আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥ #পর্ব_২৩+২৪

0
196

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_২৩+২৪

আমি নাস্তা দিয়া হাসি মুখে একপাশে দাঁড়াইলাম। ভাবতেসি কি নিয়া কথা বলতেছিল? কোথায় আমার মতামত প্রয়োজন। বুঝলাম না।

দুপুরে ওনারা খেয়ে চইলা গেলেন। আমি থাকতে বলছিলাম কিন্তু কাজের বাহানায় চইলা গেলেন। আমি নিজের রুমে শুয়ে ভাবতেসি, আজকে ভালো একটা দিন গেল। হঠাৎ আমার মন কইল, গাজর ছাড়া কেমনে কি? আমি চট কইরা গিয়া ফ্রিজের সামনে দাঁড়াইলাম। কালকে খালু আধা কেজি গাজর আনসে। আমি ফ্রিজ খুইলা বেকুব হই গেলাম। গাজর কই? এতো ধূ ধূ মাঠ। আমার গাজর……!!!!!! আমি কাঁদো কাঁদো মুখ কইরা ফ্রিজ খুইলা দাঁড়াই আছি। আকাশ এসে বলল, ফ্রিজের কি ঠান্ডা লাগছে যে দরজা খুলে তার ভেতর থেকে হাওয়া বের করছো? আমি দ্রুত দরজা বন্ধ করে তাকাই দেখি সে একটা আধ খাওয়া গাজর হাতে দাঁড়াই আছে। আন্টি কতবার বলসে তাদের সাথে যাইতে। সে যায় নাই। আর এখন আমার গাজরে হামলা করে সাবাড় করতেসে। সে গাজরে কামড় বসিয়ে বলল, কি হল? আমি বেচারা গাজরের দিকে তাকাই আছি। সেও আমার দিকে কান্নাভরা দৃষ্টিতে তাকায় আছে আর বলতেসে, ছেড়ে দে শয়তান, তুই আমার দেহ পাবি মন পাবি না।

– ও হ্যালো!

আমার ধ্যান ভাঙ্গতেই দেখলাম গাজর গায়েব। আমি মন খারাপ কইরা বললাম, কয়দিন পরে বিয়ে আর আপনি বর পক্ষ হয়ে এখনও কনে পক্ষের বাড়িতে বসে আছেন এটা কি ভালো দেখায়? সে আমার দিকে আগাইতে আগাইতে বলল, উহু, একদম ভালো দেখায় না কিন্তু কি করবো বলো, আমার সবচেয়ে দামি জিনিসটা তো এখানে।

– মানে?

– কিছু না।

আকাশ চলে যাইতেছিল, যাওয়ার আগে বলল, বসার ঘরে টি টেবিলের উপর একটা কালো পলিথিন আছে। ওটা তোমার জন্য। সে চলে যাইতেই আমি বসার ঘরে গিয়া দেখলাম ওখানে বেশ মোটাসোটা একটা কালো পলিথিন। খুলতেই আমার মনটা লাফাই উঠল। এত্তোগুলা গাজর!

