আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥ #পর্ব_২৭+২৮

0
226

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_২৭+২৮

জ্বর হলে একসাথে নাপা এক্সট্রা খেয়ে কাঁথা গায়ে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকবো।

শুনলাম কালকে ও যে জামা রোদে দিয়েছিল ওটা নাকি ছিঁড়ে গেছে। আর জামাটার জন্য নাকি বউটা আমার কেঁদে কেটে এক সার। দাঁড়াও আগে বিয়েটা হতে দাও তারপর তোমাকে একগাদা কিনে দেবো।

♥ সেরা বার্থডে:
আজকে আমার বার্থডে আর আমার বউটা জ্বরে পরে আছে ঐ বাসায়। ধুর, ভালো লাগে না। আম্মুর কথায় সুন্দর করে সেজে রেডি হয়ে নিলাম। বিকালে থেকে সব বন্ধু বান্ধবরা আসা শুরু করে দিল। সন্ধ্যার একটু পরে আমি আমার বার্থডের সবচেয়ে দামি গিফটটা পেলাম। দেখলাম ছোঁয়া এসেছে। ওকে দেখে আমি আবার ক্রাশ খেলাম। এত সুন্দর একটা মানুষ কি করে হতে পারে। আমার দুষ্টু মিষ্টি বউটাকে ডানা কাটা পরী লাগছিল। চোখই ফেরাতে পারছিলাম না। ও কাছে আসতেই আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। এমন সময় চাঁদনি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল৷ আমি নিজেকে ওর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটা কিটকাট দিলাম। ভেবেছিলাম আমার বউটারেও দিবো। কিন্তু সেই সময় ও চলে যেতে লাগল। আমি ডাক দিলাম গাজরের হালুয়া বলে। সেটা শুনে সবাই জানতে চাইল আমি কেন ওকে এই নামে ডাকলাম। আমি সবাইকে লবনের কাহিনী বললাম। ছোঁয়া হয়ত কষ্ট পেয়ে চলে গেল। কিন্তু ও যদি জানত কেন আমি ওকে গাজরের হালুয়া নাম দিয়েছি! গাজরের হালুয়া আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবার। আর ওযে আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষদের একজন। আমার দুষ্টু মিষ্টি বউ। তাই যে ওকে আমি এই নাম দিয়েছি।

আকাশ, এত ভালোবেসেছিলে আমায়? একবার যদি মুখ ফুটে বলতে তখন। আমি ডায়রীটার দিকে কতক্ষণ তাকাই থেকে পড়া শুরু করলাম। এখনও যে অনেকটুকু বাকি। অনেক না জানা অনুভূতি অনুভব করা বাকি রয়ে গেছে।

( ডায়রী)
বউটা আমার রাগ করে চলে গেল নিজের বাসায়। আমি কেকের লাভ ইমোজি দেওয়া অংশটা সুন্দর করে কেটে ওদের বাসায় গেলাম। নক করতেই ছোঁয়া এসে দরজা খুলে দিল। একবার ফিরেও দেখল না কে এসেছে। বলল সে রাতে খাবে না। বলেই নিজের রুমে গিয়ে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। আমি ওর পিছু পিছু রুমে গেলাম। বুঝলাম গাজরের হালুয়া বলায় খারাপ লেগেছে অনেক। কেন যেন ওর ভার হয়ে থাকা মুখটা দেখে নিজেকে আটকাতে পারলাম না। তাই কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে এলাম।

– তার মানে ঐদিন আমি ঠিকই ধরেছিলাম। আব্বা আম্মা না চেরি ফল এসেছিল কেক দিতে। ডাকাতের মতো এসে চোরের মতো পালিয়ে গেল কেকটা দিয়ে।

(ডায়রী)
♥ জেলাস:
আমার জন্মদিনের পরে একদিন ছোঁয়ার বাসায় গিয়েছিলাম। ও ছিল না। আন্টি বললেন বসতে। তারপর রান্নাঘরে চলে গেলেন। আমি ওর রুমে উঁকি দিলাম। কেমন যেন বাচ্চা বাচ্চা স্মেল আসছিল ওর রুম থেকে। আমি হেসে ওর টেবিলের কাছে গেলাম। ওখানে ওর ডায়রী পড়ে ছিল। খুলে একটু পড়েই বুঝলাম ছোঁয়া আমাকে খুব পছন্দ করে। জেনে খুবই খুশি লাগছিল। তবে হাসিও পাচ্ছিল ওর বাচ্চা লেখা দেখে। বাসায় এসে মনের আনন্দে নাচতে লাগলাম।

