এলোকেশী_সে #মাহমুদা_লিজা পর্বসংখ্যাঃ৮

0
406

#এলোকেশী_সে

#মাহমুদা_লিজা

পর্বসংখ্যাঃ৮

জানালার ধার ঘেঁষে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বিছানায় এসে বসলো তোড়া। মায়ের বলা কথাগুলো বারবার নিউরনে আলোড়ন তুলছে। তারচেয়ে বেশি মন পড়ে আছে পাশের ঘরের মানুষটার কাছে। উচাটন মনটা আকুপাকু করছে এক নজর মানুষটাকে দেখার জন্য। নিজের অনুভূতিরা আজ এত বেপরোয়া কেন! কোনো বাঁধায় বন্দী করা যাচ্ছে না তাদের। নিজের কোমরে বা’হাতটা রেখে খানিক পায়চারি করল ঘরময়। মাথাটায় এবার হালকা যন্ত্রণা হানা দিল। কোন বাহানা ধরে অহনের ঘরে যাবে? গিয়ে কি বলবে? নিজের স্নায়ুতে বেশ ধকল দিতে হচ্ছে তাকে।
চট করে ঐ ঘরটায় যাওয়ার উপায় পেয়ে নিজের মাথায় নিজে চাটি মেরে বলল -“মাঝেসাঝে সিম্পল চিন্তাভাবনাও কেমন ক্রুর দেখায়! হায় খোদা! অসুস্থ মানুষকে দেখতে যাব, এতে আবার এত প্যারা নেওয়ার কি আছে? আমিও বেশি ভেবে ফেললাম। ”
আনমনে হাসল সে। নিজের এলোমেলো চুলগুলো ক্লিপ দিয়ে বেঁধে নিল। মিষ্টি হাসিটুকু ঠোঁটের কোণে টেনে নিজের ঘর ছেড়ে বের হলো গুটি গুটি পায়ে। বুকের ভেতরের অস্হির ধুকপুকানি টের পেল মেয়েটা। ধীরে ধীরে এসে দাঁড়াল শ্যাম বর্ণের পুরুষটার ঘরের সামনে। বন্ধ দরজায় টোকা দেয়ার জন্য তর্জনী ভাঁজ করলেও ফের সংকোচ করছে কিশোরী হৃদয়টা। তবুও সব সংকোচ দূরে ঠেলে কাঠের পাল্লাটায় দুটো টোকা দিল মৃদু শব্দে। ক্ষণিকের ব্যবধানে ওপাশ থেকে জবাব এলো -“দরজা খোলা।”
গমগমে পুরুষালী স্বরটা শুনে নিঃশ্বাস যেন থমকে গেছে। হাঁপানি রোগীদের মত শ্বাস টেনে দরজা ঠেলে খুলে দিল তোড়া।
বিছানায় আধশোয়া হয়ে থাকা মানুষটা দরজার পানে চোখ তুলে তাকাতেই চমকে উঠল। হাতের কনুইয়ে ভর দিয়ে উঠে বসল। ঠোঁটজোড়া আরো খানিকটা প্রশস্ত হলো। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল -“হঠাৎ কি মনে করে?”
পাশাপাশি ঘর হলেও এই কক্ষটায় দু একবার এসেছে তোড়া। অয়নের সাথে সখ্যতা থাকায় ওর ঘরটায় ভালোই আসা যাওয়া হয় তার কিন্তু অহনের সাথে বয়স আর সম্পর্কের দূরত্বটা অনেকটাই।
সংকোচ আর ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে ছোট ছোট পদক্ষেপে অহনের ঘরে পা রাখতেই মানুষটা বিছানা ছেড়ে ব্যাথা উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে বলল -“স্বাগতম, গরীবের ঘরে হাতির পা পড়ল বলে।”
খানিক কাঁপা স্বরে তোড়া জিজ্ঞেস করল -“এখন কেমন আছেন ভাইয়া? ব্যাথা কমেছে?”
