তোমার_হতে_চাই ২ part : 17 writer : Mohona

0
252

#তোমার_হতে_চাই ২
part : 17
writer : Mohona

.

মেরিন : ধন্যবাদ। এরপর থেকে কারো ক্ষেত্রেই পার্সোনাল অ্যাটাক না করলে খুশি হবো।
জাবির হুদা : আসলে কেইসের মধ্যে এমন করে ডুবে যাই যে আর কি…
মেরিন : ব্যাখ্যা চাইনি আপনার কাছে। বেটার লাক ফর নেক্সট টাইম।
জাবির হুদা : হামম।
হিয়া এসে জরিয়ে ধরলো নীড়কে। নীড় তাকিয়ে আছে মেরিনের দিকে।
মেরিন : মুক্তির শুভেচ্ছা তোমাকে ক্ষীরবাদুর।
নীড় হাত বারিয়ে
বলল : ফ্রেন্ডস !
মেরিন অবাক চোখে দেখছে।
নীড় : হাতটা কিন্তু ক্ষীরবাদুর তার লালঝুটি কাকাতুয়ার দিকে বারায়নি। নীড় মেরিনের দিকে বারিয়েছে। তুমিই তো সেদিন বলেছিলে যে ক্ষীরবাদুর আর লালঝুটি কাকাতুয়ার মধ্যে ঝ*গড়া আর নীড়-মেরিনের মধ্যে বন্ধুত্ব থাকবে। তাইনা। সো ফ্রেন্ডস।
রুপা : পৃথিবী কি ধ্বংসের পথে নাকি? নীড় মেরিনের দিকে বন্ধুত্বের হাত বারিয়েছে! ভাবা যায়?
নীলিমা : মামনি… মামনি মুঝছে দোস্তি কারোগির কারিনা হয়ে যাও। ‘দেখুঙ্গি সোচুঙ্গি কাল পারসো কুছ কাহুঙ্গি।’
নিলা : হামম মেরিন কাকিমা কিন্তু ঠিক বলছে।
নীড় নিজেই মেরিনের হাত ধরে বলল ‘উই আর ফ্রেন্ডস নাও।’ সবাই হাহা করে হাসতে লাগলো। নীড়কে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরলে মেরিন আস্তে করে বেরিয়ে গেলো।
তামিম : ম্যাম…
মেরিন : হামম?
তামিম : নীড় চৌধুরীর পরিবার আপনাকে খুব ভালোবাসে । তাইনা?
মেরিন : এই পরিবারটাই এমন যে সবাইকে আপন করে নেয়। আরে ভাইয়া… এতো লেইট করে কেনো এলে?
প্রহর : আজকের ফলাফল তো জানাই ছিলো আপি। এসেছি ক্ষীরবাদুর ভাইয়াকে সরি বলতে।
মেরিন ‘ক্ষীরবাদুর ভাইয়া’ ডাকটা শুনে হেসে দিলো।
মেরিন : অনেকদিন পর এমন করে ডাকলে।
প্রহর : চলোনা আপি আমার সাথে।
মেরিন : তুমি এখন ওই পরিবারের একটা অংশ। তোমার সাথে কি আমার তুলনা চলে…
প্রহর : আপি…
মেরিন : ভাইয়া…
প্রহর ভেতরে গেলো।
নীর : অভিনন্দন মিস মেরিন বন্যা খান।
মেরিন : ধন্যবাদ।
তামিম : স্যার আপনি কি করে জানলেন যে ম্যাম জিতেছেন?
নীর : এখন এটা তো ১টা ছোট বাচ্চাও বুঝবে।
মেরিন : হামম বুঝলাম। কিন্তু এখন আপনাকে দেখে আরো ১টা কিছু বুঝতে পারছি।
নীর : কি?
মেরিন : এটাই যে আপনার চোখ জোরা কাউকে খুজছে।
নীর : মানে আপনার ক্ষীরবাদুরকে খুজছিলাম…
মেরিন : অতো ঝার খাওয়ার পর আপনি ক্ষীরবাদুরকে তো অন্তত খুজবেননা। এনিওয়ে। বাই।
নীর : বাই।
মেরিন গিয়ে গাড়িতো বসলো। স্টার্ট দেয়ার সময় খেয়াল করলো যে নীর কারো দিকে আপন মনে তাকিয়ে আছে। মেরিন নীরের দৃষ্টি বরাবর তাকালো । দেখলো হিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। অবাক হলো। তবে দেরি না করে চলে গেলো। মামা-আম্মু-বাবার রা*গও তো ভাঙাতে হবে।