পরদিন শুক্রবার। চাঁদনি বাসায় এসেছিল। ছাদে যাবে বলে বায়না ধরল। আমিও গেলাম। একটু পরে দেখি আমার বউটা কাপড় নিয়ে হাজির। সে অনেক জোরে বালতি রেখে তার অদ্ভুত কন্ঠে গান গাইতে লাগল৷ চাঁদনি ওর সাথে ভাব জমাতে চেয়েছিল কিন্তু সে কড়া কথা শুনিয়ে চলে এল নিচে। আমার ওর কান্ড দেখে হাসি পেল।

বিকালবেলা ছোঁয়া বাসায় এসে হাজির। আমাকে হয়ত আশা করেনি। দেখে একটু ভ্যাবাচেকা খেয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছেন গাজরের হালুয়া? ও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ভালো চেরি ফল। ও আমাকে চেরি ফল নাম দিয়েছি। শুনে আমার ভীষণ ভালো লাগল। তবু না বুঝার ভান করে বললাম, চেরিফলটা কে? ও আমাকে ইঙ্গিত করল। চাঁদনি জিজ্ঞেস করল, কে এসেছে? ও রেগে বলল, চেরির বউ গাজর আসছে। বলে ভেতরে চলে গেল। আমার বেশ ভালো লাগল শুনতে। একেবারে টিক কথা বলেছে। চাঁদনি বুঝতে পারেনি ও কি বলেছে। চাঁদনি আমার ক্লোজ ফ্রেন্ডদের একজন। বুঝতে পারলাম ওর হিংসে হচ্ছে চাঁদনিকে আমার এত কাছে দেখে।

আমি চাঁদনিকে এগিয়ে দিয়ে যখন নিজের রুমে এলাম দেখি ছোঁয়ার হাতে আমার ডায়রী। প্রথমে দেখে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। সব পড়ে ফেলল নাকি! তাড়াতাড়ি ওর হাত থেকে ডায়রীটা নিতেই ও ধরা খাওয়া চোরের মতো তাকাল। তখন আমার ওকে দেখে হাসি পাচ্ছিল। আমাকে দেখে হাত দুটো পেছনে লুকিয়ে ফেলল। আমার মনে হল ও কিছু লুকাচ্ছে। আমি মুখ গম্ভীর করে জিজ্ঞেস করতেই এক দৌঁড়ে পালালো। ডায়রী খুলে দেখলাম ও বেশিদূর পড়তে পারেনি। প্রথম পৃষ্ঠা পড়ছিল মাত্র।

আমার কলেজ প্যান্টে একটা দরকারি কাগজ ছিল। ওটা নিতে গিয়ে দেখি আমার কলেজ শার্টের শেষ বোতামটা নেই। দেখে বোঝা যাচ্ছে কেউ সুন্দর করে কেটে নিয়ে গেছে। ছিঁড়ে পড়ে গেলে তো সুতা থাকত। বুঝলাম কাজটা কার। কিন্তু কেন কেটে নিয়ে গেল বুঝলাম না।

