তোমার_হতে_চাই ২ part : 18 writer : Mohona

0
165

#তোমার_হতে_চাই ২
part : 18
writer : Mohona

.

মেরিন : রেগে আছো কেনো?
নীড় তাকিয়ে আছে মেরিনের দিকে। কোনো কথা বলছেনা।
মেরিন : দরজা বন্ধ করলে কেনো? মামা আতঙ্কে পরে গিয়েছে। দরজা খোলো।
নীড়ের রাগ গাঢ় হচ্ছে। মেরিন চোখ নামিয়ে নিলো।
মেরিন : চোখের ভাষা আমি বুঝিনা। যা বলার মুখে বলো।
নীড় : তুমি আগে থেকেই জানতে সব। তাইনা?
মেরিন চুপ।
নীড় : কবে ধরা পরেছে?
মেরিন এবারও চুপ।
নীড় : তখন কতো ছিলো?
মেরিন চুপ।
নীড় : উত্তর দিচ্ছোনা কেনো?
মেরিন : তুমি কিসের কথা বলছো বুঝতে পারছিনা ।
নীড় থাপ্পর দিতে নিলো মেরিনকে। থেমে গেলো। শক্ত করে মেরিনকে জরিয়ে ধরলো।
মেরিন : কি করছো কি? ছারো আমাকে…
নীড় কোনো কথা বলছেনা। নীড়কে এমনটা করতে দেখে রবিন দরজায় আবার জোরে জোরে ধাক্কা মারতে লাগলো।
রবিন : নীড় দরজা খোলো। খোলো বলছি।
আজকে রবিনের অর্ডারও নীড়ের কান পর্যন্ত যাচ্ছেনা ।
মেরিন : নীড় ছারো। মামা দেখছে।
নীড় : আমি তোমার কিছু হতে দিবোনা। আমার কিডনী দিয়ে দিবো।
মেরিন : শাট আপ।
নীড় উঠে এলো। গিয়ে দরজা খুলল।
রবিন : তোমার আর বাবাইর মাঝের সম্পর্কটা এখন কি সেটা মাথায় আছে নিশ্চয়ই । ওর দিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে তাকানোও এখন পাপ। মাথায় আছে সেটা?
নীড় : ওর ক্রিয়েটিনিন ৩.৯।
রবিন দুই কদম পেছনে চলে গেলো।
নীড় : আগেই ধরা পরেছে । এন্ড অফকোর্স তখন পয়েন্ট কম ছিলো। ও কাউকে জানায়নি। গিয়ে ওর গালে আরো কয়েকটা থাপ্পর মারুন।
বলেই রবিনের হাতে রিপোর্ট দিয়ে নীড় হনহন করে বেরিয়ে গেলো।

.

