#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-০৯||
১৪।
ভোর হতেই ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো আহি। পাখির কিচিরমিচির শব্দ নিস্তব্ধতা ভেঙে দেওয়ার খেলায় মত্ত। আর আহি ধীর পায়ে তার ভারী লাগেজ ব্যাগটি টেনে না নিয়ে হাতে নিয়েই নামছে, যাতে শব্দ শুনে রিজওয়ান কবির নিজের রুম থেকে বের না হোন। আহিকে দেখে মুনিয়া খালা ভ্রূ কুঁচকে তাকালেন। তিনি ফজরের নামাজের পর আর ঘুমান না। আহি নিচে নেমে ইশারায় তাকে চুপ থাকতে বললো। মুনিয়া খালা চাপা স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,
“কই যাও, ছোড আফা?”
আহি ব্যাগটা নামিয়ে মুনিয়া খালার হাত ধরে বলল,
“মায়ের কাছে যাচ্ছি। বাবাকে বলো না। জিজ্ঞেস করলে বলবে আমি যাওয়ার সময় বলেছি বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।”
“তুমি তো স্যাররে কইয়া যাইতে পারো। মিছা কথা কইলে কি স্যার বুঝবো? স্যার তো তোমারে বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলে কিছু কইবো না।”
“খালা, কাল রাতেই বাবা আমাকে রাদের সাথে দেখা করতে নিষেধ করেছে। রাদ আর লাবীব ছাড়া তো আমার আর কোনো বন্ধু নেই। তাহলে বাবাকে এই কথা কীভাবে বলবো?”
“স্যার যদি জানতে ফারে তুমি ম্যাডামের সাথে দেখা করতে যাইতাছো, মাইরা ফেলবো তোমারে।”
আহি করুণ দৃষ্টিতে মুনিয়া খালার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সপ্তাহে অন্তত একদিন মায়ের সাথে দেখা করার অনুমতি আছে। এই যুক্তিতে বাবা অবশ্যই হেরে যাবে। কিন্তু এখন বলে গেলে, কিছু একটা করে আমাকে আটকে রাখবে।”
আহি ব্যাগ নিয়ে বাড়ির মেইন গেট খুলতেই লাবণি মেহেরা তার মুখের সামনে এসে দাঁড়ালো। লাবণিকে দেখে আহি চমকে উঠলো। লাবণি আহির হাতে ব্যাগ দেখে ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“তুমি কাল এসেছো, আর আজই পালিয়ে যাচ্ছো?”
আহি গম্ভীরমুখে বলল, “আমি পালিয়ে যাচ্ছি না।”
“আচ্ছা! তাহলে ব্যাগপত্র নিয়ে চোরের মতো সকাল হওয়ার আগেই বেরিয়ে পড়ছো কেন? তোমার বাবা কি জানেন তুমি কোথাও যাচ্ছো?”
আহি দৃঢ় কন্ঠে বললো,
“আমি কারো কাছে অনুমতি নিতে বাধ্য নই।”
লাবণি বাসায় ঢুকেই মুনিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“যাও, তোমার স্যারকে ডাকো। বলো, ম্যাডাম চলে এসেছে।”
আহি লাবণির কথা উপেক্ষা করে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাবে তখনই লাবণি তার হাত ধরে তাকে থামিয়ে দিলো। আহি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই লাবণি আরো জোরে তার হাত চেপে ধরে তাকে ধাক্কা দিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো।
(***)
দশ মিনিট পর রিজওয়ান কবির ঘুম ঘুম চোখে নিচে নেমে এলেন। মুনিয়া খালাও নিচে নেমে পর্দার আড়ালে গিয়ে দাঁড়ালেন। লাবণিকে দেখে রিজওয়ান কবির বললেন,
“তুমি চলে এসেছো তাহলে?”
