#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_১৭+১৮
মুন উদাসমুখে নদীর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার বন্ধুও কিন্তু আমার বয়সী মেয়ের প্রেমেই হাবুডুবু খাচ্ছে। রেদোয়ান অপ্রস্তুত হয়ে কেশে বলল, ইয়ে মানে…
– আমি এখানে প্রেম করতে আসিনি। এসেছি আপনার বন্ধুর জন্য। সব নিশ্চয়ই জানেন। ছোঁয়া সন্দেহ করছে। তাই আপনার সাহায্য লাগবে। বেশি কিছু করা লাগবে না। আপনাকে আমার সাথে নিয়ম করে একঘন্টা চ্যাট করতে হবে আর ফোনে মাঝে মধ্যে কথা বলতে হবে। এই…
– আচ্ছা, আমি ভেবে দেখবো।
– এটা হল আমার নাম্বার। যদি রাজি থাকেন তো জানাবেন। বাই।
মুন বেরিয়ে এল ছাউনি থেকে। রেদোয়ান ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে করবে কি না। যেমন বাচ্চা ভেবেছিল তেমন মনে হল না। বরং স্ট্রেট ফরোয়ার্ড।
আমি দেখলাম মুন বাড়ির দিকে রওনা দিসে। কি কথা হইল কিছুই শুনতে পাইলাম না। কচু, শুধু দৌঁড়াই আইসা বলটাই পড়ল। ও বাড়ি পৌঁছানোর দশ মিনিট পরে আমি বাড়ি ঢুকলাম। গিয়া দেখি গানের স্যার আসছে। আমিও গিয়া বসলাম। বার বার ওর দিকে তাকাইলাম। কিন্তু ওর মুখোভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হইল না। কি চলতেসে ওর মাঝে! জানা দরকার।
সন্ধ্যায় মিষ্টি খালা সেই লেভেলের চিৎকার দিয়া কইল, মুন…… ফ্রিজের গাজর কই? মুন আইসা কইল, আমি জানি না। মিষ্টি খালা কোমরে হাত দিয়া কইল, তুই ছাড়া এখানে গাজর পাগল কে আছে? এমন সময় দুই হাতে দুইটা গাজর নিয়া ছাদ থেকে নামতেসি আর মুনের কথা চিন্তা করতেসি। ওদের সামনে আইসা আনমনে একটা গাজরের অর্ধেকে কামড়াই মুখে নিয়া ফেললাম। ওরা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল কইরা তাকাই আছে। আমার খেয়াল হইতেই কইলাম, কি হইসে? মুন কাছে এসে আমারে জোরে চিমটি কাটল। আমি চারশো চল্লিশ বোল্টের একটা চিক্কুর দিয়া ওর থেকে তিন হাত সইরা কইলাম, চিমটি দিস ক্যান?
– আমি স্বপ্ন দেখতেসি কি না তাই দেখতেছিলাম।
– তাইলে নিজেরে চিমটি কাট। উফ!!! কি জোরে চিমটি দিসে। লাল হই গেসে।
মিষ্টি খালা বলল, তুই কবে থেকে গাজর খাস? আমি ভাবতেসিলাম তখনও। তাই হঠাৎ মুখ থেইকা বাইর হই গেল, প্রেম কবে থেকে? চিন্তার বিষয়। মিষ্টি খালা আর মুন একে অপরের দিকে তাকাইলো। আমার খেয়াল হতেই বললাম, কি যেন বলতেছিলা গাজরের কথা? জানো কতদিন গাজর খাই নাই। তাই সব সুদে আসলে মিটাই নিসি।
– মানে?
