উধয়রনী #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||পর্ব-৩৪(১ম ভাগ)||

0
717

#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৩৪(১ম ভাগ)||

৬৬।
জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে, শ-খানেক রঙ-বেরঙের বাতির ভীড়ে একখানা মলিন মুখ দাঁড়িয়ে আছে সবার দৃষ্টিকে কেন্দ্র করে। সাদা রঙের ভারী গাউনে নুইয়ে পড়ছে তার দুর্বল কায়া। তবুও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। কারণ তার একটা সিদ্ধান্ত পালটে দিবে অনেকগুলো মানুষের ভবিষ্যৎ।
আহির হাতটি আলতোভাবে স্পর্শ করলো তাজওয়ার খান। তাজওয়ারের স্পর্শে আহি হতাশ চোখে তার দিকে তাকালো। দেখলো তাজওয়ারের ঠোঁটে বিজয়ের হাসি। শেষমেশ আহি আনুষ্ঠানিকভাবে তার বাগদত্তা হতে যাচ্ছে। যেই স্বপ্ন সে অনেক বছর ধরে দেখে আসছে, তার প্রথম ধাপ আজ সে পার করেছে। এখন আহির নামটিও শিরোনামের পাতায় লেখা হবে, ব্যবসায়ী মিস্টার তাজওয়ার খানের বাগদত্তা হিসেবে। কে না চায় এমন শান্তির নীড়? যেখানে টাকার অভাব নেই, বিলাসিতার অভাব নেই। কিন্তু যে এসবের ঊর্ধ্বে জীবনটাকে দেখতে চায়, একটু শান্তি চায়, তার জন্য শান্তির সেই নীড় কি আদৌ শান্তির? না-কি সমঝোতা মাত্র?

তাজওয়ার আর আহির আংটিবদল হতেই একজন ফটোগ্রাফার তাদের ছবি তুললো। লোকটা মিডিয়ায় কাজ করে। তাজওয়ার তাকে আমেরিকায় এনেছে, তাদের বিয়ের ছবি বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। আহির ইচ্ছে করছিলো ফটোগ্রাফারের গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দিতে। সে কিছুক্ষণ পর পর এসে ছবি তুলছে। আহি বিরক্ত হয়ে তাজওয়ারকে বলল,
“এই লোকটা একটা নিউজ বের করার জন্য এতোগুলো ছবি কেন তুলছে, পাগল না-কি?”

তাজওয়ার মুচকি হেসে বলল,
“আরেহ, খবরে আমাদের এনগেজমেন্ট এনাউন্স করা হবে, একটা ভালো ছবি তো রাখতেই হয়।”

“এক্সকিউজ মি, তুমি জাস্ট একজন ব্যবসায়ী। কোনো মন্ত্রী বা সেলেব্রিটি নও যে তোমাকে নিয়ে দশ মিনিটের খবর বের হবে।”

“শোনো, মন্ত্রীরাও আমার আগে-পিছে ঘুরে। আর সেলেব্রিটিরা আমার কারণেই সেলেব্রিটি হয়। আমি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ইনভেস্ট করি। তুমি হয়তো জানো না, আমি অনেক মুভির প্রোডিউসার ছিলাম। জানবে কীভাবে? তোমার গন্ডি তো বেশিদূর ছিল না। তুমি শুধু রং নিয়ে খেলেই সময় পার করেছো।”

“আমার রং নিয়ে খেলা তোমার কাজের চেয়ে বহুগুণ ভালো। অন্তত সেই কাজে মানসিক তৃপ্তি আছে। তোমার টাকায় তুমি শুধু শারীরিক সুখ পেয়েছো। মানসিক সুখ পাও নি।”

“তুমি তো আমার জীবনে মানসিক শান্তি হয়েই এসেছো। আমার আর কোনো শান্তির প্রয়োজন নেই। দিনে শারীরিক সুখ, রাতে মানসিক সুখ। শীঘ্রই আমার চেয়ে সুখী আর কেউ হবে না।”

