ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [২] #তাসলিমা_নাসরিন

0
559

#ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [২]
#তাসলিমা_নাসরিন

— মা একটা কথা বলবো ?”

— হ্যাঁ বাবা ! কেনো নয় ? বলে ফেলো! কিছু লাগবে তোমার , ঘুরতে যাবে কি ? ”

— না রে মা। ”

— তাহলে এইভাবে ইতস্তত বোধ করছো কেনো? ”

— আসলে মা,,,!”

— হুম আমি শুনছি ।”

— একটা সত্যি জানতে পারলে কি তুই আমাদের ছেড়ে যাবি ?”

— মানে কি বাবা ?

খাওয়া থামিয়ে বাবার দিকে চমকিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। আর এতে বাবা ভড়কে গিয়েও সামলে আমাকে বলতে লাগলো-

— মানে এই যে , এমন কোনো সত্যি যদি তুই আজ জানিস তাহলে কি আমাকে আর তোর মা-কে ছেড়ে চলে যাবি ? ”

— বাবাহ!!”

— বল না মা !”

— বাবা আমি এমন কোনো কথা শুনতে চাইনা যেটা শোনলে তোমাদের থেকে আমাকে দূরে সরে যেতে হবে আমায়। আমার কাছে তুমি আর মা -ই সব। বলতে গেলে আমার পৃথিবী। ”

বাবা কিছু বলতে যাবে তখনই মা এসে বললো-

— আহা ! মেয়েটা সারাদিনে একটু খেতে বসেছে তুমি কি তাকে একটু শান্তি দিবেনা? ”

এইটুকু বলেই মা থেমে গেলো , আবার বলতে লাগলো-

—আগে খাওয়া শেষ করো তারপর না হয় বলবে। ”

বাবা ছোট্ট করে উত্তরে হুম বলে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। আমিও দিলাম তবে এর মাঝে বাবাকে এটা ওটা এগিয়ে দিলাম। খাওয়ার শেষে উঠে সব প্লেট রেখে আসলাম কারন এই রাতে এখন কলপাড়ে গিয়ে ধুঁয়ে রাখা সম্ভব না। মায়ের সাথে সাথে গুটিকতক কাজ করে বাবা-মায়ের রুমে গেলাম কারন তিনি খাওয়া শেষে তার ঘরেই যাওয়ার জন্য বলেছেন। তাই আমিও আর মা সেই মোতাবেক কাজ করলাম। যাওয়ার সময় মা আমাকে আটকে দিয়ে তার দিকে ঘুরিয়ে সযত্নে আমাকে তার অধরযুগল স্পর্শ করালো। আমিও চোখ বুজে নিলাম। কিছু বলার আগে মা বলতে লাগলো-

— যা করেছি সব ভালোর জন্যই করেছি রে বাবু ! সবটা জেনে আমাকে ভুল বুঝিস না মা ! ”

— মা! আজ কি এমন হলো যে সব সত্যি জানাতে চাইছো ? সত্যি টা জানাতে যতোই আমার উপকার হোক তাতে আমার কিছু যায় আসে না! কারন আমার কাছে তোমরা আছো। এই কি কম নাকি? আর তুমি কিংবা বাবা আমি বলতেই অজ্ঞান। সেই মেয়েকে হারাবে জানা সত্ত্বেও আমাকে কিছু জানতে দিচ্ছো ?”

— মা রে! তোর জানা টা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমন না জানলেও না। ”

— কি এমন সত্য মা? ”

— বাবার ঘরে গেলেই জানতে পারবি !”

— মা আমার ভয় করছে! ”

— কোনো ভয় নেই পাগলি ! চল আমার সাথে। ”

এই বলে ছুটলাম বাবার ঘরে। আমাদের দেখে বাবা ইশারায় চেয়ারে বসতে বললেন আর আমরা-ও বসে পড়লাম। আলমারির উপর থেকে একটা ছোট্ট ট্রাংক বের করলো। ট্রাংকটা দেখে আমি খানিকটা ভড়কে গেলাম । কারন এই ট্রাংকের কারনেই বাবা আমার গাঁয়ে হাত তুলেছিলো। এমনভাবে মেরেছিলো যে হাত পর্যন্ত কেটে গিয়েছিলো। তবে আজ কেনো বাবা এটা বের করলেন, সেদিনের পর তো আমি আর এটা নিয়ে বাবা কে কিছু জিজ্ঞাসা করিনি?

