উধয়রনী #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||পর্ব-১৯(২য় ভাগ)||

0
658

#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১৯(২য় ভাগ)||

৩৪।
আফিফের মোটরসাইকেল থামলো ক্যাম্পাসের গেটের সামনে। আজ থেকে মাস্টার্সের ক্লাস শুরু হয়েছে। প্রথম দিনই পদ্ম নিজ হাতে আফিফের ব্যাগ গুছিয়ে দিয়েছে। এমনকি লাঞ্চবক্সও হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। আফিফ মোটরসাইকেল থেকে নেমে হাতলে ঝুলিয়ে রাখা লাঞ্চবক্সটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। বক্সটি হাতে নিয়ে ক্যাম্পাসের গেটে পা বাড়াতে যাবে তখনই দেখলো ক্যাম্পাসের পার্কিং লটে আহি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার সামনে দাঁড়ানো এক মধ্যবয়সী যুবতী নারী। আফিফ চোখ সরিয়ে সামনে পা বাড়াতে যাবে তখনই আবার তার চোখ আটকালো সেই স্থানে। মধ্যবয়সী সেই যুবতী নারীটি আহির বাহু চেপে ধরে রেখেছে। আহির চোখ-মুখ কুঁচকানো। সে যুবতী নারীটির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে। আফিফ আহির দিকে পা বাড়াতে গিয়েও থেমে গেলো। কোনো এক অজানা কারণে তার আহির কাছে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। আফিফের দ্বিধাদ্বন্দ্বের মাঝখানে সেই যুবতী নারীটি আহির হাত ধরে তাকে টেনে গাড়িতে উঠাতে যাবে তখনই আফিফ আর চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। সে দ্রুত পায়ে হেঁটে সেই গাড়িটির সামনে এসে দাঁড়ালো।
এদিকে কারো উপস্থিতি পেয়ে মিসেস লাবণি ভ্রূ কুঁচকে সেদিকে তাকাল। আহি আফিফকে দেখে লাবণির হাত ফসকে বেরিয়ে এলো। লাবণি আফিফকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“হু আ’র ইউ?”

আফিফ ভদ্র ভাষায় বলল,
“আপনি ওর সাথে জোরাজোরি করছিলেন কেন?”

“তো! তোমার কি সমস্যা?”

“আমি কিন্তু পুলিশ কল করবো!”

আহি আফিফের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকালো। লাবণি আফিফের কথায় অট্টহাসি হাসলো। আফিফ ভ্রূ কুঁচকে লাবণির দিকে তাকিয়ে আছে। লাবণি হাসি থামিয়ে আহিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“কে এই ছেলে? তোমার জন্য নিজের প্রাণের মায়া ত্যাগ করছে!”

আহি ভীত চোখে আফিফের দিকে তাকালো। লাবণি যদি জেনে যায়, তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি আর কেউ নয়, আফিফ। তাহলে অনেক ঝামেলা হয়ে যাবে। আহি নিজেকে শান্ত করে প্রতিত্তোরে বললো,
“ও আমার ক্লাসমেট। আমাদের মাত্রই পরিচয় হয়েছে।”

আফিফ আহির দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকালো। এবার লাবণি আফিফের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“ওহ, তাই হয়তো এতোটা সাহস দেখাচ্ছে।”

লাবণি আফিফের সামনেই আহির হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
“মিস্টার নিউ ক্লাসমেট, আমি আহির মা, মিসেস লাবণি রিজওয়ান কবির। আমি আমার মেয়ের সাথে যা ইচ্ছে তাই করবো। আশা করি তুমি তোমার এই হুমকি দ্বিতীয়বার আমাকে দেওয়ার সাহস দেখাবে না। নয়তো তোমারই ঝামেলা হবে।”

আহি শুকনো মুখে বলল,
“হ্যাঁ, ও জানে না আপনি কে! পরের বার আর এমন করবে না।”

আহি এবার আফিফের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি যাও এখান থেকে।”

আফিফ স্তব্ধ হয়ে আহির দিকে তাকিয়ে আছে। সবকিছুই যেন তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আফিফকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আহি ইশারায় তাকে চলে যেতে বলল। কিন্তু সে একবিন্দুও নড়লো না। আহির অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকিয়েই রইলো। মিসেস লাবণি আহিকে গাড়িতে উঠতে বললেন। আহি শুকনো মুখে গাড়িতে উঠতে যাবে তখনই আফিফ তার হাত ধরে তাকে নিজের দিকে টেনে আনলো। লাবণি আফিফের দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বলল,
“তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি।”