♥মাতাল আমি:
প্রত্যেক শুক্রবার দুপুরে ছাদে আমি ওর দেখা পাই। আজকেও গেলাম। আমার ডি এস এল আর ক্যামেরাটা নিয়ে। ওটা নিয়েই খুটখাট করছিলাম। হঠাৎ চোখ পড়লো ছাদের দরজার সাথে দেয়ালের দিকে। ছোঁয়া দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে হাঁপাচ্ছে। ওকে দেখে আরেকটু হলে আমার হাত থেকে ক্যামেরাটা পড়ে যেত। কেমন অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল। ও যখন চোখ খুলল আমি সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলাম। ও তাড়াহুড়ো করে কাপড় দিয়ে চলে যাচ্ছিল। এমন সময় খুব জোরে পড়ে গেল। ভেবেছিলাম গিয়ে ধরে তুলব। কিন্তু আমি এখন বোঝাতে চাই না যে আমি ওকে ভালোবাসি। সময় হলে বলব। তাই ওর দিকে তাকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। ও টু শব্দ না করে উঠে চলে গেল। আমি আর থেকে কি করব? ছাদের দরজার কাছে এসে দেখলাম ও বসে আছে সিঁড়িতে। আমি ওকে সরতে বললে ও পা সরিয়ে আমাকে জায়গা করে দিল। আমি নেমে গেলাম। কিন্তু পরে মনে হল বেশ ভালোই চোট পেয়েছে। একলা যেতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। গিয়ে দেখি ও কাঁদো কাঁদো মুখ করে বসে আছে। পা মোচকে কালশে হয়ে গেছে। আমি গিয়ে বললাম আমার কাঁধে হাত দিতে। ও আমার কাঁধে হাত দিয়ে উঠে দাঁড়াল। ওর এত কাছে আমি কখনো যাইনি। ওর ছোঁয়া আর ঘামে ভেজা মিষ্টি গন্ধ আমাকে মাতাল করে ফেলছিল। নেশা হয়ে যাচ্ছিল। ওদের বাসার সামনে আসতেই ওকে ছেড়ে দিলাম। আর এক মুহূর্ত থাকলে কি যে করে ফেলতাম নিজেই জানি না। ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম আমাকেও এখন গোসল করতে হবে। বলে বাসায় ঢুকে দরজা আটকে কাচে চোখ রাখলাম। দেখি ও মুখ গোমড়া করে বাসায় ঢুকে গেল। আমি মুচকি হাসলাম। শার্টটা ওর গায়ের পানিতে ভিজে গিয়েছিল। ইচ্ছে করছিল রেখে দেই। কিন্তু নিপা খালা হতে দিল না। পরদিনই শার্টটা ধুয়ে রোদে দিয়ে দিল।

সেদিন বিকালে কাপড় আনতে গিয়ে দেখি আমার বার্থডেতে যে শার্টটা পরেছি ওটা হাওয়া। প্যান্টটা আছে শার্ট নেই। কাজটা কার খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছি। বাসায় গিয়ে আম্মুকে বললাম, তোমার বউমা এখন থেকে দখল করা শুরু করে দিয়েছে। আম্মু হেসে বলল, কি হয়েছে?

– আমার শার্টটা নিয়ে গেছে।

– কি করে বুঝলি?

– অন্য কেউ হলে পুরো সেট নিয়ে যেত। এখানে শুধু শার্টটাই গায়েব।

আম্মু হাসলেন। সন্ধ্যায় আম্মুকে বলে ছোঁয়াদের বাসায় পাঠালাম। দেখতে ওর কি অবস্থা। তার একটু পরে আমি নাস্তা বানিয়েছি এটা বলার বাহানায় ওদের বাসায় গেলাম। দেখি ছোঁয়া আম্মুর সাথে বসে আছে। হঠাৎ ওর গলার চেইনের দিকে নজর গেল। সেখানে আমার কলেজ ড্রেসের বোতামটা ঝুলছে। এবার বুঝলাম বোতামটা আনার কারন। আমি সবার সামনে বোতাম চুরির কথা বলতেই ও সাথে সাথে হাত দিয়ে বোতামটা লুকিয়ে রুমে চলে গেল। যাওয়ার আগে বলল ও ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার আগে আমাদের বাসায় আসবে আমার নাস্তা খেতে। আমিও ওয়েট করতে লাগলাম।

নক করতেই দরজা খুলে আমি এক মুহূর্ত থমকে গেলাম। আর কতবার ও আমাকে ঘায়েল করবে। এবার তো ওকে কাছে পাওয়ার আগেই হার্ট ফেল করব। আমি বললাম, ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে না প্রেম করতে যাচ্ছে। সে আমাকে পাত্তা না দিল। আমি ওর সাথে তর্ক শুরু করলাম যে বাসার ভেতর যেতে দেবো না। এক পর্যায়ে ও আম্মুকে ডাকতে লাগলে আমি মুখ চেপে ধরলাম। দুষ্ট বউটা কামড়ে দিল! যদিও ওর রূপের মোহে ব্যাথা টের পাইনি। তাকিয়ে দেখি একেবারে দাগ দিয়ে ফেলেছে। আমি কিছু বলার আগেই ভেতরে চলে গেল। আমি দরজার আড়াল থেকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। ও খেয়াল করতেই সরে পড়লাম। একটু পরে আঙ্কেল এসে নিয়ে গেল।