.

কবির : আলহামদুলিল্লাহ। নীড় মুক্তি পেয়েছে।
কনিকা : ভালোই হয়েছে । যে অ*পরাধ করে আল্লাহ তাকে ঠিক শা*স্তি দেয়।
মেরিন : তাই প্লিজ আমাকেও শা*স্তি দাও। কিন্তু এমন করে অভিমান করে থেকোনা।
কবির : মামনি… আমরা তোমাকে কি শা*স্তি দিবো? তারথেকেও বড়কথা কেনো শা*স্তি দিবো?
কনিকা : গত ৬টা বছর ধরে নিজেই শা*স্তি পাচ্ছো। কি হারিয়েছো জানো? তুমি খুব ভালোভাবেই জানো। তুমি স্ত্রী ছিলে। ১টা তো চেষ্টা করতে পারতে।
মেরিন : করেছিলাম আম্মু। বিশ্বাস করো চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি। ক্ষীরবাদুর কখনোই বুঝতে দেয়নি যে ও আমাকে ভালোবাসে। কখনোই বুঝতে দেয়নি।
কবির : যেমন করে তুমি বুঝতে দাওনি।
মেরিন চুপ।
কবির : এখন বুঝতে পারছো কেনো মনে করেছিলাম যে তোমরা একে অপরের পারফেক্ট?
মেরিন চুপ করে রইলো। কবির মেরিনের মাথায় হাত রাখলো।
কবির : সবটা দোষ তোমাদেরও না।আমরা তোমাদের আরেকটু সময় দিতে পারতাম। এই ঘটনাটা আমাদের সবার জন্যই ১টা শিক্ষা । সময়ের আগে ফল নামিয়ে ফেললে যেমন কাচা থাকে তেমন করে সময়ের আগে সম্পর্ক গরলেও সেটা অপরিপক্ব রয়ে যায়। তাই তোমাদের কতো আর দোষ দিবো ? আধুনিক যুগ যতোই আসুকনা কেনো বাবা-মা সেকেলেরই থেকে যায়। ঠিক যেমন আমরা। মন ছোট করোনা। রইলো পরে তোমার মামার কথা… তোমার মামা কতোদিন তোমার ওপর রাগ করে থাকবে বলো তো?
কনিকা : আজও চিনোনি কবির আমার ভাইকে। যতো নরম ততোটাই কঠিন।
মেরিন : জানি আম্মু। কিন্তু মামাতো… কতোদিন আর রাগ করে থাকবে আমার ওপর ? কষ্ট আমি দিয়েছি। শাস্তিটাও আমিই ভোগ করবো।

.

