তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল #নুসাইবা_ইসলাম_হুর #পর্বঃ১৭

0
223

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১৭

ইয়ানা গুটিশুটি হয়ে বেডে বসে আছে এক রাশ অস্বস্তি নিয়ে। দু হাত কচলাতে লাগলো অসস্তিতে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছে। তখন হুট তখন ইমা পারফিকে নিয়ে রুমে এসে দিয়ে গেলো। হঠাৎ করে পারফিকে এমন আশা করে নি। বুকের ভিতর ধুকপুক ধুকপুক করতে লাগলো সেই থেকে এখন পর্যন্ত ধুকপুকনি করেই চলেছে। একরাশ অস্বস্তি নিয়ে স্টাচু হয়ে বসে আছে। অস্বস্তি আরো কয়েক গুন বাড়িয়ে দিচ্ছে পারফির ধারালো চাওনি। কোনো কথা না বলে চুপচাপ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

এদিকে পারফি শুক্ষ ভাবে ইয়ানাকে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। ড্রেসিংটেবিলের সাথে হেলান দিয়ে ইয়ানার কার্যকলাপ দেখতে লাগলো। তখন রুমে প্রবেশ করে বিড়াল ছানার এই লুক দেখে থমকে গিয়েছিলো পারফি। মেরুন রঙের সিম্পল একটা শাড়ি পরিহিত সিম্পল সাজে ইয়ানাকে দেখে হার্টবিট মিস করে ফেললো। চোখ সরানো দায় হয়ে পড়েছিলো। আজ থেকে এই বিড়াল ছানা একান্ত ওর ভাবতেই একরাশ ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো মন। তখন মাথায় দুষ্টবুদ্ধি চাপলো, ইয়ানাকে একটু লজ্জায় ফালানো ছিলো মেইন উদ্দেশ্য। কেনো যেনো বিড়াল ছানার লজ্জমাখা মুখশ্রী দেখার তীব্র ইচ্ছে জাগলো মনে তাই তখন থেকে কোনো কথা না বলে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে রইলো এতে ইয়ানা লজ্জায় মাথা নুইয়ে এভাবে হাসফাস করে চলেছে। তা দেখে পারফি ঠোঁট কামড়ে হাসলো।
বিড়াল ছানাকে আর অস্বস্তিতে ফালাতে চাইলো না তাই গলা পরিস্কার করে কোমল স্বরে ডাকলো…. ইয়ানা।

ইয়ানা চমকে পারফির দিকে তাকালো। এই প্রথম পারফির মুখে নিজের নাম শুনলো। এই প্রথম নিজের নাম পারফির মুখে শুনে বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। চমকে পারফির দিকে তাকিয়ে রইলো।

তা দেখে পারফি ফের ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো কিছু কথা বলার ছিলো অনুমতি দিলে বলতে পারি।

ইয়ানা নিজেকে সামলে আস্তে করে বললো হ…হুম বলুন।

পারফি এবার কিছুটা সিরিয়াস হয়ে ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো এই বিয়েতে তুৃমি রাজি তো?

এ কথার উত্তরে ইয়ানা কি বলবে খুঁজে পেলো না। এর উত্তর যে ওর নিজেরও জানা নেই। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো আসলেই কি আমি এ বিয়েতে রাজি? কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না নিজের ভিতর। কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে ইয়ানা মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইলো।

পারফি কিছুক্ষণ ইয়ানার দিকে তাকিয়ে থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে বললো নীরবতা কি তাহলে সম্মতির লক্ষণ হিসেবে ধরে নিবো মিস বিড়াল ছানা?

ইয়ানা কি বলবে কি করবে কিছুই বুঝতে পারলো না। মনের ভিতর কেমন এক জড়তা কাজ করছে। মন কি চাচ্ছে তা ওর নিজেরও জানা নেই।

পারফি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো ওঁকে আমার উত্তর আমি পেয়ে গেছি চলো তাহলে এ বলে ইয়ানার হাত ধরে ওকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরলো।

ইয়ানা কেঁপে উঠলো পারফির স্পর্শে। এই প্রথম পারফির স্পর্শে অন্য কিছু অনুভব করলো। বুকের ভিতর ধুকপুকানি বেড়ে গেলো কয়েক গুণ। কাঁপা কাঁপা পায়ে পারফির সাথে হেঁটে চলেছে।

পারফি ড্রয়িংরুমের কাছে এসে ইয়ানার হাত ছেড়ে দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে চলে গেলো।

ইয়ানা ধীরপায়ে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতে ইমা এসে ইয়ানাকে ধরে নিয়ে পারফির পাশে বসিয়ে দিলো। বুকের ভিতর ধুকপুকনি বেড়েই চলেছে। এ কেমন অনুভূতির সাথে পরিচয় হচ্ছে ইয়ানার জানা নেই।

অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সুষ্ঠু ভাবে দুজের বিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে গেলো। আবদ্ধ হয়ে গেলো দুজন এক পবিত্র বন্ধনে।

