#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১০)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(১৯)
তরুকে কোলে নিয়ে কুশল চৌধুরী মেনশনের ভিতরে চলে যায়। মূল দরজা থেকে কিছুটা দূরে অবাক মুখশ্রী নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রয় কুশলের বেস্টফ্রেন্ড নিলাদ্র আহমেদ। পরক্ষণেই নিলাদ্র স্বজ্ঞানে ফিরলে দ্রুত পায়ে চৌধুরী মেনশনের ভিতরে প্রবেশ করে কুশল-তরুর পিছন পিছন উপরে চলে যায়।
কুশল তরুকে কোলে করে নিজেদের রুমে এনে সাবধানে বিছানায় বসিয়ে দেয়। অতঃপর ওয়ারড্রব এর উপর থেকে ফাস্টএইড এর বক্সটা হাতে নিয়ে তরুর পায়ের কাছে নিচে মেঝেতে হাঁটু ভাজ করে বসে পড়ে। তরু অবাক দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকিয়ে আছে। কুশল তরুর পা টা নিজের হাঁটুর উপর রেখে ক্ষ*ত স্থানটি খুব মনোযোগ সহকারে দেখে। তারপর ফাস্টএইড বক্স থেকে ক্ষ*ত স্থান পরিষ্কার করার জন্য স্যভলন এর বোতল আর পরিষ্কার তুলো বের করে হাতে নেয়। স্যভলন দিয়ে তুলোটুকু ভিজিয়ে নিয়ে যেইমাত্র কুশল তরুর পায়ের ক্ষ*ত স্থানে লাগায় ওমনি তরু একহাতে কুশলের ঘাড়ের ডানপাশ চেপে ধরে চোখ-মুখ কুঁচকে নিয়ে মুখ দিয়ে ‘আহহহ জ্ব*লে গেলো’ বাক্যটি উচ্চারণ করে। কুশল তরুর ক্ষত স্থানে ‘ফুউউউ’ দিতে দিতে বললো…..
—“একটু জ্বা*লা করবেই, ক্ষ*ত স্থানটি যথেষ্ট গভীর। র*ক্ত ইতিমধ্যে জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। দ্রুত ক্ষ*ত স্থানটি ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে ইন*ফে*ক*শন হয়ে যাবে তখন য*ন্ত্র*ণা আরো বাড়বে। সহ্য করে নেওয়ার চেষ্টা করো।”
কুশলের কথায় তরু কুশলের ঘাড় আরো শক্ত করে চেপে ধরে নিজের চোখ খিঁচে বন্ধ করে রাখে। কুশল খুব যত্নসহকারে তরুর ক্ষ*ত স্থানটি পরিষ্কার করে ব্য*ন্ডে*জ করে দেয়। তরু এখন ও ওর চেহারার অবস্থা আগের ন্যয় করে রেখেছে। কুশল তরুর দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো…..
—“ব্য*ন্ডে*জ করা হয়ে গিয়েছে।”
কুশলের কন্ঠ কর্ণপাত হতেই তরু নিজের চোখ মেলে পায়ের দিকে তাকায়। ক্ষ*ত স্থানে জ্বা*লা করা আগের থেকে কিছুটা কমেছে। পরক্ষণেই তরু দেখে সে কুশলের ঘাড়ে নিজের হাত দিয়ে রেখেছে তাই সাথে সাথেই সে তার নিজের হাত সরিয়ে ফেলে। কুশল বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের চোখ-মুখ কিছুটা কুঁচকে নেয়। সেইসময় নিলাদ্র ওদের রুমে প্রবেশ করে কুশলের দিকে তাকাতেই ওর চোখ কুশলের ঘাড়ের ডানপাশ থেকে বের হতে থাকা র*ক্তে*র উপর পড়ে। নিলাদ্র কুশলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে অস্থির কন্ঠে বললো….
—“কি রে তোর ঘাড়ে কি হয়েছে! এভাবে র*ক্ত ঝড়ছে কেন?”
কুশল নিলাদ্রের দিকে চোখ রাঙিয়ে ইশারায় ওকে চুপ করতে বলে। নিলাদ্র কুশলের ইশারা বুঝে উঠতে পারে না। তরুনিমা নিলাদ্রের কন্ঠে বলা কথাটি শুনে নিজের বাম হাতের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে ওর হাতের ৫টি আঙুলের নখেই র*ক্ত লেগে আছে। তরুনিমা বুঝতে পারে কিছুসময় পূর্বে কুশল যখন ওর পা ব্য*ন্ডে*জ করে দিচ্ছিলো তখন সে য*ন্ত্র*ণা সহ্য করতে না পেরে কুশলের ঘাড় চেপে ধরে পাঁচটি নখই বসিয়ে দিয়েছে। নিলাদ্র কুশলের হাত ধরে বিছানার দিকে আনতে আনতে বললো…..
