আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥ #পর্ব_১৫+১৬

0
361

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_১৫+১৬

গোসল কইরা বাইর হতেই মুন আমারে রুবিকস কিউব সাইজের একটা মোটা খাতা দিয়া কইল, এটা তোর।

– কি এটা!?

– ক্লাস রুম ডিটেইলস। শুধু মাত্র তোর জন্য। স্পেশাল। সারাদিন খাইটা তোর জন্য বানাইসি।

আমি টাওয়াল মেইলা দিয়া খুললাম ছোট্ট খাতাটা। বাপরে! এতো মনে হয় সব টিচার আর স্টুডেন্টদের বায়োডাটা। আমি ওরে জিগাইলাম, তুই এত নাড়ি নক্ষত্র জানলি কেমনে?

– আমি মুন, ওকে? পৃথিবীর উপর থেকে সব পর্যবেক্ষণ করি। বুঝতে হবে।

আমি হাইসা প্রথম পৃষ্ঠা উল্টাইলাম। হেডিং রোল ১। নাম রোহান। ক্লাসের সবচেয়ে শান্ত আর আঁতেল পোলা। চোখের চশমা দিয়া অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মতো সবাইকে পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা রাখে। ওরে খাতায় নাম লেখতে দিলে ক্লাসে চলে পিতপতন নীরবতা। তুমি কোন চিপায় মুখ নাড়াইসো কি নাড়াও নাই নামটা খাতায় সিল হইয়া গেছে। তারপর স্যারের হাতে নাম গেলে সেই লেভেলের পিডানি। পড়ার ব্যাপারে বক্তৃতা দিতে তার ক্লান্তি নাই। ঝামেলায় জড়ানো তার কাছে যুদ্ধের সমান। স্যারদের প্রিয় পাত্র। কারো প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নাই একমাত্র বই ছাড়া। আমি মুনরে কইলাম, বাপরে! তোদের রোহান তো সেই লেভেলের পড়ুয়া ছেলে মনে হচ্ছে।

– হুম।

দ্বিতীয় পৃষ্ঠা। রোল ২। নাম রাতুল। ক্লাসের সবচেয়ে স্মার্ট পোলা আর ফাজিলের হাড্ডি। খেলাধুলায় সেই। অনেকের ক্রাশ। আমাদের স্কুলের হেডমাষ্টারের ছেলে। অতএব দূরত্ব বজায় রাখা অতীব জরুরি। ঝগড়ায় সেই লেভেলের পটু। তার থেকে দশ হাত দূরে থাকাটাও রেড জোন। তার সুনজরে যে একবার পড়সে সেই দিন আর রক্ষে নাই। আমি খাতাটা বিছানায় রাইখা ওর পাশে শুয়ে কইলাম, তোর স্কুল তো খুব ইন্টারেস্টিং।

– কচু। গেলে বুঝবা। ঠেলার নাম বাবাজি।

আমি খাতাটা শুয়ে শুয়ে উল্টাইতেসি। মুন বলল, শুন, আজকে থেকে তোর ট্রেনিং শুরু।

– কিসের?

– তোর কাকের গলার। বাপরে কি সুর এই কন্ঠে! আমার দুলাভাইয়ের অবস্থা তো টাইট।

– আরে শোন না। আমি তো ঠিক করেই রাখসি আমার জামাই রে বাসর রাতে ডি জে শুনামু।

– তাইলেই সারছে। আম্মার অর্ডার। আজকে স্যার আসলে তোকে নিয়ে যেতে।

আমি কিছু বলার আগেই খাওয়ার ডাক পড়ল। আমরা খেতে চলে গেলাম। মিষ্টি খালাও আমাকে গান শেখার কথা কইলো। কি জ্বালা!

