হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬১) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
878

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬১)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৪৩)
কুশল আর তরুনিমার রুমের বাহিরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যা দরজায় কড়া নাড়ে। কুশল আর তরুনিমা তখনও ঘুমিয়ে ছিলো। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ওদের। তরু কুশলের বুকের উপর থেকে সরে সোজা হয়ে বসে শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলো…

—“কে!”

সন্ধ্যা বললো….
—“মেজো ভাবী আমি..সন্ধ্যা।”

সন্ধ্যার কন্ঠ শুনতে পেয়ে তরু একপলক কুশলের দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে এসে দরজা খুলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সন্ধ্যা রুমের ভিতরে প্রবেশ করে ভিতর থেকে দরজা আটকে দেয়। কুশল বিছানার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে ওদের দিকে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। সন্ধ্যার আকস্মিক এমন কাজে তরু কিছুটা অবাক হয়ে বললো….

—“কি হয়েছে সন্ধ্যা! কোনো স*ম*স্যা!”

সন্ধ্যা তরুর হাত ধরে বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললো….
—“বসো ভাবী।”

সন্ধ্যা আর তরু দু’জনেই বিছানার উপর বসে পরে। সন্ধ্যা আবারও বললো….

—“জানি না এই বিষয়ে এভাবে কথা বলাটা ঠিক হবে কিনা! বা তোমরাও এটা মনে করো কিনা যে আমি বিষয়টা নিয়ে একটু বেশিই নেগেটিভলি চিন্তা করছি!”

সন্ধ্যার এমন কথা শুনে কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“কি হয়েছে তোর! কোন বিষয়ের কথা বলছিস তুই! সরাসরি বল।”

সন্ধ্যা কিছুটা ইতস্তত বোধ করে, নিজের একহাতের তালুতে অন্য হাতের পিঠ হালকা ভাবে ঘষা দিতে দিতে বললো….

—“ছোট ভাইয়ার দৃষ্টি, কথা বলার ধরণ, চাল-চলন আমার একদমই ভালো লাগছে না মেজো ভাইয়া।”

কুশল বললো….
—“মানে! কি বলতে চাইছিস তুই!”

সন্ধ্যার কথার ধরণ আর ও যে ইতস্তত বোধ করছে সেটা তরুনিমা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে। তরুনিমা শান্ত স্বরে বললো…

—“আ-আব-কুশল..! আপনি বরং ফ্রেশ হয়ে নিন যান। আমি সন্ধ্যার সাথে এই বিষয়ে কথা বলছি।”

কুশল তরুর দিকে তাকায়, তরু ইশারায় কুশলকে যেতে বলে। কুশলও আর কথা না বাড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে তোয়ালে আর পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমের ভিতরে প্রবেশ করে। পরক্ষণেই তরু সন্ধ্যার হাতের উপর নিজের হাত রেখে শান্ত স্বরে বললো….

—“এখন নি*র্দ্বি*ধা*য় তুমি আমাকে তোমার স*ম*স্যার কথা বলতে পারো সন্ধ্যা।”

সন্ধ্যা একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাজবীরের আচারণ, দৃষ্টি ও বা*জে ই*ঙ্গি*তে বলা সব কথাগুলো তরুকে খুলে বলে। সব শোনার পর তরুর যেনো রাগে সর্বশরীর জ্ব*ল*ছে। তরু রাগী স্বরে বললো….

—“অ*মানুষদের বাচ্চা যে অ*মানুষ ই হয় তার প্রমাণ সে দিয়ে দিয়েছে। সব গুলো অ*মানুষের হা*ল এতোটাই খা*রাপ করে দিতে হবে যে তাদের অবস্থা দেখে চারপাশে থাকা বাকি অ*মানুষ গুলোরও শিক্ষা হয়ে যায়।”

—“ভাবী এই অ*মানুষ গুলোকে নিজের চোখের সামনে হাসি-খুশি ভাবে চলাচল করতে দেখলে আমার ভিষণ ক*ষ্ট হয়। এদের উচিত শা*স্তি দেওয়ার ব্যবস্থা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব করতে হবে আমাদের। আমি চাই না বাবা-মায়ের মতো ক*রু*ণ অবস্থা আমাদের মাঝে আর একজনেরও হোক।”

—“চি*ন্তা করো না সন্ধ্যা৷ অ*মানুষ গুলোকে আর বিন্দুমাত্র সুযোগ ও দেওয়া হবে না কোনো ভালো ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের ক্ষ*তি করার।”

সন্ধ্যার সাথে কথা বলতে বলতেই তরুর ফোন বেজে উঠে। বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিতেই দেখে ওর মা তমালিকা সিকদার কল করেছেন। তরু ফোন রিসিভ করে বললো…..

—“কেমন আছো মা! বাবার শরীর ভালো তো?”

