#মেঘের_শহর
#পর্ব_১
Saji Afroz
.
আমি কি ছেলে থেকে মেয়ে হয়ে গেলাম!
ঘুম ভাঙার পরে বিস্ফোরিত চোখে নিজের বুকের উপর হাত বুলাতে বুলাতে প্রকান্ড একটা চিৎকার দিয়ে উঠে জিকো। সাথে সাথেই নিজের মুখ দুহাত দিয়ে চেপে ধরে সে। কন্ঠটাও যে একদম মেয়েদের মতো বের হলো গলা দিয়ে! এটা কোনো দুঃস্বপ্ন নয় তো! ভাবতে ভাবতে সে দৌড়ে চলে যায় বেসিনের আয়নার সামনে। জিকোর অভ্যেস ছিল খালি গায়ে ঘুমানো। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকাতেই বড়সড় একটা ঝাটকা খায় সে। মাথায় লম্বা চুল গজিয়েছে। খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো ও গায়েব। বুকেও কোনো লোম দেখা যাচ্ছেনা। তার বদলে সৃষ্টি হয়েছে উঁচু সুঢৌল মাংসপিণ্ড!
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছে তার। কাঁপা কাঁপা হাতে ট্রাউজারের ফিতা খুলে নিচের দিকে তাকায় জিকো। দ্বিতীয়বারের মতো আরো একবার চিৎকার করে উঠে…
” হোয়াট দ্যা……”
জিকো পুরোদস্তুর একটা মেয়ে মানুষে পরিণত হয়ে গেছে। একজন ছেলের কোনো বৈশিষ্ট্য ই তার ভিতরে পরিলক্ষিত নয়।
বিবস্ত্র অবস্থায় চুলের ভিতরে দুহাত ঢুকিয়ে বাথরুমের ফ্লোরে বসে পরে সে।
নিজের পুরুষত্ব নিয়ে কত গর্ব ছিল তার!!
কিন্তু হঠাৎ কি কারণে এক রাতেই তার দেহে এমন আমূল পরিবর্তন ঘটলো!
গতরাতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষে মদ খেয়ে ঢলতে ঢলতে কোনোভাবে বাসায় ফিরেই পরিহিত জামা ও স্যান্ডো গেঞ্জি খুলে বিছানায় গা এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ছিলো সে। ও হ্যাঁ, বাসায় ফেরার রাস্তায় কিছু হয়েছিল কি না মনে করতে পারছে না সে ।
প্রচন্ড পরিমান মানসিক চাপে মাথা ঘামতে ঘামতে বমি চলে আসে তার।
হঠাৎ চোখ যায় পাশেই থুবড়ে পরে থাকা সাদা ট্রাউজারের দিকে। হাঁটুর একটু উপরের দিকে রক্তের গাঢ় খয়েরী দাগ চটচটে হয়ে লেগে আছে।
নিজের শরীরের সব জায়গা ভালোভাবে খতিয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখে জিকো। না, কোথাও কোনো কাটাছেঁড়ার দাগমাত্র নেই। রক্তের ব্যপারটা ব্যখ্যা করার ট্রাই করে সে লজিক দিয়ে। মেয়েদের পিরিয়ড হয়, সেই রক্ত না তো! পরে নিজেই বুঝতে পারে, না তেমন কিছু নয়। তাহলে রক্তের দাগ নিশ্চয়ই হাঁটুর একটু উপরে থাকতো না। অন্য কোথাও থাকতো।
আর বেশি প্রেসার নিতে পারেনা জিকোর মস্তিষ্ক। বাথরুমের ফ্লোরেই জ্ঞান হারায় সে।
.
.