আহি চোখ-মুখ কুঁচকে তাজওয়ারের দিকে তাকিয়ে রইলো। তখনই কয়েকজন ফিটফাট যুবক আহি আর তাজওয়ারের সামনে এসে দাঁড়ালো। তাজওয়ার তাদের দেখে এক গাল হাসলো। আহি মুখ বাঁকিয়ে তাজওয়ারের হাসি দেখছে। তাজওয়ার আহির হাত ধরে চাপা স্বরে বলল,
“এভাবে তাকিয়ে থেকো না। মনে হচ্ছে সাপ আর বেজির বিয়ে হচ্ছে।”

আহি মুখ বাঁকিয়ে চাপা স্বরে উত্তর দিলো,
“মনে হোক। তুমি আমার শখের পুরুষ নও। আমার দৃষ্টিতে তুমি তাইপানের চেয়েও বিষধর।”

তাজওয়ার আহির কথা শুনে সামনে দাঁড়ানো যুবকগুলোর দিকে তাকিয়ে সৌজন্যমূলক হাসি ফেরত দিয়ে বলল,
“আহি, মিট মাই ফ্রেন্ডস।”

আহি বাঁকা চোখে তাজওয়ারের বন্ধুদের দিকে তাকালো। তাদের মধ্যে একজন আহির দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
“হ্যালো, আই এম সজিব।”

আহি ঠোঁট বাঁকিয়ে চাপা স্বরে বলল, “আজিব।”

সজিব আহির ঠোঁটের নড়ন দেখে বলল,
“ইটস সজিব, নট আজিব।”

তাজওয়ার এবার আহির দিকে বাঁকা চোখে তাকালো। আর আহি সজিবের দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। এবার তাজওয়ার পাশের জনের দিকে ইঙ্গিত করে বলল,
“আহি, এ হচ্ছে জিলান শেখ। আমার বিজনেস পার্টনার আর আমার খুব কাছের বন্ধু।”

জিলান আহির দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
“হাই বেইব….”

তাজওয়ারের দিকে চোখ পড়তেই জিলান চুপ হয়ে গেলো। আহি জিলানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জিলান খচমচে ভাব নিয়ে হেসে বলল,
“আই মিন ভাবী। কেমন আছেন আপনি?”

আহি জিলানের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না। এবার পাশের জন বলে উঠলো,
“হাই, আহি। আই এম হ্যারি।”

হ্যারি ভিনদেশী হওয়ায় আহি সৌজন্যমূলক হাসি ফেরত দিলো। তখনই হ্যারি আহির কাছে এসে হুট করে তার গালে চুমু খেয়ে বলল,
“নাইস টু মিট ইউ।”

আহি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাজওয়ার হালকা হেসে বলল,
“ইটস কালচার।”

আহি চোখ ছোট করে তাজওয়ারের দিকে তাকালো। এবার হ্যারির পাশের জন্য আপাদমস্তক আহিকে দেখে নিয়ে বলল,
“সো বিউটিফুল।”

আহি মুখ বাঁকিয়ে বলল, “এন্ড ইটস?”

অর্ণব হেসে বলল, “ইটস কমপ্লিমেন্ট।”

আহি তাজওয়ারের দিকে তাকিয়ে চাপা স্বরে বলল,
“তোমার বন্ধুগুলো কি নেশা করে এসেছে? তাদের চাহনি দেখেছো? দেখেই বোঝা যাচ্ছে এদের চিন্তাভাবনা কতোটা বাজে। এদের সরাও তো আমার সামনে থেকে। নয়তো আমি তোমাকে ধাক্কা দিয়ে এখান থেকে চলে যাবো। তারপর তোমার স্পেশাল ফটোগ্রাফারকে বলো, শিরোনামে লিখতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ীকে ধাক্কা দিয়ে স্টেজ থেকে নেমে পড়লো তার বাগদত্তা।”

তাজওয়ার চাপা স্বরে বলল, “ভেরি ফানি।”

তখনই সজিব বলে উঠলো,
“তাজ, তুই সত্যিই ভাগ্যবান। সব ঘাট ঘুরে ভালো জায়গায় নৌকা বেঁধেছিস।”

আহি ভ্রূ কুঁচকে সজিবের দিকে তাকালো। সজিব হেসে বলল,
“মিস, রাগ করেছেন?”