বিকালে স্যার আসলেন। আমারে টাইনা নিয়া গেল মুন। স্যাররে কইল, স্যার আজকে থেকে ও আমার সাথে গান শিখবে। স্যার দেখতে তো বেশ আলাভোলা মনে হইল। ভালো মানুষের মতো হেসে কইল, ও…… ভালো। তাহলে প্রথমে রেওয়াজ দিয়ে শুরু করি। কি বলো? গানে প্রথমে স্বরলিপি জানতে হয়। যেমন: সা…… বলো।

– সা…

– আরেকটু জোরে।

– সা……

– আরেকটু।

– (চিল্লাইয়া) সা………………

আমার সা এর ঠেলায় পুরা ঘর কাঁইপা উঠল। স্যারও বেতের টুল থেকে পইড়া যাইতে লাগলেন। মিষ্টি খালা আর সানজিদা আপু দরজা দিয়া উঁকি মাইরা দেখতে আসলো ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। মুন আমার পাশে বইসা মুখ চাইপা হাসতেসে। স্যার কোনোমতে টাল সামলাইয়া কইলেন, ইয়ে মানে… ভালো। তবে সকাল বিকাল প্র্যাক্টিস করতে হবে। আমি মনে মনে কইলাম, আমার কাউয়ার গলা সকাল বিকাল শুনলে আশপাশের বাড়ি ফাঁকা হই যাইবো।

সন্ধ্যায় চা নাস্তা কইরা পড়তে বসলাম। সবাই গল্প করতেসে। আমি রুমে এসে আমার টেবিলে বসলাম। আজকে খালু কিছু টুকটাক নিয়া আসছে বাসা থেকে। মনে হয় খদ্দের পাই গেসে বাসাটা বেঁচার জন্য। আমি একবার আব্বা আম্মার ছবির দিকে তাকাইলাম। তারপর ক্রাশের বোতামটা হাতের মুঠোয় নিলাম। এখনো ওটা গলায় আছে। কেন যেন ভুলতে পারতেসি না। দুইটা মাসে আমারে আষ্টেপৃষ্টে পেঁচাই ফেলসে। ওর বোকা বোকা চেহারাটা ভাবতে আমার বেশ লাগে। প্রথম দিন আমার I love you শুইনা যেভাবে বেকুবের মতো তাকাইছিল! মনে পড়তেই আমি মুচকি হাসতে লাগলাম। পেছন থেকে মুন কইল, প্রেম করতেছিস নাকি! এমন মুচকি হাসতেছিস? আমি খেয়াল করি নাই ও কখন রুমে আসছে। আমি কইলাম, খালি প্রেম করলে মানুষ হাসে? মাত্র বয়স চৌদ্দ। এখনো আমার প্রেম করবার বয়স হয় নাই। মুন আমার দিকে অবাক হইবার ইমোজির মতো তাকাই কইল, পুরা বিশ্বে এই বয়সের মাইয়ারা বি এফ নিয়া ঘুরে আর তোর এখনো প্রেম করবার বয়স হয় নাই!? আমি ভ্রূ কুঁচকে কইলাম, তুইও করিস নাকি! সে বিজ্ঞের মতো কইল, আমার সাথে যে প্রেম করবে সে এখনো ইহলোকে আসে নাই। প্রেম করার জন্য পটানো লাগে। আমারে পটানো আর দেয়ালে মাথা ফাটানো একই কথা।

– এ্যাঁহ্, ঢঙ। আয়, পড়বি। বড্ড বেশি ফাঁকিবাজ হই গেছিস।

আমি ওরে কোনোমতে কাটাইলাম। কিন্তু ক্রাশের ছবি কিছুতেই মন থেইকা মুছতে পারলাম না। রাতে শুইয়া শুইয়া যখন ক্রাশের কথা চিন্তা করতেসি তখন ফোনে ম্যাসেজ আসলো। আমি দেইখা চোখ মুখ বোঁচা করলাম। এ কে ভাই! আমার পিছু ছাড়ে না ক্যান! আমি নাম্বারটা সেভ করসি ‘ব্যাটা বাটপার’। বেশি সম্মান দিয়া ফেললাম নাকি! যাগ্গে, সে ম্যাসেজ দিসে, ঘুমাই পড়ো। কাল থেকে নতুন স্কুল শুরু। শোনো, কোনো ছেলের দিকে তাকাবে না, কথা বলবে না, মিশবে না। না হলে আসলে তোমাকে বিয়ের পর কি করবো সেটা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবা না। শেষ লাইনটা পইড়া আমার কাশি উইঠা গেল। আমি একগ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে আবার ফোনটা হাতে নিলাম। আমি গাঞ্জা খাইসি নাকি! ভুলভাল দেখতেসি। একি!!! ঠিকই তো দেখলাম। হায় আল্লাহ!!! ক্রাশ গো, আমারে বাঁচাও। এ কোন ভ্যাম্পায়ারের পাল্লায় পড়লাম!!! মনে হইতেসে আমার সব রক্ত শুইষা কাগজ বানাইয়া তারপর ছাড়বো। দাঁড়া তোরে আমি ব্লক কইরা ছাড়মু। আমি ব্লকের অপশান খুঁইজা নাম্বারটা ব্লক কইরা দিলাম। সাথে সাথে আমার মনটা মুরগীর পালকের মতো হালকা হই গেল। আমি বাতাসে উইড়া গিয়া বিছানায় পড়লাম। তারপরই ঘুম।

