তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল #নুসাইবা_ইসলাম_হুর #পর্বঃ১৫

0
272

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১৫

আমি ইয়ানাকে বিয়ে করতে চাই আর সেটা আজকের ভিতরেই।

পারফির এ কথা শুনে সবাই চমকে তাকালো পারফির দিকে।

সবাইকে এভাবে তাকাতে দেখে পারফি ফের বললো এটাই এখন একমাত্র রাস্তা ওকে রক্ষা করার। আজ আমাদের জন্য ওই নিস্পাপ মেয়েটার কলঙ্কে দাগ লাগুক এটা কখনো চাই না। আজ ওর পাশে আমরা না দাঁড়ালে এ সমাজ ওকে বাঁচতে দিবে না। আমাদের জন্য নিষ্পাপ একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হোক সেটা নিশ্চয়ই কেউ চাও না। তাই আশা করি এ ব্যপারে কারো আপত্তি থাকবে না। এবার তোমরা কি করবে সেটা জানাও আমাকে। হাতে সময় কম যা করার আজকের ভিতরেই করতে হবে।

পিয়াস বেগম সাথে সাথে বললেন আমিও এই কথাটাই ভেবেছি। এটাই এখন একমাত্র রাস্তা ওকে রক্ষা করা। আর ইয়ানা কতোটা ভদ্রমেয়ে তোমরা সবাই জানো। এখানে কারো আপত্তি থাকার কথা না।
তারপর শাহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো কি বলো ভাবি তুমি?

শাহানা বেগম বললে আমারও তাই মনে হয়। মেয়েটা নম্র ভদ্র খুব সহজসরল। এখন ওর পাশে আমাদের সবার দাঁড়ানো উচিৎ। তাছাড়া আমাদের পারফি নিজ থেকেই যেহেতু রাজি সেহেতু আমাদের এ দিকে আগাতে কোনো সমস্যা নেই এবার।

পিয়াসা এবার পাভেল চৌধুরীর দিকে তকিয়ে বললো তোমরা কি বলো?

পাভেল চৌধুরী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো তোমরা সবাই যেহেতু রাজি সেহেতু আমরা আর কি বলবো। ইয়ানা মামনীকে আমার পুত্রবধূ করে আনতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সমস্যা হলো ইসহাক আহমেদ কি রাজি হবে?

শরীফ আহমেদ বললো ইসহাক আহমেদ খুব নম্র ভদ্র একটা লোক। আশা করি উনি মানবেন, মেয়ের দিকে তাকিয়ে হলেও মানবেন।

সবার কথা শুনে প্রীতির খুশি দেখে কে। ওর অনেক ইচ্ছে ছিলো পারফির বউ করে ইয়ানাকে আনার কিন্তু কখনো কাউকে বলা হয় নি। অবশেষে ওর ইচ্ছে পুরোন হতে চলেছে এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে?

পিয়াস বেগম বললো তাহলে আর সমস্যা কোথায় তুমি এখনি ইসহাক ভাইর কাছে ফোন করে বিষয়টা খুলে বলো।

পাভেল চৌধুরী সম্মতি দিয়ে ফোন নিয়ে ইসহাক আহমেদ এর কাছে ফোন করতে করতে বাহিরে চলে গেলো শরীফ আহমেদকে নিয়ে।

তখন শাফিন বললো যা বাবা আমাকে কেউ গোনায় এই ধড়লো না। আমার কাছ থেকে কেউ অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন ও মনে করলো না।

শাফিনের কথায় সবাই হেসে দিলো।

পারফি খোচা মেরে বললে তুই ইম্পর্ট্যান্ট কেউ না যে তোর থেকে অনুমতি নেওয়া লাগবে।

শাফিন বললো এতো বড় কথা? আমার বোনকে বিয়ে করবি আর আমাকে বলছিস আমি ইম্পর্ট্যান্ট কেউ না? যা তোর কাছে আমার বোন বিয়ে দিবো না।

পারফি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো তোর দেওয়া লাগবে না আমি নিজেই তুলে আনতে পারবো।

পারফি আর শাফিনের কথায় সবাই উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলে।
পিয়াসা বেগম হেঁসে বললে দুটোয় আর বড় হলি না এখনো ছোট বেলার মতো এক জনের পিছে আরেকজন লেগে থাকিস।