নীর : নীড়কে বিয়ে করলে কি কখনো সুখী হতে পারবে?
হিয়া : আমি ওকে ছারা বাঁচতে পারবোনা। আমি ওকে খুব ভালোবাসি।
নীর : আর ও ওর লালঝুটি কাকাতুয়াকে ভালোবাসে।
হিয়া : আই নো । কিন্তু এই ভালোবাসা আর কখনো কোনোদিনো পূর্নতা পাবেনা। কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
নীর : ভালোবাসা ভবিষ্যতের ওপর নির্ভর করেনা। আর ভালোবাসা এমন ১টা বিষয় যেটা মানুষের মনমস্তিষ্ক থেকে ঠিকভুল এবং পাপপূন্য সব ধ্যানধারনা বের করে দেয়। ভালোবাসা কেবল বোঝায় যে ভালোবাসি।
হিয়া : ভালোবাসা নিয়ে যে এতো লেকচার দিচ্ছো…! কাউকে ভালোবাসো নাকি?
নীর : হামম। ভালোবেসে ফেলেছি।
হিয়া : কাকে?
নীর : সেটা জেনে তু্মি কি করবে?
হিয়া : বলোনা ।
নীর : আছে কেউ একজন।
হিয়া : তোমাকে দেখে কিন্তু বোঝা যায়না যে কাউকে এতো ভালোবাসতে পারো।
নীর : আমি নিজেও জানতামনা যে আমি কাউকে এমন করে ভালোবাসতে পারবো। কিন্ত সে আমাকে বাধ্য করেছে। সে কোনো অপশন দেয়নি ভালোবাসার। তবুও কিভাবে যেনো ভালোবেসে ফেলেছি । তবে জানো… আমার ভালোবাসাও না তোমার নীড়ের মতো । কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আচ্ছা তোমার মা-বাবা কি বলছে…
হিয়া : আমার মম-ড্যাড… আমার মম বেশিরভাগ সময় তার বয়ফ্রেন্ড আর ড্যাড তার গালফ্রেন্ড নিয়ে ব্যাস্ত থাকে। আর আমাকে অর্থ দিয়ে ব্যাস্ত রাখে । না চাইতেই ওরা আমাকে সব দেয় কেবল ওদের সময় ছারা। তাইতো এই পরিবারের ওপর আমি এতোটা দুর্বল। বিশেষ করে নীলিমা আন্টি আর নিহাল আংকেলের প্রতি।
নীর : বাই দ্যা ওয়ে আমার মা-বাবাও কিন্তু বাধিয়ে রাখার মতো। বড় ছেলের বউকে মাথার তাজ বানিয়ে রাখবে।
হিয়া : তোমার বড় ভাইও আছে?
নীর : আমিই আমার মা-বাবা বড় ছেলে।
হিয়া : ওহ।
নীর মনেমনে : এই মেয়ে তো দেখি আমার ভাবনার থেকেও বেশি মাথামোটা। আসলে পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারেনি বলেই মাথার তার এমন করে কেটেছে। মেয়েটার জীবনে ভালোবাসার বড্ড প্রয়োজন। কিন্তু মেয়েটা আমাকে সুযোগ দিলোনা ওকে ভালোবাসার।
হিয়া : এই কি ভাবছো তখন থেকে এক মনে?
নীর : কিভাবে তোমার আর ওই ক্ষীরবাদুর স্যারের বিয়েটা বন্ধ করা যায়।
হিয়া : হুহ।
নীর : লং ড্রাইভে যাবে আমার সাথে?
হিয়া : তোমার সাথে কেনো যাবো? গেলে আমি নীড়ের সাথে যাবো।
নীর : সে না হয় যাবে তোমার ফিওনসে-জামাই ‘এন’ ‘আই’ ‘আর’ নীড়ের সাথে। একদিন না হয় বন্ধু নীরের সাথে গেলে। আই প্রমিস রাতের ঢাকা ঘুরলে তুমি ঢাকার প্রেমে পরে যাবে। অদ্ভুত এক সৌন্দর্য আছে রাতের ঢাকার। দেখবে?
হিয়া : দেখাবে তুমি?
নীর : হামম। তুমি বললে রাতে ঢাকা এবং দিনের ঢাকা ২টাই দেখাতে পারি। দেখবে?
হিয়া : হামম।
নীর : তবে রাতেরটা দিয়ে শুরু হোক?
হিয়া : হামম।
নীর : রেডি থেকো। তোমাকে ৯টার দিকে পিক করতে আসবো।
হিয়া : হামম।
নীর : এই তুমি পারমিশন পাবে তো?
হিয়া : আমি হিয়া। ওকে? হিয়ার কারো পারমিশনের প্রয়োজন নেই।

.

রাত ১টা…
মেরিন মনেমনে : ক্ষীরবাদুর এতোক্ষন আমার ওপর অভিমান করে থাকতে পারছে! এখনো ফিরলোনা। সারাদিনে কিছু খেয়েছে বলে তো মনে হচ্ছেনা।
তখন এই হালকা অন্ধকারে মেরিন কারো অবয়ব দেখতে পেলো ।
মেরিন : ক্ষীরবাদুর…
নীড় কিছু না বলে মেরিনের বেডে গিয়ে মেরিনকে জরিয়ে ধরলো। কাঁদতে লাগলো।
মেরিন : ক্ষীরবাদুর… কি করছো বলো তো?
নীড় : একটু চুপ করে থাকো প্লিজ… প্লিজ।
মেরিন চুপ করে রইলো । আর কোনো কথা বললনা । ১টা সময় নীড় ঘুমিয়ে পরলো।

.