আমার ভড়কানো চেহারা দেখেই বাবা কিছু বুঝে হালকা হেঁসে বিছানায় বসলেন আর আমাদের সামনে রাখা টি টেবিল টা-য় ট্রাংক টা রাখলেন। উপরে সুন্দর করে লেখা ” সিয়া আহমেদ “। নামটা দেখে আমি বেশ অবাক হলাম। ছোট বেলায় নামটা পড়তে না পারলেও এখনো পড়তে অসুবিধা হয়নি। বাবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম বাবা কিছু বলতে যাচ্ছে তার আগেই আমি বলতে লাগলাম-

— বাবা! আমার কিছুই জানার নেই। আমি কিছুই জানতে চাইনা। তাও প্লিজ এটা আমার সামনে থেকে সরাও। ”

— শান্ত হও মা ! আমি কিছু বলেছিলাম সেদিন ? ”

বাবার কথাতে খানিকটা স্মৃতি আমার মনের দরজায় কড়া নাড়লো। তখন বয়স আমার ৬ বছর। খেলতে খেলতে ছোট্ট ট্রাংক টা পেয়ে মায়ের কাছে গিয়েছিলাম খুলে দিতে। মা খুলে দিতে নারাজ ছিলো পরে বাবাকে বললে বাবাও ঠিক একি কাজ করে। ফলস্বরূপ আমি কান্না করে দেই যে কান্না কোনোমতেই থামছিলো না আর শেষে বাবা আমার গাঁয়ে হাত তুলেন।

বাবার মা’রে আমার শরীরে জ্বর এসেছিলো বটে। তবে সেই মানুষ টাই মার জন্য বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন সেদিন। সারারাত ধরে আমার সেবায় ব্যস্ত থাকতেন। বাবা ছিলো সামান্য এক কর্মচারী। তার সব কাজ ফেলে আমাকে টামা ২ দিনে সুস্থ করে তুলেন। সুস্থ হয়ে বাবার সাথে কথা না বললে বাবা কেঁদে দেয় আর বলে-

—মা রে এটা তোর-ই জিনিস। তবে তোর জানার অধিকার এখনো হয়নি। যেদিন সময় হবে সেদিন জানাবো। ”

— বলেছিলাম যে যেদিন সময় হবে সেদিন এই ট্রাংকের ব্যাপারে তোকে সবটা জানাবো। ”

আমার স্মৃতিচারণের মাঝেই বাবা উপরোক্ত কথাটি বলে উঠে আর আমিও আনমনে জবাব দিলাম –

— হুম ! ”

আমার “হুম” কথাটা শুনেই বাবা ট্রাংকের তালা খুললেন। যেনো তিনি আমার এই কথার অপেক্ষাতেই ছিলেম।

**

সকালে উঠে ফ্রেশ হলাম ভার্সিটি যাবো। তাই গোসল সেরে বাইরে এসে দেখি বিছানায় খাবার রাখা। জানি এটা কার কাজ। যিনি কাল রাতে আমাকে ধরে অঝোরে অশ্রু ঝড়িয়েছেন। রাতের কথা মনে পড়তেই মনটা বিষিয়ে গেলো।

প্রিয় পুরুষের অপমান আর ভয়ংকর রহস্য জেনে সারাটা রাত নির্ঘুমে কাটিয়ে দিয়েছি। ভার্সিটি গেলে অন্তত মনটা ভালো হয়ে যাবে আশা করি। তাই ওতোকিছু না ভেবে এগিয়ে গেলাম খাবারের দিকে।

খাবার খেয়ে ড্রেস বদলে পড়লাম সবুজ জামা আর কালো প্যান্ট, মাথায় কালো হিজাব, পড়নে হিল । মিররে দেখলাম নিজেকে। নাহ!আগের থেকে বড্ড বেশিই কিউট দেখাচ্ছে। অন্তত কারোর কথায় ক্ষেত মার্কার মতোনা।

