ওগো_মনোহারিণী ।১। লেখনিতে #তাসলিমা_নাসরিন

0
761

ঠাসসস !!! করে দু’গালে দু’টা পড়লো রাগী উড়নচন্ডা স্যারের হাতের ছাপ। দু’গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে স্যারের দিকে তাকালাম। স্যারের রাগ দেখে কিছুটা থেমে গেলাম। আমি জানি এর পরে কি হবে। কিন্তু স্যার আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন,,,

— তোর সাহস কি করে হয় বেয়াদব মেয়ে ? নিজের ইমেজ দেখেছিস ? আবার এসেছিস ভার্সিটির প্রফেসর এর সাথে প্রেম করতে ? যা শুনলাম তোর ব্যাপারে, তোদের তো নুন আনতে পান্তা ফুরায়! ভার্সিটিতেও কি-সব কাপড় পড়ে আসিস ! পুরা একটা ক্ষেত মার্কা মেয়ে । শুধু রূপ থাকলেই হয় না , পোশাক পরিচ্ছদ পরিপাটি থাকতে হয়। হ্যাঁ জানি তোর পোশাকটা পরিষ্কার থাকে কিন্তু পোশাকের ছি’রি দেখেছিস?

এখনো ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে হয়ে সালোয়ার কামিজ পড়ে আসিস ! লজ্জা করে না ? আর আমাদের পরিবারটা দেখ। অবশ্য আমি এই ভার্সিটি টপ প্রফেসর , সবাই আমার ব্যাপারে কম বেশি জানে। তুইও তার ব্যাতিক্রম নয়। তাই আশা করি নিজের ব্যাপারে আর কিছু বলার দরকার নেই। নেক্সট টাইম আমার সামনে আসার আগে হাজারবার ভেবে আসবি। ”

এই বলে প্রস্তান ঘটায় ধূসর চৌধুরী। আর আমি স্যারের উক্ত কথা শুনে কান্না থামিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলাম । একজন শিক্ষকের মুখের ভাষা এও হতে পারে? আমি জানি ওনার আর্থিক অবস্থা। তার তুলনায় আমি অকর্মণ্য এক পিঁপড়ে ।

শুনেছি ভালোবাসায় নাকি সব কিছুই হয়। আর কাউকে ভালবাসলে নাকি তাকে জানিয়ে দিতে হয়। না হলে সে অন্য কারো হয়ে গেলে আফসোসের আর সীমা থাকে না । আমিও এই কথা মেনে স্যারকে সবটা জানালাম যে-

— স্যার আমি আপনাকে ভালোবাসি। জানিনা তো কবে থেকে কখন থেকে। কিন্তু এটুকু বলতে পারি আমি আপনাকে ভালোবাসি। হ্যাঁ জানি আপনি সবার ক্রাশ কিন্তু আমার প্রথম ভালবাসা-ই আপনি । জানি শিক্ষক হচ্ছে বাবার সমতুল্য।

কিন্তু আপনাকে আমি সেই জায়গাটুকু দিতে পারি না। এটা যদি কলেজ কিংবা স্কুলের কথা হতো ! তাহলে মেনে নিতাম। কিন্তু এটা একটা ম্যাচিউর টাইম । আর যেটা আমি এই সময় অনুভব করতে পারি সেটা হচ্ছে আমি আপনাকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসি। লোকে কি বলবে তা তো আমি জানিনা কিন্তু আমার কথা আমি জানিয়ে দিলাম। ”

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে একদম নিয়ে আবার বলতে শুরু করলাম –

— আই লাভ ইউ ! উইল ইউ বি মাই ফিউচার হাসবেন্ড ? ”

আর এই কথার উত্তরে দু’গালে দুইটা চর পড়লো। যেখানে আমার মা-বাবা কোনদিন আমার উপর হাত তোলেনি , সেখানে আমার ভালো ভালোবাসার মানুষ আমাকে আঘাত করেছে ! যেটা আমার মনে খুব করুণভাবে দাগ কেটেছে।

আর আমারই বা ভুল কোথায় ? কাউকে ভালোবাসি এটা কি অপরাধ । ও হ্যাঁ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম ! আমি তো একজন মধ্যবিত্ত। মধ্যবিত্তের এত স্বাধ থাকতে নেই ।

আর যাকে আমি প্রপোজ করেছিলাম সে ছিল উচ্চবিত্ত। bmw গাড়ি, নামি দামি ফ্ল্যাট, বাবা-মা দেশের বাইরে থাকেন। তিনিও দেশের বাইরে থাকবেন। কিন্তু তার ইচ্ছে হয় যে বাকী জীবন দেশেই কাটাবেন।

