খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_৩৮ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
329

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৩৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

উত্তপ্ত মেজাজ টগবগে মস্তিষ্ক রাগান্বিত চেহারার সামনে ঘৃণিত মুখশ্রী দেখে সমস্ত শরীর জ্বলে উঠল। ক্রোধের চোয়াল শক্ত হয়ে এল মুনতাসিমের। পিনপতন নিরবতা ভেঙে, সে সামনে থাকা নিকৃষ্ট মানুষটার দু’গাল চেপে ধরে হুংকার ছেড়ে বলল,

–তোর সাহস কি করে হয় আমার গার্ডদের খু’ন করার! তোকে আমার জ্যা’ন্ত পুঁ’তে ফেলতে ইচ্ছে করছে। শুধু মাত্র আব্বার জন্য তোর মতো জা’নো’য়া’র’কে বাঁচিয়ে রেখেছি। এতদিন আমাকে খু’ন করতে চেয়েছিস সবকিছু জানেও চুপ থেকেছি৷ কিন্তু এখন তুই মেহেভীনের দিকে নজর দিয়েছিস। আমি তোকে শেষ বারের মতো সাবধান করছি। মেহেভীনের ছায়ার পাশেও যেন তোর ছায়া না দেখি। যদি আমার কথার অবাধ্য হয়েছিস। আল্লাহর কসম করে বলছি তোকে খু’ন করতে দু’বার ভাবব না। মুনতাসিমের কথায় দাউদাউ করে জ্বলে উঠল ব্যক্তিটি। একদলা থুতু মুনতাসিমের মুখে ফেলতে যাবে। তখনই মুনতাসিম তার মুখটা মাটির দিকে বাঁকিয়ে ধরলো। থুতু গুলো গিয়ে ব্যক্তিটির পায়ে ওপরে পড়লো। প্রতিশোধের নেশা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে দ্বিগুন ভাবে প্রকোপ হচ্ছে। কাল বৈশাখী ঝড়ের ন্যায় নিজের শক্তি প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বরাবরের ন্যায় সে ব্যর্থ হচ্ছে, সে রাগান্বিত হয়ে বলল,

–তুই আমার ভালোবাসার মানুষের থেকে আমাকে আলাদা করেছিস। আমি তোকে তোর ভালোবাসার মানুষের সাথে সুখ থাকতে দিব। আমি যেভাবে না পাওয়ার দহনে পুড়ছি তোকেও সেভাবে পোড়াব। তবেই আমার শান্তি মিলবে। যখন তুই হারাবি তখন বুঝবি হারানোর যন্ত্রনা ঠিক কতটা। আমার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোকে অভিশাপ দিতেই থাকবে। তুই কোনোদিন সুখী হতে পারবি না।

–আমি যদি অন্যায় করে থাকি, তাহলে আমার বিধাতা আমাকে শাস্তি দিবেন। আমার বিধাতা যদি আমায় দুঃখ দিয়ে খুশি হন। তার খুশিতেই আমার খুশি তোর মতো জা’নো’য়া’রে’র কথা আমার ভাগ্য পরিবর্তন হবে না। আমি তোর মতো কাপুরষ নই যে একজনকে ভালোবেসে আরেকজনকে ব্যাবহার করব। তারপর ব্যবহার শেষে ছুঁড়ে ফেলে দিব। তুই তো বাবা নামের কলঙ্ক তোর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। তুই যেমন নষ্ট পুরুষ তেমনই নিকৃষ্ট বাবা। তুই বাবা শব্দ টাকেও কলঙ্কিত করে দিয়েছিস। তোর আসল চেহারা সবার সামনে প্রকাশ পেলে সবাই তোকে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে মা’র’বে। আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস না। যেদিন আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাবে। সেদিন আব্বা ও তোকে বাঁচাতে পারব না।