লাবণি আহির দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভাগ্যিস আমি ঠিক সময়ে এসে পড়েছি। তা না হলে তোমার মেয়ে তো পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।”
রিজওয়ান কবির আহির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই আহি ক্ষেপে উঠলো। চেঁচিয়ে বলল,
“আমি মায়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। আইনগত ভাবে সপ্তাহে একদিন আমি মায়ের সাথে দেখা করতে পারবো।”
লাবণি চমকে উঠে বললেন,
“মা! তোমার মা তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। তুমি ভুলে যেও না এখন একমাত্র আমিই তোমার মা। আন্ডারস্ট্যান্ড?”
আহি কিছু বলতে যাবে তখনই রিজওয়ান কবির তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
“তুমি তোমার মায়ের সাথে দেখা করতে যেতে পারো, আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তোমাকে এর আগে সেই কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করতে হবে। তোমাকে মেনে নিতে হবে তুমি তাজওয়ারের জন্য সৃষ্টি হয়েছো। তাজওয়ার তোমার ভবিষ্যৎ। ও তোমাকে যা-ই বলবে তুমি মানতে বাধ্য।”
লাবণি রিজওয়ান কবিরের হাত ধরে আহ্লাদী কন্ঠে বললো,
“দেটস লাইক মাই হাসবেন্ড।”
কথাটি বলেই তিনি আহির দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে হাসলেন। আহি তার হাতের ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বলল,
“আমি কোনো শয়তানের সামনে মাথা নত করবো না।”
রিজওয়ান কবির আহির কাছে এসে হুট করে তার গালে সশব্দে চড় বসিয়ে দিলেন। আহি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মুনিয়া খালা পর্দার আড়াল থেকে বের হয়ে আহিকে আগলে ধরে বললেন,
“স্যার, ছোড আফা ভুলভাল বইলা ফেলছে। আপনে আফারে মাইরেন না। মেলা বছর পর দেশে ফিরছে তো তাই মারে দেখতে মন চাইতাছে।”
লাবণি মুনিয়া খালার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
“বেশি বকবক করলে তোমার মেয়ের কপাল ভাঙবে। খুব সুন্দর তোমার মেয়ে! মাসে ভালোই ইনকাম করতে পারবে।”
আহি লাবণিকে জোরে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“সবাইকে নিজের মতো মনে করবেন না, মিসেস লাবণি।”
রিজওয়ান কবির আহির কথায় আবার তার গায়ে হাত তুলতে যাবেন তখনই লাবণি তাকে আটকে দিয়ে বলল,
“তুমি ওর মুখ বন্ধ করতে পারবে না। ওকে ওর মতো বলতে দাও। সময় আসুক। আমি নিজেই ওকে দেখিয়ে দেবো, আমি কে?”
(***)
ধপ করে নিজের ঘরে এসে শুয়ে পড়লো আহি। সে জানতো এমন কিছু হবে, তাই হয়তো বাবা তাকে দেশে আসতে বলেছিলেন। নয়তো আহি কখনোই দেশে ফিরতো না। কতো বার সে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু লন্ডনেও তাকে পাহারা দেওয়ার জন্য বাবা লোক রেখেছিলেন। আর আহি পালিয়ে গেলেই সালমা ফাওজিয়াকে বন্দী করবেন রিজওয়ান কবির। চার বছর আগে রিজওয়ান কবির আহিকে নিজের কাছে রাখার জন্য যা করেছিলেন, তারপর আর আহির কোনো কিছুতেই সাহস হয় না। আহি যদিও জানে না তার মা সালমা ফাওজিয়া তাকে আদৌ ভালোবাসেন নাকি ঘৃণা করেন। কারণ আহির জন্যই তো তার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল।
আহি মাথা তুলে নিজের গালে নিজেই কয়েকটা চড় মারলো। চড় মারতে মারতেই সে কাঁদতে লাগলো। আর ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল,
“তুই একটা লুজার, আহি। তোর মতো ইঁদুর কপাল নিয়ে কেউ জন্ম নেয় নি।”
আহি চোখ মুছতেই তার দৃষ্টি আটকালো সামনে থাকা কাঠের স্ট্যান্ডের দিকে। আহি বিছানা ছেড়ে উঠে মেঝেতে বসে পড়লো। কাঠের স্ট্যান্ডটি এখনো আছে, কিন্তু এই স্ট্যান্ডের উপর দাঁড়িয়ে থাকা ভাস্কর্যটি আর নেই। এক ফুট উঁচু গোল কাঠের স্ট্যান্ডের উপর মাথা রাখলো আহি। বুকে হাত রেখে তার ভেজা চোখ জোড়া বন্ধ করলো সে। হারিয়ে গেলো অতীতের সেই সুখের দিনগুলোতে।
………………………..
