তোমার_হতে_চাই ২ part : 19(last) writer : Mohona

0
438

#তোমার_হতে_চাই ২
part : 19(last)
writer : Mohona

.

মেরিন : গুডবাই।
নীড় : গুডবাই!
মেরিন : হামম। আমি তোমার সাথে আর কখনো দেখা করতে চাইনা।
নীড় হেসে দিলো।
নীড় : হামম। গুডবাই। এন্ড ডোন্ট মিস মি।
মেরিন : মিস তাও তোমাকে? ইশ ॥ শোনো…
নীড় : হামম?
মেরিন : এই খামটা হিয়াকে দিও।
নীড় : কি আছে এটাতে?
মেরিন : সেটা জেনে তুমি কি করবে? দিয়ে দিও।
নীড় : হামম।
রবিন : আসতে পারি?
মেরিন : আরে মামা আসো।
রবিন ভেতরে ঢুকলো।
রবিন : বাবাই … রেডি টু গো?
মেরিন : হামম।
রবিন নীড়ের মাথায় হাত রাখলো।
রবিন : তুমি সবসময় আমাকে স্যার ডেকে এসেছো। আজকে তোমার কাছে আমি কিছু চাইবো।দিবে?
নীড় : স্যার আপনি অর্ডার করুন।
রবিন : অদ্ভুত না বলো … তুমিই আমার বাবাইকে সুস্থ করলে আবার তোমার কাছেই কিছু চাইছি…
নীড় : স্যার…
রবিন : আমাকে মামা বলে ডাকবে?
নীড় অবাক হয়ে গেলো।
রবিন : ডাকবে আমাকে মামা বলে!
নীড় : স্যা… মামা। এটা যে আমার পরম সৌভাগ্য। ধন্যবাদ স… না। ধন্যবাদ মামা।
দুজন নিজনিজ বাসায় চলে গেলো। নীড় হিয়াকে খামটা দিলো। হিয়া সেটা রুমে নিয়ে গিয়ে খুলল।
হিয়া : মেরিন আমাকে এটা কি দিলো? কেনো দিলো?
হিয়া খাম খুলল। সেটাতে কাগজ পেলো। সেখানে নীড়ের সব পছন্দ-অপছন্দের বিষয় বস্তুর তালিকা রয়েছে। রয়েছে নীড় অভ্যাস-বদভ্যাসের তালিকা । রাতের কোন সময় নীড়ের ঘুম গভীর থাকে, নীড়ের বাইকের বেগ কতো থাকে , কি করলে নীড়ের রাগ ওঠে ,কি করলে নীড়ের রাগ ঠান্ডা হয় , কি করলে নীড় খুশি হয় সবটা লিখে দিয়েছে মেরিন। এরপর লিখেছে ‘এগুলো মানিয়ে চলো। আমি কেবল ওকে রাগিয়েই দিতাম। আর অভ্যাস-বদভ্যাস , পছন্দ-অপছন্দ এক হওয়াতে সেটা নিয়ে ঝামেলা হয়নি। কোনো অবস্থাতেই পরিবারের কারো সাথে উগ্র ব্যবহার করোনা। ও মেনে নিতে পারবেনা। ক্ষীরবাদুরকে নিয়ে ভালো থেকো।’

.

৩দিনপর…
নিহাল : কি বলছো কি? নভেম্বরের ১৯ তারিখ? মানে ১৭দিন পর?
নীড় : হামম ১৯ তারিখ। সেদিনই আমি হিয়াকে বিয়ে করতে চাই।
নিহাল: কি যা তা বলছো? ভেবে বলছো তো?
নীড় : আমি ভেবেই বলছি বাবা। সবদিক ভেবে বলছি। বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হবে। হিয়ার মা-বাবাকে ইনফর্ম করো। ১৯তারিখ বিয়ে। আর ২২ তারিখ আমি ইউএস যাওয়ার টিকিট কেটেছি ।
নিহাল : ১৯তারিখ… মনে আছে এটা কিসের তারিখ?
নীড় : হামম। মনে আছে। আর তাই ১৯ তারিখেই বিয়ে করতে চাইছি।
নিহাল : তারাহুড়ো করার প্রয়োজন নেই বাবা। আরেকটু সময় নাও। আই নো ইউ নিড টাইম।
নীড় :না বাবা… দেরি করলেই দেরি। আমি কাবু হারিয়ে ফেলবো। নিজের সাথে কাউকে জরিয়ে দ্রুত অনেক দূরে চলে যেতে চাই। লালঝুটি কাকাতুয়ার থেকে দূরে যেতে চাই। আমি থাকলেই ওর জন্য বিপদ।
নিহাল: বিপদের কথা কেনো বলছো বলোতো? বিপদ কোথায় থেকে আসবে?
নীড় : ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া বাবা। ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া সেদিন লন্ডনে কেনো ও সুইসাইড করতে চেয়েছিলো , কেনো ও ওর অসুস্থতা লুকিয়ে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দিয়েছিলো… ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া কি করেছিলাম আমি…
নিহাল : কি এমন করেছিলে?
নীড় : ডোন্ট আস্ক। যাই হোক ইতিহাস আবার উল্টো ঘুরাতে চাইনা। লালঝুটি কাকাতুয়াকে আর বিপদে ফেলতে চাইনা।
নিহাল : যেটা ভালো বোঝো।
বলেই নিহাল চলে গেলো। নীড় ওদের এনগেজমেন্ট রিংটা গলা থেকে বের করলো।
নীড় : ফাইনালি সব একেবারে শেষ হতে চলেছে। ছেলেরা আসলেই খারাপ হয়। খুব খারাপ হয়। গুড ফর নাথিং হয়। ভালো থেকো।