রবিবার বিকেল থেকেই আকাশের মুখটা ভার। শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি। রাতভর ভিজেছে “আনন্দ নগর” নামের এ শহরটি।
আজ সকাল থেকেও তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। পানি জমতে শুরু করেছে রাস্তাঘাটে। সাথে ঝড়ো হাওয়া আর শিরশিরানি ঠান্ডা তো আছেই।
বৃষ্টি থামার কোনো নামও নেই! এই বৃষ্টির মাঝেও ভার্সিটিতে না এসে থাকেনি হুরায়রা। এই মেয়েটি একটা দিনের জন্য ক্লাসে আসেনি এমনটা হয়নি কখনো। ঝড়, তুফান যাই হোক না কেনো! তাকে দেখা যায় ক্লাসে উপস্থিত। বর্তমানে ভার্সিটির সেরা ছাত্রীদের মাঝে একজন হুরায়য়া। দেখতে বেশ সুন্দরী। তার সৌন্দর্য্যের ধারে কাছেও কেউ নেই এই ভার্সিটির৷ তাকে দেখলেই যে কারো চোখের পলক সহজে আর পড়তেই চায়না। প্রেমের প্রস্তাব অহরহ পেতেই থাকে সে। তাই হুরায়রা কে অনেক মেয়েই হিংসার চোখে দেখে।
হুরায়রার মুখে সবসময় অদ্ভুত এক হাসি লেগেই থাকে। কিন্তু সে কারো সাথে খুব একটা মিশতে চায়না। বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, কিন্তু তার কোনো ভালো বন্ধু নেই। ক্লাসের শুরু থেকে অনেক ছেলে মেয়েই তার সাথে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছে। সে দু’একটা কথা বলেই চুপচাপ হয়ে যায়। এতে তারা বুঝতে পারে, তাদের সাথে কথা বলতে হুরায়রা আগ্রহী নয়। সেই থেকে হুরায়রার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কেউ নিজ থেকে কথা বলতে আসে না।
.
.
জানালাটা খুলে বাইরে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা নিয়ে খেলা করছে সাইয়ারা।
আজ ভার্সিটিতে না গিয়ে ভালোই লাগছে তার। এতক্ষণ সে কাঁথা মুডি দিয়ে ঘুমিয়ে ছিল। ঘুম থেকে উঠে গরম গরম খিচুড়ি খেয়েছে। এখন সে বৃষ্টির ফোঁটা নিয়ে খেলছে। কত ভালোই না লাগছে! এভাবে যদি প্রতিটা দিন বৃষ্টি হত, মন্দ হত না। ভেবেই ফিক করে হেসে ফেললো সে।
হঠাৎ তার কানে চেঁচামেচির শব্দ ভেসে আসলো। এই শব্দ তার অচেনা নয়। পাশের বাসার অন্তরা আহম্মেদের চেঁচামেচির শব্দের সাথে অভ্যস্ত সে। কিছু হলেই এই মহিলা চেঁচিয়ে নিজের বাড়ি সহ আশেপাশের বাড়িও মাথায় তুলে ফেলেন। তবে তার চেঁচামেচির শব্দে কেউ বিরক্ত হয়না। হয়তোবা শুনতে শুনতে অভ্যাস হয়ে গেছে নয়তোবা আনন্দ নগরের মানুষজন একটু বেশিই ভালো তাই!
.
সাইয়ারা এখানে খালার বাসায় থাকে। তার মা বাবা থাকেন গ্রামে। পড়াশোনার জন্যই আসা হয়েছে আনন্দ নগরে। সেও অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
দু’বছর হয়েছে সে এখানে এসেছে। এই দু’বছরে অন্তরা আহম্মেদের সাথে তার একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
সাইয়ারার বারান্দা থেকে অন্তরা আহম্মেদের বাসার উঠোন টা ভালো ভাবেই দেখা যায়। শব্দ শুনে সে বুঝতে পারলো, তিনি এখন উঠোনে আছেন। তাই সাইয়ারা দৌড়ে বারান্দায় এল।
অন্তরা আহম্মেদ তার ছেলের সাথে চেঁচামেচি করছেন। তার ছেলের নাম মেঘ। পুরো নাম মেঘ আহম্মেদ।
মেঘ বাড়িতে ফিরেছে সবেমাত্র দুদিন হলো। সে এই দেশের সবচেয়ে ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা শেষ করে এসেছে। পড়াশোনার চাপে বাড়িতে খুব একটা আসতো না। তাই এবার যখন ছেলেকে এতদিন পরে কাছে পেয়েছেন, আদর যত্নে কোনো কমতি রাখছেন না তিনি।
আজ মেঘ এই বৃষ্টির মাঝেও বাড়ির বাইরে যেতে চাচ্ছে বন্ধুদের সাথে। যা একেবারে পছন্দ হয়নি অন্তরা আহম্মেদের। তাই তিনি মেঘের সাথে চেঁচামেচি করে ভেতরে থাকতে বলছেন। এদিকে মেঘও মায়ের কথা না শুনে তাকে নানাভাবে মানিয়ে বের হবার চেষ্টা করতে লাগলো।
তাদের অবস্থা দেখে বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে সাইয়ারা বলল-
আন্টি? আজ আপনি বিরিয়ানি রান্না করেন। যদি মেঘ ভাইয়া বের হয় তবে তাকে দিবেন না। আমিই এসে খেয়ে নিব।
.