আহিকে ঘিরে বসে আছে পুষ্প, পদ্ম আর লিনাশা। তারা গভীর দৃষ্টিতে আহিকে পর্যবেক্ষণ করছে। আহি ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“তোরা আমাকে এভাবে দেখছিস কেন?”
পদ্ম বলল, “এআর কে?”
আহি চোখ বড় বড় করে পদ্মের দিকে তাকালো। পুষ্প বলল,
“আজকের বিশেষ শিরোনাম, পলি আপু গ্রুপের বিশেষ সদস্য ওয়াসিকা কবির ভয়ংকরভাবে প্রেম রোগে ভুগছেন। জরুরী অবস্থায় তাকে আইসিউতে রাখা হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে তিনি লাইফ সাপোর্টে চলে যেতে পারেন।”
পদ্ম পুষ্পের মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
“অশুভ কথাবার্তা বলিস না। এআর কি কোনো ভাইরাসের নাম না-কি আহিকে লাইফ সাপোর্টে চলে যেতে হবে?”
লিনাশা পদ্ম আর পুষ্পকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল,
“সবাই চুপ। আহির কাছে লুকিয়ে আছে এআর ক্যারেটের গোল্ড। এখনই বের করে দে আহি। নয়তো সত্য গোপন করার অপরাধে মামলা টুকে দেবো।”
আহি হাত উঁচিয়ে বলল,
“তোরা চুপ কর। আমি বলছি, শোন।”
আফিফের সাথে তার প্রথম দেখা হওয়া, কীভাবে আফিফের প্রেমে পড়েছে সব তার বান্ধবীদের জানালো আহি। তবে আফিফের জন্য সে কি কি পাগলামো করেছিল, সেসব গোপন রাখলো। ডায়েরীর কথাটাও জানালো না। যদিও আহির এখন আফিফের কথা কাউকে জানানোর পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু খাতায় একটা ছেলের স্কেচের নিচে ভালোবাসি এআর দেখে পুষ্প আহির গোপন প্রেমের রহস্য সবার সামনে উন্মোচন করাই আহিকে বাধ্য হয়ে সব স্বীকার করতে হলো। যদিও আহি লিনাশাকে আফিফের কথা জানাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কারণ তার সাথেই আহি বেশি ঘনিষ্ঠ। কিন্তু লিনাশার সাথে একা কথা বলার সুযোগ পাচ্ছিল না আহি। এদিকে সবার আগে এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিনাশা কেন পায় নি, তাই তার মন খারাপ। সে স্কুল ছুটি হতেই গেট দিয়ে একা একাই বেরিয়ে যাচ্ছিল। আহি ছুটে এসে পেছন থেকে লিনাশার ব্যাগ ধরে তাকে আটকালো। লিনাশা পেছন ফিরে রাগী স্বরে বলল,
“আমি তোর বেস্টু?”
আহি কান ধরে বলল,
“তোকেই জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পদ্ম আর পুষ্পের সামনে জানাতে পারি নি। আমরা একা একা ফিসফিস করলে ওরা মন খারাপ করবে।”
“এখন তো সবাই জেনে গেছে।”
“পুষ্প স্কেচটা দেখে ফেললো, তাই।”
“আর আমি এতো দেরীতে জানলাম?”
“আচ্ছা, সরি। বল, কি খাবি তুই?”