পরদিন…
রবিন নিজের হসপিটালে বসে আছে মাথায় হাত দিয়ে। সেদিন থেকে কোনো কাজে মন বসছেনা। সবকিছু কেমন যেনো হয়ে গিয়েছে। তখন মেরিন এসে ভেতরে ঢুকলো। রবিন কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরলো। মেরিন চুপচাপ দারিয়ে রইলো। কিছু বলার সাহস পাচ্ছেনা। ঘেমে নেয়ে অস্থির মেরিন। কথা বের হচ্ছেনা মুখ দিয়ে। চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরছে।
রবিন : স্টপ ক্রাইং। কান্না করার কোনো কারন নেই মেরিন।
মেরিন মামার দিকে তাকালো।
রবিন : ৭বছর আগে আমাদের যা ইচ্ছা করেছিলো আমরা করেছিলাম। ভুল করেছিলাম। তার ফলস্বরূপ সরি তার শিক্ষাস্বরূপ ৬বছর সরি সাড়ে ৬বছর আগে যে চাল তোমাদের চালতে চেলেছিলে চেলেছো। ঠিক করেছো । একদম ঠিক করেছো । আমার মতে প্রতিটা বাবা-মা-মামার এমন শিক্ষা পাওয়া উচিত । বিশেষ করে মামাদের। কারন প্রকৃতপক্ষে মামাদের ভাগ্নে-ভাগ্নিদের ওপর কোনো অধিকার থাকেনা। আর এর বিরুদ্ধে গিয়ে আমি কাজটা করেছি। তাই শাস্তিটা প্রাপ্য ছিলো।
মেরিন : মা…
রবিন : লেট মি কমপ্লিট। শাস্তিটা আমার প্রাপ্য ছিলো । মনথেকেই বলছি । আমার কোনো অভিযোগ নেই তোমার আর নীড়ের নামে। আসলে এটা আমাদের মতো মানুষদের জন্য ১টা শিক্ষা । জোর করে নিজেদের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেয়ার কথা কখনো কল্পনাও করবেনা।
মেরিন : আমাকে বকো মারো… কিন্তু এমন করোনা। এরথেকে আমার মরে যাওয়াও ভালো…
রবিন : পেশেন্টের কাছে যেতে হবে। বাসায় চলে যেও।
বলেই রবিন চলে গেলো । মেরিন হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। রবিনে বুকে বড্ড ব্যাথা করছে। শক্ত করে চেপে ধরলো বুকের বা পাশটা। অনেক কষ্ট পেয়েছে। সেই সাথে আছে অপরাধবোধও।

.

রাত ১টা…
কবির : প্রহর বাবা…
প্রহর : হ্যা ফুপ্পা?
কবির : তোমার আপি কি তোমাদের বাসায় আছে?
প্রহর : না ফুপ্পা।
কবির : গেলো কোথায় মেয়েটা? বাসায় নেই। তোমাদের বাসায় নেই। ফোন বন্ধ।
প্রহর : সে কি। তুমি এতোক্ষন আমাকে কল করোনি কেনো?
কবির : রবিনের মনটা ভালো নেই । তাই আমি নিজে আগে খুজলাম সব জায়গায়।
প্রহর : আমি দেখছি।
প্রহর খুজতে বেরিয়ে গেলো।
রবিন ছটফট করছে ।
সনি : এতো ছটফট যখন করছো তখন নিজের বাবাইর ওপর কেনো এখনো অভিমান করে আছো বলো তো? কথা বলো। নিজেই তো ছটফট করছো।
রবিন :ঘুমাওনি এখনো?
সনি : রবিন…
রবিন : ভালো লাগছেনা সনি আজকে। কেমন যেনো লাগছে। মনে হচ্ছে… মনে হচ্ছে যেনো…
সনি : চলো ঘুম দিবে চলো। ঘুম দিলে ভালো লাগবে। আর কালকে সকাল হতেই সব অভিমান ঝেরে ফেলে চুপচাপ বাবাইর কাছে যাবে। আর কোনো কথা আমি শুনতে চাইনা।
রবিন ঘুমানোর চেষ্টা তো করছে । কিন্তু ঘুম আসছেনা।
রবিন মনেমনে : আল্লাহ আমার আজকে এমন লাগছে কেনো? আল্লাহ… কেনো মনে হচ্ছে কিছু ঘটতে চলেছে।

.