কিছুক্ষণ পর ফিরে আসলো পাভেল চৌধুরী আর শরীফ শিকদার। তাদের আসতে দেখে পিয়াসা উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো ইয়ানার বাবা কি বলেছে।

পাভেল চৌধুরী বললো তার কোনো সমস্যা নেই এখন সব কিছু ইয়ানা মামনীর উপরে। ইসহাক আহমেদ বলেছেন ইয়ানা রাজি হলে তার কোনো আপত্তি নেই কিন্তু ইয়ানা রাজি না হলে তার কিছু করার নেই। তিনি বললেন কিছুক্ষণ পর জানাবেন ইয়ানা কি চায়।

সবাই এবার কিছুটা টেনশনে পড়ে গেলো। ইয়ানা রাজি হবে তো?
—————————–

ইয়ানা চুপচাপ শুয়ে আছে। মাথার কাছে ইমা বসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন কথা বলছে কিন্তু ইয়ানার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের করতে পারলো না। জ্ঞান ফেরার পর থেকে একটা কথাও বলে নি চুপচাপ সিলিংফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইলো।

তখন রুমে প্রবেশ করলো ইসহাক আহমেদ। আস্তে ধীরে ইয়ানার পাশে বসে ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো মামনী কিছু কথা বলতে চাই তোমাকে।

ইয়ানা তাকালো ইসহাক আহমেদের দিকে কিন্তু কিছু বললো না।

ইসহাক আহমেদ বলতে লাগলো চৌধুরী বাড়ি থেকে ফোন করেছে। তারা তোমাকে তাদের পুত্রবধূ করে নিতে চায় তাও আজকের ভিতরে। মিডিয়া তোমাকে আর পারফিকে নিয়ে অনেক বাজে কথা বলেছে। তারা মিডিয়ার মুখ বন্ধ করেছে কিন্তু মামনী এই সমাজের মুখ কিভাবে বন্ধ করবে? পারফি একটা ছেলে মানুষ তাই ওর দিকে কেউ আঙুল তুলবে না কিন্তু তুৃমি একটা মেয়ে মামনী। তোমাকে এ সমাজের মানুষ সুস্থ ভাবে বাঁচতে দিবে না। সবাই তোমার দিকে আঙুল তুলবে। তোমাদের সাথে কি ঘটেছে সেটা আমরা জানি কিন্তু সমাজ জানে না। সমাজ জানলেও তারা উল্টোটাই ঠেলবে সব সময়। সবাই তোমাকে দোষারোপ করবে সেগুলো একজন বাবা হয়ে কি করে সহ্য করবো আমি? তুৃমি নিজেও পারবে সমাজের ওই ধারালো কথা সহ্য করতে?

এখন তুমি বলতে পারো চৌধুরী পরিবার তোমাকে করুণা করে লোকের মুখ বন্ধ করার জন্য পুত্রবধূ করতে চায়। তুমি কারো করুণার পাত্রী হতে চাও না। সত্যি বলতে তারা যদি করুণা করতো তাহলে আমি নিজেও কোনো দিন তাদের হাতে তোমাকে তুলে দিতে রাজি হতাম না।
কিন্তু সত্যি বলতে তারা তোমাকে করুণা করছে না মামনী। তারা তোনাকে ভালোবেসে নিতে চায়।
আমার থেকে তুমি চৌধুরী পরিবারকে ভালো করে চেনো। তুমি জানো তারা কেমন মানুষ। তারা ক্ষমতশীল মানুষ তারা কয়েক ঘন্টার ভিতরে মিডিয়ার মুখ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। বাকি রইলো সমাজের মানুষ, তারা কখনো সাহস ও করতে পারবে না তাদের নিয়ে কটু কথা বলতে। কিন্তু আমাদের দেখো আমরা তাদের মতো ক্ষমতাবান লোক না। আমরা চাইলেও পারবো না সমাজের মুখ বন্ধ করতে। তারা তোমার দিকে আঙুল তুলবেই।
এখন কথা হলো চৌধুরী পরিবার এতো ক্ষমতাবান হওয়ার পর ও তারা মানুষের কথার ভয়ে তোমাকে নিতে চায়? সেটা কিন্তু না মামনী তারা তোমাকে ভালোবেসে তাঁদের ঘরে নিতে চায়। তুৃমি সমাজের কাছে ছোট হও এটা তারা চায় না। এটা তোমার জন্য তাদের করুণা না মামনী এটা তোমার জন্য তাদের ভালোবাসা। আমি এই কয়দিনে তাদের যতটুকু চিনেছি মামনী তাতে বুঝেছি তারা খুবি ভালো মানুষ, তোমাকেও খুব ভালোবাসে। তোমরা নিখোঁজ হওয়ার পর তারা পারতো শুধু তাদের ছেলের কথা চিন্তা করতে কিন্তু তারা সমান পরিমাণ তোমার জন্য ও চিন্তিত ছিলো।