সেদিন বিকালে আকাশ চইলা গেল। আমি তখন হা কইরা পইড়া পইড়া ঘুমাইতেছিলাম। উঠে শুনলাম সে নাকি চইলা গেসে। আমাকে জাগাতে চাইছিল মুন, আকাশ নাকি মানা করসে। আমাকে বাইরে থেকে এক পলক দেইখা চইলা গেসে।
.
.
.
.
মাঝের দিনগুলা কেমনে যেন চইলা গেল। দেখতে দেখতে বিয়ার দিন চইলা আসল। আজকে গায়ে হলুদ। পুরো বাড়িতে মেহমানে পিঁপড়ার মতো গিজ গিজ করতেসে। একটা রুমও খালি পাওয়া যায় না। বাপরে!!!! সবাই শাড়ি গয়না পরতে ব্যস্ত। আমি রুমের এক কোনায় বইসা আছি। মনটা খারাপ। আজকে প্রথম আমি আমার নানা নানুকে দেখলাম। মুনের সাথে যখন কথা বলতে আসছিল তখন আমি মাত্র রুমে ঢুকলাম। তাদের দেখে আমার চিনতে কষ্ট হয় নাই। মিষ্টি খালা নানার চেহারা পাইসে। আর নানু দেখতে প্রায় আম্মুর মতো। নানু মুনকে একটা বালা পরাইয়া দিলেন। আমি যেতেই নানা মুখ কালো কইরা বেরিয়ে গেলেন। আমি একপাশে গিয়ে বইসা রইলাম। নানু আমার কাছে আইসা বসে বললেন, শিমুর মেয়ে তাই না? আমি নানুর দিকে তাকাইলাম। কেন যেন তাকে দেইখা কান্না পাইতেসে। আম্মুর কথা মনে পড়তেসে। আমি মুখ নিচু করে বইসা রইলাম। নানু আমার ডান হাত টাইনা একটা মোটা সোনার বালা পরাইয়া দিয়া বললেন, এটা তোর। আমি বালাটার দিকে তাকাই বললাম, কিন্তু আমার তো বিয়ে না। আর…। নানু হাইসা বললেন, খালি বিয়ে হলে দিতে হবে? তুই হওয়ার সময় তো তোকে দেখতে যেতে পারিনি। তাই আজ দিলাম। নানু চইলা গেলেন। আমি বালাটার দিকে তাকাই বইসা রইলাম।

মুনকে সাজাইতে লোক আসছে। আমি বসে বসে ওরে দেখতেসি। মেকআপ করার সময় আমারে ডাইকা বলল, তুই সাজবি না?

– হুম।

– কখন?

– এই তো, সাজবো।

– দেখ ছোঁয়া, আমি বেশ বুঝতে পারছি তোর কিছু নিয়ে মন খারাপ। আমি কিন্তু তোর সাথে সেজেগুজে স্টেজে উঠবো। না হলে ……

– আচ্ছা বাবা, রেডি হচ্ছি। ভালোই ব্ল্যাকমেইল করতে শিখেছিস।

আমি আলমারি থেকে শাড়ি গয়না বাইর করলাম। সেই লাল সাদা জামদানী শাড়িটা। আটপৌড়ে কইরা সুন্দরভাবে শাড়িটা পড়লাম। মাথায় বড় একটা খোঁপা কইরা তাতে কাঠবেলীর গাজরা লাগিয়ে দুইপাশে তিনটা তিনটা করে গোলাপ গুঁজে দিলাম। মাঝে সিঁথি কইরা দুইপাশে একটু ছোট চুল রাখলাম। সিঁথিতে একটা ছোট সাদা পাথরের টিকলি পরলাম। দুই হাতে লাল কাচের চুড়ি। হালকা সাজ দিয়ে চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক দিলাম। তারপর গয়না পরতেই সাজ কমপ্লিট।

