শুধু_তোমায়_ভালোবেসে #পর্ব_০৫ #সাদিয়া_রহমান_হাফসা

0
179

#শুধু_তোমায়_ভালোবেসে
#পর্ব_০৫
#সাদিয়া_রহমান_হাফসা

___________________

– ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে সব সিদ্ধান্ত নিতে হয় আদি। এখন বাসায় চল।

– আমি যা ভাবার ভেবে নিয়েছি মামনী। তোমরা মানো আর না মানো এটাই ফাইনাল।

– আশ্চর্য! এমন ভাবে বলছিস যেন আমরা তোর বিপক্ষে! আরে আমরাও তো এটাই চাই। তুই-ই তো রাজি হচ্ছিলি না প্রথমে!

– কিন্তু এখন আমি রাজি।

আঁখি অসহায় চোখে ছেলেমেয়েদের দিকে তাকায়। আফসান আর রাইদাহ বরাবরের মতো আজও তাদের ভাইকেই সমর্থন করছে। ছেলের পাশে চেয়ার টেনে বসে আঁখি।

– তোর বাবা এখন বাসায় নেই। সে ফিরুক তারপর নাহয় ঘটা করে তোদের বিয়ে দেবো! বড় ছেলে তুই আমাদের। এলাকার সাবেক এমপির ছেলে এবং বর্তমান এমপি তুই। এভাবে হুট করে কাজী অফিসে এসে বিয়ে করা কি তোকে মানায়!? লোকে কি বলবে?

তপ্ত শ্বাস ছেড়ে মায়ের হাতদুটো মুঠোবন্দি করে আদনান বললো,

– আমি আরাধনাকে ও বাড়ি থেকে চিরতরের জন্য নিয়ে এসেছি মামনী। এখন ওর একটাই ঠিকানা, আমার বাড়ি। আমার হাত ধরে আমাদের বাড়িতে আরাধনা কোন পরিচয়ে যাবে মামনী?

– আরাধনাও আমাদের বাড়ির মেয়ে। মামাবাড়িতে থাকার জন্যে আবার নির্দিষ্ট পরিচয় লাগে নাকি?

– কিন্তু আমি তো স্বামীর পরিচয়ে ওর হাত ধরেছি। এই হাত আর ছাড়তে পারবো না, পাছে যদি হারিয়ে যায়! ও যে বড্ড কেয়ারলেস! ওকে গোছাতে হবে আমায়।

ঘুমন্ত আরাধনার দিকে চেয়ে কথাগুলো বলছে আদনান। কি নিশ্চিন্তে নিজ শেহজাদার কোলে আরাম করে ঘুমচ্ছে শেহজাদি! মনে মনে হাসে আদনান। তারপর মায়ের হাতে চুমু খেয়ে বললো,

– আমি শুধু আরাধনাকে আমার পরিচয় দিতে চাইছি। আমি জানি নিহাল আহমেদ ঠিক আসবে ওকে ফিরিয়ে নিতে। ফুপ্পির বিশাল সম্পত্তির লোভে সে আসবেই। তখন তোমরা শুধুমাত্র মামা-মামীর পরিচয়ে আরাধনাকে আঁটকে রাখতে পারবে না! আইন এত সোজা না। একটা মজবুত সম্পর্ক আর অধিকার-ই তখন নিহাল আহমেদকে রুখে দাড়াতে পারবে। আর সেটা হলো বৈবাহিক সম্পর্ক, স্বামীর অধিকার। তাই আমি যা করছি আমাকে করতে দাও মামনী। আরাধনাকে গড়ে তোলা হয়ে গেলে পরে না-হয় তুমি সাধ মিটিয়ে আবার আমাদের বিয়ে দিও! আজ বাঁধা দিও না, নইলে তুমি এই মেয়েটাকে আর বাঁচাতে পারবে না।

ছেলের প্রখর বিচক্ষণতা আর যুক্তিসম্মত কথার পিছনে বলতে আর কোনো শব্দ খুঁজে পায় না আঁখি সাখাওয়াত। মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,

– ভালোবেসে ফেলেছিস তাই না?

