মেঘের_শহর #পর্ব_২৭ Saji Afroz .

0
119

#মেঘের_শহর
#পর্ব_২৭
Saji Afroz
.
মেঘ বাসায় আসতেই অন্তরা আহম্মেদ চেঁচিয়ে বললেন-
হুটহাট না বলে কোথায় চলে যাস?
.
মিন্নীও বিরক্তভরা কণ্ঠে বলল-
ভাইয়া তুমি জানো না মা কেমন? চেঁচামেচি করে সারা বাড়ি মাথায় তুলেছে তোমাকে না দেখে। আশেপাশের মানুষও চলে আসে। ওদিকে সাইয়ারা আপুও খুঁজতে বের হয়েছে। না বলে কোথায় গিয়েছ তুমি?
.
মেঘ কোনো উত্তর না দিয়ে ভেতরে চলে গেল। অন্তরা আহম্মেদ জোরে জোরে বললেন-
দিন দিন অসভ্য হচ্ছে এই ছেলে। একে তো দোষ করেছে তার উপরে ভাব দেখিয়ে চলে গেল।
.
কথাটি শুনে মেঘ আবার ফিরে এসে বলল-
আমি বাচ্চা নয় মা। তুমি যখন তখন আমার সাথে চেঁচামেচি করতে পারো না। আমি আমার ভালো টা বুঝতে শিখেছি। বাইরে কোথাও কিছুক্ষণের জন্য গেলে কেউ অসভ্য হয়ে যায় না। এখন থেকে আমার লাইফে তুমি হস্তক্ষেপ করতে আসবে না।
.
গরগর করে কথাগুলো বলে মেঘ চলে যায়। অন্তরা আহম্মেদ নিজের জায়গায় শক্ত হুয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।
মেঘ কখনো তার সাথে এভাবে কথা বলেনি। হঠাৎ তার কি হলো!
.
এদিকে মিন্নীর ফোন পেয়ে সাইয়ারা ফিরে এল। মিন্নীর কাছে সবটা শুনে সে হতাশ হয়ে মেঘের রুমে এল। মেঘ তাকে দেখে বলল-
আমি একটু একা থাকতে চাই সাইয়ারা।
-আমি আপনার সাথে সময় কাটাতে আসিনি। কিছু কথা বলেই চলে যাব।
.
সাইয়ারা মেঘের পাশে এসে বলল-
আপনি যে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন সেটা আপনি জানেন?
-মানে?
-মানে! এত পাগলামি করলেন, গায়ে জ্বর বাধিয়ে বসে ছিলেন, জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে ছিলেন। আর আজ হুট করে সকাল সকাল হাওয়া হয়ে গেলেন। আন্টি চিন্তা করবে না? একটু চেঁচালো বলে তাকে কথা শোনালেন। অথচ সেই মা-ই আপনার জন্য না খেয়ে এখনো বসে আছেন। কাঁদতে কাঁদতে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে আপনাকে খুঁজেছেন। আপনি অসুস্থ বলেই আন্টি এত টা চিন্তা করেছেন। আর আপনি কি না তাকেই কথা শোনালেন!
.
মেঘ নীরবে দাঁড়িয়ে রইলো। সাইয়ারা বলল-
সমস্যা টা কি আপনার? এমন আচরণ কেনো করছেন আপনি? আপনি তো এমন ছিলেন না!
.
নিশ্চুপ মেঘ কে দেখে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে বেরিয়ে গেল সাইয়ারা। অন্তরা আহম্মেদের সাথে মেঘের এমন আচরণ সে মেনে নিতে পারছে না। আজ আরেকবার মেঘের উপরে রাগ হচ্ছে তার।
.
.
.
শাপলার বাবা ফিরে এসেছে। এই বাড়িতে এসেছেন তিনি শাপলা কে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। তার জন্য হরেকরকম রান্না করেছেন মোখলেসের মা। দুপুরের খাবারের পর পরই তিনি শাপলা কে তৈরী হয়ে নিতে বললেন রওনা দেয়ার জন্য। শাপলা রুমে এসে কাপড়চোপড় গুছোতে লাগলো। আশ্চর্য! তার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। অথচ সে নিজের বাড়িতে যাবে এই ভেবে খুশি হবার কথা। তবুও সে খুশি হতে পারছে না কেনো! বাইরে যেসব কথা চলছে সেসবের কারণে কি?
