হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৩৫) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
495

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৩৫)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৯০)
অনন্যা পিছন ঘুরে কনকের দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে বললো….
—“কি…কি বললে..! বাচ্চা অ্যবোশন না করলে তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে?”

কনক রাগের বশে কি থেকে কি বলে ফেলেছে তা সে এখন বুঝতে পারছে। কনক দ্রুত পায়ে অনন্যা কাছে গিয়ে অনন্যাকে বুঝানোর চেষ্টা নিয়ে ওর হাতের বাহু স্পর্শ করতে নিলে অনন্যা দু’কদম পিছনের দিকে পিছিয়ে গিয়ে কনকের দিকে ডান হাতের শাহাদত আঙুল উঠিয়ে বললো….

—“খবরদার….খবরদার কনক….ভুলেও আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করবে না তুমি।”

—“অনন্যা আমার কথাটা শুনো আগে তুমি। আমি রাগের বশে এমন কথা বলে ফেলেছি। তুমি তো জানোই রাগ উঠলে আমার মাথার ঠিক থাকে না। কোনোরূপ চিন্তা-ভাবনা না করেই মুখে যা আসে তাই বলে বসি।”

—“বিয়ের মাত্র ৩মাস হয়েছে। আল্লাহর রহমতে আমি তোমার সন্তানের মা হতে চলেছি আর তুমি কিনা বাবা হয়ে নিজের সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখার পূর্বেই মে*রে ফেলতে বলছো। আর যখন আমি রাজি হলাম না তখন তুমি আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইলে! এগুলাকে রাগের বসিভূত হয়ে বলা কথা বলে কনক?”

—“অনন্যা…তুমি মাথা ঠান্ডা করো। আমরা বসে এই বিষয়ে কথা বলছি।”

—“আর বসাবসির কোনো প্রশ্নই আসছে না। আগামীকাল সকাল হতেই আমি কানাডায় আমার বাবার কাছে চলে যাবো। তোমার কাছে থাকাটা আমার সন্তানের জীবনের জন্য যে নিরাপদ নয় সেটাও আমি খুব ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছি। একজন শান্ত মস্তিষ্কের খু*নি চিন্তাধারার মানুষের সাথে আর যাই হোক সংসার করা যায় না।”

এই বলে অনন্যা রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। কনক অনন্যাকে বেশ কয়েকবার পিছন থেকে ডাক দেয় কিন্তু অনন্যা কনকের ডাকগুলোকে কানে না তুলেই চলে যায়। কনক রাগে দরজার পার্শে দেওয়ালের উপর একটা ঘু*ষি দিয়ে বললো….

—“সিট।”

(৯১)
ভোর বেলা সূর্যের আলো পূর্বাকাশে উদীয়মান হতেই কুশল, তরু ও সন্ধ্যাকে নিয়ে গ্রাম থেকে শহরের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েছে। ওদের পিছন পিছন গার্ডসদের গাড়ি ও চলছে। কয়েকঘন্টার পথ অতিক্রম করে কুশলদের গাড়ি চৌধুরী মেনশনের ভিতরে প্রবেশ করে। তরু আর সন্ধ্যা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। কুশল গ্যরেজে গাড়ি রাখার জন্য যায়। কিছুসময় পর কুশল, তরুনিমা ও সন্ধ্যা চৌধুরী মেনশনের মূল দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই দেখে অনন্যা লাগেজ হাতে নিয়ে দরজার দিকেই এগিয়ে আসছে। অনন্যার পিছন পিছন কনক আসতে আসতে বলছে……

—“অনন্যা….আমার কথাটা শুনো…দেখো আমার ভু*ল হয়ে গিয়েছে। তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না এভাবে।”

ইতিমধ্যে বাড়ির বাকি সদস্যরাও নিজ নিজ রুম থেকে বেড়িয়ে ড্রয়িংরুমে আসতে শুরু করেছে। অনন্যা কুশলের পাশ কাটিয়ে যেতে নিবে সেইমূহূর্তে কুশল হাত বাড়িয়ে অনন্যার পথ আটকে দেয়। অনন্যা ছলছল দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকায়। কুশল ওর দৃষ্টি সামনের দিকে স্থির রেখে শান্ত স্বরে বললো…