– যতগুলা গাজর ছিল সব পেটে চালান করসি৷ কি যে ভালো লাগতেসে। কিন্তু এত গাজর খাইও জট ছাড়াইতে পারলাম না। বুদ্ধিতে জঙ ধরে গেছে।
মিষ্টি খালা অবাক হয়ে কইল, এক কেজি গাজর!!!!! মুন তার কাছে গিয়া কইল, আম্মা ওরে মনে হয় কোনো গাজর পাগল ভূতে ধরসে। এখনই ওঝা ডাকো। আমি ধমক দিয়া কইলাম, মুন, তুই চুপ করবি না তোর ঘাড় মটকামু।
আমি রুমের দিকে এগিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলাম, এই মেয়ে প্রেম করতেসে। কিন্তু কতদিন হইতে পারে। কে ছেলেটা? জানা দরকার। যাইতে যাইতে ডান হাতেরটা শেষ করে বাঁ হাতের গাজরে কামড় দিলাম। ক্রাশরে ছাড়লাম কিন্তু গাজররে ছাড়তে পারলাম না।
.
.
.
.
ছয় বছর পর……
– মুন, ওঠ।
– আরে ঘুমাতে দে।
– মুন কি বাচ্চি। উঠবি না পানি ঢালমু।
– যা তো। কালকে কতদূর জার্নি করে আসছি। এখন ঘুমাইতে দে।
– এ্যাঁহ, নিজেই খালি জার্নি করে আসছে। আমি তো উইড়া উইড়া আসছি। কেমনে যে তোরে রেদোয়ান ভাই পছন্দ করছিল। আল্লাহ জানেন। উঠ কইতেসি।
হঠাৎ ওর ফোনের রিংটোন বাইজা উঠল। ও হাঁতড়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল, হ্যালো। সাথে সাথে ওর ঘুম উধাও। ও দ্রুত বিছানা থেকে নাইমা বলল, আমি এখুনি আসছি। জাস্ট আধা ঘন্টা। ফোন বিছানায় ছুইড়া মাইরা ওয়াশরুমে দৌঁড় দিল। আমি কল লিস্ট চেক কইরা দেখলাম রেদোয়ান ভাই ফোন দিসিলো। আমি হতাশ হই বললাম, আমি এতক্ষণ গুতাই পারলাম না। আর রেদোয়ান ভাইয়ের এক কলেই মেয়ে ওয়াশরুম! হায়রে!!! বোইনের কোনো মূল্য নাই জামাইর কাছে। আমারে কেউ এক চামুচ পানি দে ডুইবা মরি।
কালকে ভার্সিটি হল থেকে দুইজন আসছি। আমরা একই ভার্সিটিতে ভর্তি হইসে। আমার সাথে সেই লেভেলের ধুমাইয়া পড়াশুনা করছিল ভর্তির আগে। তাই আজকে দুইজনে একসাথে। হলেও একসাথে থাকি তবে সাবজেক্ট আলাদা। আমি সাইকোলজিতে পড়তেসি। মিষ্টি খালা অবশ্য বলছিল মেডিকেলে ট্রাই করতে যেহেতু আমার রেজাল্ট অনেক ভালো ছিল। কিন্তু কেন জানি করি নাই। সাইকোলজিতে চলে গেলাম। আমার জন্য পার্ফেক্ট সাবজেক্ট। বলে না রতনে রতন চিনে, আমি চিনসি পাগল।
আমি ধীরেসুস্থে খাবার টেবিলে আইসা বসলাম। সবাই মুনের দিকে তাকাই আছে। আমিও যোগ দিলাম। সে গোগ্রাসে গিলতেসে। মনে হইতেসে কয়েক বছর না খাইয়া আছে। খাওয়া শেষ কইরা পানি খাইতে খাইতে আমাদের দিকে ইশারা করে জিগাইল, কি? খালু বললেন, এমন করে খাচ্ছিস কেন? আমি গালে হাত দিয়া উদাস ভঙ্গিতে রুটি নিতে নিতে কইলাম, জামাইর ডাক পড়সে, তাই এমন রাক্ষসের মতো গিলতেসে। মনে হয় রেদোয়ান ভাই ওরে খাওয়াইবো না।
– ছোঁয়া…… আমি আসছি।