.
শাপলার বাবা মুখে পান গুজে মোখলেসের মায়ের উদ্দেশ্যে বললেন-
তাহলে মোখলেসের বিয়েটাও হয়ে যাবে?
-জি। এখন আপাতত বউ টা ঘরে তুলে আনব। মেয়ের বাবা সুস্থ হলে ইনশাআল্লাহ অনুষ্ঠান করা হবে।
-পরে টরে জানি না। নতুন বউ যেদিন আনা হবে সেদিনই আমি চলে আসব।
.
কথাটি বলে হেসে উঠলেন তিনি। মোখলেসের মাও হেসে বললেন-
অবশ্যই আসবেন।
.
মোখলেস বলল-
আপনার সাথে কিছু কথা ছিল আমার শাপলার বিষয়ে।
-হ্যাঁ বলো?
-আপনি যার সাথে শাপলার বিয়ে ঠিক করেছেন, তার সাথে ওর একবার দেখা করানোর প্রয়োজন আছে বলে কি মনে করেন না? না মানে শাপলার ভালো লাগাটাও আপনার ভাবা উচিত।
.
এর মাঝে শাপলা তার ব্যাগ নিয়ে উপস্থিত হয়ে বলল-
তার দরকার নেই। জরুরী না সবাই নিজের পছন্দেই বিয়ে করবে। বাবার প্রতি ভরসা আমার আছে।
.
এটি শুনে শাপলার বাবা বললেন-
ভাগ্য করে এমন একটা মেয়ে পেয়েছি।
.
শাপলা তার বাবা কে তাড়া দিয়ে বলল-
চলুন আব্বা। যাওয়া যাক এবার।
-হ্যাঁ মা চলো।
.
মোখলেসের মা শাপলার কপালে চুমু খেয়ে বললেন-
এমন মেয়ে যে সংসারে যাবে হাসি আনন্দে ভরে থাকবে সেই সংসার। যাক মা, তুই কিন্তু মোখলেসের বউ আনার সময় অবশ্যই আসবি।
.
যা শুনে শাপলার চোখ দুটো ছলছল করে উঠল। আপনমনে বলল সে-
আমি তো এই সংসারের বউ হয়ে আসতে চেয়েছি। কিন্তু কেউ আমার মনের অবস্থা টা বুঝলো না। কেউ না! আর বিয়ে? চোখের সামনে প্রিয় জনের বিয়ে দেখব কি করে!
.
ছোট্ট একটি নিশ্বাস ফেলে মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে শাপলা বলল-
আচ্ছা।
.
.
.
সাইয়ারা নিজের রুমে শুয়ে আছে। হঠাৎ তার খালা এসে বললেন-
সাইয়ারা তৈরী হয়ে নে তো। ভালো করে সাজবি।
-কেনো?
-পরে বলব। আগে হয়ে নে।
-কোথাও যাবা না কি আমাকে নিয়ে?
-আমার জন্য তুই একদিন সাজতে পারবি না?
.
শোয়া থেকে উঠে বসলো সাইয়ারা। তিনি বললেন-
একটু অপেক্ষা কর আমি আসছি।
.
দুই মিনিট পরেই তিনি ফিরে আসলেন। তার হাতে একটা শাড়ি। সাইয়ারা তা দেখে বলল-
নিশ্চয় আমাকে এখন তুমি শাড়ি পরতে বলবা না?
.
একগাল হেসে তিনি বললেন-
হ্যাঁ আমি ওটাই বলব।
-কিন্তু কেনো!
-পরতে বলেছি পর!
.
এক প্রকার জোরাজোরি করেই সাইয়ারা কে শাড়ি পরিয়েছেন তিনি। এরপর নিজেই সাজিয়ে দিচ্ছেন তাকে। বলা ভালো, তিনি সাজগোজের ব্যাপারে পারদর্শী।
সাইয়ারা বলল-
আমিও কিন্তু ভালো সাজ পারি।
-তোর উপরে ভরসা নেই। আমি মনের মতো সাজাব তোকে।
.
সাজানো শেষ হলে সাইয়ারা কে আয়না দেখতে বললেন তিনি। সাইয়ারা নিজেই নিজেকে দেখে বড়সড় একটা ঝাটকা খেলো। তাকে চেনায় যাচ্ছে না। ইচ্ছে করছে মেঘের কাছে ছুটে যেতে। যেতে চেয়েও থেমে গেল সাইয়ারা। কেনো বারবার ভুলে যায় সে হুরায়রা নয়!