ফোনের ওপাশ থেকে তমালিকা বললেন….
—“আমরা ভালো আছি রে মা। তোর কথা খুব মনে পড়ছিলো। তোকে দেখতে ভিষণ ইচ্ছে করছে। জামাই বাবাজিকে নিয়ে একবার সুযোগ করে আমাদের এখানে আয়। তোরা আসলে অরুনিমার জন্য মিলাদের ব্যবস্থা করবো। অনাথ আশ্রমের কিছু বাচ্চাদের খাওয়াবো আর ওদের মাঝে শীতের পোশাক বিতরণ করবো।”

তরু স্মিত হাসি দিয়ে বললো…
—“ঠিক আছে মা। আমি এই বিষয়ে ওনার সাথে কথা বলেই তোমাকে জানাচ্ছি কেমন!”

—“আচ্ছা ঠিক আছে।”

এই বলে তমালিকা কল রেখে দিলেন। তরুর মা ওকে কি বললো সেই বিষয়ে সন্ধ্যা ওকে প্রশ্ন করলে তরু সবটা বলে দেয়। সন্ধ্যা বললো…

—“ভাবী যদি কিছু মনে না করো তাহলে তোমাদের সাথে আমাকেও নিয়ে যাবে! আসলে এ বাড়িতে তো দাদীমা ছাড়া আমার আপন বলতে কেও নেই এখন তাই।”

তরু হাসিমুখে বললো….
—“পাগলী….এতে কি আলাদা করে অনুমতি নিতে হয় নাকি! তুমিও যাবে আমাদের সাথে। আর আমরা যাওয়ার সময় নিলাদ্র ভাইয়াকেও আমাদের সাথে নিবো কেমন!”

নিলাদ্রকে সাথে নেওয়ার কথা শুনতেই সন্ধ্যা কিছুটা লজ্জা পায়। সেইসময় কুশলও ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে চুলগুলো মুছতে মুছতে বললো….

—“ননদ-ভাবীর কথোপকথন এর মাঝে এখন আমি প্রবেশ করলাম কিন্তু!”

কুশলের এরূপ কথা শুনে তরুনিমা ভ্রু কুচকে বললো…
—“দু’জন মেয়ের কথোপকথনের মাঝে প্রবেশ করে আপনার কাজ কি শুনি!”

কুশল তোয়ালেটা চেয়ারের উপর মেলে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে চিরুনি নিয়ে চুলে চিরুনি করতে করতে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বললো….

—“বা রে…একজন আমার বউ হয় আর আরেকজন আমার বোন হয়। তাদের কথপোকথনের মাঝে ঢুকতে আমার আবার এক্সট্রা কাজের প্রয়োজন আছে নাকি যখন তখন যেকোনো পরিস্থিতিতে ঢুকতে পারি!”

কুশলের মুখে নিজেকে বউ বলে সম্বোধন করতে শুনে তরু কিছুটা লজ্জা পায়। সন্ধ্যা তরুর দিকে তাকাতেই তরুকে হালকা লজ্জা পেতে দেখে ডান হাতের শাহাদাত আঙুল দিয়ে নিজের নাকে হালকা ঘষা দিতে দিতে বললো….

—“এহেম এহেম…তোমরা বরং এখন রোমান্স করো আমি আর কাবাবের মাঝে হাড্ডি হয়ে না থাকি!”

সন্ধ্যার এমন কথায় তরু মাথা নিচু করে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চে*পে ধরে নিজের লজ্জাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে।
সন্ধ্যা বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতেই কুশল সন্ধ্যার ডান কান টেনে ধরে বললো….

—“বড্ড পেঁ*কে গিয়েছিস তুই। কান মু*লে না দিলে ঠিক হবি না।”

সন্ধ্যা বললো….
—“আআআ..মেজো ভাইয়া..ছাড়ো লাগছে তো!”

কুশল সন্ধ্যার কান ছেড়ে দিতেই সে একছুটে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে ওদের দিকে ঘুরে দাড়িয়ে হাসি দিয়ে বললো…..

—“দরজাটা ভিতর থেকে ভালোভাবে আটকে দিয়ে তারপর রোমান্স করো নয়তো কখন কে এসে পড়বে তোমরা লজ্জায় পরে যাবে।”

কুশল বললো….
—“তবে রে..!”