সাতটার দিকে বরপক্ষ আসল। আমরা রেডি হইলাম মুনকে স্টেজে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মুন আমাকে কাছে টেনে ফিসফিস কইরা বলল, আজকে একটু সাবধানে থাকিস। আমি চোখ মুখ কুঁচকাই কইলাম, কেন? সে বিজ্ঞের মতো মাথা নাইড়া নাইড়া বলল, আজকে তোর উপর অনেকে ক্রাশ খাবে। আমি হালকা লজ্জা পাইয়া বললাম, ধুর। সে রাগীকন্ঠে কইল, খবরদার, আমার দুলাভাই ছাড়া যেন তোর আর কারো দিকে নজর না পড়ে। আমি জিগাইলাম, দুলাভাই? সেটা কে শুনি। ও মুখে বাঁকা হাসি দিয়া বলল, দেখতে পাবি। এর মধ্যে ক্যামেরা ম্যান চইলা আসল। আর কথা বলতে পারলাম না। আমার মনে হইতেসে ও কিছু লুকাইতেসে।
.
.
.
.
ওরে স্টেজে উঠাই এদিক ওদিক তাকাইলাম। আকাশ আসে নাই নাকি? চোখ দুইটা ওরে খুঁজতেসে। কিন্তু দেখতেসি না। আমি স্টেজ থেকে নামতে গিয়া হঠাৎ কিছুর সাথে পা বিঁধে গেল। পরতে লাগছিলাম কিন্তু তার আগেই কেউ আমার কোমর জড়াই ধইরা ফেলল। তাকাই দেখি রাতুল তার চৌদ্দ গুষ্টির হইতে প্রাপ্ত দাঁত বাইর কইরা হাসতেসে। আমি তাড়াতাড়ি তার থেইকা নিজেকে ছাড়াই নিলাম। সে বলল, দেখে হাঁটবে তো। আমি বললাম, জন্ম থেকেই আমার পা দুইটা অবাধ্য। কি করতাম। ও আমার কাছে এসে বলল, সমস্যা নাই। তুমি যতবার পড়বা ততবার আমি তোমাকে ধরে ফেলব। যদি এত মানুষ না থাকতো তাহলে ওর কপালে শনি ছিল আজ। আমার হাতে প্রচুর মাইর খাইতো। আমি চলে যাইতে লাগলে সে আমার হাত ধইরা বলল, কোথায় যাচ্ছো? আমি হাত ছাইড়া নিয়া বললাম, গলায় কলসি বাঁইধা পুকুরে মরতে যাইতেসি। তুমি যাইবা? সে উদিগ্ন হইয়া বলল, কেন কেন? কে তোমাকে কি বলসে। একবার নামটা বলো। আমি তাকে স্বর্গে পাঠাই দিবো। আমি মনে মনে কইলাম, বেকুব একটা। বেশি কথা বললে আমিই তোরে স্বর্গে পাঠাই দিমু।

মুন আমারে ডাইকা কানে কানে বলল, আমি না ছাদে একটা জিনিস ফেলে আসছি বিকালে। পরে আর আনা হয় নাই। একটু গিয়ে নিয়ে আসবি? আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি জিনিস? ও কইল, গেলেই দেখতে পাবি। যা না। আমি কইলাম, আচ্ছা, দেখতেসি।

– এখনই যা। খুব ইম্পর্টেন্ট।

– আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি।

আমি বাড়ির ভেতরে গেলাম। ছাদের লাইট জ্বালাই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে বিড় বিড় করতেসি, আজকে কখনই বা ছাদে গেল। কি এমন জিনিস ফালাই আসলো। এত ইম্পর্টেন্ট যে এখনই আনতে হবে। কি জানি বাবা। এই মেয়ের কিছুই বুঝি না। ছাদে উঠে অবাক হই বললাম, কি ব্যাপার! দরজা খোলা ক্যান?

আমি ছাদে পা রাখতে না রাখতে কেউ আমার হাত টাইনা দেয়ালের সাথে দাঁড় করাইলো। আমি তো চোখ বন্ধ কইরা ভয়ে কাঁপতেসি৷ চিক্কুরটা দেওয়ার আগেই কেউ মুখ চাইপা ধইরা বলল, ছোঁয়া। তাকাই দেখি আকাশ দাঁড়াই আছে। ওকে দেইখা আজকে আবার ক্রাশ খাইলাম। সেই লাগতেসে। সোনালী কাজ করা হলুদ পাঞ্জাবী পরসে। সাথে চিকন সোনালী ফ্রেমের চশমা আর মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। চুলগুলা আজকেও শ্যাম্পু করা। হালকা বাতাসে ওর চোখের উপর নড়তেসে। কিন্তু মুখটার বাচ্চাভাবটা এখনো আছে। আমি তো চোখ ফিরাইতে পারতেসি না। ও আমার মুখ ছাইড়া দিল। তারপর আমার সামনে বইসা বলল, তোমার পায়ের পাতা আমার পায়ের উপর রাখো।

– কেন?