–কাপুরুষের মতো আমাকে ধরে রেখেছিস কেন? তোর বুকে সৎ সাহস থাকলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে দেখা। ব্যক্তিটির কথায় মুনতাসিম তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিল ফ্লোরে। ব্যক্তিটি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে অদ্ভুত ভাবে হাসতে লাগলো। আঁখিযুগল দিয়ে অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ছে। ভেতর টা হাহাকারে ভরে গিয়েছে। সমস্ত শরীর জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। সে উঠে দাঁড়াল রক্তিম আঁখিযুগল গুলো স্থির হয়ে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মুনতাসিম রাগান্বিত হয়ে বলল,

–কি করবি কর? মুনতাসিমের কথায় ব্যক্তিটির মুখশ্রীতে তাচ্ছিল্য ফুটে উঠল। সে মলিনতার ছোঁয়ায় মাখা কণ্ঠে বলল,

–তোকে পোড়ালে শান্তি পাব না। যাকে পোড়ালে তোকে রক্তাক্ত করে দিতে পারব। আমি তাকেই পোড়াব পেয়েও হারানোর যন্ত্রনা কতটা সেটা তোকে প্রতিটি মুহুর্তে অনুভব করাব। মৃত মানুষ হারানোর চেয়ে জীবিত মানুষ হারানোর যন্ত্রনা কতটা পোড়ায় যেটা তোকে উপলব্ধি করাব। তোদের বিয়ের দিন কবুল বলার পর, মেহেভীন তোর গৃহ পর্যন্ত পৌঁছাতেই পারল না। তার আগেই মেহেভীন শরীর টা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় কালো পিচ ঢালাই করা পথে লুটিয়ে পড়ে থাকলো। তখন তোর অনুভূতি কেমন হবে?ভয়ংকর ভাবে মুনতাসিমের সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল। ললাটে চিন্তার ভাজ পড়লো। মুনতাসিম শান্ত দৃষ্টিতে ব্যক্তিটির দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মুনতাসিমের শান্ত দৃষ্টি ব্যক্তিটিকে আরো উত্তপ্ত করে দিল।

–আমাকে নষ্ট বলেছিস না। এই নষ্টামি যদি তোর মেহেভীনের সাথে করি। কথা গুলো বলার সাথে সাথে ব্যক্তিটির গ’লা ছু’টি দিয়ে কে’টে দিল মুনতাসিম। এতক্ষণ ধরে ছু’টি আসার জন্য অপেক্ষা করছিল সে। গলায় আঘাত পেতেই গ’লা মুরগীর মতো ছটফট করতে লাগলো ব্যক্তিটি। মুনতাসিম তার পাশে বসে দারুন হেসে বলল,

–আপনার যাত্রা শুভ হোক মুনতাসিম কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। এরপর থেকে কোনো কিছু বলার আগে ভেবেচিন্তে বলবেন। আপনি আমার বাবার ভালোবাসার মানুষ তাই মৃত্যুর আগে একটু সন্মান করে দিলাম। প্রসঙ্গ যখন মুনতাসিমের ভালোবাসা মানুষ। তখন মুনতাসিম ভয়ংকর রকমের পাষাণ। আমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে কেউ কিছু বললে আমি অমানুষ হয়ে উঠি। আর একটা অমানুষ কি কি করতে পারে। সেই সম্পর্কে তোকে ধারণা দিতে হবে না। আমাকে উত্তপ্ত করার উপহার তোকে দিয়ে গেলাম। উত্তপ্ততা বেশি প্রকোপ হতে দিস না। তাহলে মাটির ওপরে না থেকে মাটির নিচে থাকবি। ব্যক্তিটি কিছু বলতে চাইল হাত বাড়িয়ে মুনতাসিমকে স্পর্শ করতে চাইল। কিন্তু তার শক্তি ধরা ছোঁয়ার বাহিরে গেল গেল। চারদিকে আঁধার ঘনিয়ে আসতে শুরু করেছে। আঁখিযুগল ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। হৃদয়স্পন্দনের গতিবেগ কমতে শুরু করেছে। অশ্রুসিক্ত আঁখিযুগল বন্ধ হয়ে গেল। নিথর দেহটা মাটিতে পড়ে থাকলো। তাইয়ান গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–এভাবে থাকলে উনি মারা যাবেন স্যার। আমাদের দ্রুত উনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আপনার বাবা জানলে গভীর ভাবে আহত হবেন। আপনি এতটা নিষ্ঠুর হইয়েন স্যার। আপনার এমন পাষাণ রুপই না আবার মেহেভীন ম্যাডামকে আপনার বাবার চোখে বি’ষ বানিয়ে দেয়।

