খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_৩৯ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
447

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৩৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

সুখানুভূতিকে ঢেকে নিয়েছে বিষাদের কালো মেঘের দল। একটু টুকরো সুখকে দুঃখ তার চাদরে মুড়িয়ে নিয়েছে। আনন্দিত হৃদয়ের ভেতর থেকে আনন্দ শুষে নিয়ে একরাশ তিক্ততা বিরাজ করছে। মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ পরিবেশটা মুহুর্তের মাঝে কালো মেঘের ন্যায় আঁধারে রুপ নিল। চারদিকে নিস্তব্ধতার মেলা বসেছে। অনুভূতিরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। শব্দ গুলো আজ ছন্দ হারিয়েছে। কিছু তিক্ত সত্য বুকের ভেতরটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। ভেতরটা যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে প্রতিটি মুহুর্তে ম’র’ছে। মনের শহরের অলিতে-গলিতে হাহাকার ছড়িয়ে পড়েছে। পিনপতন নিরবতা ভেঙে রাইমা বেগম স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,

–তোর আংকেলের সাথে তো ভিষণ খারাপ হয়েছে। একটা সত্যি কথা কি জানিস মেহেভীন? ভালো মানুষের সাথেই সব সময় খারাপ হয়। আর ভালো মানুষ গুলোও বেশিদিন বাঁচে না। বাক্য গুলো কর্ণপাত হতেই মেহেভীনের মুখশ্রীতে মলিনতার ছায়া দেখা গেল। বুকটা খাঁ খাঁ করে উঠল। আজকাল ভেতরটা ভিষণ খালি খালি লাগে। বাবার শূন্যতায় ভেতরটা জ্বলে পুড়ে দগ্ধ হয়ে যায়।

–তাহলে আমার বাবাও কি ভালো মানুষ ছিল মা?

–হয়তো ছিল, কে জানে শেষ বয়সে এসে এমন হয়ে গেল কেন? সে না বদলালে আমরা জীবনে আরো কয়টা সুন্দর বসন্ত পার করতে পারতাম। এসব কথা ভেবে নিজেকে দুর্বল করে তুলিস না। এই কয়টা দিন নিজের যত্ন নিবি না হলে পরের ঘরে গেলে সবাই বলবে, আমরা মেয়েকে ঠিকমতো খেতে দেইনি। কথা গুলো বলেই রাইমা বেগম স্থান ত্যাগ করল। মেহেভীন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালার কাছে চলে গেল। এক ফালি রৌদ্রের আলো এসে মেহেভীনের মুখশ্রীতে আঁচড়ে পড়লো। মেহেভীন পরম আবেশে আঁখিযুগল বন্ধ করে রাখল। সমস্ত মুগ্ধতা যেন মেহেভীনের মুখশ্রীতে এসে ধরা দিয়েছে। মনে পড়ে গেল সেই খোলা জানালার দক্ষিণের কথা, পাশে দৃষ্টিপাত করতেই হতাশ হলো মেহেভীন। কিন্তু সুন্দর স্মৃতি মুখশ্রীর সামনে ভেসে উঠল। কত-শত স্নিগ্ধ অনুভূতির সাক্ষী সেই বাড়ির জানালাটা। সেই জানালা পাশ থেকেই দেখা মিলেছিল একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের মানুষের। যার আগা থেকে মাথা পর্যন্ত দুষ্টিতে ভরা। যার প্রধান কাজই ছিল তাকে বিরক্ত করা। সেই মুহুর্ত গুলো যেন চোখের পলকে হাওয়ার সাথে মিলিয়ে গেল। প্রতিদিন প্রভাতের আলো ফুটতেই দেখা হবে না, খোলা জানালার দক্ষিণের পাশে অবস্থান করা মানুষটা এসেছে কি না। চন্দ্রা আলোকিত রজনীতে মানুষটার সাথে সুখানুভূতি আদান-প্রদান করা হবে না। মানুষটার অপেক্ষায় চাতক পাখি ন্যায় প্রতীক্ষা করতে হবে না৷ কথা গুলো ভাবতেই তিক্ত অনুভূতি এসে মনে হানা দিল।

জাফর ইকবাল সুন্দরী রমনীর বুকে আস্তরণে শয়িত ছিলেন। তার সুন্দর মুহুর্ত বিষাদ করে দিয়ে কবাটে কেউ কড়া নাড়ে। জাফর ইকবালের মুখশ্রীতে বিরক্তির ছাপ ফুঠে উঠল। আঁখিযুগল রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। সে কড়া ভাবে গৃহের প্রতিটি মানুষের কর্ণ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। তার ব্যক্তিগত মুহুর্তে কেউ যেন তাকে বাধাগ্রস্ত না করে। গায়ে বস্ত্র পরিধান করে কবাট খুলে দিতেই পরিচিত মুখশ্রী ভেসে উঠল। সে অধরের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলল,

–সায়ান যে, কি তথ্য নিয়ে এসেছ তুমি?