– এত প্রশ্ন করো কেন? রাখতে বলেছি যখন রাখো।

আমি রাখতেই ও পকেট থেকে একজোড়া নুপুর বের করে একটা আমার পায়ে পরাই দিল। আমি অবাক হই বললাম, নুপুর?

– হুম। দেখি আরেকটা পা দাও।

আরেক পায়েও নুপুর পরাই দিয়া উঠে দাঁড়াই বলল, খুব মানিয়েছে তোমার পায়ে। আমি ভাব ধইরা বললাম, দেখতে হবে না পাটা কার। হঠাৎ সে আমার মাথার পাশে দেয়ালে ডান হাত রেখে মাথা নিচু কইরা রইল। আমি বললাম, তোমার কি শরীর খারাপ লাগতেসে? ও মাথা নিচু কইরাই বলল, ছোঁয়া আমি তোমার কাছে কিছু চাই। দিবে? আমি কইলাম, সাধ্যে থাকলে অবশ্যই দিবো। ও মুখ তুলে আমার ঠোঁটের দিকে কেমন করে তাকাল। খেয়াল হতেই আমার পুরা মুখ লাল হই গেল। আমি দুই হাত দিয়ে মুখ চাইপা ধইরা ওর দিকে তাকাইলাম। ও আমার কানের কাছে আইসা ফিসফিস কইরা কইল, আর কতবার আমাকে ঘায়েল করবে তোমার রূপে? আমাকে যে দিন দিন তোমার নেশায় ধরছে। আর তো আটকে রাখতে পারছে না নিজেকে। কি করি বলো তো?

– আমি আমি…

আমার গলা কাঁপতেসে। কি কমু বুঝতেসি না। ওরে আগে এমন দেখি নাই। আচমকা সে আমার কানে আলতো করে ওর ঠোঁট জোড়া ছুইয়ে দিল। সাথে সাথে মনে হইল আমার শরীরে কেউ চারশো চল্লিশ বোল্টেজের তার লাগাই দিসে। ও বলল, তোমার মিষ্টি সুবাসে আজ আবার মাতাল হয়ে গেলাম ছোঁয়া। কেন এত ভালো লাগে? আমি কাঁপতে লাগলাম। আর বেশিক্ষণ থাকলে আমি পাগল হই যামু। আমি ওরে ঠেলে দ্রুত সিঁড়ি দিয়া নাইমা আমাদের রুমে চইলা আসলাম। ওখানে এখন কেউ নাই। সবাই বাইরে। আমি দরজা মাইরা দিয়া হেলান দিয়া দাঁড়াইলাম। এক ডোজেই আমার অবস্থা খারাপ কইরা দিল। সারা শরীর গরম হই গেসে। হার্টটা লাফাইতে লাফাইতে বুক থেকে বের হই যাইতেসে। আমি আয়নার দিকে তাকালাম। এক পলক তাকাতেই আবার চোখ সরাই নিলাম। কি হল আজকে আমার! কেউ আমারে বাঁচাও, আমি যে লজ্জার সাগরে ডুইবা গেলাম।
চলবে…
#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_২৪

আমি আয়নার দিকে তাকালাম। এক পলক তাকাতেই আবার চোখ সরাই নিলাম। কি হল আজকে আমার! কেউ আমারে বাঁচাও, আমি যে লজ্জার সাগরে ডুইবা গেলাম।