♥লবন চা:
পরদিন আম্মু গিয়ে ওকে দেখে আসল। বউটা আমার পড়ে একেবারে পায়ে হাড় নাড়িয়ে ফেলেছে। প্লাস্টার করতে হয়েছে। তারপরের কয়েকদিন আর দেখা পেলাম না। তাই একদিন আম্মুকে যেতে বললাম। আম্মু আরেকদিন দেখে এল। শুনলাম এখন ভালো আছে। পরেরদিনই প্লাস্টার খোলার সাথে সাথে আম্মুর থেকে চা বানানো শিখে গেল। আমি একবারও চাঁদ বদন মুখটা দেখার সুযোগ না।

কয়দিন পর বিকালে আমাকে দেখতে চাঁদনি, রেদোয়ান আর সৌরভ আসল বাসায়। আমার হালকা জ্বর হয়েছিল তাই। একটু পরে কলিং বেল বাজল। গিয়ে দেখি ছোঁয়া হাজির। ও মনে হয় আমাকে আঘাত করার জন্য ওর সৌন্দর্যের মিসাইল তাক করে থাকে। ও আমাকে সরিয়ে ভেতরে ঢুকল। আম্মু জিজ্ঞেস করতেই বললাম গাজরের হালুয়া এসেছে। শুনেই মুখ বাঁকা করে চলে গেল রান্নাঘরে। আমি সোফায় এসে বসলাম। আম্মু নাস্তা দেওয়ার একটু পরে ও চা নিয়ে আসলো। বুঝলাম ও বানিয়েছে। চাটা মুখে নিতেই যেন বয়রা হয়ে গেলাম। গাজরের হালুয়ার মতো এখানেও লবন। ও উৎসুক হয়ে বলল, কেমন হয়েছে। আমি বললাম, খেয়ে দেখো। ছোঁয়া আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমার হাতে কাপের পুরো চাটা খেয়ে নিল। তারপর সাথে সাথে দৌঁড়ে চলে গেল। আমি মনে মনে বললাম, খেলো কি করে চাটা?

♥পরীক্ষা:
আমার এইচএসসি পরীক্ষা চলে এল। আমি পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। তাও প্রত্যেক শুক্রবার আমি ছাদে যেতাম। গিয়ে দরজা বেয়ে উপরে উঠে বসে থাকতাম। যাতে ছোঁয়া ছাদে আসলে আমি ওকে এক পলক দেখতে পাই। কিন্তু ও আমাকে দেখতে পাবে না। এভাবে শুক্রবারের অল্প কিছু সময় ওকে চোখের দেখা দেখতাম। ও এসে আমাকে খুঁজতো। আমি নেই দেখে আবার চলে যেত।

আমার প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার সময় আবার জ্বর এল। আমি পড়ছিলাম এমন সময় রান্নাঘরে ছোঁয়ার গলা পেলাম। তার আরও কিছুক্ষণ পরে ও একটা গ্লাস নিয়ে রুমে ঢুকল। আমি উঁকি মেরে দেখলাম নিমের রস৷ ও আমাকে খেতে বলল, আমি শর্ত দিলাম ওকে অর্ধেক খেতে হবে। প্রথমে মুখ বাঁকা করলেও পরে অর্ধেকটা খেয়ে নিয়ে আমাকে দিল। আমি বললাম ওর খাওয়া খাবো না। ও আরেকটা গ্লাস আনতে গেল। এই ফাঁকে আমি খেয়ে নিলাম বাকি অর্ধেকটা। কেন যেন নিমের রসটাও মিষ্টি লাগল। হয়ত ওর ঠোঁটের ছোঁয়া লেগেছে বলে।

খেয়েই শুয়ে পড়লাম বিছানায়। ও এসে বোকার মতো তাকিয়ে রইল। তারপর খালি গ্লাস নিয়ে রাগ করে চলে গেল। আমি মুচকি হাসলাম। কিছুক্ষণ পরে ও আবার এল। আমি ঘুমানোর ভান করে পড়ে আছি। এমন সময় ও আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে গেল। ও চলে যেতেই আমি ছাদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম, আজকের দিনটা আমার বেস্টদিনের একটা হয়ে গেল তোমার ঐ আলতো ছোঁয়ায়।