–আপনার জন্য একটা গরম খবর আছে স্যার। সেজন্য আপনার অন্তরঙ্গ মুহুর্তে বাঁধা প্রদান করতে বাধ্য হলাম। আমার ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন। মন্ত্রী সাহেব বিয়ে করছেন আমাদের হাতে একটা দারুন সুযোগ এসেছে। এই সুযোগটা যদি লুফে নিতে না পারি। তাহলে সারাজীবন আমাদের মুনতাসিমের পেছনে পড়ে থাকতে হবে। বিয়ের অনুষ্ঠানে শতশত মানুষ থাকবে। এত এত মানুষের মধ্যে যদি মুনতাসিমের সমস্ত কায়া ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেওয়া যায়। কারো বাবার ক্ষমতা হবে না আমাদের ধরার। সায়ানের কথায় জাফর ইকবালের বুকটা প্রশান্তিতে ভরে উঠল। সে হাসোজ্জল মুখশ্রী করে বলল,

–মানুষের দুর্বলতা তৈরি হতে দেওয়ার জন্য আমাদের সময় নেওয়া উচিৎ। শক্ত মানুষকে এত সহজে ভাঙা যাবে না। আমাদের মেইন পয়েন্ট ধরে দুর্বল জায়গায় আঘাত করতে হবে। যেন ভাঙলে এমন ভাবে ভাঙে কায়ার সমস্ত হাড়গুলো গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়। সেই ভাঙা কায়া নিয়ে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি অর্জন করার ক্ষমতা সারাজীবনের জন্য বিলুপ্ত হয়ে যায়। প্রেম মানুষকে বাঁচতে শেখায় আবার প্রেমই মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর করে। অতিরিক্ত ভালোবাসার পরে ,মানুষটা হুট করে জীবন থেকে মর্মান্তিক ভাবে হারিয়ে গেলে বিপরীতে পক্ষের মানুষটা আঘাত ছাড়াই রক্তাক্ত হয়ে যায়। উঠে দাঁড়ানোর শক্তি ক্ষয় হয়ে যায়। সবার প্রিয় মুনতাসিম আরো একটু গভীর প্রেমে মজুক। সুযোগ বুঝে আমরাও তার প্রেয়সীকে লুটে নিব। মুনতাসিম এমনিতেই ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। কথা গুলো কর্ণপাত হতেই সায়ান মৃদু হেসে চলে গেল। জাফর ইকবাল গানের সুর তুলতে তুলতে আস্তরনে এসে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে মেতে উঠলেন।