সকালে আবার রিংটোন। এবার আমি ফোনটারে আছাড় মারমু। কালকেও সকাল সকাল ঘুম ভাঙাইছে। আজকেও। আমি চোখ কঁচলে ভালো করে দেখলাম। আননোন নাম্বার। ধুর ছাতা। এত আননোন নাম্বার থেইকা ফোন আসে ক্যান! আমি কি কথার দোকান খুলসি নাকি? কালকে ঐ ভ্যাম্পায়াররে ব্লক দিলাম। আজকে আবার কেডা! আবার বাজতেছে। আমি রিসিভ করতেই বেকুব হই গেলাম। তারপর ঢোক গিললাম।

– এখনো ঘুমাচ্ছিলে? কটা বাজে খেয়াল আছে? সেই কখন থেকে ফোন করছি। ধরোনি কেন? ভেবেছ ব্লক করেই আমার থেকে মুক্তি পাবে? পারবে না। অলরেডি বিশটা সিম কিনে রেখেছি তোমার জন্য। কয়টাতে ব্লক করবে? তোমাকে আমি সারাজীবনের মতো আমার জন্য সিল মেরে দিয়েছি। তুমি আর কারো না। সকাল বিকাল আমি তোমাকে মনে করিয়ে দেবো। আর এমন করলে দেখো কি করি। You will be mine. এখন তাড়াতাড়ি রেডি হও।

ফোনটা কাইটা দিল। আমি মাছের মতো খাবি খাইতেসি আর ফোনটা কানে নিয়া বইসা আছি। আল্লাহ, দড়ি ফালাও আমি উইঠা যাই। আজকেও মনে হয় আরেকটা ব্রাশ নামানো লাগবো।
.
.
.
.
রেডি হয়ে বের হতেই দুইটা সাইকেল চোখে পড়ল উঠানে। একটা পুরানো আরেকটা নতুন। মুনতাহা পুরানোটায় উইঠা বলল, আজকে আমার সাথে যাবি। কাল থেকে নিজে সাইকেল চালাই যাবি।

– আমি পারি নাকি!

– শিখে নিবি। সেই জন্যই আনাইসি। এখন ওঠ দেরি হই যাইতেসে।

ও আমারে সাইকেলের ব্যাক সিটে নিয়া রওনা দিল। আটটা বাজার পনের মিনিট আগে পৌঁছাইলাম। এখানে ক্লাস সকাল আটটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। মুন বলল, তিন তলার মাঝের রুমটা আমাদের ক্লাস। তুই যা আমি আসতেছি। ও সাইকেল পার্ক করতে চইলা গেল। আমি হাঁটা দিলাম। স্কুলটা আমার আগেরটা থেকে ছোট। একটা মাঠের দুইপাশে দুইটা বিল্ডিং। শুনসি একটাতে ফোর থেকে সেভেনের ক্লাস হয়। আর আরেকটাতে এইট থেকে টেন। ক্লাস সিক্স থেকে টেন অবধি দুইটা কইরা সেকশান। খালু নাকি আমাদের একসাথে রাখার জন্য সেকশান এ তে ভর্তি করাইসে। আমি তিনতলায় উঠে মাঝের রুমটাতে ঢুকলাম। গিয়া বসলাম ফার্স্ট বেঞ্চের প্রথম সিটে। সাথে সাথে সবাই আমার দিকে এমন কইরা তাকাইলো যেন মুরগী হইয়া শিয়ালের খাঁচায় ঢুকসি। আমার অস্বস্তি লাগতেসে। মুনটা কেন যে আসতেসে না। হঠাৎ একটা ছেলে রুমে ঢুকে আমার দিকে নাক মুখ কুঁচকে কইল, তুমি এখানে বসছো কেন? আমি কইলাম, কেন কি হইসে?