আহি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“নোংরা ডোবায় নৌকা ঠেকলে রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক।”

তাজওয়ার আহির কথা শুনে তার দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকালো। এবার জিলান বলল,
“আর যাই বল তাজ, আহি কিন্তু ভীষণ সুন্দরী।”

তাজওয়ার হেসে বলল,
“এজন্যই তো এতো ভালোবাসি।”

আহি ভ্রূ কুঁচকে তাজওয়ারের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি এজন্য আমাকে ভালোবাসো? আমি সুন্দর তাই? সিরিয়াসলি, তাজওয়ার?”

তাজওয়ার হেসে আহির সামনে আসা চুলগুলো তার কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে বলল,
“তোমাকে আমি ভালোবাসি, আহি। কেন ভালোবাসি এটা বিষয় না।”

আহি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
“কাল যদি আমার চেয়ে সুন্দরী মেয়ে তোমার জীবনে আসে, তখন?”

“কাল তো এখনো আসে নি। আর যতোই সুন্দরী নারী আসুক, রাজার বড় রানীর অধিকার আর ভালোবাসা ছোট রানীরা নিতে পারবে না।”

আহি কথাটি শুনে তাজওয়ারকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। আর বিড়বিড় করতে কর‍তে চলে গেলো। হোটেল রুমের সামনে এসে আহি মিনমিনিয়ে বলল,
“বিয়ের আগেই এসব শুনছি। বিয়ের পর আমি নিশ্চিত পাগল হয়ে যাবো। অসভ্য, খাটাশ তাজওয়ার খান। বিয়ের ভূত হজম করিয়ে দেবো তোকে।”

এদিকে লাবণি আহির কাছে আসতেই দেখলো আহি একা দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করছে। সে আহির কাছে এসে বলল,
“কি ব্যাপার? মন খারাপ?”

আহি মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“না ভীষণ ভালো লাগছে আমার। ইচ্ছে করছে থা থা থৈ থৈ করতে।”

লাবণি হাসলো। বলল,
“আমি তো ভেবেছি, তাজওয়ারের বন্ধুরা এসেছে তাই তোমার মন খারাপ। কারণ তোমার বন্ধুদের তো দাওয়াত দেওয়া হলো না। আজ তোমার গুরুত্বপূর্ণ দিনে রাদ, লাবীব, পুষ্প, পদ্ম কেউই তোমার পাশে নেই। কিন্তু আমরাও তো নিরুপায়। ওদের কীভাবে দাওয়াত করি, বলো? রাদ আর লাবীব তো তোমার অন্ধ ভক্ত। তুমি ওদের যা বলবে, ওরা তাই করবে। এখন ওরা এসে তোমার কথায় যদি এনগেজমেন্টে সিনক্রিয়েট করতো, তাহলে বিষয়টা সুন্দর দেখাতো না। এমনও হতে পারে, ওরা তোমাকে ভাগিয়ে নিয়ে গেলো। নাক কিন্তু তোমার বাবার কাটা যেতো, আর মাথা কাটা যেতো তোমার দুই বন্ধুর। তাজওয়ার দু’টোকে উপরে পাঠিয়ে দিতে একবারও ভাবতো না। আর তুমি তো এখনো অবুঝ। তোমার ভুলের জন্য কার ক্ষতি হচ্ছে, সেটা তো বুঝবে না। তাই আমি তাদের না জানিয়ে মনে হয় না ভুল কিছু করেছি। আর অন্যদিকে তোমার বান্ধবী পদ্ম। ও তো এখানে আসা এফোর্ড করবে না। এতো ভালো অবস্থা তো তার নেই যে আমেরিকায় এসে এনগেজমেন্ট এটেন্ড করবে। আর বাকিরা না এলে পুষ্প একা এসে কি করতো, বলো? এমনিতে তাজওয়ারের বন্ধুদের চোখ কিন্তু বেশ ধারালো। একবার যদি তাদের চোখে কোনো শিকার আটকে যায়, তারা সহজে সেই শিকারকে ছাড়ে না। শেষমেশ কি-না এতো বছরের দেহ রক্ষা বান্ধবীর এনগেজমেন্টে এসেই শেষ হয়ে যেতো!”