সন্ধ্যাকে আর পায় কে একছুটে নিচে চলে যায়। কুশল তরুর দিকে তাকিয়ে বললো….
—“কিছু মনে করো না। জানোই তো ও কেমন চন্ঞ্চল।”

তরু আর নিজস্থানে বসে থাকতে পারে না। বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে অগ্রসর হতে নিলে পিছন থেকে কুশল তরুর একটা হাত ধরে নেয়। একে তো লজ্জায় তরুর যাচ্ছে তাই অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে তা থেকে মুক্তি পেতে রুমের বাহিরে যেতে নিয়েছিলো সে তার মাঝেই কুশলের এভাবে বাঁধা প্রয়োগ করায় তরুর অবস্থা আরো সমীচীন হয়ে দাঁড়ায়। ওর হার্ট স্বাভাবিক এর তুলনায় অনেক জোরে বিট করতে শুরু করেছে। চোখ-মুখ খিঁ*চে রেখেছে সে। কুশল শান্ত স্বরে বললো…

—“কোথায় যাচ্ছো তুমি!”

তরুর কাছে এই প্রশ্নের কোনো যুক্তিযুক্ত উত্তর নেই। তাই সে সেভাবে কিছু না ভেবেই বললো…..

—“ও-ওয়াশরুম…ওয়াশরুমে যাবো।”

—“ওয়াশরুম তো এদিকে, ওদিকে তো দরজা।”

কুশলের এমন কথায় তরু চোখ মেলে সামনে আর পাশে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টায়। এরকম পরিস্থিতিতেও কখনও পড়তে হতে পারে তা সে ভাবে নি। তরু আর মুখে কিছু না বলে কুশলের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চেয়ারের উপর রাখা তোয়ালে টা নিয়ে এক ছু*টে ওয়াশরুমের ভিতরে চলে যায়। কুশল তরুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে একহাতে নিজের মাথার পিছনের অংশের চুলগুলো বোলাতে বোলাতে হাসি দিয়ে বললো…

—“ল*জ্জা পেয়েছে মেয়েটা।”

শাওয়ার শেষ হতেই তরুর খেয়াল হয় সে ওয়াশরুমে প্রবেশ করার সময় কাপড় নিতেই ভুলে গিয়েছে। তরু মনে মনে নিজেকে একশত একটা ব*কা দিতে দিতে বললো…..

—“একদিনেই আর কতো লজ্জার মাঝে পড়বি তুই তরু!
এখন তো লজ্জার কু*য়ো ডুব দিয়ে ম*রা*র মতো পরিস্থিতি দাঁড় করিয়েছিস। এখন ওনার কাছে কাপড় চাইতে হবে আমায়! আল্লাহ আমাকে ধৈর্য দিন।”

তোয়ালেটা নিজের শরীরে ভালোভাবে পেঁ*চিয়ে নিয়ে তরু ওয়াশরুমের দরজা হালকা ভাবে খুলে উঁ*কি দিতেই দেখে কুশল রুমের ভিতর নেই। কুশলকে রুমে দেখতে না পেয়ে তরু যেনো হা*ফ ছেড়ে বাঁচে। তরু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দ্রুততার সাথে দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা ভিতর থেকে আটকে দিয়ে ওয়ারড্রবের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ড্রয়ার খুলে নিজের একসেট কাপড় নিয়ে ড্রয়ার বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়াতেই কুশলকে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে তরুর নিঃশ্বাস ব*ন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়। চোখ বড় বড় করে কুশলের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তরু। পরমুহূর্তেই কুশল এক পা এক পা করে তরুর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। তরু যেনো নিজ স্থান থেকে নড়ার কথা ভু*লে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। কুশল যতোই তরুর কাছে অগ্রসর হচ্ছে তরুর হৃদপিণ্ড ততোটাই দ্রুত বিট করতে শুরু করেছে। তরুর পিঠ ওয়ারড্রবের সাথে ঠেকানো অবস্থায় আছে। কুশল তরুর একেবারেই সন্নিকটে এসে দাঁড়িয়ে একহাতে ওর থুতনি উঁচু করে ধরে নিজের মুখশ্রী উপর নিকট এগিয়ে নিতে থাকে। তরুর হাত-পা কাঁ*পতে শুরু করেছে। হাতে থাকা কাপড়গুলো মেঝের উপর ফেলে দিয়ে তরু সঙ্গে সঙ্গে নিজের ঠোঁটের উপর হাত রেখে ওর আর কুশলের মাঝে বাঁ*ধা প্রদান করে। তরুর এমন কাজে কুশলের ঘোর কেটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সে তরুর থেকে দূরে সরে দাঁড়ায়। কি করতে নিয়েছিলো তা বুঝতে পেরে কুশল আর তরুর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। দ্রুত কদমে বেলকনিতে চলে যায়। কয়েক সেকেন্ড ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকার পর তরুও নিজের পায়ের কাছে পরে থাকা কাপড়গুলো তুলে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……

(পরীক্ষা শেষ তাই আমার ঈদ শুরু🥳🥳। কিন্তু আপনারা পঁ*চা হয়ে গিয়েছেন😔। এই গল্প ব্যতিত পেইজে আপলোড করা আর কোনো গল্পে রেসপন্স করেন না। ক*ষ্ট পেয়েছি অনেক😔)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here