—“দেখি এদিকে এসে বোস আমি তোর ক্ষ*ত স্থানটি পরিষ্কার করে দিচ্ছি।”
কুশল তৎক্ষনাৎ নিজের হাত নিলাদ্রের হাতের বাধণ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো….
—“আরে ছাড় আমায়, তেমন কিছু হয় নি আমার। তুই এখন আমার সাথে বাহিরে চল তোর সাথে আমার পারসোনালি কথা বলার আছে।”
এই বলে কুশল নিলাদ্রকে নিয়ে রুম থেকে বের হতে নিলে তরুনিমা শান্ত স্বরে বললো…
—“দাঁড়ান কুশল!”
তরুনিমার ডাকে কুশল আর নিলাদ্র সেখানেই দাঁড়িয়ে পরে। তরুনিমা আবার বললো….
—“এখুনি আমার পাশে এসে বসুন।”
কুশল ওভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে বললো….
—“আমার কাজ আছে , পরে আসছি তোমার কাছে।”
—“আপনি কি চাইছেন আমি এই ক্ষ*ত যুক্ত পা নিয়ে হেঁটে হেঁটে আপনার কাছে যাই!”
কুশল তরুর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো….
—“একটু আগেই ব্য*ন্ডে*জ করে দিয়েছি তোমার পা। এখন এই পা নিয়া একদম হাঁটা চলা করলে ক্ষ*ত স্থান থেকে আবারও র*ক্ত*পা*ত হতে পারে।”
—“তাহলে আমার কথা মেনে নিয়ে আমার এসে বসুন এক্ষুনি।”
কুশল আর কোনো উপায় না পেয়ে তরুনিমার পাশে এসে বসে। তরুনিমা কুশলের মাথার ডান পাশ একটু বাম দিকে বাঁকিয়ে দেখলো ওর ঘাড়ে তরুর ৫টা নখ অনেকটুকু গভীর হয়ে বসে গিয়েছে। তরু নিলাদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললো….
—“ভাইয়া….ওনার ক্ষ*ত স্থানটুকু পরিষ্কার করে দিন।”
—“আমি পরে করে নিতে পারবো, তোমার বিশ্রা…..”
কুশল ওর পুরো কথা শেষ করতে পারে না তার পূর্বেই তরু কুশলের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো….
—“চুপ করুন….এতো বেশি বুঝতে আর বলতে কে বলছে আপনাকে? অন্যের সমস্যা হলে তাকে সবরকম ভাবে সাহায্য করার জন্য ম*রি*য়া হয়ে উঠেন এখন নিজের সমস্যা হয়েছে তা ঠিক না করা নিয়ে যতো রকমের বাহানা শুনাচ্ছেন!”
কুশল আবারও কিছু বলতে নিলে তরু চোখ পাঁকিয়ে কুশলের দিকে তাকিয়ে আবারও বললো….
—“আর একটা শব্দ যদি মুখ থেকে বের করেছেন এই মুহূর্তে তাহলে আমার দু’হাতের এই লম্বা লম্বা নখ গুলো দিয়ে আপনার সর্বশরীরের আমি ক্ষ*ত তৈরি করে দিবো বলে দিলাম।”
তরুর এমন কথায় কুশলের মুখ অটোমেটিক খুলে যায়। তরু নিলাদ্রের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো….
—“কি হলো আপনি ওখানে ওমন রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? খুব তো তখন আমার ক্ষ*ত স্থান তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করা নিয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন। এখন নিজের বন্ধুর ক্ষ*ত স্থানে কি ইন*ফে*ক*শন হওয়ার পর তা পরিষ্কার করবেন?”
