#ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [৭]
লেখনিতে : তাসলিমা নাসরিন
ভোরের আলো ফোটার পুর্ব মূহুর্তে-ই পবিত্র কার্যের সমাপ্তি ঘটে। বড্ড ক্লান্ত ছিলাম,কিন্তু সেসব পরোয়া করেনি মিস্টার ধূসর। ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন আমাকে। দু’হাত দিয়ে আমার কাঁধ ধরে উঠিয়ে বলতে লাগলেন-
— এবার ? কুমারিত্বের অহংকার কোথায় পাবি তুই ? ”
— কেনো ? ”
— আজ তো সব শেষ করে দিলাম !”
তার কথা শুনে তাচ্ছিল্য হেসে কাঁধ থেকে তার হাত সরিয়ে খানিকটা দূরে গিয়ে এলোমেলো চুল গুলো হাতখোঁপা করে পুনরায় বললাম –
— পরপুরুষ তো সেটা নেয় নি কিংবা পরপুরুষের ছোঁয়া যে শরীরে পরে নি এই অনেক। আর এটা একদিন না একদিন তো হওয়ার-ই ছিলো! ”
— কি বোঝাতে চাইছিস ? ”
— এটাই যে একটা নারীর কুমারিত্ব যেখানে ভাংার কথা সেখানেই ভেংেছে। অবৈধ কিছুতে ভাংেনি। ”
— কাল কি বলেছিলাম ভুলে গিয়েছিস ? ”
— না ! ”
— হয়তো বা গিয়েছিস ! তাই আবারো মনে করিয়ে দি-ই ? ”
— সেটার আর দরকার হবেনা মিস্টার ধূসর চৌধুরী। ”
আমার কথা শুনে খানিকক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকালেন তারপর কাবার্ডের দিকে এগিয়ে গেলেন আর পুনরায় বললাম-
— আমি আপনার বিয়ে করা রক্ষিতা এটাই মনে করে থাকবো আর হ্যাঁ দয়া করে আমার উপর আপনার হুকুম জাহির করবেন না। আর পাঁচটা স্বামী-স্ত্রী’র মতো শারিরীক সম্পর্ক স্থাপন করেছি শুধু এই পর্যন্ত-ই থাকুক। আপনার প্রাপ্য আমি আপনাকে দিয়েছি। ”
— তোর গুন কীর্তন করা শেষ হলে গোসল সেরে আয়। নিয়ম-কানুন জানিস না নাকি ? ”
তার কথা শুনে খানিক চুপ করে রইলাম । বলে উঠলাম-
— কেনো এইরকম করছেন আপনি আমার সাথে ? কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার ? কেনো বিয়ে নামক পবিত্র জিনিসে জড়িয়ে আবার কলংকের ঘা টা আমার দিকে তাক করছেন ? ”
বিরক্তিতে আমাকে কিছু বলতে যাবে তখনি টেবিলে থাকা ফোনটা জ্বলজ্বল করে উঠলো আর তা দেখে তিনি তৃপ্তির হাঁসি হাসলেন। যা আমার বুকে তীরের মতো বিধলো। কারন তিনি সচরাচর এইরকম করে হাঁসেন না।
পরক্ষনেই তার প্রিয়সীর কথা ভেবেই উদাস হয়ে রইলাম। কানে শুধু একটা কথা-ই আসলো –
— এসে তোমাকে সবটা বলছি #মনোহারিণী । এখন গোসলে গেলাম। ”
তার কথা শুনে চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু পড়তে নিলেই দ্রুত মুছে নিলাম তা, কারন আমার দূর্বলতা আমি কাউকে বুঝতে দেবো না। আর এখানে যতদিন আছি ততোদিনে আমার কাজটা আমাকে করতেই হবে। বাবার কথা অনুযায়ী এখানেই আমি আমার জন্ম রহস্য আর আপনজন নামক বিশ্বাসঘাতকদের পাবো।
এইসব ভেবেই বিদ্ধস্থ হয়ে বসে ছিলাম। কি থেকে কি হয়ে ভেলো আমার। মাথা টা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। প্রথমে আমার জন্ম রহস্য। তারপর এই ধূসর নামক এক অদ্ভুত মানুষ।