আমি যখন রুম থেকে বাইর হইলাম তখন নয়টা প্রায় বাজতে চলল। আমি আশেপাশে তাকাইতে লাগলাম। নাহ্, চেরিকে কোথাও দেখা যাইতেসে না। আমি মুনের কাছে গেলাম। মুন জিজ্ঞেস করল, কই ছিলি? আমি মুখে হালকা লজ্জা টাইনা বললাম, রুমে। তুই আমাকে কি জিনিস আনতে বলসিলি? মুন টিস্যু দিয়া মুখ মুছতে মুছতে কইল, কেন একটা ইয়া বড়ো খাম্বা পাশ নাই? আমি লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেইলা কইলাম, তুইও তার দলে নাম লিখাইলি? মুন আমারে পাত্তা না দিয়া বলল, আয় তো, আমাকে মেহেদী লাগিয়ে দে। আমি আরো বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেইলা মেহেদী হাতে নিয়া মনে মনে কইলাম, এখন থেকেই জামাইর বন্ধুর দলে যোগ দেয়া শুরু করসে। বিয়ার পর তো আমারে আর চিনবোই না।

যখন মেহেদী লাগাই উঠলাম তখন ঘড়িতে সাড়ে এগারটা বাইজা গেসে। আমি উঠেই খাবারের কাছে ছুইটা গেলাম। খিদায় পেটের ইন্দুর চিকা সব যুদ্ধ শুরু করসে। এতক্ষণ তো তলোয়ার যুদ্ধ চলতেছিল। এখন না খাইলে ক্ষেপণাস্ত্র মাইরা বসবো। আমি খাইয়া উভয় পক্ষকে শান্ত কইরা একটা বড়ো হাই তুললাম। সেই ঘুম আসতেসে। আমি সবকিছু চেঞ্জ কইরা শুইতে আসলাম। দেখি রুমের ভেতর মানুষের বন্যা বয়ে গেসে। বিছানায় মানুষ, ফ্লোরে মানুষ, চেয়ারে মানুষ। আমার জায়গা নাই। মুনও দেখি এক কোনে শুয়ে পড়সে। আমি কই যাই? ওর ওখানে একটু খালি আছে মনে হয়। আমি পাহাড় পর্বত ডিঙাইয়া ওর কাছে গেলাম। ইস্, আমি পাই না ঘুমানোর জায়গা আর সে কোলবালিশ নিয়া ঘুমাইতেসে। আমি কোলবালিশটা নিয়া ছুইড়া মারলাম একপাশে। ও ঘুম ঘুম চোখে বলল, তুই আসছিস? নে শুয়ে পড়। বলে আমারেই কোলবালিশ বানাই ফেলল। কিসু বলতে যামু, পরে মনে হইল না থাক আজবাদে কাল তো চলেই যাবে। থাকি না কিছুক্ষণ। আমি শুয়ে রইলাম চুপচাপ। ও হাত দিয়া আমারে জড়াই ধরে আছে।

আমার মনে হল আমি কিছুকে মিস করতেসি। এই কয়দিন একবারও লাভার ভ্যাম্পায়ার ফোন দেয় নাই। ম্যাসেজও না। কেন জানি ওগুলাকে খুব মিস করতেসি। একটানা ছয় বছর পাইতে পাইতে অভ্যাস হই গেসে। একটু পর পর ফোন চেক করি ম্যাসেজ আসছে কি না। কি হল হঠাৎ? আমিই বা কেন এত ভাবতেসি? তাহলে কি আমার ওর প্রতি ফিলিংস চলে আসছে? না না, এটা কি কইরা হয়? চিনি না জানি না। না না, কিন্তু……। কেন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগতেসে। আকাশের প্রতি আমার ঐ সময় থেকে একটা আবেগ কাজ করসে। সেটা কি সত্যি ভালোবাসা ছিল? না শুধুই আবেগ? ভ্যাম্পায়ার আমাকে কেয়ার করতো। যতোই আমি বিরক্ত হই না কেন কেয়ারটা আমার ভালো লাগতো। এই রকম কেয়ার আমি নিজের ফ্যামিলি আর বন্ধ বান্ধব ছাড়া কারো কাছে পাই নাই। আমি কি কনফিউজড হয়ে যাইতেসি যে আমি কাকে ভালোবাসি? পা নাড়তেই আকাশের নুপুর হালকা শব্দ কইরা উঠল। আমি নিজের মনকে জিগাইলাম, তুই কি চাস? কিন্তু মন উত্তর দেওয়ার আগেই আমি ঘুমাই গেলাম।

