তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল #নুসাইবা_ইসলাম_হুর #পর্বঃ৬

0
291

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৬

কেটে গেলো এক সপ্তাহ ইয়ানা এখন পুরোপুরি সুস্থ। আজ কলেজে যাবে তাই রেডি হয়ে নিচে আসলো। ইসহাক আহমেদ কলেজে পৌঁছে দিয়ে আসবে। এতো করে বললো একা যেতে পারবে কিন্তু ইসহাক আহমেদ কিছুতেই একা ছাড়বে না মেয়েকে। শেষে বাবার কাছে হার মেনে তার বাইকের পিছে উঠে বসলো। ইসহাক আহমেদ ইয়ানাকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে নিজের কাজে চলে গেলো।

ইয়ানা কলেজের ভিতর ঢুকতে যাবে তখন সেখানে প্রীতিদের গাড়ি এসে থামলো। প্রীতিকে দেখে ইয়ানার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।

প্রীতি গাড়ি থেকে নেমেই ইয়ানাকে ঝাপটে ধরলো।
তা দেখে শাফিন গাড়ি থেকে নেমে বলে উঠলো ড্রামা বাজের ড্রামা শুরু হয়ে গেছে।

কথাটা শুনে প্রীতি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। শাফিনের দিকে তেরে যেয়ে বললে কি বললে আমি ড্রামা করি?

শাফিন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো আমি কারো নাম উল্লেখ করেছি নাকি?

নাম উল্লেখ করা লাগবে না কথাটা তুমি আমাকেই বলেছো দাঁতে দাঁত চেপে বললো প্রীতি।

তোর সাথে ঝগড়া করার মুড নেই সর সামনে থেকে এ বলে হাত দিয়ে প্রীতিকে সরিয়ে দিয়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো আমার বোনটা কেমন আছে?

ইয়ানা খুশি হয়ে বললো আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া আপনি কেমন আছেন?

প্রীতিকে টিটকারি মেরে বললো আশেপাশে এমন শাঁকচুন্নি থাকলে ভালো থাকি কি করে বলো।

শাফিনের কথায় ইয়ামা খিলখিল করে হেঁসে ফেললো আর প্রীতি ক্ষেপে যেয়ে আবারো শাফিনের সাথে ঝগড়া লাগিয়ে দিলো। ওদের ঝগড়া দেখে বেশ মজা উপভোগ করছে ইয়ানা। হাসির মাঝে ইয়ানার চোখ গাড়ির ভিতরে পড়তে হাসি আঁটকে গেলো। সেই নীলমনি, সেই ধারালো চাওনি ইয়ানার ভিতরে ঝড় উঠিয়ে দিলো। কেনো যেনো ওই নীলমনির ধারালো চাওনি দিকে বেশি সময় তাকিয়ে থাকতে পারে না। দ্রুত চোখ নামিয়ে ফেললো।

পারফি এতো সময় ইয়ানার হাসিখুশি মুখটাই দেখছিলো। কেনো যেনো এই স্নিগ্ধ মুখপানে একবার তাকালে চোখ সরানো দায় হয়ে পরে। পারফি যখন ইয়ানাকে মন দিয়ে দেখতে ব্যস্ত তখন ইয়ানাও তাকালো। চোখে চোখ পড়তে ইয়ানাকে এমন হাসফাস করতে দেখে মুচকি হাসলো।

এদিকে শাফিন আর প্রীতির ঝগড়া বেড়েই চলেছে। এই ঝগড়া যে এতো সহজে থামবে না বুঝতে পেরে পারফি গাড়ি থেকে নেমে শাফিনের মাথায় গাট্টা মেরে বললো কি বাচ্চাদের সাথে ঝগড়া লাগালি এবার থাম।

