#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১৮
পারফির রুমে একরাশ অস্বস্তি নিয়ে বসে আছে ইয়ানা। একটু আগেই প্রীতি এসে ইয়ানাকে পারফির রুমে দিয়ে গেলো।
ইয়ানার কেমন নার্ভাস লাগছে মাত্র কয় মাস এর পরিচয় পারফির সাথে। এই কয় মাসে পারফিকে যতোটা চিনেছে তাতে মনে হয়নি লোকটা খারাপ উল্টো সব সময় তার ব্যবহার এই বুঝিয়ে দিয়েছে সে কতোটা ভালো মনের একজন মানুষ তবুও ইয়ানা আজ খুব নার্ভাস। ভয় লাগছে যদি অধিকার চায় তখন কি করবে? সব কিছু স্বাভাবিক করার জন্য একটু সময় প্রয়োজন সেই সমটা কি দিবে না?
এসব ভাবনা চিন্তার মধ্যে চোখ জোড়া লেগে আসছে। কয়টা দিন থেকে শরীর এর উপর দিয়ে কতো ধকল যাচ্ছে। শরীর দুর্বলতার জন্য প্রচুর ঘুম পাচ্ছে ইয়ানা আর কিছু না ভেবে বেডে শরীর এলিয়ে দিলো। চোখে এসে রাজ্যের ঘুম হানা দিলো। কিছুক্ষণের মাঝে ঘুমের দেশে পারি জমালো।
সবাই অনেক টায়ার্ড রাত প্রায় ১ টার মতো বেজে গেছে তাই সবাই রেস্ট নিতে নিজেদের রুমে চলে গেলো। পারফি যেই রুমে ঢুকতে যাবে অমনি দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো প্রীতি আর শাফিন।
হাঠাৎ ওদের এমন দরজা আকরে দাঁড়াতে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো কি চাই?
প্রীতি বললো টাকা চাই টাকা।
পারফির কুঁচকে যাওয়া ভ্রু আরো কুঁচকে বললো কিসের টাকা?
শাফিন বললো কিসের টাকা মানে? বউয়ের কাছে যেতে হলে টাকা দিয়ে তারপর যাওয়া লাগবে।
এবার পারফি বুঝলো এদের মতলব তাই ত্যাড়া ভাবে বললো আমার বউয়ের কাছে আমি যাবো তাতে তোদের টাকা দিতে যাবো কোন দুঃখে?
প্রীতি বললো ভাইয়া এটা কিন্তু ঠিক না, টাকা না দিলে আমরা ঢুকতে দিবো না ভিতরে।
প্রীতির সাথে সায় দিয়ে শাফিন ও বললো শালা বাসর ঘরে যাবি আর টাকা দিবি না তা হবে নাকি? তারাতাড়ি টাকা বের কর।
পরাফি ফের ভ্রু কুঁচকে বললো তোরা কি বাসর ঘর সাজিয়েছিস নাকি যে টাকা দিবো? আমার রুম আগে যেমন ছিলো তেমন এই আছে সো ভাগ এখন এখান থেকে। যদি রুম সাজিয়ে দিতি তাহলে ভেবে দেখতাম টাকার কথা।
শাফিন বাঁকা হেসে বললো তাহলে তুই যা এখান থেকে আমরা রুম সাজাবো তারপর ভিতরে যাবি। তারপর শাফিন পারফির কানে ফিসফিস করে বললো তাহলে কিন্তু আজ আর বাসর করা লাগবে না, রুম সাজাতে সাজাতে দেখবি ভোরের আলো ফুটে গেছে। এখন কি করবি নিজেই বল বলে ভ্রু নাচালো শাফিন।
পারফি এবার দাঁতে দাঁত চেপে প্রীতি আর শাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো কতো লাগবে?
প্রীতি দুই হাত উপরে উঠেয়ে বললো পাক্কা দশ হাজার।
প্রীতির কথায় পারফি চোখ কপালে উঠিয়ে বললো মানুষ মাত্র তোরা দুইজন আর চাচ্ছিস দশজনের টাকা। সম্ভব না ডিমান্ড কমা তারাতাড়ি।
শাফিন বললো শালা তোর দিকে মায়া করে কম করে চেয়েছি আর তুই বলছিস বেশি। যা তোর আজ ভিতরে যাওয়াই লাগবে না তুই ছাঁদে যেয়ে ঘুমা।
পারফি বুঝলো যে এরা নাছোড়বান্দা এদের সাথে তর্ক করে লাভ নেই তাই হার মেনে দশ হাজার টাকা শাফিনের হাতে দিতে ওরা গেট খুললো।
পারফি যেতে প্রীতি শাফিনের উদ্দেশ্যে বললো ফিফটি ফিফটি এবার আমার ভাগেরটা আমাকে দিয়ে দেও তারাতাড়ি।
শাফিন ত্যাড়া ভাবে বললো যদি না দেই তোকে?
প্রীতি ক্ষেপে বললো দিবে না মানে? তারাতাড়ি দেও বলছি আর না হলে….
