হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৩০) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
924

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৩০)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৭৯)
বি*দ্ধ*স্ত মুখশ্রী নিয়ে রূপগঞ্জ গ্রামের বাগান বাড়ির মূল দরজা ভেদ করে গাড়ি ভিতরে প্রবেশ করালো কুশল। গার্ডসরা গাড়ি থেকে নামে। ৪জহ গার্ডস সাদিককে ছু*ড়ি*কা*ঘা*ত করা লোকটিকে ধরে গু*দা*ম*ঘরের দিকে নিয়ে যায়। আর বাকি গার্ডসরা বাগান বাড়ির চারপাশ ঘিরে নেয়। তরুনিমা, কুশল গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। গাড়ির পিছন সিটে সন্ধ্যা এখনও নি*স্ত*ব্ধ হয়ে সাদিকের লা*শে*র পাশে বসে আছে। কুশল দু’জন গার্ডসকে ইশারা করলে তারা কুশলের সামনে এসে দাঁড়াতেই কুশল শান্ত স্বরে বললো…

—“সাদিককে গাড়ি থেকে নামানোর ব্যবস্থা করো।”

গার্ডস দু’জন তৎক্ষনাৎ গাড়ির কাছে গিয়ে পিছন দরজা খুলে দিতেই গাড়ির ভিতরে সন্ধ্যাকে এখনও বসে থাকতে দেখে মাথা নিছু রেখে বললো…….

—“ম্যডাম..স্যার আমাদের সাদিক ভাইয়ের লা*শ গাড়ি থেকে নামাতে বললেন। আপনি যদি গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেন তাহলে ভাইয়ের লা*শ নামাতে আমাদের সুবিধা হতো।”

সন্ধ্যা আরেকপলক সাদিকের নি*স্ত*ব্ধ মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বব্দে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। বাড়ির ভিতর থেকে একজন মধ্যবয়সের মহিলা সাদা চাদর এনে বাড়ির সামনের অংশে মাটির উপর বিছিয়ে দেয় গার্ডস দু’জন সাদিকের লা*শ গাড়ি থেকে নামিয়ে সেখানে শুইয়ে দিয়ে আরেকটা সাদা চাদর নিয়ে সাদিকের আপাদমস্তক ঢেকে দেয়।

সন্ধ্যা তরুনিমার পাশে এসে দাঁড়াতেই কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“তোমরা বাড়ির ভিতরে গিয়ে বিশ্রাম করো।”

তরুনিমা কুশলের দিকে তাকিয়ে বললো…
—“আপনি!”

কুশল আগের স্থানেই দাঁড়িয়ে সাদিকের লা*শে*র দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বললো….
—“কিছু অসম্পূর্ণ কাজের হিসাব মিলানো বাকি আছে। শেষ করা অতিব জরুরী।”

তরুনিমা আর কিছু না বলে সন্ধ্যাকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। পরক্ষণে কুশলও গু*দা*ম*ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। গু*দা*ম*ঘরে প্রবেশ করতেই কুশল ওর সামনে সাদিককে ছু*ড়ি*কা*ঘা*ত করা মানুষটিকে হাত-পা-মুখ বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে পড়তে থাকতে দেখতে পায়। কুশল লোকটির সামনে চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে বললো…..

—“এর মুখের বাঁধন খুলে দাও।”

কুশলের কথানুযায়ী একজন গার্ড লোকটির মুখের বাঁধন খুলে দেয়। মুখের বাঁধন খোলা পাওয়া মাত্রই লোকটি উচ্চস্বরে বললো….

—“আমাকে মে*রে ফেললেও আমার মুখ থেকে কোনো কথা বের করতে পারবেন না আ…..”

লোকটি পুরো কথা শেষ করার পূর্বেই কুশল লোকটির ডান পায়ের হাটুর নিচের মাংসপেশিতে একটা গু*লি করে। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি ‘আআআআ’ বলে আ*র্ত*না*দ করে উঠে বললো….

—“পায়ে কেনো গু*লি করলেন? সরাসরি বুকে বা মাথায় করে দিত….”

কুশল এবার লোকটির বাম পায়ের মাংসপেশিতে আরেকটা গু*লি করে। য*ন্ত্র*ণায় লোকটি বসাবস্থা থেকে শুয়ে পড়ে আ*র্ত*না*দ করতে করতে বললো…

—“গু*লি করতে করতে আমার সর্বশরীর ঝাঁ/ঝ*ড়া করে ফেললেও আমার মুখ থেকে কোনো কথা বের করতে পারবেন না আপনি।”

চেয়ারের হাতলের উপর হাত ভাঁজ করে রেখে কুশল ওর কপালের ডান পার্শে শাহাদত আঙুল দিয়ে ঘ*ষা দিতে দিতে লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললো….

—“দেখ তো এদের চিনতে পারিস কি না…!”

