হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৪১) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
932

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৪১)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১০২)
তরুনিমা অত্যন্ত রাগ নিয়ে উচ্চস্বরে তাহিরকে উদ্দেশ্য করে বললো……
—“আপনার সাহস হলো কি করে আমার শ্বশুড় বাড়িতে এসে গান গাওয়ার?”

তরুনিমাকে এভাবে রিয়েক্ট করতে দেখে উপস্থিত সকলেই যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। সকলের মাঝে কানাঘুঁষা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ওদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কুশল কারোর সাথে ফোনে কথা বলছিলো। সেইসময় সকলের হালকা শোরগোলের আওয়াজ কুশলের কান পর্যন্ত এসে পৌঁছালে সে কল কেটে দিয়ে ঐদিকে পা বাড়ায়। হুমায়রা তরুর দিকে অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। তাহির গিটারটা স্ট্যন্ডের উপর রেখে বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতেই তরুনিমা দ্রুত পায়ে স্টেইজের উপরে উঠে তাহিরের শার্টের কলার্ট চেপে ধরে ওকে টানতে টানতে স্টেইজ থেকে নিচে নামিয়ে আনে। তাহির তরুনিমার এমন কাজে কোনোরূপ রিয়েক্ট না করে তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে মাত্র। দীর্ঘ সময় পর তরুনিমাকে দেখার সুযোগ পেয়ে তাহিরের তৃষ্ণার্ত দু’চোখে ও মনে যেনো স্বস্তি কাজ করছে। তরুনিমা রাগী স্বরে সকলকে উদ্দেশ্য করে বললো…..

—“আপনাদের সকলের প্রিয় বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী মি.তওকির তালুকদার তাহিরের যে আরো একটা বিশেষ পরিচয় আছে সে সম্পর্কে হয়তো আপনারা কেওই অবগত নন। সেই পরিচয় সম্পর্কে আপনারা অবগত হলে ওনার গাওয়া গান গুলোকে এবং ওনাকে সবাই ঘৃ*ণার চোখে দেখবেন তাই আপনাদের থেকে সম্পূর্ণ সত্যটাকে লুকিয়ে নিজের ফেম ধরে রেখেছেন উনি। কিন্তু এতোবড় একটা সত্যকে লুকিয়ে রেখে ওনাকে সকলের সামনে সম্মানের সহিত হাসি-খুশি ভাবে চলাফেরা করতে দিতে তো আমি পারবো না। আজ সকলের সামনে ওনার মু*খো*শ আমি খুলেই ছাড়বো।”

কুশল ভির এড়িয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়। তরু আবারও বললো…..
—“এই জ*ঘ*ন্য লোকটার লুকানো পরিচয়টা হলো উনি একজন খু*নি। আমার বড় বোন অরুনিমা সিকদারকে ৫বছর আগে খুবই ক*রু*ণ ভাবে খু*ন করার অ*প*রা*ধে উনাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু আফসোসের কারণ এটা দাড়িয়েছে যে উনার মতো নি*কৃ*ষ্ট মানসিকতার একজন খু*নি*কে আইন ফাঁ*সি*র শাস্তি না দিয়ে মাত্র ৫বছরের জন্য জে*ল বন্দী করেছিলেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়া মাত্রই এই জ*ঘ*ন্য ব্যক্তিটি আবারও আমার চারপাশে ঘুরঘুর করতে শুরু করেছে। হয়তো আবারও আমার থেকে কোনো খুব প্রিয় মানুষকে মে*রে ফেলে আমাকে য*ন্ত্র*ণা দিতে চাইছে।”

তরুনিমা এমন কথায় উপস্থিত সকল অতিথিরা ও চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছেন। সেইসময় কুশল তরুর সামনে দাড়িয়ে ওর দু’কাধে দুই হাত রেখে শান্ত স্বরে তরুকে উদ্দেশ্য করে বললো…

—“তরুনিমা….নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করো।”