চারদিক সুখ সুখ অনুভূতিতে মেতে উঠেছে। মুনতাসিম আর মেহেভীনের বিয়ের বার্তা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে গিয়েছে। সবাই মেহেভীনকে দেখতে আসছে। মেহেভীনের ভিষণ বিরক্ত লাগছে। একই এলাকার মানুষ ছোট থেকেই দেখে আসছে। সেই মানুষকে নতুন করে দেখার কি আছে? নাকি তার রুপ নতুন করে রুপ বদল করেছে। যার জন্য সবাই তাকে দলে দলে দেখতে আসছে। মেহেভীনের বাবার খোঁজ পড়লে সবাইকে জানানো হয়েছে। মেহেভীনের নানি ভিষণ অসুস্থ সেজন্য তাকে সেখানে থাকতে হচ্ছে, বিয়ের দিন এসে উপস্থিত হবেন। সবাই বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে। কারন ফরিদ রহমান এর আগেও বহু বার মেহেভীনের নানা-নানির দেখা শোনা করেছে। গৃহ ভর্তি মেহমান গিজগিজ করছে। কালকে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে হবে। সমস্ত গৃহে ফুল আর মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। মেহেভীন আর মুনতাসিমের মতো নতুন ভাবে সেজেছে দু’টো গৃহ। রিয়াদ চৌধুরী ছেলের বিয়ের কোনো ত্রুটি রাখেনি। রাজকীয় ভাবে বিয়ের আয়োজন করেছেন। চৌধুরী গৃহের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই মুগ্ধতা এসে আঁখিযুগলে ধরা দিচ্ছে। যে কেউ দেখলে বলবে, কোনো এক রাজ্যের রাজার বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। রাজপ্রাসাদের ন্যায় গৃহটা রঙবেরঙের ফুল আলো দিয়ে সেজে উঠেছে। তার সৌন্দর্য দিয়ে মানুষের হৃদয়কে আকৃষ্ট করতে বাধ্য করছে। বিবাহের দু’দিন আগেই এত মানুষের আনাগোনা এত এত কোলাহল! বিয়ের দিন কি অবস্থা হবে? গোলাপ আর রজনীগন্ধার সুবাস সবাইকে মাতাল করে তুলছে। চারিদিকে কাজের তোরজোর চলছে। মেহেভীন নিজের কক্ষে বসেছিল। একদল মহিলা তাকে ঘিরে রেখেছে। ভালোমন্দ আলোচনা করছে। সে মন্ত্রীর বউ হবে এটা তাদের কাছে বিশাল ব্যাপার। সবার এত বাড়াবাড়ি মেহেভীনের মেজাজ উত্তপ্ত করে দিচ্ছে। সে একটু নির্জন স্থান খোঁজয় ব্যস্ত তবে আজ নির্জনতা পথ হারিয়েছে। কিছুতেই সে মেহেভীনের সামনে ধরা দিচ্ছে না। তখনই মুঠোফোনটা জানান দেয়। সে কারো বার্তা নিয়ে এসেছে। ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো মুনতাসিম মেসেজ করেছে।

–কি করছেন ম্যাডাম?

–আপাতত একটু নির্জন জায়গায় খুঁজছি। এত কোলাহল এত মানুষজন মস্তকে ব্যথা তুলে দিয়েছে।

–আমি আসব? আমি আসলেই নির্জনতা চলে আসবে।

–তার আগে বলুন, সেদিন ভূতের মতো গায়েব হয়ে গেলেন আর খোঁজ নিলেন না কেন? সেদিন কোথায় গিয়ে গিলেন?

–কারো মধ্যে বউ বউ ভাব পাচ্ছি।

–কেন বউ হবার মতো ভাব আমার নেই?

–এত সুন্দর একটা মেয়ে! আপনি কেন সব সময় রেগে রেগে কথা বলবেন? আপনি সব সময় হেসে হেসে কথা বলবেন। আপনার মুখশ্রীতে ক্রোধ মানায় না ম্যাডাম। আপনি হাসলে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে।

–ফ্লার্ট করছেন আমার সাথে?

–না বউকে বোঝাচ্ছি। তাকে হাসলে ভিষণ সুন্দর লাগে, তার মুখের এক টুকরো হাসি আমার অশান্ত হৃদয়ের প্রশান্তির হাওয়া। মুনতাসিমের কথায় অদ্ভুত ভাবে মেহেভীনের সমস্ত কায়া কেঁপে উঠল। হৃদয়স্পন্দনের ক্রিয়া অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেল। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি! সেই অনুভূতির সাথে পরিচিত নয় মেহেভীন। নতুন এক অনুভূতির সন্ধান পেল মেহেভীন। সে কণ্ঠে স্নিগ্ধতা নিয়ে এসে বলল,

–আপনি ঘুমাবেন না? সকালে যখন আপনাকে হলুদ মাখাবে একটা ছবি দিয়েন। আমি দেখব আপনাকে কেমন দেখায়?

–ভালো না দেখালে বিয়ে করবেন না?

–আমি বলেছি সে কথা! আমি কি আপনাকে দেখতে চাইতে পারি না।

–বহু আগেই চোখ দিয়ে আমার সর্বনাশ করে রেখেছেন। যতটুকু সন্মান আছে বাকিটুকু সর্বনাশ করার ধান্দা। মুনতাসিমের কথায় মনের অজান্তেই লজ্জা পেল মেহেভীন। সেটা প্রকাশ না করে রাগান্বিত হয়ে বলল,

–আচ্ছা অসভ্য লোক তো আপনি! আপনার মেসেজেই রিপ্লাই-ই আর করব না। মেসেজটা পাঠিয়েই মুঠোফোনটা বালিশের নিচে রেখে দিল। মেহেভীনের কান্ড দেখে সবাই মিটমিট করে হাসছে। কেউ কেউ রসিকতা শুরু করে দিয়েছে। এত আনন্দ এত সুখ সইবে তো? কথা গুলো ভাবতেই মেহেভীনের বুকটা ভারি হয়ে আসলো। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপচাপ বসে থেকে সবাই কথা শুনতে লাগলো।