হিয়া :এতো রাতে কেনো ফোন করেছেন আমাকে?
নীর : তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছিলাে। তাই।
হিয়া : নূন্যতম বিবেক থাকা উচিত ছিলো আরেকজনের হবু বউকে এমন সময় ফোন করার আগে।
নীর : ফোনটা না ধরলেই পারতে।
হিয়া : শাট আপ।
নীর : ওকে। শোনো কালকে আমার সাথে দেখা করতে পারবে। প্লিজ?
হিয়া : সরি…. অনেক কষ্টে প্রথমবার নীড় ওর সারাদিন আমাকে দিতে চলেছে। তাই আমি এটা মিস করতে চাইনা।
নীর : হামম । তাহলে সারারাত আমাকে দিবে?
হিয়া : শাট আপ।
নীর : এই আমি বাজে কিছু মিন করিনি কিন্তু।
হিয়া : শাট আপ।
নীড় : কালকের জন্য নিজেকে তৈরী কর। দেখ বুঝিয়ে সুজিয়ে হিয়াকে এনগেজমেন্ট টা ভাঙাতে পারি কিনা। কারো অভিশাপ আর কুরোতে চাইনা। যদি ও না ভাঙে তবে আমিই ভেঙে দিবো। লালঝুটি কাকাতুয়া আমি তোমারনা তো কারোনা। ভালোবাসি তোমাকে। কালকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হিয়ার সাথে কাটিয়ে তোমার কাছে আসবো। বহুদিন লং ড্রাইভে যাইনা। কতো কতো স্মৃতি জরিয়ে আছে তোমার সাথে…

.

পরদিন…
নীলিমা : কি বলছো কি তুমি?
নিহারিকা : হ্যা ফুপ্পি… আপিকে কালকে রাত থেকে কোথাও খুজে পাচ্ছিনা…
নীলিমা কান্নায় ভেঙে পরলো।
নিলা : কাকিমা তুমি কাঁদছো কেনো?
নীলিমা : মেরিনকে রাত থেকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
নিহাল : কি বলছো কি?
নীলিমা : হামম। নিহারিকা বলল। নিহাল নিহাল মামনি কিছু উল্টাপাল্টা করে ফেলেনি তো! বলোনা বলোনা…
নিহাল : শান্ত হও নীলি শান্ত হও। মামনি একদম ওসব কিছু করতে পারেনা। আমাকে প্রমিস করেছে। আমার মামনি আমাকে দেয়া প্রমিস ব্রেক করবেনা। তাই শান্ত হও। আমি খুজে আনবো মামনিকে…
নীড় : খুজে আনবে মানে? কোথায় ও ?
নিহাল-নীলিমা একে অপরের দিকে তাকালো।
নীড় : বলছোনা কেনো?
নিহাল : তুমি হিয়াকে নিয়ে যাচ্ছো যাও। ঠিক আছে সবকিছু।
নীড় নীলিমার কাছে গেলো ।
নীড় : মামনি… লালঝুটি কাকাতুয়া কোথায়? কি হয়েছে ওর?
