#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১১)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(২১)
নিলাদ্র এক হাতে মেয়েটির কমোর জড়িয়ে তার দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। পরক্ষণেই অন্য হাত দিয়ে মেয়েটির মুখের উপর পরে থাকা চুলগুলো সরাতে নিলেই মেয়েটি তার দুইহাত নিলাদ্রের বুকের উপর রেখে চাপ প্রয়োগ করলে নিলাদ্রের ধ্যন ভা*ঙে। নিলাদ্র তৎক্ষণাৎ মেয়েটিকে ছেড়ে দিলে মেয়েটি ধ*প করে নিচে বসে পরে “মাগোওও এতো অল্প বয়সে আমার এতো সুন্দর স্লিম কমোরের হাড় গুলো ভে*ঙে গেলো গো” বলে আ*র্ত*নাদ করে উঠে। নিলাদ্র হতভম্ব দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে। পরক্ষণেই মেয়েটি একহাতে নিজের মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে নিলাদ্রের দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বললো….
—“আমেরিকাতে গিয়ে ধ্যন, জ্ঞান সব হারিয়ে হা*দা*রা*ম সাজার উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে এসেছেন নাকি? ১ম এ তো কোথা না কোথা থেকে এসে চোখ থাকতেও কা*নাদের মতো ধা*ক্কা দিলেন, ২য় তো সদয়বান সাজতে পরে যাওয়া থেকে আটকে নিলেন, ৩য় তো কানের মাথা খেয়ে এসেছেন যে এতোবার ডাকাডাকি করলাম কোনো সাড়াশব্দ করলেন না হুট করেই ছেড়ে দিয়ে আমার কমোরের দফারফা করে ছাড়লেন।”
নিলাদ্রকে এখনও নিজের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কোনো প্রতিত্তুর করতে না দেখে মেয়েটির রা*গ যেনো এবার মাথায় চড়ে বসে। গত রাতে বৃষ্টি হওয়ায় মেয়েটির পরে যাওয়া অংশের চারপাশে হালকা কাঁদা জমে আছে। পরক্ষণেই মেয়েটি ওর পাশ থেকে কিছু কাঁদা মাটি নিজের হাতে নিয়ে নিলাদ্রের উপর ছুঁ*ড়ে মা*রে। যা সরাসরি নিলাদ্রের মুখের উপর গিয়ে প*রে। মুখের উপর হুট করে একগাদা কাঁদা মাটি এসে পড়ায় নিলাদ্র চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলে। নিলাদ্রের চেহারার এমন বেহাল অবস্থা দেখে মেয়েটি আর নিজের হাসি চেপে রাখতে পারে না। মেয়েটি নিজের ডান হাতের উল্টোপিঠ মুখের উপর রেখে হাসতে শুরু করে। নিলাদ্র ওর দুইহাত দিয়ে মুখের উপর জমে থাকা কাঁদা গুলো সরিয়ে ধমকের স্বরে বললো…
—“সন্ধ্যার বা’চ্চা….তোর এতো বড় সাহস তুই আমার মুখে কাঁদা ছু’ড়’লি!”
নিলাদ্রের ধমকের স্বরে বলা কথাটি শুনে সন্ধ্যার হাসি বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা এখন বুঝতে পারছে সে রাগের বসে কার সাথে কি করে ফেলেছে। সন্ধ্যা একবার শুকনো ঢোক গি*লে বিরবিরিয়ে বললো….
—“সন্ধ্যা…যদি নিজের জীবনের প্রতি তোর বিন্দুমাত্র মায়া থাকে তাহলে এক্ষুনি এই স্থান থেকে কে*টে পর। নয়তো এই ধলা ডে’ভিল এর হাতে শহীদ হওয়া থেকে তোকে কেও রক্ষা করতে পারবে না।”
এই বলে সন্ধ্যা ওর এক হাতে ভর দিয়ে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে পা বাড়াতে নিলে নিলাদ্র সন্ধ্যার হাত চে*পে ধরে দাঁতে দাঁত পি*ষে বললো….
—“এতো সহজে আমার হাত থেকে পালাতে পারবি ভাবলি কি করে?”