–তোমাকে এসব নিয়ে এত ভাবতে হবে না তাইয়ান। আমি এখন কি করব না করব সেটা তোমার থেকে অনুমতি নিয়ে করতে হবে!

–স্যরি স্যার।

–আমি এতটাও গুরুতর ভাবে আঘাত করেনি। সাময়িক ভাবে জ্ঞান হারিয়েছে। ডক্টর ডেকে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করো। বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়া অবধি তাকে চেয়ারের সাথে শক্ত করে বেঁধে রাখবে। বেশি বাড়াবাড়ি করার চেষ্টা করলে উল্টা করে ঝুলিয়ে রাখবে। আর একে কে সাহায্য করছে খুঁজে বের করো। সে যদি একবার আমার হাতে পড়েছে জীবিত বাঁচতে পারবে না। মুনতাসিমের কথা গুলো কর্ণকুহরে আসতেই তাইয়ানের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। সুপ্ত অনুভূতি গুলো বিষাদের কালো মেঘে ঢাকা পড়ে গেল। তাইয়ানের সমস্ত মুখশ্রীতের আঁধার ঘনিয়ে এল। তা মুনতাসিমের দৃষ্টি এড়ালো না। মুনতাসিমের তাইয়ানের দৃষ্টির আড়ালেই রহস্যময় হাসিতে মেতে উঠল। সে দেখত চায় তাইয়ান কতদিন লুকোচুরির খেলা খেলতে পারে। তাইয়ান দোটানায় প্রতিটি মুহুর্ত পুড়তে পুড়তে কয়লা হয়ে যাচ্ছে। তাইয়ানের অসহায় মাখা মুখশ্রী মুনতাসিমকে শান্তি দেয়। সে দেখতে চায় তাইয়ানের ভালোবাসা তার প্রতি কতটা প্রখর। সে কতদিন দু’দিক এভাবে সামলাতে পারে। কথা গুলো ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মুনতাসিম।

রাইমা বেগম কক্ষে এসেই ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন। সমস্ত মুখশ্রীতে রক্তিম বর্ন ছড়িয়ে পড়েছে। হাসোজ্জল মুখশ্রী টা মুহুর্তের মধ্যে ক্রোধে ছেয়ে গিয়েছে। মেহেভীন বিস্ময় নয়নে মায়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মায়ের ক্রোধের কারন সে খুঁজে পাচ্ছে না। ভ্রু যুগল কুঁচকে মায়ের রক্তিম মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করছে। মায়ের নিরবতা মেহেভীনকে ভিষণ বিরক্ত করে তুলেছে। নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারল না মেহেভীন। বিরক্তি মাখা কণ্ঠে বলল,

–কি হয়েছে, আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?

–মুনতাসিমকে তুই কি বলেছিস? যে এতটা তাড়াহুড়ো করে চলে গেল কেন?

–আমি তাকে কিছুই বলিনি। তার একটা ফোন আসলো আর সে চলে গেল।

–মিথ্যা কথা বলছিস?

–তুমি ভালো করেই জানো মা। আমি মিথ্যা কথা বলি না। তোমার বিশ্বাস না হলে তুমি তাকে ফোন দিয়ে বলো। আমি তার সাথে কোনো রুপ বাজে আচরণ করেছি কি না।

–মুনতাসিম তোকে কি বলে গেল?