৩দিনপর…
রবিন : এতো কঠোর আমি বাবাইর সাথে হতে পারবোনা ।
কনিকা : সারাদিনে তিন গ্লাস পানি… কি করে থাকবে মেয়েটা?
নীড় : তোমরা কেউ হসপিটালে আর আসবেনা। রবিন স্যার আপনিও না।
রবিন : তুমি আমাকে অর্ডার দিচ্ছো?
নীড় : হ্যা দিচ্ছি। তারজন্য আমি সরিও নই । কি ভালো কি খারাপ সেটা আমি জানিনা। আমি কেবল জানি লালঝুটি কাকাতুয়াকে সুস্থ হতে হবে । আর বাসায় নিয়ে গেলে অথবা তোমরা এসে এমন আহ্লাদে আটখানা আচরণ করলে সেটা আর পসিবল হবেনা। তাই তোমরা আর একজনও হসপিটালে পা দিবেনা।
নীলিমা : এই ছেলে পাগল হলে?
সনি : আমাদের বাবাইকে আমরা দেখতে আসবোনা?
কবির : তোমাদের দুজনকে একসাথে ছারবো? আমাদের মাথা কি খারাপ হয়ে গিয়েছে?
নিহাল : আর তাছারাও এখ…
রবিন : সবাই চলো। লেট হিম।
কনিকা : বাবু এ তুই কি বলছিস ?
রবিন : হামম। চলো সবাই। দুদিন পরপর সবাই এসে এসে ১বার করে দেখে যাবো।
সবাই চলে গেলো।
রবিন : এই মূহুর্তে বাবাইর সুস্থতা সবথেকে বেশি জরুরী। তাই তোমার কথাটা মেনে নিলাম। তোমার ওপর বিশ্বাস আছে আমার। দয়া করে ধর্মীয় বিধিনিষেধ গুলো লঙ্ঘন করোনা।
বলেই রবিন চলে গেলো।
নীড় : আজকে থেকে টানা ১৫দিন তোমাকে সেভাবে চলতে হবে যেভাবে আমি চলতে বলবো।
মেরিন : কেনো? তোমার কথা আমি মেনে চলবো কেনো? মামা কোথায়? মামার কথায় চলবো।
নীড় : স্যার আমাকে তোমার দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন।
মেরিন : অসম্ভব । তুমি থোরিইনা কিডনী? তুমি তো ক্যান্সার।
নীড় : কিডনী আর ক্যান্সারের পর বিশেষজ্ঞ লাগাও।
মেরিন : পারবোনা।
নীড় : দেখো ডক্টর জাফর বেস্ট কিডনী বিশেষজ্ঞ। তার ইন্সট্রাকশন অনুযায়ীই চলতে হবে। শোনো তেল-মশলা-লবণযুক্ত খাবার বন্ধ । সবজি খেতে হবে। সকল রকমের সীড আই মিন বীজ খাওয়া বন্ধ। আর দিনে মেপে তিন গ্লাস মানে ৭৫০মিলি পানি খেতে পারবে।
মেরিন : কিহ?
নীড় : আমার কথা এখনো শেয হয়নি। নিয়ম করে ভোর এবং বিকালে হাটতে হবে । অল্প অল্প খেতে হবে কিন্তু পেট খালি রাখা যাবেনা। ৭দিন পরপর তোমার পেটের মধ্যে ১টা ইনজেকশন দিতে হবে ।
মেরিন : কেনো পেটে কেনো?
নীড় : সেই ইনজেকশনটার জন্য পেটের পেশীই উপযোগী । আজকে সোমবার আজকে ১টা দিবো । পরের সোমবার আরেকটা। এমন করে ৭দিন পরপর দিতে হবে। ১০টার মধ্যে ঘুমাবে । ৭টার মধ্যে উঠবে।
মেরিন : ক্ষেপেছো? আমি এখনই বাসায় যাবো। তোমার এই রুলস আমি ফলো করবোনা।
নীড় : এগুলো আমার রুলস না স্টুপিড।
মেরিন : আমি ব…
নীড় : বলেছিনা চুপ থাকতে?

.