আফিফ শান্ত কন্ঠে বলল,
“আজ মাস্টার্সের প্রথম ক্লাস। ক্লাস শেষে না হয় সে বাসায় চলে আসবে। জোর করে আপনি ওকে কোথাও নিয়ে যেতে পারবেন না। হয়তো আপনি তার মা। কিন্তু একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে জোরাজুরি করার কোনো অধিকার আপনার নেই।”

আহি আফিফের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আহির এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে আফিফের মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দিতে। ছেলেটা হয়তো জানেই না সে কার সাথে বাড়াবাড়ি কর‍ছে। এদিকে লাবণি আহির দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকালো। আহি লাবণিকে চাপা স্বরে বলল,
“আপনি যে কতোটা নোংরা মানসিকতার মানুষ সেটা দয়া করে বাইরের মানুষকে জানাবেন না। ভদ্র ভাবে আমাকে ছেড়ে দিন। আমি তাজওয়ারের সাথে কোথাও যাচ্ছি না। আর আজ আমার প্রথম ক্লাস। তাই আমাকে জোর করবেন না।”

লাবণি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তাজওয়ার তোমার অপেক্ষায় আছে।”

“থাকুক।”

“ভুলে যেও না তুমি তোমার বাবার ইনভেস্টমেন্ট।”

“আমি কোনো পণ্য নই। আর আমি তাজওয়ারের সাথে কোথাও যাচ্ছি না। তার‍ যদি ইচ্ছে করে তাহলে সে ঘুরুক তার নষ্ট বন্ধুদের নিয়ে। আমি ওখানে গিয়ে আমার নিজের সম্মান নষ্ট করতে পারবো না। আর এখনো আমাদের বিয়ে হয় নি। তাহলে আমি কেন তার সাথে নাইট ট্যুরে যাবো, যেখানে তার বন্ধুরাও যাচ্ছে?”

“দেখো আহি, তাজওয়ার তোমার জন্য এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছে। সে আমাকে যদি আজ সকালেই জানাতো, তাহলে তোমাকে আমি বাসা থেকেই বের হতে দিতাম না।”

“এখন যেহেতু দেরী করে জানিয়েছে, তাহলে তো হয়েই গেলো! তাকে জানিয়ে দিন, আমি তার জন্য সব কাজ ফেলে বসে নেই।”

আহি এবার আফিফের সামনে এসে বলল,
“ক্লাসে যাওয়া যাক।”

(***)

আফিফ আর আহি একসাথে ক্যাম্পাসের গেট দিয়ে ঢুকলো। আহি পেছন ফিরে একনজর লাবণির গাড়ির দিকে তাকালো। সবেমাত্র পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে গেলো গাড়িটি। গাড়িটিকে চলে যেতে দেখেই আহি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। সে আফিফের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
“ধন্যবাদ এবং দুঃখিত।”

আফিফ ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“দুঃখিত বলার কারণ!”

“একটু ইনফরমাল ভাবে কথা বলেছি। মিসেস লাবণি জানেন না আপনি পদ্মের হাসবেন্ড।”

“জানলে কোনো সমস্যা?”

আহি ঠোঁটে শুকনো হাসি ফুটিয়ে বলল,
“না জানায় ভালো। জীবনে সম্পর্কের দৈর্ঘ্য যতো ছোট, আমার জন্য ততোই ভালো।”

এদিকে রাদ ক্যাম্পাসের মাঠের এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিল। আফিফ আর আহিকে একসাথে দেখে সে রীতিমতো অবাক। আহি রাদকে দেখে দৌঁড়ে তার কাছে চলে গেলো। আর আফিফ সেকেন্ড খানিক তাদের দিকে তাকিয়ে ক্লাসে চলে গেলো।

(***)

বুকে হাত গুঁজে আহির দিকে তাকিয়ে আছে রাদ। আহি বলল,
“এভাবে কি দেখছিস?”

“তুই আজ মিস্টার আফিফ রাফাতের সাথে!”

“বলিস না রে। মিসেস লাবণির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি!”