–আমি তাকে কয়টা দিন বিয়ে পেছাতে বললাম। সে আমাকে বলল সেটা সম্ভব নয়। আমাদের আড়ালে কিছু গোপন তিক্ততা আছে। সেগুলো সামনে আসলে পরিস্থিতি ভয়ংকর রুপ নিবে। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতির সাথে আমি একা লড়াই করতে পারব না। আমি নাকি সামনে বড় ধরনের ধাক্কা খাব। সেই ধাক্কা খেয়ে যেন পড়ে না যাই সেজন্য সে আমার শক্তি হয়ে আমার পেছনে দাঁড়াতে চায়।

–আমার ছেলে টাকে ভিষণ ভালো লাগে। কি সুন্দর করে কথা বলে কেউ তার সাথে পাঁচ মিনিট ভালো করে কথা বললে, তার কথার মাথায় মায়ায় আঁটকে যাবে।

–তুমি আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য এত তাড়াহুড়ো কেন করছ আম্মু? কোনোভাবে আব্বুকে তুমি খু’ন করোনি তো আম্মু? রাইমা বেগম বিস্ময় নয়নে মেয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মায়ের চোখের ভাষা উপলব্ধি করতে পেরে মেহেভীন মস্তক নুইয়ে নিল। রাইমা বেগম কণ্ঠে গম্ভীরতা এনে বলল,

–আমি তোর মা তোর ক্লায়েন্ট না। বিয়ে ঠিক হবার পর থেকে তুই আমাকে একটার পর একটা জেরা করেই যাচ্ছিস। একজন মা তার সন্তানের কখনো খারাপ চাইবে না। আমিও তার ব্যতিক্রম নয়। যেদিন আমি থাকব না সেদিন বুঝতে পারবি মা কি জিনিস ছিল।