– এটা আমার সিট।

– নামটা তো দেখি নাই। দেখলে বসতাম না।

– এখন সরো। আমি এখানে বসবো।

– কেন? তুমি তো পরে এসেছো তাহলে এখানে বসবে কেন?

– কারন এটা আমার সিট। নতুন নতুনের মতো থাকো। ঝামেলা করো না। ভালোয় ভালোয় কেটে পড়ো। তুমি জানো না আমি কে।

মুন এসে বলল, রাতুল ও বুঝতে পারে নাই। ছোঁয়া ঐ বেঞ্চে চল। আমি মুখে চিনা হাসি দিয়া কইলাম, ও, তুমি রাতুল! তোমার থেকে এটা আশা করি নাই। রাতুল বলল, কেন? আমি উদাস মুখ করে বললাম, আমি শুনছিলাম, তুমি নাকি অনেক দয়ালু। কারো সাথে ঝামেলা করো না। আমি মনে হয় ভুল শুনেছিলাম। মুন চাপা গলায় বলল, ছোঁয়া কি করছিস! রাতুল এদিক ওদিক তাকাল। সবাই আমাদের দিকে তাকাই আছে। হঠাৎ সে কিছু না বলে সুড়সুড় করে ব্যাগ নিয়ে অন্য বেঞ্চে চলে গেল। মুন অবাক হয়ে ফিসফিস করে বলল, এটা তুই কি করলি? আমি শয়তানি হাসি দিয়ে, ঠান্ডা বোমা মারলাম। তুই বুঝবি না। বস সিটে। ও আমার পাশে ব্যাগটা রাখল। একটু পরেই স্যার চইলা আসল। স্যার আমাকে পরিচয় করাই দিলেন। আজ থেকে আমার রোল ৪৩। আজকে প্রথমেই পাইলাম বিজ্ঞান ক্লাস। আমি কালকে অধ্যায়টা পড়ছি। তাই আমার বুঝতে অসুবিধা হয় নি। আমি মনোযোগ দিয়ে দুইটা ক্লাস করলাম। আমার মনে হল রাতুল আমার দিকে তাকাই থাকে। ও আমার পাশের সারিতে দুই বেঞ্চ পরে বসছে। আমি পেছনে ফিরতেই দেখি ও স্যারের দিকে তাকাই আছে। কিন্তু কেন যেন মনে হইতেসে ও এতক্ষণ আমার দিকেই তাকাই ছিল।

দশটায় আধা ঘন্টার টিফিন টাইম। আমি আর মুন নিচে নামতে ছিলাম। তখন হঠাৎ সিঁড়িতে আমারে ধাক্কা মাইরা কইল, একপাশে হাঁটতে পারো না? পুরা পথ মেরে রাখসে। বলেই নিচে নেমে গেল। আমি চুপ করে রইলাম। এ মনে হয় তার ছেঁড়া। দাঁড়া একবার সুযোগ পাইলে সুধে আসলে সব শোধ করমু।
চলবে…

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_১৬

আমি চুপ করে রইলাম। এ মনে হয় তার ছেঁড়া। দাঁড়া একবার সুযোগ পাইলে সুধে আসলে সব শোধ করমু। দুই জনে এসে একটা বেঞ্চে টিফিন খাইতে বসলাম। মুন বক্স খুলতে খুলতে জিগাইলো, রাতুল তোকে সিট ছেড়ে দিল কেন? আমি কইলাম, নতুন কারো সামনে ভালো সাজাটা মানুষের অভ্যাস। আমি যখন বললাম যে আমি ওকে ভালো বলে জানি তখন ও আমার সাথে খারাপ ব্যবহারটা করতে একটু দ্বিধা করতেছিল। মুন বলল, ও। তাই বল। সেইজন্যই তো বলি রাতুল এত সহজে তার জায়গা ছেড়ে দিল কেন। হঠাৎ দেখি ক্লাস ফাইভের একটা ছেলে কাঁদতেসে। মুন দেইখা বলল, আজকেও। আমি জিগাইলাম, ঘটনা কি? ও বলল, ও জিতু, রাতুলদের সাথে ক্রিকেট খেলতে চায়। কিন্তু রাতুল ওকে খেলায় নেয় না। বার বার ধমক দিয়ে তাড়াই দেয়। আমি বললাম, এই ছেলের সমস্যা কি? খালি সবার উপর ক্ষমতা দেখায়। দাঁড়া, আজকেই টাইট দিমু।

