হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২৮) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
935

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২৮)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৭৪)
বিকেলবেলা….
তরু আর সন্ধ্যা চৌধুরী মেনশনের সামনে রাখা গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের গাড়ির পিছনের গাড়িতে সাদিক বডিগার্ডদের সাথে কথা বলছিলো। সেইসময় তরুনিমা সাদিককে ডাক দেয়…

—“সাদিক ভাই….এদিকে একটু আসুন তো।”

সাদিক তরুনিমার ডাক শুনে গার্ডসদের গাড়িতে বসতে বলে ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বললো…

—“জ্বি ম্যডাম, কোনো সমস্যা হয়েছে কি?”

—“না কোনো সমস্যা হয় নি। আপনি আমাদের গাড়িতে আপনার স্যারের পাশের সিটে বসে গ্রামে যাবেন এটা বলার জন্যই ডেকে পাঠালাম। সাদিক কিছুটা অবাক হয়ে বললো….

—“কিন্তু ম্যডাম…স্যার যদি রাগ হন?”

তরুনিমা ভ্রু কুঁচকে সাদিকের দিকে তাকিয়ে বললো…..
—“রাগ হবেন কেনো?”

—“ম্যডাম স্যার একা যদি কোথাও যেতেন তখন আমি তার পাশে বসে নিঃসংকোচে যেকোনো জায়গায় যেতেই পারতাম। কিন্তু আজ তো আপনারা স্যারের সাথে যাবেন সেই গাড়িতে আমি কিভাবে যেতে পা…..!”

সাদিক পুরো কথা শেষ করার পূর্বেই পিছন থেকে কুশল গাড়ির দিকে আসতে আসতে বললো….
—“তোমাকে আমি আমার পরিবারেরই একজন সদস্য বলে মনে করি সাদিক। আমার সবরকম কাজে, বিপদে-আপদে তুমি ছায়ার মতো সাথে থাকো। তাই আমার পরিবারের বাকি সদস্যদের সাথে একই গাড়িতে তুমি নিঃসংকোচে যেতে পারো।”

কুশলের মুখে এমন কথা শুনে তরু আর সন্ধ্যার মুখে হাসি ফুটে উঠে। সন্ধ্যা হাসিমুখে সাদিককে বললো…

—“মেজো ভাইয়ার কথা শুনে আপনার সব সংকোচ বোধ নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে কে*টে গিয়েছে! এবার গাড়িতে উঠে বসুন তো আপনি।”

সাদিক হাসিমুখে বললো….
—“আপনারা বসুন ম্যডাম। আমি গার্ডসদের একবার চেক করে আসছি।”

এই বলে সাদিক পিছনের গাড়ির কাছে চলে যায়। সন্ধ্যা আর তরু ওদের গাড়ির পিছনের সিটে বসে পরে। কুশল গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে পরে। পরক্ষণেই সাদিক এসে কুশলের পাশের সিটে বসতেই কুশল গাড়ি স্টার্ট করে।

(৭৫)
চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন নিজ বাড়ির আঙিনায় রাখা জলচৌকিতে বসে কুলকুচি করছিলেন। রান্নাঘরে আমজাদ হোসেনের স্ত্রী শরিফা বেগম রাতের খাবার রান্না করছেন। বারান্দায় রাখা বড় চৌকিতে বসে আরিফ ফোনে গেইম খেলছিলো। সেইসময় মহসিন মেম্বার চেয়ারম্যানের বাসার মূল দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। মহসিন মেম্বারকে ভিতরে আসতে দেখে আমজাদ হোসেন হাতে থাকা ছোট পানির কলসটা নিচে রেখে পাশ থেকে গামছাটা নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললেন….

—“কি ব্যপার মহসিন মেম্বার! হঠাৎ কি মনে কইরা আমার বাড়িত আসলেন?”

মহসিন মেম্বার চেয়ারম্যানের পাশে বসতে বসতে বললেন…
—“আমার ছেলের কু*কর্মের কথা তো ইতিমধ্যে আপনার কান পর্যন্ত পৌঁছাইছে নিশ্চয়ই!”

