হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(বোনাস পর্ব-২) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
878

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(বোনাস পর্ব-২)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৯৮)
পশ্চিমাকাশে ক্লান্ত সূর্য হেলে পড়ে সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে। অনন্যার গর্ভে চৌধুরী পরিবারের নতুন সদস্য আসার আনন্দে চৌধুরী মেনশন জুড়ে যেনো আনন্দের মেলা বসেছে। রিসিপশনের জন্য চৌধুরী মেনশনের পিছন পার্শে বাগান সাইডটা খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে। বেশিরভাবগ অতিথিরাই ইতিমধ্যে এসে পড়েছেন।
.
.
নিজ রুমে অনেকসময় ধরে তরুনিমা কুশলের পছন্দ করে দেওয়া গাড় নীল রংয়ের সেই শাড়িটি পড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রতিবারই বিপত্তি বাঁধছে শাড়ির কুঁচি ঠিক করার সময় একবার কুঁচি গুলো ছোট-বড় হচ্ছে তো আরেকবার কুঁচিগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আবার আঁচলে পিন সেট করার সময় বুকের উপর থাকা কুঁচি গুলোও অগোছালো হয়ে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে একপ্রকার যাচ্ছেতাই অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে তরুনিমা। পরক্ষণেই তরুনিমা একহাতে শাড়ির কুঁচির অংশটুকু আর অন্যহাতে শাড়ির আঁচলের অংশটুকু ধরে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো….

—“ধূ*র এই সব শাড়ি কি একা একা ঠিক ভাবে পড়া যায় নাকি! বাড়ির সবাই তো নিজ নিজ কাজে নিচে ব্যস্ত হয়ে আছে আমাকে সাহায্য করার মতো এখানে কেও নেই। এখন আমি কি করবো!”

সেইসময় আকস্মিক পিছন থেকে রুমের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো খ*ট করে শব্দ হলে তরু পিছন ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই বললো…..

—“কে?”

কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“আমি।”

—“আপনার এখানে এখন কি কাজ? বাহিরে যান আমার শাড়ি পড়া শেষ হয় নি এখনও।”

—“নিচে বেশিরভাগ অতিথিরা ইতিমধ্যে এসে পড়েছেন। আর সবাই কুশল চৌধুরী বউকে খুঁজছেন।”

কুশলের এমন কথা শুনে তরু অবাক স্বরে বললো…

—“চৌধুরী পরিবারের নতুন সদস্য তো বড় ভাবীর গর্ভে আসতে চলেছে তাকে দেখার জন্য ব্যকুল না হয়ে আমাকে খোঁজার কারণ কি?”

—“গুরুজনরা বলছেন বছর ঘুরতেই যেনো তারা চৌধুরী পরিবারে আরেকজন নতুন সদস্য আসার আনন্দ অনুষ্ঠানে আসতে পারেন তাই কুশল চৌধুরীর বউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া দেওয়ার জন্য তোমায় খুঁজছে।”

কুশলের কথার ভাঁজ বুঝতে না পেরেই তরু বলে উঠে….
—“ওহহ আচ্ছা…এই ব্যপার।”

পরক্ষনেই তা বুঝতে পেরে তরু লজ্জায় চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। কুশল তরুর অবস্থা বুঝতে পেরে নিঃশব্দে হাসি দেয়। তরু লজ্জার হাত থেকে কিছুটা রেহাই পেতে কুশলকে উদ্দেশ্য করে বললো….

—“এই আপনি এখন যান তো। আমাকে শাড়ি পড়া শেষ করতে দিন।”

কুশল ভ্রু কুঁচকে তরুর দিকে তাকিয়ে বললো….
—“আমি কি তোমাকে ধরে রেখেছি নাকি যার জন্য তুমি শাড়ি পড়তে পারছো না!”

কুশলের এমন কথায় তরুর শরীর যেনো তেলে-বেগুনে জ্ব*লে উঠে। তরু দাঁত কিড়মিড় করে বললো….

