হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৪৯) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
834

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৪৯)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১২৩)
সন্ধ্যা অবাক স্বরে বললো….
—“কোন সত্যের কথা বলছেন আপনি নিলাদ্র?”

নিলাদ্র একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো….
—“সায়মন চৌধুরী আর সাবরিনা চৌধুরী তোদের জন্মদানকারী পিতা-মাতা নয়। তোদের জন্মদানকারী পিতা বড়বাবা মানে রায়হানুল চৌধুরী।”

নিলাদ্রের মুখে এরূপ কথা শুনে সন্ধ্যা যেনো বড়সড় একটা ধা*ক্কা খায়। দুকদম পিছনের দিকে পিছিয়ে গিয়ে পড়ে যেতে নিলে নিলাদ্র সন্ধ্যার হাত ধরে ওকে পড়া থেকে বাঁচিয়ে নেয়। নিলাদ্র সন্ধ্যাকে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দিয়ে বললো…..

—“সন্ধ্যা নিজেকে সামলানোর চেষ্টা কর। এখনও অনেক কঠিন সত্য গুলো জানা বাকি আছে তোদের। এতো সহজে ভে*ঙে পড়লে ভালো মানুষের মু*খো*শ পড়া শ*ত্রু*দের মোকাবিলা করবি কিভাবে! আমরা দূর্বল হয়ে পড়লে আমাদের উপর আ*ঘা*ত হা*না ওদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে যে।”

সন্ধ্যা কাঁ*পা কাঁ*পা কন্ঠে বললো….
—“আমি ঠিক আছি নিলাদ্র। আপনি সব সত্যটুকু বলুন। মেজো ভাইয়া আর আমার জন্মদাত্রী মা কে? আর তিনি কোথায় থাকেন? এতোগুলো বছর ধরে ওনারা আমাদের মা-বাবা সেজে থাকার মিথ্যে নাটকই বা কেনো করলেন! আমি সব সত্য জানতে চাই।”

কুশল নিজের মুখশ্রী জুড়ে শান্ত ভাব স্পষ্ট রেখে দাঁড়িয়ে আছে। নিলাদ্র বললো….

