হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২৯) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
906

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২৯)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৭৭)
জঙ্গলের রাস্তা ধরে বেশ খানিকটা পথ অতিক্রম করতেই হঠাৎ কুশলদের গাড়ির সামনে কেও একজন চলে আসলে কুশল দ্রুত ব্রেক কষে গাড়ি থামায় যার ফলে তরু ও সন্ধ্যা সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে আসে। তরু রাগী স্বরে বললো…

—“এভাবে কেও ব্রেক করে নাকি? এখুনি তো সামনের সিটের সাথে মাথা লেগে সাং*ঘা*তি*ক কিছু হয়ে যেতে পারতো।”

সাদিক বললো…
—“ম্যডাম..হুট করেই গাড়ির সামনে কে যেনো চলে এসেছে তাই স্যার তাকে বাঁচাতে গিয়ে এভাবে ব্রেক করে গাড়ি থামাতে বাধ্য হয়েছেন। স্যার আমি দেখছি কে এসেছে।”

এই বলে সাদিক দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির সামনে দাঁড়ানো সেই মানুষটির কাছে যায়। কুশল, তরুনিমা, সন্ধ্যা গাড়ির ভিতর থেকেই লক্ষ্য করছে বিষয়টা। পরক্ষণেই সাদিকের সাথে দাড়ানো লোকটি তার কমোরের ভাজ থেকে একটা ধাঁ*রা*লো ছু*ড়ি বের করে কুশলের দিকে একপলক তাকায়। কুশল লোকটির হাতে ছু*ড়ি দেখা মাত্র দ্রুততার সাথে সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নামতে নামতে বললো….

—“এ…এ…সাদিককককক…!”

সাদিক কুশলের ডাক শুনে সেদিকে তাকাতেই লোকটি সাদিকের পেটে ছু*ড়ি*টি ঢুকিয়ে একবার মো*চ*ড় দিয়ে একটানে বের করে নেয়। সাদিক হতভম্ব হয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে একহাতে পেট চেপে ধরে ‘আআআআ’ বলে চিৎকার করে উঠে অন্যহাত দিয়ে ছু*ড়ি*কা*ঘা*ত করা লোকটিকে ধরার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। কুশলকে আসতে দেখে লোকটি একদৌড়ে জঙ্গলের ভিতরে অন্ধকারের মাঝে হারিয়ে যায়। সাদিকের চিৎকারে পিছনে থাকা গার্ডসদের গাড়ি থেকে সবাই নেমে কুশলের গাড়ির চারপাশ ঘিরে ধরে। কুশল সাদিকের কাছে যেতেই সাদিক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে দ*রু*ণ য*ন্ত্র*ণা*য় আ*র্ত*নাদ করতে থাকে। কুশল ২জন গার্ডসকে ডাক দেয়। গার্ড ২জন আসতেই কুশল বললো….

—“সাদিককে দ্রুত গাড়িতে উঠাও৷”

গার্ড দুজন সাদিককে তুলে গাড়ির কাছে আনছে দেখে তরুনিমা সন্ধ্যাকে বললো…
—“আমি এখন সামনের সিটে বসছি, সাদিককে তোমার পাশে এখানে শুইয়ে দিক।”

তরুনিমা দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। গার্ডস ২জন সাদিককে সন্ধ্যার পাশে পিছনের সিটে শুইয়ে দিতেই তরুনিমা দরজা আটকে দিয়ে গাড়ির সামনের দরজা খুলে সেখানে বসে পড়ে। কুশল গাড়ির কাছে আসতে নিলে সাদিককে ছু*ড়ি*কা*ঘা*ত করা সেই লোকটি আকস্মিক কুশলের কাছে এসে ওকেও আ*ঘা*ত করার চেষ্টা করলে কুশল কৌশলে লোকটির হাত ধরে ছু*ড়ি*টি তারই গলায় চে*পে ধরে রাগী স্বরে বললো….

—“একটুও নড়ার চেষ্টা করলে এইমূহূর্তেই তোর শরীর থেকে মাথাটা আলাদা করে দিবো।”

কুশলের এমন কথায় লোকটি পুরোপুরি ভাবে স্থির হয়ে যায়। সেইসময় আরো দু’জন গার্ডস এসে লোকটিকে ধরে নিজেদের গাড়িতে ব*ন্দী করে নেয়। অতঃপর কুশল গাড়িতে এসে বসে সাদিকের দিকে ঘুরে বললো….