হিয়া : আপনি কেমন মানুষ শুনি? নিজের ভাগ্নির জন্য আপনি আমার ভালোবাসা কেরে নিচ্ছেন?
রবিন : আমার বাবাইর জীবন বাঁচানোর জন্য আমি জীবন দিতে-নিতে পর্যন্ত পারি। সেখানে কারো ভালোবাসা কোন ছার? কিন্তু দ্যা ফ্যাক্ট ইজ আমি তোমার ভালোবাসা কেরে নিচ্ছিনা। মোটেও না।
হিয়া : ওহ রি়য়েলি? আগুন আর পানিকে পাশাপাশি রেখে বলছেন মোটেও না? এমনিতেও নীড়ের মনে মেরিনকে নিয়ে ফিলিংস আছে। তারওপর দুজনকে একসাথে থাকতে দিলেন? লজ্জা করলোনা আপনার ?
রবিন : না। কারন ওদের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। আর বাবাইকে নীড় ছারা কেউ সামলাতে পারবেনা। তাই।
হিয়া : বাহ। কি স্বার্থপর আপনি! নিজের ভাগ্নিকে বাঁচাতে আমার ভালোবাসা কেরে নিচ্ছেন?
রবিন : আমি রবিন কথা দিচ্ছি তোমার ভালোবাসা তোমারই হবে। নীড়মেরিন আর কোনোদিনো আমাকে ধোকা দিবেনা । তাই ভয় ঝেরে ফেলো। তোমার ভালোবাসা তোমারই থাকবে।
হিয়া : প্রমিস করছেন?
রবিন : রবিন মাহমুদের কথার কোনো নরচর হয়না।
হিয়া চলে গেলো।
প্রহর : বাপি… ও বাড়ি বয়ে এসে তোমাকে এতো কথা শুনিয়ে গেলো আর তুমি কিছুই বললেনা!
রবিন : ওর রাগটা কি জায়েজ নয়? ওর কি নীড়ের ওপর অধিকার নেই ?
প্রহর চুপ হয়ে গেলো।

.

সন্ধ্যায়…
মেরিন ইনজেকশনে সাংঘাতিক ভয় পায়। তাই নীড় ২জন নার্স আর একজন মেয়ে ডক্টরকে পাঠালো মেরিনের পেটে ইনজেকশনটা দেয়ার জন্য। পেটে না দিতে হলে ওই যেতো। ৩জনই ব্যার্থ হয়ে বেরিয়ে এলো ।
ডক্টর : এই মেয়ে কি পাগল নাকি? কাছেই ঘেষতে দিচ্ছেনা। দিবো কি করে ইনজেকশন ?
নীড় : আসুন দেখি আমার সাথে।
নীড় ওদের নিয়ে ভেতরে ঢুকলো।
মেরিন : বললাম না চ…
নীড়কে দেখে থেমে গেলো।
নীড় : দেখো আমি চাইলেই নিজে তোমাকে ইনজেকশনটা দিতে পারি । কিন্তু … সেটা তোমার আর রবিন স্যারের ভালো লাগবেনা। সো লেট দেম।
মেরিন : আমার ভয় করে।
নীড় গিয়ে মেরিনের দুই হাত ধরলো। দুই নার্স মেরিনের দুই পা ধরলো।
নীড় : প্লিজ নিজেকে স্বাভাবিক রাখো । না হলে নিজেই বেশি ব্যাথা পাবে। শান্ত থাকো।
ডক্টর পেটের দিকের কাপড় টুকু তুলল। তিলটা বেরিয়ে গেলো ।নীড় অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে নিলো। আবার তাকালো। মেরিন চোখ খিচে বন্ধ করে আছে । ইনজেকশন দেয়া শেষ। ওই ৩জন চলে গিয়েছে ।
মেরিন মনেমনে : ছেলেমানুষ গুলো বলতেই লুচু।
নীড় : অমন কপালকুচকে কি ভাবছো?
মেরিন : তোমাকে বলবো কেনো? জেলখানার কয়েদি বানিয়ে রেখেছো।
নীড় গিয়ে মেরিনের পাশে বসলো । ওর হাত নিজের মুঠোয় নিলো।
নীড় : কেনো এই পাগলািমিটা করেছো বলো তো? কি ভেবেছিবো কিডনী ড্যামেজ নিয়ে মরে যাবে? আর সবাই তোমাকে মরতে দিবে? আমার কথা বাদই দিলাম ।কিন্তু রবিন স্যার , আম্মু-বাবা ওদের একবারও মাথায় আসেনি?
মেরিন চুপ করে রইলো ।
নীড় : না জানি কতোরাত ব্যাথায় ছটফট করেছো… তুমি তো একবিন্দু যন্ত্রণাও সহ্য করতে পারতে কাকাতুয়া…

.