তৃপ্তির হাসি হাসলো পারফি। অবশেষে স্নিগ্ধ ফুলকে নিজের করে পেয়ে গেলো। এই নিস্পাপ মায়াবী মেয়েটাকে পারফি ভালোবাসে কিনা জানা নেই কিন্তু এই ফুলের আশপাশে থাকলে বুকের ভিতর এক শান্তি অনুভব করে। ইচ্ছে হয় স্নিগ্ধ ফুলকে সব সময় বুকের মাঝে আগলে রেখে সব কষ্ট দূর করে দিতে।
————————————-
অবশেষে বিদায়ের সময় হয়ে আসলো। ধীরে ধীরে বুক ভারী হয়ে উঠছে ইয়ানার। কষ্ট হচ্ছে, খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে ভিতরে ভিতরে।

ইয়ানা ধীর পায়ে হেঁটে ইতি বেগমের রুমে প্রবেশ করলো। দেখলো ইতি বেগম খাটের সাথে হেলান দিয়ে চোখের উপর হাত দিয়ে নীরবে বসে আছে।

ইয়ানা ধীরপায়ে বেডের কাছে এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে ডাক দিলো… মা….

মা ডাকটা শুনে ইতি বেগমের বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। চমকে তাকালো সামনে, সামনে তাকাতে শাড়ি পরিহিত ইয়ানার বিষাদী মুখটা ভেসে উঠলো। কিছু না বলে নিশ্চুপে তাকিয়ে রইলো ওই মায়াবী মুখশ্রীর দিকে।

ইয়ানা নিঃশব্দে ইতি বেগমের পাশে বসে ভেজা গলায় বললো চলে যাচ্ছি মা দূরে, এখন আর তোমার বিরক্ত হওয়ার কারণ মেয়েটা তোমার কাছে থাকবে না। তুমি খুশি তো মা? বলতে বলতে কন্ঠ কেঁপে উঠলো ইয়ানার।

চোখের পানি আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু ব্যর্থ হলো আটকাতে। কান্না ভেজা কন্ঠে ফের বললো তুমি ভালো থেকে মা,, পারলে তোমার এই মেয়েটাকে ক্ষমা করে দিয়ো। তোমাকে মুক্ত করে দিয়ে বহুদূরে চলে যাচ্ছি। সবশেষে বলবো তোমার এই মেয়েটা তোমাকে খুব ভালোবাসে মা বলতে বলতে উঠে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি গড়িয়ে পড়তে লগলো। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে, এই কষ্ট যে সহ্য করার মতো না।

ইয়ানার যাওয়ার পানে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইলো ইতি বেগম। চাইলেও পারলো না মেয়েকে আঁটকে একটাবার বুকে আগলে নিতে। অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে ভিতর টা। ইচ্ছে করছে ছুটে যেয়ে মেয়েটাকে একটা বার বুকে আগলে নিতে। কিন্তু কোন মুখে যাবে? এতো বছর যেই অন্যায় করে এসেছে তা যে ক্ষমার অযোগ্য। বুকের ভিতর যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলো ইতি বেগম।
কথায় আছে না হারিয়ে গেলে সেই জিনিস এর মূল্য মানুষ বুঝতে পারে। আজ তার সেই অবস্থা হলো। এতো বছর ইয়ানাকে দেওয়া অবহেলা আজ চোখের সামনে ভেসে আসছে। অপরাধবোধে কুঁকড়ে যাচ্ছে।

এদিকে ইয়ানা অঝোরে কান্না করেই যাচ্ছে ইমাকে আর ইসহাক আহমেদকে ধরে। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে এই দুইটা মানুষকে ছেড়ে যেতে। ইমাও কান্না করছে ইয়ানার সাথে, খুব আদরের বোনটাকে আজ অন্যের ঘরে চলে যেতে ভাবতেই কষ্ট লাগছে।

ইসহাক আহমেদের চোখেও পানি। এক মেয়ে অন্যের ঘরে চলে গেছে এক বছর হয়েছে এখন আরেকটা মেয়েকেও অন্যের ঘরে চলে যেতে হবে। কি করে থাকবে উনি এখন? মেয়েদের যে বড্ড বেশি ভালোবাসেন। ভিতরে ভিতরে দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে কিন্তু এখন ভেঙে পড়লে হবে না তাই নিজেকে শক্ত করে ইয়ানাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে বসালো। তারপর একে একে সবাই বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠতে লাগলো তখন পারফি ইসহাক আহমেদের কাছে এসে হাতে হাত রেখে বললো কষ্ট পাবেন না আঙ্কেল। আমি আমার সবটা দিয়ে ওকে আগলে রাখবো সবসময়। আপনি একজন বাবা নিজের মেয়েকে সবমসময় ভালোবেসে আগলে রেখেছেন। আপনার মতো পারবো কিনা জানিনা কিন্তু আমার দিক থেকে আমি সবসময় চেষ্টা করবো ওকে আগলে রাখার।

ইসহাক আহমেদ পারফিকে জড়িয়ে ধরে বললো ভরসা করি তোমাকে বাবা তাই তোমার হাতে আমার মেয়েটাকে নিঃসঙ্কোচে তুলে দিলাম। আমার মেয়েটা বড্ড সহজসরল, ওর দিকে খেয়াল রেখো বাবা।