ভাইয়া ডাকটা কানে আসতেই অহনের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো আপনাআপনি। মুখের আদলে কিঞ্চিৎ বিরক্তির রেশ টেনে জবাব দিল -“এতক্ষণ ভালো ছিলাম এখন মনে ব্যাথা করছে।”
কথাটা স্পষ্ট শুনতে পেল তোড়া, মানেও বুঝতে পারল তবুও না বোঝার ছল করে পাল্টা জিজ্ঞেস করল -“কেন, ব্যাথা বেড়েছে নাকি? কোথায় ব্যাথা হচ্ছে?”
অহন বুঝতে পারল তোড়া তার কথা ঠিকঠাক শুনতে পায়নি। মুগ্ধ দৃষ্টিটুকু ঐ মায়াবী আদলে রেখে জিজ্ঞেস করল -“বসবি?”
তোড়া দু’পাশে মাথা নাড়াল। চোখের অবাধ্য ভাষাটা পাছে মানুষটার কাছে ধরা পড়ে যায় সেই ভয়ে চোখ নামিয়ে জিজ্ঞেস করল -“আপনার ফোনটা দেয়া যাবে? একটা ভিডিও করেই ফেরত দিব। আমার ফোনের ক্যামেরাটা ঠিক কালারটা আনতে পারেনা।”
অহন কিছু একটা ভাবল। নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে ‘চ’ শব্দ করে বলল – “উহু দেয়া যাবে না। অয়নকে বলছি দাঁড়া, ওর ফোনের ক্যামেরা আমার চেয়ে ভালো।”
তোড়া মাথাটা ডানে কাত করে সায় জানাল, পুনরায় দৃষ্টি রাখল শ্যাম বর্ণের মানুষটার উপর। নিষ্পলক তাকিয়ে আছে মানুষটা, একবারের জন্যও দৃষ্টি সরায়নি এলোকেশীর আদল থেকে।
তোড়া এবার নিজের চাহনিটুকু ফিরিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বলল -“আমার ওড়নাটা দিয়ে দিন, কাল কলেজে যেতে হবে।”
অহন যেন জানতো তোড়া কি বলবে, তাইতো উত্তরও সাজিয়ে রেখেছে। কাঁধ উচিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল -“ময়লা লেগেছিল, তাই ফেলে দিয়েছি।”
আঁতকে উঠল তোড়া। পোশাক দুটো রাখলেও ওড়না একটাই রেখেছে কলেজের জন্য। মুখটা ভার করে বলল -“ফেলেছেন কেন? আমাকে দিলে তো ধুয়ে নিতাম, কলেজের ভেতর হিজাবের উপর ওড়না না রাখলে শাস্তি দেয়। ”
হঠাৎ জোছনার আকাশে কালো মেঘের মত তোড়ার দুধে আলতা আদলটায় আষাঢ়ের মেঘ জমেছে। মনটা কেমন বিষিয়ে উঠল, মাকে বললেই তিনি বাধ্য করবেন নিজাম মজুমদারের কাছ থেকে টাকা নিতে। কথাটুকু ভাবতেই নিজের ভেতরের সুপ্ত অনুভূতিটাকে ফের চাপা দিয়ে নিজের কাঠিন্যে ফিরে এলো। কোন কথা না বাড়িয়ে এক পা দু পা করে পিছিয়ে দরজার দিকে ঘুরে হাঁটা ধরল। অহন বিস্ময়ে চেয়ে রইল। এলোকেশীর আচমকা প্রস্হান তাকে খানিক ব্যাথিত করেছে। দ্রুত পায়ে তোড়া ঘর ছাড়লেও অহন তাল মেলাতে পারল না। খুড়িয়ে খুড়িয়ে নিজের ঘর ছেড়ে অয়নের ঘরে আসল। কিন্তু ভাইয়ের ঘরটা ফাঁকা দেখে আবার নিজের ঘরে ফিরে গেল অহন। মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে দ্রুত আঙ্গুল চালাচ্ছে তাতে। শরীরের ব্যাথার কথা বেমালুম ভুলে গেছে যেন।