আহি চোখ বড় বড় করে লাবণির দিকে তাকালো। লাবণি আবার বলল,
“তবে লিনাশাকে আসতে বলেছি। সে কি আর আসবে বলো? এমনিতে বলার বলেছিলাম। আফটার অল তোমার একমাত্র খালা।”

আহি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“অনেক বকবক করেছেন। এখন নিজের গতিহীন মুখ আর ধূর্ত মস্তিষ্ককে একটু বিশ্রাম দিন। আমার বন্ধুরা এসব সো ক্লল্ড এনগেজমেন্টে এটেন্ড হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে যাচ্ছে না। বরং এসব অসুস্থ মানুষের ভীড় থেকে তারা যতো দূরে থাকবে, তাদের মস্তিষ্ক ততো ভালো থাকবে।”

আহি কথাটি বলেই হোটেল রুমে ঢুকে লাবণির মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো।

৬৭।

রুমের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনেই বিরক্তমুখে দরজা খুলে দিলো আহি। দেখলো তাজওয়ার দাঁড়িয়ে আছে। তাজওয়ারকে দেখে সে আরো কয়েক দফা বিরক্ত হলো। চেঁচিয়ে বলল, “কি চায়?”

তাজওয়ার দরজা ধরে আহির দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে বলল, “তোমাকে চাই।”

আহি তাজওয়ারের মুখের উপর দরজা বন্ধ করতে যাবে তখনই সে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়লো। আহি কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাজওয়ার দরজা বন্ধ করে আহিকে দরজার সাথে চেপে ধরলো। আহি তাজওয়ারের মুখের সামনে তার হাত রেখে বলল,
“কাছে আসার চেষ্টা করবে না।”

তাজওয়ার নেশা জড়ানো কন্ঠে বলল,
“তুমি এখন আমার।”

“ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমাদের এখনো বিয়ে হয় নি।”

তাজওয়ার আহির কোমড় জড়িয়ে ধরে তাকে নিজের কাছে আনলো। আহি তাজওয়ারকে ছাড়ানোর জন্য তার শরীরের সব শক্তি দিয়ে তাজওয়ারের পিঠে ঘুষি মারতে লাগলো। কিন্তু তাজওয়ার এসবের তোয়াক্কা না করে আহিকে কোলে উঠিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। আহি তৎক্ষণাৎ তার দুই হাতে ভর দিয়ে উঠতে যাবে, তখনই তাজওয়ার তার উপরে ভর দিয়ে শুয়ে পড়লো। আহি চেঁচিয়ে বলল,
“আমি তোকে খুন করে ফেলবো। এসব অসভ্যতা আমার সাথে দেখাবি না।”

তাজওয়ার আহির মুখ চেপে ধরে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
“তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারো না। আমি তোমার ফিয়োন্সে। এখন তোমার উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আর আমি কি তোমার সাথে শারীরিক সম্পর্কে যাচ্ছি? আমি তো জাস্ট তোমাকে একটু ভালোবাসার চেষ্টা করছি।”

“এটাকে ভালোবাসা বলে? ছি! আমাকে কি তুমি তোমার প্রেমিকাদের মতো ভেবেছো? আমার কাছে এসব নোংরামি। ভালোবাসা না।”

“দেখো আহি, আমি কিন্তু চাইলেই অনেক কিছু করতে পারি। আমাকে আটকানোর সাধ্য কারো নেই। কিন্তু তুমি বেশি বাড়াবাড়ি করছো। আমি আমার ফিয়োন্সেকে একটু আদর করতে পারবো না?”