♥প্রস্তাব:
পরীক্ষার শেষদিন। পরীক্ষা দিয়ে বের হতেই চাঁদনি বায়না ধরল মাঠে যেতে। বন্ধু বান্ধবরা ঘিরে ধরল। আমি জানতাম চাঁদনি আমাকে পছন্দ করে। সে দিন ও আমাকে প্রপোজ করে বসল। আমি ওর ফুলটা নিতেই সবাই ভাবল আমি একসেপ্ট করেছি। আমি ফুলটা নিয়ে বললাম, তুই এত কষ্ট করে ফুলটা এনেছিস তাই নিলাম। কিন্তু আমি তোকে ভালোবাসতে পারব না। আমি অন্য কাউকে সেই কবে মন দিয়ে বসে আছি। সরি রে। চাঁদনি হয়ত ব্যাপারটা জানত। তাই মুখ কালো করে রইল। হঠাৎ ভীড়ে দেখলাম ছোঁয়ার ফ্রেন্ড রিদি দাঁড়িয়ে আছে। ওর কাছে গিয়ে বললাম, তুমি এখানে? ও বলল, ছোঁয়াও নাকি এসেছিল। কিন্তু এখন আর দেখছে না। বাসায় চলে গেছে হয়ত। আমি বুঝলাম ও আর্ধেক দেখেই চলে গেছে। হয়ত ভুল বুঝেছে আমায়।

‘ তুমি ঠিকই ধরেছিলে। সত্যিই আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম আকাশ। তাই আজ আমাদের মাঝে এত দূরত্ব।’ আমি দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাইলাম। ঘড়িটা টিক টিক কইরা আগাই যাইতেসে। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেইলা আবার ডায়রীটা খুলে পড়ার শুরু করলাম। আজ যে আমার সব রহস্যের জট খুলে যাইতেসে।
চলবে…

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_২৮

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেইলা আবার ডায়রীটা খুলে পড়ার শুরু করলাম। আজ যে আমার সব রহস্যের জট খুলে যাইতেসে।

(ডায়রী)
বাসায় এসে শুনলাম আমরা দেড় সপ্তাহের ভেতর লন্ডন চলে যাবো। সেই উপলক্ষে নাকি মিষ্টি দিয়ে এসেছে ছোঁয়াদের বাসায়। আমি ভাবতে লাগলাম, এতদিনে যতটুকু ধারণা, ওর মনে আমার জন্য একটা জায়গা তৈরী হয়েছে। এটা বেশ বুঝতে পারছি। এতকিছুর পর এই খবরটা পেয়ে ওর রিয়েকশান কি হতে পারে। পরদিন সকালে উঠে দেখি আব্বু লন্ডন থেকে চলে এসেছে। আব্বু এসেই বলল, আজকে ছোঁয়ার সাথে পরিচিত হয়ে আসবে। আমরাও গেলাম। আমরা সোফায় বসে আছি। আন্টি ছোঁয়াকে ডাকলেন। ও আসতেই আমার বুকটা ধক করে উঠল। একদিনে কি হাল হয়ে গেছে। শুকিয়ে গেছে একেবারে। ও এসে বসল। আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ওর শুকিয়ে যাওয়া মুখটা দেখে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। এত ভালোবাসে আমায় যে কালকের ঘটনায় এত কষ্ট পেয়েছে! ও একটু কথা বলেই চলে গেল ভেতরে।

আব্বু আম্মু আন্টিদের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। আব্বু বিয়ের প্রস্তাব দিতেই চমকে গেলাম আমি। এটা ভাবিইনি। আব্বু বললেন, বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে রাখছেন। ছোঁয়াকে ওনার পছন্দ হয়েছে কিন্তু যেহেতু ও এখনো ছোট তাই অন্তত আমি নিজের পায়ে দাঁড়ানো পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। আন্টিরা হ্যাঁ না কিছু বললেন না। বললেন ভেবে দেখবেন। তারপরই বললেন, কালকে ছোঁয়ার জন্মদিন। আসতে। আমরা রাজি হয়ে গেলাম।

♥গিফট:
ওকে জন্মদিনে কি দেওয়া যায় তা মাথার মাঝে ঘুরপাক খেতে লাগল সারা সকাল। দুপুরের দিকে বের হয়ে শপিংমলে গেলাম। অনেকগুলো দোকান ঘুরে একটা নীল শাড়ি খুব পছন্দ হলো। নিয়ে নিলাম ওটা। তারসাথে এক ডজন নীল কাচের চুড়ি আর এক জোড়া নুপুর নিলাম। বাসায় এসে একটা চিঠিসহ সুন্দর করে প্যাক করলাম। এমন সময় আন্টি এসে বললেন, ওনারা ছোঁয়ার নানা বাড়ি যাচ্ছেন। একটু দেখে রাখতে। আমি অপেক্ষায় রইলাম। ওনারা বের হওয়ার একটু পরেই বাক্সটা রেখে দরজা নক করে বাসায় চলে এলাম। দেখলাম ছোঁয়া বাক্সটা নিয়ে গেছে।

