হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬৯) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
430

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬৯)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৫৯)
দুইদিন পর………
খুব ছোট করে ঘরোয়া ভাবেই তাহির আর হুমায়রার বিয়ের আয়োজন করেছেন তমিজ তালুকদার। হুমায়রার রুমে ওকে খুব যত্নসহকারে নতুন বধুর সাজে সাজিয়ে দিচ্ছে তরুনিমা আর সন্ধ্যা। গাড় লাল রংয়ের বেনারসি শাড়ির সাথে হালকা সাজ আর হালকা গহনা পড়িয়ে দেওয়ার পর হুমায়রাকে কোনো অপ্সরাদের থেকে কম মনে হচ্ছে না। সন্ধ্যা হুমায়রার মুখোমুখি বসে চোখ ছোট ছোট তাকিয়ে বললো…

—“এতোসময় নিয়ে এতো সুন্দর করে সাজিয়ে দিলাম তোমায় এখন তো মনে হচ্ছে আমাদের সব পরিশ্রম বৃ*থা গেলো।”

হুমায়রা অবাক দৃষ্টি নিয়ে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বললো…
—“মানে!”

—“আগে এই প্রশ্নের উত্তর দাও, তাহির ভাইয়াকে তো তুমি ভালোবাসো তাই না?”

হুমায়রা ছোট্ট করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে অত্যন্ত ধীরস্বরে বললো…
—“আমি আমার সবটা উজার করে ওকে ভালোবাসলেও ওর কাছে না আমার মূল্য আছে আর না আমার ভালোবাসার।”

সন্ধ্যা হুমায়রার কথা গুলো স্পষ্ট ভাবে শুনতে না পেরে বললো….
—“কি বললে!”

হুমায়রা হালকা হাসি দিয়ে বললো…
—“হুম ভালোবাসি তো।”

—“কিন্তু তোমাকে দেখে মনেই হচ্ছে না যে তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষটাকে আজ নিজের করে পাবে! মনে হচ্ছে তোমাকে জোর করে বেঁ*ধে কোনো বুড়ো, পেট মোটা, টাকলু দাদুর সাথে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”

সন্ধ্যার এমন কথা শুনে শত মন খারাপের মাঝেও হুমায়রার মুখে হাসি ফুটে উঠে। সন্ধ্যা হাসিমুখে বললো…

—“ইসস হাসলে কি মিষ্টি লাগে তোমায়! এই হাসিটাই তো এতোসময় মিস করছিলাম। সবসময় এভাবেই হাসিখুশি থেকো বুঝলে! নয়তো পরে যদি আবারও দেখেছি মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো চু*প*ষা*নো অবস্থায় রেখেছো তাহলে সত্যি সত্যিই তাহির ভাইয়ার জায়গায় কোনো বুড়ো দাদুকে বসিয়ে দিবো।”

হুমায়রা হাসিমুখে বললো….
—“হাসলে কিন্তু তোমাকেও ভারি মিষ্টি লাগে সন্ধ্যা।”

সন্ধ্যা ওর সামনে থাকা চুল গুলো হাত দিয়ে পিছনে সরিয়ে দিয়ে একটু ভাব নিয়ে বললো….

—“হুম..হুম..আমি জানি!”

তরুনিমা শান্ত স্বরে বললো…
—“সন্ধ্যা..নিচ থেকে একবার ঘুরে এসো আর দেখো আমাদের কেও খুঁজছে কি না!”

—“আচ্ছা মেজো ভাবী।”

এই বলে সন্ধ্যা বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরুনিমা হুমায়রার মাথার উপর থাকা ওড়নাটায় লাস্ট পিনটা সেট করে দিয়ে ওর সামনে এসে বসে শান্ত স্বরে বললো….

—“হুমায়রা..তুমি কোনো বিষয় নিয়ে আপসেট হয়ে আছো?”

হুমায়রা তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। আজ প্রথম সে তরুকে এতোটা কাছে থেকে নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তরু হুমায়রার হাতের উপর হাত রেখে বললো….