—“সন্ধ্যা…সাদিকের ক্ষ*ত স্থান একটা কিছু দিয়ে বেঁধে দে যেনো র*ক্ত*পাত কম হয়। আর ওর গালে হালকা হাতে চা*প*ড় দিতে থাক, ও যেনো সেন্স*লে*স হয়ে না যায়।”

কুশল গাড়ি স্টার্ট করে আবারও গ্রামের দিকেই যেতে শুরু করে। তরুনিমা বললো…..

—“গ্রামের দিকে যাচ্ছেন কেনো? ওখানে কি সাদিক ভাইয়ের চিকিৎসার কোনো সু-ব্যবস্থা পাওয়া যাবে!”

—“শহরে যেতে মিনিমাম ৩ঘন্টা সময় লাগবে। ততোক্ষণে সাদিকের অবস্থা হাতের বাহিরে চলে যেতে পারে। আমরা গ্রামের কাছাকাছিই চলে এসেছি। সেখানে সাদিকের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য যেকোনো একটা ব্যবস্থা হয়েই যাবে। সাদিকের অবস্থা কিছুটা সুবিধাজনক হলেই শহরে নিয়ে গিয়ে প্রোপার ট্রিটমেন্ট এর ব্যবস্থা নিবো।”

সন্ধ্যা হিজাব এর পাশাপাশি সাইড দিয়ে একটা লং ওড়না নিয়েছিলো। তাই সেই ওড়নাটি খুলে সাদিকের পেটের ক্ষ*ত স্থানটি বেঁধে দিয়ে ওর গালে হালকা হাতে চা*প*ড় দিতে দিতে বললো….

—“সাদিক ভাই… আপনার কিচ্ছু হবে না। মনোবল হারাবেন না, আপনাকে সজ্ঞানে থাকতে হবে। সাদিক ভাই…সাদিক ভাই…!”

সাদিকের শরীর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। সাদিক অশ্রুসিক্ত চোখে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে ওর একহাত শক্ত করে চে*পে ধরে মুখ দিয়ে কিছু বলার অনেক চেষ্টা করেও ব্য*র্থ হয়। পরমুহূর্তেই খুব জোড়ে একবার নিঃশ্বাস নিয়ে সাদিক পুরোপুরি ভাবে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা উপলব্ধি করে সাদিকের ধরে রাখা হাতের সেই শক্ত বাঁধনটি হালকা হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা নিজের উপর স্থির হওয়া সাদিকের শীতল দৃষ্টির দিকে স্তব্ধ নয়নে তাকিয়ে রয়। সাদিকের চোখজোড়া যেনো চিৎকার করে সন্ধ্যাকে বলছে…..

—“আমার শেষ নিঃশ্বাস পড়ার সাথে সাথে তোমার জন্য একটু একটু করে সৃষ্টি হওয়া না বলা সকল অনুভূতি গুলোরও আজ মৃ*ত্যু হলো। তোমারে আমি কতোটা ভালোবাসি তা আর কখনও জানা হইবো না তোমার।”

পরক্ষণেই সন্ধ্যা ওর কাঁ*প*তে থাকা হাতটি সাদিকের নাকের কাছে রাখতেই শিওরে উঠে। নিঃশ্বাস পড়ছে না….নাহ্ সাদিকের নিঃশ্বাস আর পড়ছে না। সন্ধ্যা কুশলের দিকে তাকিয়ে মিইয়ে যাওয়া স্বরে বললো….

—“ম-মে-মেজো ভ-ভাইয়া….সা-সাদিক ভা-ভাইয়ের ন-নিঃ-নিঃশ্বাস থেমে গিয়েছে।”

সন্ধ্যার মুখে এমন কথা শোনামাত্র কুশল তৎক্ষনাৎ গাড়ির ব্রেক কষে। তরুনিমা নিজের সিটবেল্ট খুলে উপর হয়ে সাদিকের পালস্ চেইক করতেই থমকে যায়। সাদিকের পালস্ চলছে না। তরুনিমা সাদিকের মেলে থাকা চোখজোড়া বন্ধ করে দিয়ে নিজের সিটে সোজা হয়ে বসে মলিন কন্ঠে বললো….