নীলিমা কেঁদে উঠলো।
নীলিমা : ওকে রাত থেকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। ওকে যেদিক থেকে পারো খুজে নিয়ে আসো নীড়… খুজে নিয়ে আসো।
নীড় মায়ের কপালে চুমু দিলো।
নীড় : লালঝুটি কাকাতুয়াকে না পাওয়া পর্যন্ত আমি ক্ষীরবাদুর ফিরবোনা।
বলেই নীড় বেরিয়ে গেলো।
হিয়া মনেমনে : আমার মনে হয় মেরিন জেনে গিয়েছিলো যে নীড় আজকে আমাকে নিয়ে বের হবে। আর তাই এমন ড্রামা করছে। অসভ্য ১টা মেয়ে। ছারবোনা আমি ওকে।
ওদিকে কনিকার মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে । নিহারিকা আর সনি ওর হাতপায়ে মাসাজ করছে।
প্রহর : হলো তোমার শান্তি বাপি? হলো এবার… বলো। আরে মানছি আপি আর ক্ষীরবাদুর ভাইয়া যা করেছিলো ভুল করেছিলো। কিন্তু আমরা কি করেছিলাম?
কবির : প্রহর বাবা… থামো।
প্রহর : না ফুপ্পা। আজকে আমি চুপ থাকবোনা। আজকে তোমাকে-বাপিকে শুনতে হবে । মানছি ওদের জন্য ওরা পারফেক্ট ছিলো । কিন্তু ওদের কাছে বিয়ের কথাটা না ভেঙে ওদের আরেকটু সময় তো দিতে পারতাম আমরা। আগুন আর ঘি এমনি এমনি জ্বলে ওঠেনা। ওদেরকে পাশাপাশি রাখতে হয়। কিন্তু তোমরা… আগুন আর ঘি এর মধ্যে দূরত্ব রেখেই সবটা করতে চেয়েছো। যেখানে সবাই জানতাম যে দুজনের জেদ কতোটা। আর দুজনের জেদ মিলে গেলে কি কি ঘটতে পারে সেটার অনুমান করাও কি খুব কঠিন ছিলো? ছিলোনা। আবার যখন সত্যিটা জানলে তখন এতোটা কঠোর হওয়ার কি প্রয়োজন ছিলো? তুমি তো এটা ভালো করেই জানো যে আপি সব সহ্য করতে পারে কিন্তু তো…
তখন নীড় হাজির হলো।
নীড় : লালঝুটি কাকাতুয়া কখন থেকে গায়েব? সবশেষে ককার সাথে দেখা হয়েছিলো?
প্রহর : আমি সিওর যে বাপির সাথেই । তাইনা বাপি?
নীড় মাথা নিচু করে
বলল : সরি টু সে স্যার , বাট আপনি কি ওকে এমন কিছু বলেছিলেন যেটাতে ও…
রবিন : ও সুইসাইড করতে পারেনা।
আর কিছু না বলে গাড়ি নিয়ে রবিন বেরিয়ে গেলো। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো।