হিয়ে নিচে বসে বেডে মাথা রেখে কাঁদছে। নীলিমা ওর জন্য খাবার নিয়ে গেলো। ওকে কাঁদতে দেখে ঘাবরে গেলো। খাবারটা পাশে রেখে হিয়ার কাধে হাত রাখলো।
নীলিমা : হিয়া…
হিয়া নীলিমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
হিয়া : আন্টি আমি নীড়কে আর তোমাদের হারাতে চলেছি…
নীলিমা : কাঁদেনা মা কাঁদেনা। কিছু হারাবেনা তুমি। ভাগ্যের বেশি কেউ কিছু করতে পারেনা। ভাগ্যদোষে নীড়-মেরিন আলাদা হয়েছে। তোমার ভাগ্যবলে তুমি নীড়কে পেতে যাচ্ছো। তাই এটা মনে করোনা যে হারিয়ে ফেলবে । বুঝতে পারছি তুমি কিসের ভয় পাচ্ছো। কিন্তু ভয় পেওনা। নীড়-মেরিন আর এক হবেনা।
হিয়া মনেমনে : কি করে ভয় না পাবো আন্টি? তোমরা সবাই জানো ওদের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি যে নতুন করে পুরোনো সত্যটা জেনে গিয়েছি। ওদের যে ডিভোর্সটা হয়ই নি। আর তাই ওদের ভালোবাসাটা আজও বেঁচে আছে। এটা যদি কেউ জেনে যায়… আমি যে নীড়কে হারিয়ে ফেলবো।
নীলিমা : হিয়া ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি খাইয়ে দিচ্ছি তোমাকে।
হিয়া : না না আন্টি তা লাগবেনা । আমি অন্যকারো হাতে খেতে কমফোর্ট ফিল করিনা।
নীলিমা ছোট্ট ১টা হাসি দিলো।
নীলিমা : হামম। খেয়ে নিবে কিন্তু।
হিয়া : হামম।
নীলিমা বেরিয়ে গেলো।না কষ্ট পায়নি নীলিমা। বরং খুশিই হয়েছে। ও ভেবেছিলো যে যতো যাই হোক হিয়া নীড়ের বউ হতে চলেছে। তাই ও স্নেহ প্রাপ্য । তাই মায়ের স্নেহে জরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলো । বুঝতে পারলো না এটা মেরিন নয়।
নিহাল : কি ব্যাপার নীলি? মুখে এতো প্রশান্তি?
নীলিমা : মামনি মামনিই। তাইনা?
নিহাল : হামম । তা ঠিক। হঠাৎ ?
নীলিমা :এমনি।
নিহাল : হিয়ার রুম থেকে এলে । আর সেখানেই বিষয়টা অনুভব করলে। তাইনা?
নীলিমা : হামম।
নিহাল : আমিও একবার সিলেটে অনুভব করেছি।

.

পরদিন…
কনিকা : তুমি একবারও ভাবলেনা মা যে তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার আর তোমার বাবার কি হবে? আমরা কাকে নিয়ে বাঁচবো ? ১টা বার এই অসহায় আম্মুবাবার কথা মাথায় আসেনি…
কবির : কেমন করে আসবে? আম্মু-বাবা কি ওকে কখনো ভালোবেসেছে নাকি যে ওদের কথা মনে পরবে।
মেরিন : সরি। আমি তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চাইনি আম্মু-বাবা। কিন্তু কি জানো… লন্ডনে কিছু একটা ঘটেছিলো। তাই আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। তাই কিছুই মাথায় ঢুকছিলোনা । তাই অমনটা হয়েছিলো। সরি।
নীড় বাহিরে থেকে সবটা শুনলো । ওর ক্যাম্পিং এর ঘটনাটার কথা মনে পরলো।
নীড় : আমার মাথায় কোনো বিধিবিধান না থাকলেও যে তোমার মাথায় ঠিকই থাকে সেটা ভুলেই গিয়েছিলাম। সরি। আমার জন্যই সব হয়েছে। সরে যাবো তোমার জীবন থেকে।হিয়া… হামম হিয়াকে বিয়ে করবো। আপন করবো। হ্যা এটা সত্যি তোমাকে ভুলতে পারবোনা।হিয়াকে ভালোবাসতে পারবোনা। বিয়ে দুবার হয়তো হতে পারে। কিন্তু ভালোবাসা একবারই হয়। তুমিই আমার ভালোবাসা। এখন আর #তোমার_হতে_চাই না। তোমার হতে চাওয়া মানে তোমায় হারিয়ে ফেলা। তুমি আবার আমার না হও কিন্তু সহীসলামত থাকো সেটাই অনেক আমার জন্য।

.

