গো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [৬] লেখনিতে : তাসলিমা নাসরিন

0
487

( মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত )
#ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [৬]
লেখনিতে : তাসলিমা নাসরিন

বর্তমান—-🍁

অতীত মনে করতেই ঢুকরে কেঁদে উঠলাম । চোখ মুছে উঠে গিয়ে ব্যালকনিতে গেলাম। আজ শুক্লাদ্বাদশীর রাত। আকাশে তারার মেলা,হালকা বাতাস বইছে। আর সেই বাতাসে খেলে যাচ্ছে দেয়ালের সবুজ সাদা মিশ্রণের পর্দাগুলো। পরিবেশ টা বড্ড নজরকাড়া।

এই বাড়িটা দু’তালা বিশিষ্ট। দু’তালার একটা ঘরেই আমার জায়গা হয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই এ বাড়ির মেয়েরা এসে আমার স্বামী কে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে গেলো, যা আমার কানে একটু-ও যায়নি। যাবে কি করে? এখানে দেখেছিলাম ধূসর স্যারের জমজ বোন পুষ্প আর পূর্ণতা কে। আমি ধূসর স্যারের ব্যাপারে প্রায় সব খোঁজখবর না রাখলেও তার পরিবার সম্পর্কে জানতাম।

পরিবারের একমাত্র ছেলে ধূসর চৌধুরী। আর তার দুই জময বোন পুষ্প চৌধুরী আর পূর্ণতা চৌধুরী। জময দু’বোন দেশে থাকতো না! বাবা-মায়ের সাথে বাহিরের কোনো এক দেশে থাকতো। সে যাই-হোক তারা আমাকে না চিনলেও আমি তাদের চিনি।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে উপস্থিত সকলেই আমাকে ভাবি ডাকছিল। তবে কি আমার বিয়েটা ধূসর স্যারের সাথে হয়েছে? কিন্তু এ কি করে সম্ভব? তার নাম তো এরকম না!

বিছানায় বসে এসব-ই ভাবছিলাম আর তখনই দরজা লাগানো শব্দ কানে আসলো। ঘোমটা খুলে উপর দিকে তাকানোর আগেই স্বামী নামক “অভ্রনীল আহমেদ” সামনে এগিয়ে আসে। তাই চটপট করে তাকে সালাম করে ফেললাম। অন্যরা সালাম করলে স্বামীরা নাকি বলে যে-

— তোমার জায়গা আমার পায়ে না বরং বুকে ! ”

কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এইরকম কিছুই হলো না। আর অমতের বিয়েতে নিজের ভাবনা মনে করতেই নিজেকে ধিক্কার জানালাম। আর তখনই দেখলাম সুঠাম দেহের অধিকারী “অভ্রনীল আহমেদ আমার সামনে দাঁড়িয়ে। তখনো আমি তার দিকে তাকাতে পারিনি কারন ঘরটা পুরো অন্ধকার ছিলো,যদিও আলো ছিলো তবে সেটা ড্রিম লাইটের আলো ছিলো। বড় এক ঘোমটাপরা থাকার কারনস্বরুপ স্বামী নামক পুরুষ টা কে দেখার সাধ্য আমার হলো না।

তবে হুট করে তিনি এসে আমার হাত ধরে বললেন –

— চলো !”

চেনা পরিচিত কন্ঠ পেয়ে দ্রুত তাকালাম কন্ঠধারী ব্যক্তির দিকে। একরাশ বিস্ময় এসে জড়ো হলো আমার মনে। এ যে স্বয়ং ধূসর স্যার আমার সামনে।

খানিক সময় থমকে গেলাম। একি সত্যি নাকি আমার দৃষ্টিভ্রম! কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এনিই যদি অভ্রনীল হয় তাহলে আমার বান্ধবীরা কেনো চিনলো না আর যদি চিনেও থাকে তবে আমাকে কেনো বললো না ? অবিশ্বাস্য চাহনি দেখে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ধূসর স্যার ঠোঁট কামড়ে হাসলেন। যেনো তিনি আমার এমন চাহনি দেখে বড্ড খুশি হয়েছেন।

নিজের ভেতরে থাকা অদম্য কৌতূহলের বশে জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম –

— ধূসর স্যার ? আপনি ! ”

— কেনো ? এতো অবাকের কি আছে?!”