—“আপনি সরুন আমার সামনে থেকে। এই লোকের উপর আমার চরম রাগ ও ঘৃ*ণা জমে রয়েছে। এনাকে চোখের সামনে জিবীত অবস্থায় দেখে আমার সর্বশরীর ঘৃ*ণা*য় রি রি করে উঠছে। ইচ্ছে তো করছে এই মুহূর্তে এই নি*কৃ*ষ্ট লোকটাকে নিজের হাতে খু*ন করি।”

এই বলে তরুনিমা কুশলের বুকে হালকা ধা*ক্কা প্রয়োগ করে ওকে নিজের সামনে থেকে সরাতে নিলে কুশল সকলের সামনেই তরুনিমা নিজের বুকের সাথে খুব শক্ত বাঁধনে আবব্ধ করে ফেলে। তরুনিমা তবুও ছোটার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। নিজের প্রিয় মানুষটিকে অন্য পুরুষের বুকে আবব্ধ হয়ে ধীরে ধীরে শান্ত হতে দেখে তাহিরের বুকের ভিতরটা মো*চ*র দিয়ে উঠে। তবুও নিজেকে সামলে নিতে তাহির ওর ঠোঁটে এক চিলতে মি*থ্যে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে নিঃশব্দে স্থান ত্যগ করতে মূল গেইটের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। তাহিরকে চলে যেতে দেখে হুমায়রাও তাহিরের পিছন পিছন যেতে শুরু করে। কিছুটা পথ অগ্রসর হতেই হঠাৎ ঝোঁপের আড়াল থেকে দু’জন অগ্যাত ব্যক্তির মাঝে কুশলকে নিয়ে কথপোকথন শুনতে পেয়ে তাহির সেখানেই থেমে যায়। ভ্রু কুঁচকে ঝোপের পাশে থাকা বট গাছটির আড়ালে লুকিয়ে অগ্যাত লোক দু’টির কথোপকথনগুলো স্পষ্ট ভাবে শোনার চেষ্টা করে তাহির।
সেইসময় হুমায়রা সেখানে এসে দাঁড়াতেই নিজের আশেপাশে তাহিরকে দেখতে না পেয়ে অবাক স্বরে বললো…

—“আশ্চর্য তো….মুহূর্তের মধ্যেই কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো! নিজের প্রেমিকাকে অন্য পুরুষের সংস্পর্শে দেখে কঠিন ভাবে শো*কা*হত হয়ে গিয়ে কোথাও আমাকে এখানে ফেলে রেখেই চলে গেলো না তো তাহির! গাড়িতে গিয়ে দেখি আগে।”

এই বলে হুমায়রা চৌধুরী মেনশনের মূল গেইটের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। ঝোপের আড়ালে থাকা অগ্যাত দু’জন ব্যক্তির মাঝে একজন বলে উঠলো….

—“অতিথিদের খাওয়া-দাওয়ার পর্ব প্রায় শেষ। একটুপর সকল অতিথিরা চলে গেলে চৌধুরী পরিবারের সকলে যখন খাবার খেতে বসবে তখন আমি সুযোগ বুঝে কুশল চৌধুরীর খাবারের ভিতর এই বি*ষা*ক্ত ঔষধীটি মিশিয়ে দিবো। এই ঔষধীটি এতোটাই বি*ষা*ক্ত যে একবার কুশল চৌধুরী শরীরের চলে গেলে ১ঘন্টার মধ্যে ওর সর্বশরীর বি*ষে গাড় নীল হয়ে যাবে। আর তখন কুশল চৌধুরীকে বাঁচানো কোনো ডাক্তারের দ্বারা সম্ভব হয়ে উঠবে না। তুমি ততোক্ষণে পার্কিং সাইডে থাকা সবকয়টা গাড়ির দুইটা করে টায়ার পাংচার করে দেওয়ার কাজটা সম্পন্ন করো। যেনো কুশল চৌধুরীর অবস্থা সমীচীন হতে দেখে কেও ই তাকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যেতে না পারে।”

এই কথা বলে লোক দু’জন ঝোপের আড়াল থেকে বের হয়ে যায়। তাহির আপনমনে বিড়বিড়িয়ে বললো….