সকালে ঘুম তাড়াতাড়িই ভাঙল। ফোনটা খুলে দেখি সাড়ে ছয়টা বাজে। একটা ম্যাসেজ! আমি খুশি মনে ম্যাসেজে ঢুকলাম। ধুর বাবা, কচুর সিমওয়ালা। সারাদিন ম্যাসেজ দেয়। উঠতে ম্যাসেজ বসতে ম্যাসেজ। একই ম্যাসেজ যে দিনে কয়বার দেয় তা হেরাও জানে না। ইচ্ছা করে ম্যাসেজগুলা গুইলা ওদের সরবত বানাইয়া খাওয়াই। ধ্যাত। আমি উঠতেই দেখি মুন ভালো মতোই আমারে কোলবালিশ বানাইসে।

– মুন, এই মুন। ওঠ।

– হুম… আরেকটু।

– আরে আজ তোর বিয়ে না? উঠ।

– হুম। আরেকটু ঘুমাতে দে। কালকে ওর সাথে অনেকক্ষণ জেগে ছিলাম।

– ওর সাথে জেগে ছিলি মানে?

– ওর সাথে মানে……

মুনের সাথে সাথে সব ঘুম হাওয়া। মুহুর্তে চোখ ফকফকে হই গেসে। ও উঠে বইসা আমার দিকে বেক্কলের হাসি দিতে লাগল। আমি কোমরে হাত দিয়া মুখ সুঁচালো কইরা বললাম, ব্যাপার কি? তলে তলে কি চলে? ও হাসি চওড়া কইরা বলল, কি কি কিছু নাতো। কি চলবে। কিছু না। আমি হঠাৎ নিজের হাতের দিকে তাকাই চমকাই কইলাম, এগুলা কি? মুন বলল, কি হইসে?

– আমার হাতে মেহেদী দিল কে?

– তোর জামাই।

– মানে? মুন সত্যি করে বল তো তুই কি লুকাচ্ছিস আমার কাছে।

– আরে বাবা, ক’দিন যাক। সব জানতে পারবি।

– মুন…

– একটা ম্যাজিক দেখবি?

– কি?

– দুই হাত একসাথে করে দেখিস। আমি যাই ফ্রেশ হয়ে নিই।

ও উঠে চইলা গেল। কি হইতেসে ভেতরে ভেতরে যা আমি জানি না। আমি দুই হাত একসাথে কইরা চোখ বড়ো বড়ো কইরা তাকাইলাম। আমার দুই হাতের মাঝে I আর U লেখা। দুই হাত একসাথে করলে একটা ভাঙা লাভ জোড়া লাগে। I ♥ U. আমি তাকাই আছি নিজের হাতের দিকে, মুন ফ্রেশ হই বলল, যা, ফ্রেশ হয়ে আয়। খাবো। খিদে পাইসে। তারপর আমার কাছে আইসা বলল, তোর মেহেদী রঙটা কি সুন্দর গাড় হইসে। একেবারে কালশে খয়রী। দেখবি তোর বর তোকে খুব ভালোবাসবে। এমনিতেও তো তোকে চোখে হারায়।

– মুন, তুই কার কথা বলছিস? বলবি আমাকে?

