ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [১৭] লেখনিতে : তাসলিমা নাসরিন

0
995

#ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [১৭]
লেখনিতে : তাসলিমা নাসরিন

— ধর্ষণ করেছেন না আপনি ? বলতে পারবেন ! ”

রাগে আহিয়ানের শিরার রগ ফুলে উঠেছে। সব সত্য জানার পরেও আরাভ চৌধুরী’র এই নাটক যেনো সহ্য হচ্ছেনা তার । ওইটুকু বলার পরেও তার চোখে মুখে অনুতাপের রেশ পাওয়া যায়নি । বরং বাড়ির সকলের সামনে আহিয়ানকেই পতিতার ছেলে বলছে। “পতিতা” শব্দটা শুনে আহিয়ানের আর দমে থাকা হয়নি। তাই সে উপরোক্ত উক্তিটি বলেছে ।

তখনই সিয়ার দাদুভাই বলে উঠে-

— ক্লিয়ার করে বলো তো আহিয়ান । ”

— শুনুন ! এতোকিছু বলার পরেও এই লোকটা মেয়ে ধরে ধরে ছিঃ! আমার ঘৃণা হয় এই লোকটার প্রতি। এই লোকটা আমার বাবাকে প্লান করে মেরে দেয় আর নিজে প্লাস্টিক সার্জারি করে বাবা হিসেবে আসে। এতোদিন আমি ঘুমড়ে মরতাম, শুধু বাবা-মা কে কাছে না পাওয়ার এক তীব্র যন্ত্রণায় ।

পরে সিয়া যখন সবটা ঘেটে দেখতে বলে আর তখনই দেখে এইসব জানলাম। এই প্রতারক টা আমাদের প্রত্যেক কে ঠকিয়েছে । প্রত্যেকের ইমোশন নিয়ে খেলেছে এই লোকটি। নিজের একটা সোর্স বানিয়ে আমাদের পরিবারের জানা শোনা প্রত্যেকের মাঝেই অপারেশন করিয়ে ভয়েস কন্ট্রোলার সেট করা হয়েছে।

অনেকেই বলবে যে কীভাবে কি। এর জন্য তো সময়ের প্রয়োজন। হ্যাঁ সময় প্রয়োজন। আর এই কাজটা করতে সহয়তা করেছে সিয়া মা অয়না চৌধূরী। তিনি নিরুপায় ছিলেন। ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে তাকে বাধ্য করা হয়েছিলো।

তাই তোমরা রাতে ঘুমিয়ে গেলে তারা গোপনে চৌধুরী ভিলায় ঢুকে ইঞ্জেকশন পুশ করে। আর তারপর তাদের অপারেশন করা হয় তাও সেটা হসপিটালে। মোটা অংকের টাকা দেওয়ায় তারা মুখ খুলেনি।

আবার তাদের কে বাড়ি এনে ইঞ্জেকশন পুশ করে আগের ন্যায় । তাদের অজ্ঞান হওয়ার মাঝেই বাসার প্রত্যকটা কোনায় সিসিটিভি ক্যামেরা সেট করা হয়। সেইসাথে সব ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে নেয়। আমাদের বাড়ির একটা রুমেই এইসকল কছুর সেট করা হয়। যেখানে সিয়া পা বেজে আটকে গিয়েছিলো সেই রুমটায়।

আর সেখানে পা বেজে আটকে যাওয়ার ফলেই কিন্তু বিদুৎ চলে যায় আর ওইটুকু সময়ে ধূসরের মা এসে কিছু রহস্য জানায় । সিয়া আগাম জেনেই ও বাড়িতে ঢুকেছে নিশ্চিত হওয়ার জন্য । যখন সে নিশ্চিত হলো তখনই প্লেন প্রয়োগ করে আর সেটা সফল ও হয়।

বাকীটা সবাই এক এক করে বলুক । এই বলে থামলো আহিয়ান। তখনই উপস্থিত ধূসরের মা বলতে লাগলেন-

— আমি প্রায় সবটা সত্যিই জানতাম। পুলিশ কে জানাতে চাইলেও পারতাম না। কারন পুলিশ ওদের পক্ষেই রায় দিতো। তবুও অবস্থা বেগতিক দেখে জানাতে যাচ্ছিলাম তখনই মাঝ রাস্তায় একদল লোক এসে আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে। চেঁচিয়ে উঠবো বলে আগেই আমার মুখে সালো টেপ মেরে দিয়েছিলো। ”