—“বড় বাবার চিকিৎসার দায়িত্ব যেহেতু কুশল আমাকে দিয়েছিলো তাই আমি বড় বাবার ব্লাড টেস্ট থেকে শুরু করে আরো কিছু টেস্ট করেছিলাম। অতঃপর রিপোর্টে দেখলাম দীর্ঘদিন ধরে বড়বাবাকে প্রতিদিন একটা কড়া ডোজের ঔষধ ইনজেক্ট করা হয়েছে। আর এই ঔষধের প্রভাবেই তিনি এখনও পর্যন্ত কো*মা থেকে জাগতে পারেন নি। এরপর একদিন মাঝরাতে তরু ভাবী বড়বাবার রুমের পাশে কারোর অবস্থান দেখতে পেয়ে তার রুমে গিয়েছেন তখন বড়বাবাকে সাময়িক সময়ের জনঢ় অস্বাভাবিক ভাবে কাঁ*প*তে দেখেছিলেন এই কাঁ*পু*নিও ঐ ঔষধের প্রভাবেই হয়েছিলো। সেইসময় তুই বড় বাবার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তার রুমে বাড়ির বাড়তি কোনো সদস্যের প্রবেশ নিষেধ করে দিয়েছিলি। বড় বাবার রুমের দরজায় তালা দিয়ে রেখেছিলি আর চাবি শুধু আমার আর তোর কাছেই রেখেছিলি এই বিষয়টা শ*ত্রু পক্ষের কাছে একেবারেই আনএক্সপেক্টেড বিষয় ছিলো। তাই যখন তারা পরেরদিন রাতে আবারও বড়বাবাকে ঐ ঔষধ ইনজেক্ট করার উদ্দেশ্য নিয়ে তারা সেখানে এসেছিলেন তখন বড় বাবার রুমের বাহিরে তালা লাগানো দেখে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে না পেরে তাদের মাঝেই একজন তালার উপর ঘু*ষি প্রয়োগ করেছিলেন। যার ফলে তালায় ওর দরজার সামনে র*ক্ত লেগেছিলো যা তারা মুছে ফেলতে ভু*লে গিয়েছিলেন। ভোর রাতের দিকে পানি পিপাসা পাওয়ায় আমি যখন ডায়নিং রুমের দিকে আসতে নিয়েছিলাম তখন আমার চোখে তালার উপর র*ক্ত লেগে থাকার বিষয়টা পরে। আমি নিঃশব্দে সেইখান থেকে সামান্য পরিমাণ র*ক্ত সংগ্রহ করে নিজের কাছে রাখি আর পরবর্তীতে শ*ত্রু পক্ষের কারোর চোখে যেনো বিষয়টা না পড়ে তাই সমস্ত র*ক্ত সেখান থেকে পরিষ্কার ও করে ফেলেছিলাম। পরেরদিন রিজভী চাচার হাতের ক্ষ*ত তো সবাই দেখেছিলি। সেটা দেখার পর আর চাচীর মনগড়া কাহিনী শুনে আমার মন খ*চ খ*চ করতে শুরু করেছিলো। তাই আমি চাচার হাতে থাকা ক্ষ*তের জায়গাটা পরিষ্কার করার বাহানায় তার র*ক্তও নিজের কাছে সংগ্রহ করে নিয়েছিলাম। কিন্তু দূ*র্ভা*গ্যের বিষয় হলো রিজভী চাচার র*ক্তের সাথে বড় বাবার রুমের দরজায় লাগানো তালা থেকে সংগ্রহ করা র*ক্ত ম্যচ হয় না। এই কারণে আমার মাথা যেনো ঘুরতে শুরু করেছিলো কাকে ছেড়ে কাকে স*ন্দে*হ করা উচিত আমার আমি তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সেদিনই দুপুরের পর পর হয়তো সায়মন চাচা যখন বাসায় ফিরলেন তখন তার হাতে আর পায়েও ব্য*ন্ডে*জ করা দেখেছিলাম। কিন্তু তিনি বলেছিলেন কোম্পানির জন্য নতুন একটা জায়গা দেখতে শহর থেকে অনেকটা দূরে গিয়েছিলেন সেখানে অন্য কোম্পানির কিছু শ*ত্রু*রা তার উপর অ্য*টা*ক করেছিলো যার ফলে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ঐ ক্ষ*ত গুলোর সৃষ্টি হয়েছিলো। বিষয়টা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য না লাগায় আমি তার ক্ষ*ত গুলোও দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু তিনি আমাকে দেখাতে নারাজ ছিলেন। তাই ঐ র*ক্তের বিষয় থেকে কোনো শ*ত্রু*কে খুজে বের করার কাজও আমার অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছিলো। মাঝরাতে এতোগুলো গার্ডের চোখকে ফাঁ*কি দিয়ে বাড়ির ভিতর কোনো বাড়তি লোকের প্রবেশ করা যে অ*সম্ভব এই বিষয়ে কোনোরূপ স*ন্দে*হ আমার ছিলো না। তাই আমি মনের খ*চ খ*চা*নী দূর করতে পরবর্তীতে খোঁজ নিয়েছিলাম তোদের কোম্পানি থেকে এমাসে কোনো নতুন জায়গা কেনার পরিকল্পনা ছিলো নাকি কিন্তু আমি জানতে পারি তেমন কোনো পরিকল্পনা ছিলো না। যেহেতু রিজভী চাচার র*ক্তের সাথে তালা থেকে সংগ্রহ করা র*ক্ত ম্যচ করে নি আর সায়মন চাচাও আমাকে তার ক্ষ*ত দেখাতে নারাজ ছিলেন সেহেতু সায়মন চাচাই সেই রাতে বড় বাবাকে ঐ কড়া ডোজের ঔষধটি ইনজেক্ট করার উদ্দেশ্য নিয়ে তার সাথেই এসেছিলেন এমনটাই ধারণা করে পুরো বিষয়টাকে আরো ক্লিয়ার করতে পরেরদিন সকালেই আমি দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ বড় বাবার চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন ডাক্তার খালেকুজ্জামানের ক্লিনিকে গিয়েছিলাম তার সাথে পারসোনাল ভাবে কথা বলতে। বলা যায় তার মুখ থেকে সম্পূর্ণ সত্যটা বের করতে। আমি ডাক্তার খালেকুজ্জামানের কেবিনে গিয়ে তাকে ভালোভাবে ধরে বলেছিলাম দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ কার কথায় তিনি বড় বাবাকে এমন আইন বিরোধী ক্ষ*তি*কর ঔষধ ইনজেক্ট করেছিলেন। তিনি সত্যটা স্বীকার করতে নারাজ ছিলেন। পরবর্তীতে যখন তাকে তার ডাক্তারি সার্টিফিকেট হা*রা*নোর ও তার ক্লিনিক সারাজীবনের মতো সিল করে দেওয়ার ভ*য় দেখিয়েছিলাম তখন তিনি বললেন তিনি আমাকে সব সত্য বলবেন কিন্তু সেই সত্য জানতে আমাকে তার বাসায় যেতে হবে। কারণ বাহিরে থাকাকালীন ২৪ঘন্টাই নাকি তার উপর নজরদারী করার জন্য লোক সেট করা আছে। তিনি যেনো কারোর সামনে মুখ না খুলেন এই কথা বলে প্রানে মে*রে ফেলার হু*ম*কি দেওয়া হয়েছে। আমি এতো গভীর ভাবে চিন্তা না করেই খালেকের কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। আর সেদিন বিকেলের মধ্যেই আমি তার বাসায় যাবো এই বলে ক্লিনিক থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলাম। যথাসময়ে আমি ডাক্তার খালেকুজ্জামানের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে চৌধুরী মেনশন থেকে বের ও হয়েছিলাম। ওনার বাসা শহর থেকে বেশ অনেকটা দূরেই ছিলো। তার বাসার সামনে এসে গাড়ি পার্ক করে আমি যখন তার বাসার ভিতরে প্রবেশ করি সেইসময় পিছন থেকে কেও আমার মুখের উপর একটা কাপড় চে*পে ধরেছিলো। সম্ভবত ঐ কাপড়ে ক্লোরোফাম দেওয়া ছিলো যার ফলে আমি সেন্স*লে*স হয়ে গিয়েছিলাম। অতঃপর……….