তুমি পারফিকে দেখো যে ওই বিপদে তোমাকে ফেলে রেখেও আসতে পারতে কিন্তু ও তোমাকে অক্ষত অবস্থা নিজের সবটা দিয়ে আগলে নিয়ে এসেছে। সব শেষে বলবো ওই পরিবারকে আমার থেকে তুমি আরো ভালো করে চেনো তারা কেমন মানুষ। এখন সবটা তোমার উপরে মামনী এখানে কোনো জোর নেই। তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে আমি তাদের আসতে বলি আর তুমি যদি রাজি না থাকো তাহলে আমি তাদের না করে দিবো। আমার কাছে তোমার মতামতটাই মেইন তুমি যেটা বলবে সেটাই হবে। এখন তুমি বলো তুমি কি চাও?

ইয়ানা এতক্ষণ চুপচাপ ইসহাক আহমেদের কথা শুনে গেলো। তার একটা কথাও মিথ্যে না সবটাই সত্যি। ওই পরিবারের প্রতিটা মানুষ কতোটা ভালো সেটা ওর চেয়ে ভালো আর কে জানে? মনে পড়লো পারফির কথা যখন বন্দী ছিলো তখন নিজের দিকে একবার না তাকিয়ে ওকে রক্ষা করার জন্য মরিয়া হয়ে ছিলো। পারফিকে ও মন থেকে শ্রদ্ধা করে। কিন্তু বর্তমানে ইয়ানা কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না। মনটা কেমন পাথর হয়ে গেছে, না লাগছে আনন্দ না লাগছে কষ্ট। মানুষের কথা বাদেই দিলো নিজের মায়ের মুখে তখন এর কথা গুলো শুনে একবার ও ইচ্ছে হলো না বেঁচে থাকার। ভিতরটা পাথরে রুপ নিয়েছে। সবটা সহ্য করে নেওয়া ক্ষমতা থাকলেও নিজের মায়ের মুখে ওসব কথা শোনার কোন সন্তানের ক্ষমতা আছে?

তাচ্ছিল্য হাসলো ইয়ানা। ইয়ানা জানে ওর উপরে ইতি বেগম সবসময় বিরক্ত কিন্তু এতোটা বিরক্ত তা কখনো ভাবে ও নি ও। ঠিক করলো ইতি বেগমকে মুক্তি দিয়ে দিবে। হ্যা মুক্তি, এখান থেকে চলে গিয়ে তাকে সারাজীবনের জন্য মুক্ত করে দিবে। আর ওকে দেখে তার বিরক্ত হতে হবে না। মায়ের একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কেউ আকাঙ্খা নিয়ে বসে থাকবে না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ গড়িয়ে পানি পড়লো কয়েকফোটা। কলিজাটা কেমন যন্ত্রণায় ছিড়ে যাচ্ছে না পারছে কাউকে বলতে আর না পারছে সহ্য করতে।

ইয়ানাকে কান্না করতে দেখে ইসহাক আহমেদ বিচলিত হয়ে বললো তুমি এ বিয়েতে রাজি না মামনী? আমি এখনি তাদের ফোন করে না করে দিচ্ছি তবুও তুমি কান্না করো না। তোমার কষ্ট আমার সহ্য হয় না মামনী আমি এখনি তাদের না করে দিচ্ছি এ বলে উঠে চলে যেতে নিবে তখন ইয়ানা হাত ধরে ফেললো।

ইয়ানা হাত ধরাতে তিনি কোমন গলায় বললো কিছু বলবে মামনী?