“এই মেয়ে, লোভ দেখাবি না আমাকে।”
লিনাশা গাল ফুলিয়ে রাস্তার মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে রইলো। আহি টেনে তাকে একপাশে এনে বলল,
“পুষ্পের কুখ্যাত চ্যানেলের শিরোনাম হওয়ার ইচ্ছা আছে তোর? দেখা যাবে কাল শিরোনাম হবে, বেস্ট ফ্রেন্ডের গোপন প্রেমের গল্প আগে শুনতে না পারায় গাড়ির নিচে স্বেচ্ছায় ঝাঁপিয়ে পড়লো একটি পাগল মেয়ে।”
লিনাশা ঝাঁকুনি দিয়ে আহির হাত সরিয়ে দিয়ে বলল, “তুই পাগল।”
আহি মুখ বাঁকিয়ে বলল, “ইউ টু।”
লিনাশা চোখ-মুখ কুঁচকে বললো, “ইউ টু টু।”
আহি দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “ইউ টু টু টু।”
লিনাশা চেঁচিয়ে বলল, “ইউ টু ইনফিনিটি।”
দু’জনই কিছুক্ষণ চুপ। এরপর তারা একসাথে হেসে উঠলো। এবার লিনাশা আহির কাঁধে হাত রাখলো আর রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঁটতে লাগলো। লিনাশা বলল,
“এআরকে জানিয়েছিস?”
আহি মাথা নেড়ে বলল, “উহুম।”
“কখন জানাবি?”
“সাহস হচ্ছে না।”
“সে তো কিছুই জানে না। অন্তত কিছু হিন্টস তো দে।”
“কেমন হিন্টস?”
লিনাশা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“ছেলেটার একটা স্কেচ করে ওকে গিফট কর। নাম-পরিচয় দিবি না। অজ্ঞাতনামা প্রেমিকা নামে চিরকুট লিখতে থাক। চিরকুট পেতে পেতে একসময় ও তোর প্রেমে পড়ে যাবে। তারপর হন্যে হয়ে তোকে খুঁজতে থাকবে। আর তুই একদিন তার সামনে গিয়ে সত্যটা জানাবি। ব্যস, হয়ে গেলো আহির প্রেম শুরু।”
“আইডিয়া ভালো দিয়েছিস। কিন্তু একটা সমস্যা আছে।”
“কি সমস্যা?”
“চারুশিল্পে আমাদের মাঝে মাঝে তাত্ত্বিক বিষয় নিয়েও পড়ায়। পরীক্ষাও নেয়। এখন ও আমার হাতের লেখা চিনে ফেললে?”
লিনাশা কিছুক্ষণ ভেবে দুষ্টু হেসে বলল,
“প্রেম করবি তুই, অনুভূতি হবে তোর। কিন্তু চিরকুটটা আমি লিখে দিবো।”
আহি মুখ ছোট করে বলল,
“তোর হাতের লেখা তো অনেক সুন্দর। ও যদি তোর লেখার প্রেমে পড়ে যায়?”
“ধুর বোকা। এতো সহজ নাকি? কেউ আবার লেখার প্রেমে পড়ে? তোর অনুভূতিই ওকে আকর্ষণ করবে। তুই ওর জন্য স্কেচ করবি, ওটাই ওকে প্রেমে ফেলতে বাধ্য করবে। হাতের লেখা কোনো প্রেমে পড়ার জিনিস হলো?”