—“সাদিক ভাই আর আমাদের মাঝে নেই।”

কুশল গাড়ির সিটের সাথে মাথা ঠেকিয়ে একহাতের দুটো আঙুল দিয়ে দুই চোখের কোটর চেপে ধরে চোখ বুঁজে নেয়। তরুনিমা মাথা নিচু করে বসে রয়। সন্ধ্যা সাদিকের বুঁজে যাওয়া নিস্তব্ধ মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে নিরবে অশ্রুপাত করতে থাকে৷

(৭৮)
তালুকদার ভিলায় নিজের রুমে বিছানায় শুয়ে আছেন তমিজ তালুকদারের স্ত্রী রেবেকা তালুকদার। রেবেকার হাতের বাম পার্শে চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে বসে আছেন তমিজ তালুকদার। রেবেকার হাতের ডান পাশে একটা চেয়ারে বসে রেবেকার প্রেসার মাপছেন ওদের পারিবারিক ডাক্তার রফিক আজম সাহেব। ওদের সম্মুখে গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে দাঁড়িয়ে পুরো বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করছে তাহির। সেইসময় ডাক্তার রফিক আজম সাহেব শান্ত স্বরে বললেন…..

—“মিসেস.তালুকদার সাহেবা সঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করার অভ্যাস হয়তো ছেড়ে দিয়েছেন! প্রেসার একেবারেই লো হয়ে গিয়েছে, তাই শরীর দূর্বলতার কারণে মাথা ঘুরে উঠেছিলো ওনার। এছাড়া চিন্তার কোনো বিশেষ কারণ নেই। এই বয়সে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া আর পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন
ওনার। কোনো বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা একদমই করা যাবে না। এতে ওনার শারীরিক অবস্থা দিনকে দিন আরো বেশি অবণতির দিকে চলে যাবে। আমি আপাতত কয়েকটা ঔষধ লিখে দিচ্ছি এই ঔষধ গুলো নিয়ম মাফিক খেতে হবে, এতে ওনার খাবার খাওয়ার প্রতি রুচি বৃদ্ধি পাবে আর টেনশন মুক্ত থাকতে পারবেন।”

এই বলে রফিক আজম সাহেব বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতেই তমিজ তালুকদার বললেন…
—“তাহির…তোমার ডাক্তার আঙ্কেলকে একটু এগিয়ে দিয়ে এসো।”

—“ঠিক আছে।”

অতঃপর তাহির আর রফিক আজম সাহেব একসাথে স্থান ত্যগ করলেন। ওরা চলে যেতেই রেবেকা তৎক্ষনাৎ শোয়াবস্থা থেকে উঠে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালেন। তমিজ তালুকদার চোখ বড় বড় করে নিজের স্ত্রীকে দেখছেন। রেবেকা কিছুটা বিরক্তি ভাব নিয়ে বললেন…

—“ওমন ভূ*তে*র মতো গোল গোল চোখ করে আমার দিকে চেয়ে আছো কেনো?”

—“তোমার না শরীর অনেক দূর্বল! একটু আগেই একলা শোয়াবস্থা থেকে উঠে বসতে পর্যন্ত পারছিলে না! চোখের পলকেই শরীরে এতো এনার্জি আসলো কি করে?”

—“এতো বছর ধরে আমার সাথে সংসার করতেছো এখনও আমাকে চিনে উঠতে পারলে না! কেমন স্বামী তাহলে তুমি একটাবার চিন্তা করো।”

—“তারমানে তুমি সম্পূর্ণরূপেই সুস্থ আছো শুধু তাহিরের সামনে অ*সুস্থতার নাটক করেছো এতোসময়! কিন্তু এমন করার কারণ কি?”

রেবেকা তমিজের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাঁকা হেসে বললেন…
—“কারণ না থাকলে এমন একটা ড্রামাসিন ক্রিয়েট করতাম নাকি?”