—“তুমি চাইলে আমাকে তোমার খারাপ লাগার কারণগুলো শেয়ার করতে পারো। হয়তো আমি তা কমিয়ে দেওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা করতে পারবো না তবুও বলবো নিজের ভিতরে পুষে রেখে য*ন্ত্র*ণা সহ্য করার থেকে বিশ্বাসযোগ্য কারোর কাছে শেয়ার করা ভালো। এতে খারাপ লাগা একটু হলেও কমে যায়। বুকের ভিতরটা হালকা অনুভব হয়।”

হুমায়রা শান্ত কন্ঠে বললো….
—“তুমি ভিষণ রকম সৌন্দর্যের অধিকারী তা কি তুমি জানো তরুনিমা! তোমার সম্পূর্ণ মুখশ্রী জুড়ে ভিষণ মায়া মিশে আছে। একবার যে তোমার দিকে গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকাবে তার পক্ষে তোমার মায়া কাটিয়ে উঠা সহজ হবে না।”

হুমায়রার এমন কথায় তরু বেশ অবাক হয়। হুমায়রা আবারও বললো….
—“তাই হয়তো দীর্ঘ ৫বছর ধরে তোমার থেকে দূরে থেকেও তাহির তোমার মায়া আজও কাটিয়ে উঠতে পারে নি। এ কারণেই হয়তো আমার সৌন্দর্য, আমার ভালোবাসা, আমার পা*গ*লা*মী, আমার যত্ন গুলো ওর চোখে পড়ে না। আমাকে অ*ব*হে*লা করতে, বুকের ভেতরটা ধাঁ*রা*লো ছু*রি দিয়ে ক্ষ*ত-বি*ক্ষ*ত করে দেওয়ার মতো কথা বলতে ওর একটুও বাঁ*ধে না। তুমি জানো তরুনিমা! তাহির আমাকে বিয়ে করছে শুধু মাত্র খালার মন রাখতে! আমাকে বিয়ে সে দয়া দেখাচ্ছে এই কথাও সে নিজে নির্দ্বিধায় আমাকে বলেছে। আমিও কতো বোকা ছিলাম মাঝে মাঝে ওর কিছু কাজকে ভালোবাসার অংশ মনে করতাম। এই বিয়ে নিয়ে আমার আর মনে কোনো আনন্দ কাজ করছে না। তবে আমি এটা বুঝতে পারছি যে তাহির এখনও তোমাকে ভালোবাসে। তোমাকে ভুলে আমাকে ভালোবাসা ওর পক্ষে আদেও কখনও সম্ভব হবে কি না আমি জানি না।”

তরুনিমা নিরব শ্রোতার মতো হুমায়রার প্রতিটি কথা শুনলো। হুমায়রার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। কিছুসময় পর তরুনিমা কোনো প্রতিত্তুর না করেই বিছানা থেকে রুম থেকে বের হয়। হুমায়রা অশ্রুসিক্ত নয়নে তরুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়।
.
.
.
কুশল আর নিলাদ্র যত্ন সহকারে তাহিরকে বরের বেশে সাজিয়ে দিচ্ছে। সেইসময় তরুনিমা তাহিরের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বললো…

—“কুশল, নিলাদ্র ভাইয়া আপনারা দু’জন রুম থেকে বের হন কিছুসময়ের জন্য।”

আকস্মিক তরুর এমন কথায় ওরা তিনজনই বেশ অবাক হয়। কুশল তরুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বললো….
—“কি হয়েছে তরুনিমা! কোনো স*ম*স্যা কি?”

—“দয়াকরে কোনো প্রশ্ন না করে দু’জনেই রুম থেকে বের হন আমার তাহিরের সাথে কিছু পারসোনাল কথা আছে।”

তরুর এরূপ কথা শুনে কুশল আর নিলাদ্র আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে বের হয়। তরুনিমা ওদের মুখের উপর ভিতর থেকে ঠা*স করে দরজা লাগিয়ে দেয়। নিলাদ্র কুশলের কাঁধের হাত রেখে ভাবুক স্বরে বললো…

—“কি রে, ভাবী তো আমাদের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো। ভাবীর কথার ধরণ শুনে মনে হচ্ছে ভাবী কোনো বিষয় নিয়ে ভিষণ রেগে আছেন।”

—“আমারও তো তাই মনে হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ আমার বউয়ের হলো টা কি!”

নিলাদ্র কুশলের কাঁধের উপর থেকে হাত সরিয়ে দরজায় কান পেতে ভিতরের কথপোকথনের শব্দ শোনার চেষ্টা করে।
.
.
.
তাহির শান্ত স্বরে বললো….
—“কি হয়েছে তরুনিমা!”

