছুটি করছে বৃষ্টির আগে নিজ নিজ গৃহে ফেরার জন্য। এর মধ্যেই গর্জে বৃষ্টি নামা শুরু করে, লোকজন দৌড়ে দোকান পাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিলো আর কেউ কেউ কাক ভেজা হয়ে বাড়ির পথে হাঁটা দিলো। আহিল একবার রাস্তার দিকে চেয়ে গাড়ি থেকে নামতে চেয়েও কিছু একটা মনে করে আর নামলো না।

গাড়ি স্টার্ট দিলো, গর্জে বৃষ্টি নামার ফলে রাস্তা ঘাট বৃষ্টির পানিতে প্রায় ডুবে গেছে,তার উপর জ্যাম । প্রায় বিশ মিনিট হলো জ্যাম ছাড়ার কোনো নাম গন্ধ নেই। আহিল গাড়িটাকে পেছন ঘুরিয়ে অন্য রাস্তা নেয় বাসায় যাবার জন্য।

মাঝ রাস্তায় এসে হঠাৎ ঘাড় টা কাত করতেই পাশে থাকা বিল্ডিং এ চোখ আটকে যায় আহিলের। ছাঁদে দু হাত মেলে দাঁড়িয়ে ভিজছে এক রমনী। কি সিগ্ধ লাগছে দেখতে পরনে শুভ্র রঙের কুর্তি, চুল গুলো কোমড় অব্দি ছাড়া,অথচ মুখ দেখা যাচ্ছে না। মুখ দেখার জন্য আহিল গাড়ির গ্লাস টা নিচে নামিয়ে মাথা বের করে,তবুও বেচারা আহিল মেয়েটার ফেস দেখতে পারে না।

হঠাৎ এক মেয়ে ছাতা মাথায় করে এসে মেয়েটিকে টেনে ছাঁদ থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়।

আরমান খান অফিসে বসে ফাইল দেখছিলো আচমকা তার মুঠো ফোনটি বেজে উঠায় ফোনটির দিকে তাকায়। ফোনের স্কিনে আপা লিখা দেখে বুঝতে আর বাকি নেই ফোনটা তার আরুশি আপা করেছে।

_ হ্যালো আপা কেমন আছিস?

_ আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?

_ হ্যাঁ আছি ভালো। তা হঠাৎ কি মনে করে ফোন করলি।

_ কেনো রে আমি বুঝি ফোন করতে পারি না তোকে। নাকি আরশিয়ার জন্য আমার উপর রেগে আছিস।

_ না আপা তেমন টা না আসলে আমি কিছু ফাইল দেখছিলাম তাই,,,,

_ আচ্ছা বাদ দে শোন সুখবর আছে আমাদের আয়ুশ দেশে ফিরছে কাল। তুই কিন্তু আসবি এয়ারপোর্টে মিহিকা সামিরাকে নিয়ে।

_ ওহ বাবা তোর ছেলে তাহলে দেশের মাটিতে পা অবশেষে পা রাখবে। আচ্ছা চিন্তা করিস না সময় পেলে সামিরা আর মিহিকা কে নিয়ে যাবো। তা ফ্লাইট কয়টায় আয়ুশের?

_ বাংলাদেশে ল্যান্ড করবে বিকেল চারটার নাগাদ, আচ্ছা রাখি অনেক কাজ বাকি ছেলেটা এতোদিন পর আসবে সব কিছু গুছিয়ে রাখতে হবে।

আরমান সাহেব আচ্ছা বলে ফোন কেটে দেয়।

#চলবে

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের পর্বটা ছোট হবার জন্য দুঃখিত,হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here