— আপনি নিশ্চয়ই আমার কল্পনায় এসেছেন ! ”

— ও বাবা, আমি আবার তোমার কল্পনা আসি? বাহ!! আমার জন্য তুমি ভালোই পাগল, অবশেষে স্বজ্ঞানে স্বীকার তো করলে। ”

একই কন্ঠ একই বলার ধাঁচ,দেখে আমি খানিকক্ষণ চুপ হয়ে গেলাম আর ভাবতে লাগলাম সত্যি কি এনি ধূসর ? ভাবনা শেষ করে কিছু একটা ভাবতেই চমকে তাকে প্রশ্ন ছুড়লাম।

— আপনার নাম তো ” অভ্রনীল আহমেদ ধূসর ” রাইট ? ধূসর নামটা আপনার পাপা প্রথমে দেওয়াতে এই নামেই সবটা ডাকে। তাহলে ধূসর থেকে ধূসর চৌধুরী কিভাবে হলেন ,? আমার না-হয় অতি শোকে তখন এতোসব মাথায় ছিলো না আর আপনি ?”

— বাহ ! আমাকে হারাচ্ছো বলে কি শোকে চলে গিয়েছিলে ? মিস ! ”

— যা বলছি উত্তর দিন ! ”

— এতো তাড়া কিসের মিস ? ধীরে ধীরে শুনুন ! ”

— বলুন ! ”

— আহমেদ আমার মায়ের পদবী আর চৌধুরী আমার বাবা পদবি। দু’টোই আমার নামের সাথে রাখা হয়েছে। অভ্রনীল আহমেদ বিদেশের আই কার্ড আর ধূসর চৌধুরী হলো এই দেশের আইকার্ড। ”

— এতো নাম দিয়ে কি করেন আপনি ? ”

— সময় হলেই জানতে পারবে মিস! আর হ্যাঁ বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের। ”

— কি বোঝাতে চাইছেন আপনি ?”

— আমার উপর তুমি কোনো অধিকার দেখাতে পারবেনা কিন্তু তোমার উপর আমার অধিকার থাকবে সম্পূর্ণ । ”

— হোয়াট ?

মুহূর্তেই মনে পড়ে গেলো দু’দিনের করা অপমান। তেঁতে উঠে বলতে লাগলাম-

— লজ্জা লাগে না আপনার ? মানুষের পোশাক পরিচ্ছদ দেখে তাদের নির্বাচন করেন। সেদিন ভালোবাসি বলেছিলাম বলে অপমান করেছিলেন, আর তারপর ভার্সিটির সকলকে জানিয়েছেন এই বিষয় টা, লজ্জায় আমি কারো সামনে দড়াতে পারিনা। তারপর আমাকে থ্রেট দিলেন। আচ্ছা আপনার সাথে তো আমার যায় না তাহলে কেনো বিয়ে করেছেন আমায়? আমি আপনার নখ সমতূল্য তো না, তাহলে কেনো এইরকম টা করছেন ? প্রথমে না জানিয়ে আমাকে বিয়ে করে আমাকে ঠকালেন, আমার বাবা -মাকেও ঠকালেন। আর এখন বাসরঘরে এসে নতুন নাটক জুড়ে দিলেন। সামনাসামনি কিছু করার সাহস আপনার নেই। এতোক্ষণ দু’দিনের করা অপমান ভুলে ছিলাম তাই স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছিলাম, আর এখন আপনার এইসব কাজের কথা মাথায় আনতেও ঘেন্না হচ্ছে ! ছিঃ কাপুরুষ কোথাকার ! নিম্নতম লজ্জা থাকা দরকার আপনার। ”