.

পরদিন…
মেরিন : থ্যাংকস ফর দ্যা ফ্লাওয়ারস।
নীর : থ্যাংকস ম্যাডাম খান। আই মিন ওয়েলকাম।
মেরিন: আপনিনা… আসুন বসুন।
দুজন কথা বলতে লাগলো।
মেরিন : আপনার কথা শুনে সেই আপনাকে মনে হচ্ছেনা।
নীর : আসলে আপনার সামনে আছি তো। তাই…
মেরিন : উহু মিস্টার রহমান। অন্য ব্যাপার… প্রেমে পড়েছেন বলে মনে হচ্ছে।
নীর : ম্যাডাম প্রেম ট্রেম আমাদের মতো চিল পার্সোনদের জন্য নয় । সেগুলো বোরিং মানুষদের জন্য।
মেরিন : হামম। সেটা হয়তো ঠিক। কিন্তু হাতে লেখা ‘এইচ’ লেটারটা যে আপনার কথা বিশ্বাস করতে দিচ্ছেনা।
নীর হেসে দিলো।
নীর : আপনার চোখে ধুলো দেয়া যায়না। তাইনা?
বলেই নীর হাসি দিলো।
মেরিন : উকিলের দৃষ্টি দিয়ে দেখলে দেয়া যায়না।
মেরিনও হেসে দিলো। তখন নীরের ফোনো নটিফিকেশন এলো। হিয়া স্ট্যাটাস আপডেট করেছে। ১৯ তারিখ ওর আর নীড়ের বিয়ে।
মেরিন : কি হয়েছে? সব ঠিক আছে তো? আপনাকে এমন লাগছে কেনো?
নীর : দেখুন দেখুন আপনার ক্ষীরবাদুর আর হিয়া ম্যাডামের বিয়ে। ১৯তারিখে।
মেরিনের কপালে ভাজ পরলো।
নীর : আমার মনটা ভেঙে গেলো।
মেরিন : মানে!
নীর : না বোঝার কি আছে? আরো ১টা সুন্দরি মেয়ের বিয়ে হতে চলল। আর আমি এখনো একা…
মেরিন ছোট করে হাসি দিলো।
নীর : আসছি । আবার দেখা হবে।
নীর চলে গেলো।
মেরিন : ১৯তারিখ…
মেরিন ভাবতে লাগলো বিয়ে থেকে পালিয়ে যাওয়ার কথাটা। আদিবাসীদের নিয়মে বিয়ের কথা…
মেরিন : বিয়ে আর তালাকের বিষয়টা বড্ড অদ্ভুত । বিয়ে হলো আদিবাসীদের নিয়মে , বিয়ে হলো কোর্টের নিয়মে , বিয়ে হলো ধর্মীয় নিয়মে। কিন্তু তালাক হলো কেবল এক নিয়মে। আসলেই গড়তে সময় লাগে কিন্তু ভাঙতে নয়।

.