চারিদিকে প্রভাতের আলো ফুটতে গিয়েছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকের দিনটা একটু অন্য রকম। রজনীর শেষ প্রহর থেকে রান্নার কার্যক্রম শুরু হয়ে গিয়েছে। রান্নার টুংটাং ধ্বনি কর্ণকুহরে এসে বাড়ি খাচ্ছে। বাচ্চারা হৈ হুল্লোড় করছে খেলাধূলা করে সমস্ত গৃহ মাতিয়ে রেখেছে। আগের তুলনায় দ্বিগুন মেহমান এসে বাড়ি ভরে গিয়েছে। মুনতাসিমকে শুভ্র লুঙ্গি আর সেন্ডো গেঞ্জি পরিধান করিয়ে কাঁধের ওপরে লাল গামছা পড়িয়ে ছাদে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হলুদের আয়োজন ছাদেই করা হয়েছে। নিচে করার মতো অবস্থা নেই। তাই রিয়াদ চৌধুরী ছাদ টাকেই বেছে নিয়েছে। মাশরাফি, শেহনাজ, তাহিয়া, রিনি, আরো কিছু বয়স্ক মহিলারা যাচ্ছে মুনতাসিমের সাথে। শেহনাজ গান গাইছে শেহনাজের সাথে সুর মেলাচ্ছে মাশরাফি। তাহিয়া চুপচাপ তাদের সঙ্গ দিচ্ছে। বৃদ্ধারা বলছে,

–আজকালকার পোলা মাইয়ারা গানের তালে তালে হলুদ লাগায়। আর আমাগো সময় কত আনন্দ কইরা গীত গাওয়া হইতো। সে-সব আজকাল উইঠা গেছে। তোরা গান বাজনা যা করার করবি। আমরা গীত গাইয়া আগে হলুদ লাগামু। তারপর বাচ্চারা হলুদ দিবি কি কইছি বুঝছোস তোরা? শেহনাজ একটা বৃদ্ধার গাল টেনে বলল,

–সমস্যা নেই দাদি যতরকমের গীত আছে সব গাইবে। তোমাদের হলুদ লাগনো শেষ হলে, আমরা নাচ গান করে হলুদ অনুষ্ঠান শুরু করব। মুনতাসিমকে ছাদে নিয়ে এসে বসানো হলো। বৃদ্ধারা গীত গাইছে আর হলুন দিচ্ছে অদ্ভুত ভাবে মুনতাসিমের ভিষণ লজ্জা লাগছে। সমস্ত মুখশ্রীতে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে। বৃদ্ধাদের পালা শেষ হলে সবাই আস্তে আস্তে হলুদ মাখিয়ে দিল। মুনতাসিমের সাথে সবাই হলুদ মাখায় মেতে উঠল। শেহনাজ আর মাশরাফি গানের তালে তালে নাচছে। তাদের সাথে একদল ছেলেমেয়ে এসে যোগদান করল।শীতের সকালের ঠান্ডা পানি কায়াতে পড়তেই সমস্ত কায়া কেঁপে উঠল। কলসি দিয়ে মুনতাসিমের মস্তকে পানি ঢালা হচ্ছে। হলুদের কাজ সম্পূর্ণ হলেই মুনতাসিম নিজে নেমে আসলো। কক্ষের এসে ভালোভাবে গোসল করে বস্ত্র পরিধান করে নিল। তার ছোঁয়ানো হলুদ নিয়ে সবাই মেহেভীনের গৃহের উদ্দেশ্য বের হবে। মেহেভীনকে হলুন শাড়ি পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত কায়াতে তাজা সতেজ গাঁদা ফুলের অলঙ্কার বানিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সবাই মেহেভীনকে দেখে দোয়া করে দিচ্ছে। রাইমা বেগম মেয়ের দিকে মুগ্ধ নয়নে দৃষ্টিপাত করে আছেন। তার মেয়েকে পরীর থেকে কোনো অংশে কম লাগছে না। মেয়ের হাতে কামড়ে দিতে ইচ্ছে করছে, যেন তার মেয়ের সৌন্দর্যে কারো নজর না লাগে। মেহেভীনকে হলুদের আয়োজনের মাঝখানে বসিয়ে দেওয়া হলো। সেখানে নানা রকমের মিষ্টি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রঙবেরঙের ফল কে’টে সুন্দর সুন্দর ডিজাইন করে সাজিয়ে রেখেছে। সবাই আসছে মেহেভীনকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে দোয়া করে টাকা দিয়ে চলে যাচ্ছে। মেহেভীন অসহায় দৃষ্টিতে মায়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। এতএত মানুষের আনাগোনা তবুও তার ভেতরটা খালি খালি লাগছে। ভিষণ করে বাবার করে মনে পড়ছে। বাবার কথা স্মরণ হতেই ভেতরটা ভিষণ জ্বালা পোড়া করছে। আঁখিযুগলের কার্ণিশে অশ্রুকণা এসে জমাট বাঁধল। এর মধ্যেই হৈচৈ শোনা গেল হলুদ এসে গিয়েছে। শেহনাজ এসেই মেহেভীনের পাশে বসলো। মেহেভীনের ডান হাত ধরে বলল,