– ভালোবাসা না দায়িত্ববোধ। ছোটবেলা থেকে আজ অবধি তোমরা আমার কোনো চাওয়া অপূর্ণ রাখনি, তাই সবসময় খুব করে চাইতাম তোমাদের এমন কিছু দিতে যা পেলে তোমরা খুশি হবে। ২৮ বছর বয়সে তুমি মুখ ফুটে আরাধনাকে আমার বউ রূপে দেখতে চেয়েছো, আমি সেই চাওয়া যেকোনো মূল্যে পূরণ করবো। তার সাথে একজন আদর্শ স্বামী হয়ে নিজের স্ত্রীকে সকল ঝড়-ঝাপটা থেকে নিরাপদে রাখবো। দ্যটস্ ইট।

একটুপরই মীর আর ঈশান এসে উপস্থিত হয়। ঈশান বেচারা মুখ গোমরা করে দাঁড়িয়ে আছে। পিএ হওয়ার এই হয়েছে এক জ্বালা। যখন-তখন ডাক পড়ে আর তৎক্ষনাৎ হাজির হতে হয়। আর সেখানে সে তো একটা স্ট্রিক্ট, স্রেইট ফরওয়ার্ড, টাইম মেইনটেইন করে চলা এমপির বিশ্বস্ত পিএ। একটু উনিশ-বিশ হলেই সুনামি, সিডর, আইলা, চিত্রা, ইয়াশ রোহান সব তার উপর দিয়েই বইয়ে দেবে তার স্যার।

এইতো ঘন্টাদুয়েক আগের কথা, ফ্যামিলি প্রোগ্রামে আটকে গিয়েছে শুনে রিল্যাক্স মনে ‘তিতির’কে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিল গোলাপগ্রামের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ঈশানের সমস্ত গোলাপগ্রামকে কাঁটা দিয়ে কবর দিয়ে তাদের রোমান্সের মাঝে আদনান ফোন করে জানায় আধ ঘন্টার মধ্যে যেন কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ের কাগজপত্র রেডি করে। তার আর কি করার! তিতিরকে রিকশায় তুলে সোজা চলে এসেছে কাজী অফিস। রিকশায় উঠার সময় তিতির ঈশানকে শাসিয়ে বলে,

– শোনেন বাচ্চার বাপ! আজকে আপনার খবর আছে।

সেসব মনে পড়তেই ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে ঈশানের। এখানে পৌঁছে এই নিয়ে চার গ্লাস পানি সাবাড় করে ফেলেছে তবুও কিছুতেই তেষ্টা মিটছে না। মনেমনে নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে ঈশান,

– সুপুরুষ হয়ে ভয় পাচ্ছিস? শেইম ওন ইউ ঈশান! বিয়ে করা বউ তোর। কোথায় তোকে ভয় করে ওঠবস করবে তা না উল্টো তুই ভয় পাচ্ছিস! কখনো দেখেছিস মিনি বিড়ালকে বাঘ ভয় পায়!? না কক্খনা। বাসায় গিয়ে তাড়াতাড়ি সব থালাবাসন ধুয়ে ফেলবি, ব্যস! বউ ঠান্ডা তো সব ঠান্ডা।

বীর যোদ্ধাদের মতো সিনা টানটান করে আদনানের সামনে গিয়ে ঈশান বললো,

– স্যার জল্লাদ রেডি। কুরবানির জন্য আপনি প্রস্তুত তো??

আদনান কপাল কুঁচকে রাগান্বিত স্বরে বললো,

– হোয়াট!

সাথেসাথেই জিভ কাটে ঈশান। কি বলতে কি বলে ফেললো! মনের কথা মুখে ফেলেছে আর সেটাও এতগুলো মানুষের সামনে। ফিচেল হেসে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করে বললো,

– ইয়ে মানে কাজী রেডি। আপনাকে আর ম্যামকে ভিতরে ডাকছে। বিয়ের জন্য আপনি রেডি তো স্যার?

ঈশানের করুন পরিস্থিতি দেখে সবাই মুখটিপে হাসছে। বেচারার সাথে পরে কি হয় কে জানে! একেতো রুড বস তারওপর আবার অত্যাচারী বউ। বার্গারের দুইটা বান রুটির মাঝখানে থাকা মাংসের টুকরোর মতো করুন দশা হয়েছে ঈশানের। দুইদিক দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে বেচারাকে একদম চিপকে দিয়েছে।

আদনান মাকে ইশারা করে আরাধনাকে ডেকে তুলতে। আরাধনার মলিন মুখে আলতো হাতে চাপড় দিয়ে ডাকতে থাকে আঁখি। একটু পর তার ঘুম কাঁচা হলো। কিন্তু সে চোখ খুলে না। পুনরায় হালকা ধাক্কা দিয়ে ডাকার পরে পুরোপুরি ঘুম ভাঙলো আরাধনার। চোখ মেলে নিজেকে অচেনা জায়গায় দেখেই ঘাবড়ে যায় কিন্তু পরক্ষণে সামনে আদনানকে দেখা মাত্রই সব ভয় যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। হাসিমুখে আরাধনা বললো,

– তুমি স্বপ্ন ছিলে না? তুমি সত্যিই আছো?