মুন বের হই যাইতেছিল। আমি কইলাম, রেদোয়ান ভাইয়ের পকেট খালি করবি বলে পার্সটা রেখে যাচ্ছিস? মুন মুখ বোঁচা করে পার্সটা নিয়া দৌঁড় দিল৷ আমি মুখ কালো কইরা রুটি চিবাইতেসি আর ভাবতেসি, আমার আর এ জীবনে হইবো না।
আমি রুমে এসে বিছানায় শুইলাম। ডান হাতে একটা ইয়া মোটা গাজর। এই ছয় বছরে যে কতো গাজর খাইসি!!! তার হিসাব একটা খরগোস করতে করতেও হার্ট অ্যাটাক করবো। আমি সেই রকমের মোবাইল টিপতেসি। টিইপ্পা হের রস কষ সব বাইর কইরা ফেলতেসি। মাঝে মধ্যে মনে হয় মোবাইলের মুখ থাকলে কইতো, বোইন পায়ে পড়ি, আর টিপিস না। আমার শরীরের আর কিছু আস্তো নাই। ওরে আমারে কেউ বাঁচা। এমন সময় ম্যাসেজ আসলো। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খুললাম।
‘ ম্যাসেজ দাওনি কেন? বাড়িতে পৌঁছে ম্যাসেজ দিতে বলেছি না। এতটা মন ভোলা হলে চলে? সাবধানে থাকবে। আর মাত্র কয়টা দিন। লাভ ইউ।
~ লাভার ভ্যাম্পায়ার’
আমি ফোনটা নামাই রাখলাম। ছয়টা বছরে দশটা সিম বদলাইছি, পঁচিশটার উপরে নাম্বার ব্লক করসি। কিন্তু এই ভ্যাম্পায়ারের পিছু ছাড়াইতে পারি নাই। কি করে যেন আমার নাম্বারটা তার কাছে পৌঁছাই যায়। মাঝে মধ্যে ভাবি, আমার ফোনে কোনো গোপন এ্যাপস আছে নাকি যার মাধ্যমে সে সব জানতে পারে! সকাল বিকাল টাইম টু টাইম ম্যাসেজ। খাইসি কি না, পড়তেসি কি, কেমন আছি। সাথে একটা বাক্য, আই লাভ ইউ। কিছু বলার না থাকলেও এই লাইনটা প্রত্যেকদিন আসবেই। ক্লান্ত হই গেলাম৷ এখনো পর্যন্ত বুঝতে পারলাম না কে এটা। একটা দিনও মিস যায় নাই যে সে আমারে সকালে কল দিয়া ঘুম থেকে জাগায় নাই। এখন ভাবি, কে হতে পারে যে আমারে এক মুহুর্ত ভুলতে পারে না। আমিও তো পারি নাই, আমার চেরি ফলরে ভুলতে। মাঝরাতে মাঝেমধ্যে জাইগা গেলে হঠাৎ ওর কথা মনে পড়ে। তখন দুই ফোঁটা পানি পড়া যেন অভ্যাস হয়ে গেসে। আমি বোতামটা ধরে চেরির চিন্তায় ডুইবা গেলাম। তখনই মিষ্টি খালা বলল, বের হবি না?
– হুম। রেডি হচ্ছি।
আমি উইঠা পড়লাম। বিয়ার শপিং করতে হবে। মুন পাগলিটার বিয়া। রেদোয়ান ভাইয়ের সাথে। ছয় বছর ধরে প্রেম করতেসে। প্রথমে অস্বীকার করছিল। কিন্তু একদিন আমার কাছে হাতে নাতে ধরা খাই শিক্ষা হইসে। বেটি আমারে একটা থ্যাংকসও জানাইলো না। আমি মিষ্টি খালা আর খালুরে বিয়ার জন্য রাজি করাইসি। এখন তো আমারে চিনবে না। সব দোষ রেদোয়ান ভাইয়ের। দাঁড়া বিয়ার দিন কোটি টাকা দিলেও জুতা ফেরত দিমু না।
মিষ্টি খালাকে নিয়া বাইর হইতেই আরেক ঝামেলা খাঁড়া। বাপরে!!! ঝামেলার শেষ নাই। মিষ্টি খালা হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছো রাতুল? বেক্কলটা দাঁত কেলাই বলল, ভালো আন্টি। আপনি কেমন আছেন?