—“হয় রুমের বাহিরে গিয়ে দাঁড়ান নয়তো বেলকনিতে চলে যান। তবুও এখানে থাকা হবে না আপনার।”

কুশল শান্ত দৃষ্টি নিয়ে তরুর দিকে তাকিয়ে বললো….
—“আমার উপস্থিতি যখন তোমায় এতোটাই অস্বস্তিতে ফেলছে তখন আমি বেলকনিতেই চলে যাচ্ছি।”

এই বলে কুশল বেলকনিতে চলে যায়। তরু ঘাড় বাঁকিয়ে বেলকনির দিকে একটু ঝুঁকতেই কুশলকে অন্যপাশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ছোট্টো করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে আবারও শাড়ি পড়ার কাজে মনোনিবেশ করে। প্রায় আধঘন্টা ধরে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকার পর তরুর শাড়ি পড়া শেষ হয়েছে ভেবে কুশল রুমে প্রবেশ করতেই দেখে তরু এখনও আগের ন্যয় শাড়ি হাতে নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে। কুশল বুঝতে পারে তরু একা শাড়িটা পরে উঠতে পারছে না। রুমের ভিতর আবারও কুশলের উপস্থিতি টের পেয়ে তরু বললো….

—“এই আপনি কি একটু সময়ের জন্য স্থির হয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না! একে তো আপনার পছন্দ করে দেওয়া শাড়িটা আমাকে অনেক সময় ধরে জ্বা*লা*চ্ছে তার উপর আরেক আপনি একটু পর পর উদয় হয়ে শাড়ি পড়ার কাজে আমার মনোযোগটাই ন*ষ্ট করে দিচ্ছেন।”

—“দীর্ঘ ৩০ মিনিট ধরে তুমি শাড়িটা পড়ার জন্য দারুণ পরিশ্রম করে যাচ্ছো কিন্তু পরিশেষে ব্য*র্থ হয়ে পূর্বের জায়গাতেই ফিরে আসছো। এভাবে চলতে থাকলে আজকের পার্টিতে তোমাকে দোয়া দেওয়ার জন্য অপেক্ষাকৃত অতিথিরা তোমার দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করে নিজ নিজ বাড়িতে চলে গিয়ে শান্তিতে ঘুমিয়ে যাবেন। তাই তাঁদের হতাশ করার ইচ্ছে যদি তোমার না থাকে তাহলে তুমি চাইলে আমি তোমার শাড়ির কুঁচিগুলো ধরে তোমাকে দ্রুত শাড়ি পড়ার কাজ শেষ করতে সাহায্য করতে পারি।”

কুশলের এরূপ কথা শুনে তরু শান্ত দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকায়। পরক্ষণেই তরু শাড়ির কুচি করার অংশটুকু হাত থেকে ফেলে দেয়। তরুর সম্মতি পেয়ে কুশল হাসিমুখে তরুর কাছে গিয়ে হাটু ভাজ করে নিচে বসে পরে। অতঃপর তরুর দেখানো অনুযায়ী কুশল তরুকে শাড়ির কুচি গুলো সমান ভাবে গুছিয়ে নিতে সাহায্য করে। কুচির ভাঁজে একটা পিন সেট করে দিয়ে কুশল বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তরু ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বুকের উপরের কুঁচি গুলো ঠিক করে পিন লাগাতে নিলে কুশল আবারও তরুর কাছে গিয়ে পিনটি লাগিয়ে দেয়। এরপর কুশল তরুর দুই কাঁধে দু’হাত রেখে তরুকে টুলের উপর বসিয়ে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা জুয়েলারি গুলো নিয়ে তরুকে খুব যত্নসহকারে পড়িয়ে দিতে শুরু করে। জুয়েলারি গুলো পড়ানো শেষ হলে তরু হালকা মেকআপ করে ঠোঁটের উপর হালকা গোলাপি লিপস্টিক দিয়ে বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো….