– বলবো বলবো। আগে আমার বিয়েটা হতে দে। যা ফ্রেশ হয়ে নে।

আমি ফ্রেশ হইয়া নাস্তা কইরা নিলাম। সারা সকাল চিন্তা করলাম, কে হইতে পারে? আকাশ? নাকি…… লাভার ভ্যাম্পায়ার কি দেশে আসছে? একবার তো বলছিল বিদেশে থাকে। তার জন্যই কি কোনো ম্যাসেজ বা কল করতেসে না? কিন্তু আসলে তো বলতো। মুন সব জানে। বলতেসে না। দাঁড়া একবার বিয়াটা শেষ হোক। তারপর সব পেট থেকে বাইর করমু।
.
.
.
.
আমি কমিউনিটি সেন্টারে দাঁড়াই দাঁড়াই চারপাশে দেখতেসি কেউ আমাকে নজরে রাখতেসে কি না। কাউকে তেমন সন্দেহ হইল না। আমি দাঁড়াই আছি এমন সময় পেছনে কেউ একজন বলল, আজকে কয়জনের মাথা ঘোরানোর দায়িত্ব নিয়েছো? আমি তাকাই দেখি আকাশ। সোনালী রঙের পাঞ্জাবীতে সাদা চকচকে সুতার কাজ করা। আমি তো ওখানেই ফিদা। কেন যে এত হ্যান্ডসাম লাগে আমার চেরিটাকে। ইচ্ছা করতেসে তুইলা নিয়া যায়। যাগগে, আমিও কম যাই না। খয়রী লেহেঙ্গার সাথে আমার রেশমীর মতো লম্বা চুল ছাইড়া দিসি। সেগুলা কোমর ছাড়াই গেসে। দুই কানের পেছন থেকে রজনী গন্ধার থোকা অর্ধচন্দ্রাকৃতি কইরা চুলের উপর লাগাইসি। সিঁথিতে খয়রী রঙের একটা বড়ো টিকলি আর সাথে ম্যাচিং গয়না। মুখে বিয়ের ভারি সাজ। আকাশ বলল, সব তো ঠিক আছে, কালকের উপহারটা কি এখনো পায়ে আছে? আমি লেহেঙ্গা একটু তুলে দেখলাম। নাহ্, সব ঠিকই আছে। দুই পায়ে নুপুরগুলো ঠিকই আছে। আমি মাথা নিচু কইরা দেইখা সবেমাত্র মাথাটা তুললাম, আকাশে সাথে সাথে আমার ডান গালে একটা কিস করে হাঁটা দিল। আমি রোবটের মতো দাঁড়াই রইলাম। কি হইল এটা? যখন খেয়াল হইল ততক্ষণে আকাশ চলে গেসে। আমি লাল হইয়া একটা চেয়ারে যাই বইসা পড়লাম। বিদেশ থেকে আসার পর হঠাৎ আমার সাথে এমন আচরণের কারণ আমি কিছুই বুঝতে পারতেসি না। তবে কি আকাশ আমায়… তা কি কইরা হয়। ও তো চাঁদনিকে পছন্দ করে। আমার মাথায় কিছু ঢুকতেসে।

বিয়ে বৌভাত সব সুন্দর মতো মিইটা গেল। ও যে এখনো চাঁদনিকে পছন্দ করে সেটার প্রমান বৌভাতের দিনই পাই গেলাম। ঐদিন কোথা থেকে এসে আকাশরে জড়াই ধরছিল। এর মানে ওদের সম্পর্ক এখনো ভালো আর একে অপরকে ভালোবাসে। তাহলে আমার সাথে করা সবকিছুর কি ব্যাখ্যা হতে পারে? বিছানার কিনারায় মাথা ঝুলিয়ে এসব আমি ভাবতেসি আর তখনই মুন আমার রুমে ডুকল।

– কি রে পেত্নী? কেমন আছিস?

আমি উল্টো থেকেই কইলাম, তুই নাই তাই জ্বালাও নাই। শান্তিতেই আছি। বাব্বা, দুইদিনে তো জামাইয়ের আদর পেয়ে সেই তরতাজা হয়ে গেছিস।

– যাহ্, অসভ্য মাইয়া।

– তা বল, কেমন আছিস? শ্বশুর শাশুড়ি কেমন রে?