পরদিন…
নীড় সাতার কাটছে।
হিয়া : রেগে আছো কেনো?
নীড় : তোমাকে কে বলল আমি রেগে আছি?
হিয়া : সুইম করতে তোমার সবথেকে বিরক্ত লাগে। তাই রাগ উঠলে সাতার কাটো।
নীড় সুইমিং পুল থেকে উঠে এলো।
নীড় : হাও ডু ইউ নো?
হিয়া : কেউ বলেছে।
নীড় : মামনি! না মামনি তো এটা জানেনা। তবে ? কে বলেছে?
হিয়া : তুমি জানোনা কে জানতে পারে?
নীড় : না।
হিয়া : কেনো নাটক করছো?
নীড় : আরে আমি নাটক কেনো করবো?
হিয়া : কেনো তুমি জানোনা যে মেরিন এটা জানে?
নীড় : লালঝুটি ।কাকাতুয়া!
হিয়া : হামম। আচ্ছা চলো। শপিং এ যাই । বিয়ের শপিং তো করতে হবে।
নীড় : আমার কাজ আছে। এই নাও ক্রেডিট কার্ড। যতো ইচ্ছা শপিং করো।
হিয়া : নীড় আমার কাছে টাকা আছে। মম-ড্যাড অনেক দিয়েছে । কিন্তু ওরা সময় দেয়নি আমাকে। মনে হয়না সেটা তোমার কাছেও কখনো পাবো।
বলেই হিয়া বেরিয়ে গেলো।
ওদিকে নীর বিরহের গান শুনছে।
নীর : দুঃখের মধ্যে দুঃখী গান শুনে তো আমার মন আরো খারাপ হয়ে গেলো।
○ : স্যার কোর্টের সময় শুরু হতে চলল। জজ সাহেব এসে পরবেন।
নীর : রাখো তো কেস। ভালোবাসা আমাকে কেস খাইয়ে দিয়েছে। চলো দেখি ।
নীর কোর্টরুমে ঢোকার সময় হিয়া ফোন করলো।
হিয়া : তুমি কোথায় আছো?
নীর : সেটা বড় কথা নয়। তুমি ফোন করেছো সেটাই বড় । ওহ… অভিনন্দন।
হিয়া তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।
হিয়া : কোথায় তুমি?
নীর : কোর্টে । হেয়ারিং আ…
হিয়া : আসতে পার… ওহ। আচ্ছা। বাই।
নীর : কোথায় আসতে হবে সেটা বলো ।
হিয়া : আর আজকে তো হেয়ারিং আছে।
নীর : সো হুয়াট? তুমি বলো কোথায় আসতে হবে?
হিয়া : শপিং এ।
নীর : আমি এখনি আসছি।
নীর দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।
○ : নীর … স্যার। দারান। স্যার। লোকটা কি পাগল?

.

হিয়া : হাসছো কেনো?
নীর : মনে হচ্ছে তোমার আর আমার বিয়ে হতে চলেছে। তাই দুজন মিলে শপিং করছি।
হিয়া : শাট আপ।
নীর : ওক।
হিয়া : এই শোনো…
নীর : হামম?
হিয়া : আমার বিয়ের দিন তুমি এই স্যুটটা পরবে । ইটস অ্যা গিফ্ট ফর ইউ। না নিলে আমাদের বন্ধুত্ব শেষ।
নীর : বেশ স্যুটটা নিলাম। কিন্তু তোমার বিয়েতে যে আমি আসতে পারবোনা।
হিয়া : কেনো?
নীর : জরুরী কাজ আছে ।
হিয়া : আমার বিয়ের থেকেও জরুরী!
নীর : হামম।
হিয়া : নট ডান।
নীর মনেমনে : তোমাকে যে অন্যকারো হতে দেখতে পারবোনা।
হিয়া : আমি তোমার অপেক্ষা করবো…

.

২দিনপর…
রবিন : টাডা…
মেরিন : টিকিটস?
রবিন : হামম। টিকিটস। অস্ট্রেলিয়া ট্যুরের। আমার ,তোমার , সনির , আপু আর দুলাভাইয়ের।
প্রহর : আমার আর আমার বউয়েরটা কোথায় বাপি?
রবিন : তোমাদের দুজনকে নেয়া হবেনা। আমরা ৫জন যাবো।
নিহারিকা : বাপি… এটা কিন্তু অন্যায় আমাদের সাথে।
সনি : মাঝেমধ্যে ছেলের বউয়েক সাথে অন্যায় না করলে শ্বশুর-শ্বাশুরি ফিল আসেনা।।
কবির : তোমরা তোমাদের কাজ শেষ করে জয়েন করো আমাদের সাথে।
কনিকা : ভালোই করেছিস বাবু ট্যুর প্ল্যান করে। আমার পুতুল বাচ্চাটা এতোদিন হসপিটালে থেকে বোর হয়ে গিয়েছে। মনটা ভালো হয়ে যাবে।
মেরিন হাসলো।
মেরিন : আমি অনেক লাকি। কারন তোমরা আমার পরিবার। আমি যতোটা লাকি তোমরা ততোটাই বাজে অভিনয় করো।। বাস্তবতা থেকে আর কতো পালাবো মামা? টায়ার্ড আমি। অস্ট্রেলিয়া ট্যুরে অবশ্যই যাবো। কিন্তু নেক্সট মান্থ। ১৯ তারিখে নিহারিকার একমাত্র ভাইয়ার মানে ক্ষীরবাদুরের বিয়ে । সেটা সম্পন্ন হোক। দেন ভাইয়া আর আমার টুকটুকে ভাইয়ার বউকে নিয়েই যাবো। ৭জন মিলে জমিয়ে আনন্দ করবো। আর কোনো ইমোশনাল ড্রামা চাইনা আমি। তোমরা আমার শক্তি থেকে দুর্বলতায় পরিনত হয়োনা প্লিজ।

.