স্থীর নয়নে চেয়ে থাকে আদনান। কেন যেন সে এই ডাগরডাগর চোখের গভীরে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে বারেবার। উত্তর না দিয়েই রাইদাহ্ কে কি যেন ইশারা করলো। ভাইয়ের নিঃশব্দে বলা কথার মানে বুঝে রাইদাহ আরাধনাকে পাশের রুমে নিয়ে যায় বউ সাজাতে। ওরা চলে যাওয়ার পরে আঁখি সাখাওয়াতও বেরিয়ে পরে বাড়ির উদ্দেশ্যে। নতুন বউকে বরণ করতে হবে। কত কাজ! সব তাকেই একা হাতে সামলাতে হবে।

|
|

পাত্রী তৈরি কিন্তু পাত্রের কোনো হদিস মিলছে না। সবাই আরাধনাকে নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলো যে আদনান কোন ফাঁকে কোথায় চলে গিয়েছে তা কেউ ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি। ফোনটাও ফেলে গিয়েছে। মীর, আফসান আর ঈশান খুঁজতে বের হয়েছে। ওদিকে আরাধনার চোখমুখ ভয়ে কেমন শুকিয়ে গিয়েছে একদম। ভয়ার্ত চাহনিতে সে এদিক-ওদিক দেখছে শুধু। তার সন্ধানী দৃষ্টি শুধু আদনানকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে। অস্থির চিত্তে প্রবেশ করলো মীর, আফসান আর ঈশান। ওদেরকে দেখে রাইদাহ এগিয়ে গিয়ে বললো,

– কিরে ব্রো? ভাই কই??

আফসানের কপালে চিন্তার ভাজ। আরাধনার বিমর্ষ মুখ দেখে খুব মায়া হচ্ছে তার তারপরও নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখে বললো,

– আশেপাশে খুঁজে দেখলাম কোথাও পেলাম না। গাড়িও নিয়ে যায়নি।

রৌদ্র তেড়ে গিয়ে বললো,

– আরুর অবস্থা দেখেছিস? আমি বলেছি ওর মেন্টাল কন্ডিশন ভালো না তারমধ্যে আদি এখন কি ছেলেমানুষী শুরু করলো!?

– শান্ত হো রৌদ্র। আমি গার্ডসদের খুজতে পাঠিয়েছি। এখানেই কোথাও আছে হয়তো, চলে আসবে।

বলেই মীর ফোন বের করে কাউকে কল করলো। প্রায় দশ মিনিট পর আদনান এসে পৌঁছয়। তাকে দেখা মাত্রই আরাধনা ছুটে গিয়ে দাঁড়ালো সামনে। কেঁদেকেটে চেহারার অবস্থা নাজেহাল হয়ে গিয়েছে পুরো। পাঞ্জাবির হাতের অংশ টেনে বললো,

– কোথায় গিয়েছিলে আমায় ছেড়ে? কেন গিয়েছিলে? আমায় কেন সাথে নিলে না? কথা বলছো না কেন? সবার সাথে তো খুব কথা বলো আর আমার বেলায়-ই তোমার সব কথা হারিয়ে যায় তাই না!?

হারানোর ভয়, অধিকারবোধ, অভিমান, অভিযোগ। মাত্র কয়েকঘন্টায় আরাধনার মনের এতটা জায়গা দখল করে নিয়েছে আদনান! পাঞ্জাবির পকেট থেকে তিনটা তীব্র সুগন্ধ যুক্ত গোলাপ-রজনীগন্ধার গাজরা বের করে বললো,

– ফুল ছাড়া তোমার সাজ অসম্পূর্ণ লাগছিলো তাই এগুলো আনতে গিয়েছিলাম।

– ফুল??

