#ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [৩]
#তাসলিমা_নাসরিন
— হাউ ডেয়ার ইউ ? ”
— মানে? ”
— আমি না করার পরেও কেনো আমার সামনে সামনে এসেছিস তুই ? লজ্জা নেই ! ”
দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বললেন তিনি। আর আমি অবাক হয়ে নির্বাক দাঁড়িয়ে রইলাম। একটা মানুষ কিভাবে কী হতে পারে ? এতটা নিকৃষ্ট কি করে ওনি ? তার ধমকে আমি কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলাম ।
— কি হলো ? এখন আবার কোন প্রেমিকের কথা ভাবছিস ? ”
— শুনুন! ”
— হ্যাঁ বল !!”
— আমি ইচ্ছে করে আপনার সামনে আসিনি । ধাক্কা লেগেছিলো একজনের সাথে আর পড়ে যেতে নিলে আবারো আপনার সাথে ধাক্কা খেলাম । ”
— ওহ বুঝেছি ! মানুষকে শরীর দেখাতে তো তোর মজা লাগে। ”
— আরেকটা বাজে কথা বললেন না আপনি। ”
— কেনো বলবো না ? ”
— কেনো বলবেন আপনি ? ”
— কেনো রে প্রপোজ করার আগে মনে ছিলো না ? ”
আমি নিশ্চুপে রইলাম। আমার বলার কিছুই নেই। কিন্তু এই মানুষ টা তো অন্যদের কাছে মহান।সবাই-ই বলে ওনার মতো মানুষ হয়না। তাহলে কি ধরে নেবো ওনি পোশাক আর আর্থিক ব্যবস্থা দেখে মানুষ বিচার করে চলাফেরা করেন।
— কি রে বল ? ”
এবার তার কথায় মুখ খুললাম। আর বললাম।
— দুঃখিত মিস্টার ধূসর চৌধুরী ওরফে আমার স্যার। প্রথমত আপনাকে প্রপোজ করাটা আমার জন্মের ভুল হয়েছে। যা আমি কোনোদিন করবার সাহস করবো না। আর প্রপোজের বিষয়ে আর কিছু বলবেন না স্যার প্লিজ। আসলে আবেগের তাড়নায় আমি প্রায় ভুলেই বসেছিলাম যে আমি কি? কোন পরিবারে জন্ম আমার ! আমার আর্থিক ব্যবস্থা কেমন ! ”
— আই সিইই! ”
— জি। ”
— তাহলে আজকে এইসব কি পোশাক পড়েছিস ? এখন দেখে তো মনে হয়না যে তুই সাধারন মেয়ে না । ”
— কেনো ? এইসব পোশাক পড়ে প্রপোজ করলে কি এক্সেপ্ট করে নিতেন ? ”
— তোর কি মনে হয় ? ”
— আমার যা-ই মনে হয় তা কাউকে শেয়ার করার প্রয়োজন মনে করছিনা। ”
এই বলে ভার্সিটি গেট পেরিয়ে ঢুকে গেলাম ভেতরে। পেছনে তাকিয়ে তাকে দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে জাগলো না আর। হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম ৯ টা বাজতে আরো ১০ মিনিট। তাই দেরি না করে চললাম সোজা ক্লাসে। ক্লাস শেষে বেরিয়ে আসলাম ক্যন্টিনে। গিয়ে দেখি আমার ফ্রেন্ডস রা বসে আছে।
তবে সবচেয়ে আজব ব্যাপার হচ্ছে তারা কেউই আজকে আমার সাথে কথা বলেনি। তাই এগিয়ে গিয়ে তাদের সামনে বসলাম।
— কি ব্যাপার তোদের ? আমার সাথে কথাই বলছিস না যে ? কোনো সমস্যা ? ”
— সমস্যা টা হচ্ছে তুই ।”
তাদের কথায় আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। তাই আবারো বলে উঠলাম।
— মানে ? ”
— মানেটা সিম্পল সিয়া ! ”
— তো বুঝিয়ে বল আমাকে ? ”
— কি আর বলবো বল! এতোদিন নাটক করেছি তোর আর ধূসর স্যারের প্রেম ঘটানোর জন্য। ধরতে গেলে তোর প্লানমাফিক কাজে সব ক্রেডিট আমাদের। আর কাল যা হয়েছে তা তুই না আমাকে আর না অরণ্য, অনি কে। ”
অর্পিতার এমন কথা শুনে তপ্ত এক নিঃশ্বাস ছাড়লাম। বলতে লাগলাম।
— কি-ই বা করার ছিলো আমার ? বলবি ? ”
— কেনো কি হয়েছে ? ”
— শখের পুরুষের নিকট অপমানিত হয়ে আবার তা বিশ্লেষণ করার শক্তি আমার নেই রে। এই সিয়ু টা বড্ড ইমোশনাল।
— কি হয়েছে খুলে বল ?