নিলাদ্রের এমন কথায় সন্ধ্যার অবস্থা যেনো এখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্ধ্যা কোনো পতিত্তুর করার আগেই নিলাদ্র একটা হেঁ*চ*কা টান দিয়ে সন্ধ্যাকে নিজের দিকে অনেকটা এগিয়ে আনে। দুজনের মাঝে ১টাকর পরিমাণও দুরত্ব নেই। নিলাদ্রের এমন কাজে সন্ধ্যা ভ*য়ে চোখ-মুখ খিঁ*চে বন্ধ করে নেয়। নিলাদ্র সন্ধ্যার ভয়ে কুঁচকে রাখা চেহারার দিকে তাকাতেই যেনো ওর সব রাগ অদৃশ্য হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। নিলাদ্র ওর একহাত দিয়ে সন্ধ্যার দুই হাত ওর কমোরের পিছনে চেপে ধরে নিজের সাথে পুরোপুরি ভাবে মিশিয়ে নিয়ে ওর মুখের উপর আসা ছোট ছোট চুলগুলো অন্য হাত দিয়ে খুব যত্নের সাথে সরিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দেয়। সন্ধ্যা এখনও আগের ন্যয় চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে। নিলাদ্র ওর ঠোঁটে হালকা হাসি ফুটিয়ে নিজের গালে লেগে থাকা কাঁদা গুলো হাতে নিয়ে সন্ধ্যার দুই গালে মাখিয়ে দেয়। অতঃপর সন্ধ্যার ডান কানের কাছে মুখ এগিয়ে এনে ফিসফিসিয়ে বললো…..
—“৪বছর ধরে তোর থেকে দূরে থেকেও তোর নেশা কাটিয়ে উঠতে পারলাম না। এতোটুকু সময় হলো কাছে এসেছিস এতেই নিজেকে কেমন মাতাল মাতাল লাগছে। তৈরি হয়ে নে, খুব তাড়াতাড়ি তোকে নিজের রাজ্যের রানী বানিয়ে নিয়ে যাবো।”
এই বলে নিলাদ্র সন্ধ্যাকে ছেড়ে দিয়ে প্যন্টের পকেটে দু’হাত গুঁজে শিঁশ বাজাতে বাজাতে চৌধুরী মেনশনের ভিতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। সন্ধ্যা চোখ মেলে পিছন ঘুরে নিলাদ্রকে চলে যেতে দেখে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো……
—“আল্লাহ কেনো আপনি আবার এই ডে*ভি*লটাকে আমার আশেপাশে ফিরতে দিলেন! গত চারটে বছর তো অনেক শান্তিতেই ছিলাম। আমার শান্তিতে থাকার সময় এতো তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যেতে দিলেন কেনো?”
এই বলে সন্ধ্যাও উল্টোদিকে হাঁটা ধরে। ওরা চলে যেতেই ওদের থেকে কিছুটা দূরে গাছের আড়াল থেকে কোন একজন ছায়া মানবের ছায়াও স্থান ত্যগ করে।
(২২)
রিসিপশন পার্টি শেষ হলে সকল অতিথিরা নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যায়। নিলাদ্র সহ চৌধুরী মেনশনের সকল সদস্যরা ফ্রেশ হয়ে কুশলের কথানুযায়ী আবারও ড্রয়িংরুমে এসে একত্র হয়। তরুনিমা পাশে আঘাত পাওয়ায় সে উপরে নিজের রুমেই থেকে গিয়েছে। কিছুসময় পর কুশল সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে ড্রয়িং রুমে এসে নিজ স্থানে বসে পরে। সাগরিকা চৌধুরী কুশলের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলেন…..
—“কি ব্যপার কুশল দাদুভাই হঠাৎ এতো রাতে কি এমন জরুরি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য সবাইকে একত্র হতে বললে?”
কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য সবাইকে একত্র হতে বলি নি দাদীমা, আমি একটা বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি কেবল সেটাই সকলকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য একত্র হতে বলেছি৷”
সায়মন কিছুটা বিরক্তি ভাব নিজের চেহারায় ফুটিয়ে রেখে বললেন…
—“তুমি কখনও এ বাড়ির গুরুজনদের সঠিক মূল্যায়ন করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের সাথে আলোচনা করেছো নাকি? করো নি তো! তাই তোমার থেকে এমনটা হবে তা এক্সপেক্ট ও করি না আমরা।”
সায়মনের এমন প্রতিত্তুর যে কুশলের উপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে নি তা ওর চেহারার দিকে তাকালেই বুঝতে পারছে সবাই। সাবরিনা শান্ত স্বরে বললেন….
—“আহা সায়মন….কেনো তুমি বারবার আমার ছেলের কাজের মাঝে দো*ষ খুঁজতে বসো বলো তো? আমার কুশল বাবা আমাদের কারোর সাথে কোনোরূপ আলোচনা না করে যেই সিদ্ধান্তই নিয়েছে তা কখনও আমার ক্ষ*তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় নি। তাই বাবা হয়ে সবসময় ছেলের কাজের মাঝে দো*ষ খুঁজতে গিয়ে আর নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্যের গভীরতা বাড়িও না।”
সাবরিনার কথায় সায়মন চুপ হয়ে যায়। রিজভী শান্ত স্বরে বললেন…..
—“কুশল…বাবা তুমি বলো এখন কি সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য সকলকে একত্র করলে!”
কুশল সকলের উপর দৃষ্টি স্থির রেখে বললো……
—“বড় বাবার চিকিৎসার জন্য আমি একজন যোগ্য চিকিৎসকের ব্যবস্থা করেছি। আগামীকাল সকাল থেকে সেই বড় বাবার চিকিৎসার দিকটা সামলাবে।”
সাগরিকা চৌধুরী প্রশ্ন করলেন….
—“কে সেই চিকিৎসক? আমরা কি তাকে চিনি?”
কুশল নিলাদ্রের দিকে তাকিয়ে বললো….
—“হুম, নিলাদ্রই আগামীকাল থেকে বড় বাবার চিকিৎসার সম্পূর্ণ দিক সামলাবে।”
কুশলের এমন কথা শোনা মাত্র কামিনীর হেঁচকি উঠে যায়। সাথে সাথেই কামিনী দু’হাতে নিজের মুখ চেপে ধরে হেঁচকির শব্দ বের হওয়া আটকানোর চেষ্টা করে। নিলাদ্র কামিনীর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো…
—“চাচী…মুখ থেকে হাত সরান। লম্বা একটা নিঃশ্বাস টেনে কিছুসময় শ্বাস ফেলা বন্ধ রাখুন হেঁচকি বন্ধ হয়ে যাবে।”
নিলাদ্রের কথানুযায়ী কামিনী লম্বা একটা নিঃশ্বাস টেনে শ্বাস ফেলা বন্ধ রাখে। কুশল শান্ত স্বরে বললো….
—“সবাই এখন সবার নিজ নিজ ঘরে যেতে পারেন। আমার আর কিছু বলার নেই। আর নিলাদ্র তুই আমার সাথে আয় বড় বাবার ঘরে যেতে হবে।”
অতঃপর সকলেই বসা অবস্থা থেকে উঠে পরে নিজ নিজ রুমে চলে যায়। কামিনীকে এখন নিঃশ্বাস বন্ধ রেখে নিজ স্থানে বসে থাকতে দেখে রিজভী বললেন….
—“একেবারের জন্য নিঃশ্বাস বন্ধ রেখে নিজেকে কবরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছো নাকি তুমি?”
রিজভীর এমন কথা শোনামাত্র কামিনী চোখ বড় বড় করে রিজভীর দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে হাঁপাতে শুরু করে।
চলবে ইনশাআল্লাহ……..
(বি-দ্রঃ গতকাল সকাল থেকে আমি ভিষণ অসুস্থ বোধ করছি। শরীর ভিষণ দূর্বল লাগছে। মাথা কেমন যেনো ভা*র হয়ে আছে। তাই গতকাল গল্প দিতে পারি নি। আজ কিছুটা ভালো লাগায় ক’ষ্ট করে লিখলাম। তাই কেও ছোট বলবেন। রিচেক করি নি, ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আল্লাহ হাফেজ, আসসালামু আলাইকুম)