#ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [১৫]
লেখনিতে : তাসলিমা নাসরিন
— আপনি নেওয়াজ শেখ ওরফে আরাভ চৌধুরী। ”
পেছন থেকে অপ্রত্যাশিত কথাটি শুনে থমকে দাড়ালো সিয়ার বাবা। বর্তমানে সে তার সিক্রেট রুমে আছে। রুমটা চারিদিকটায় থাই দিয়ে আবদ্ধ। আসবাবপত্র কিছুই নেই। তবে তারই সামনে বসা তিনজন লোক।
তার এই রুমে কেউ যে আসবে সে ক্ষমতা কারোর নেই। তাহলে এই কথাটি কীভাবে শুনলো সে নাকি তার মনের ভুল ?
ফ্লাশব্যাক—-🍁
অতিরিক্ত চিন্তায় তার মাথা টাই বাদ হয়ে গিয়েছে। তখনি তিনজনের থেকে অয়না চৌধূরী বলে উঠেন-
— যাচ্ছিস কোথায় জানোয়ার ? ”
নিজের স্বামী কে এইভাবে বলতে দেখে খানিকটা অবাক হয় তার সাথেই আটকে থাকা দু’জন। তারা আর কেউ নন। মিস্টার আরাভ চৌধুরী’র শশুড় শাশুড়ী। আর নিজের মেয়ে জামাইয়ের এইসব ব্যবহারে তারা খানিকটা বিস্মিত।
অয়না কে ভৎসর্না করে এগিয়ে যান লম্বা ঘোমটা বেশি মহিলার নিকটে। মহিলা কে ইশারায় ডেকে আনেন আরাভ চৌধুরী। মহিলাটিও যেনো তার ইশারার অপেক্ষায় ছিলেন। পাওয়া মাত্রই ছুটে এলেন। তখনই একটি চেয়ার টেনে অয়না চৌধূরী’র বরাবর বসেন।
মহিলাটি যখনি অয়নার কানে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি একহাত উঁচিয়ে অয়না থামতে বললেন। আর মহিলাটি-ও থেমে গেলো। মহিলাটির দিকে এক পলক তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো আরাভ চৌধুরী’র নিকট।
— কে এই মহিলা ? ”
— তা নিজের চোখেই দেখে নাও । ”
কন্ঠটি শুনে খানিকটা চেনা মনে হলো অয়না চৌধূরী’র। সে সেটাকে পাত্তা না দিয়ে পুনরায় আরাভ চৌধুরী কে বললো-
— আমার বাড়ি থেকে আমাকে উঠিয়ে এনে এইসব কি ব্যবহার করছো আরাভ ? এইসবের মানে কি ? ”
— সবুর করো ! অপেক্ষা তো শুধু তোমার মেয়ের। আসুক না সে। ”
কথাটি শেষ হতেই মহিলাটি নিজের ঘোমটা বাতাসের বেগে সরিয়ে ফেলেন। আর আচঁল টা খুব যত্ন সহকারে কোমড়ে গুঁজলেন।
বহুদিনের চিরচেনা মুখটু আকস্মিক দেখে খানিকক্ষণের জন্য অয়না চৌধূরী কিছুটা খুশি হলেও সে যে এখানে তার প্রতিপক্ষ সেটা ভেবেই মুখে কাঠিন্যতা বিরাজ করে। তিনি মৌনতা ভেংে বললেন-
— তুই ? ”
— সারপ্রাইজ বান্ধবী !”