– ভালো।
সে আমার দিকে তাকাই গলায় মধু ঢাইলা বলল, কেমন আছো, ছোঁয়া? আমি তিতা গলায় কইলাম, নিমপাতার রস খাইলে যেমন ভালো থাকে তেমন। আমার এমন কথায় ও কিছু মনে করল না। এতগুলা বছরে কমসে কম দশবার প্রপোজ করসে। একবারও সংসদে বিল পাস হয় নাই। তবুও পিছু ছাড়ে না। আমি আসলে কেমনে কেমনে টের পাই যায়। পরদিন আসি এক পায়ে খাঁড়া। আর ভালো লাগে না।
আমি বললাম, খালা চলো। রাতুল কইল, আমিও ঐদিকে যাইতেসি। চলেন একসাথে যাই। আমি ঘর থেকে আমার স্কুটিটা বের করলাম। যদি আর একবার বলসে আমাদের সাথে যাবে তো এক পা আমার স্কুটির সাথে বাঁইধা টান দিমু। আমি স্কুটিতে উইঠা মিষ্টি খালার দিকে তাকাই আছি। মিষ্টি খালা আমার মতিগতি বুঝতে পাইরা বলল, তোমার সাথে পরে কথা হবে। আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। রাতুল মুখ কালো করে বলল, আচ্ছা, আন্টি। সাবধানে যাবেন আর ছোঁয়া……। আরও কিছু বলার আগে ওকে ধুল খাওয়াইয়া বের হই গেলাম।
আজকে কিছু শপিং করলাম। ইস্!!!! কত সুন্দর সুন্দর শাড়ি!!! ইচ্ছা করতেছিল সব নিয়া আসি। আমি গায়ে হলুদের জন্য একটা জামদানি শাড়ি পছন্দ করছিলাম লাল আর সাদা রঙের। সেই সুন্দর। কিন্তু এতো দাম যে শুইনাই আর দ্বিতীয় বার তাকাই নাই৷ ইস্!!! শাড়িটা এতো সুন্দর ছিল!!! যাগ্গে। কি করা। কেনা কাটা করে চইলা আসলাম দুইটার দিকে। এসে ফ্রেশ হতে চইলা গেলাম। কাউয়া সং এখন আর নাই। কয়েক বছরে গানের স্যার ওটাকে অনেক পরিশ্রম করে কোকিল সংএ পরিণত করতে সক্ষম হইসে। কোকিল কন্ঠে গোসল কইরা বাইর হই দেখি বিছানায় একটা প্যাকেট। কৌতুহলী হইয়া ভেতরে উঁকি দিলাম। একটা শাড়ি। বের করতেই আমি খুশিতে ব্যাঙাচীর মতো লাফাইতে লাগলাম। সেই লাল সাদা জামদানি শাড়িটা। আমি কিছুক্ষণ শাড়িটা নিয়া লাফাই হঠাৎ চোরের মতো চোখ সরু কইরা কইলাম, এটা এখানে আইলো কেমনে!
চলবে…
#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_১৮
আমি কিছুক্ষণ শাড়িটা নিয়া লাফাই হঠাৎ চোরের মতো চোখ সরু কইরা কইলাম, এটা এখানে আইলো কেমনে! তখন মুন রুমে ঢুকল। আমারে দেইখা কইল, এমন শিয়ালের মতো উঁকি মাইরা আছিস কেন?
– এটা এখানে আসলো কেমনে?
– আমি আনসি।
– ও।
আমি মন খারাপ কইরা শাড়িটা রাইখা দিলাম। ইস্, শাড়িটা এত পছন্দ হইসিলো, এখন তো এটা মুন পরবে। মুন আমার গায়ে শাড়িটা জড়াই দিয়া বলল, তোকে বেশ মানাইসে। চয়েজ আছে।
– আমাকে মানাই কি হবে? পরবি তো তুই।
– কে বলসে? এটা তোর জন্য।
– তুই আমার জন্য এত টাকা খরচ করলি!?
