#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬২)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(১৪৪)
বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে কুশল। সেইসময় তরুনিমা বেলকনিতে প্রবেশ করে কুশলের পাশে এসে দাঁড়ায়। কুশল তরুর উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরেও নিরব থাক। কিছুসময়ের জন্য পিন-প*ত*ন নিরবতা বিরাজ করে ওদের মাঝে। পরক্ষণেই কুশল নিরবতার দেওয়াল ভে*ঙে তরুর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি নিচের দিকে স্থির করে বললো….
—“তখনের কাজের জন্য আমি অনেক দুঃখিত। আমি জানি না তখন আমার কি হয়ে গিয়েছিলো। নিজের মাঝে আমি ছিলাম না। পুরোপুরি আমি কন্ট্রোললেস হয়ে গিয়েছিলাম। তুমি আমার এরূপ আচারণের জন্য কিছু মনে করো না প্লিজ।”
তরু শান্ত দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকিয়ে আছে। কুশলকে গি*ল্টি ফিল করতে দেখে তরুর ঠোঁটের কোণে আলতো হাসির রেখা ফুটে উঠে। পরক্ষণেই তরু কুশলকে অবাক করে দিয়ে দু’হাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে ওর পায়ের উপর নিজের পা জোড়া রেখে ওর ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে নিজের ওষ্ঠদ্বয় মিলিয়ে দেয়। এভাবেই পেরিয়ে যায় বেশ কিছু সময়। তরু কুশলের ওষ্ঠদ্বয়কে মুক্ত করে দেয়। দু’জনের নিঃশ্বাস এর গতি ও হার্টের বিট হওয়ার গতি স্বাভাবিক এর তুলনায় অনেক বেড়ে গিয়েছে। তরু কুশলের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো…..
—“বউ হই আমি আপনার। আমার সামনে নিজেকে আজীবন ধরে কন্ট্রোলে রাখলে আমার বাবা-মায়ের নানা-নানী ডাক শোনার স্বপ্ন কখনও পূরণ হবে না। তাই বউয়ের কাছে এতোটাও ইনোসেন্ট হওয়া উচিত না, বুঝলেন মি.স্বামী সাহেব!”
এই বলে তরু কুশলকে ছেড়ে দিয়ে বেলকোনির অন্যপাশে গিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে চোখ-মুখ খিঁ*চে বন্ধ করে রেখে মনে মনে চিন্তা করে….
—“তরু..তরু..লজ্জা-শরমের মাথা খে*য়ে এ তুই কি করে বসলি! আল্লাহ..আমার হাত-পা এভাবে কাঁ*পছে কেনো!”
কুশল এখনও স্তব্ধ হয়ে নিজের আগের স্থানেই দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রথম কোনো নারী তার এতোটা কাছে এসেছে, তাঁকে চু*ম্ব*ন করেছে এই বিষয়টাকে হজম করে নিতে কুশলের একটু বেশিই সময় লেগে যায়। পুরো বিষয়টাকে হজম করে নিতেই কুশলের ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠে। চোখ তুলে সামনে তাকাতেই একান্ত নিজের প্রিয় নারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পায়। অতঃপর কুশল মুখে কিছু না বলে দ্রুত কদমে তরুর কাছে গিয়ে দু’হাতে ওর পেট জড়িয়ে ধরে ওকে মেঝে থেকে কয়েক ইন্ঞ্চি উপরে উঠিয়ে নিয়ে হাসতে হাসতে গোল গোল ঘুরতে শুরু করে। কুশলের আকস্মিক এমন কাজে তরু কিছুটা ভী*ত হয়ে বলতে থাকে…..
—“আরে..আরে..পরে যাবো তো..কুশল..নামান আমাকে..কুশল।”
কিছুসময় পর কুশল তরুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে ওকে নিচে নামিয়ে দেয়। কুশল তরুর কমোর দু’হাতে জড়িয়ে ধরে ওর কপালের উপর নিজের নাক ঠেকিয়ে রেখেছে। কুশলের গরম নিঃশ্বাস তরুর মুখশ্রীর উপর আ*ছ*ড়ে পড়ছে। তরু লজ্জায় সি*টে গিয়ে কুশলকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ লুকায়। দু’জনের ঠোঁটেই তৃপ্তির হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।
(১৪৫)
নিজেদের রুমে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে রিজভী আর কামিনী দু’জনেই। সেইসময় ওনাদের ছেলে রাজবীর ওনাদের রুমে প্রবেশ করে ভিতর থেকে দরজা আটকে দেয়। রাজবীরের হঠাৎ এমন কাজে রিজভী আর কামিনী দু’জনেই কিছুটা অবাক হয়ে যায়। কামিনী অবাক স্বরে বললেন….