—“তরুনিমার স্বামীর নাম তো কুশল চৌধুরী। এই দু’জন ওনাকে মা*রা*র এতো বড় পরিকল্পনা করেছে। আমাকে এই মুহূর্তে গিয়ে ওদের সকলকে সাবধান করে দিতে হবে নয়তো অনেক বড় ক্ষ*তি হবে যাবে। তরুনিমার নতুন জীবন এতো সহজে শে*ষ হয়ে যেতে দিতে পারি না আমি।”

এই বলে তাহির আবারও বাগানের পিছন সাইডের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। পকেট থেকে মাস্ক আর সানগ্লাসটা বের করে পড়ে নেয় যেনো হু*ট করে তরুনিমার চোখে পড়ে গেলে আবারও কোনো সিনক্রিয়েট না হয়। কিছুসময়ের মধ্যে সকল অতিথিরা খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে। ওয়েটারের পোশাক পরিহিত একজন ব্যক্তি খাবার টেবিলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক একপলক তাকিয়ে পকেট থেকে সেই বি*ষা*ক্ত ঔষধীর বোতলটা বের করে একটা খাবারের প্লেটে ঢেলে দেয়। দূর থেকে তাহির তা লক্ষ্য করে। সেইসময় চৌধুরী পরিবারের সকল সদস্যরা খাবার টেবিলের কাছে এসে বসে পরে। বি*ষা*ক্ত ঔষধী দেওয়া খাবারের প্লেটটি যেই চেয়ারে সামনে রাখা ছিলো সেই চেয়ারে তরুনিমাকে বসতে দেখে তাহির আর নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। দ্রুত কদমে খাবার টেবিলের কাছে গিয়ে তরুনিমার প্লেটটি ছু*ড়ে নিচে ফেলে দিয়ে বললো….

—“এই খাবারের ভিতর বি*ষা*ক্ত ঔষধী মেশানো আছে।”

আকস্মিক তাহিরের এমন কাজে উপস্থিত সকলে অত্যন্ত অবাক হয়ে বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তরুনিমার পাশের চেয়ারেই কুশল বসে ছিলো। কুশল বললো….

—“বি*ষা*ক্ত ঔষধী? কি বলছেন কি আপনি?”

তাহির বললো….
—“আমি এখান থেকে চলে যাওয়ার সময় বাগানের সামনের দিকে ঝোপের আড়ালে দাঁড়িয়ে দু’জন ব্যক্তিকে কুশল চৌধুরীর খাবারে বি*ষা*ক্ত ঔষধী মিশিয়ে তাকে মে*রে ফেলার পরিকল্পনা করতে শুনেছিলাম। পরক্ষণেই সব অতিথিরা চলে যেতেই একজন ওয়েটার এসে ঐ খাবারের প্লেটে বি*ষা*ক্ত ঔষধী মিশিয়ে দিয়েছিলো। আমি ওয়েটারটিকে ধরার পূর্বেই আপনারা এখানে চলে আসায় সে চোখের আড়া…..!”

তাহির পুরো কথা শেষ করার পূর্বেই তরুনিমা স্বজোরে তাহিরের গালে একটা থা*প্প*ড় দেয়। আকস্মিক তরুনিমার এমন কাজে তাহির তাল সামলাতে না পেরে ওদের থেকে কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে গালে একহাত রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়। তরুনিমা রাগ নিয়ে উচ্চস্বরে বললো….

—“আমার স্বামীর খাবারে বি*ষা*ক্ত ঔষধী মিশিয়ে তাকে মে*রে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলেন তাই তো যখনি দেখলেন বি*ষা*ক্ত ঔষধী মেশানো খাবারটি আমার স্বামী খেতে না নিয়ে আমি নিয়েছি তখনি ছুটে এসে খাবারের প্লেটটি ছুঁ*ড়ে ফেলে দিলেন। আপনার পরিকল্পনা ব্য*র্থ হওয়ায় নিজেকে নিষ্পাপ প্রমাণ করতে নতুন করে এই নাটকটি সাজিয়েছেন তাই তো! আর কতো নিচে নামবেন আপনি! আপনার উপর থু*তু ফেলতেও ঘৃ*ণা বোধ হচ্ছে আমার।”