– হুম। আমি তোমার চোখকে আকাশ দেখিয়েছি, তোমার খোলা চুলকে হাওয়ায় উড়তে দিয়েছি, কথা বলতে দিয়েছি, হাসতেও দিয়েছি কিন্তু এখনও ফুল ছুঁয়ে দেখতে দেওয়া হয়নি! দেখি হাত বাড়াও।

অতঃপর নিজ হাতে হবু স্ত্রীর দুইহাতে, চুলের খোঁপায় যত্ন করে গাজরা পড়িয়ে দিলো আদনান। আরাধনার ঠোঁটের কোণে বিশ্বজয়ের হাসি। হাতে পড়ানো গাজরা নাকের সামনে ধরতেই ফুলের মোহময় সুভাসে চোখবুঁজে আসে তার। ওদিকে আদনান খোঁপায় গাজরা পড়াতে ব্যস্ত। তাদের এই রোমান্টিক মুহুর্তকে ক্যামেরাবন্দি করতে ভুলে না আফসান।

|
|

অবশেষে উপস্থিত হলো সেই মুহুর্ত যখন আরাধনা পুরোপুরি ভাবে আদনানের নামে জুড়ে যাবে। তিন “কবুল” বলে বাঁধা পড়ে গেলো দুইজনে একটা পবিত্র অটুট সম্পর্কে। যে সম্পর্কের ভিত্তি ভালোবাসা, শক্তি বিশ্বাস, শান্তি একে-অপরের সান্নিধ্য আর প্রাপ্তি এক আকাশ সম সুখ।

___________________________

Kehti hain duniya mujhee..
(দুনিয়া আমাকে বলে)

Eek tarfa aashiq teraa..
(তোর এক তরফা প্রেমিকা)

Chahun tujhe dur se..!!
(দূর থেকে তোকে চাই)

Itna toh haq hain mera..!?
(এতটুকু অধিকার তো আছে আমার!?)

Kehti hain duniya mujhee..
(দুনিয়া আমাকে বলে)

Eek tarfa aashiq teraa..
(তোর এক তরফা প্রেমিকা)

Chahun tujhe dur se..!!
(দূর থেকে তোকে চাই)

Itna toh haq hain mera..!?
(এতটুকু অধিকার তো আছে আমার!?)

Aati hain ghar mere
(আমার ঘরে আসে)

Woh gali baan gaye
(সেই রাস্তা হয়ে গিয়েছো)

Tum aakhri waja
(তুমি শেষ কারণ)

Pehli khusi baan gaye
(প্রথম খুশি হয়ে গিয়েছো)

Haan haasi ban gaye
(হ্যাঁ হাসি হয়ে গিয়েছো)

Haan naami baan gaye
(হ্যাঁ কান্না হয়ে গিয়েছো)

Tum meri aasmaan
(তুমি আমার আকাশ)

Meri zaamin baan gayee..aa..aa
(আমার জমিন হয়ে গিয়েছো)

Ooo..haa..dere naa…aa..aa..nere naa…🎼🎶

মনের অন্তঃস্থল থেকে গাইছে নিশি। আদনান-আরাধনা, রাইদাহ-মীর, ঈশান-তিতির প্রতিটি লাভ বার্ড’স একে অপরে মত্ত। আশেপাশে কারো কোনো হেলদোল নেই। কেননা কপোত-কপোতীদের মাঝে চোখে চোখে ভাব বিনিময় হচ্ছে। আদনানের কাঁধে মাথা রেখে গান শুনছে আরাধনা আর আদনান আরাধনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তীব্র অপরাধবোধ আর সংকোচে মন আনচান করছে রৌদ্রের। সে জানে নিশির গাওয়া প্রতিটি শব্দ শুধুমাত্র তাকেই উৎসর্গ করা। মেয়েটা যে বড্ড ভালোবাসে তাকে! আজ থেকে নয়, এই ভালোবাসার সূচনা হয়েছে সেদিন থেকে যেদিন মীরের পরিবারের সাথে প্রথমবারের মতো পরিচয় হয়েছিল। তপ্ত দাবদাহে রৌদ্রজ্বল দিন ছিলো সেদিন, যেদিন নিশি প্রথমবার নিজের প্রেম-নিবেদন করেছিলো। ফিরিয়ে দিয়েছিল রৌদ্র।