সাইয়ারা বলল-
সাজগোছে দেখেছ আমাকে? এবার শাড়ি খুলে ফেলি।
-ধরে একটা মাইর লাগাবো। চুপচাপ এখানে বসে থাক।
-কেনো?
-বস না বাবা! বসে বসে সেলফি তুল। আমি একটু পরেই আসছি। খবরদার শাড়ি খুলবি না বা সাজ নষ্ট করবি না।
.
সাইয়ারা বাধ্য মেয়ের মতো বিছানার উপরে বসে পড়লো। আর ভাবলো, কি যে করছে না তার খালা!

.
.
.

মেঘ দুপুরে ভাত খেলেও অন্তরা আহম্মেদ খাননি। মিন্নী অবশ্য অনেক জোরাজোরি করেছে। মেঘ মিন্নীর কাছে শুনেছে, অন্তরা আহম্মেদ কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছেন। যা শুনে নিজের উপরে রাগ হলো মেঘের।
হুরায়রার বিষয়ে তার মাথাটা খারাপ ছিল। যার কারণে সে তার মায়ের সাথে ওমন আচরণ করেছে।
মেঘ মায়ের কাছে এল। খাটের উপরে পা ঝুলিয়ে বসে আছেন তিনি। মেঘ কে দেখে তিনি মুখ লুকিয়ে ফেললেন।
মেঘ তার পায়ের কাছে মেঝেতে বসে বলল-
আমি তোমার মনে কষ্ট দিয়েছি মা। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর কখনো তোমার সাথে ওমন ভাবে কথা বলব না।
.
অন্তরা আহম্মেদ ভাঙা গলায় বললেন-
বাসা থেকে বের হলেই আমাকে বলে যাবি বল?
.
মায়ের কথাটি শুনে মেঘ হেসে ফেললো।
অন্তরা আহম্মেদ বললেন-
হাসছিস কেনো?
-এখনো এই কথাটি বলছ শুনে।
-বারেহ! তুই ই তো ক্ষমা চাইছিস। এটাই রাজি হলে ক্ষমা পাবি।
.
মেঘ উঠে মা কে জড়িয়ে ধরে বলল-
সব কথা শুনব আগে খাবে চলো।
-তুইও খাবি চল। আমি আড়াল থেকে দেখেছি বেশি খাস নি।
-আচ্ছা চলো।

.
মায়ের সাথে ডাইনিং রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মেঘ। আর ভাবছে, অন্তরা আহম্মেদ যখন জানতে পারবেন হুরায়রার এই শর্তের কথা তখন কি হবে!

.
.
.
খালার সাথে ছাদে এল সাইয়ারা। সাইয়ারা কে ছাদে রেখে হুট করে তার খালা দরজা বন্ধ করে দিলেন। সে চেঁচিয়ে বলল-
কি হলো? এটা কি করলে?
.
কোনো সাড়া না পেয়ে সাইয়ারা বলল-
আমাকে এভাবে বন্ধ করে রেখেছ কেনো? আমি একা একা কি করব ছাদে?
-একা কোথায়? আমি আছি না!
.
কোনো ছেলের কণ্ঠ শুনে ভুত দেখার মতো চমকে উঠল সাইয়ারা। পেছনে ফিরে সে আরো অবাক হয়ে গেল রাফিন কে দেখে।
রাফিন তার ছোটবেলার বন্ধু। যদিও রাফিন তার বয়সে বেশ বড়। তবুও সাইয়ারা তাকে তুই বলেই ডাকতো। রাফিন পড়াশোনার জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিল। সেই থেকে মাঝেমাঝে আগে চিঠি তে আর পরে ফোনে কথা হত দুজনের। আজ এত বছর পর এখানে এভাবে দেখা হবে সাইয়ারা আশা করেনি। সে প্রায় চেঁচিয়ে বলল-
রাফিন তুই!
-হ্যাঁ আমি।
.
মুহুর্তের মাঝেই সাইয়ারা মুখ টা মলীন করে বলল-
তোর সাথে কথা নেই কোনো। আমাকে না জানিয়ে এভাবে হুটহাট চলে এসেছিস। এটা কিছু হলো! খালাও আমাকে কিছু বলেনি। আগে থেকে বললে তোর জন্য একটা গিফট হলেও নিতে পারতাম।
.