—“ভাবী…আমি জানি না বড় ভাইয়ার সাথে আপনার কি বিষয় নিয়ে সমস্যা হয়েছে যার জন্য আপনি বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু প্রতিটি বাড়ির ও পরিবারের মতো আমাদের বাড়ির ও পারিবারের কিছু নিয়ম-কানুন আছে। ঝগড়া-মনোমালিন্য হবে না এমন কোনো সম্পর্কই নেই। পরিবারের একজন সদস্যের সাথে অপর আরেকজন সদস্যের কোনো বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হলে বা ঝামেলা হলে আমরা পরিবারের সবাই একত্র হয়ে বসে সেই বিষয় সম্পর্কে দু’জনেরই মতবাদ শুনি। তারপর বাড়ির গুরুজনদের মতামত নিয়ে যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া সঠিক হবে সেই সিদ্ধান্তেই মনঃস্থির করা হয়।”

অনন্যা কিছু না বলে ব্যগটা ওখানে রেখেই সোফায় গিয়ে বসে। অতঃপর পরিবারের বাকি সদস্যরাও সোফায় গিয়ে বসে। কুশলও নিজের জন্য নির্ধারিত সোফায় গিয়ে বসে। সায়মন রাগী স্বরে কনককে উদ্দেশ্য করে বললো….

—“বিয়ের সপ্তাহ পু*ড়*তে না পু*ড়*তেই কি এমন হলো তোর সাথে বউমার যে বউমা বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলো কনক?”

কনক মাথা নিচু করে বসে আছে। অনন্যা নিরবে অশ্রুপাত করছে। সাগরিকা চৌধুরী শান্ত স্বরে বললেন….

—“দাদুভাই তোমার সাথে দিদিভাইয়ের কি বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়েছে বলো আমাদের। না হলে তোমাদের মাঝে তৈরি হওয়া স*ম*স্যা*র সমাধান আমরা করবো কিভাবে?”

সাবরিনা অনন্যার দিকে দৃষ্টি স্থির করে শান্ত স্বরে বললেন….
—“বড় বউমা…তুমি বলো কি হয়েছে? কনক যদি বড় কোনো অন্যায় করে থাকে তাহলে আমার বড় ছেলে হওয়ার জন্য সে কিন্তু শা*স্তি*র হাত থেকে বেঁচে যাবে না। তুমি নির্দ্বিধায় বলো আমাদের কি করেছে কনক।”

অনন্যা অশ্রুসিক্ত নয়নে কনকের দিকে তাকায়। পরক্ষণেই কনক শান্ত স্বরে বললো…

—“তোমাদের সকলের থেকেই একটা বিষয় লুকিয়েছি আমি।”

সকলের দৃষ্টি এখন কনকের উপর স্থির। কনক মাথানিচু করে রাখা অবস্থাতেই আবারও বললো….

—“৩মাস আগে কানাডাতে থাকাকালীন সময়েই আমি অনন্যাকে বিয়ে করেছিলাম। আর তখন থেকেই আমরা একসাথে থাকতেও শুরু করেছিলাম। অনন্যাকে নিয়ে বাংলাদেশে ফেরার পর ভেবেছিলাম তোমাদের সবাইকে আমাদের বিয়ে করার বিষয়টা জানাবো কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিলো যে বিয়ের সত্যটা লুকিয়ে শুধু সম্পর্ক রয়েছে এমনটা বলতেই বাধ্য হয়েছিলাম আমি। পরবর্তীতে বাবা-মাকে আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে রাজি করানোর চেষ্টা করার পরেও যখন তারা রাজি হলেন না তখন বাধ্য হয়ে তরুনিমার সাথে আমার বিয়ের দিনই অনন্যাকে তোমাদের সবার সামনে এনেছিলাম। অতঃপর তোমাদের সকলের সম্মতি নিয়ে আমার আর অনন্যার ২য় বার বিবাহকার্য সম্পন্ন হয়। অনন্যা গতকাল সন্ধ্যায় প্রেগন্যন্সি টেস্ট করেছিলো এবং রেজাল্ট পজেটিভ এসেছিলো। বিয়ের মাত্র ৩মাস হয়েছে এখনি বাচ্চা নেওয়ার বিষয় নিয়ে আমার কোনো চিন্তাধারা ছিলো না। তাই আমি অনন্যাকে অ্যবোশন করতে বলেছিলাম। অনন্যা অ্যবোশন করতে পুরোপুরি ভাবে নারাজ ছিলো। তাই আমি রাগের বশে বলেছিলাম ও যদি অ্যবোশন না করে তাহলে আমি ওকে ডিভোর্স দিয়ে দি………!”

কনক ওর পুরো কথা শেষ করার পূর্বেই সাবরিনা কনকের গালে স্বজোড়ে একটা থা*প্প*ড় দিয়ে বসেন। কনক মাথা নিচু অবস্থাতেই গালের উপর একহাত রাখে। সাবরিনার এমন কাজে উপস্থিত সবাই যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে ইতিমধ্যে। সাবরিনা রাগী স্বরে বললেন…..