তবুও হার মানেনি মেয়েটা। কিশোরী মনের প্রথম প্রেম ছিলো যে সে! এই উঠতি বয়সের প্রেম টা বড়-ই বাজে। আবেগ থাকে এক সমুদ্র, স্বপ্ন থাকে আকাশ ছোঁয়া, পাগলের থেকেও বেশি পাগলামি থাকে সেই প্রেমে। তাইতো বলে নারীর প্রথম প্রেমিক হতে পারা সৌভাগ্যের। কেননা এই প্রেমে কোনো স্বার্থ থাকে না। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই আবেগে হেলায়-অবহেলায় মরীচিকা ধরে যায়। ঠিক যেমনটা হয়েছিল নিশির ক্ষেত্রে। রৌদ্র ঢাকায় চলে যাওয়ার পরপর নিশিও ভাইয়ের থেকে খোঁজ নিয়ে রৌদ্রের ভার্সিটির কাছাকাছি একটা কলেজে ভর্তি হয়। যদিও মীর এখন পর্যন্ত তার বোনের এই গোপন ভালোবাসার ব্যাপারে সম্পূর্ণ বেমালুম।

তারপর আসে এক বৃষ্টির বিকেল। রৌদ্রের অধ্যয়নরত ভার্সিটিতে আগমন ঘটে নিশির। পড়নে ছিলো গোলাপি রঙের শাড়ি। ফর্সা বদনে, কাঁধ অবধি খোলা চুলে, একগুচ্ছ তাঁজা লাল গোলাপ হাতে সদ্য প্রেমে পড়া কিশোরীকে ভুবনমোহিনী লাগছিলো সেদিন। এক ঝাঁক মানুষের সামনে সেদিন আবার নিজের মনের গহিনে পালিত ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করেছিলো সে। তার ঘোলা চোখে উদিত সকল আশা, ইচ্ছে, স্বপ্ন সবার দৃষ্টিগোচর হয়েছিল সেদিন। কিন্তু সেই সব অনুভূতিকে এক নিমিষেই ছুঁড়ে ফেলেছিল রৌদ্র। কেননা সে এক ছলনাময়ীর মায়ায় জড়িয়ে পড়েছিল!

যাকে এত করে চাইলো তার এত কাছে অন্য এক নারীকে দেখে অনড়ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো নিশি। সেদিনের পর দ্বিতীয়বার নিশিকে দেখতে পায়নি রৌদ্র। যেই ছলনাময়ী ছলের কারণে সেদিন নিশিকে তুচ্ছ করেছিল তার চলে যাওয়ার পর যখন সে বাচ্চাদের মত কেঁদেছিলো, সেদিন তার ভগ্নহৃদয় জানান দিয়েছিল নিশির অভাব। রৌদ্রের আজও মনে পড়ে জল ভারাক্রান্ত চোখে নিশির অমায়িক হাসির সাথে বলে যাওয়া শেষ কথা,

– প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস আপনার চোখে দেখেছিলাম আমার স’র্ব’নাশ!
[কথাঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]
আমি আপনাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি রৌদ্র। তাই দূরে সরে যাচ্ছি। যদি নিজের থেকে বেশি ভালো না বাসতাম! তাহলে আজ আমি খালি হাতে ফিরতাম না, আপনাকে আপনার ভালোবাসার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতাম!

সবার হাততালির শব্দে ধ্যান ভাঙে রৌদ্রের। চলে গিয়েছে নিশি, নেই সে এখানে। রৌদ্র যখন অতীতের অধ্যায় পড়ছিলো তখনই সে পালিয়ে গিয়েছে। আবার আড়াল করে নিলো নিজেকে রৌদ্রের থেকে। নিশি কি জানে যেই রৌদ্র তার ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে ফিরিয়ে দিয়েছিল সেই রৌদ্রের ভালোবাসার সাথেও কেউ কঠোর ভাবে প্রতারণা করেছে! জানলে কি সে আবার ফিরবে তার জীবনে! আরও একবার চাইবে তাকে! কাঁধ অবধি খোলা চুল নিয়ে হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়িয়ে কি সে আবার বলবে,

– আমি আপনার ভালোবাসাহীনতায় ভুগছি প্রেম আমার! একটুখানি ভালোবাসা হবে??

নিজের আকাশকুসুম কল্পনা-জল্পনায় তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে নিজেকে তিরস্কার করে রৌদ্র আপনমনে বললো,

– সত্যিই আমি অমূল্য সম্পদ আগলে রাখতে ব্যর্থ।



চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here