………………অতীতের সেইদিনের ঘটনা……………….

সেন্স ফেরার পর চোখ মেলতেই নিলাদ্র দেখে ঐ বাসারই ড্রয়িং প্লেসে ওকে হাত-পা বাঁ*ধাবস্থায় চেয়ারে বসিয়ে রেখেছে কেউ। নিজের পরিস্থিতিতে ভালোভাবে বুঝে উঠতে নিলাদ্রের কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। পরক্ষণেই নিলাদ্র বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য আ*প্রাণ চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু কোনোভাবেই সে সফল হতে পারে না। সেইসময় দরজার পাশ থেকে কারোর হাততালি দেওয়ার শব্দ ভেসে আসলে নিলাদ্র শান্ত হয়ে সেদিকে লক্ষ্য করতেই দেখে হুডি পরিহিত ৪জন ব্যক্তির সাথে ডাক্তার খালেকুজ্জামান নিলাদ্রের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। এমনিই আবছা আলো তারউপর হুডি পরে থাকায় সেই ৪জন ব্যক্তি আসলে কারা তা নিলাদ্র বুঝে উঠতে পারছে না। ব্যক্তি ৪জন নিলাদ্রের থেকে ২হাত দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতেই খালেকুজ্জামান পাশ থেকে একটা চেয়ার এনে হুডি পরিহিত একজন ব্যক্তির পিছন পার্শে রেখে হাসিমুখে তাকে বসতে বললেন। ব্যক্তি চেয়ার বসে পায়ের উপর পা তুলে। হুডি পরিহিত বাকি ৩জন ব্যক্তি বসারত সেই ব্যক্তির পাশেই দাঁড়িয়ে থাকেন। নিলাদ্র ওদের দিকে দৃষ্টি স্থির করে বললো….