রাতে…
মেরিনের ফোনটা বেজে উঠলো। ক্ষীরবাদুর লেখা। মেরিন ধরলো।
নীড় : বড্ড হিংসুটে তুমি।
মেরিন : আমি আবার কি করলাম?
নীড় : জিজ্ঞেস করতে লজ্জা করছেনা?
মেরিন : লজ্জা ফজ্জা আমার নেই।
নীড় : সবাই কংগ্রেচ্যুলেশন জানালো। তুমি জানালেনা।
মেরিন : কেনো জানাবো? তুমি কি আমাকে ইনভাইট করেছো?
নীড় : হাও মিন…
মেরিন : থ্যাংক ইউ।
নীড় : শোনো।।
মেরিন : বলো।
নীড় : শেষবারের মতো আজকে একবার লং ড্রাইভে যাবে?
মেরিন : নাহ…
নীড় : বাঁচলাম…
মেরিন : ইডিয়ট।
নীড় : কি বৃষ্টিটাই না হচ্ছে বাহিরে।
মেরিন : কি আবোল তাবোল বকছো। একটুও বৃষ্টি পরছেনা।
নীড় : পরছে।
মেরিন : না।
নীড় : পরছে বৃষ্টি।বাজি?
মেরিন :ইশ…
নীড় : বৃষ্টি পরছে। বিশ্বাস না হলে বারান্দায় গিয়ে দেখো।
মেরিন : তুমি ভুল মিস্টার ক্ষীরবাদুর।
মেরিন বারান্দায় গেলো ।
মেরিন : বৃষ্টির টিকিটাও দে…
নীড় নিচে দারিয়ে আছে।
মেরিন : তুমি কখনো পাল্টাবেনা। তাইনা?
নীড় : কেউ বলেছিলো কখনো না পাল্টাতে। তার কথা ফেলা আমার সাধ্যের বাহিরে।
মেরিন হাসলো।
নীড় : হেসোনা। মরে যাই বারবার এই হাসিতে। আই লাভ ইউ।

.

বিয়ের আগেরদিন…
হিয়া গায়ে হলুদ নিয়ে বসে আছে। বিয়ে নিয়ে কোনো আনন্দ নেই ওর মধ্যে। কারন নীর আসেনি আজকে। ওর মা-বাবা এসেছে দুদিন আগে। ওর মাথায় কেবল নীরের নাম ঘুরছে। তখন ফোনটা বেজে উঠলো। নীর কল করেছে। হিয়ার মুখে হাসি ফুটলো।
হিয়া : আজকে আসোনি কেনো?
নীর : একটু নিচে আসতে পারবে?
হিয়া ছুটে নিচে গেলো।। নীর তাকিয়ে রইলো।।
নীর : অস্বাভাবিক সুন্দর লাগছে তোমাকে ।
হিয়া লজ্জা পেলো।
নীর : শেষবারের মতো লং ড্রাইভে যাবে?
হিয়া : হামম।
নীর হিয়াকে নিয়ে বের হলো। ২ঘন্টা পর ফিরে এলো।
হিয়া : গুড নাইট।
নীর : হিয়া…
হিয়া : হামম।
নীর : তুমি সেদিন জানতে চেয়েছিলেনা যে আমি কাকে ভালোবাসি?
হিয়া : হামম। এখন আর চাইনা জানতে…
নীর : কেনো?
হিয়া : এমনি…
নীর : সেই মেয়েটা তুমি… আই লাভ ইউ হিয়া।
হিয়া ঠাস করে থাপ্পর মারলো নীরকে।
নীর : আমি জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো। ১টা মেয়ে যতো মডার্নই হয়ে যাকনা কেনো গায়ে হলুদ নিয়ে অন্য ছেলের সাথে লং ড্রাইভে যাবেনা।
হিয়া আর কিছু না বলে চলে গেলো।

.