শাফিন প্রীতির মুখের কথা কেঁড়ে নিতে প্রীতির দিকে কিছুটা ঝুঁকে বললো আর নাহলে কি?
শাফিনকে এভাবে ঝুকতে দেখে প্রীতির হার্টবিট বেড়ে গেলো। গলা দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না কথা গুলো সব গলায় আঁটকে গেছে।
তা দেখে শাফিন ফের বললো কি হলো বলছিস না কেনো আর নাহলে কি করবি?
প্রীতি এবার আমতা আমতা করে বললো আ..আর নাহলে ক..কামড় দিবো।
প্রীতি কথায় যেনো শাফিন বেশ মজা পেলো। চমৎকার এক হাসি দিয়ে প্রীতি দিকে আরেকটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো তাই নাকি?
প্রীতি কি বলবে খুঁজে পেলো না। শাফিনের এমন ফিসফিসানিতে বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটানো শুরু করে দিয়েছে। জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।
প্রীতির অবস্থা দেখে শাফিন ঠোঁট টিপে হাসলো। তারপর কিছুটা দূরে সরে প্রীতি হাত ধরে ওর হাতের উপর সব টাকা দিয়ে বললো পুরোটাই তোর এবার খুশি?
শাফিন একটু দূরে সরাতে প্রীতি কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তারপর শাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো তুমি নিবে না?
শাফিন প্রীতির মাথা গাট্টা মেরে বললো আমারটা তোকে দিয়ে দিলাম। এবার যেয়ে ঘুমা রাত অনেক হয়েছে এ বলে শাফিন চলে গেলো।
প্রীতি শাফিনের যাওয়ার পানে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। কেনো যেনো শাফিনের এই ছোট ছোট ইচ্ছে পূরণ করা খুব খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় শাফিন ও ওকে খুব ভালোবাসে কিন্তু সেটা প্রকাশ করে না। শাফিনের এই ছোট ছোট কেয়ার, সারাদিন পিছনে পড়ে থাকা, ঝগড়া করা সবটাই প্রীতির খুব ভালোলাগে।
—————————————–
এদিকে পারফি রুমে ঢুকতে চোখে পড়লো ইয়ানা গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে তা দেখে নিঃশব্দে হাসলো পারফি। ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো ইয়নার কাছে। তাকালো সেই মায়াবী মুখশ্রীর দিকে। কি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে স্নিগ্ধ ফুল। এদিকে তার এই মায়াবী মুখশ্রী যে অন্য কারো চোখের ঘুম কেঁড়ে নিয়েছে সেই খবর কি একটি বার নিয়েছে?
পারফি আরো কিছুক্ষণ ইয়ানার মায়াবী মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে রইলো। মন ভরে কাছ থেকে স্নিগ্ধ ফুলকে দেখলো। বুকের ভিতর এক অন্যরকম ভালোলাগা অনুভব করছে এটা ভেবে যে স্নিগ্ধ ফুল এখন থেকে ওর, শুধুই ওর।
পারফি এবার নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে ইয়ানার শরীরে ব্লাংকেট জড়িয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে রুমের লাইট বন্ধ করে দিয়ে ড্রিমলাইট জ্বালিয়ে দিয়ে সোফায় যেয়ে শুয়ে পড়লো। এখন বেডে শুলে ইয়ানা অস্বস্তিতে পড়ে যাবে সেটা খুব ভালো করেই জানে। মেয়েটাকে একটু সময় দেওয়া প্রয়োজন তাই পারফি সোফায় শুয়ে পড়লো। সোফায় শুতে একটু কষ্ট হলেও মানিয়ে নিলো।
সোফায় শুয়ে তাকালো ফের ইয়ানার স্নিগ্ধ মুখপানে। কম্বল জড়িয়ে মনে হচ্ছে এক আদুরে বিড়াল ছানা আরামসে ঘুমিয়ে আছে।
ইয়ানাকে দেখতে দেখতে একসময় পারফিও ঘুমিয়ে পড়লো।
——–
ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভাঙলো ইয়ানার। ঘুম ভাঙতে ড্রিমলাইটের হালকা আলোতে দেখতে পেলো এটা ওর রুম না। হঠাৎ এমন অচেনা রুমে আসলো কিভাবে ভাবতে লাফ দিয়ে উঠে বসলো। উঠে বসতে চারেদিকে ভয়ে ভয়ে চোখ বুলালো তখন চোখ পড়লো সোফায় শুয়ে থাকা পারফির দিকে। পারফিকে দেখে আস্তে আস্তে কাল রাতের সব কথা মনে পড়লো। সব কথা মনে পড়তে কিছুটা শান্ত হলো। কাল রাতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে টের এই পায় নি।
ইয়ানা ফের তাকালো পারফির দিকে। সোফায় টান হয়ে শুয়ে আছে, এতবড় শরীর নিয়ে সোফায় ঘুমাতে যে খুব কষ্ট হচ্ছে তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
পারফিকে দেখে ইয়ানার খারাপ লাগলো খুব। ওনার রুমে উনি কষ্ট করে সোফায় ঘুমিয়ে আছে আর আমি আরামসে বেডে ঘুমিয়ে রাত পার করে দিলাম ভাবতেই খারাপ লাগছে। সাথে পারফির প্রতি রেসপেক্ট কয়েকগুণ বেড়ে গেলো। অন্য পাঁচটা স্বামীন মতো স্বামীর অধিকার না চেয়ে নিজ থেকে ইজি হতে সময় দিয়ে দিলো। এমন কি নিজে কষ্ট করে সোফায় ম্যানেজ করে নিয়ে বেড আমাকে দিয়ে দিলো। তিনি চাইলেই পারতো নিজে বেডে ঘুমিয়ে পড়তে কিন্তু তা না করে আমার দিকটা আগে চিন্তা করেছে ভাবতেই একরাশ ভালোলাগা কাজ করলো পারফির প্রতি।
ইয়ানা বেড থেকে আস্তে ধীরে নেমে সোফার কাছে গেলো। এখন পারফিকে ডাক দিয়ে বেডে যেতে বলবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুগতে লাগলো। তাছাড়া নামাজ আদায় করার জন্য জায়নামাজের প্রয়োজন। রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে কোনো জায়নামাজ চোখে পড়লো না। ভাবলে হয়তো আলমারিতে তোলা আছে কিন্তু অন্যের জিনিসে অনুমতি ছাড়া হাত দেওয়া সোভা পায় না তাই ইয়ানা বাধ্য হয়ে পারফিকে আস্তে করে ডাক দিলো… শুনছেন….