রুমের চারিপাশে চোখ বুলালাম। বেশ দামী দামী জিনিসে ঘরটা সাজানো হয়েছে। বিশাল বড় একটা বেড। তারপাশে বড় মিরর। দেয়ালের সাথে লাগানো লাইব্রেরি তাক। টি টেবিল আর সেইসাথে একটা বড এংেলের সোফা। তার বিপরীতে ওয়াশরুম।
এটা আমার বাড়ির তুলনায় যে ২ গুন সে আমি বেশ বুঝতে পেরেছি। নিজেদের ওতো সামর্থ না থাকলেও এ জিনিসগুলির সাথে আমি পরিচিত। কারন এর আগে আমি আমার ছাত্রীদের বাসায়-ও দেখেছি।
আমার কল্পনার মাঝেই ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ হলো। ঘুরে তাকালাম সেদিকে, আজকে ধূসর নামক স্বামীটা ধূসর রঙের -ই একটা টিশার্ট আর কালো ট্রাউজারে নিজেকে আবৃত করেছে। ধ্যান ভাংলো ধূসর স্যারের ডাকে –
— শোনো তোমাকে যে আমি আমার রুমে ঢুকে থাকতে দিয়েছি এই অনেক, এর বাড়তি কিছু করতে আসবে না। ”
তার কন্ঠে তুমিময় ডাক শুনে কিছু বললাম না আমিও চুপ করে রইলাম। এগিয়ে গিয়ে ট্রলি থেকে একটা শাড়ি হাতে নিলাম, শাড়ির সাথে ম্যাচিং জিনিস পেলাম সেটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। জিনিসগুলো যে দামী সেটা বোঝায় যাচ্ছে।
ওয়াশরুমে ঢুকে পরিচিত হলাম বাথটাবের সাথে। হুট করে এমন বিলাসবহুল জীবন যাপন করাটা আমার সাঝে না তাই তার পাশে বিকল্প কিছু খুঁজতে লাগলাম এবং পেয়েও গেলাম। সেটা হচ্ছে বাথটাবে গোসল না করার ইচ্ছে না হলে নর্মাললি ভাবে গোসল করার জায়গা। ওয়াশরুমটা বেশ বড়।
গোসল সেরে কাপড় পালটিয়ে বালতিতে কাপড় রাখলাম আর বের হবো তখনি-ই দেখলাম ধূসর স্যারের পূর্বের পরিহিত জামা। তাই ওতো না ভেবে ধুঁয়ে নিলাম। শত হোক এগুলি আমার দায়িত্ব। তিনি আমার সাথে আগে কীরূপ ব্যবহার করেছেন সেটা ধরে থাকলে চলবে না তাই যা করার আমাকেই করতে হবে।
একবার যেহেতু এই মানুষ আমার হয়েছে তাই একে ছাড়ছিনা। আমাকে স্ট্রং হতে হবে আরো। আর একদিনে ভালো-ই বুঝতে পারছি যে ধূসর স্যার ইচ্ছে করেই আমার সাথে রুড ব্যবহার করছেন। তবে এর কারন কি সেটাই বুঝতে পারছিনা।
আর ভাবনায় না ডুবে বেরিয়ে আসলাম। আয়নায় দাড়ালাম, নিজেকে পরখ করে দেখতে লাগলাম। ঠোঁট টা হালকা ব্যাথা করছে,পুরো শরীরে ব্যাথা,ঘাড়ে আর বিভিন্ন জায়গায় কিছু হালকা ক্ষত।
ঘাড়ের ক্ষতটায় হাত বুলালাম। আর তখনি ধূসর স্যার বলে উঠলেন-
— এইরকম কিছু দাগ এবার থেকে হবে, অভ্যেস করে নাও। রক্ষিতা বলে কথা ! ”
প্রথম দু’লাইন মন্ত্রমুগ্ধের মতো লাগলেও শেষের কথাটা শুনে চোখ পানিতে ভরে উঠলো। তার দিকে না তাকিয়ে চুল মুছতে ব্যস্ত হয়ে উঠলাম। আর তখনি আবারো ফোন বেজে উঠলো, তিনি ফোন কানে নিয়ে বলতে লাগলেন-
— রিলাক্স মাই ডেয়ার। বিয়ে করেছি শুধু, সংসার তো করছি না। আর আমার প্রাপ্য টা-ই আমি নিয়েছি আর কিছু না। ”
— ….”