ধূসরের মায়ের চোখে মুখে ঘৃণা। তিনি আবারো বলতে লাগলেন-

— আমি ছটফট করছিলাম ওদের থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য। তখনই কারের ভেতরের মিররে আমার চোখ যায়। অবিশ্বাসে যেনো আমার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসে। তখনই এই আরাভ নিজের পরিচয় ছাড়া সব বলে যা একটু আগে আহিয়ান আমায় বলেছে। আর শেষে এটাও বলে দেওয়া হয় যে কোনো চালাকি যেনো না করি। বাসার সবকিছুই তার কন্ট্রোলে। আমি ভয় পেয়ে যাই যদি আমার সন্তানের কোনো ক্ষতি করে দেয়। তাই ধূসরের বাবা কে ঘটনা টা বলি আর তিনিও চুপ থাকতে বলেন। ”

ধূসরের বাবার দিকে তাকিয়ে আহিয়ান বললেন-

— মামু ! ”

— হুম । ”

— তোমার বলার আছে কিছু ? ”

— না । যা বলার তা তো ধূসরের মা-ই বললো। ”

— আচ্ছা। ”

এই বলে থামলো আহিয়ান। তিনি এগিয়ে গেলেন দুই আগুন্তুকের নিকট। গিয়ে বললেন-

— আপনারা ? ”

— হ্যাঁ বাবা। ”

— বলুন ! ”

— আমাকেও থ্রেট দেয় যে আমার মেয়ে পৃথা কে এই পৃথিবীর থেকে সরিয়ে দেবে। আমাদের পৃথা ছাড়া আর কে আছে বাবা । তাও তো আমার মেয়েটাকে ধরে নিতে চেয়েছিলো আজকে। যদি না সিয়া বাঁচাতো। ”

কাকিমনির কথা শেষ হতেই তিনি অগ্রসর হলেন সিয়ার পালিত মা-বাবার নিকট –

— আমাদের কোনো সন্তান ছিলো না। সিয়াই আমাদের একমাত্র মেয়ে। যদিও তাকে জন্ম দিইনি। তবুও সে আমার মেয়ে। আমার মেয়ের পাণ সংশয় আছে জানলাম তখন যখন ধূসরের বাবা আমাকে একটি চিঠি তে সব বিস্তারিত জানান। আমিও চুপ ছিলাম। পরে ধূসর আর সিয়ার বিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিয়ে দিই। কারন আরাভ তখন সিয়া কে মারবার প্লেন করছিলো। সিয়াকে বাঁচাতে আমি দ্যা গ্রেট ডক্টর ধূসর চৌধুরী’র সাথে আমার একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিই। ”

এইকথা শুনে আরাভ চৌধুরী বলেন-

— ধূসর না ভার্সিটি লেকচারাল ? ”

— ওরে বোকা ! ও তো শুধু নামে। তোর এই একটা ভুল-ই ছিলো যে তোরা ওর ব্যাপারে খোঁজ নিস নি। ”

এটা শুনেই আরাভের কপালে হাত। আবারও রুমটা নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেলো। তখন নিরবতা ভেংে অয়না চৌধূরী বলতে লাগলেন-

— আমার কাছে আমার স্বামী আরাভের একটি ইমেইল আসে তার মৃত্যুর পর। এখন অনেকেই অবাক হবেন এটা শুনে। কিন্তু এটাই সত্য। আরাভের এক্সিডেন্ট সময় ওর সাথে ল্যাপটপ থাকতো। হয়তো গাড়িতে বসে টাইপ করে আমাকে পাঠাতে চাচ্ছিলো । পাঠানো মাত্রই গাড়িটা বোধ হয় এক্সিডেন্ট করে আর সে ফিনিশ। আর তখন ওই ল্যাপটপ নিয়ে নেয় নেওয়াজ শেখ। অন করতেই ই-মেইল টা সেন্ড হয়ে যায়। আর আমি দেখে নেই।

কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। দুই সন্তান কে নিয়ে নিজের প্রায় পাগল পাগল লাগছিলো। সেদিনই আম জানতে পারি যে আমার গর্ভে একজন নয় দু’জনের অস্তিত্ব আছে। নিজেকে শক্ত করি। কিন্তু তখনই আরাভ সেজে আসে কেউ একজন। আমি অবাক হলাম কারন আমি শিউর সেদিন আরাভ মারা গিয়েছিলো । আর সেই আরাভ কে দেখে আমি আরো সাবধান হয়ে যায়।

আমাদের বাড়িতেও ভয়েস কন্ট্রোলার সেট করে আর আমি সেটায় সহজেই ধরা পড়ে যাই। আর তখনই আমার অনাগত সন্তানদের মেরে ফেলার থেট দেয় সিড়ি দিয়ে ফেলার মাধ্যমে। ”

এই বলে হু হু করে কাদঁতে লাগলেন অয়না চৌধূরী । সবার চোখেই জল। স্বামী মৃত্যু , অনাগত সন্তানদের জীবন ঝুঁকি। কীভাবে সামলালেন এইসব ?

চলবে — 🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here