বুঝিনা আমি এমন কাকে ভালোবাসলাম যে কি-না পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে মানুষ কে বিচার করে ? মানুষ টা কে যাচাই বাচাই করার জন্যই এতোদিন নরমাল ড্রেসে ভার্সিটি যেতাম।

নিজের বন্ধুদের দিয়ে তার সামনে নিজেকে অপমান করতাম। ভাবতাম সে মানুষ হিসেবে হয়তো অমায়িক হবে। কিন্তু বরাবরের মতোই আমি ভুল প্রমানিত হলাম।

সে যাইহোক! তার কথা আর ভাববো না। বাবা আবার বলেছে আজকে নাকি আমাকে দেখতে আসবে তাই তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে। আমিও আর সেই পাষাণ মানুষের অপেক্ষায় থাকলাম না।

চলে আসলাম এক পাক্ষিক ভালোবাসা নিয়ে। যেটুকু ভালোবাসা আছে সে সবটুকু নাহইহ আমি আমার হালাল পুরুষের জন্যই রেখে দিলাম।

জানি আমার কষ্ট হবে তবে যেখানে আমার মূল্যই নেই সেখানে আমি থাকবো না। যদিও সে আমার প্রিয় কেউ হয়! তবুও না।

নিজের কল্পনার মাঝেই মা বাইরে থেকে বলে উঠলো –

— সিয়ু? খেয়েছিস ? তোর ভার্সিটি যাওয়ার তো সময় হয়ে এসেছে। তাড়াতাড়ি আয় মা! আমি আবার কাঁথায় প্যার্টান করতে বসবো। ”

মায়ের এমন কথায় খানিকটা শব্দ করেই হেঁসে ফেললাম। মা পারেও বটে। কাল আমার কথা না শুনেই কান্না করলেন আমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে আর আজ !

এমন ব্যবহার যেনো কাল রাতে কিছুই হয়নি। সত্যিই মায়েরা বড্ড রহস্যময় হয়। শুধু জন্ম দিলেই মা হওয়া যায়না। সেই সাথে দায়িত্ব-ও নিতে হয়। তবেই সত্যিকারের মা হওয়া যায়। আর সেখানে তিনি আমাকে কোনোকিছুর কমতি দেননা।

নিজের ভাবনা ছেড়ে মাকে বিদায় জানিয়ে রিকশা করে চলে গেলাম ভার্সিটিতে। ভার্সিটির গেইটের সামনে দিয়ে যাচ্ছি এমন সময় একটা লোকের সাথে ধাক্কা খেলাম। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকায় নিচে পড়িনি, তার আগেই কারোর সাথে আবারো ধাক্কা খেয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।

পর পর দু’টো ধাক্কা খেয়ে আহাম্মক হয়ে গেলাম আমি। এটা কি হলো? মাথা উচিয়ে দেখি একপাশে ধূসর চৌধুরী আরেকপাশে আগুন্তুক। কি হবে ভেবে খানিকটা চুপে গেলাম আমি। পরক্ষণেই তাদের দু’জনকে সরি বলে কেটে পড়তে গেলাম আমি।

ওমনি কেউ আমার হাত ধরলো কেউ। ধূসর চৌধুরী তো আমাকে ছোঁবেও না কারন এতে তার গাঁয়ে ফোসকা পড়বে তো। আব,,, তাহলে কে আমায় ধরলো?

(চলবে)

রি চেইক করিনি। বানানে ভুল হতে পারে। আর পর্বটি কেমন লাগলো তা অবশ্যই কমেন্ট করবেন কিন্তু। আর হ্যাঁ এটি ভার্সিটি রিলেটেড গল্প। দ্বিতীয় পর্ব এমন দেখে ঘাবড়াবেন না কিন্তু। দ্বিতীয় পর্বটা এইরকম দিয়েছি কারন সব ভার্সিটি রিলেটেড গল্প যদি এক হয় তাহলে কি তাদের কপি করা হবেনা? তাই ভিন্ন রকম এক প্লট দিয়েছি।

💜🌼

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here