তাজওয়ার কথাটি বলেই আহির গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। আহির মেজাজটা আরো বিগড়ে গেলো। সে তাজওয়ারের চুল টেনে ধরে তার মুখটা উঠিয়ে কষে একটা চড় লাগিয়ে দিলো তাজওয়ারের গালে। তাজওয়ার গালে হাত দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আহি উঠে বসলো আর রাগী স্বরে বলল,
“আমি তোর ভোগ্যপণ্য নই। নেক্সট টাইম আমার আগে-পিছেও যদি দাঁড়াস….”

আহি পুরো কথাটা শেষ করার আগেই তাজওয়ার আহির হাতটা শক্ত করে চেপে তাকে বসা থেকে দাঁড় করিয়ে তার গালে সশব্দে একটা চড় বসিয়ে দিলো। এতো জোরে সে চড় মেরেছে যে আহি সেই ধাক্কা সামলাতে না পেরে মেঝেতে বসে পড়লো। গালটা লাল হয়ে গেছে আহির। মনে হচ্ছে কেউ লোহা গরম করে মুখে চেপে ধরেছে। ভীষণ জ্বলছে আহির কোমল গালটি। যন্ত্রণায় তার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। তাজওয়ার এবার আরো ভয়ংকর হয়ে গেলো। সে আহিকে টেনে তুলে আবার ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। আহির শরীর একদম নিস্প্রভ হয়ে গেছে। সে বাকরুদ্ধ হয়ে তাজওয়ারের দিকে তাকিয়ে আছে। তাজওয়ার এবার আহিকে জড়িয়ে ধরলো। আহির অনুমতি না নিয়ে ইচ্ছেমতো আহির গলায়, মুখে তার অধর ছুঁইয়ে দিলো। ধীরে ধীরে অস্বাভাবিক হয়ে উঠলো সে। আহি স্তম্ভিত ফিরে পেতেই আবার তাজওয়ারকে সরানোর জন্য ধাক্কা দিতে লাগলো। তাজওয়ার এবার আহির ওষ্ঠদ্বয়ে তার অধর ছোঁয়ালো। এদিকে আহির চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। তাজওয়ার বুঝতে পেরে আহিকে ছেড়ে দিলো। আহি ছাড়া পেয়ে নিজের হাত দিয়ে জোরে জোরে তার ঠোঁট ঘষতে লাগলো। নিঃশব্দে কাঁদছে সে, আর তার হাতটাও কাঁপছে। তাজওয়ার আহির লাল হয়ে যাওয়া গালটিতে তার অধর ছুঁইয়ে বলল,
“সরি। সরি। সরি। এন্ড আই লাভ ইউ, আহি।”

আহি কাঁদছে। তাজওয়ার এবার আহির চোখ মুছে তার চোখে অধর ছোঁয়ালো। আহি এবার উঠে বসলো৷ তাজওয়ারও উঠে বসে বলল,
“কাঁদছো কেন, আহি? আমিই তো তোমার সব। কেন এমন করছিলে বলো? আমার তো তোমার উপর অধিকার আছে। আজ নয়তো কাল আমি আদায় করে নিবোই। তাহলে আজ কেন নয়?”

আহি করুণ দৃষ্টিতে তাজওয়ারের দিকে তাকালো। আহি উত্তরে কি বলবে বুঝতে পারছে না। এই মানুষটা যে তার অনুভূতি কখনোই বুঝবে না, এটা আজ পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছে আহি। আহিকে চুপ দেখে তাজওয়ার আবার বলল,
“কিছু তো বলো?”