আমি এটুক পইড়া থ হই রইলাম। মুখ দিয়া কিসু বাইর হইতেসে না। আমি যা ভাবতেসি তাই! তাইলে তো…… আমি ঢোক গিইলা আবার পড়া শুরু করলাম।

(ডায়রী)
♥কাছে পাওয়া:
ওর নীল জামাটা টেইলারের কাছে দিয়ে এসেছিল। আমি ওর নাম করেই নিয়ে এসেছিলাম। ওই জামার কথা বলে ওকে রাত সাড়ে এগারটায় শাড়ি পরে রেডি হয়ে আসতে বললাম ছাদে। আমি এগারটায় গিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে লাভ শেইপ করে রাখলাম। তার ভেতর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে C + A লিখলাম। নুপুরের আওয়াজ শুনতেই লুকিয়ে পড়লাম। ছোঁয়া এল। এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগল। কাউকে দেখতে না পেয়ে যেই না চলে যাচ্ছিল আমি একটা কাপড় দিয়ে ওর চোখ বেঁধে দিলাম। ও ভয় পেয়ে কে কে বলে উঠল। আমি ওকে থামিয়ে টেনে নিয়ে এলাম ছাদের মাঝে। চাঁদের আলোয় ওকে দেখে আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না। ওর দুই গালে দুটো কিস দিয়ে দিলাম। ও আবার ভয় পাওয়া গলায় বলল, কে? আমি ওর দুইহাত ধরে পেছনে মুড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেললাম। আমি নিজের পরিচয় গোপন করে ওর কানে কানে বললাম, আমি লাভার ভ্যাম্পায়ার। তারপরই আমার ছোঁয়ার নেশায় ধরে গেল। আমি ওর গলায় একটা কিস করলাম। সাথে সাথে ও কেঁপে উঠল। সেই কাঁপুনি যেন আমাকে আরো পাগল করে দিল। তারপর আমার কি হল জানি না। ওর নেশায় ডুবে গেলাম। আমি ওর মুখ চেপে ধরে একটা লাভ বাইট দিয়ে দিলাম। ইচ্ছে মতো ওর গলায় ঘাড়ে কিস করতে লাগলাম। তারপর ওর কানে ফিসফিস করে বললাম, লাভ বাইট দিয়ে সিল মেরে দিলাম। আজ থেকে ও শুধু আমার। এমন সময় হাত ঘরিটা বারোটার জানান দিল। আমি সবার আগে ওকে বার্থডে উইশ করলাম। একসময় ওর ঠোঁটের দিকে নজর পড়ল। ওর লাল ঠোঁট জোড়া কাঁপছে। এগিয়ে গেলাম সেই নেশা ধরানো ঠোঁটের দিকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেকে সামলে ছেড়ে দিলাম ওকে। চলে এলাম বাসায়। দরজায় উঁকি মেরে দেখলাম একটু পরে ছোঁয়াও বাসায় চলে এল।

আমি ঘাড়ে হাত দিয়া দাঁত কিড়মিড় কইরা ডায়রীর দিকে তাকাইলাম। আমার মগজে আগুন জ্বলতেসে। তাহলে আমি ঠিকই ধরসি। লাভার ভ্যাম্পায়ারই হলো আকাশ। পরিচয় লুকিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ রাখসে। ঐদিন কামড়ে আমার ঘাড়ের অবস্থা বারোটা বাজাই দিসে। আমি কত্ত ভয় পাইসিলাম। সবাই আমারে প্রশ্ন করে করে অস্থির বানাই ফেলসিলো। আমি যে এমন একটা ফাজিলের প্রেমে পড়সিলাম বুঝতে পারি নাই। এমনিতে দেখতাম সাধু বিড়াল হই ঘুরতো। দাঁড়াও, বিয়েটা হতে দাও। বুঝাই দিবো কত ধানে কত চাল।

ঘড়ির দিকে তাকাই দেখলাম আধা ঘন্টা হয়ে গেসে। আর পড়ার দরকার নাই। একসাথে অনেক ডোজ পেটে পড়সে। তাতেই ব্লাস্ট হই যাইতেসে। বাকিটা পড়লে ফাইটা পড়মু। আমি ডায়রীটা নিয়া আকাশের রুমে এসে দেখি চাঁদনি ওর পাশে বসে আছে। আমার মগজ একটু পরে রাগে গইলা যাইবো। আমি নিজেকে শান্ত করে বলল, আরে চাঁদনি আপু, কেমন আছো?