—“আমার সাজ সম্পন্ন হয়েছে, চলুন এখন নিচে যাওয়া যাক।”

কুশল ড্রেসিং টেবিলের পাশে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে এতোসময় ধরে তরুকে দেখছিলো। তরুর এরূপ কথা শুনে কুশল তরুকে একপলকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে নিয়ে বললো…..

—“তোমার সাজ তো এখনও সম্পন্ন হয় নি।”

তরু ভ্রু কুঁচকে কুশলের দিকে তাকায়। কুশল স্মিত হাসি দিয়ে বললো…..
—“তোমার এই টানা টানা চোখ জোড়ায় হালকা করে কাজল লাগালে আর কপালের মাঝ বরাবর গাড় নীল রংয়ের ছোট্ট একটা টিপ পড়লে তবেই তোমার সাজ সম্পন্ন হবে।”

কুশলের মুখে এমন কথা বলে তরু সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো….
—“না…না…নাআআ..আমি কাজল লাগাবো না। কাজল লাগাতে নিলেই আমার চোখ জোড়া নোনা জলে টইটুম্বুর হয়ে উঠে। তাই যেমন আছি এটাই যথেষ্ট।”

কুশল তরুর কথাকে পাত্তা না দিয়ে বললো….
—“আমি তোমার দু’চোখে কাজল লাগিয়ে দিচ্ছি। দেখবে চোখে একটুও পানি আসবে না।”

—“না…না…প্লিজ এখন আমি আর সাজ ন*ষ্ট করতে চাই না।”

কুশল তরুর ঠোঁট জোড়ার উপর নিজের শাহাদত আঙুল ঠেকিয়ে শান্ত স্বরে বললো…

—“চুপ……কোনো কথা হবে না। বসো এখানে।”

তরু রিতীমত বাধ্য হয়ে টুলে বসে পড়ে। কুশল তরুর সাজের জিনিসগুলো ভিতর থেকে কাজলটা হাতে নিয়ে খুব যত্ন সহকারে তরুর দু’চোখে লাগিয়ে দিয়ে বললো….

—“এখন উপরের দিকে তাকিয়ে কিছুসময় ঘনঘন চোখের পলক ফেলতে থাকো।”

কুশলের কথানুযায়ী তরু ঘনঘন চোখের পলক ফেলতো শুরু করে। কিছুসময়ের মধ্যেই তরু স্বাভাবিক হয়ে যায়। চোখে আর কোনো প্রকার পানি আসছে না দেখে তরু কুশলের দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে বললো…..

—“এর আগে আরো কতোজন মেয়ের চোখে কাজল পড়িয়ে দিয়েছিলেন যে এই কাজ এতো দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করলেন।”

কুশল হাসিমুখে বললো…..
—“পুরুষ মানুষের কান্না করা বারণ। যখন আমার কোনো বিষয় নিয়ে খুব খারাপ লাগে তখন কিছুসময় ধরে ঘনঘন দুই চোখের পলক ফেলে নিজের আবেগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি। পরিশেষে আমি সফল ও হয়ে যাই। সেই পদ্ধতিই এখন অবলম্বন করলাম।”

তরু স্তব্ধ দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকিয়ে আছে। অতঃপর কুশল টিপের পাতা থেকে গাড় নীল রংয়ের একটা ছোট্ট টিপ নিয়ে তরুর দুই ভ্রুর মাঝ বরাবর পড়িয়ে দিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে ওকে আয়নার দিকে তাকাতে বলে। তরু কুশলের ইশারা বুঝতে পেরে আয়নার দিকে লক্ষ্য করতেই নিজের প্রতিচ্ছবি নিজেই দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারে না। সামান্য কাজল আর একটা ছোট্ট টিপ যে কারোর সৌন্দর্য এতোটা বাড়িয়ে দিতে পারে তা হয়তো তরু আজ নিজেকে না দেখলে বুঝতে পারতো না। কুশল হাসি দিয়ে বললো….

—“চলো তাহলে এখন নিচে যাওয়া যাক।”

তরু হাসিমুখে বসাবস্থা উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর ওরা দু’জনে একসাথে রুম থেকে বের হয়ে নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

চলবে ইনশাআল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here