“আহি, আমি তোকে যেটা জিজ্ঞেস করেছি, আগে সেটার উত্তর দে।”

“আমাকে বলার সময়টা তো দে।”

“বল।”

“সকালে ড্রাইভার আংকেল আমাকে ক্যাম্পাসে নামিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিল। তারপর আমি ক্যাম্পাসে ঢুকতে যাবো, ওমনি মিসেস লাবণি উড়ে এসে বসলো আমার কাঁধে। আমি বাসা থেকে বের হওয়ার পরই না-কি ওই খানের বাচ্চা খান তাকে কল দিয়ে বলেছে, তারা বন্ধুরা মিলে নাইট ট্যুরে যাচ্ছে। দুই দিন, দুই রাত কক্সবাজার থাকবে। আর মিসেস লাবণি তাই আমাকে জোর করছিলো নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাজওয়ার খান না-কি আমার জন্য এয়ারপোর্টে বসে আছে। আমি তো সেই বদমাশ খানের সাথে কখনোই নাইট ট্যুরে যাবো না। তুই তো জানিসই ওর বন্ধুগুলো একটার চেয়ে একটা অসভ্য। আমি তো কোনোভাবেই যাবো না। কিন্তু মিসেস লাবণি তো আমাকে জোর করে, ব্ল্যাকমেইল করে গাড়িতে উঠাচ্ছিলেন। আর তখনই উদয় ঘটলো বিশিষ্ট মানবসেবক আফিফ রাফাতের। সে তো আর জানে না, কার সাথে তর্কে যাচ্ছিল। আমি কোনোভাবে তাদের কথা কাটিয়ে বেঁচে ফিরেছি। সাথে তাকেও উদ্ধার করে এনেছি।”

রাদ মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“বিশিষ্ট মানবসেবক! বাহ, বাহ চমৎকার!”

“তুই রেগে যাচ্ছিস কেন?”

“ওই তেলাপোকাটাকে দেখলেই আমার রাগ উঠে!”

“আর তাজওয়ার খানকে দেখলে বেশি ভালো লাগে, তাই না?”

“ওটাকে দেখলে তো গা জ্বলে যাই। আমি যদি অনেক টাকার মালিক হতাম। অথবা আমি যদি প্রধান মন্ত্রীর ছেলে হতাম, ওই বেটাকে এমন তুলা ধুনা দিতাম। জন্মেও তোর দিকে তাকানোর সাহস পেতো না।”

আহি রাদের পিঠে চাপড় মেরে বলল,
“ইশ! তুই প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হলে, তোর ভাবসাব এমন হতো, জন্মেও আমার দিকে তাকাতি না। আর এই ভার্সিটি আর সেই সোসাইটির স্কুলে তোকে পড়তেও হতো না। তখন আর আমাদেরও পরিচয় হতো না।”

রাদ আহির হাত ধরে বলল,
“তোর সাথে পরিচয় না হলে, আমি আমার জীবনের সবচেয়ে চমৎকার মানুষটাকে দেখতে পেতাম না।”

“আচ্ছা! তাই? এখন বল তোর স্টান্ট ম্যান কোথায়?”

“তোর বান্ধবীকে দেখেই সুড়সুড় করে তার পিছু পিছু চলে গেলো।”

“কি ব্যাপার! ওর মতিগতি তো সুবিধার ঠেকছে না। সেদিন বাসেও পুষ্পের পাশে বসে পড়লো!”

“প্রেমে পড়েছে হয়তো!”

“ভালোই তো। তবে পুষ্প কিন্তু খুব কঠিন। এতো সহজে ওকে পটাতে পারবে না।”

“করুক, যা করার। একটা প্রেমও তো বেচারার সফল হয় নি। এখন তো সরাসরি বিয়েই করবে। দেখা যাক, শেষমেশ কি জুটে ওর কপালে!”

“হুম, আচ্ছা আমি ক্লাসে যাই। ক্লাস শেষে আবার দেখা হবে৷ তোকে কিন্তু আজ সারাদিন আমাকেই সময় দিতে হবে। বাসায় দেরীতে ফিরলে জালে আঁটকে পড়ার আশংকা কম থাকবে।”