পারফি অভয় দিয়ে বললো ইন শা আল্লাহ রাখবো আঙ্কেল। নিজের দিকে খেয়াল রাখবেন, যখন ইয়ানাকে দেখতে ইচ্ছে হবে আমাকে নিজের ছেলে ভেবে একটাবার ফোন করে বলবেন আমি ওকে নিয়ে আসবো।

ইসহাক আহমেদ সন্তুষ্ট হলো পারফির কথায়। মেয়েকে যে সঠিক কারো হাতে তুলে দিতে পেয়েছেন ভাবতেই বুকটা শান্তিতে ভরে উঠছে। তিনি একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে পারফির সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে সবাইকে বিদায় দিলো।

পারফি গাড়িতে উঠতে শাফিন গাড়ি স্টার্ট দিলো। শাফিনের পাশে পারফি বসা চুপচাপ। ইয়ানা এখনো কান্না করছে আর পাশে বসে প্রীতি ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। ইয়ানার চোখে পানি দেখে পারফির মনটাও ভারী হয়ে আছে। স্নিগ্ধ ফুলের কষ্টে যেনো নিজেও সমান পরিমাণ কষ্ট পাচ্ছে।

পারফিকে এমন চুপচাপ বসে থাকতে দেখে শাফিন বললো ধুর শালা বিয়ে করতে এসেছিস নাকি নীরবতা পালন করতে এসেছিস? তোরতো এখন খুশিতে নাচার কথা।

পারফি শাফিনের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো তোর এতো শখ জাগলে তুই নাচ।

নাচবো মানে আমার বিয়ের সময় পুরো এলাকা ঘুরে নাচবো আমি দেখে নিস। কবে যে একটা বউ পাবো আর কবে যে একটু এলাকে জুড়ে নাচবো।

পারফি খোঁচা মেরে বললো তোর মতো বাঁচালের কাছে মেয়ে দিবে কে? সারাজীবন বিয়ের স্বপ্ন এই দেখে যেতে পারবি মেয়ে আর পাবি না।

ইনসাল্ট করলি আপনাকে? তুই জানিস আমার জন্য কতো মেয়ে পাগল? এই শাফিন শিকদারের জন্য মেয়েরা লাইন লেগে থাকে আর তুই বলছিস আমি মেয়ে পাবো না। তোরে আমি অভিশাপ দিলাম জীবনেও বউ পাবি না।

পারফি শাফিনের মাথায় চাপর মেরে বললো তোর অভিশাপ তোর গায়েই লাগে নাকি তা দেখ। আমার বউ অলরেডি পিছে বসে আছে।

শাফিন দাঁত দিয়ে জিভ কেটে বললো ওহ তুই বউ পেয়েই গেছিস তাতো ভুলেই গেছি।
—————————
এলিজা জিনিসপত্র ছোড়াছুড়ি করছে আর কান্না করে যাচ্ছে। এনামুল খান মেয়েকে সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে এলিজাকে।

এলিজা চিৎকার করে বললো এতো কিছু করার পর ও পারফি ওই মেয়েটাকে বিয়ে করেছে পাপা। এটা আমি মেনে নিতে পারছি না, আমার পারফিকে চাই এই চাই এ বলে আবার জিনিসপত্র ভাঙা শুরু করে দিলো।

এনামুল খান ও বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। সব কিছুতো ওনার প্লান মতোই হচ্ছিলো তাহলে শেষে এসে এভাবে প্লান এর মোর অন্যদিকে ঘুরে গেলো কোনো।
প্লান করে সেদিন রাতে পারফিদের উপরে এনামুল হক এই অ্যাটাক করিয়েছিলো। উদ্দেশ্য অন্য কিছু থাকলেও পারফি চালাকি করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তারপর অন্য প্লান করে মিডিয়াকে টাকা খাইয়ে উস্কে উনি এই দিয়েছিলো যাতে ওদের নাম এ মিথ্যে কথা ছড়ায়। ভেবেছিলো এতে তাদের মানসম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে তাদের দুর্বল করে দিতে পারবে কিন্তু তার এই প্লান ও সাকসেস হলো না। ক্ষমতার জোর দিয়ে মিডিয়ার মুখ ও বন্ধ করে দিয়েছে। শেষে কিনা ওই মেয়েটাকেও বিয়ে করেছে এখন নিজের মেয়েকে কিভাবে সামলাবে তাই বুঝে উঠতে পারছে না।

এনামুল খান এলিজাকে থামানোর জন্য বললো শান্ত হও মামনী বিয়ে করেছে তাতে কি হয়েছে ওই মেয়েকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলেই তো সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি শান্ত হও আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলবো৷

এনামুল খানের কথায় এলিজা কিছুটা শান্ত হলো। যেভাবেই হোক পারফিকে ওর চাই এই চাই এতে যদি ইয়ানাকে রাস্তা থেকে সরাতে হয় তাহলে তাই করবে।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here