_________

মাথার উপর মৃদু আলো জ্বলছে। রঙচঙে সাজানো রেস্টুরেন্টের ভেতর এক কোণে বসে আছে অনু। বারবার মুঠোফোনটা দেখছে। তোড়ার আসার অপেক্ষা করছে। সকালে বলেছিল বাসায় যেতে কিন্তু দুপুরে বলেছিল রেস্টুরেন্টে আসতে। পিঠের উপর ছেড়ে রাখা চুলগুলো এবার ব্যাগ থেকে ক্লিপ বের করে বেঁধে নিল। তোড়াকে মেসেজ করল -“মহারাণী, আপনি কবে আসবেন?”
জুতসই উত্তর না পেয়ে ফোনটা আছড়ে ব্যাগের উপর রেখে রাগে গজগজ করতে লাগল। আচমকা শান্ত হয়ে গেল পরিচিত কন্ঠস্বরের গম্ভীর ধ্বনি শুনে -“সরি, বেশ লেট করে ফেললাম। ”

সামনে বসা মানুষটার দিকে তাকিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল অনু। ভূত দেখার মত চমকে জিজ্ঞেস করল -“আপনি!”
অয়ন পানির বোতলটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল -” আমিই, তোড়া আসবে না, আমি এসেছি। আমি আসতে বললে তো আসতে না, তাই তোড়াকে দিয়ে বলিয়েছি।”
অনু খানিক বিরক্ত হলো। মুখ ভার করে বলল -“যদি বাবা বা ভাইয়া দেখে নেয়, তাহলে রক্ষে নেই।”
অয়ন ওয়েটারকে ডেকে দু’টো কফির অর্ডার দিল। ওয়েটার চলে যেতেই দৃষ্টি ঘুরালো অনুর দিকে। ঐ এক চাহনিতেই ঘায়েল হয়েছিল মেয়েটি। সেই পরিচিত চাহনি, ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসিতে আবারও পরাস্ত হলো অনু। মিনমিন করে বলল -“আমার ভয় লাগে, বাবা দেখলে অনর্থ হবে।”
হাতে থাকা চকলেট বক্সটা অনুর দিকে এগিয়ে দিল অয়ন। শুষ্ক ঠোঁটজোড়া জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নিল। ঠোঁট গোল করে নিশ্বাসটা ছেড়ে জিজ্ঞেস করল -“প্রেম করার সময় মনে থাকে না ঘরে বাবা আর বড় গু/ন্ডা ভাই আছে! হুটহাট যন্ত্রের ভেতর ভালবাসি কথাটা পাঠাতে মনে থাকে না বাসায় বাবা আর ভাই আছে?”
মাথা চুলকালো অনু। ওড়নাটা টেনে এবার মাথাটা ঢাকল। হাল ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ বসে রইল। ওয়েটার কফিটা টেবিলে রাখতেই অয়ন বলল -“তুমি না চাইলে আর এভাবে দেখা করব না।”
অনু বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল -“আজ আপনি এত ভদ্র মুডে কেন?”
অয়ন হাসল। মেয়েটাকে খানিক রাগানোর জন্য বলল -“বাসায় বিয়ের কথাবার্তা চলছে আমার, ভাবছি সম্পর্কটা রেখে কি হবে?”
কথাটা অনুর কানে পৌঁছাতেই তার হাতে থাকা চকলেট বক্সটা ছুঁড়ে মারল অয়নের দিকে। দাঁত কিড়মিড় করতে করতে চোখে জল চলে এলো তার। হাতের পিঠ দিয়ে জল মুছে জিজ্ঞেস করল -“খু/ন করে ফেলব একদম। গলা কে/টে ফেলব। ফাজলামো হচ্ছে আমার সাথে? ইস কি শখ! উনি এতদিন আমার সাথে প্রেম করে আরেকজনকে বিয়ে করবে!”