মুন যাইতে মানা করল। শুনলাম না। আমি টিফিনটা রাইখা রাতুলের কাছে গেলাম। সে মাত্র ব্যাটিংয়ের পজিশান নিতেছিল। আমি গিয়া বললাম, আমি খেলবো। সে হাইসা উড়াই দিয়া কইল, মেয়ে হয়ে আসছে ব্যাট বল খেলতে। ব্যাট আলগাইসো কোনদিন।

– যদি পারি?

– পারবা না।

– বাজি?

– হুহ্, বাজি। তিনটা বল করবো। যদি একটা সিক্স মারতে পারো তো তুমি জিতা আর যদি না পারো তো আমি যা বলবো তাই করতে হবে।

– আমি রাজি। আর হারলে জিতু তোমার বদলে খেলবে।

– আমিও রাজি।

মুন আমার কানে ফিসফিস করে বলল, ওর সাথে খেলার চ্যালেন্জ নিলি! ও আমাদের স্কুলের বেস্ট ক্রিকেটার। পারবি ওর সাথে? রাতুল বলল, কি হল? ভয় পেয়ে গেলে? আমি ওর থেকে ব্যাট কাইড়া নিলাম। বাপ রে! ওজন আছে। এটা দিয়ে সিক্স মারা চারটি খানি ব্যাপার না। কিন্তু আমাকে তো পারতেই হবে। রাতুল বল নিয়ে আমার দিকে শয়তানি হাসি দিল। আমি ঢোক গিললাম। পারমু তো!? না পারলে কি যে করতে বলে কে জানে। ব্যাটা এক নাম্বারের ফাজিল মনে হইতেসে। আল্লাহ রক্ষা কইরো। ক্রাশের ঠেলায় বাচ্চাদের ব্যাট বল দিয়া খেলসি। এখন এই ভারি ব্যাটে কি পারমু!!!?

রাতুল প্রথম বল ছুইড়া মারল। বল আমার নাগালের বাইরে। মারতে পারলাম না। রাতুল দেইখা হাসল। সাথে তার বন্ধুদেরও সেই হাসি। ইচ্ছা করতেসে সবগুলার দাঁত কপাটি খুইলা হাতে ধরাইয়া দেই। আমি পজিশান নিতে নিতে দ্বিতীয় বলও ছুঁড়ে মারল। আমি টাল সামলাতে গিয়া পইড়া যাইতে লাগলাম। ভাগ্য ভালো পড়ি নাই। রাতুল হাতের মধ্যে বল নিয়া আমাকে দেখাইতে দেখাইতে উপরে ছুড়তেসে আর ক্যাঁচ ধরতেসে। আমি আবার ঢোক গিললাম। লাস্ট বল। আমার সম্মান। না, ছোঁয়া তোকে পারতে হবে। তুই না চেরির বৌ। পারবি পারবি। চেরিকে দেখেছিস না কত্ত ভালো খেলতো। প্রত্যেক ওভারে চার ছক্কা। এই লাতু ফাতু তোর চেরির কাছে কিচ্ছু না। তাহলে আমি কেন ভয় পাইতেসি? আমাকেও পারতে হবে। নইলে আজকের পর আমি মাথা উঁচু কইরা দাঁড়াইতে পারমু না। রাতুল চিনা হাসি দিয়া লাস্ট বল ছুঁইড়া মারল। আমি চোখ বন্ধ কইরা সেই লেভেলের চিক্কুর দিয়া ব্যাট হাকাইলাম। আমার চিক্কুরে সবাই তাকাই আছে। চারপাশ চুপ। আমি তাকাই দেখি সবাই আমার পেছনে তাকাই আছে। আমিও তাকাইলাম। কিছুই তো নাই। সব ঝোপঝাড়। বল কই? সবাই হঠাৎ হইহই করে উঠল। আমি তাকাই আছি রাতুলের দিকে। তার মুখ বাংলার পাঁচ হইয়া আছে। মুন দৌঁড়াই আইসা কইল, বোইন তুই সেই লেভেলের সিক্স মারছিস। শুইনা আমার জান ফিইরা আসল। আমি পারসি। আমি পারসি চেরি ফল। আমি রাতুলের কাছে গিয়া দাঁড়াইলাম। আমি ওর কানের কাছে গিয়া ফিসফিস করে বললাম, অহঙ্কারই পতন। আমি জোর গলায় বললাম, রাতুলের বদলে জিতু খেলবে। তারপর ওর দিকে ফিইরা কাঁধে হাত রাইখা বিজ্ঞের মতো কইলাম, Don’t show ego so much. It will kill you. Mind it.