ঝগড়া আমি লাগিয়েছি নাকি তোর বাঁদর বোন লাগিয়েছে।

প্রীতি ক্ষেপে যেয়ে বললো তুই বাঁদর তোর বউ বাঁদর তোর চৌদ্দ গুষ্টি বাঁদর।

কতো বড় সাহস তুই আমাকে তুই তোকারি করছিস তোকে তো আমি এ বলে প্রীতির দিকে এগিয়ে যেতে নিলে পারফি আঁটকে ধরে বললো কি শুরু করেছিস এটা বাসা না কলেজ সেই দিকে একটু তাকা।

তারপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো বিড়াল ছানা ওটাকে নিয়ে ভিতরে যাও আর নাহলে এদের ঝগড়া সারা দিন ও থামবে না।

বিড়াল ছানা ডাকটা শুনে ইয়ানা ঠোঁট উল্টালো। আর কোনো নাম পেলো না শেষে কিনা বিড়াল ছানা বানিয়ে দিলো। কিছু বলতে ইচ্ছে করলো কিন্তু ওই নীল চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার সাহস হলো না। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে প্রীতির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।

প্রীতি এখনো রেগে বোম হয়ে আছে ইয়ানার দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে বললো তুই আমাকে নিয়ে আসলি কেনো? ওই খবিশ বদমাশটাকে আমি ছাড়বো না।

আরে ইয়ার আর কত ঝগড়া করবি এবার অন্তত থাম। তোদের ঝগড়ার জন্য ক্লাসে লেট হয়ে যাচ্ছে।

প্রীতি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ক্লাসের দিকে এগিয়ে গেলো।
দুটি ক্লাস করে আর ইচ্ছে করলো না ক্লাস করতে। মন মেজাজ ভালো নেই তাই ক্লাসে মন বসছিলো না।
তাই ইয়ানা আর প্রীতি ঠিক করলো আশপাশে ঘুরে একটু মনটা ফ্রেশ করবে। যেই ভাবা সেই কাজ দুজন মিলে লুকিয়ে কলেজ থেকে বের হয়ে পাশেই একটা লেক পার্কে চলে গেলো। পরিবেশটা নিরিবিলি মন ভালো করার মত একটা পরিবেশ। প্রীতি আর ইয়ানা লেকের পানিতে পা ভিজিয়ে পাশাপাশি বসলো। কারো মুখে কোনো কথা নেই দু’জনেই পরিবেশ টা উপভোগ করতে ব্যস্ত।

নীরবতা ভেঙে ইয়ানা বললো আমার না বিশ্বাস এই হয় না তুই শাফিন ভাইয়াকে ভালোবাসিস। যেভাবে শাফিন ভাইয়ার সাথে ঝগড়া লাগিয়ে দিস মনে হয় তোর চিরশত্রু সে। এমন শত্রুতামির মাঝে ভালোটা বাসলি কখন?

আর ভালোবাসা শালা খবিশ আমাকে পাত্তাই দেয় না। সব সময় খোঁচা মেরে কথা বলে আমাকে রাগিয়ে দেয়।
ভালোবাসিস না বুঝলাম কিন্তু তাই বলে সারাদিন এমন খাটাশের মত আমার পিছু লেগে থাকিস ক্যান? জীবনের সব চেয়ে বড় ভুল ওই খবিশটার প্রেমে পড়া।

আর যাই বলিস না কেনো শাফিন ভাইয়া মানুষটা কিন্তু খুবি ভালো। ভাইয়া একা লাগে নাকি তোর পিছে তুই নিজে ওতো সারা দিন ভাইয়ার পিছনে পড়ে থাকিস৷

এহ আসছে রে ভাইয়ের সাফাই গাইতে। ওই খবিশটা তোকেও বস করে নিজের দলে নিয়ে গেছে। যা তোর সাথে আমার কথা নেই এই বলে গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে ঘুরে বসে রইলো।