অনুর অস্হিরতা আর অভিমানটুকু বুঝে নিয়ে অয়ন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কাঁধ উচিয়ে জিজ্ঞেস করল -“কোন পুস্তকে লেখা আছে যার সাথে প্রেম করবে তাকেই বিয়ে করতে হবে? আমিতো বলব ডজন খানেক প্রেম করে একটা বিয়ে করা উচিত।”
কথাটা বলতে বলতে চশমাটা খুলে টেবিলে রাখল সে। ঘেমে উঠা কপালটাকে পকেট থেকে রুমাল বের করে মুছে নিয়ে কফিতে চুমুক দিল। চোখ তুলে দেখলো অনুর গাল বেয়ে দরদরিয়ে অশ্রুরা নেমে আসছে। নাকের আগা ফুলে লালচে হয়ে গেছে ততক্ষণে। অতিরিক্ত রেগে গেলে মেয়েটা বাকহীন হয়ে যায়।
অয়ন শীতল দৃষ্টিতে অনুকে পর্যবেক্ষণ করছে আর কফিতে ছোট ছোট চুমুক দিচ্ছে। তার সেই অপলক চাহনি আজ অনুকে শান্ত করতে পারেনি। বারবার হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চোখের কিনারটা লালচে হয়ে উঠেছে। অয়ন এবার একটা টিস্যু বাড়িয়ে দিল অনুর দিকে। চোখজোড়া তাতিয়ে অয়নের দিকে তাকাল মেয়েটা। অয়নের শীতল দৃষ্টি যেন ক্রমশ আরো শীতল হলো। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সে তার সামনে বসা রমণীকে দেখেই যাচ্ছে। সবার সাথে মুখে মুখে তর্ক করা ছেলেটা এই একটা মানুষের সামনে খুব আহ্লাদী। সে এবার ডান হাতের তর্জনীটা বাড়িয়ে অনুর চোখের জল মুছতে চাইল। অনু মুখ সরিয়ে নিল। নীরব অভিনানের পর অয়ন বলল -“আমার বিয়েতে তোমার নিমন্ত্রণ রইল।”
এবার আর নিজেকে সংযত করতে পারলো না অনু। হাতের সামনে থাকা কফি মগের সবগুলো কফি ছুঁড়ে দিল অয়নের গালে। হাতে থাকা মগটা উঁচিয়ে ধরল অয়নের মাথায় মারার জন্য, তার আগেই অয়ন দাঁড়িয়ে হাত ধরে থামাল তাকে। মৃদু স্বরে বলল -“এত রাগ নিয়ে আমার সাথে সংসার করতে পারবে না তো। আমি সারাদিনই উল্টোপাল্টা বকব, রাগ করলে আরো বলব। তারপর যখন অনেক রেগে যাবে তখন রাগ ভাঙানোর দায়ও আমার।”
অনু ভ্রু কুঁচকালো, অয়নের শেষোক্ত কথাগুলো বার দুয়েক মনে আওড়ালো। কথাগুলোর মর্ম ধরতে পেরে শান্ত হয়ে বসে পড়ল চেয়ারে। আবারো হেরে গেল মানুষটার ধুরন্ধরতায়। মাথা নুইয়ে নিজের হেরে যাওয়া আদলখানা লুকাল। তাতেই যেন বিপত্তি ঘটল। এতক্ষণে ভদ্র সেজে বসে থাকা মানুষটা বলেই বসল -“এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে? এমন ভাবসাব করছো যেন বাসরঘরে বসে আছো! আজগুবি মানুষজন। এটা রেস্টুরেন্ট, এত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।”
মুহূর্তেই অনুর ভালোলাগা, অনুভূতি সব খেই হারালো। মেজাজের নিয়ন্ত্রণ আবার হারিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে গটগট হয়ে হাঁটা ধরল। ওদিকে অয়ন চেঁচিয়ে বলল -“আরে বিল আমার ঘাড়ে দিয়ে পালাচ্ছ কেন?”
কথাটুকু বলতে বলতে ওয়েটারের হাতে পাঁচশ টাকার নোটটা দিয়ে ছুটল সে। রেস্টুরেন্টের ফটকটার সামনে এসে প্রেয়সীকে আটকাল। কোমল হাতখানা আলতো করে টেনে ধরল। এটা রাস্তা না হলে নির্ঘাত এই পুরুষটার বুকে ঝাপিয়ে পড়ত অনু।