ইয়ানা অনেক কষ্টে মুখ থেকে বের করলো তাদের আসতে বলো বাবা।

ইসহাক আহমেদ ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো তুমি মন থেকে বলছো তো এই কথা মামনী? তুমি মনের বিরুদ্ধে কিছু করো না, তোমার মন যেটা বলছে তুমি সেটা করো। তোমার সব কথার পাশে আমি আছি।

ইয়ানা অসহাক আহমেদের দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বললে আমি মন থেকে বলছি বাবা তুমি তাদের আসতে বলো।

ইসহাক আহমেদ খুশি হলেন ইয়ানার কথায়। ইয়ানার সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে তিনি চলে গেলেন বাহিরে চৌধুরী পরিবারকে কথাটা জানাতে।

ইসহাক আহমেদ যেতে ইয়ানা ইমাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না করে বলতে লাগলো আপু মাকে মুক্তি দিয়ে আমি চলে যাবো এবার নিশ্চিই মা খুব খুশি হবে তাইনা? আমি যাওয়ার পর মাকে বলো তার এই মেয়েটা তাকে খুব ভালোবাসে।

ইমার চোখেও পানি কষ্টে বুকটা ভারী হয়ে আছে। এই নিস্পাপ মেয়েটাকে কিভাবে পারলো এতো অবহেলা করতে? এতো পাষাণ আমার মা? মা তো আগে এমন ছিলো না তাহলে কেনো এখন এমন হয়ে গেলো? কেনো আমার এই নিষ্পাপ বোনটাকে এতো কষ্ট দিলো?
ইমা নিজেকে সামলে ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো কান্না করে না আমার কলিজার বোন। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা সবাই পাশে আছিতো সোনা। আমাদের মায়ের ভালোবাসা পাসনি এই জন্য দেখ আল্লাহ তোকে এতো ভালো একটা মা এনে দিচ্ছে। প্রীতির আম্মু তোকে মায়ের অভাবটা দেখবি মুছে দিবে। তিনি খুব ভালো একটা মানুষ। আমি খুব খুব খুশি তুই ওমন একটা পরিবার পাবি। এখন থেকে আর কান্না না নতুন জীবনে পা দিয়ে নতুন করে জীবনটা শুরু করবি। পুরোনো অতীত সব জীবন থেকে মুছে ফলবি। অনেক অনেক সুখী হ এই দোয়া করি বোন আমার।

ইয়ানা আর কিছু বললো না চুপটি করে ইমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে রইলো।

এদিকে ইসহাক আহমেদ ফোন করে ইয়ানার মতামত জানাতে চৌধুরী পরিবারে খুশি উপচে পড়তে লাগলো। সবচেয়ে খুশি হয়েছে প্রীতি, খুশির কারনে নাচতে নাচতে পুরো ড্রয়িংরুম জুরে চক্কর দিতে লাগলো।

প্রীতি পাগলামো দেখে শাফিন প্রীতির মাথায় গাট্টা মেরে বললো ছাগলেরর মতো লাফালাফি করে পড়ে যেয়ে পা ভাঙলে তোকে রেখেই চলে যাবো আমরা।

প্রীতি ক্ষেপে বললো তুৃমি ছাগল। তোমাকে রেখে আমরা চলে যাবো। এহ আসছে আমাকে রেখে যেতে। আমার জানের বেস্টু আমার ভাবি হতে চলেছে আর আমাকে নাকি না নিয়ে যাবে।

প্রীতির কান্ডকলাপ দেখে সবাই হেঁসে উঠলো। তারপর পাভেল চৌধুরী বললে সব ব্যবস্থা করতে হবে তো সবাই রেডি হয়ে নেও।

প্রীতি খুশি হয়ে সবার আগে এক দৌড়ে উপরে উঠে গেলো রেডি হতে তারপর একে একে সবাই চলে গেলো রেডি হতে।

শাফিন যাওয়ার আগে পারফির দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো তবে এই তাহলে তোমার সেই স্নিগ্ধ ফুল?

পারফি কিছু বললো না শুধু হাসলো তৃপ্তির হাসি।

#চলবে?

পারফি আর ইয়ানার বিয়ের দাওয়াত সবাইকে। সবাই গিফট নিয়ে এসো🙃

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here