– তুমি এখানে?

– আরে আন্টি তো তোমাকে নিচে ডাকছে কি জন্য যেন।

– আমি তো এইমাত্র নিচ থেকে আসলাম।

– আমি কি করে বলব। যাও গিয়ে দেখো।

আমি ওরে ঠেলে উঠাই দরজার কাছে নিয়া গেলাম। সে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল। আমি বললাম, আরে আগে দেখো আন্টি কি বলেন। ততক্ষণে গাজর বউ তার চেরি বরের কাছে থাকুক। সে বলল, মানে? আমি আমার বহুমূল্যবান মুলা দাঁত দেখাইয়া দরজা বন্ধ করে দিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেললাম। আপদ বিদায় করলাম। আমি ডায়রীটা আগের জায়গায় রেখে চেরির কাছে এসে বসলাম। ব্যাটা এখনো ঘুমাচ্ছে। ইস্, ঘুমালে কি নিঃস্পাপ লাগে। ভেতরে তো ফাজিলের হাড্ডি। ঘুমাচ্ছে দেখে কপালে একটা চুমু দিয়ে দিলাম। মাথা তুলতেই দেখে ও আমার দিকে পিটপিট করে তাকাই আছে। তারমানে ও জাইগা ছিল! লজ্জায় কিছু বলতেও পারতেসি না। উঠে চইলা যাচ্ছিলাম সে আমার হাত ধরে টান মারল। আমি তাল সামলাতে না পাইরা ওর বুকের উপর পইড়া গেলাম। সে আমাকে জাপটে ধইরা বলল, একটু আগেই তো বললে গাজর বউ চেরি বরের কাছে থাকবে। তাহলে যাচ্ছো কোথায়?

– ছাড়ুন আমাকে।

– আমার ডায়রী পড়ে তো সব জেনেই নিয়েছো। তাই আজ থেকে নো ছাড়াছাড়ি।

– ইস্… ভ্যাম্পায়ারই একটা। কামড়ে আমার ঘাড়ের অবস্থা বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।

– তুমি চাইলে আবার করতে পারি।

– পাগল নাকি! ছাড়ুন না হলে আমি কিন্তু কামড়ে দেবো।

– দাও না। এই ছয় বছর তো তার অপেক্ষাতেই আছি। কবে তুমি নিজ থেকে আমার কাছে আসবে।

– হুহ্।

বাইরে চাঁদনি এসে দরজায় ধাম ধাম বাড়ি মারতে লাগল। আকাশ বিরক্ত হয়ে বলল, এই মেয়ের কাণ্ডজ্ঞান নেই। কোথায় শান্তিতে রোমান্স করছি তা না আমার রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। আমি জোর কইরা উইঠা যাইতেছিলাম। সে আমার দুই গাল ধরে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল, আমি আর ওয়েট করতে পারছি না। এই সপ্তাহতেই তোমাকে নিজের কাছে আনার ব্যবস্থা করছি। আমি নিজেকে ছাড়িয়ে দৌঁড়ে দরজা খুইলা বেরিয়ে গেলাম। চাঁদনি ঢুকে বলল, কি করছিলি রে তোরা দুইটা মিলে?

– রোমান্স করছিলাম। চাঁদনি তোকে তো আমি আগেই বলেছি আমি ছোঁয়াকে ভালোবাসি। কেন তাও বার বার ফিরে আসিস?

চাঁদনি কিছু বলল না। চইলা গেল রুম থেকে। আকাশ আরাম কইরা আবার বিছানায় শুইয়া পড়ল। তার মাথায় এখন কতকিছু ঘুরতেসে। বিয়ে, রোমান্স, বাচ্চা কাচ্চা।

আমি বাড়িতে এসে রুমে গিয়া বিছানায় লাফাই পড়লাম। একটু পর পর মুচকি মুচকি হাসতেসি আর লজ্জায় বালিশে মুখ ঢুবাইতেসি। মুন এসে বলল, কি রে, আকাশ ভাই কেমন আছে?