নিলাদ্র আ*হা*ম্ম*কের মতো মুখশ্রী করে কুশলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে ওর ঘাড়ের ক্ষ*ত স্থানটি পরিষ্কার করে দিতে শুরু করে। তরু কুশলের ঘাড়ের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। কুশল নিজের ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসির রেখা ফুটিয়ে তরুর দিকে মোহনীয় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রয়।
কিছুসময়ের মধ্যেই নিলাদ্র কুশলের ক্ষ*ত স্থানটি পরিষ্কার করে ব্য*ন্ডে*জ করে দেয়। তরুও নিজের দৃষ্টি কুশলের উপর থেকে সরিয়ে নেয়। নিলাদ্র কুশলের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে কুশল তরুর দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসছে। নিলাদ্র তৎক্ষনাৎ কুশলের কাঁধে হালকা ধা*ক্কা প্রয়োগ করতেই ওর ধ্যন ভে*ঙে যায়। নিলাদ্র ওর মাথার পিছনের অংশের চুলগুলো হাত দিয়ে নাড়তে নাড়তে বললো….
—“এই তাহলে আমার ভাবী! এতো সুন্দর ভাবে বেস্ট ফ্রেন্ড এর বউয়ের সাথে পরিচয় হবে আমি কল্পনাও করতে পারি নি দোস্ত।”
কুশল তরুনিমার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো…
—“এখন কি আমি বাহিরে যেতে পারি!”
তরু মুখ বাঁকিয়ে বললো……
—“আমি কি আপনার হাত-পা দড়ি দিয়ে বে*ধে রেখেছি নাকি যে এভাবে বাহিরে যাওয়ার জন্য আমার থেকে পারমিশন চাচ্ছেন!”
তরুর এমন প্রতিত্তুরে কুশল শান্ত স্বরে বললো….
—“বেঁধে ছিলেই তো তোমার কথার মাঝেই ছিলো সেই অদৃশ্য কোনো দড়ির বাঁধন। যা আমাকে এই ঘরের বাহিরে যাওয়া থেকে আটকে দিয়েছিলো।”
এই বলে কুশল বিছানা ছেড়ে উঠে নিলাদ্রকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরু অবাক দৃষ্টি নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রয়।
(২০)
রুম থেকে বেড়োতেই নিলাদ্র কুশলকে বললো….
—“আমি একটা বিষয় চিন্তা করে কুলিয়ে উঠতে পারছি না।”
কুশল সামনের দিকে অগ্রসর হতে হতে প্রশ্ন করলো….
—“কি বিষয়?”
—“রওনাক আজমাইন চৌধুরী কুশল যার নাম শুনলেই কিনা ভ*য়ে বা’ঘে-গরুতে এক ঘাটে জল পান করে। যে কিনা কোনো কাজ করার বা কোনো বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে কারোর কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। নিজে যেই সিদ্ধান্তে একবার মনঃস্থির করবে পৃথিবীর কারোর ক্ষমতা হয় না সেই সিদ্ধান্ত থেকে তাকে পিছু হ*টা*নোর, সেই কুশল চৌধুরীকে ধ*ম*ক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো মাত্র ২১-২২ বছর বয়সী একজন মেয়ে!”
নিলাদ্রের এমন কথার উত্তর কুশলের নিজের কাছেও যেনো অজানা। সে এখন নিজেও নিজের এমন পরিবর্তনের কথা ভেবে অবাক হচ্ছে। নিলাদ্র কুশলের কাঁধে হাত রেখে বললো….
—“আজ তোকে দেখে তো ভাই একটা জিনিস খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারলাম, একজন মেয়ে পারে না এমন কাজ হয়তো পৃথিবীতে খুব নগন্য। শেষ একটা কথাই বলবো, সাবধানে থাকিস দোস্ত আমার। যেই পরিমাণ ডে*ন্ঞ্জে*রা*স বউ তোর কপালে জু*টে*ছে তাতে তোর মাঝে থাকা এক*রো*খা, জে*দ্দি স্বভাবের ইতি ঘটতে খুব বেশি সময় লাগবে বলে আমার মনে হচ্ছে না।”
কুশল নিলাদ্রের কথার কোনো প্রতিত্তুর করে না। কিছুসময়ের মধ্যেই ওরা দু’জন হাঁটতে হাঁটতে চৌধুরী মেনশনের বাহিরে চলে আসে। সেইসময় নিলাদ্রের ফোনে একটি কল আসলে সে সাইডে চলে যায়। ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে আনমনে সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করে সেইসময় ওর সাথে একজন মেয়ের ধা*ক্কা লাগে। যার ফলে মেয়েটি পরে যেতে নিলে নিলাদ্র মেয়েটির কমোর একহাতে জড়িয়ে ওকে ধরে নেয়। মেয়েটির মুখের উপর একরাশ চুল এসে পড়ায় নিলাদ্র তার চেহারা দেখতে পারে না। নিলাদ্রের অন্য হাতে থাকা ওর ফোনটি হাত ফসকে নিচে পড়ে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ…………….