৩৫।

সেই বর্ষার দিনগুলো আবার ফিরে এলো বিনা নিমন্ত্রণে। আহি বন্ধ জানালার কাঁচের উপর হাত রেখে বিছানায় বসে আছে। কাঁচ বেয়ে বৃষ্টির ফোঁটাগুলার গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। আহি সেই ফোঁটাগুলার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এমনই এক বর্ষার দিনে তার আফিফের সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল। আর এমন দিনেই আহি তাকে হারিয়েও ফেলেছিল। তাই মেঘেদের বর্ষণে আহিও কাঁদে। ভীষণ কাঁদে। বাদামি ডায়েরীর পাতা উল্টে আফিফকে স্মরণ করছে আহি। কিছু বছর আগে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে সে আফিফকে অনুরোধ করে ডায়েরীতে লিখেছিল,
“প্রিয়, বৃষ্টিস্নাত ফুল দেখেছো কখনো? ভীষণ স্নিগ্ধ লাগে দেখতে, তাই না? আজ না হয় আমার দিকেই তাকিয়ে দেখো। তোমার জন্য হলুদ শাড়ি পরে অলকানন্দা সেজে দাঁড়িয়ে আছি রাস্তার মোড়ে। বৃষ্টিতে ভেজা আমাকে দেখে তোমার নিশ্চয় অলকানন্দার কথায় মনে পড়বে। আর তুমি নিশ্চিত আমার প্রেমে পড়বে। যেদিন তুমি আমার প্রেমে পড়বে, সেদিন থেকে আমিই হবো তোমার অলকানন্দা। আর এরপর যখন বৃষ্টি নামবে তুমি আমার হাত ধরে বৃষ্টি বিলাস করবে। করবে না বলো?”

আহি ডায়েরিটা বন্ধ করলো। বালিশের নিচে রেখে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। কান্না পাচ্ছে আহির। আফিফ কি করছে আজ? পদ্মফুলের সাথে বৃষ্টি দেখছে নিশ্চয়! হয়তো খুব সুন্দর মুহূর্ত সৃষ্টি হচ্ছে তাদের। এসব ভাবতে চাচ্ছে না আহি। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে। যতোবারই তার মনে পড়ে আফিফ আর কখনোই তার হবে না, ঠিক ততোবার তার মনটা অস্থির হয়ে উঠে।
বালিশে মুখ গুঁজলো আহি। শব্দ করেই কাঁদলো কিছুক্ষণ। মুনিয়া খালা দরজায় কড়া নাড়লেন। আহি সাথে সাথেই চুপ হয়ে গেলো। বালিশ থেকে মুখ তুলে চোখ মুছলো। এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে নিয়ে বলল,
“খালা, কেন ডাকছো?”

“ছোড মা, ভার্সিটি যাইবা না?”

“যাবো খালা।”

আহি উঠে হাত-মুখ ধুয়ে আলমারি খুললো। ইচ্ছে করছে আজ অলকানন্দা সাজতে। যা ভাবা তাই। আলমারি ঘেঁটে হলুদ টপস বের করলো। কালো জিন্স আর উড়নার সাথে মোটামুটি ভালোই মানিয়েছে আহিকে। বৃষ্টির দিনে সাজগোজ খুবই বেমানান। আহি শুধু কপালে কালো টিপ পরলো। চুলগুলো এলোমেলো ভাবে খোঁপা করলো। বারান্দার দরজা খুলে একটা অলকানন্দা ফুল ছিঁড়ে খোঁপায় গুঁজলো। নিজেকে আয়নায় দেখতে লাগলো আহি। তার ঠোঁটে মলিন হাসি, চোখ দু’টি লাল হয়ে আছে। আহি বুকে হাত রেখে বলল,
“তোমার জন্য সাজতে চেয়েছিলাম। তুমি তো আমার হলেই না প্রিয়। আমি তোমাকে এভাবে চাই নি। আমার একার অধিকার চেয়েছি। তুমি কেন আমাকে ভালোবাসলে না, প্রিয়? আজ আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। অনেক বছর পর আবার সেই বর্ষা এলো, যেই বর্ষায় তুমি আমার মুখোমুখি। তোমার দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস হবে না আমার। তুমি হয়তো জানো না, যেদিন বৃষ্টি নামে, আমি সেদিন নিজেকে শান্ত রাখতে পারি না। এই দুই সপ্তাহে তোমার কাছ থেকে নিজেকে কতোবার আড়াল করে রেখেছি। তোমাকে দেখেও দেখি নি। তোমার সামনে এসে দাঁড়াতে পারি নি। একটা বছর আমি এভাবে তোমার কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবো না, আফিফ। একদিন যদি তুমি বুঝে ফেলো, আমার এই চোখ দু’টি এখনো তোমার স্মৃতিতে অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠে, তখন আমি অনেক দুর্বল হয়ে পড়বো। আর যাই হোক তোমার সামনে দুর্বল হতে চাই না। তোমাকে ভালোবেসে আমি পরিপূর্ণ হয়েছি। তোমাকে অনুভব করেই আমি ভালো আছি। শুধু এতোটুকুই অভিযোগ! কেন বার-বার আমার সামনে এসে দাঁড়াও? আমার অনুভূতি আমার একার থাকুক। তুমি তো আমার জীবনের একটা অংশ। যেখানে তোমার স্মৃতিগুলোই শুধু জীবিত। কিন্তু তুমি কোথাও নেই। তোমাকে দেখার জন্য চারুশিল্পে কতো বাহানা দিয়ে চলে যেতাম। ঝড়-ঝঞ্ঝা কিছুই আমার ভালোবাসায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি। কিন্তু আজ আমি মন থেকে চাই, এই মুহূর্তগুলো শীঘ্রই কেটে যাক। তোমার মুখোমুখি হওয়ার এই কাল নিমেষেই হারিয়ে যাক। তোমাকে আর দেখতে চাই না। কারণ ভয় হয় আমার। যদি নিজেকে ধরে রাখতে না পারি। তখন আমার গোছানো ভালোবাসা সবার কাছে পরিহাসের বিষয় হবে। আমি জানি, আমার ভালোবাসা কতোটা গোছানো। আমি কাউকে সুযোগ দেবো না, আমার ভালোবাসায় প্রশ্নবিদ্ধ করার।”