—“আমার ছেলে হয়েও তোর চিন্তা-ভাবনা এতোটা নি*কৃ*ষ্ট হলো কি করে কনক! তুই জানিস তুই যখন আমার গর্ভে এসেছিলি তখন তোর বাবার আর আমার বিয়ের বয়স ছিলো মাত্র ২৫দিন। যদি সেইসময় আমি বা তোর বাবা এটা চিন্তা করতাম যে তুই আমার গর্ভে আসায় আমাদের বিয়ের নতুন সময়টা ন*ষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাহলে আজ তুই জীবিত অবস্থায় আমাদের সামনে বসে এমন কথা মুখ দিয়ে বের করতে পারতি না। সন্তান হলো আল্লাহর দেওয়া সবথেকে বড় রহমতের একটা অংশ। আরে নিজের চারপাশে একটাবার নজর ঘুরিয়ে দেখেছিলি! শত শত মা-বাবা নিজেদের একটা সন্তান না হওয়ার জন্য কতোটা হা*হা*কার করে! কতো শতো জায়গায় ঘুরে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। সেখানে আল্লাহ তায়ালা না চাইতেই তোকে বাবা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন আর তুই কিনা আল্লাহ তায়ালার শুকর আদায় না করে ঐ নিষ্পাপ শিশুটিকে পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মে*রে ফেলার কথা বলিস? জীবন দেওয়ার ও জীবন নেওয়ার অধিকার একমাত্র ঐ উপরওয়ালারই আছে তোর বা আমার নেই। এক্ষুণি বউমার কাছে ক্ষমা চা। আর নিজের দো*ষ শিকার কর। পরবর্তীতে আর কখনও এমন কাজ করার কথা চিন্তাও করবি না এমনটা বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হ আমাদের সবার সামনে।”

কনক বসা অবস্থা থেকে উঠে অনন্যার পায়ের কাছে গিয়ে বসে ওর দু’হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে অনুনয়ের স্বরে বললো….

—“আমাকে ক্ষমা করে দাও অনন্যা। আমি অনেক বড় ভু*ল করে ফেলেছিলাম। তোমার গর্ভে একটু একটু করে যেই প্রাণটি বড় হয়ে উঠছে সে আল্লাহর দেওয়া সবথেকে বড় রহমতের একটা অংশ। তাই ওকে মে*রে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি অনেক বড় অ*ন্যায় করে ফেলেছিলাম। আমাকে আমার ভু*ল শুধরে নেওয়ার জন্য একটা সুযোগ দাও প্লিজ। আমি কথা দিচ্ছি আর কখনও এমন কোনো কাজ করবো না যার ফলে তুমি বা আমাদের সন্তান কোনোরূপ ক*ষ্ট পাবে। আমি তোমার এবং আমাদের সন্তানের প্রতি অনেক যত্নশীল থাকবো, ওকে এই পৃথিবীর আলো দেখাবো এবং সুশিক্ষা দিয়ে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো।”

কনককে নিজের ভু*ল শিকার করে শুধরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দেখে অনন্যার চোখে-মুখে আনন্দের ঝলক ফুটে উঠে। অনন্যা ওর দু’চোখে খুশির অশ্রু নিয়ে উপস্থিত সবার দিকে একপলক তাকায়। সকলের মুখেই স্মিত হাসি ফুটে আছে। অনন্যা শান্ত স্বরে কনককে বললো…

—“আর কখনও আমাকে আর আমাদের সন্তানকে ক*ষ্ট দেওয়ার কথা চিন্তাও করবে না তুমি, কথাটি মনে থাকে যেনো।”

—“হুম…থাকবে।”

সাগরিকা চৌধুরী স্মিত হাসি দিয়ে বললেন….
—“মিয়া-বিবির মাঝের রাগ-অভিমান তো মিটে গেলো। এবার বাড়িতে নতুন অতিথি আসার আনন্দ নিয়ে আজ সন্ধ্যায় বড় করে একটা আনন্দপার্টি হয়ে যাক! কি বলো তোমরা সবাই!”

কুশল, তরুনিমা আর সন্ধ্যার মনে এখনও সাদিকের মৃ*ত্যু নিয়ে খারাপ লাগা থাকা স্বত্বেও পরিবারের বাকি সদস্যদের আনন্দ যেনো ন*ষ্ট না হয় তাই পার্টি হওয়া নিয়ে ওরা কোনোরূপ বাঁধা প্রদান করে নি।

চলবে ইনশাআল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here