সাইয়ারার দিকে ভ্রু-জোড়া কুচকে মেঘ তাকালো। তারপর মায়ের কাছে জানতে চাইলো সে কে। এই দুই বছরে দুইবার সাইয়ারার সাথে তার দেখা হয়েছে। তবুও মেঘের সাইয়ারার কথা মনে নেই৷ অবশ্য না থাকাটাই স্বাভাবিক। মনে থাকার মতো কোনো কারণও তো নেই!
অন্তরা আহম্মেদ হেসে সাইয়ারার পরিচয় দিলো মেঘের কাছে। মেঘ তার দিকে তাকিয়ে বলল-
বিরিয়ানির দাওয়াত রইল। এসে খাবো একসাথে।
.
কথাটি বলেই মেঘ এক দৌড়ে বাড়ির বাইরে চলে গেল। অন্তরা আহম্মেদ রাগে গজগজ করতে থাকলে সাইয়ারা বলল-
চিন্তা করবেন না আন্টি। উনি নিশ্চয় ফুটবল খেলতে গেছে। বৃষ্টির দিনে যদি ছেলেরা ফুটবল না খেলে, তবে মাঠের অপমান হবে তো!
.
সাইয়ারার কথা শুনে হেসে বললেন তিনি-
বিরিয়ানি খেতে আসিস দুপুরে।
.
.
অনেকদিন পর বন্ধুদের সাথে বৃষ্টির দিনে শহরে হাঁটতে বেরিয়েছে মেঘ। বৃষ্টি তার ভীষণ প্রিয়। তাই বৃষ্টি হলেই ভিজতে ভুলে না সে!
.
“আনন্দ নগর” এটা যেন মেঘের প্রাণের শহর। এ শহরের প্রতিটি অলিগলি তার চেনা। কতটা দিন প্রাণের শহরটা থেকে দূরে ছিল ভাবতেই বুকের ভেতর হু-হু করে উঠলো।
.
বন্ধুদের সাথে হাঁটতে হাঁটতে আনন্দ নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে এল সে।
তার ইচ্ছে ছিল নিজের শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। কিন্তু তার মায়ের ইচ্ছে ছিল, তার ছেলে দেশের সবচেয়ে ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়বে। মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতেই তাকে পাড়ি জমাতে হয়েছিল ভিন্ন শহরে।
.
মাঝেমধ্যে এখানে আসা হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয় এ আসেনা অনেকদিন। তাই আজ যখন হাঁটতে হাঁটতে পাশেই চলে এল, ভেতরে যাওয়ারও ইচ্ছে হলো। বন্ধুদের বললে তারাও রাজি হয়। একসাথে সবাই প্রবেশ করে “আনন্দ নগর বিশ্ববিদ্যালয়” এ।
.