তরুনিমা কোনো প্রতিত্তুর না করে তাহিরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তাহিরের গালে একটা চ*ড় বসিয়ে দেয়। যার শব্দ বাহির থেকে কুশল আর নিলাদ্র দু’জনেই স্পষ্ট ভাবে শুনতে পায়। নিলাদ্র বললো…

—“এ থা*প্প*ড় দেওয়ার শব্দ শোনা গেলো তো! ভাবী কি তাহিরকে থা*প্প*ড় দিলো!”

কুশল শারিরীক অঙ্গভঙ্গি দ্বারা বুঝালো যে ‘হতেও পারে’। তরুর আকস্মিক এমন কাজে তাহির ওর চেহারায় হ*ত*ভ*ম্ব*তার ছাপ ফুটিয়ে গালে একহাত রেখে যেই না কিছু বলতে নিবে ওমনি তরুনিমা অন্যহাতে দিয়ে আবারও নিজের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তাহিরের অন্য গালে একটা চ*ড় বসিয়ে দেয়। নিলাদ্র নিজের দু’গালে দু’হাত রেখে বললো…

—“আবার থা*প্প*ড় দিলো!”

তাহির ওর দু’গালে দু’হাত রেখে তরুনিমার দিকে তাকিয়ে আছে। তরুনিমা দাঁতে দাঁত চে*পে বললো….

—“মুখ দিয়ে এখন আর একটা শব্দ উচ্চারণ করার চেষ্টাও যদি করেছেন আপনি তাহলে ঐযে বেডসাইড টেবিলের উপর রাখা ঝুড়ির ভিতর ছু*ড়ি*টা দেখছেন ওটা দিয়ে আপনার জি*হ্বা*টা একদম কে*টে ফেলবো।”

তরুর এমন কথায় তাহিরের চোখ স্বাভাবিক এর তুলনায় কিছুটা বড় হয়ে যায়। তরুনিমা আবারও বললো…

—“এখন যা যা প্রশ্ন করবো সবগুলোর সত্য উত্তর চাই আমি। হ্যা বা না মাথা নাড়িয়ে তা বুঝিয়ে দিবেন।”

তাহির সঙ্গে সঙ্গে একপার্শে মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বুঝায়। তরুনিমা শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো…

—“আমি যে বিবাহিত এই কথা আপনি কি জানেন?”

তাহির মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক জবাব দেয়।

—“শুনলাম আপনি এখনও আমায় ভালোবাসেন! এটা কি সত্য?”

তরুর ২য় প্রশ্ন শুনে তাহির নিরব থাকে। তরুনিমা রাগী স্বরে বললো…
—“ভেবে চিন্তে উত্তর করুন। নয়তো আজ আপনার গাল দু’টো ঠিক থাকবে না।”

তাহির ওর গাল থেকে সরিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যা সুচক জবাব দেয়। তরুনিমা মুখে কিছু না বলে সঙ্গে সঙ্গে তাহিরের গালে আরেকটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দেয়। তাহির ওর মাথা নিচু করে ফেলে। তরুনিমা রাগী স্বরে বললো….

—“একজন বিবাহিত নারীর জন্য এখনও নিজের মনে ভালোবাসার অনুভূতি গুলোকে বাঁ*চি*য়ে রেখেছেন কোন লজ্জায়! আপনার কি মনে হয় আমি আমার স্বামী কুশল চৌধুরীকে ছেড়ে দিয়ে আবারও আপনার কাছে ফিরে আসবো!”

তাহির কোনো প্রতিত্তুর করে না। তরুনিমা বললো…
—“আমার চোখের দিকে তাকান তাহির।”

তাহির তরুর চোখের দিকে তাকায়। তাহিরের দু’চোখের মনির চারপাশের সাদা অংশ ইতিমধ্যে হালকা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। তরুনিমা আবারও বললো….

—“হুমায়রা যে আপনাকে ভালোবাসে এই কথা কি আপনি জানেন!”

তাহির আবারও মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক জবাব দেয়। তরুনিমা এবারও তাহিরের অন্যগালে স্বজোরে একটা থা*প্প*ড় দেয়। পরপর চার চারটে থা*প্প*ড় খেয়ে তাহিরের ফর্সা গাল দু’টোও হালকা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। তরুনিমা দাঁতে দাঁত পি*ষে বললো….