ইয়ানা পড়ে গেলো এবার বিপাকে। সত্যি কথা বলেও এখন বিপদে পড়ে গেলো। প্রীতির রাগ ভাঙানোর জন্য পিছ থেকে প্রীতি জড়িয়ে ধরে বললো আরে ইয়ার রাগ করছিস কেনো আমিতো মজা করছিলাম।

হয়েছে এখন ঢং করা লাগবে না।

রাগ করে না জানু চল ফুসকা খাই।

ফুসকার কথা শুনে প্রীতির রাগ গলে পানি হয়ে গেলো। ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো চল চল খেয়ে আসি।

ইয়ানা ভ্রু কুঁচকে বললো তুইনা রাগ করেছিস?

প্রীতি ইয়ানার গাল টেনে দিয়ে বললো তোর সাথে আমি রাগ করে থাকতে পারি নাকি আমার বিড়াল ছানা।

ইয়ানা কপাট রাগ দেখিয়ে বললো এখন তোর ভাইয়ের মতো তুই ও আমাকে বিড়াল ছানা ডাকা শুরু করে দিলি?

ভাইয়াতো ঠিকি বলেছে তুই একটা আদুরে বিড়াল ছানা দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে।

আর একবার যদি বিড়াল ছানা বলিস না তাহলে কিন্তু এবার সত্যি বিড়ালের মতো খামছি মেরে দিবো।

বিড়াল ছানা, বিড়াল ছানা, বিড়াল ছানা একবার না তিনবার বলেছি এবার কি করবি শুনি?

তবে রে দেখাচ্ছি মাজ এবে প্রীতিকে ধরতে নিলে প্রীতি উঠে দিলো দৌড়। ইয়ানাও প্রীতিকে তারা করতে লাগলো এভাবে দুজনে ছোটাছুটি হাসাহাসি করে পুরো লেকপার্ক ঘুরতে লাগলো।
—————————–
পারফি কেবিনে বসে ল্যাপটপে প্রীতি আর ইয়ানার কার্যকলাপ দেখতে লাগলো। প্রীতিরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে লেকপার্ক ঘুরতে গেছে সেটা দেখে গার্ডরা পারফিকে ফোন করে জানালো।
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এভাবে ঘুরতে যাওয়ার জন্য প্রথমে রেগে গেলেও পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে আর কিছু বললো না।
গার্ডের সাথে পারফি কথা বলছিলো তখন কারো হাসির শব্দ শুনে হার্টবিট বেরে গেলো। কি মধুর সেই হাসির শব্দ, বুঝলো যে এটা প্রীতি আর বিড়াল ছানার হাসি। কেনো যেনো আদুরে বিড়াল ছানার হাসিমাখা মুখটা দেখার তীব্র ইচ্ছে জাগলো মনে। তাই গার্ডকে ভিডিও কল করে ওদের দিকে ফোনটা ঘুড়িয়ে রাখতে বললো। গার্ড পারফির কথা মতো কাজ করতেই ল্যাপটপের সামনে ভেসে উঠলো স্নিগ্ধ সেই হাসি। পার্কে দুজন ছোটাছুটি করছে আর প্রাণ খুলে হাসছে। এই প্রাণবন্ত স্নিগ্ধ হাসি দেখে ঘোররে মাঝে আটকে গেলো পারফি। এই মেয়েকে একবার দেখলে পুরো দুনিয়া থমকে যায়।

পারফি যখন ইয়ানাকে দেখতে ব্যস্ত তখন কেউ একজন দরজায় নক করলো।
এই সময় কেউ আসাতে বিরক্ত হলো পারফি। একরাশ বিরক্ত দিয়ে আসার অনুমতি দিতে সেখানে প্রবেশ করলো ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়া সুন্দরী এক রমনি।