স্কুলের বাহিরে দারিয়ে আছে মেরিন। এখান থেকেই সবটা শুরু হয়েছিলো। আপন মনে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
নীড় : এখন বুঝি রবিন মামা আমাদের বিয়ে কেনো দিয়েছিলো? কেনো ভাবতো আমরা একে অপরের জন্য পারফেক্ট ?
মেরিন : তুমি এখানে?
নীড় : হামম। কারন তুমি এখানে…
মেরিন : আমার জানামতে আজকে তোমার গায়ে হলুদ ছিলো।
নীড় : হামম।
মেরিন : তাহলে কপালে হলুদের নিশান আর গায়ে হলুদের পাঞ্জাবি কোথায়?
নীড় : শাওয়ার নিয়েছি। অস্বস্তি লাগছিলো।
মেরিন : ওহ। আসছি।
নীড় : থাকোনা প্লিজ।
মেরিন না চাইতেও দারালো। নীড় মেরিনের হাতের দিকে তাকালো।
নীড় : এই আংটিটা আজও পরে আছো…
মেরিন : হামম।
মেরিন আংটিটা খুলে ফেলল।
নীড় : খুলে ফেললে কেনো?
মেরিন নীড়ের দেয়া নূপুর জোরাও খুলে ফেলল।
নীড় : আশ্চর্য … এগুলো খুলছো কেনো?
মেরিন : তোমার সবকিছুর ওপর হিয়ার অধিকার। এই নাও।
নীড় : অসম্ভব । এগুলো তোমার।
মেরিন : সরি। আর রাখতে পারবোনা।
নীড় : আমি কিন্তু এগুলো ছুরে ফেলে দিবো।
মেরিন : তোমার জিনিষ তুমি যা ইচ্ছা করো।। ধরো।
নীড় সেগুলো নিয়ে ছুরে ফেলে দিলো।
মেরিন : গুড নাইট। অল দ্যা বেস্ট নতুন জীবনের জন্য ।
নীড় : দারাও।
মেরিন : বলো।
নীড় মেরিনের দেয়া ঘড়িটা খুলল। এরপর গলার চেইনটা বের করলো। সেটাতে থাকা আংটিতে চুুমু দিলো। এরপর চেইন থেকে ওটা খুলল। মেরিনের কপালে ভাজ পরলো। ও জানতোনা এটা নীড়ের কাছে আছে। নীড় মেরিনের হাতে ঘড়ি আর আংটি ধরিয়ে দিয়ে হনহন করে গাড়ির দিকে যাচ্ছে।
মেরিন : নীড়…
নীড় দারালো। ঘুরতে নিলো।
মেরিন : ঘুরবেনা প্লিজ… পেছনে তাকাবেনা। একদমনা। একটা কথা বলতে চাই। না তোমার বিয়ে ভাংতে নয়। আমাদের সম্পর্কটা ভাংতে। আই লাভ ইউ নীড়… আই রিয়েলি লাভ ইউ।
বলেই মেরিন চলে গেলো।
নীড় দারিয়ে কাঁদতে লাগলো।

.

পরদিন…
আজকে নীড়-হিয়ার বিয়ে।
রবিন : যদি ওদের দুজনের ডিভোর্সটা না হতো… আমার চোখের সামনে আমার বাবাইর জীবনের সব আলো আজকে নিভে যাচ্ছে। আর আমি…
রবিনের ফোনটা বেজে উঠলো।
রবিন : হ্যালো।
□ : স্যার আপনার স্পেশাল পেশেন্টের রিপোর্টটা চলে এসেছে। আপনি যদি এসে একটু দেখতেন।
রবিন : আসছি।
রবিন হসপিটালে পৌছালো। সেখানে ওর সাথে ধাক্কা খেলো একজন মধ্যবয়ষ্ক মহিলার সাথে। ৬০+ । সে আর কেউ নন জাস্টিস নিলুফার। যে কিনা নীড়-মেরিনের ডিভোর্স কেইসের জজ ছিলেন।
রবিন : সরি।
নিলুফার : ইটস ওকে। কিছু়টা দোষ আমারও ছিলো।
রবিন : আপনি জাস্টিস নিলুফার না?
নিলুফার : জী।
রবিন : হাও লাকি আই অ্যাম! আসুন ম্যাম।
নিলুফার : আপনি তো আমাকে চিনলেন। আমারও আপনাকে চেনাচেনা লাগছে। মনে করতে পারছিনা।
রবিন : সেটাই স্বাভাবিক নয় কি? কতো কতো কেইস রায় দেন আপনি।
নিলুফার চশমাটা চোখে দিলেন ।
নিলুফার : হামম । অনেক কেইসের বিচারক হয়েছি। বিশেষ করে ডিভোর্স কেইসের বিচারকও হয়েছি। তারমধ্যে ক্ষীরবাদুর আর লালঝুটি কাকাতুয়ার ডিভোর্স কেইস আমার জন্য চিরস্মরনীয়। আপনি লালঝুটি কাকাতুয়া মানে মেরিন বন্যা খানের মামা রবিন মাহমুদ না?
রবিন : জী।
নিলুফার : ওরা দুজন ভালো আছে তো? ওরা আসলেই মেইড ফর ইচ আদার। তা নাহলে কি অমন অভিযোগ দেয় একে অপরের নামে? ওরা সারাজীবন যেনো এমনই থাকে।
রবিন : কোনো অপশন কি আছে ম্যাম? ডিভোর্সের পর কি আর সেই সুযোগ থাকে?
নিলুফার : ডিভোর্স? আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। ওদের তো ডিভোর্স হয়নি।
রবিন : না না ম্যাম আপনার মনে নেই হয়তো। ওদের ডিভোর্স হয়েছিলো। ওরা মত দিয়েছিলো। ডিভোর্স পেপারে সিগনেচারও করেছিলো।
নিলুফার : আমার সবই মনে আছে। আপনার সবকথাই ঠিক। কিন্তু ওরা ওদের নিজনিজ নামের জায়গায় ক্ষীরবাদুর আর লালঝুটি কাকাতুয়া লিখেছিলো।তাই আমি ওটা খারিজ করে দেই।
রবিন : সসত্যি বলছেন ম্যাম?
নিলুফার : হামম। কেনো কোর্ট অর্ডার পাননি?
রবিন ছুটে মেরিনদের বাসায় গেলো। মেইল বক্সের তালা খুলে সেখান থেকে কোর্ট অর্ডার নিয়ে আর ১মিনিটও দেরি না করে গেলো নীড়দের বাসায়। বিয়ে বন্ধ করতে। মেরিনকেও বলেনি। কারন প্রতিটা মিনিট এখন মূল্যবান।