.

কয়েকঘন্টা পর…
রবিন পুলিশ কমিশনারকে ধমকাচ্ছে।
রবিন : যদি আর ১ঘন্টার মধ্যে আমি আমার ভাগ্নিকে না পাই তাহলে শহরের বুকে আগুন জ্বলবে। আর আপনার ডিমোশন করিয়ে এমন জায়গায় ট্রান্সফার করাবো সেটা আপ…
তখন রবিনের মোবাইল বেজে উঠলো। দেখলো প্রহর।
রবিন : বাবাইর কোনো খোজ পেলে…?
প্রহর : হসপিটালে চলে আসো…
রবিন : হহসপিটাল… তোমার কন্ঠ এমন লাগছে কেনো? ববাব…
প্রহর : হসপিটালে চলে আসো। আপিকে পাওয়া গিয়েছে। চলে আসো তুমি।
রবিন যতো তারাতারি সম্ভব হসপিটালে পৌছালো।

মেরিনের হাতে স্যালাইন লাগানো।
রবিন : ডক্টর ডক্টর আমার বাবাই…
ডক্টর : তিনি গতকাল রাতে আমাদের এখানে আই ডোনেট করতে আসেন। তো তাকে কিছু চেকআপ করাতে দেয়া হয়। তার শরীরে অসম্ভব জ্বর ছিলো। সে অ্যাডমিট হয় আমাদের এখানে। জ্বর এখনো কমেনি। আমরা তার অ্যাড্রেস জানার অনেক চেষ্টা করি। কিন্তু সে বলেননি। আজকে দুপুরের সে জ্ঞান হারায় । একজন ডক্টর এনাকে চিনতে পারে। কারন তার হয়ে কেইস লড়েছিলেন । তাই জানতে পারি। এখন তার বাবার অনুমতি নিয়ে আমরা কিছু টেস্ট করাবো তার। স্যালাইনটা শেষ হবার অপেক্ষা কেবল।
রবিন : আমি একটু ভেতরে যাই …
ডক্টর : আপনি নিজেই এতোবড় একজন ডক্টর আপনাকে আর কি বিধিনিষেধ দিবো। আর যতোদূর আপনাকে চিনি আপনি কারো বারন শুনবেনও না। যান।
রবিন ভেতরে ঢুকলো। গিয়ে বসলো মেরিনের পাশে। মেরিনের কপালে চুুমু দিলো।
রবিন : সরি বাবাই… মামা অনেক রুড হয়েগিয়েছিলাম। তাইনা… কি করতাম বলো … তুমি যে মামার সবথেকে বেশি প্রিয়… তাই মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো এই তিক্ত সত্যটা। আসলে অভিমানটা আমার নিজের ওপর। নিজের অহংকারের ওপর। হয়েছে কি সবসময় আমার সিদ্ধান্ত গুলো ঠিক প্রমান হয়ে এসেছে তো । তাই তোমার আর নীড়ের ব্যাপারে নেয়া সিদ্ধান্ত ভুল প্রমান হওয়াতে আমারে স্বার্থে আঘাত লেগেছে । একারনে আমি পুরোপুরি ভেঙে পরেছিলাম বাবাই। আমি নিজের সাথেই নিজে দৃষ্টি নিলাতে পারছিলাম না । আমার অন্তরআত্মা আমাকে বারবার বলছিলো আমার অহংকর তোমার আর নীড়ের জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছে। সরি বাবাই। সরি।

.

রাতে…
মেরিনের জ্ঞান ফিরলো। সবাইকে দেখতে পেলো। মেরিনের মুখে হাসি ফুটলো। রবিন মেরিনের কপালে চুমু দিলো। মেরিনের চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরলো। তখন ডক্টর হাজির হলো মেরিনকে নিয়ে যেতে ।
মেরিন : আমাকে কেনো নিয়ে যাচ্ছে? কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?
নীড় : ছাদ থেকে ফেলতে নিয়ে যাচ্ছে । স্টু*পিড।
কবির : কিছু টেস্ট করাতে মামনি।
মেরিন : টটেস্ট! নো নো নো নো নো। আমি কোনো টেস্ট করাবোনা। আমি এখনই বাসায় যাবো। ও মামা… আমি বাসায় যাবো। কোনো টেস্ট করাবোনা।
নীড় : তোমার গালে গালে থাপ্পর মারা উচিত জানো? তুমি কি ভেবেছো তোমার কথা কেউ এখানে শুনবে এখানে? লালঝুটি কাকাতুয়া কোথাকার। মাথা খারাপের গোডাউন।
মেরিন : তোমার সাথে কেউ কথা বলছে এখানে? সো চুপ থাকাে। ও মামা…
রবিন : পাগলামি করেনা বাবাই।
মেরিন : ব্লাড টেস্ট নির্ঘাত করাবে । জানো তো আমার ভয় করে সিরিঞ্জ দেখলে।
রবিন : মামা ব্লাড নিবো তোমার।
কবির : রবিন… বাদ দাও । তোমার দারা সম্ভবনা।
নীড় : স্যার কেইসটা আমার কাছে দিয়ে দিন।
মেরিন : না…

.

পরদিন…
সবার আগে নীড় রিপোর্ট হাতে নিলো। ক্রিয়েটিনিন রিপোর্টটা দেখে নীড়ের মাথা ঘুরে গেলো । ও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। ধপ করে বসে পরলো।
নীড় : এএটা হতে পারেনা। না। হতে পারেনা। একারনে ও…
নীড় রিপোর্ট হাতে নিয়ে হনহন করে মেরিনের কেবিনের দিকে গেলো।
রবিন : নীড় তুমি রিপোর্ট আনতে এতো দে…
নীড়ের কানে কথা ঢুকেইনি। কেবিনে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।
রবিন : নীড় … কি হয়েছে কি?
মেরিন : ককি হলো! রেগে আছো কেনো?

.

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here