– আমি কেন খরচ করতে যাবো? তোর জামাই…
আমি মুখ সরু কইরা কইলাম, আমার জামাই আসলো কোত্থেকে? বিয়া করবি তুই। মুন আমারে কাটানোর জন্য বলল, আরে, ঐ আর কি। বলে ফেলসি। যা তো এটা পরে আয়।
– এখন?
– হুম। দেখবো তোকে।
– ইস্, দরদ একেবারে বেয়ে বেয়ে পড়তেসে। আমি এখন পরবো না। তোর গায়ে হলুদের দিনই পরবো।
আমি শাড়িটা তুলে রাখলাম। মুন কেন যেন মুখ কালো করে ফোন হাতে বেরিয়ে গেল। বুঝলাম না।
.
.
.
.
দুপুরে খেয়ে আমি বিছানায় শুয়ে ইচ্ছা মতো মোবাইল টিপতেসি। হঠাৎ সারা সায়েম এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার উপর। আমি অবাক হইয়া কইলাম, তোরা কোথা থেকে আসলি?
– আম্মুর সাথে।
– সানজিদা আপু আসছে? দাঁড়া দেখা করে আসি।
সানজিদা আপুর দুই ছেলে মেয়ে। সারা আর সায়েম। দুই জনে যমজ। আমি সানজিদা আপুর সাথে দেখা করতে যাইতে চাইলে দুইজনে দুইপাশ থেকে আমার বুকে মাথা রাইখা শুয়ে বলল, আগে আমাদেরকে একটা গল্প শোনাতে হবে। তারপর। কি এক জ্বালা! আমি কইলাম, আমি এসে শোনাই। ওরা ছাড়তে নারাজ। কি আর করা। শুরু করলাম।
– একটা ছোট দুষ্ট পরী ছিল। সে এতো দুষ্ট ছিল যে তার বাবা মা তাকে নিয়ে হয়রান হয়ে যেত। সে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতো। একদিন এক মানুষ ছেলের সঙ্গে দেখা হল। পরীটা দেখেই পছন্দ করে ফেলল। প্রত্যেকদিন এটা ওটার ছলে ছেলেটাকে দেখতে যেতো। একদিন পরীটা জানতে পারল ছেলেটা অন্য একজনকে ভালোবাসে। তখন পরীটা তাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেল। শেষ।
সারা বলল, এটা কোনো গল্প হল? আমি কইলাম, মনে কর এটা গল্পের ট্রেইলার। রাতে কমু। এখন ছাড় তো। আমি ওদের কবল থেকে বাইর হইয়া সানজিদা আপুর কাছে গেলাম। সানজিদা আপু মিষ্টি খালার সাথে কথা বলতেসে। আমি যাইয়া জড়াই ধইরা কইলাম, এই বোনটারে তো ভুইলা গেসো। একেবারে দেখতে আসো না।
– কি করতাম বল, তোর ফাজিল ভাগ্নী ভাগিনায় সারাদিন জ্বালায়।
– দুলাভাই আসে নাই।
– না। ও বিয়ের একদিন আগে আসবে।
– ভালো করসো। চলে আসছো। বিয়ের অবশ্য এখনো এক সপ্তাহ বাকি। আরো কেনাকাটাও বাকি। তুমি আসছো, এবার জমিয়ে বাকি কেনাকাটা করা যাবে।
হঠাৎ মুন আইসা বলল, তোরও তো জন্মদিন আসতেসে পরশু দিন। শুনে আমার মুখ কালো হইয়া গেল। সানজিদা আপু বলল, এখন কথাটা না বললেই নয়? মুন বলল, না। কারণ কালকে আমরা সবাই একটা পিকনিকে যাবো। রেদোয়ান ঠিক করেছে, কালকে ওর পরিবার আর আমার পরিবার ওদের বাংলোতে বেড়াতে যাবো।
– সেটা তো অনেক দূরে। কক্সবাজার। এতো দূর কে যাবে। তোরা যা। আমি যাবো না।
মুন আমারে জড়াই ধইরা কইল, তোমারে তো যেতেই হবে বোনটি। তুমি না গেলে তো মজাই হবে না।
– তোর মতলব কি বল তো।
– আমার মতলব হলো বিয়ের আগে তোমাদের সবার সাথে ঘুরতে যাবো।
– আমি এখন যাবো না।
– তো কি বিয়ের পর আমার হানিমুনে তোকে নিয়ে যাবো?