–আমি তোমাকে আঘাত করতে চাইনি মা।

–তুই মুনতাসিমকে খানিকটা অবহেলা আর অনেকটা অসম্মান দিয়েছিস। বিয়ের পরে এমন কোনো কাজ করিস না। যে ব্যবহারের জন্য আমাদের শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে স্বামীকে সন্মান করার চেষ্টা করবি। একটা মেয়ের পৃথিবীতে সবচেয়ে আপন কে জানিস? তার স্বামী! অবাক হচ্ছিস অবাক হবার কিছু নেই। তুই জীবন দিয়ে উপলব্ধি করতে পারবি। তোর জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যতগুলো মানুষ আসবে। তারা সবাই একটা সময়ের পরে জীবন থেকে চলে যাবে। কিন্তু স্বামী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোর সাথে থেকে যাবে। সেই স্বামীকে দুঃখ দেওয়ার মতো দুঃসাহস আর করিস না মেহেভীন। মুনতাসিমের মতো ছেলে সবার ভাগ্যে জুটে না। আমি যতদূর চিনেছি মুনতাসিম খাঁটি সোনা। অনেক সময় মানুষের দেখায় ভুল থাকে। যদি কখনো মুনতাসিম পরিবর্তন হয়ে যায়। তোকে প্রতিনিয়ত আঘাত করতেই থাকে। তখন যদি আমি পৃথিবীতে না থাকি, তবে তুই কেয়ামতের আগ পর্যন্ত আমাকে অভিশাপ করতেই থাকবি। একজন সন্তানের দোয়া আল্লাহ তায়ালা দ্রুত কবুল করে নেন। তোকে বিয়ে করতে আমি বাধ্য করছি। হঠাৎ করে যদি তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে যায়। তাহলে তার দায় সম্পূর্ণ আমার। তুই যতটুকু দুঃখ পাবি তার থেকে দ্বিগুন দুঃখ পাবার যোগ্য হব আমি। তোর বদদোয়ায় শাস্তির মাত্রা প্রকোপ পাবে। আমি জানিনা মৃত্যুর পরবর্তী জীবন কেমন হবে। তবে জীবনে যে পাপ গুলো করেছি। আমার জন্য অধিকতর ভয়াবহ হবে। আর যদি মনে করিস মা আমাকে সবচেয়ে ভালো কিছু দিয়ে গিয়েছে। তাহলে আমার জন্য দোয়া করিস। তোর দোয়ায় অন্তত কিছুটা হলে-ও শান্তি পাব। জীবনের এপর্যায়ে এসে মনে হবে মা আমার জন্য ভালো করেছে। নয়তো বা মনে হবে মা আমার জন্য খারাপ করেছে। যার সমাধান একটাই হবে বদদোয়া নয়তো বা ভালোবাসার দোয়া। তোর জীবনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তোকে সামনের দিকে এগিয়ে দিলাম। ভবিষ্যতে খারাপ কিছু হলে কি করবি সেটার সমাধান ও বলে গেলাম। তোমার জীবন সুন্দর ও সুখময় হোক। মায়ের কথায় বাকরূদ্ধ হয়ে গেল মেহভীন। শব্দরা ভেতর থেকে না আসার পণ করেছে। অনুভূতিরা জোট বেঁধে পালিয়েছে। এই কথা গুলোর উত্তর দেওয়ার ভাষা জানা নেই মেহেভীনের। সে নিশ্চুপ রইল। রাইমা বেগম খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে উঠতে যাচ্ছিল। তখনই মেহেভীনের নজরে পরিচিত মানুষের মুখশ্রী ভেসে উঠল। মেহেভীন খপ করে মায়ের হাত থেকে খবরের কাগজটা কেঁড়ে দিল। তা দেখে রাইমা বেগম কিছুটা আঁতকে উঠল। মেহেভীন গভীর মনোযোগ দিয়ে লেখা গুলো পড়তে শুরু করল। লেখাগুলো পড়ার সময় মেহেভীনের শিরা-উপশিরা কেঁপে কেঁপে উঠছে। হাত-পা শীতল হয়ে আসছে। মনের অজান্তেই মানুষটার জন্য ভেতরটা হাহাকার করে উঠছে। অনুভূতিরা আজ শূন্য হয়ে গিয়েছে। আহত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ছবিটির দিকে দৃষ্টিপাত করে রাখালো মেহেভীন।

–মাহতাব আংকেল খু’ন হয়েছে! তার মতো সহজ সরল লোককে কে মারলো?

–কে সে? তুই কি তাকে চিনিস?

–আমি চিনব না আংকেল খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আমাকে অনেকটা ভালোবাসা দিয়েছে। এই মানুষটার সম্পূর্ণ জীবন মানুষের প্রতারণা আর অবহেলা পেতে পেতে শেষ হয়ে গিয়েছে। আমার না ভিষণ কষ্ট হচ্ছে আম্মু মানুষ এতটা খারাপ কিভাবে হয়!

–তার পরিবার কেস করেনি?

–আংকেল তো বিয়ে করেনি। শুনেছি আংকেল একটা মেয়েকে ভালোবাসতো। কিন্তু আতংকেলের বেস্ট ফ্রেন্ড আংকেলের ভালোবাসার মানুষকে কলঙ্কিত করে বিয়ে করেছে। আংকেল মেয়েটাকে এতটাই ভালোবাসতো যে আর দ্বিতীয় বিয়ে করেনি। আংকেলের কাছে তার ভালোবাসার মানুষটা ছাড়া নাকি সব নারী বিষাক্ত লাগে।

–তারপর সেই মেয়ে তোর আংকেলের কাছে ফিরতে চায়নি?