—“কি কারণ বলো আমায়।”

—“তোমার ছেলে তো আজই ঐ মেয়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে তার বাড়িতে যাবে বলে তৈরি হয়েছিলো। ওর যাওয়া আটকানোর জন্যই আমাকে অ*সুস্থ হওয়ার নাটক করতে হলো।”

—“এই নাটক করে তাহিরের যাওয়া না হয় আজ আটকাতে পারলে কিন্তু কালকে আটকাবে কি করে?”

—“কাল ভোরের মধ্যে আমার বোনের একমাত্র মেয়ে হুমায়রা কানাডা থেকে বাংলাদেশে আসছে। হুমায়রা দেখতে মাশাআল্লাহ যেকোনো পুরুষের নজর কাড়ার মতো সৌন্দর্যের অধিকারী। আর ও অনেক বছর আগে থেকেই তাহিরকে মনেপ্রাণে পছন্দ করতো। আমার বোন আজ সকালেই আমাকে জানিয়েছে হুমায়রা তার নিকট তাহিরের বউ হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। তাই আমি খুশিমনে হুমায়রাকে দেশে আসতে বলেছি। হুমায়রাই পারবে তাহিরের মন ও মস্তিষ্ক থেকে একেবারের জন্য ঐ মেয়ের সকল স্মৃতি ও অনুভূতি গুলো মুছে ফেলে নিজের জায়গা বানিয়ে নিতে। আমি আমার ছেলেকে আর ঐ মেয়ের সংস্পর্শে যেতে দিবো না। একবার যাওয়ার চেষ্টা করে নিজের জীবনের ৫টা বছর সে ন*ষ্ট করেছে কিন্তু আর ১টা সেকেন্ড ও ন*ষ্ট হতে দিবো না আমি।”

—“তাহির ঐ মেয়ের জন্য যেই পরিমাণ দিওয়ানা, হুমায়রার পক্ষে তাহিরের মন ও মস্তিষ্ক থেকে ঐ মেয়েকে ভুলিয়ে দিয়ে নিজের জায়গা বানিয়ে নেওয়ার জার্নিটা এতোটা সহজ হবে বলে আমার মনে হয়।”

—“সহজ হবে না জানি। কিন্তু অসম্ভব তো না, তাই চেষ্টা করতেও কোনো দো*ষ নেই।”

রেবেকা ও তমিজের কথপোকথনের মাঝেই ওদের রুমের বাহির থেকে কারোর পায়ের আওয়াজ ভেসে আসলে রেবেকা দ্রুততার সাথে বিছানায় শুয়ে পড়তে পড়তে বললো….

—“নিশ্চয়ই তোমার ছেলে এসেছে।”

রেবেকা বিছানায় শুয়ে পড়তেই তাহির রুমে প্রবেশ করে হাতে থাকা প্যকেটটা তমিজের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো…..
—“মায়ের ঔষধগুলো এই প্যকেটের ভিতর রাখা আছে। সময় মতো খাইয়ে দিও বাবা। আমার একটু কাজ আছে, বাহিরে যেতে হবে।”

এই বলে তাহির রুম থেকে বেড়োতে নিলে রেবেকা ধীরস্বরে তাহিরকে ডাক দেয়। তাহির আবারও পিছন ঘুরে দাঁড়াতেই রেবেকা ধীরস্বরে বললেন…

—“তাহির…বাবা…আমার পাশে এসে বসবি একটু!”

তাহিরে বিনাবাক্যে ওর মায়ের হাতের ডান পার্শে এসে বসতেই রেবেকা তাহিরে একহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন….

—“আজ একটু আমায় সময় দে বাবা…বাহিরে যাস না।”

মায়ের এমন আবদার তাহির ফেলতে না পেরে শান্ত স্বরে বললো…
—“আচ্ছা, ঠিক আছে মা..আমি কোথাও যাচ্ছি না আজ।”

রেবেকা তাহিরের কথা শুনে স্মিত হাসলেন। তমিজ তালুকদার মনে মনে বললেন….
—“আমার বউ এতো নিখুঁত ভাবে অভিনয় করতে পারে আগে কেনো বুঝলাম না…!”

চলবে ইনশাআল্লাহ….

[ছোট বলিয়া লজ্জা দিবেন না😑 ১৩৭০ শব্দ আছে এখানে😒]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here