.

রবিন পৌছালো চৌধুরী বাড়িতে। কাজী সাহেব চলে এসেছেন। নিজের কাজও শুরু করে দিয়েছে।
রবিন মনেমনে : আজকে যদি আমি বিয়েটা না আটকাই তবে আমার বাবাই আর নীড়ের জীবন নষ্ট হবে। আর যদি আটকাই তবে এই মেয়েটা আর ওর পরিবারের কতো বদনাম হবে! এতোটা স্বার্থপর কি করে হবো আমি? কিন্তু নীড়-মেরিনের বিয়ে তো হয়নি। এই বিয়ে তো অবৈধ হবে।
কাজী সাহেব : বলো মা কবুল…
রবিন কিছু বলার আগেই হিয়া দারিয়ে গেলো।
হিয়া : না বলবোনা আমি কবুল। কারন আমি এই বিয়ে করতে চাইনা।
হিয়ার বাবা হিমেল : বেবি তুমি এটা কি বলছো? কেনো করবেনা এই বিয়ে?
হিয়া : দুটো কারন আছে । প্রধান কারন। আমি ‘এন’ ‘আই’ ‘আর’ নীড়কে না। ‘এন’ ‘ই’ ‘ই’ ‘আর’ নীরকে ভালোবাসি।
নীর তো অবাক।
হিয়া : নীর সে যার কাছে আমার জন্য সবসময় সময় আছে। যেটা এই নীড়ের কাছে নেই। আর দ্বিতীয় কারনটা নীড়ের জন্য প্রধান। কারনটা আমি নিজ স্বার্থে লুকিয়ে রেখেছিলাম। কারনটা ছিলো ১টা পরিবার। কিন্তু বুঝতে পারলাম যে এই পরিবারও আমার জন্য পারফেক্ট নয়। যাই হোক। ২য় কারনটা হলো… নীড়-মেরিনের ডিভোর্স হয়ইনি…
কথাটা শুনে সবাই ধাক্কা খেলো।
নীড় : ককি বলছো ততুমি…
রবিন : ঠিক বলছে। তোমাদের ডিভোর্স খারিজ হয়ে গিয়েছিলো। এই যে কোর্ট অর্ডার।
নীড় দেখলো। দেখে আর ১মিনিটও দেরি না করে বেরিয়ে গেলো। রবিন-হিয়া সব খুলে বলল। রবিন কবির-কনিকা-সনিকে ডাকিয়ে নিলো।

.

মেরিন ওর আর নীড়ের বিয়ের ছবি দেখছে। কাঁদছে… হঠাৎ ফ্রেমে নীড়ের প্রতিবিম্ব দেখতে পেলো। পেছনে ঘুরলো।
মেরিন : ততুমি…
নীড় : রেডি হয়ে নাও।
মেরিন : মানে?
নীড় : তুমি আমার বিয়ে দেখতে যাবে। সো রেডি হয়ে নাও।
মেরিন : না।
নীড় মেরিনের কাবার্ড ঘাটতে লাগলো ।
মেরিন : তুমি আমার কাবার্ড এলোমেলো করছো কেনো?
নীড় : ১টা শাড়িও নেই তোমার! দারাও অনলাইনে অর্ডার করছি।
নীড় অর্ডার করে দিলো।
মেরিন : তুমি কি করছো কি?
নীড় টেনে মেরিনকে ওয়াশরুমে নিয়ে শাওয়ার অন করে দিলো।
নীড় : এই ধরো শ্যাম্পু। টাটা।

.