আহি লিনাশাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুই বিকেলে বাসায় আসিস। তোকে আরো অনেক কথা বলার আছে।”
“আচ্ছা। আর তুই তো এআর এর আসল নাম বললি না।”
“ওটা সিক্রেট থাক। যখন ও আমার হবে তখন সবাইকে জানাবো।”
(***)
বিকেলে লিনাশা বাসায় আসার পর আহি আফিফের জন্য কি কি পাগলামো করেছে সবটা বললো। সব শুনে লিনাশা ডায়েরীটা দেখার জন্য জোরাজুরি করতে লাগলো। কিন্তু আহি দেখালো না। শুধু আফিফের একটা ছবি দেখালো। চারুশিল্পে ভর্তির সময় আফিফ একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দিয়েছিল। আহি অনেক কষ্ট করে সেটা সংগ্রহ করেছে। আফিফের ছবি দেখে লিনাশা বলল,
“ছেলেটা তো নায়কের মতো দেখতে।”
“হ্যাঁ।”
“আহি তাড়াতাড়ি জানিয়ে দে। ওর যদি অন্য কোথাও সম্পর্ক থাকে, তাহলে তোর প্রেমের বারোটা বেজে যাবে।”
এরপর লিনাশা অনেক ভেবে আহিকে একটা বুদ্ধি দিলো। আহিরও লিনাশার বুদ্ধিটা পছন্দ হলো। আহি তার কথামতো আফিফের স্কেচ করলো। আর পরের সপ্তাহের প্রথম ক্লাসেই স্কেচটি আফিফের খাতার মাঝখানে রেখে দিলো। আফিফ ক্লাসে এসেই টেবিলের উপর রাখা জমানো খাতাগুলো থেকে নিজের খাতাটা নিয়ে পাতা উল্টাতেই দেখলো সেই স্কেচ। আফিফ ভ্রূ কুঁচকে স্কেচটির দিকে তাকিয়ে রইলো। স্কেচের নিচে লেখা,
“ধরে নাও এটা বেনামী চিরকুট। আমি তোমার এক অজ্ঞাতনামা ভক্ত। কি ভাবছো, তুমি কোনো সেলেব্রিটি? হুম, আসলেই তাই। তুমি শুধু আমার সেলেব্রিটি। আমি ভয়ংকরভাবে তোমার প্রেমে পড়েছি। ভাবছো আমি কে? আমার পরিচয় কি? তুমি আমার একটা নাম রাখতে পারো। তোমার যা ইচ্ছে হয়। তোমার দেওয়া নামেই আমার পরিচয় হোক।”
আহি দূর থেকে আফিফের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। খুব মনোযোগ দিয়ে আফিফ চিরকুটটি পড়ছে। চিরকুট পড়া শেষ হতেই সে একবার মুখ তুলে আশেপাশে তাকালো। আহির যেন তখনই আত্মা কেঁপে উঠলো। হাত-পা শিরশির করে উঠলো। লিনাশার কথাটা তাহলে সত্য হচ্ছে। আফিফ তাকে খোঁজা শুরু করেছে। আফিফ জেনে গেছে কেউ তাকে ভীষণ ভালোবাসে।
……………………….
আহি চোখ খুলেই কাঠের স্ট্যান্ডের উপর আলতোভাবে হাত রাখলো, আর বললো,
“আমার জীবনে যদি অনেক সুখ থাকতো, তাহলে হয়তো আমি তোমাকে নিয়ে ভাবার সময়টাও পেতাম না, এআর। কিন্তু এই বেহায়া মনে তুমি ছাড়া আর কোনো ভালো মানুষের জায়গা নেই। তাই তোমার কথা মনে করে নিজেকে বুঝায়, আমার একটা ভালোবাসার মানুষ আছে। যে আমাকে ভালোবাসে আমার কল্পনায়। কল্পনায় ভালোবাসতে পারাটাও কিন্তু চমৎকার। তুমি নিজেও জানো না, আমি তোমাকে নিয়ে মিছেমিছি ভাবি। মনে করি তুমি আমার পাশে আছো, আমাকে বলছো, ‘আহি আমি কোনো তাজওয়ারকে তোমার কাছে ঘেঁষতে দেবো না। তোমার মন-প্রাণ সব আমার দখলে। আমি তোমাকে প্রটেক্ট করবো। আমি তোমাকে ভালোবাসি, তাই তোমার পাশে আছি।’ এআর, তুমি কি আমার এই স্বপ্ন কখনো পূরণ করবে না? আমাকে প্রটেক্ট করতে আসবে না? আমি এখনো সৃষ্টিকর্তার কাছে তোমাকে চাই। জানি, এটা অন্যায়। কিন্তু মন তো ন্যায়-অন্যায় বুঝে না। মন শুধু ভালোবাসা চায়।”
চলবে-