—“আমি জানি তোমরা কারা। তাই হুডি দ্বারা নিজেদের আপাদমস্তক ঢেকে রাখার কোনো মানে নেই। তোমাদের উদ্দেশ্য কি তা আমার জানা নেই৷ কিন্তু বড় বাবার মতো একজন নিষ্পাপ, ভালো মানুষকে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে ক্ষ*তি*কর কড়া ডোজের ঔষধ ইনজেক্ট করে এসেছো নিজেদের এই পা*ল*তু কু * কু*রের এর দ্বারা, কুশল, সন্ধ্যা, দাদীমার মতো এতো ভালো মানসিকতার মানুষদের সাথে ছ*ল*না করে এসেছো এতোগুলো বছর ধরে সবকিছুর পিছনে যে তোমাদের কোনো ভালো উদ্দেশ্য থাকতে পারে এটা বুঝতেও এখন আমার আর বাকি নেই। তোমাদের মতো মু*খো*শ*ধারী ন*র কি*ট*দের উপর থু*তু ফেলতেও ঘৃ*ণা হচ্ছে আমার। তোমাদের এতোগুলো বছর ধরে সাজানো পরিকল্পনা ভে*স্তে দেওয়ার পথে আমি অগ্রসর হচ্ছিলাম জন্য আমাকে ছ*ল*নার পথ ধরে এখানে এনেছো। এখন হয়তো তোমরা আমাকে মে*রে ফেলবে কিন্তু এ নিয়ে আমার মনের ভিতর বিন্দুমাত্র ভ*য় কাজ করছে না। আমি আমার সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভরসা রেখেছি তিনি ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। সব অ*ন্যা*য় ও পা*প কারীরা একদিন ঠিকই ধ্বং*স হবে। তোমাদের ধ্বং*সে*র দিন ও শুরু হয়ে গিয়েছে।”

নিলাদ্রের মুখে এরূপ কথাগুলো শুনে হুডি পরিহিত ঐ ব্যক্তি ৪জনের রাগে যেনো সর্বশরীর কাঁ*প*ছে। নিজেদের আর মু*খো*শে*র আড়ালে না রেখে ৪জনই নিজেদের মাথার উপর থেকে হুডিটা স*রি*য়ে ফেলে। ওদের ৪জনের রাগে ফেঁ*টে পড়া মুখশ্রী দেখে নিলাদ্রের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। নিলাদ্র যাদের স*ন্দে*হ করেছিলো এরা তারাই। নিলাদ্র রিজভীর দিকে একপলক তাকিয়ে হাতের বাম পার্শে ফাঁকা স্থানে ঘৃ*ণা*য় ভরপুর মুখশ্রী করে থু*তু ফেলে। এভাবেই কামিনী, সায়মন আর সাবরিনাকে একপলক দেখে দেখে নিজের হাতের বাম ও ডান পার্শে থু*তু ফেলে নিলাদ্র। এই থু*তু গুলো যেনো ওদের মুখের উপরই ফেলছে নিলাদ্র এমন মনে হচ্ছে ওদের।

#চলবে ইনশাআল্লাহ…….

(বি-দ্রঃ অনেক ফাঁ*কি দিলাম 🥹 আর দিতাম না। এখন থেকে রোজ গল্প আসবে ইনশাআল্লাহ। গল্পের হাতেগোণা বাকি পর্বগুলো রোজ রোজ পোস্ট করবো 🥹। খুশি হও বাচ্চারা🙈)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here