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম মিষ্টি খালা বলল, আরে বাবা, কি শুরু করলি। ছোঁয়া মা, ঘুরে আয়। মন ভালো থাকবে। এই সময় তো এমনিতেও মন খারাপ করে কাটাস।
– কিন্তু …
– আম্মার অর্ডার পেয়ে গেছো। এবার চলো, কাপড় গোছাবে।
মুন আমারে ঠেলতে ঠেলতে নিয়া গেল রুমে। আমি বড় কইরা নিঃশ্বাস ফেইলা কইলাম, পারলাম না মাইয়াটারে সোজা করতে। আমারেই জ্বালাই ফেলল।
.
.
.
.
রেদোয়ান একটা মাইক্রো ভাড়া করল। ভেবেছিল ওদের বাড়ির গাড়ি করে যাবে কিন্তু পরে সেটা নাকোচ কইরা দিল। রেদোয়ানদের চট্টগ্রামে নিজেদের বাড়ি। ওর বাবা ব্যবসায়ী। একমাত্র ছেলে রেদোয়ান। তাই পছন্দের কথা বলতেই বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে ওর বাবা মা।
আমরা সবাই রেডি হয়ে দশটার মধ্যে রেদোয়ানের বাড়ি পৌঁছাই গেলাম। আমরা মোট দশজন। একটা মাইক্রোতেই সবাই এঁটে গেলাম। সেখান থেকে রওনা দিলাম সাড়ে এগারটার সময়। মাঝে দেড়টার সময় একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করলাম। তারপর আবার রওনা দিলাম। রেদোয়ানের বাংলোয় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সোয়া চারটা বাইজা গেল। আমি গাড়ি থেকে নেমে আশপাশ তাকাইলাম। জায়গাটা সুন্দর। সবাই নামতেই রেদোয়ান সবাইকে রুম দেখাই দিল কে কোন রুমে থাকবে। রেদোয়ান আর আমাদের রুম পাশাপাশি। আহা! কি প্রেম!!! আমি কোন এক পাগলের প্রেমে পইড়া পুরা জীবনটারে ত্যানা ত্যানা কইরা ফেললাম। না হলে এতদিনে বিয়া সাদি কইরা দশ বাচ্চার মা হইতাম।
ডিনার কইরা সবেমাত্র বিছানায় পিঠ লাগাইলাম। এমন সময় মুন আইসা বলল, এখন শোয়াশুই নাই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন? সে বলল, সাগর পাড়ে আগুন জ্বালাবে। সবাই ওখানে যাবে। আমি আরো আরাম কইরা শুইয়া কইলাম, তোরা যা, আমি একটু ঘুমাই। মুন আমারে টাইনা উঠাইলো। বলল, সামনে বহুত ঘুমাইতে পারবি। উঠ। দেখি রেডি হইতে হবে। আমি আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে কইলাম, এর জন্য আবার রেডি কিসের?
– শাড়ি পরমু।
– তো পর।
– তুইও পরবি।
– আমার কি বিয়া লাগসে? আমি পরমু ক্যান?