কুশলের মুখে এমন কথা শুনে লোকটি শোয়াবস্থাতেই য*ন্ত্র*ণায় দাঁতে দাঁত পি*ষে গু*দা*ম*ঘরের দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই দেখে ৪জন গার্ডস ১জন বৃদ্ধ বয়সের মহিলা, ১জন মধ্যবয়সের মহিলা ও ২জন কমবয়সী মেয়ের মাথায় ব*ন্দু*ক ঠেকিয়ে গু*দা*ম*ঘরের ভিতরে প্রবেশ করছে। এই দৃশ্য দেখা মাত্র লোকটি ভ*র*কে গিয়ে বললো….

—“আ-আমার প-পর-পরিবারকে ছ-ছে-ছেড়ে দিন। ও-ওরা তো আ-আপ-আপনার কোনো ক্ষ-ক্ষতি করে নি। যা ক-করার আমি করেছি। তাই যা শা-শা*স্তি দেওয়ার আমাকে দিন। ওদের ছেড়ে দিন।”

কুশল লোকটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থির করে বললো…
—“তোর গলার স্বর এতো তাড়াতাড়ি পরিবর্তন হয়ে গেলো কি করে! আপন মানুষদের হা*রা*নো*র ভ*য় বুঝি তোর মনের ভিতর জেঁ*কে বসেছে এখন? এতোসময় চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বললি তোর সর্বশরীর গু*লি মে*রে মে*রে ঝাঁ*ঝ*রা করে দিলেও তোর মুখ থেকে কোনো কথা আমি বের করাতে পারবো না। বুঝতে পারলাম তোর কাছে তোর প্রাণের কোনো মূল্য নেই। তাই ঠিক করলাম তোর উপর গু*লি ব*র্ষ*ণ করে সময় ও বুলেট গুলো নষ্ট না করে তোর পরিবারের মানুষগুলোর সর্বশরীর গুলি মে*রে ঝাঁ*ঝ*ড়া করে দিবো। দেখি এতেও তোর মুখ থেকে কোনো কথা বের হয় কি না!”

এই বলেই কুশল লোকটির পরিবারের মানুষগুলোর দিকে হাতে থাকা ছোট্ট ব*ন্দু*ক*টি তাঁ*ক করে একবার গু*লি করে। ভ*য়ে লোকটি চোখ বন্ধ করে নিয়ে মুখ দিয়ে ‘নাআআআআ’ শব্দটি উচ্চারণ করে। পরক্ষণেই চোখ মেলে নিজের পরিবারের সদস্যদের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে সকলেই এখনও অ*ক্ষ*ত আছে। কুশল লোকটির উপর দৃষ্টি স্থির রেখে ওর ডান হাতের আঙুল দ্বারা ব*ন্দু*কটি ঘুরাতে ঘুরাতে বললো….

—“এবার গু*লি*টি শূন্যে করে সময় ও বুলেট দুটোই ন*ষ্ট করেছি ঠিকই কিন্তু এরপর আর ন*ষ্ট হবে না। ব*ন্দু*ক থেকে বের হওয়া প্রতিটি গু*লি তোর পরিবারের প্রতিটি সদস্যের শরীর ঝাঁ*ঝ*ড়া করে দিবে।”

লোকটি ভী*ত স্বরে বললো….
—“না…না…আ-আমি ব-বলছি..বলছি…আমি সব সত্য বলছি। আ-আমার পরিবারের কারোর কোনো ক্ষ*তি করবেন না দয়া করে।”

—“বল, কার কথায় এই কাজ করেছিস?”

—“চে-চেয়ারম্যান…চেয়ারম্যান সাহেব এর কথায় এই কাজ করেছি আমি।”

লোকটির মুখে চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন এর কথা শুনে কুশল কিছুটা অবাক হয়ে ভাবে ‘চেয়ারম্যানের তার সাথে কি সমস্যা!’ হিসাবে বড় ধরণের গ*ন্ড*গো*ল উঠে আসছে। লোকটি আবারও বললো…