–আমি ভাবির ডান হাতে মেহেদী দিয়ে দিব। তোরা কে বাম হাতে দিয়ে দিবি ঠিক কর। একদম আমাদের সাথে ঝামেলা করতে আসবি না। তাহলে ভাইকে বলে সবার অবস্থা খারাপ করে ফেলব। মুহুর্তের মধ্যে মেহেদী দেওয়া নিয়ে ঝামেলা বেঁধে গেল। হলুদ বড়দের হাতে দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তাদের ঝামেলার মাঝেই একজন বলল,

–অবিবাহিত মেয়ে গুলো সইরা যাও। আমরা হলুদ দিয়া চইলা যাই। তারপর তোমরা সবাই মিইলা মেন্দি পড়াইয়া দিও। মহিলাটির কথায় কয়েকজন সরে গেল। মেহেভীনকে হলুদ পড়িয়ে দিয়ে সবাই সরে যেতেই সবাই মেহেভীনের হাত নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেল। অবশেষে চারজন মিলে ঠিক করল তারাই মেহেদী পড়াবে। শেহনাজ খুব সুন্দর করে মেহেদী পড়াতে পারে। সবাই মেহেভীনকে মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছে। মেহেভীন চুপচাপ বসে বসে দেখছে, মুখ দিয়ে কোনো বাক্য উচ্চারন করছে না। রাইমা বেগম মেয়েকে ভরসা দিতে একটু পর পর এসে দেখে যাচ্ছে। মেহেভীনের দু’হাতের মাঝখানে মুনতাসিমের নাম লিখে দেওয়া হয়েছে। মেহেদী পড়ানো শেষ করে, সবাই নিজদের মতো করে আড্ডায় মেতে উঠেছে। এত সুখ এত আনন্দ তবুও কোথাও জানি, মেহেভীনের ভেতরটা শূন্যতা অনুভব করছে। অদ্ভুত ভাবে আঁখিযুগল দিয়ে অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ছে। এমন অনুভূতি সে আগে কখনো অনুভব করেনি। তবে আজ কেনো তার এত কষ্ট হচ্ছে? প্রশ্নের গভীরে গিয়েও উত্তর পাইনি সে। মনের অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো।

চলবে…..

(আপনাদের কথাই রাখলাম। আজে শুভ কাজ শেষ করে নি। তারপর না হয় সব ঝামেলা আসবে। আসলে তিন দিন ধরে আমার মাথা ব্যথাটা ভিষণ বেড়েছে। অনেক হয়তো আমার মাথার ব্যথা সম্পর্কে জানেন অনেকে জানেন না। সকাল থেকে শুরু হয় ঘুমানোর আগ পর্যন্ত যন্ত্রনা হতেই থাকে। এভাবে বাঁচা যায় নাকি! এর আগেও হতো কিন্তু এক বেলা হলে আরেক বেলা ভালো থাকতাম। তিনদিন হলো কোনো পরিবর্তন নেই। আজকের পর্বটা কতটা যন্ত্রনা নিয়ে লেখেছি আমিই জানি সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। যেন তাড়াতাড়ি যন্ত্রনাটা ঠিক হয়ে যায়। আর যদি না বলে হারিয়ে যাই সবাই আমাকে মাফ করে দিবেন। আমার প্রতি অভিযোগ রাখবেন না। এই যন্ত্রনা আমার সহ্য করার বাহিরে। দোয়া করবেন যেন সুস্থ হালে গল্পটা শেষ করতে পারি। গল্পটাও শেষের দিকে চলে আসছে। শেষ হলে আমার নিজেরও শান্তি লাগবে। সবাই রেসপন্স করবেন। শব্দসংখ্যা১৯০৬)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here