– আমার বিয়া লাগসে তাই। এবার ওঠ।
ও ব্যাগ থেকে একটা শাড়ি, একগাছি কাচের চুড়ি আর একজোড়া নুপুর বাইর করল। আমি অবাক হয়ে বললাম, এগুলা এখানে আনছিস ক্যান? মুন নিজের শাড়ি বের করতে করতে বলল, আজকে এই শাড়িটা পরবি। এটাতে তোকে মানায়। ঐ লাভার ভ্যাম্পায়ারের দেওয়া নীল শাড়িটা। সুন্দর দেইখা যত্ন কইরা তুইলা রাখছিলাম। শাকচুন্নিটা কোন ফাঁকে নিয়া আসছে। আমি শাড়িটা নিজের কোলে নিয়া কইলাম, পরমু না। মুন আমারে মানসিকভাবে ব্ল্যাকমেইল কইরা বলল, আমি তো কয়দিন পরে চলেই যাবো। একটা অনুরোধ রাখতে পারবি না? ছয় বছর আগেও তো পরছিলি। এখন না হয় আবার পরবি। আমি ঘাড়ে হাত দিলাম। এখনও দাগটা আছে। হঠাৎ কইলাম, ওয়েট এ মিনিট। তুই কেমনে জানলি যে আমি ছয় বছর আগে শাড়িটা পরসি। কে বলসে তোরে? মুন আমতা আমতা করে বলল, এটা আবার জানার কি আছে। কেউ তোকে জন্মদিনের গিফট দিসে আর তুই পরবি না। তা হয়? তাই বললাম। আয় আজ তোকে আমি নিজে সাজাবো।
মেয়ের মতিগতি বুঝতে পারতেসি না। থাক, বিয়ার আগে একটা আবদার করসে যখন করুক। ও আমাকে সুন্দর কইরা সাজাই দিল। সাজ শেষে আমারে বলল, তোরে তো পুতুলের মতো লাগছে। দাঁড়া কাজলের টিপ দিয়ে দেই। নজর লেগে যাবে। আমি হাসলাম। ও বলল, এই হাসিস না। হাসিস না।
– কেন?
– মে মার যাউংগি তেরি খুব সুরুত মুসকান দেখকার।
– এমন পিডা দিমু যে এখান থেকে সাগরে যাই পড়বি। যা, রেডি হ।
মুন হেসে তৈরী হতে চইলা গেল। আমি দেখতেসি নিজেকে আয়নায়। এমন কইরা শুধু একজনের জন্যই সাজার ইচ্ছা ছিল এক সময়। আজ সে বিদেশে নিজের ভালোবাসারে নিয়া সুখের সাগরে ডুবে আছে।
.
.
.
.
সব রেডি। কাঠ যোগাড় করে রাখা হইসে। সবাই সাতটার মধ্যেই সাগর পাড়ে পৌঁছাই গেল। আমি আর মুন সবার পরে গেলাম। এমনিতেই আমরা সব সময় লেট করি। আজকেও করলাম। মুন গিয়া রেদোয়ানের সাথে বসল। আমি এক পাশে সইরা বসলাম। তখন থেকে দুইজনে কি নিয়া ফিসফিস করতেসে। ভাবলাম ওদের প্রেম আলাপ শুইনা আমার কি কাম। রেদোয়ানের বাবা মা মিষ্টি খালা আর সানজিদা আপুর সাথে কথা বলতেসে। সারা আর সায়েম নিজেদের মতো করে খেলতেসে। দুইটায় বালু ঘাটাঘাটি করতেসে। ভাবলাম একবার ধমক দিমু কিনা পরে ভাবলাম থাক। প্রথম আসছে একটু বালু পেটে পড়ুক স্মৃতি হিসাবে। আমি একলা বইসা আছি। মাঝেমধ্যে বাতাস লাগতেসে গায়ে। আমার খোলা চুলগুলা বাতাসে এলোমেলো হইয়া আমার মুখে চোখে ডুকতেসে। কি বিরক্তি!!! তার উপর ওরা যেভাবে গল্প শুরু করসে। পরিবেশটা শান্ত থাকলে ভালো লাগতো। কিন্তু এখন ভালো লাগতেসে না। আমি যে একটা মানুষ আছি তাও এদের খেয়াল নাই। ইচ্ছা করতেসে চইলা যাই। উঠেই যাইতেছিলাম। এমন সময় রেদোয়ান বলল, এটেনশান প্লিজ। আজকে আমাদের সাথে আমার এক বিশেষ বন্ধু যোগ দিতে এসেছে। লেট মি ইন্ট্রোডিউস……
চলবে…