আমি টিফিন বক্সটা নিয়া উপরে চইলা আসলাম। মুনও চইলা আসলো। সব ক্লাস ভালো মতোই শেষ হইল। বাড়িতে রুমে চিৎপটাং হইয়া শুইয়া পড়লাম। ওফ! কি একদিন গেল। স্কুলের প্রথম দিনই অবস্থা টাইট। মুন ব্যাগ রাইখা আমার কাছে চেয়ার টেনে বইসা কইল, চেরি কে? আমি অবাক হয়ে বললাম, কোন চেরি?

– সেটা আমি কি করে বলব? আজকে ব্যাটিং করার সময় চেরি বলে যে এক চিৎকার দিলি। আমার কানের পর্দার বারোটা বেজে গেসে।

– সত্যি! আমি চেরি বলে চিৎকার দিসি?

– না, আমি তো মদ খাইয়া ওখানে দাঁড়াইছিলাম তাই উল্টা পাল্টা শুনসি।

আমি বিড় বিড় কইরা কইলাম, আমার কি হইবো। আনমনেও চেরি, খেয়ালেও চেরি, স্বপ্নেও চেরি। শুধু বাস্তবে নাই। এই চেরিকে কবে ভুলমু। আল্লাহ মালুম। মুন বলল, কি হইল তোর আবার? বিড়বিড় করিস কার সাথে?

– জামাইর সাথে। আমি গোসলে যাইতেসি।

আমি উইঠা কাপড় চোপড় নিয়া ওয়াশরুমে ঢুইকা গেলাম। আয়নার সামনে বোতামটা ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়াই রইলাম। মনে মনে বললাম, তুমি আছো মহাসুখে, আমি আছি হাজার ঝামেলায়। একবার তোমাকে সামনে পাই, বুঝাই দিমু আমি কি ছিলাম। এখন কি হইসি।

গোসল তো করি কাউয়ার স্পেশাল গান গেয়ে। আব্বা আম্মা চলে যাইবার পর কাউয়া সং মুখ বাইর হয় নাই অনেক দিন। আজকে আবার কাউয়া সং গাইলাম ইচ্ছা মতো। আমার কাউয়া সং শুনলে গানের স্যার তো ইয়ে হই যাইবো। যাগ্গে হোক। আমার কি। আমি টাওয়াল মাথায় পেঁচাই বাইর হইলাম। দেখি যেমনের কাপড় চোপড় তেমনি রইসে। মাইয়া গেল কই? আমি ভিজা কাপড় নিয়া ছাদে আইসা দেখি ও কারো সাথে ফোনে ফিসফিস করে কথা বলতেসে। আমি চুপি চুপি গিয়া শুনতে চাইছিলাম। কিন্তু ও টের পাইয়া গেল। আমার দিকে ফিরে বলল, তোর গোসল শেষ?

– না হলে কি তুই ওয়াশরুমে আমার সাথে দাঁড়াই আছিস? কার সাথে কথা বলতেছিলে?

– কারো সাথে না।

– প্রেম করতেছিস নাকি?

– আরে বললাম তো কেউ না। আমি গোসল করতে যাইতেসি।

মুন নেমে গেল। আমার কেমন যেন সন্দেহ হইতেসে। মনে হইতেসে সে প্রেম করতেসে। দাঁড়া আমি খুঁইজা বাইর কইরা ছাড়মু।
.
.
.
.
– হ্যালো…

– হুম বলো।

– ছোঁয়া সন্দেহ করছে। আমাকে ছাদে কথা বলতে দেখে ফেলেছে। তাই এখন ওয়াশরুমে ঢুকে কথা বলতেসি।

ফোনের ওপাশ থেকে হেসে বলল, কি বলেছে?