—“আমি অনেক গরীব। আমার নিজস্ব কোনো জমিজমা নাই। চেয়ারম্যানের জমিতে কা*ম*লা খেঁ*টে যে টাকা পাই তাই দিয়েই আমার সংসার চলে। প্রতিদিনের মতো গতকাল বিকালেও চেয়ারম্যানের জমিতে কাজ করছিলাম। তখন চেয়ারম্যান লোক পাঠিয়ে আমাকে তার বাড়িতে ডেকে পাঠান। আমি যখন যাই তখন তিনি আমাকে বলেন তার হয়ে আমাকে একটা কাজ করে দিতে হবে। আমি জিগাইছিলাম ‘কি কাজ করতে হইবো!’ তখন উনি বললেন , ‘আপনি আজ গ্রামে জঙ্গলের পথে আসার সময় আমি যেনো আপনাকে গু*রু*ত*র*ভাবে আ*হ*ত করে দেই। যদি আপনাকে আ*ঘা*ত করতে না পারি তাহলে আপনার পরিবারের কোনো সদস্য যদি আপনার সাথে থাকেন তখন তাকে যেনো আ*হ*ত করে দেই। আপনি বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য আ*হ*ত হলে চিকিৎসার জন্য আবারও শহরে যেতে হবে আপনাকে। যেকোনো ভাবে আপনাকে আজ গ্রামে আসা ভে*স্তে দেওয়ার কাজই আমায় করতে বলেছিলেন।’ এমন কাজের কথা শুনেই আমি ‘করতে পারবো না’ জানিয়ে দিয়েছিলাম চেয়ারম্যানকে। তখন তিনি আমাকে মোটা অংকের টাকা দেবেন বলে লো*ভ দেখান, আমাকে ইট-পাঁকা ঘর করে দিবেন, কয়েকশতক জমির মালিকানা দিবেন এও বলেন। কিন্তু আমি তবুও রাজি হই নাই। পরে কোনো ভাবেই যখন আমাকে রাজি করাতে পারলেন না তখন উনি বললেন , ‘উনি আমার দুই মাইয়ারে উঠায় নিয়ে এসে নিজের ছেলের হাতে তুলে দিবেন , আমার মাইয়া দু’টোর স*র্ব*না*শ করে ওদের মে*রে নদীতে ভা*সা*ই*য়া দিবেন।’ ওনার এমন কথা শুনে আমি নিরুপায় হয়ে গিয়েছিলাম। এইসব কথা বাড়তি কারোর কাছে যাইয়া যেনো না বলি এটা নিয়াও উনি আমাকে হু*ম*কি দিয়েছিলেন। আমি আমার পরিবারের প্রাণের কথা চিন্তা করে আজ আপনাদের উপর আ*ক্র*ম*ণ করে বসছি মালিক। চেয়ারম্যানের কথা মাইনা নেওয়া ছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিলো না। আমি ভাবি নাই আমার আ*ঘা*তে একটা মানুষের প্রা*ণ চলে যাবে। আমার এই জীবন আমি রাখতে চাই না মালিক। আমার কর্মের শা*স্তি আমার পরিবারের কাওকে দিয়েন না। আমারে মা*ই*রা ফেলেন আপনি।”

এই বলে লোকটি হু হু কাঁদতে শুরু করেন। কুশল কিছুসময় নিরব থাকার পর দু’জন গার্ডকে উদ্দেশ্য করে বললো…
—“ওর দুই পায়ের মাংসপেশি থেকে গু*লি দু’টো বের করে ক্ষ*ত স্থানে ঔষধ লাগিয়ে দাও। আর ওর পরিবারের সদস্যদের আপাতত বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাও। এই সময় ওদের নিজেদের বাড়িতে থাকা নিরাপদ নয়।”

কুশলের এমন কথা শুনে ছু*ড়ি*কা*ঘা*ত করা লোকটি স্ত*ব্দ হয়ে যায়। লোকটি মনে মনে এটা ভেবে আ*ফ*সো*স করছে যে…..

—“নিজের আপন জনের হ*ত্যা*কা*রীকে কঠিন শা*স্তি না দিয়ে আমার ও আমার পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছেন এমন একজন ভালো মনের মানুষকে আ*ঘা*ত করার চেষ্টা করেছি আমি, এই লজ্জায় আমার এখুনি ম*রে যাওয়া উচিত।”

কুশলের কথানুযায়ী লোকটিকে আর তার পরিবারকে গু*দা*ম*ঘরের বাহিরে সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে যায় গার্ডসরা। কুশল চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে কয়েকজন গার্ডসকে উদ্দেশ্য করে বলে…

—“তোমরা চেয়ারম্যানের বাড়িতে যাও। চেয়ারম্যানকে ও ওনার পরিবারের সকল সদস্যদের এখানে উঠিয়ে নিয়ে আসবে। খেয়াল রাখবে আশেপাশের কোনো প্রাণী যেনো এই বিষয়ে কিছু টের না পায়।”

কুশলের কথানুযায়ী গার্ডসরা চেয়ারম্যানের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কুশল ও গু*দা*ম*ঘর থেকে বেড়িয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়।

#চলবে ইনশাআল্লাহ…..

(বি:দ্রঃ- গ্রামের বাড়িতে এসেছি অনেকদিন পর। তাই বাড়ি-ঘরের অবস্থা ধু*লো-বালি দিয়ে ক*রু*ন হয়ে আছে। গতকাল ও আজ দু’দিন ধরে একাহাতে পরিষ্কার করছি সব। এখন মনে হচ্ছে ঘরগুলো মানুষের থাকার জন্য যোগ্য হয়েছে🙂। গল্প লেখে উঠতে পারি নি কাজের চা*পে। আমি দুঃখিত। সারাদিন কাজ করার ফাঁ*কে ফাঁ*কে আজকের পর্বটা লেখা শেষ করলাম। আমি অনিয়মিত হওয়ায় সবাই আমার উপর বি*র*ক্ত আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here