তারপর তাদের তিনজন কে শুরু থেকে সবটা খুলে বললাম। সবটা শোনার পর অরণ্য তো মাথায় হাত দিলো আর বললো।
— সিয়ু তুই আজকে গেছিস ! ”
— মানে ? ”
— মানে হচ্ছে তোর প্রানপ্রিয় ধূসর সরি ধূসর স্যার তোর এই প্রপোজালের কথা সবাইকে বলে বেড়িয়েছেন। তাই সকলেই ক্লাসে তোর দিকে ওই অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিলো। ক্লাসের টপার হয়ে কীভাবে একটা স্যার কে প্রস্তাব দিস । ”
চমকে উঠলাম আমি । স্যার এতটা নিকৃষ্ট?? আমার মানতেই কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই তো ওনাকে প্রপোজাল দেয় তাদের বেলায় তো এমন হতে দেখিনি। তাহলে আমার বেলায় কেনো ? আমার আর্থিক অবস্থা ? নাকি আমার পোশাক পরিচ্ছদ ! কোনটা ?
আমাকে গভীর চিন্তায় দেখে অরণ্য গলা খাঁখারি দিয়ে বললো।
— শোন যা হয়েছে , হয়েছে। ভুলে যা তুই। তুই নিজের কাজে মনোযোগ দে। আমরা আজ উঠি। ”
এই বলে ওরা প্রস্থান ঘটায় । আর আমিও বসে গেলাম। ওরা আমার ঘনিষ্ঠ হলেও আমার চিন্তার মাঝে ওদের চলে আসাটা আমার পছন্দ না তাই ওরা আমাকে একলা ছেড়ে নিজের কাজে গেলো। আমিও খানিক চিন্তা করে উঠে দাড়ালাম।
আজকে আর ক্লাস করার মন নেই। তাই একটা বার্গার অর্ডার করে খেয়ে উঠে দাড়ালাম বিল দিবো। টেবিলের উপরে রাখা পার্স যেই নিতে যাবো ওমনি কেউ সেটা খপ করে নিয়ে নিলো।
পার্স নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো বুকে হাত বেঁধে । তার দিকে তাকালাম। বিন্দুমাত্র চমকালাম না কারন এতোক্ষন আমি তার চিন্তাতেই ছিলাম। তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং ধূসর। তাই শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকে শুধালাম ।
— আমার পার্স টা দিন ! আমি বিল পে করবো । ”
— আগে বলো যে ওদের সাথে কি তোমার ? এতোদিন তো ওরাই তোমাকে অপমান করতো তাহলে আজ যা দেখলাম ? ”
— আপনাকে বলতে বাধ্য নই আমি ।”
— তা বেশ,,,! ”
— মিস্টার ধূসর চৌধুরী কে এইরকম নর্দমার মেয়ের সাথে মানায় না। সো প্লিজ ক্লিয়ার মাই ওয়ে। ”
— ওকে ফাইন! ”
— দিন পার্সটা ! ”
— একটা শর্তে দিতে পারি । ”
— আমার জিনিস নিবো তা আবার শর্ত পূরণ করে? ”
— জিনিসটা তোমার কিন্তু জিনিসটা বর্তমানে আমার হাতে। ”
— তো ?”
— তো তোমাকে শর্ত মানতে হবে। বাধ্য তুমি ! ”
— আচ্ছা বলুন। ”
আমি জানি এই লোকটা বড্ড ত্যাড়া তাই আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে হয়নি। এমনিতেও আমার মুড অফ। তাই তার কথায় হ্যাঁ বলে দিলাম। তিনি বলতে লাগলেন।
— আগামী ১ সপ্তাহ তুমি ভার্সিটি আসবে না ! ”
— আসলে কি করবেন ? ”
— বেশি কিছু না ! যেদিন আসবে সেদিন টি.সি. নিয়ে এই ভার্সিটির গেইট পেরোতে হবে। ”
— কেনো আসবোনা ? ”
— আমি বলেছি তাই ! ”
— আপনার কথা মানতে বাধ্য নই আমি । ”
— সেটা আমিও জানি ।”
— তাহলে জোর করছেন কেনো ?”
— জোর করছি না আমি। তোমাকে শর্ত দিলাম এবার পূরন করবে কি না সেটা তোমার সিদ্ধান্ত। আর হ্যাঁ বছরের মাঝে অবশ্যই তোমাকে কোনো ভার্সিটি নিবে না। আর নিলেও নিবে প্রাইভেট ভার্সিটি। খরচও বহুল, যেটা তোমার পক্ষে সম্ভব না। ”
— ঠিক আছে মেনে নিলাম ! এবার পার্স টা দিন আমি বাড়ি যাবো। ”
তিনিও বাধ্য ছেলের মতো আমার পার্স আমাকে দিয়ে গায়ে শিক্ষক শিক্ষকের ভাব এনে চলে যান। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি ক্যন্টিনে কেউ নেই।
থাকার কথাও না! এখন ক্লাস টাইম। প্রায় সকলেই ক্লাসে তাই আর আমাকে ভাবতে হলো না। বিল দিয়ে ভার্সিটির বাইরে এসে রিকশা করে চললাম সোজা বাড়ি।
**
— হ্যাঁ হ্যালো ড্যাড ? আমি ওকে আগামী ৭ দিনের জন্য সেইফলি রেখেছি। তোমরা ততোদিনে দেশে ফিরে আসার চেষ্টা করো শীঘ্রই ! ”
আরো কিছু কথা বলে নিজের গাড়িতে উঠে সস্তির শ্বাস ফেলে ড্রাইভ করা শুরু করে ধূসর।
(চলবে)