—“হ, শুনলাম টুকটাক কিছু কথা। কাল তো আপনার পোলার কু*কর্মের জন্য বিচার বৈঠকখানাও বসানোর কথা বইলা গেছেন কুশল চৌধুরী।”

—“আমি এতো ঘুরায় প্য*চা*য় কথা কইতে পারি না চেয়ারম্যান সাহেব। যা কওনের সরাসরি কইতাছি। মনোযোগ দিয়া আমার কথাগুলো শুইনেন।”

আমজাদ হোসেন কিছুটা অবাক হয়ে মহসিন মেম্বারের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন…
—“কি কথা বলতে চাইতাছেন আপনি মহসিন মেম্বার!”

—“আমার পোলায় একটা অ*ন্যা*য় কইরা ফেলছে আমি মানতাছি। কাল বিচার বৈঠকখানায় আমার পোলার কু*কর্মের জন্য আমারেও মেম্বারের পদ থাইকা ইস্তফা দেওন লাগতে পারে। যা আমি কিছুতেই চাই না। আজ আমার পোলায় কইলো সে একা নাকি চাষীর মেয়েকে ধ্ব*র্ষ*ণ করে নি। ওর লগে আপনার পোলা আরিফ ও সঙ্গ দিয়েছিলো। সেই কথা যে আপনে জানেন এটাও আমি জানি। নিজের পদ, সম্মান ও ছেলের জীবন বাঁচানের লাইগা আপনে হয়তো কোনো না কোনো ব্যবস্থা ঠিকই লইছেন ইতিমধ্যে। কিন্তু আপনে একা এই স*ম*স্যা থাইকা বাঁইচা যাবেন এইটা তো হয় না। যেহেতু আপনার আর আমার পোলা দু’জনে একই দো*ষে দো*ষী হইছে তাই বাঁচার অধিকারও ওদের দু’জনেরই আছে। তাই আগামীকাল বিচার বৈঠকখানা বসার আগেই এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করুন যেনো সা*প ও ম*রে আর লাঠিটাও অ*ক্ষ*ত থাকে। আর যদি তেমন কিছু না কইরা আপনে একলা বাঁচার চেষ্টা করেন তাহলে আরিফের কু*কর্মের সত্যটা আমি পুরো গ্রামবাসীর সামনে কইয়া দিমু। কুশল চৌধুরী স্বয়ং উপস্থিত থাকবেন সেখানে, তার বাছ-বিচারে কোনো ভু*ল-ত্রু*টিও হবে না আমি জানি। তখন আমাকে তো আমার মেম্বারের পদ থাইকা ইস্তফা দেওন লাগবেই সাথে আপনাকেও চেয়ারম্যানের পদ থাইকা ইস্তফা দেওন লাগবে। তাই যা করার একটু ভাইবা-চিন্তে করিয়েন। বাঁচার হইলে আমারে সাথে লইয়া বাঁচার চেষ্টা করেন আর না হলে আমি আপনারে লইয়াই ম*র*মু।”

মহসিন মেম্বার এর কথাগুলো শুনে আমজাদ হোসেনের চেহারায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট হয়। মহসিন মেম্বার আর কিছু না বলে বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমজাদ হোসেনের বাসা থেকে বেড়িয়ে যান।

(৭৬)
কুশলরা ইতিমধ্যে ২ঘন্টার পথ অতিক্রম করেছে। বেলা ডুবে গিয়েছে বেশ কিছুসময় পূর্বে। আকাশটা হালকা মেঘাচ্ছন্ন হওয়ায় চারপাশ কেমন অন্ধকারে ছেয়ে আছে। সেইসময় তরুনিমা বললো….

—“সামনে কোথাও চায়ের স্টল আছে কি?”

কুশল গাড়ি চালাতে চালাতে প্রতিত্তোর করলো…
—“হুম, আর মিনিট পাঁচেক পথ অতিক্রম করলেই চায়ের স্টল পড়বে একটা।”

—“সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়েন একটু, অনেকসময় ধরে বসে আছি তাই বোর লাগছে। চা পান করলে যদি মনটা একটু রিফ্রেশ ফিল করে।”

—“আচ্ছা।”

প্রায় পাঁচ মিনিটের পথ অতিক্রম করার পর সেই চায়ের স্টলের পাশে গাড়ি থামায় কুশল। এরপর ওরা গাড়ি থেকে নেমে চায়ের স্টলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সাদিক ভিতরে গিয়ে সবার জন্য চা অর্ডার করে। তরু আর সন্ধ্যা গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কুশলের ফোন আসায় সে সাইডে চলে যায় কথা বলার জন্য। কিছুসময় পর সাদিক তরুনিমা আর সন্ধ্যার জন্য দুই কাপ চা এনে ওদের দেয়। সন্ধ্যা চায়ের কাপ নিয়ে গাড়ির ভিতরে গিয়ে বসে। তরুনিমা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে সাদিককে উদ্দেশ্য করে বললো….