ঘুরেফিরে সবটা দেখতে লাগলো মেঘ। অনেকদিন পর নিজের শহরের বিশ্ববিদ্যালয় দেখে মনটা খুশিতে ভরে গেল। মনে মনে ভেবে নিলো সে, যদি পারে পেশা হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষকতা করা বেছে নিবে। বন্ধুদের কথাটি জানাতে তারা তার সিদ্ধান্তে খুশি হলো।
হঠাৎ বৃষ্টি বেড়ে যায়। সবাই একটা ভবনের নিচে আশ্রয় নেয়। হঠাৎ মেঘ খেয়াল করলো, একটি রমনী ছাতা হাতে মাঠের মাঝখান থেকে হেঁটে যাচ্ছে। মেয়েটির পরণে আকাশী রঙের একটি সালোয়ার কামিজ । দূর থেকে তার মুখটা বোঝা না গেলেও, কোমর সমান চুল ঠিকই বোঝা যাচ্ছে।
বৃষ্টির সাথে সাথে বাতাস হওয়াতে মেয়েটির ছাতা সামলাতে কষ্ট হচ্ছে। আচমকা বাতাসের ঝাপটায় ছাতাটি তার হাত থেকে উড়ে যায়। তখনি তার চেহারা টা দেখতে পায় মেঘ।
মেয়েটির চেহারার দিকে চোখ পড়তেই মেঘের ভেতরে তোলপাড়া করা ঝড় শুরু হয়। এই যেন ভালোলাগার এক ঝড়! এত সুন্দরী মেয়ে তাদের আনন্দ নগরে থাকে! জানা ছিল না তার। সে অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল।
ছাতার পেছনে ছুটতে ছুটতে ছাতাটি ধরতে পারলো মেয়েটি। কিন্তু ছাতা ভেঙে গেছে দেখে হতাশও হলো। বাধ্য হয়েই বৃষ্টির মাঝে ভিজতে ভিজতে হাঁটতে শুরু করলো মেয়েটি। যেন তার খুব তাড়া আছে, এখুনি বাড়ি পৌঁছতে হবে।
বন্ধুদের মাঝ থেকে দৌঁড়ে মেয়েটির পাশে এল মেঘ। তার পিছুপিছু হাঁটতে হাঁটতে থামতে বললেও থামলো না মেয়েটি। তাই মেঘ তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। দুজনের চোখাচোখি হতেই মেয়েটি চোখ সরিয়ে ফেললো। কিন্তু মেঘ সরালো না। তার ইচ্ছে করছে মেয়েটির চোখের মাঝে হারিয়ে যেতে।
মেয়েটির ডাকে ঘোর কাটলো মেঘের।
সৃষ্টিকর্তা কি সব কিছু এই মেয়েটিকেই দিয়ে দিয়েছেন! মেয়েটির কণ্ঠস্বর এতই মিষ্টি যে, তার কথা যেন একনাগাড়ে অন্ততকাল শুনলেও বিরক্তবোধ হবে না কারো। মেঘ নিজের ছাতাটি এগিয়ে দিয়ে তাকে নিতে বলল। মেয়েটি ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল-
অপরিচিত একজনের কাছ থেকে ছাতা কেনো নিব আমি? আর তাছাড়া আপনিই বা কেন দিচ্ছেন?
-একই শহরের মানুষ আমরা। অপরিচিত কিভাবে হই বলুন? আমাদের পরিচয় তো একটাই, আনন্দ নগরের নাগরিক । তো একজন বিপদে পড়লে অন্যজন কি সাহায্য করবে না? বলুন?
-তাই বলে নিজে ভিজে অন্যকে সাহায্য করছেন?
-আমার বন্ধুদের সবার কাছেই ছাতা আছে। আমার সমস্যা হবে না। আপনি সময় নষ্ট না করে এটা নিন। ভালোই বৃষ্টি হচ্ছে।
.
ওদিকে মেঘের বন্ধুরা তার কান্ড দেখে হাসতে লাগলো। বুঝতে পারলো মেঘ মেয়েটিকে ভালোলাগার ঘোরে কেনো সাহায্য করতে গিয়েছে। কিন্তু বন্ধুমহলের মাঝে রাব্বি এটা পছন্দ করলো না। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
.
কিছুক্ষণ ভেবে মেয়েটি বলল-
এক শর্তে নিব। ছাতাটি আবার ফেরত নিতে হবে।
-তাতো অবশ্যই।
.
হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে মেয়েটি বলল-
দিন। আর কাল ঠিক এই সময়ে এখানে ছাতাটি ফিরিয়ে দিতে আসব।
-আচ্ছা।
.
ছাতা নিয়ে মেয়েটি চলে যেতে থাকলো। মেঘের ডাকে থেমে পেছনে ফিরলো সে।
মেঘ বলল-
ধন্যবাদ না বলুন, নাম টা তো বলে যান?
.
মনভোলানো এক হাসি দিয়ে মেয়েটি বলল-
হুরায়রা!
.