সাইয়ারা অভিমান করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। তার সামনে রাফিন বলল-
এটা আমার তরফ থেকে সারপ্রাইজ ছিল পাগলী। আর গিফট? সে তো এখনো দিতে পারিস।
-হ্যাঁ তাই তো! বল তোর কি লাগবে।
.
রাফিন কোনো কিছু না ভেবেই বলল-
তোকে লাগবে আমার। তুই আমার গিফট। তোকে দিয়ে দে আমায়।
.
কথাটি শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না সাইয়ারা। সে বলল-
কি বলছিস তুই?
-আমি সবটা পারিবারিক ভাবে আগেই ম্যানেজ করে ফেলেছি। এখন শুধু তুই রাজি থাকলেই ডেকে নিবো কাজী।
-সবাই বলতে? আমার ফ্যামিলি, তোর ফ্যামিলি। সবাই কে বলেছি, আমি তোকে বিয়ে করতে চাই। জানিস এটা শুনে তারা কত খুশি হয়েছে! এবং তারা এটাও বলেছে তুইও আমাকে পছন্দ করিস।
.
রাফিনের কথা শুনে সাইয়ারা নরম স্বরে বলল-
এখন বিয়ে করতে চাই না।
-কিন্তু সবাই যে বলল তুই গ্রামে ফিরে যেতে চেয়েছিলি। পড়াশোনা করতে চাচ্ছিস না আর।
.
কথাটি সাইয়ারার মনে পড়তেই নিজের উপরে রাগ হলো। হ্যাঁ মেঘের উপরে রাগ করে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এবং সবাই কে জানিয়েছিল এটি। কিন্তু তারা যে তার জন্য পাত্র ঠিক করে ফেলবে এটি সে ভাবেনি।
.
সাইয়ারা বলল-
ওটা তো এমনেই বলেছিলাম।
-দেখ তুই এমনে বললেও সমস্যা নেই। পড়াশোনা টা শেষ কর। তবে বিয়ের পরেও তো করা যায় না কি? আর আমার আবারো বিদেশে চলে যেতে হবে। ওখানেই জব পেয়েছি। কিন্তু বিয়েটা সেরে যেতে চাই। আর বউ হবি তুই।
.
রাফিনের কথা এত গুরুত্ব সহকারে শুনলো না সাইয়ারা। সে নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাবলো, রাফিন তাকে ভালোবাসে এমন টা কখনো মনে হয়নি তার। সেও এই কথা বলেনি কখনো। তবে আজ এতসব কিছু এতটা সহজ ভাবে বলছে কি করে?
.
সাইয়ারা কে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাফিন বলল-
আমি জানি তুই কি ভাবছিস। আমি হুট করে এসব কি বলছি। তাই তো?
-হু।
-তোকে আমি অনেক আগে থেকেই পছন্দ করি। একদিন তোর রুমে একটা লাভ লেটার রেখে গিয়েছিলাম। যেখানে আমার মনের কথা লেখা ছিল। কিন্তু ওটা তোর মায়ের হাতে পড়ে। প্রতিবেশির ছেলে হিসবে পছন্দ করলেও এই বিষয় টা তিনি মানতে পারেন নি। তবে হ্যাঁ, সেদিন আন্টি আমার পরিবার কে কিছু জানান নি। আমাকে বলেছে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিতে। প্রতিষ্ঠিত হলে মেয়ের অভাব হবে না। কিন্তু আমার তো তোকেই লাগবে। তা শুনে তিনি বলেছেন, প্রতিষ্ঠিত হলে তোকেও পাব। এবং তিনি অনুরোধ করেছেন, যতদিন না আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছি ততদিন যেন তোকে মনের কথা না জানাই। এমন টা করেছি তিনি বুঝতে পারলে তোর পড়ালেখায় বন্ধ করে দিবেন।
.
সাইয়ারা অবাক হয়ে বলল-
আমি এসব কিছুই জানি না!
-স্বাভাবিক। আমি আন্টি কে দেওয়া কথা রেখেছি। এবার তার কথা রাখার পালা।
-এখানে কি আমার মতের গুরুত্ব নেই?
.
সাইয়ারার চোখের দিকে তাকিয়ে রাফিন বলল-
কারো সাথে সম্পর্ক আছে তোর?