তাই এসে ভার্সিটির একজন প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন। আমি অনার্স ৩ য় বর্ষের ছাত্রী। স্যার কে ২ বছর ধরে দেখে আসছি। দু বছরের আবেগ কন্ট্রোল রাখতে পারলেও , এবার রাখতে পারিনি। কেন জানিনা ইচ্ছা হয়নি, তাই তো আজ বলে দিলাম ! সেই সাথে নিমের মত কিছু কথা ছুড়ে মারলো আমার দিকে।

ভার্সিটিতে এই স্যারটা ভীষণ কড়া। কিন্তু এই এই পর্যন্ত স্যারের সামনে আমার ভালোবাসা তুয়াক্কা করেনি,তাই নির্ধিদ্বায় বলে দিয়েছিলাম নিজের মনের কথা । হলো কি ? সে তো আমাকে তার সামনে না আসার যুক্তি দিয়ে গেলো ।

আর আমিও জানি আমি যদি তার সামনে যাই, তবে সে কিছু না কিছু করবে । আর আমি থাকলে তার হয়তো বিরক্তি লাগে তাই আমাকে তার সামনে যেতে না করেছে। তাই আমিও আর তার সামনে যাব না, আমি চাই আমার ভালবাসার মানুষ সব সময় খুশি থাকুক।

যদি খুশির কারণটা আমি না হয়ে অন্য কেউ হয় তাহলে আমি অনেক খুশি ! কারণ ভালোবাসা শুধু পেতেই নয় দেখতেও সুন্দর। আর আমি জানি স্যারের কথাগুলি আমার প্রাপ্য ছিলো, নয়তো তার থেকে দূরে থাকা আমার আর হতো না। তাই তার কথা কোন তোয়াক্কা না করে চললাম নিজ গন্তব্যে।

**
টিনশেডের একতলা বাড়িটি দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম । এটাই আমার অবাস্থল , আর এটার জন্যই আজকে আমি ভালোবাসায় হেরে গেলাম। এই বাড়িটা আমার মা-বাবার, আমি একাই। কোন ভাই বোন নেই। আমাদের বাড়িটির চারপাশে টিন দিয়ে ঘেরাও করা। এক পা দু পা করে এগিয়ে গেলাম ঘেরাও করা ছাউনির দিকে।

ছাউনির গেটের দিকে তাকিয়ে কড়া নাড়লাম। সেই সাথে ভেসে আসলো আমার মায়ের আওয়াজ –

— কে ?”

— মা আমি সিয়া ! ”

— আসছি মা ! দাড়া। ”

মিনিট দুয়েক পর মা দরজা খুললো। আমার হাত থেকে ভার্সিটির ব্যাগটা নিয়ে পুনরায় কড়া লাগিয়ে ছুটলো রুমের দিকে। আমিও মায়ের পিছনে আস্তে আস্তে গেলাম। আমাদের একতলা বাড়ির দুইটা রুম। একটা মা-বাবার আরেকটা আমার। আর সাথে দুইটা বাথরুম। বাইরে রান্নাঘর। আমরা তেমন উচ্চবিত্ত না হলেও টিনশেডের হাফবিল্ডিং বাড়ি তে খুব সুখেই থাকি।

রুমে গিয়ে ব্যাগটা রেখে মা বলল গোসল করতে। তাই আমিও ওয়ারড্রব থেকে পায়জামা কামিজ আর ওড়না নিয়ে ছুটলাম গোসলখানায় । আধা ঘন্টা ধরে গোসল করে বাইরে বেরিয়ে আসলাম । টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখি মা নাস্তা রেখে গিয়েছে। দেয়াল ঘড়ি তে তাকিয়ে দেখলাম সন্ধ্যা সাতটা বাজে। কলেজ ছুটি হয়েছিলো সাড়ে চারটা বাজে , এসেছি সাড়ে পাঁচটা বাজে। এলাম ঢেলাম করতে করতেই ঘন্টা দু’য়েক পেরিয়ে গেলো তাহলে।

তাই ফোঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে আমার রুমের দরজা ভিড়িয়ে বাইরে গেলাম খাবারের জন্য। গিয়ে দেখি মা মেঝেতে পাটি বিছিয়ে খাবার আনছেন। তাই আমিও মা কে সাহায্য করতে এগিয়ে গেলাম। খাবার রেডি করে সবার পাতে ভাত – তরকারি দিয়ে আমিও বসলাম খেতে।

বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো-

#ওগো_মনোহারিণী ।১।
লেখনিতে #তাসলিমা_নাসরিন

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here