১ঘন্টা পর…
নীড় : এই তোমার হয়নি এখনো? শাড়িও চলে এসেছে । এই । ওপেন দ্যা ডোর। বের হও।
মেরিন : কি করে বের হবো ভেজা কাপড়ে?
নীড় : কেনো আমি কি তোমার পর?
মেরিন : ক্ষীরবাদুর…
নীড় : মজা করছিলাম । এই ব্যাগটা নাও । সব আছে দরকারী । পরে বেরিয়ে আসো।
মেরিন দরজা একটু খুলে নিলো। দেখলো শাড়ি।
মেরিন : শাড়ি কেনো? জানোনা আমি শ…
নীড় : শাড়ি পরতে পারোনা। পেচিয়ে টেচিয়ে অাসো । আমি আছি তো।
মেরিন : কি ?
নীড় :আমি আছি তো আম্মুকে ডাক দেয়ার জন্য ।
বলেই নীড় ধিরিম করে দরজা লাগিয়ে চলে যাবার নাটক করলো। মেরিন কোনো রকমে শাড়ি পেচিয়ে বেরিয়ে এলো।
মেরিন : ওর সমস্যা টা কি ….
নীড় : তুমি…
মেরিন : আ… 📢
নীড় : এতো রিয়্যাক্ট করছো কেনো?
মেরিন : তুমি এভাবে একটা মেয়ের রুমে থাকতে পারোনা।
নীড় : কোথায় মেয়ে?
মেরিন : ক্ষীরবাদুর…
নীড় : আম্মু আমার বিয়েতে গিয়েছে। আমি শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছি।
মেরিন : একদম আগে বারবেনা।।
নীড় : দেখো আমি শরীফ ছেলের মতো কোনো রোম্যান্স ছারা শাড়ি পরিয়ে দিবো। তুমি ড্রামা করলে আমাকেও কাহিনি করতে হবে। নীরের হিয়া বিয়োর জন্য ওয়েট করছে। তোমার জন্য আটকে আছে। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো।
মেরিন জানে নীড় যা তা পাগলামো করতে পারে। তাই ও আর ঝামেলা করলোনা। নীড়ও ভদ্র ছেলের মতো শাড়ি পরিয়ে দিলো।
নীড় : বসো সাজিয়ে দেই।
মেরিন : দরকার নেই।
নীড় : মেরিন বন্যা খান বলছে সাজের প্রয়োজন নেই! যে কিনা ওয়াশরুমে গেলেও সাজে…
মেরিন : উইল ইউ প্লিজ শাট আপ?
নীড় : ওকে। বাট এমন সাদামাটা হয়ে বিয়েতে কেউ যায়?
মেরিন : দে…
নীড় : চুপ।
নীড় মেরিনকে সাজিয়ে দিলো।
মেরিন : তোমার শেরওয়ানিটা কোথায়? এই পাঞ্জাবি কেনো?
নীড় : এটাতে বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে। নাও ফলো মি।
মেরিন গিয়ে গাড়িতে বসলো।

.