পারফি একবার চোখ তুলে তাকালো ও না ল্যাপটপের মাঝে ডুবে আছে তা দেখে মেয়েটা মনে মনে ফুঁসে উঠলো। নিজেকে সামলে পারফির সামনের চেয়ারে বসে পারফির দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বললো পাপা বিজনেস ডিল নিয়ে কালকে মিটিং করতে চাচ্ছে সেটা তোমাকে জানানোর জন্য এসেছি। আর এই ফাইলের ভিতরে সব ডকুমেন্টস আছে চেক করে নিতে পারো।

পারফি এবার ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে শান্ত গলায় বললো মিস এলিজা আমি আপনার বয়ফ্রেন্ড না, আমরা জাস্ট বিজনেস পার্টনার সো আপনি বলে সম্মোধন করলে খুশি হবো।

এমন সরাসরি অপমানে এলিজা ভিতরে ভিতরে ক্ষোবে ফেটে পড়লো কিন্তু নিজের রাগটা প্রকাশ না করে মুখে হাসি টানার চেষ্টা করে বললো এতবছর আমরা এক সাথে বিজনেস করছি। সবসময় তোমার কাছাকাছি থেকেছি তুৃমি কি বুঝতে পারছো না আমি তোমাকে ভালোবাসি? সব সময় এভাবে আমাকে অপমান করে কি মজা পাও তুৃমি?

গায়ে পড়া টাইপের মেয়ে আমার পছন্দ না। আশা করি আমার থেকে ডিস্টেন্ট মেইনটেইন করে চলবেন আর নাহলে আমি বাধ্য হবো আপনার বাবার সাথে বিজনেস ডিল ক্যানসেল করতে। এবার আপনি আসতে পারেন মিস।

এতো অপমানে এলিজার মুখ লাল হয়ে গেলো। রাগে হনহনিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করলো।
এলিজা বাসায় এসে জিনিসপত্র ছোড়াছুড়ি করতে লাগলো। এ খবর এনামুল খান কানে যেতে দ্রুত বাসায় ফিরে এসে মেয়েকে থামাতে চাইলেন।
এলিজা চিৎকার করে বলে উঠলো পাপা ও সবসময় আমাকে অপমান করে এটা আমি আর মেনে নিতে পারছি না।

তুমি শান্ত হও মামনী কি হয়েছে আমাকে সব খুলে বলো।

এলিজা সব খুলে বললো এনামুল খানকে। সব শুনে তিনি বললো মাথা গরম করলে হবে না মামনী সব কিছু ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। আবরার পারফি চৌধুরী আমাদের সাথে ডিল ক্যানসেল করলে আমাদের কম্পানির কি ক্ষতি হবে তাতো বুঝতেই পারছো। যা করার ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। এভাবে রেগে গেলে আমাদের প্লান সাকসেস হবে কিভাবে?

তুমি চাচ্চুকে দেশে আসতে বলো দ্রুত, চাচ্চু না থাকলে আমরা একা কিছুই করতে পারবো না।

তুমি টেনশন করো না মামনী খুব শীঘ্রই ফিরে আসবে ও। তখনই তো হবে আসল খেলা। এ বলে ভাইকে ফোন লাগালো।

ওপাশে ফোন রিসিভ হতেই এনামুল খান বলে উঠলো তুমি দেশে আসছো কবে ভাই?

আমার সময় হলে চলে আসবো তোমাকে যেই কাজ দিয়েছি সেটা করেছো ঠিক ভাবে?

হ্যা ভাই সময় মতো সব মাল পৌঁছে যাবে। আর মেয়েটার দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। ওই মেয়ে দুটোকে আটকাতে পারলে চৌধুরী পরিবার আর শিকদার পরিবার আমাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসে পিষে দিতে পারবো। পুরোনো শত্রু বলে কথা….. এখনো অনেক হিসেব নিকেশ বাকি।

সেতো বটেই প্রতিটি হিসাবের মূল্য দিতে হবে চৌধুরী পরিবারকে এ বলে ক্রুদ্ধ হাসতে লাগলো ওপাশে থাকা লোকটা।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here