হুরায়রা আবারো হাঁটতে শুরু করলো। তাকে যতক্ষণ দেখা যায়, মাঠের মাঝখানে ঠিক ততক্ষণই দাঁড়িয়ে ছিল মেঘ। এরপর বন্ধুদের কাছে ফিরে এলে তারা তাকে নিয়ে মজা করতে থাকলো। কিন্তু রাব্বি কিছু বললো না। গোমড়া মুখে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেঘ জানতে চাইলো তার কি হয়েছে।
অন্যরা তখন জানালো, রাব্বি মেয়েটিকে পছন্দ করতো। কিন্তু মেয়েটি তাকে পাত্তা দেয়নি। শুধু রাব্বি কেনো, কোনো ছেলেকেই সে পাত্তা দেয় না।
এটা শুনে বেশ খুশি হলো মেঘ।
তার বন্ধু ইমাদ বলল-
খুশি হচ্ছিস? খুব কম ছেলেই আছে প্রথম দেখায় ওর প্রেমে পড়েনি। কিন্তু মেয়েটা কাউকেই গুরুত্ব দেয় না। তার কোনো বান্ধবীও নেই।
-দরকার কি! ওর বন্ধু, বান্ধবী, বয়ফ্রেন্ড, হাসবেন্ড সবই আমি হব।
.
এবার মুখ না খুলে পারলো না রাব্বি।
সে বলল-
সবাই প্রথমে এমনটা ভাবে। পরে কিছুই হতে পারে না।
.
মৃদু হেসে মেঘ বলল-
এতদিন মেঘ তো ছিল না! এখন মেঘ এসেছে। মেঘের শহর অপেক্ষা করছে হুরায়রার জন্য। যেখানে তার আসতেই হবে!
.
.
বাড়ির সামনে ভিক্ষুক এসেছে বলে অন্তরা আহম্মেদ বাইরে এলেন থালা হাতে নিয়ে। অসহায়দের প্রতি তার মায়া বেশি কাজ করে। তাদের সাহায্য করতে ভালোবাসেন তিনি।
এই বৃষ্টির দিনেও খালি হাতে ফিরে যেতে দেননি ভিক্ষুক কে।
ভিক্ষুক চাল নিয়ে চলে যেতেই তিনি খেয়াল করলেন, একটি মেয়ে তার বাড়ির সামনে হেঁটে চলে যাচ্ছেন।
তার বাড়ির সামনে কত মানুষই হেঁটে যায়। এতে তার কোনো অসুবিধে নেই বা থাকার কথাও নয়। কিন্তু এই মেয়েটির হাতের ছাতা দেখে সে চমকে উঠল। এই ছাতাটি তার ছেলের। কিন্তু ছাতাটি মেয়েটির কাছে কিভাবে এল!
অন্তরা আহম্মেদ মেয়েটির উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বললেন-
এ মেয়ে থামো বলছি?
.
মেয়েটি থামলো না। তা দেখে তিনি রেগেমেগে বললেন-
আমার ছেলের ছাতা চুরি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? থামো বলছি! থামো!
.
এবার মেয়েটি দ্রুত হেঁটে চলে গেল। কিন্তু চেঁচামেচি থামালেন না অন্তরা আহম্মেদ। উঠোনে এসেও তিনি মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে চেঁচাতে লাগলেন।
.
তার কণ্ঠস্বর শুনে বারান্দায় এসে সাইয়ারা বলল-
কি হলো আন্টি?
-একটা মেয়ে আমার ছেলের ছাতা নিয়ে গেল!
-মেঘ ভাইয়ার ছাতা?
-হ্যাঁ। সকালে যেটা নিয়ে সে বাইরে গেল।
-একই রকমের আরেকটি ছাতাও হতে পারে এটি।
-ছেলেবেলা থেকেই মেঘ বৃষ্টির দিনে যতবার বের হয়, ছাতা হারিয়ে আসে। তাই মনে হচ্ছে আমার…
.
তাকে থামিয়ে সাইয়ারা বলল-
কি? এই মেয়েটিকে দিয়ে দেয় সবসময়?
.
সাইয়ারার কথা শুনে মুখটা বাঁকিয়ে তিনি বাড়ির ভেতরে যেতে যেতে বললেন-
না, এই মেয়েটি চুরি করে।
.