একটুপর…
ওরা চৌধুরী বাড়িতে পৌছালো। নীড় মেরিনের হাত ধরলো।।
মেরিন : হাত ছারো। আজকে তোমার বিয়ে।
নীড় কিছু না বলে আগে বারতে লাগলো। দরজার সামনে গিয়ে দারালো। মেরিন মামা-মামি , আম্মু-বাবাকে দেখে অবাক হলো।
নীড় মেরিনকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতে নিলে নীলিমা বাধা দিলো।।
নীলিমা : ওখানেই দারাও।
নীলিমা বরনডালা নিয়ে গেলো। এরপর একরাশ প্রশান্তি নিয়ে দুজনকে বরন করতে লাগলো। মেরিনের মনে হচ্ছে ও পাগল হয়ে যাবে । নীলিমা মেরিনের কপালে চুমু দিলো।
নীড় : ডান!
নীলিমা : হামম।।
নীড় মেরিনকে কোলে তুলে নিলো। এরপর ভেতরে ঢুকলো। সবাই করতালি দিলো । কেউ সিটি বাজালো। নীড় মেরিনকে নামালো। নীরের গায়ে শেরওয়ানি , মাথায় পাগরি। মেরিনের মাথা ঘুরছে। কান্নাও পাচ্ছে। কি করবে? কাকে জিজ্ঞেস করবে? সবাইকে খুশিখুশিও লাগছে। কবির এগিয়ে এলো। কোর্ট অর্ডারের কাগজটা মেরিনের সামনে তুলে ধরলো । মেরিন হাতে নিয়ে পড়লো। মেরিন চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরলো। নীড়ের দিকে ঘুরলো। ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে প্রশান্তির হাসি।
কবির : যাও…
মেরিন নীড়ের দিকে ছুটে গেলো। জরিয়ে ধরলো। নীড়ও জরিয়ে ধরলো।
নীড় : আই লাভ ইউ… খুব ভালোবাসি তোমাকে মেরিন। ক্ষীরবাদুর তোমাকে ছারবেনা।
মেরিন : ইডিয়ট , স্টুপিড। এতোক্ষন ধরে এতো ড্রামা না করে বললেনা কেনো?
নীড় : আমার ইচ্ছা।
নীলিমা : এই তোমরা কান্নাকাটি বন্ধ করবে? এতোবছর পর সুখ ফিরে এলো। কান্নাকাটি বন্ধ করে আমার মামনিকে অ্যানিভার্সারি গিফ্ট দাও।
নীড় : তোমাদের সামনেই দিবো?
সবাই : হামম।
নীড় সেই এনগেজমেন্ট রিংটা মেরিনের হাতে পরিয়ে দিলো। এরপর হাটু গেরে বসলো।
নীড় : ওয় কাকাতুয়ায় পা দাও।
মেরিন : মাথা খারাপ? পা ধরে টান দিলে?
নীড় নূপুর জোরা বের করলো।
নীড় দাঁতে দাঁত চেপে বলল : এটা পরাবো বলে।
মেরিন : কিন্তু এগুলো পেলে কোথায়?
নীড় : দেখো এখন যদি পা না বারাও তবে সত্যি সত্যি পা ধরে টান দিবো।
মেরিন পা দিলো। নীড় পরিয়ে দিলো। সবাই করতালি দিলো। নীড় উঠে দারালো ।
নীড় : খালি বাজে বকবর করা না? আমাকে গিফ্ট দাও।
মেরিন : দিবোনা। প্লিজ বলো।
নীড় : ঠ্যাকা পরেছে।
বাকীরা : নীড়-মেরিন…
মেরিন আঁচল দিয়ে ঢেকে রাখা হাতটা বের করলো। নীড়ের খুলে দেয়া আংটি-ঘড়ি ওর হাতে।
নীড় : হাহাহা। আমি ভাবতাম তুমি গুলুমুলু। আসলে তো তুমি চিকনআলি। কতো লুজ আমার ঘড়ি-আংটি।
মেরিন নীড়ের গলা চেপে ধরলো। নীড় মেরিনের চুল ধরলো।
নীড় : গলা না ছারলে চুল ধরে ঢুয়ানি মারবো।
বাকীরা : নীড়-মেরিন…
মেরিনও ঘড়ি-আংটি পরিয়ে দিলো।
নীর : বাই দ্যা ওয়ে এখন কি আমার আর হিয়ার বিয়েটা কমপ্লিট হতে পারে?
সবাই হাহা করে হাসতে লাগলো। ওদের বিয়েটা কমপ্লিট হলো।

রবিন : ‘এন’ ‘ই’ ‘ই’ ‘আর’ নীর আর হিয়া নিজের ভালোবাসা কখনো গোপন করে রেখোনা। এই যে নীরের বাবা ছোটছেলের বিয়েও তারমতেই দিবেন।।
নীড়-মেরিন : নীরের ভাই মাথায় রেখো মা-বাবা কখনো খারাপ চায়না।

.

রাতে…
মেরিন নীড়ের কাধে মাথা আর ওর হাতে হাত রেখে বসে আছে।
মেরিন : সবকিছুই স্বপ্ন মনে হচ্ছে।
নীড় : আর আমার মনেহচ্ছে খারাপ স্বপ্নটা ভেঙে গিয়েছে। জীবনের কাছে একটাই চাওয়া। এভাবেই যেনো আমি তোমার আর তুমি আমার হয়ে থাকো।
মেরিন : আর ঝগড়া?
নীড় : ওটা ক্ষীরবাদুর আর লালঝুটি কাকাতুয়ার ডিপার্টমেন্ট।
মেরিন : আর নীড়-মেরিনের ডিপার্টমেন্ট ?
নীড় : রোম্যান্স।
মেরিন : ক্ষীরবাদুর কোথাকার।
নীড় : লালঝুটি কাকাতুয়া কোথাকার।

.

।।।।।সমাপ্ত।।।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here