হিয়া : কি ব্যাপার তুমি আমাকে ফোন করে হসপিটালে আসতে বললে কেনো?
নীড় হিয়াকে জরিয়ে ধরলো। মেরিন কেবিন থেকে বেরিয়েছিলো একটু হাটার জন্য। এমন দৃশ্য দেখে ফিরে যেতে নিলো কিন্তু পারলোনা। হিয়া অনেক অবাক হলো। সেই সাথে খুশিও।
নীড় : আই অ্যাম সরি হিয়া। অনেক অন্যায় করে ফেলেছি তোমার সাথে তাইনা? কিন্তু একটা এখন থেকে মাথা ঢুকিয়ে নাও। তুমি তোমার নীড়ের হবে । তোমার নীড় তোমার হবে । লালঝুটি কাকাতুয়াকে সুস্থ করা এখন আমার কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ন। ওকে একবার সুস্থ করি তোমাকে আর কোনো অভিযোগ করার সুযোগ দিবোনা । কেবল তোমার হয়েই থাকবো।
হিয়া : ততুমি …সসত্যি বলছো? মন থেকে বলছো?
নীড় : হামম।
হিয়া : ককেনো যেনো বিশ্বাস করতে পারছিনা।
নীড় হিয়ার কপালে চুমু দিলো। মেরিন ছুটে কেবিনে চলে গেলো।
নীড় : এবার বিশ্বাস হলো?
হিয়া নীড়কে জরিয়ে ধরলো।
হিয়া : আই লাভ ইউ। আই রিয়েলি লাভ ইউ। মাঝেমাঝে হসপিটালে চলে আসবে। আমরা সময় কাটাতে পারবো ।
হিয়া : হামম অবশ্যই। চলো মেরিনের কাছে যাই।
নীড় : হামম।
ওরা মেরিনের কেবিনে গেলো । নীড় অনেকটা সাহস নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। মেরিন টম এন্ড জেরি দেখছে।
মেরিন : ওহ হাই হিয়া।
হিয়া : হ্যালো। কেমন লাগছে এখন?
মেরিন : ভালো। কিন্তু তোমার জামাইটা আমাকে কয়েদি বানিয়ে রেখেছে।
হিয়া : ভালো। মাঝে মাঝে কয়েদি হওয়া ভালো।
কিছুক্ষন থেকে হিয়া চলে গেলো। নীড়-মেরিন কেউ একে অপরের দিকে তাকাচ্ছেনা। এমন করেই চলতে লাগলো। দেখতে দেখতে পরের সোমবার চলে এলো। সেদিন ইনজেকশন দেওয়ার সময় মেরিন কোনো ঝামেলা করলোনা। মঙ্গলবারদিন আবার সব টেস্ট করানো হলো মেরিনের। ৩.৯ থেকে ৩.৪ এ নেমে আসায় সবার মনেই আনন্দ হলো। আর অসব সম্ভব হয়েছে নীড়ের জন্য। ও ছারা কেউ মেরিনের সাথে এমন শক্ত হতে পারতোনা।

.

মেরিন : ক্ষীরবাদুর…
নীড় : হামম।
মেরিন : ১টা গান শোনাবে?
নীড় : কি গান বলো?
মেরিন : হিয়ার যেকোনো ১টা প্রিয় গান।
নীড় : আমি যে জানিনা ওর প্রিয় গান কি?
মেরিন : ল্যাহ… তুমি তো দেখি বিশ্ব আনরোমান্টিক। এই যাও তো যাও। চোখের সামনে থেকে যাও।
নীড় : গান না শুনতে চাইলে।
মেরিন : দরকার নেই। তুমি যাও।
পরদিন মেরিন নীড়-হিয়াকে ডেটে পাঠালো। নীড়ের মনে আনন্দ নেই। হিয়াও ইচ্ছানুযায়ী খুশি হতে পারলোনা।

.

২মাসপর…
মেরিনের রিপোর্ট দেখে সবাই খুশি। ক্রিয়েটিনিন রিপোর্ট ১.১। এখন আর ২টা মাত্র ইনজেকশন দিলেই সব এক এর নিচে নেমে আসবে। আর বাকীটা মেডিসিন দিয়েই ঠিক হবে। আজকে মেরিন বাসায় ফিরবে।
মেরিন : বাই।
নীড় : আর এই অসহ্যমানুষটাকে সহ্য করতে হবেনা।
মেরিন : হামম। খুব জ্বালিয়েছো আড়াইটা মাস ধরে।
নীড় : তোমাকে জ্বালানোর মজাই আলাদা।
মেরিন : হামম। বিয়েতে দাওয়াত দিবা?
নীড় : মাথা খারাপ? বিয়েতে তোমাকে দাওয়াত দেয়া মানে আমার বিয়ে ঘেটে ঘ। ঝগড়া করতে করতেই সবশেষ।
মেরিন : তাও ঠিক। ওকে। গুড বাই।

.

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here