—“সাদিক ভাই…আপনার স্যার কি কাজের জন্য গ্রামে যাচ্ছেন আমাকে বলুন তো একটু।”

সাদিক মাথানিচু করে শান্ত স্বরে বললো…
—“ক্ষমা করবেন ম্যডাম…এই বিষয়ে আমি আপনাকে কিছু জানাতে পারবো না।”

তরুনিমা কিছুটা রাগ নিয়ে বললো….
—“আপনি যদি আমাকে সত্যটা না জানান তাহলে আমি আপনার নামে ওনার কাছে মি*থ্যে না*লি*শ করবো বলে দিলাম।”

তরুনিমার এমন কথায় সাদিক কিছুটা ভ*য় পেয়ে যায়। অতঃপর আর কোনো উপায় না পেয়ে সাদিক কুশলের গ্রামে যাওয়ার সম্পূর্ণ কারণ তরুনিমাকে জানিয়ে দেয়। তরুনিমা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। পরমূহূর্তে সাদিক অনুরোধের স্বরে বললো…

—“ম্যডাম…আমি যে আপনাকে এসব জানিয়েছে দয়াকরে স্যারকে জানাবেন না। তাহলে স্যার আমার উপর অনেক রু*ষ্ট হয়ে যাবেন।”

তরুনিমা স্তব্ধ কন্ঠে বললো….
—“আচ্ছা।”

অতঃপর সাদিক আবারও চা-স্টলের ভিতরে চলে যায়। কিছুসময় পর কুশল ফোনে কথা বলা শেষ করে তরুর পাশে এসে দাঁড়াতেই তরুকে চায়ের ভরা কাপ হাতে নিয়ে এক ধ্যনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো….

—“তুমি কি ঠান্ডা চা পান করে নিজের মনকে রিফ্রেশ করো নাকি!”

আকস্মিক কুশলের কন্ঠ শোনামাত্র তরু কিছুটা ভরকে যায়। পরমূহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো….

—“চা হলেই হলো…ঠান্ডা বা গরমে কিছু যায় আসে না।”

কথাটি বলেই তরুনিমা কুশলকে অবাক করে দিয়ে একচুমুকে সবটুকু চা পান করে মাটির পাত্রটি সাইডে ফেলে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। বিষয়টা হজম করে নিতে কুশলের কয়েকসেকেন্ড সময় লাগে। পরক্ষণেই কুশল চা-স্টলে গিয়ে চা পান করে নেয়। কিছুসময় পর কুশল আর সাদিক গাড়িতে এসে বসে পরে। কুশল গাড়ি স্টার্ট করে, গাড়ি চলতে থাকে আপন গতিতে। বেশকিছু সময় পর তিনমাথায় থাকা পুলিশরা কুশলদের গাড়ি থামাতে বললে কুশল গাড়ি থামিয়ে ওর পাশের গ্লাস নামিয়ে দিতেই একজন পুলিশ এসে শান্ত স্বরে বললেন….

—“স্যার…এই রাস্তা দিয়ে আজ গ্রামে যাওয়া যাবে না। গতকাল রাতে বড় ধরণের ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তার উপর অনেকগুলো গাছ ভে*ঙে পড়েছে। সকাল থেকে সেগুলো সরানোর কাজে নিয়োজিত আছে আমাদের টিম। আপনাদের যদি গ্রামে যাওয়া জরুরী হয় তাহলে আজকের জন্য জঙ্গলের রাস্তা ধরে চলে যান।”

অতঃপর কুশল ওর পাশের গ্লাসটা উঠিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে জঙ্গলের রাস্তা ধরে যাওয়া শুরু করে। কুশলরা চলে যেতেই সেখানে থাকা একজন পুলিশ পকেট থেকে ফোন বের করে কাওকে কল করে।

চলবে ইনশাআল্লাহ………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here