— কিসের সারপ্রাইজ ? ”
— ওমা বুঝতে পারিসনি ? ”
— আরাভের সাথে তোর কি সম্পর্ক ? ”
অয়না চৌধূরীর কথা শুনে আরাভের দিকে খানিকটা ঝুঁকে বললেন –
— কে আবার ! তোর যা হয় , আমারও তা ! ”
— হোয়াট ? ”
— ইয়েস বান্ধবী ! যা শুনেছো তাই। ”
— কিন্তু তুই ? কীভাবে কি ? ”
— তোর মেয়ে আসুক তারপর নাহয় শুরু করি। নয়তো বেচারা কে আবারো শোনানোর সময় পাবো না। আরাভ তো তারপরেই মেরে ফেলবে ওদের। ”
— রেহানা ! ”
— কি রেহানা ? চুপচাপ বসতো। তোর মা-বাবার একটু খাতির যত্ন করি। যদিও আমাকে তোর চেয়ে কোনো অংশে কম দেখেননি। বুড়ো বুড়ি তো একটু তো মায়া হয়। ”
এই বলে জিভ থেকে শাহাদত আঙুল স্পর্শ করিয়ে চোখের নিম্ন ভাগে দিয়ে কান্নার ভান করলো। এতে উপস্থিত সকলের শরীরেই ঘীন ধরে গেলো। আর দু’জনের চেহারাই পৈশাচিক হাঁসি।
অয়না চৌধূরী ভাবতে লাগলেন রেহানা শেখ আর কেউ নন। স্বয়ং অয়না চৌধূরী’র বেস্টফ্রেন্ড রেহানা শেখ। অয়নার বাবা আর রেহানার বাবা একে অপরের জান ছিলো যাকে বলে জানে জিগার।
কিন্তু এক কার এক্সিডেন্ট এ ওর মা-বাবা মারা গেলে অয়নাদের বাসায় আনে রেহানা কে। রেহানা আর অয়না ছিলো সমবয়সী। তারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরছিলো। আর তখনই কার এক্সিডেন্ট। বিজনেসের সুবাধে মাঝে মধ্যে দেশের বাহিরে যেতে হয়। আর সেভাবেই রেহানার বাড়িতে উঠেছিলো একদিন আমজাদ খান মানে অয়নার বাবা। অয়নার বাবা আগ থেকে রেহানা কে চেনাতে অসুবিধা হয়নি কোনো।
রেহানা আর অয়নার বাবা হাসপাতাল থেকে ফিরে এসেছে। তাই রেহানার শরীরে বেন্ডেজ। আস্তে আস্তে সবটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। নিজের একটা মেয়ের জায়গা দেন রেহানা কে। কিন্তু যখনি ওর ১৯ বছর হলো তখনি হুট করে গায়েব হয়ে গেলো।
আমজাদ খান খোঁজ নিলেও পাননি। আর তখনি তিনি বুঝতে পারেন যে যিনি নিজ ইচ্ছায় হারিয়ে যায় তারা কখনো ফেরার অপেক্ষায় থাকেনা। কিন্তু রেহানার বাড়ি ছাড়ার কারন কি। কিসের অভাব ছিলো ওর।
মাঝে মধ্যে অয়নার মা ও রেহানার জন্য চোখের জল ফেলেছে। কথায় বলে না ?
—“ পালা জিনিসের মায়া বেশি ! ”
ঠিক সেরকমটাই। কিন্তু আজ রেহানা তাদেরই শত্রু আরাভের সাথে কি করছে। আর আরাভের সাথে সম্পর্ক কি ওর স্বামী স্ত্রীর ? এসব ভেবেই দু’চোখ বুঁজে ফেলে সে। কতো অত্যাচার আর নিপীড়ন সহ্য করবে সে। প্রথমে তো নিজের স্বামীর মৃত্যু। আর এখন আজ আবারো ভয়ানক সত্যির মুখোমুখি হতে হবে তাকে।
বর্তমান—🍁
আর তখনি আরাভ বলে উঠে-
— রেনু তুমি এখানটায় থাকো। আমি একটু আসছি। আরাভ ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে কল করবে একটু পর। ”
রেহানা কে আদুরে গলায় রেনু বলতে দেখে উপস্থিত সবাই অবাক হয় শুধু দু’জন ছাড়া। আর তা দেখে অয়না চৌধূরী’র চোখ থেকে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। আর তা দেখে রেহানা বলে উঠে-
— দেখছিস কতোটা কষ্ট তোকে দিতে পারি আমি ? তোকে কষ্ট দিয়ে তিলে তিলে মেরে ফেলার জন্যই আজ এখানে এনেছি। আর এখান থেকে বেরুতে পারবি না। কোনোদিন-ই না। ”
— কোনো কষ্ট হচ্ছেনা আমার। ”
— তাহলে চোখে জল যে ? ”
— দূর্বলতা প্রকাশ করছি ভাবছিস ? নাকি এই জানোয়ারের সাথে সংসার করিনি তাই ! ”
— তো ?