.
বন্ধুদের সাথে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বাড়িতে ফিরে এল মেঘ। ভেতরে প্রবেশ করতেই তার মা জানতে চাইলো, ছাতা কোথায়।
মেঘ মুখটা ফ্যাকাসে করে রাখলে তিনি বললেন-
আমি জানি কোথায়।
-কোথায়?
-একটা মেয়েকে দিয়েছিস।
.
চোখ জোড়া বড়বড় করে মেঘ বলল-
তুমি কি করে জানলে?
-মানে! তুই তাহলে ছাতা হারাস না। সেই ছোট থেকেই মেয়েদের দিয়ে বেড়াতিস?
-এমন টা নয় মা। কখনো দিইনি কাউকে। তবে আজই দিলাম একটা মেয়েকে। আসলে আমার বন্ধুদের কাছে তো ছাতা ছিল। তার কাছে ছিল না।
-জনসেবা করবি ভালো কথা৷ ওমন অসভ্য মেয়েকে হেল্প করতে গেলি কেনো?
-অসভ্য?
-হু! কত ডাকলাম তাকে। সে শুনলোই না।
-মেয়েটি এদিকে গিয়েছে?
-হ্যাঁ। আমি তো ছাতা দেখেই চিনেছি, ওটা তোর। সে আমাকেই বললেই হত, তার বিপদের কথা!
.
মেঘ হেসে বলল-
যদি চোর ভেবে ধোলাই দিতে? তাই হয়তো কথা বলেনি।
-ওহ! এটা তো ভেবে দেখিনি।
-দেখো। আমি ফ্রেশ হতে গেলাম।
.
.
ভেজা কাপড় বদলে গোসল সেরে ডাইনিং টেবিলে খেতে আসলো মেঘ। সাইয়ারা কে দেখলো, তার মা ও বোনের সাথে বকবক করছে। তাকে দেখে হ্যালো বলল সে। সাইয়ারা মুচকি হেসে বলল-
বিরিয়ানি খেতে চলে আসলাম।
-ভালো করেছেন।
-তুমি করে বলবেন। আমি ছোট আপনার।
-আচ্ছা।
-তা খেলা কেমন খেললেন?
-কিসের খেলা?
-ওমা আপনি ফুটবল খেলতে গেলেন না?
-না তো!
-তবে?
-ঘুরতে।
-তা কোথায় কোথায় ঘুরলেন?
-বেশি কোথাও না। আনন্দ নগর ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম।
-তাই! ওখানেই আমি পড়ি।
-আচ্ছা! কোন ডিপার্টমেন্টে?
.
এই কথায় সেই কথায় সাইয়ারার সাথে বেশ আড্ডা জমে উঠল। মেঘ বুঝতে পারলো, সাইয়ারা কথা বলতে পছন্দ করে। এবং অনেক মজার মজার কথাও বলে। মাঝেমধ্যে মেয়েটির সাথে আড্ডায় বসাই যায়।
.
.
ডাক্তার ইসরাকের সামনে বসে আছে জিকো। বেশকিছুক্ষণ ধরেই তিনি জিকো কে চেম্বার থেকে বেরুতে বলছেন, কিন্তু সে বসেই আছে।
একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে তিনি বললেন-
আপনি আগেও একজন মেয়ে ছিলেন এখনো মেয়েই আছেন। কেনো আমার সময় নষ্ট করছেন এসব উদ্ভট কথাবার্তা বলে?
.
কান্নাজড়িত কণ্ঠে জিকো বলল-
আমি মিথ্যে বলছি না। বিশ্বাস করুন!
.
জিকোর দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে ডাক্তার ইসরাক বললেন-
আপনার আমার কাছে না, মানসিক ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। উনিই আপনার সঠিক চিকিৎসা করতে পারবে।
.
ডাক্তার ইসরাকের কথা শুনে হতাশ হলো জিকো। তাকে পাগল ভাবলেন তিনি! কেনো বিশ্বাস করছেন না, কাল রাতেও সে ছেলেই ছিল!
.
চলবে
.
#পর্ব_২ :
https://www.facebook.com/778643512491017/posts/1114672525554779/?app=fbl