– খুব ভালো। আসার আগে তো ছাড়তেই চাইছিল না।

– ভালো।

– এবার তোর পালা।

আমি উঠে বসে কইলাম, কিসের পালা? মুন আমার পাশে বইসা বলল, তোকে তরতাজা হওয়ার জন্য জামাই বাড়ি পাঠাবো। দাঁড়া। আমি বিছানা থেকে নাইমা কইলাম, পিটা খাইতে না চাইলে চুপ থাক।

– আচ্ছা, চুপ করব। একটা কথা বলতো।

– কি?

– তুই কাউকে ভালোবাসিস?

– বাসতাম।

– বাসতি? এখন বাসিস না?

– জানি না রে। বুঝতে পারি না। আমার সব তাল গোল পাকিয়ে যাচ্ছে।

মুন কিছু বলল না। আমি বললাম, আজকে নাকি বিকালে মেহমান আসবে। মুন বলল, জানি। আমি জিগাইলাম, কে রে? মুন একটা নিঃশ্বাস পেলে বলল, আসলে দেখবি। চল রেডি হবি। আমি টেবিল থেকে একটা বই হাতে নিয়া বললাম, হঠাৎ কিসের জন্য? মুন আলমারির কাছে গিয়া খুলে বলল, সব এখন বললে তো সমস্যা। ও সেই নীল শাড়িটা বের করল। আমি ওকে বললাম, আবার এই শাড়ি কেন? তোর কি এই শাড়ির উপর নজর পড়সে নাকি। সব সময় আমাকে এই শাড়িটা পড়তে বলিস। মুন জুয়েলারি চুজ করতে করতে বলল, কারন তোকে এই শাড়িতে বেস্ট লাগে। দেখি আয়। রেডি হয়ে নে। ও আমারে ইচ্ছা মতো রেডি করাইল। কেন রেডি করাইতেসে, এত কিছু থাকতে শাড়িই বা কেন কিছুই বুঝতেসি না। যতবড়ো হইতেসে তত মনে হয় মগজের উর্বরতা কমতেসে। কিছুই মাথায় ঢুকে না।

বিকালে কলিং বেল বাজতেই মুন গিয়া দরজা খুলল। আমি উঁকি মাইরা দেখলাম রেদোয়ান ভাই আসছে। আরও কেউ আসছে। আমি দেখতেসি না পর্দার জন্য। মুন আইসা বলল, ঘোমটা দিয়ে আয় আমার সাথে। আমি মুখ গোমড়া করে কইলাম, মনে হয় যেন আমাকে দেখতে আসছে। সর তো। আমি গিয়া দেখি আকাশের আব্বা আম্মা আসছে। সাথে আরেকটা লোক। চিনি না। আমি তো আন্টিকে দেইখা সেই খুশি। গিয়া বললাম, কেমন আছেন, আন্টি?

– ভালো। তুমি?

– আপনি আসছে আর আমি না ভালো হয়ে থাকি?

উনি আমাকে পাশে বসাই বললেন, আমরা একটা কাজে এসেছি এখানে। তোমার খালা কি তোমায় বলেছে?

– না আন্টি। কি কাজ?

– আসলে ব্যাপারটা তোমার আব্বু আম্মু থাকতেই ঠিক করা ছিল। এখন তুমি বড়ো হয়েছ তাই তোমারও মতামত জানতে চাইছি।

– কি বলেন না, আন্টি।

– আমরা আসলে তোমাকে দেখতে এসেছি। তুমি যখন ক্লাস এইটে ছিলে তখনই তোমার আব্বু আম্মুকে তোমার আর আকাশের বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম।

কথাটা শুইনা আমি সেই লেভেলের টাসকি খাইলাম। আমার আর চেরির বিয়ের কথা! তাও ছয় বছর আগে!
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here