—“রাজ..আমার সোনা বাবা..কিছু কি হয়েছে তোর!”
রাজবীর বিছানায় এসে বসে শান্ত স্বরে বললো…
—“মা-বাবাই আই নো যে জন্মের পর থেকে আমি তোমাদের কাছে ছোট-বড় যেকোনো ধরনের আবদার করলে তোমরা যেকোনো ভাবে আমার সেই আবদার পূরণ করেছো। তাই এখন তোমাদের আমায় আরেকটা আবদার পূরণ করতে হবে। আর তোমরা সেটা কিভাবে পূরণ করবে সেই বিষয়ে আমি কোনো কথা শুনতে রাজি না৷”
রিজভী বললেন….
—“রাজ বাবা..শান্ত হও তুমি৷ আর বলো তোমার কোন আবদারটি এখন আমাদের পূরণ করতে হবে। আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে তোমার সেই আবদার অবশ্যই পূরণ করবো। বলো বাবা..!”
কামিনীও রিজভীর কথায় সায় প্রদান করে বললেন….
—“হুম..আমাদের একমাত্র মানিকের আবদার আমরা ফেলতে পারবো নাকি! বল তুই সোনা বাবা।”
রাজবীর ছোট্ট করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে বললো….
—“আমার সন্ধ্যাকে চাই।”
রাজবীর এর মুখে এরূপ কথা শুনে কামিনী আর রিজভী একে-অপরের দিকে হতভম্বতার দৃষ্টি নিয়ে একপলক দেখে রাজবীরের উপর দৃষ্টি স্থির করে। রিজভী হতভম্বতার স্বরে বললেন…
—“সন্ধ্যা…আমাদের সন্ধ্যা..! ওকে তোমার চাই মানে কি বলছো তুমি!”
—“বাবাই আই ওয়ান্ট সন্ধ্যা…ও আমাকে আজ অনেক বা*জে ভাবে অ*প*মান করেছে। আর আমি এই অ*প*মা*নের কড়া জবাব দিতে চাই ওকে। তাই সন্ধ্যাকে এক রাতের জন্য হলেও তোমাদের আমার হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব।”
রাজবীরের মুখে এরূপ কথা গুলো শুনে কামিনী আর রিজভী দু’জনেই কয়েক সেকেন্ড এর জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন। পরক্ষণেই কামিনী বললেন…
—“রা..রাজ…মানিক আমার…আগে মাথা ঠান্ডা কর তুই। পরিস্থিতি এখনও আমাদের হাতের মুঠোয় আসে নি। তাই এখন যদি আমরা সামান্য তম ভু*ল করে বসি তাহলে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা সব পরিকল্পনা পুরোপুরি ভাবে ভে*স্তে যাবে।”
রিজভী বললেন….
—“রাজ…বাবা…তোর মা যা বলছে একদম ঠিক বলছে। তুই মাথা ঠান্ডা কর। একবার এই চৌধুরী পরিবারের আমাদের প্রাপ্য সম্পত্তি আমরা নিজেদের হাতের মুঠোয় করে নেই তারপর ঐ কুশলের একটা উচিত ব্যবস্থা করবো। তখন তুই অনায়াসে সন্ধ্যার থেকে নিজের অ*প*মানের ব*দ*লা নিতে পারবি। তখন একরাত কেনো তুই যদি সারাজীবন ধরে সন্ধ্যাকে নিজের কাছে রেখে ওকে তিল তিল করে য*ন্ত্র*ণা দিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে চাস করিস। কিন্তু এখন এইসব চিন্তা মাথা থেকে ঝে*ড়ে ফেল।”
রাজবীর রাগ নিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বললো…
—“আরে রাখো তোমাদের সঠিক সময় আর প্রাপ্ত সম্পত্তি পাওয়ার অপেক্ষা। আমি এসবের কোনো কেয়ার করি না। তোমরা যখন সন্ধ্যাকে আমার হাতে তুলে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা এখন করতে পারবেই না তখন আমাকে যা করার করতে হবে।”
এই বলে রাজবীর ওর বাবা-মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তাদের রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। রিজভী আর কামিনীর চেহারায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট হয়। রিজভী চিন্তিত স্বরে বললেন……
—“তীরে এসে এভাবে তরী ডুবতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই। যদি রাজ রাগের বশে সামান্যতম ভু*ল করে বসে আর সেই বিষয়ে কুশল অবগত হয়ে যায় তাহলে সব শে*ষ হয়ে যাবে কামিনী। সব শেষ হয়ে যাবে। তোমার পা*গ*ল ছেলেকে যেকোনো ভাবে সামলাতে হবে..বুঝলে!”