– বলেছে আমি নাকি প্রেম করছি।

– তাহলে করে ফেলো।

– কি?

– প্রেম।

– আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন?

– ছোঁয়া যাতে সন্দেহ না করে তার জন্য এটুকু করতেই পারো।

– আপনাদের দুইজনের জন্য আমি পাগল হয়ে যাবো। আর প্রেম করা কি সোজা কথা? ছেলে পাবো কোথায়?

– আজ বিকাল চারটায় দেখা করবে।

– কার সাথে?

– সেটা পরে জানাবো। আগে একটা জায়গা বলো।

– উম…… আমাদের স্কুল থেকে কিছুদূরে একটা নদী আছে। নাম ময়ূরাক্ষী। সেখানে কিছু ছাউনি আছে। ওখানে দেখা করবো।

– ওকে।

– কিন্তু কার সাথে?

– তোমার প্রেমিকের সাথে।

সাথে সাথে ওপাশ থেকে ফোন কেটে দিল। মুন মাথা চাপড়াইতে চাপড়াইতে কইল, এই দুইজনের ঠেলায় আমি পাগল হই যামু। এখন নাকি ওদের প্রেমের চক্করে আমারেও প্রেম করা লাগবে!
.
.
.
.
আমি রুমে চক্কর দিতেসি আর মুন ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার অপেক্ষা করতেসি। ও গোসল করে বের হতেই আমি ওরে আটকাইলাম। আমারে দেইখা ওর মুখ শুকাই গেল। আমি কইলাম, এতক্ষণ কি করতেছিলি?

– কি করমু? গোসল।

– কেউ ফোন নিয়ে গোসল করতে যায়?

– আরে একটু দরকার ছিল। তুই কেন যে তখন থেকে এতো জেরা করতেছিস। চল খাবি। আমার খুদা লাগছে।

আমারে কিসু বলার সুযোগ না দিয়া চইলা গেল। আমিও ছাড়ার পাত্রী নই। চিনা জোঁকের মতো ওর পিছে লাইগা আছি। আমি একবার ওয়াশরুম গেসে। বের হইয়া দেখি পাখি ফুরুত। মিষ্টি খালাকে জিগাইতেই কইল, ও একটু বাইরে গেসে। আমি সাথে সাথে দৌঁড় দিলাম বাইরে। ঐ যে সাইকেলে করে যাইতেসে। আমি উসাইন বোল্টের মতো দৌঁড় দিলাম। দেখলাম ও স্কুলের পথ ধরসে। তাই থাইমা একটু নিঃশ্বাস নিলাম। তারপর আবার আগাই গেলাম। স্কুলে আইসা দেখে ও নাই। গেল কই? মনে হয় আরো সামনে। আমি হাঁটতে লাগলাম। কিছুদূর যাইতেই ময়ূরাক্ষী নদী পড়ে। আগে আসছিলাম। ওখানেই ওরে পাইলাম। দেখলাম একটা ছেলের সাথে সামনাসামনি ছাউনিতে বইসা আছে। আমি একটা ঝোপের পেছনে লুকাই ওদের কথা শুনার চেষ্টা করলাম। ধুর ছাতা কিছুই শোনা যাইতেসে না। তাও কান পাইতা রাখলাম।

(ছাউনিতে)
মুন একটানা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। ছেলেটা উসখুস করছে। কিছু বলছে না দেখে মুন বলল, আপনাকে কি দুলাভাই পাঠিয়েছে?

– কে? আ…

– শসসসসস্। দুলাভাইয়ের নাম বলা বারণ। …… আপনার নাম?

– রেদোয়ান।…………এক মিনিট…

ওর ফোন আসতেই রিসিভ করল। ফিসফিস করে বলল, এত পিচ্চি মেয়ে পাঠিয়েছিস আমার সাথে প্রেম করার জন্য!? মুন উদাসমুখে নদীর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার বন্ধুও কিন্তু আমার বয়সী মেয়ের প্রেমেই হাবুডুবু খাচ্ছে।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here