—“একজন বিবাহিত নারীর জন্য মায়া, ভালোবাসার স্মৃতি মনের ভিতর পুষে রেখে হুমায়রার ভালোবাসাকে ছোট করার, ওর অনুভূতি গুলোকে অমূল্যায়ন করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে!”

তাহির আর তরুর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে না। সে মাথা নিচু করে ফেলে আবারও। তরুনিমা তাহিরের পাঞ্জাবির কলার্ট একহাতে চেপে ধরে রাগী স্বরে বললো….

—“যাকে পাওয়া আর কখনও সম্ভব না তার স্মৃতি মনের ভিতর পুষে রেখে যে আপনাকে পা*গ*লে*র মতো ভালোবাসে তার ভালোবাসাকে ঠু*ক*রা*চ্ছেন আপনি! ছিহ্:। একটা কথা পরিষ্কার বাংলা ভাষায় বলছি, আমার সব স্মৃতি মন ও মস্তিষ্ক থেকে চিরতরের জন্য মুছে ফেলুন আর হুমায়রাকে বোঝার চেষ্টা করুন। ওকে ওর সবটা উজার করে একবার আপনাকে ভালোবাসার সুযোগ দিন দেখবেন আপনিও ওকে ভালোবাসতে বাধ্য হবেন। তবে হ্যা লাস্ট আরেকটা কথা বলে রাখছি এটাও মাথার ভিতর ঢুকিয়ে নিন ভালো ভাবে, আজকে এই মূহূর্তে পর যদি আর কখনও আপনার কোনো কথায় বা আচারণে হুমায়রার মন খারাপ হয় বা ওর চোখে থেকে এক ফোঁটা অশ্রু ঝরে বা আমি জানতে পারি আপনি আবারও আমার কথা স্মরণ করে ওকে বিন্দুমাত্র অ*ব*হে*লা করেছেন তবে সেইদিনটাই হবে আপনার জীবনের শেষ দিন।”

এই বলে তরুনিমা তাহিরের কলার্ট ছেড়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে দরজার কাছে এসে দরজা খুলতেই নিলাদ্র ধ*প করে মেঝের উপর পরে যায়। তরুনিমা বুঝতে পারে এতোসময় নিলাদ্র দরজায় হেলান দিয়েই দাঁড়িয়ে ছিলো তাই এই পরিণতি হলো ওর। তরুনিমা সামনে তাকাতেই দেখে কুশল ওর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির রেখে দাঁড়িয়ে আছে। তরুনিমা কোনো কথা না বলে স্থান ত্যগ করে। কুশলও কিছু বলে তরুনিমাকে বাঁধা প্রয়োগ করে না। কুশল নিলাদ্রের পায়ে হালকা করে একটা লা*থি প্রয়োগ করে বললো….

—“উঠ ব্যটা।”

নিলাদ্র উঠে দাড়িয়ে তাহিরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো…
—“তোমার গাল দু’টো ব্য*থা করছে না ভাই? বরফ দিবে!”

তাহির ছলছল দৃষ্টি নিলাদ্রের দিকে তাকিয়ে আলতো ভাবে ওর গালে দু’হাত রেখে বিছানার কাছে যেতে যেতে বললো….
—“তা আর বলতে! আআআহহহ কি ব্যথা! ভাই বরফ এনে দাও জলদী।”

নিলাদ্র দ্রুত রুম থেকে বেড়িয়ে যায় বরফ আনতে। কিছুসময় পর নিলাদ্র বরফ এনে তাহিরের গালে লাগিয়ে দিতে থাকে। নিলাদ্র বললো….

—“কুশল…..বন্ধু আমার! সাবধানে থাকিস তুই সবসময়। তাহির কি ভু*ল করেছে তা তো জানি না। কিন্তু এতেই ওর কি হাল করে দিয়েছে দেখছিস তো। তুই যদি কোনো ভু*ল করিস তাহলে তোর যে কি অবস্থা করবে আমাদের ডে*ন্ঞ্জা*রা*জ ভাবী সেটা ভেবে এখনি আমার শরীর শিউরে উঠছে।”

#চলবে ইনশাআল্লাহ….……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here