কথা টা বলে শেষ করার সাথে সাথে গালে সজোড়ে থাপ্পড় এসে পড়লো। মনে হলো যেনো আমার বাম গালটা ঝলসে গিয়েছে আগুনের তাপে। ঠিক সেইরকম থাপ্পড় যেমনটা আমি ভালোবাসি বলাতে প্রথমবার শরীরে কোনো পুরুষের স্পর্শ পেলাম তাও সেটা আঘাত হিসেবে, আজ-ও ব্যতিক্রম নাহ। গালে হাত ধরে তার দিকে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম-

— আজকের দিনে আপনি আমাকে থাপ্পড় দিলেন ?”

— হ্যাঁ দিলাম । তোর মতো মেয়ে এটার-ই প্রাপ্য। ”

— কি? যা শুনেছিস সেটাই! ”

এই বলে আমার হাত ধরে বললো চল তোকে রহস্যের সূচনা থেকে দেখাই তাহলেই বুঝবি কেনো তোকে বিয়ে করলাম আর কেনো সেদিন অপমান করলাম, আর তো মা-বাবা কি জানে আর কি না জানে সেটাও দেখাই চল।

রাগের মাথায় এতোটাই উত্তেজিত ছিলাম যে তার কথা উপলব্ধি না করেই হাত ধরাকে কেন্দ্র করে বললাম-

— লজ্জা করে না আপনার ? আমার হাত ধরেছেন আপনি ? আপনার ওই নোংরা হাত আমাকে যেনো স্পর্শ না করে। ”

এই বলে একটু দূরে সরে গেলাম আর সে ঝড়ের বেগে আমার দিকে ছুটে এসে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো-

— তোর সাহস তো কম নয় ! আমাকে নোংরা বলিস ? আরেহ তোর মতো কতো সিয়া আমার পাত্তা পাওয়াতে ব্যতিব্যস্ত, একটা রাত সময় কাটানো তে কতো অনুনয় বিনয় করে আর তুই কিনা সেই আমাকেই এইসব বলছিস। আজ তো তোর কুমারিত্বের অহংকার ভাংবো। ভেবেছিলাম সেইরকম কিছু করবো না কিন্তু তুই বাধ্য করালি।

আর ভেবেছিলাম তোর সমস্যা দূর করে তোকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো কিন্তু না মত বদলে ফেললাম আজকের পর থেকে তুই আমার বিয়ে করা রক্ষিতা ! বউ নয়। বউ হিবে সে যাকে আমি ভালোবাসি, আর সেখানে দু’টাকার সিয়া ওর নখের যোগ্য-ও না। ”

এই বলে আমার বিছানায় ফেলে জোর জবরদস্তি করে বৈধ চাহিদা গুলো আদায়ের চেষ্টা চালালো। কিন্তু ক্লান্ত শরীর নিয়ে ওতোটা জোর না করলেও হার মানিনি। কিন্তু একসময় তার শক্তির কাছে হেরে গিয়ে সাড়া দিলাম। আমার কষ্টগুলো তার কাছে তুচ্ছ্ব ছিলো। অবশেষে কারোর শরীর আমার সাথেও মিশে গেলো আর আমার সর্বাঙ্গে-ও কারো ছোঁয়া থেকে গেলো। ছোঁয়া গুলো ভালোবাসার না হলেও মানুষ টা যে ভালোবাসার এই ভেবেই তাকে কাছে টেনে নিলাম আরো।

(চলবে)

রি-চেইক করিনি। বানানে ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে তা গঠনমূলক মন্তব্য করে জানাবেন। অনেক্ষন সময় নিয়ে ভেবে চিন্তে প্লট টা লিখেছি তার প্লিজ কেউ নীরবে পড়ে চলে যাবেন না! “🌼💜

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here