আহি আজ আর ক্যাম্পাসে গেলো না। ওভাবেই ছাদে চলে গেলো। বৃষ্টিতে ভিজলো। ছাদের মেঝেতে শুয়ে মেঘে ঢাকা আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো আছড়ে পড়ছে আহির মুখে। কপালের টিপটা খুলে পরে গেছে। আহির অশ্রু লুকিয়ে গেছে বৃষ্টি কণাদের ভীড়ে। চোখ বন্ধ করলো আহি। অনেকক্ষণ পর সে অনুভব করলো বৃষ্টির ফোঁটাগুলা আর তাকে স্পর্শ করছে না। কিন্তু ঝমঝম শব্দ সে এখনো শুনতে পাচ্ছে। আহি চোখ খুললো। সামনে তাকিয়ে দেখলো তাজওয়ার ছাতা মেলে তার মুখের উপর ধরে রেখেছে। আহি তাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো। তাজওয়ার আহিকে আপাদমস্তক দেখে বলল,
“এভাবে ভিজলে অসুস্থ হয়ে যাবে!”

আহি চেঁচিয়ে বলল,
“তোমার সমস্যাটা কোথায়? আমার অনুমতি না নিয়ে তুমি এখানে কেন এসেছো?”

“তোমার কাছে আসার জন্য আমার তোমার অনুমতির প্রয়োজন নেই।”

আহি ছাদ থেকে নেমে পড়তে যাবে তখনই তাজওয়ার তার হাত ধরে তাকে নিজের কাছে টেনে আনলো। আহি ভ্রূ কুঁচকে তাজওয়ারের দিকে তাকালো। তাজওয়ার আহির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলল,
“বৃষ্টিতে ভেজা কোনো মেয়ে এই প্রথম আমার হৃদ স্পর্শ করেছে, আহি।”

“তো, আমি কি করবো!”

“আমার ভালোবাসা উপভোগ করবে।”

“তোমার নষ্টামি উপভোগ করার আগে আমি মরে যাই।”

তাজওয়ার আহির কথায় ভড়কে গেলো। রাগী কন্ঠে বলল,
“তোমার সমস্যা কি আহি? তুমি সবসময় আমার সাথে এমন করো। আমার সাথে কি একটু সুন্দর করে কথা বলা যায় না?”

আহি নরম কন্ঠে বলল,
“আমাকে ছেড়ে দাও, তাজওয়ার।”

তাজওয়ার মুচকি হেসে বলল,
“না, আরেকটু থাকো আমার পাশে।”

আহি এবার চেঁচিয়ে বলল,
“এই জন্যই তোমার সাথে সুন্দর করে কথা বলি না। নরম কথা তো তোমার কান পর্যন্ত পৌঁছায় না।”

তাজওয়ার আহিকে ছেড়ে দিতেই আহি হনহনিয়ে চলে গেলো। আর তাজওয়ার রাগে হাতের ছাতাটা ছাদেই ছুঁড়ে মারলো।

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here