আবারও ভু*ল বুঝাবুঝির যাঁতাকলে ফেঁ*সে গিয়ে সকলের সামনে দো*ষী হয়ে দাঁড়াতে হলো তাহিরকে। লজ্জায়, অপমানে তাহিরের চোখ দুটো লাল হয়ে গিয়েছে। যেনো দু’চোখ ফেঁ*টে নোনাজলের পরিবর্তে র*ক্ত বেড়িয়ে আসতে চাইছে।
.
.
.
হুমায়রা গাড়ির কাছে গিয়ে তাহিরকে না পেয়ে আবারও চৌধুরী মেনশনের ভিতরে প্রবেশ করে বাগান বাড়ির পিছন সাইডে খাবারের ব্যবস্থা করা সেই জায়গায় এসে দাঁড়াতেই তাহিরকে গালে হাত রেখে মাথা নিচু অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পায়। অনেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর এখানে উপস্থিত হওয়ায় কি থেকে কি হয়েছে তা বুঝে উঠতে পারছে না হুমায়রা। তাহির কোনোভাবে নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে কুশলের পাশে তরুনিমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বললো…

—“আমাকে ভু*ল বুঝতে বুঝতেই জীবনের অনেকগুলো বছর কাটিয়ে দিলে। আগেও যেমন বুঝেছো এখনও আমার সম্পর্কে তোমার তেমনই ধারণা। তোমার চোখে আমার জন্য এতোটা ঘৃ*ণা আর মুখ দিয়ে ছো*ড়া প্রতিটি বি*ষা*ক্ত বুলি আমার ভিতরটা একটু একটু করে শে*ষ করে দিচ্ছে। তোমার কাছে নিজেকে নির্দোষ কিংবা নিষ্পাপ প্রমাণ করার সাধ্য কখনও আমার হয়ে উঠবে কিনা জানি না। এখানে আসার পিছনে আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো না। ভেবেছিলাম দূর থেকে তোমার খুশিটা শেষ বারের মতো একপলক দেখে নিয়ে আমি নিঃশব্দে এখান থেকে চলে যাবো। কিন্তু আমার ভাগ্য আমার প্রতি এতোটা সহায় হলো না। তাই শেষ দেখার মুহূর্তটুকুতেও তোমার ঘৃ*ণা দেখেই আমাকে স্থান ত্যগ করতে হচ্ছে। সবশেষে এতোটুকুই বলবো, ভালো থেকো নিজের ভালোবাসার মানুষটির সাথে। কখনও তাকে ভু*ল বুঝে অবিশ্বাস করো না। কারণ প্রিয় মানুষটি যখন ভু*ল বুঝে অবিশ্বাস করে তখন নিজেকে ভিষণ দূর্বল বলে মনে হয়। তার সামনে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার মতো শক্তি ও বুদ্ধিও মাথায় কাজ করে না।”

এই বলে তাহির পিছন ঘুরে কুশলের পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই ওদের থেকে বেশ কিছুটা দূরে সেই ওয়েটারটিকে কুশলের দিকে বন্দুক তাঁক করে রাখতে দেখে সঙ্গে সঙ্গেই ধা*ক্কা দিকে কুশলকে সরিয়ে দিতেই গু*লি*টি এসে তাহিরের বুকে বিঁ*ধে যায়। চোখের পলকে কি থেকে কি হয়ে গেলো তা বুঝে উঠতেও সকলের কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। হুমায়রা ‘তাহিরররর’ বলে চিৎকার করে উঠে ওর দিকে ছুটে যায়। কুশল পিছন ঘুরতেই তাহির কুশলের পায়ের উপর লুটিয়ে পড়ে। কুশল উচ্চস্বরে বললো…..

—“গার্ডস ধ*রো ওকে, পালাতে যেনো না পারে।”

তরুনিমা স্তব্ধ মুখশ্রী নিয়ে তাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……..

(১৪০০+ শব্দ আছে এখানে😒)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here