আহি কাঁপা কন্ঠে বলল, “আমার বমি আসছে।”

তাজওয়ার ভ্রূ কুঁচকে বললো, “হোয়াট?”

আহি উঠে দৌঁড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। এরপর পানির কল ছেড়ে মুখে ইচ্ছেমতো পানির ঝাপটা দিলো। ভেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে আয়নায় নিজের চেহারা দেখেই আহির গা গুলিয়ে এলো। গলগল করে বমি করে দিলো সে। তাজওয়ার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলল,
“আ’র ইউ ওকে? আহি, আই এম সরি। দরজাটা খোলো। আমাকে ভেতরে আসতে দাও।”

আহি দেয়ালে হেলান দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তাজওয়ার বলল,
“আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকবো।”

আহি দরজাটা খুলে দিলো। তাজওয়ারকে কাঁপা হাতে সরিয়ে বিছানার দিকে পা এগুতেই চোখ ঝাপসা হয়ে এলো তার। শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে মেঝেতে পড়ার আগেই তাজওয়ার তাকে ধরে ফেললো। সে আহিকে ঝাঁকিয়ে বলল,
“আহি, কি হয়েছে তোমার?”

তাজওয়ার তড়িঘড়ি করে আহিকে কোলে উঠিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। আহি জানালার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এসি বন্ধ করে জানালাটা খুলে দাও। আমার দম বন্ধ আসছে।”

তাজওয়ার ব্যস্ত কন্ঠে বললো, “ওয়েট, ওয়েট।”

তাজওয়ার তাড়াতাড়ি এসি বন্ধ করে জানালা খুলে দিলো। এরপর আহির পাশে বসে তার হাতটা আলতোভাবে স্পর্শ করে বলল,
“সরি, আহি। তুমি এমন অসুস্থ হয়ে যাবে, আমি ভাবতেও পারি নি। তুমি আমাকে একটু ভালোবাসলে, সবকিছুই তোমার সহজ মনে হতো।”

আহি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। তাজওয়ার ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“খারাপ লাগছে তোমার?”

আহি কাঁপা কন্ঠে বলল, “মরে যেতে ইচ্ছে করছে।”

তাজওয়ার চুপ হয়ে গেলো। মিনিট খানিক সে আহির দিকে তাকিয়ে রইলো। এরপর মুখ ঘুরিয়ে অন্যপাশে বসলো। এবার তাজওয়ারের হাত কাঁপছে। আহির এই অস্থিরতা দেখে সে নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না। ইচ্ছে করছে দেয়ালে ঘুষি মেরে নিজের হাতটা থেঁতলে ফেলতে। তাজওয়ার অনেকক্ষণ পর আহির দিকে ঘুরে বসে বলল,
“আচ্ছা, সরি। আই এম রিয়েলি ভেরি সরি। এই মুহূর্তে শাস্তিস্বরূপ তুমি যা চাইবে আমি তোমাকে তাই দেবো। তবে শুধু এই মুহূর্তের জন্য। দশ মিনিট সময় আছে তোমার হাতে। যা চাওয়ার চেয়ে নাও। কিন্তু এই দশ মিনিটে নিজের প্রাণ আর তোমার প্রাণ নেওয়া ছাড়া সবকিছুই করতে পারবো আমি।”

আহি কাঁপা কন্ঠে বলল, “তোমার ফোনটা দাও।”

তাজওয়ার গম্ভীরমুখে বলল,
“কার সাথে কথা বলবে?”

আহি মলিন মুখে বললো, “মায়ের সাথে।”

তাজওয়ার দ্রুত ফোনটা পকেট থেকে বের করে আহির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“ওহ অফকোর্স। আমারও বলা উচিত। আফটার অল সি ইজ মাই ওয়ান এন্ড অনলি রিয়েল মাদার-ইন-ল।”

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here