কিন্তু পারফির কোনো সাড়াশব্দ নেই তা দেখে ইয়ানা কাঁপা কাঁপা হাতে কিছুটা ঝুঁকে পারফিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ডাক দিলো।
ঘুমের মাঝে কারো ডাকার আওয়াজে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো পারফি। ইয়ানা যেহেতু পারফির দিকে কিছুটা ঝুকে ছিলো তাই পারফি এভাবে ধড়ফড়িয়ে উঠাতে দুজনে একে অপরের মাথার সাথে টাক খেলো।
মাথায় মৃদু ব্যথা অনুভব করতে আহ্ করে উঠলো ইয়ানা।
কি হয়েছে বুঝে উঠতে পারফি দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে ইয়নার কাছে যেয়ে বললো সরি সরি সরি আই একট্রেমলি সরি। আমি খেয়াল করি নি একদম। বেশি ব্যথা পেয়েছো? আম রিয়েলি সরি তখন হঠাৎ ওভাবে ঘুম ভেঙে যাওয়াতে খেয়াল করতে পারি নি কিছু।
পারফিকে এমন বিচলিত হতে দেখে ইয়ানা মৃদু হেসে বললো ইটস ওঁকে আমার তেমন লাগে নি সামান্য একটু লেগেছে এতে সমস্যা নেই।
পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো সত্যি জোরে লাগেনিতো?
ইয়ানা হেসে দিয়ে বললো সত্যি লাগেনি।
পারফি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো এতে। তারপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো ডাকছিলে কেনো? কোনো সমস্যা?
ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো সমস্যা না আসলে একটা জায়নামাজ লাগতো নামাজ পড়ার জন্য।
ওহ্ একটু ওয়েট করো আমি এখনি দিচ্ছি এ বলে পারফি কাবার্ড থেকে একটা জায়নামাজ ইয়ানার হাতে দিয়ে বললো কোনো কিছু প্রয়োজন হলে কাবার্ড খুলে দেখো পেয়ে যাবে।
ইয়ানা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজে দাঁড়াতে যাবে তখন দেখলো পারফি সোফায় বসে আছে তা দেখে ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো নামাজ পড়বেন?
ইয়ানার এই প্রশ্নে পারফি কি উত্তর দিবে খুঁজে পেলো না। সচারাচর সকালের নামাজটা আদায় করা হয় না।
পারফিকে কিছু বলতে না দেখে ইয়ানা হয়তো কিছুটা বুঝতে পেরেছে তাই একটু মুচকি হেসে বললো ফজরের নামাজ আদায় করলে মনের ভিতর এক শান্তি লাগা অনুভব করা যায় যেই শান্তি অন্য কিছুতে মিলে না। চাইলে নামাজটা আদায় করে নিতে পারেন।
পারফি বাধ্য ছেলের মতো সাথে সাথে উঠে ফ্রেশ হয়ে ওজু করে বের হলো। বের হয়ে দেখলো ইয়ানা নামাজে দাঁড়িয়ে গেছে তাই মাথার টুপিটা নিয়ে দরজা হালকা করে চাপ দিয়ে বেড়িয়ে গেলো নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে।
বাসার নিচে নামতে দেখা হয়ে গেলো পাভেল চৌধুরী আর শরীফ শিকদারের সাথে। তারাও মসজিদে যেতে নিয়েছিলো তখন পারফিকে এতো সকাল সকাল দেখে দুজনে বেশ অবাক হলো।
পারফি কাছে আসার পর জানতে পারলো নামাজ পড়তে যাবে তা শুনে দুজনেই খুব খুশি হলো।
#চলবে?
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