_________

শাশুড়ির পাশে বসে রুবাবা পান সাজিয়ে দিচ্ছে। অনিমা এসেও বসল। হাত বাড়িয়ে একটা পান চেয়ে নিল। কলি এসে সেও পান খাবার বায়না করল। সন্ধ্যার সময়টা বাড়ির মেয়েরা বসে আড্ডা জমায় এই ঘরটায়। শাশুড়ির পাশে বসে সবাই পুরোনো দিনের কথা শুনতে ব্যস্ত। তোড়াও এসে বসল দাদীর পাশে। হা করে গিলছে সব কথা। মাঝে মাঝে সবাই গল্প শুনে আফসোসে বুক ভাসায়, আবার ক্ষণিক বাদে মেয়েলি হাসিতে মজুমদার বাড়িটা জমে উঠে। কথায় কথায় নিজামের নামটা উঠে আসে। তাতেই বুকের ভেতর হাহাকার করে উঠল রুবাবার। কেমন পরগাছার মত পড়ে আছে। যদি আবার পড়াশোনাটা শুরু করত! মেয়ের অধিকারের জন্য, আর ঐ মানুষটাকে তার অপরাধের শাস্তি দেয়ার জন্য আগাছা হয়ে পড়ে আছে। আজকাল মেয়ের স্বচ্ছন্দের জন্য নিজাম মজুমদারের প্রতি কড়া হুশিয়ারি আরোপ করেছে রুবাবা। মেয়ের সব পাওনা ঠিকঠাক মত বহন করার জন্য ঐ মানুষটাকে বাধ্য করা হয়। অথচ ঐ টাকার নূন্যতম অংশও তোড়া নিজের কাজে ব্যয় করেনা। তার বয়সী মেয়েগুলো যখন রঙের দুনিয়ায় গা ভাসিয়ে দেয় তখন মেয়েটা নিজের পড়াশোনার খরচটা চালানোর জন্য রাত জাগে। অনুষ্ঠানে সবাই যখন নতুন পোশাকে নিজেকে সাজিয়ে পরিপাটি হয় তখন ঐ মেয়েটা নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখে। সে স্বপ্ন দেখে একদিন এই নতুন নতুন পোশাকের কারিগর সে হবে। নিজেও তখন সুসজ্জিত হয়ে সবার সামনে ডানা মেলবে।
তবুও রুবাবা মেয়ের জন্য টাকাটা ফিক্সড ডিপোজিট করে রেখে দিয়েছেন। যদি কখনো বাবা মেয়ের দূরত্ব ঘুচে তখন হয়ত টাকাটা কাজেও লাগতে পারে।
চোখজোড়া বন্ধ করে রুবাবা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। মেয়ের একগুঁয়েমি স্বভাব, একরোখা জেদের কাছে কখনোই স্বচ্ছন্দ ঘেঁষতে পারেনি। নিজেকে চাহিদার ধারে না টেনে, চাহিদা থেকে যোজন দূর দিয়ে চলে মেয়েটা। রুবাবারও ইচ্ছে করে মেয়েটাকে আভিজাত্যপূর্ণ দেখতে কিন্তু মেয়ের এক কথা – যতটুকু সে নিজে অর্জন করতে পারবে ঠিক ততটুকু চাহিদাই সে রাখবে। শোষক হয়ে না বেঁচে, শোষিতের মত দলিত না হয়ে নিজ চেষ্টায় জীবন সুন্দর করতে চায়। চকমকে জীবনটা তাকে টানে না। আভিজাত্যের লালসা তার কিনারে ঘেঁষতে পারেনা। কি অদ্ভুত মেয়ে!
রুবাবা চোখ মুছে মেয়েকে ছোট্ট করে জিজ্ঞেস করল -“কি খাইছিস?”
হাসিমুখে মাথা দুলিয়ে তোড়া জানাল কিছু খায়নি। নিত্যদিনের এই প্রশ্ন কিন্তু মেয়ের জবাব বদলায় না। রুবাবা মৃদু স্বরে বলল – নুডলস খাবি? বানাব?
মেয়ে জবাব হীন, একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়াল। নিস্তব্ধতা গ্রাস করা মেয়েটা তখন দাদীর ঘরটা ত্যাগ করল। মেয়ের গমন পথে তাকিয়ে রুবাবার দীর্ঘশ্বাস আঁড়চোখে দেখল সবাই। মেয়েটার ছন্দহীন জীবনটা রাঙিয়ে দিতে কেউ কি আসবে? সেই অপেক্ষায় বাকিরা থাকলেও রুবাবার দৃঢ় বিশ্বাস – মেয়ে স্বনির্ভর হবে। সবার সামনে মাথা উঁচু করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানোর যোগ্যতা রাখবে।

চলবে……….

[বিক্ষিপ্ত মনের এলোমেলো ভাবনা। আজকের খাপছাড়া পর্বটার জন্য ছাড় পাব আশা করি। মন বসাতে পারিনি হয়ত।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here