– ভালো। সামান্য চোট পেয়েছে।

– ও। দেখতো এই শাড়িগুলো কেমন লাগে।

আমি অবাক হইয়া বললাম, শাড়ি কবে কিনলি? মুন বলল, গতকালকেই আকাশ ভাই রেদোয়ানকে দিয়ে পাঠিয়েছিল। তোকে দেখাইনি। আমি কইলাম, আমি তো বলিনি আমি বিয়েতে রাজি। মুন বলল, সেটা আমিও বলেছি। আকাশ ভাই বলেছে তুই নাকি রাজি হয়ে যাবি। তোকে নিয়ে নাকি টেনশান নেই। তাই বিয়ের কাজগুলো সেরে ফেলতে বলেছে। এর মধ্যে কার্ডও ছাপানো হয়ে গেছে। আমি মনে মনে বললাম, বলবেই তো। আমি কি আর জানতাম নাকি যে দুইজনকে নিয়ে টানা পড়েনে পড়েছিলাম। তারা আসলে একজন। মুন আমাকে শাড়ি গয়না দেখাতে লাগল। যাওয়ার আগে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, তোর না শ্বশুর বাড়ি যাওয়র কথা। ও বলল, এই শুক্রবার তোর বিয়ে তাই রয়ে গেলাম।
.
.
.
.
আমি বউ সাইজা বসে আছি বাসরঘরে। শেষ পর্যন্ত ক্রাশের সাথেই আমার বিয়াটা হয়েই গেল! আমাকে একটা ফ্ল্যাটে আনা হইসে এবং আমি এই ফ্ল্যাটটাকে আমি খুব ভালো করে চিনি। এটা সেই ফ্ল্যাট যেখানে আমি আব্বা আম্মার হাত ধরে হাঁটতে শিখসি, যেখানে প্রথম আমি চেরি ফলকে দেইখা ক্রাশ খাইসি আর যেখান থেকে আমি আমার আব্বা আম্মারে চির বিদায় দিসি। হ্যাঁ, আমি এখন আমাদের ছয় বছর আগের ফ্ল্যাটে আমার রুমে বইসা আছি। আমি জানতাম না আকাশ এই ফ্ল্যাটটা কিনসে। চারদিকে তাকাই বুঝতে পারলাম এখানের একটা জিনিসও নাড়ানো হয় নাই। ছয় বছর আগে যেমন ছিল তেমনই আছে সব। কিন্তু কিছু জিনিস তো খালু নিয়া গেসিলো। তাহলে এগুলা আসল কেমনে? আমি পড়ার টেবিলটার কাছে গেলাম। হঠাৎ একটা জিনিস চোখে পড়ল। আগে পাগলামি কইরা টেবিলের একপাশে ছোট্ট কইরা লিখসিলাম ক্রাশ + ছোঁয়া। ওটা এখনো আছে। তার মানে খালু একই দেখতে জিনিস কিনে নিয়া গেসিলো ঐ বাড়িতে। এই ফ্ল্যাটের একটা জিনিসও নাড়ানো হয় নাই। সব আগের মতো যত্ন কইরা রাখা হইসে! এতো ভালোবাসে আকাশ আমারে!

কিন্তু আমি তো আমার শোধ নিয়া ছাড়মু। এই ছয়টা বছর আমি ওর থেকে আলাদা থাইকা কত কষ্ট পাইসি। সেটা কেবল আমি জানি। আমি ভারি শাড়ি আর গয়না খুইলা একটা থ্রিপিস পইরা সাহেবাদের মতো বিছানায় বইসা আছি। একটু পরে আকাশ রুমে ঢুইকা আমারে এভাবে দেইখা থতমত খাইল। হয়ত ভাবছিল আমি শাড়ি গয়না পইরা লজ্জাবতী লতার মতো বইসা থাকবো বিছানায়। ওটি হইতেসে না। আমি গম্ভীর কন্ঠে কইলাম, দরজা মারো। ও বাধ্য ছেলের মতো দরজা মাইরা আমার কাছে এসে বসতেই বললাম, খবরদার, একদম কাছে আসবে না। ও অবাক হয়ে বলল, কেন? আমি মনে মনে কইলাম, তুমি কাছে আসলে যে তোমার সুগন্ধে আমি নিজেকে সামলাতে পারবো না। মুখে বললাম, আজকে থেকে ছয় বছর পর তুমি আমার কাছে আসবা। ও মুখ গোমড়া করে বলল, কেন? আমি বললাম, এই ছয় বছরের শোধ নিবো। আমি কত কষ্ট পাইসি জানো? আকাশ চিনা হাসি দিয়া বলল, সব ফেরত নিবা বুঝি?

– হুম। সুদে আসলে ফেরত নিবো।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here