(১৪৬)
কুশল বিছানায় বসে ফোন স্ক্রলিং করছিলো। সেইসময় তরু কুশলের পাশে বসে শান্ত স্বরে বললো…
—“আব..কুশল..আপনার সাথে একটা বিষয় নিয়ে কথা বলার ছিলো।”
তরুর কথা শোনামাত্র কুশল ওর ফোন পাশে রেখে তরুর উপর দৃষ্টি স্থির করে বললো….
—“হুম বলো কি বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাও!”
তরু শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে বললো….
—“সকালে যে কারণে সন্ধ্যা আমাদের রুমে এসেছিলো সেই কারণটা আপনাকে জানানো জরুরী বলে মনে হচ্ছে সেই বিষয়েই কথা বলতে চাইছিলাম।”
—“হুম বলো!”
—“কথাটি শোনার পর আপনি রাগ হবেন না বা কোনোরকম উল্টোপাল্টা কাজ করবেন না কথা দিন।”
তরুর এরূপ কথা শুনে কুশল ভ্রু কুঁচকে নেয়। অতঃপর তরুর কথায় সম্মতি সূচক জবাব দেয় যে সে রাগ হবে না। অতঃপর তরু সন্ধ্যার সাথে করা রাজবীরের খারাপ আচারণ ও কথার ধরণ সম্পর্কে কুশলকে অবগত করে। তরুর মুখে সম্পূর্ণ কথাগুলো শুনে কুশল চোখ বন্ধ করে বাম হাতের শাহাদাত আঙুল দিয়ে কপালের একপাশ আলতো ভাবে ঘষা দিতে শুরু করে। কুশলের এই শান্ত ভাবের আড়ালে যে কতোটা রাগ চা*পা আছে তা তরুর বুঝতে বাকি নেই। তরু একবার শুকনো ঢোক গি*লে নিয়ে বললো….
—“শুনুন…এখন রাগের বশীভূত হয়ে যদি আমাদের মাঝে একজনও সামান্যতম ভু*ল করে বসি তবে তার খে*সা*রত আমাদের খুব বা*জে ভাবে পোহাতে হবে। আমি বলছি না যে অ*ন্যায়*কারীর অ*ন্যায়কে মুখ বুঝে মেনে নিয়ে তাকে ক্ষমা করে দিতে। আমি বলছি যে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করে সব অ*ন্যায় কারীকে এক এক করে কঠোর থেকে কঠোরতম শা*স্তি প্রদান করতে।”
তরুর কথা শেষ হওয়া মাত্র কুশল বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বললো…..
—“সন্ধ্যাকে নিয়ে নিচে ড্রয়িংরুমে এসো জলদী।”
এই বলে কুশল তরুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত কদমে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরু বিছানা থেকে নেমে কপালের চিন্তার ভাঁজ ফুটিয়ে বললো….
—“আল্লাহ…এখন কি হবে! এই মানুষটা এখন যদি রাগের বশে উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেলেন! ধূর আমারই ভু*ল হয়েছে এই পরিস্থিতিতে ওনাকে এসব জানানো।”
এই বলে তরুও রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। ড্রয়িংরুমে নিজের জন্য নির্ধারিত সোফায় বসে কুশল উপস্থিত সার্ভেন্টদের অর্ডার করে পরিবারের সকল সদস্যদের যতো দ্রুত সম্ভব ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হওয়ার কথা বলতে।
কিছুসময়ের ভিতর চৌধুরী পরিবারের সকল সদস্য ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হয়। তরুনিমা আর সন্ধ্যা নিজেদের মাঝে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনাকে দমিয়ে রাখার যথাযথ চেষ্টা করছে। বাকিরা কুশলের উপর দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে কি কারণে তাদের একত্র হতে বলা হয়েছে তা জানতে।
#চলবে ইনশাআল্লাহ…….