-কিসের?
-প্রেমের।
.
সাইয়ারা হেসে বলল-
সম্পর্ক আছে। তবে প্রেমের নয়। এটা এমন একটা সম্পর্ক, যার কোনো নাম নেই।
-ভালোবাসিস কাউকে?
.
সাইয়ারা হাসলো।
এতক্ষণ হাসি খুশিতে থাকা রাফিনের মুখে অন্ধকার নেমে এল। সে বলল-
কে সে?
.
সাইয়ারা জবাব দিলো-
মেঘ!
.
.

.

হুরায়রা বলেছিল এই তিনদিন তারা প্রতি সকালে দেখা করবে। একজন আরেক জনের সাথে সময় কাটাবে। এতে করে তাদের ভালোবাসাটাও বৃদ্ধি পাবে। এবং মেঘের সিদ্ধান্ত নিতেও সহজ হবে।
আজ তারা হাওয়া খানায় এসেছে।
এটি বড় একটা মাঠ। যতদূর চোখ যায় শুধু ঘাস আর ঘাস। ঘাসের মাঝে ছোট ছোট সাদা রঙের ফুল দেখা যায়। এখানে তারা ফুল নামেই পরিচিত। মাঠের চারদিকেই বড় বড় গাছ আছে। এখানে সব সময় বাতাস বইতে থাকে। যার কারণে এটির নাম হাওয়া খানা।
মেঘ ও হুরায়রা পাশাপাশি হেঁটে চলেছে। আচমকা হুরায়রা তার হাত ধরে বলল-
মা তোমাকে দেখলে অনেক খুশি হবেন। তার অনেক ইচ্ছে ছিল, সুদর্শন কেউ তার মেয়ের জামাই হবে।
-আমার মায়েরও অনেক ইচ্ছে। তার ছেলের বউ সুন্দরী এর পাশাপাশি গুণবতীও হবেন।
.
কথাটি শুনে হুরায়রার মনে খটকা লাগলো। মেঘ কি এখানেই থেকে যাবে ভাবছে? এমন টা হলে সে তার ভালোবাসা কে পাবে না। এটা হুরায়রা চায়না। সে খুব করে মেঘ কে চায়। পৃথিবীর সমস্ত মায়া ত্যাগ করে তারা মেঘের রাজ্যে একে অপরের সাথে ভালো থাকবে। এখানের কিছুই তার মনে থাকবে না।
এটা মেঘের বোঝা উচিত। সে মেঘের হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। তার খুব ভয় হচ্ছে। এই হাত যদি মেঘ ছেড়ে দেয়? তবে কি সে তার জাদু শক্তির মাধ্যমেই মেঘ কে নিজের পরিবারের কাছ থেকে আলাদা করে দিবে?
-কি ভাবছ হুরায়রা?
.
ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে হুরায়রা বলল-
কিছুনা।
.
কিছুদূর যেতেই একটা মাঝবয়েসী ছেলে মেঘ কে ডেকে বলল-
ভাই একটু শুনেন!
.
হুরায়রা কে অপেক্ষা করতে বলে মেঘ তার পাশে এল। ছেলেটি ফিসফিসিয়ে বলল-
আপনি ভাই এত সুন্দর একটা ছেলে, তবুও এমন একটা বিশ্রি মেয়ের সাথে হাঁটছেন কেনো? যদিও আপনাকে আমি চিনি না। কিন্তু আপনাদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্রেমিক প্রেমিকা। বলতে হবে ভাই, আপনার রুচি খারাপ। তবে হ্যাঁ ভাই, এত বিশ্রি মেয়ে কে দেখলেও তো ভয় লাগে! মুখটা ঢেকে রাখতে বলবেন। নাহলে আমরা তো ভয় পাচ্ছিই, রাস্তাঘাটে বাচ্চারা দেখলে আরো বেশি ভয় পাবে।
.
কথাটি বলে ছেলেটি হনহনিয়ে হেঁটে চলে গেল।
মেঘ নিজের জায়গায় বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো। প্রথমে সাইয়ারা এখন আবার হুরায়রা! এরা কেউই তো দেখতে বাজে নয়। তবে কেনো এই কথা শুনতে হয়েছে তার!
তার সাথে কোনো মেয়ে হাঁটলেই কি বিশ্রি দেখে অন্যরা? এর কারণ টা কি হতে পারে!
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here