— আহা!!এতো চিন্তা কীসের। ও শুধু আমার রক্ষিতা। তোমার জায়গা নেওয়ার বিন্দুমাত্র যোগ্যতা আর সুযোগ কারোর হয়নি। সিয়া নামক মেয়ে তে একেনবারেই না। ধূসরের ভালোনাসা পাওয়া এতো সহজ না। ধূসর তার #মনোহারিণী কে ভালোবাসে। যে ছোট থেকেই এই ধূসরের ধূসররাংা ভালোবাসা নিজের নামে করেছে। এই ধূসর যার মধ্যে মন হারিয়েছে। সে তো শুধু তাকেই ভালোবাসে। ”
শুধু এইটুকুই শোনার ধৈর্য হলো আমার। আর শোনলাম না। নিজেকে যতো সহজ করতে চাচ্ছি, ততো টা করতে পারছিনা। বারবার নিজের চিন্তাভাবনা আমাকে পালটে ফেলতে হচ্ছে। নাহ আর নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়া যাবেনা।
বাবার থেকেই সবটা জানতে হবে। শরীরটা বেশ খারাপ লাগলো। এই ঘরের কোথায় কি তাও জানি না, নাহলে একটা পেইন কিলার খেয়ে নিতাম কিন্তু তা আর হলো না। এইসব ভাবতে ভাবতেই চোখ লেগে গেলো।
—-🍁
ঘড়িতে তখন ৭:৩৬ বাজে। উঠে আশেপাশে চোখ বুলালাম, ধূসর স্যারের অস্তিত্ব পেলাম না। উঠে দেখলাম দরজা ভিড়িয়ে রাখা তারমানে তিনি বেড়িয়েছেন। আর তখনি আসলো আমার ননদ পুষ্প আর পূর্ণতা। কিন্তু তাদের মধ্যে কে কোনজন তা জানি না। তারা এসে আমাকে বললো-
— বাহ ! ভাবি আজকে তোমাকে পুরো চকলেট চকলেট লাগছে। ”
তাদের কথায় খানিক লজ্জা পেলাম কারন অপ্রত্যাশিত প্রশংসা আসা করিনি। তাই পড়নে শাড়ি টেনে মাথায় কাপড় দিয়ে তাদের সাথে নিচে নামলাম এক তো নতুন বউ আরেক শরীরের ক্ষত।
নিচে তাকিয়ে দেখি ডায়নিং এ ধূসর স্যার আর সেদিন আমাদের বাড়িতে রাতের খাবার খাওয়া লোকটি, তারমানে তিনিই আমার শশুড় আর এটা ওটা দিয়ে টেবিল সাজাচ্ছেন আমার শাশুড়ি।
আমি সবার সাথে কুশল বিনিময় করে এটা ওটা এগিয়ে দিতে লাগলাম। শাশুড়ী প্রথমে বিরক্ত হলেও আমার সাথে পেরে উঠলেন না, অগত্যা কাজ করতে দিলেন। কিন্তু খাবার টেবিল সাজানোর পর পর-ই তিনি শাশুড়ী কে বলে উঠে গেলেন যে আমাকে দিয়ে খাবার পাঠাতে।
শাশুড়ী -ও কিছু বললেন না। খানিকক্ষণ পর খাবার সাজিয়ে উঠে গেলাম ধূসর স্যারের খাবার নিয়ে উপরে। খাবার রুমে রেখে ধূসর স্যার কে না পেয়ে দরজা থেকে চার কদম পেরোতে-ই পাশের রুম থেকে কেউ আমাকে টেনে ধরলো।
(চলবে)