— না পারলাম স্বামীর সংসার করতে, না পারলাম একজন মা হতে। চিরকাল অন্যের অত্যাচারে শিকার-ই হলাম। তাই চোখে জল । ”
— আহারে বেচারি। ওপারে গিয়ে পরমপ্রিয় আরাভের সাথে দেখা করে নিও ! ওকে ? ”
রেহানার কথা শেষ হতেই শুরুর দিকের উক্তিটি শোনা যায়। সকলেই শুনে অভিভূত হলেও অয়না চৌধূরী’র মুখে ছিলো এক তৃপ্তির হাসি। মুক্তি পাওয়ার আনন্দ।
***
— ভাই এই ল্যাপটপে বোমের সাউন্ড কে প্লে করেছিলো ? আমরা তো ভয়-ই পেয়েছিলাম। বাবারে বাবা ! ”
তখনি একটা পুঁচকো ছেলে গার্ডদের সামনে এসে বলে-
— আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বলবো! কাউকে বলবে না তো ?”
— না স্যার। বলুন আপনি ! ”
— আচ্ছা প্রমিস করো। ”
— প্রমিস ।
— এ.সি জিজ্ঞাসা করলেও কিন্তু বলবে না । ওকে ? ”
— আচ্ছা। এতো ভয় পেয়ো না তো। নিশ্চিত হয়ে বলে ফেলো। আমাদের আবার কাজ আছে। ”
— আসলে ওটা আমিই প্লে করেছিলাম। হুট করে এটা আমার সামনে আসে। আমি তো আবার এইসব দেখতে ভালোবাসি। তাই ক্লিক করতেই আচমকা আওয়াজ আসে। ল্যাপটপের সাথে মিউজিক সিস্টেম অ্যাড ছিলো সেটা দেখিইনি। ”
এই বলে ছেলে টা চুপ করে গেলো। আর তা দেখে গার্ড দুটো হেসে উঠলো। দু’জনের হাঁসি দেখে ছেলেটির মুখটা আরো চুপসে গেলো। তা দেখে একজন গার্ড বলে উঠে-
— এই কাজ যে তোমার সেটা আগেই তোমার খালামনি মানে এ.সি জেনেছে। তাই কিছু বলেনি। কিন্তু তোমার মা এখনো খবর টা জানে নি। জানলে,,,!
— প্লিজ আমি তো কিছু বুঝে করিনি। মাম্মা কে বলিয়ে শাস্তি মওকুফ করে দিও ? ”
১০ বছর বয়সী ছেলেটার এমন আকুতি দেখে খানিক হাঁসে দু’জন। কথায় আছে না ?
“ গাছের গোড়া যেমন , তার ফলনও তেমন ! ”
তারা এখানে জব করলেও তাদের এখানে নিচু চোখে দেখা হয়না। ভুল হলে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেয় আর এতেই সবার মন জয় করে নিয়েছে খানিক মানুষ। তাদের ভালোর জন্যই তো এরা প্রাণপণ কাজ করে।
আল্লাহর কাছে তারা এই পরিবারের প্রতি দোয়া করে আল্লাহর নিকট। যেনো এই রহস্য সমাধান হয়েন যায়। অন্য এক গার্ড বলে উঠে-
— স্যার চলুন আপনাকে খাবার দেবো। এ.সি র আদেশ অমান্য গেলে গর্দান যাবে। প্লিজ চলুন। ”
— এই তখন থেকে কি শুরু করেছো তোমরা ?
একটু আগেই যে ছেলে মিনতি করছিলো তাদের কাছে সে ছেলেটাই নাকি আবার রাগ দেখাচ্ছে। তারা ভয় পেয়ে যায় আবার বলে উঠে-
— কি হয়েছে স্যার ? ভুল হয়েছে কি আমাদের। ”
— উফফ!! তোমরা কি তখন থেকে স্যার স্যার করছো ? আমি কি ছোট ! আর আমার নাম আবির। বুঝছো ? আর তখন থেকে আপনি তুমি গুলিয়ে কথা বলছো দু’জনেই। ”
— স্যার, না মানে আপনি মানে তুমি তো আমাদের এ.সি ভাগ্নি। ”
— তো হয়েছে কি ? এ.সি না তো। আর আমাকে আরেকবার থেকে ওইরকম করে ডাকলে তোমাদের চাকরী খেয়ে ফেলবো। ওকে ? ”
— ওকে ওকে ! ”
— এবার খাবার আনো তোমাদের আর আমার। ”
— আম,,,!”
— কোনো কথা না। যা বলেছি তাই। আর ইউ নো ওয়াট, এ.সি আমার কাছে ভেজা বেড়াল। যা বলি তাই করে। তাই নো টক, অনলি ওয়ার্ক।
(চলবে)
রিচেইক করিনি। বানানে ভুল হতে পারে।