–চেয়েছিল কিন্তু আংকেল গ্রহণ করেনি। আংকেলের বেস্ট ফ্রেন্ড তার ভালোবাসার মানুষকে ঘুমিয়ে ঔষধ খাইয়ে ছিল ।তারপর সেই মেয়ের সাথে রাত্রী যাপন করে। পরের দিন সকাল বেলা পরিকল্পনা মাফিক সেই মেয়ের ঘর থেকে আংকেলের বেস্ট ফ্রেন্ড বের হয়। সমস্ত এলাকাবাসী তাদের দিকে জু’তা ছুড়ে মারে। আশ্রাব্য ভাষায় গা’লা’গা’লি করতে থাকে এলাকায় মিটিং বসে, সেখানে সিদ্ধান্ত হয়। তাদের দু’জনকে বিয়ে দেওয়া হবে। মেয়েটা নাকি সকলের পা জড়িয়ে ধরে কান্না করেছিল। সে এসব বিষয়ে কিছুই জানতো না সে অন্য কাউকে ভালোবাসে। কিন্তু এলাকাবাসী তার কথা শুনেনি জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়।

–তারপর কি হলো?

–বিয়ের পরে মেয়েটা আংকেলের কাছে ফিরে এসেছিল। কিন্তু আংকেল তাকে ফিরিয়ে দেয়। তাকে বলে মানুষের জীবনে বিয়ে একবারই হয়। এমনিতেই মানুষ তাকে কটু কথা শোনাতে দ্বিধাবোধ করছে না। বিয়ের পরে সংসার ছাড়লে লোকে তাকে বাঁচতে দিবে না। একটা সুস্থ পরিবেশে তার সাথে সংসার করতে দিবে না। বিধাতা তার সাথে হয়তো তার জোড়া লিখেনি তাই তাদের মিলন হলো না। আংকেলের শেষ কথা ছিল, তুমি ভালো থেকো সুস্নিগ্ধা। ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এর কোনো মানে নেই। ভালোবাসার মানুষের ভালো দেখেও ভালো থাকা যায়। আমার বন্ধু তোমাকে ভিষণ ভালোবাসে। সে তোমাকে অনেক ভালো রাখবে। সে তোমাকে ভালোবাসে বলেই এত ছলনা করল। আমি তাকে কোনোদিন ক্ষমা করব না। তবে তোমার খারাপ আমি চাইব না। পৃথিবীর সমস্ত সুখ তোমার হোক মায়াময়ী। তোমার ঐ সুখের মধ্যে আমি শান্তিতে বসবাস করব। যেদিন তোমার জীবনে সুখ ফুরাবে। তোমার জীবনে দুঃখের আবির্ভাব ঘটবে। তোমার হারানোর সুখের সাথে সাথে আমিও বিলীন হয়ে যাব। যে সংসার তৈরি হয়ে গিয়েছে। সে সংসার তুমি নষ্ট করো না। আমি পরপারে তোমার জন্য অপেক্ষা করব। এই জনমে পাইনি তো কি হয়েছে। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে তোমাকে আমার করে নেওয়ার জন্য বিধাতার কাছে আর্জি করব। এতটুকু বলেই আংকেল চলে যায়। তারপর আর দু’জনের দেখা মেলেনি। জীবন কি অদ্ভুত তাই না মা একজন বিয়ের করে সংসার করছে। আর একজন তাকে না পাওয়ার বিরহে আস্ত একটা জীবন গোটা একা কাটিয়ে দিল।

চলবে…..

(মেহেভীনের বাবা-মায়ের অতীত সামনে নিয়ে আসার জন্য এগুলো লিখা প্রয়োজন। যারা নায়ক নায়িকার সিন পছন্দ করেন। তাদের কাছে এসব পর্ব ভালো লাগবে না। তাই এই পর্ব গুলো স্কিপ করার অনুরোধ রইল। কিছু কিছু পাঠক মুনতাসিম আর মেহেভীনের বিয়ের জন্য এতটা আগ্রহে বসে আছে। যেন বিয়েটা মুনতাসিম আর মেহেভীনের নয়, বিয়েটা তাদেরই। সবাই রেসপন্স করবেন। শব্দসংখ্যা:২০৪৪)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here