শুধু_তোমাকেই_চাই #শারমিন_হোসেন #পর্ব০১

0
1596

কোচিং সেন্টারের ভেতরে করিডোরের সামনে গার্ডিয়ানদের জন্য রাখা চেয়ারে বসে ফোন স্ক্রল করছে সপ্তদশী এনাবুল জান্নাত খাঁন লিয়া।একটানা পনের মিনিট বসে থেকে বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ‘চ’ শব্দ উচ্চারণ করে ঘাড় ঘুরিয়ে বাম সাইডে তাকাতেই,, দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়ে যায়,,একটা ক্লাস রুম থেকে বের হওয়া সুদর্শন যুবকের দিকে।ব্ল্যাক কালারের টিশার্ট,ছাই কালারের জিন্স,জোরে পায়ে হাঁটার জন্য স্লিকি স্ট্রেইট চুল কপালের উপর দিকে ঝুঁকে আসছে। ফর্সা গায়ে ব্ল্যাক কালার টা দারুন মানিয়েছে।লিয়ার কাছে মনে হচ্ছে,,”ছেলেটা আসলেই এতো সুন্দর না আমার কাছেই ছেলেটাকে এতো হ্যান্ডসাম মনে হচ্ছে।”

ছেলেটা গটগট করে সোজা পরিচালকের রুমে ঢুকে যায়।লিয়ার দৃষ্টি পরিচালকের রুমের দিকে ছেলেটা বের হলে আরেক নজর দেখবে বলে।

তীর্থের কাকের মতো দৃষ্টি দিয়ে খুবই উৎসুক ভাবে লিয়া তাকিয়ে আছে পরিচালকের রুমের ডোর এর দিকে।কিয়ৎক্ষন পরেই ছেলেটি বেরিয়ে আসে,,এক হাতে কানে ফোন ধরে কারো সাথে কথা বলতে বলতে।লিয়া অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ছেলেটি যখন সামনে দিয়ে যাচ্ছে,, হঠাৎ করেই লিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

ছেলেটি ফোন কানে ধরে,,আড়চোখে একবার লিয়ার দিকে তাকিয়ে পরক্ষনেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয়,,আর বলতে থাকে,,

“হ্যা রোজ বল?আমার আসতে একটু দেরি হবে আজ।”

কিশোরী লিয়ার মনে নতুন অনুভূতির ঝড় বয়ে যায়।লিয়ার সতের বছর জীবনের এই প্রথম এরকম ফিল হচ্ছে কোনো একটা ছেলেকে দেখে,যা কিনা আগে কখনো হয়নি। ছেলেটি লিয়ার দিক থেকে সাথে সাথেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।এই বিষয়টা লিয়ার ভালো লাগা আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে দেয়।কারন বেশিরভাগ ছেলেরাই লিয়ার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।আর সপ্তদশী লিয়া অনেক প্রোপোজাল পেয়েছে,,সব সময় রিজেক্ট করে এসেছে।

“আপু আজকে তুমি এসেছো যে? স্কুল ব্যাগটা পিঠে ঝুলাতে ঝুলাতে রাহবার বলে।”

লিয়া নিজেকে ধাতস্থ করে সামনে তাকিয়ে ছোট ভাইকে দেখে হালকা হাসার চেষ্টা করে বলে,,

“আম্মুর কাজ ছিলো তাই আজকে আমাকে পাঠিয়েছে। আচ্ছা চল এবার বাসায় যাওয়া যাক।”

বাইরে এসে চারিদিকে দৃষ্টি বুলাতে থাকে লিয়া যদি আরেকবার ছেলেটিকে দেখা যেতো। তখনই সিঁড়ির সামনে দেখতে পায় ছেলেটি ফোন কানে ধরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।রাহবার আগে আগে যাচ্ছে আর লিয়া পেছনে।লিয়া একদৃষ্টে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে হাঁটছে,,সামনে সিঁড়ির গ্যাপ খেয়াল না করেই লিয়া পা ফেলে,,আর তখনই ঘটে দূর্ঘটনা।গ্যাপ খেয়াল না করে পা ফেলার জন্য লিয়া পড়ে যেতে নেয়।সেইসময় শক্ত করে কেউ লিয়ার একটি হাত ধরে নেয়।সেই কেউ একজনই হলো ফোন কানে ধরে রাখা ছেলেটি। একহাত দিয়ে লিয়ার হাত ধরতে গিয়ে ছেলেটির অন্য হাতে থাকা ফোনটা হাত ফোসকে পড়ে যেতে নিলে,,ছেলেটি লিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে ফোন ধরে। ঘটনার আকস্মিকতায় লিয়া ভ’য়ে দুই হাত দিয়ে ছেলেটির টিশার্ট খামচে ধরে। আচমকা লিয়ার খামচে ধরাতে ছেলেটি টাল সামলাতে না পেরে সামনের দিকে খানিকটা ঝুঁকে আসে আর তখনই কো-ইন্সিডেন্সলি দুজনের মধ্যে কিস হয়ে যায়।সপ্তদশী লিয়ার মনে শিহরণ বয়ে যায়।লিয়ার হার্টবিট বেড়ে যায়।লিয়া দ্রুত ছেলেটার টিশার্ট ছেড়ে দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যায়।ছেলেটার ফেস দেখে বোঝা যায়,,সে নিজেও বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে।ছেলেটা কোনো কথা না বলেই ধুপধাপ পা ফেলে চলে যায়।রাহবার পিছন ফিরে দেখে বলে,,

“আপু তুমি ঠিক আছো?তোমার কোথাও লাগেনি তো?”

লিয়া জড়তা নিয়ে বলে,,
“আ আ আ’ম ফাইন।কোনো প্রবলেম নেই আমি ঠিক আছি।”

তারপর লিয়া উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে কয়েকজন লিয়ার দিকে কেমনভাবে যেনো তাকিয়ে আছে।লিয়ার নিজের কাছে লজ্জা অনুভব হচ্ছে।আর মনে মনে বলে,,

“একদম বিনা টিকিটে সিনেমার রোমান্টিক সিনটা তো সবাইকে দেখিয়ে দিলাম। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে আরো বলে,,আমার একটু কেয়ারফুল হয়ে চলা উচিত ছিলো।ছেলেটা কি ভাবে ব্যাপারটা নিবে?আমাকেই বা কি ভাববে?”

“এই আপু তাড়াতাড়ি চলো।আমার প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে তাই তাড়াতাড়ি বাসায় চলো।”

এনাবুল জান্নাত খাঁন লিয়া বাড়ি জামালপুর।বাবা মেজর (মেডিকেল কোর),,এক ভাইবোন। বর্তমানে ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্টে থাকে। ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজে একাদশ শ্রেণীতে পড়ে। গ্রীষ্মকালীন এক মাসের ছুটিতে গতকাল বাসায় আসছে।সকালে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুম পাড়ছিলো লিয়া,সেই সময় লিয়ার মা রাজিয়া সুলতানা,,

“লিয়া ঘুম থেকে আজ একটু তাড়াতাড়ি ওঠ।আমি খুব ব্যাস্ত আছি,,তাই তুই একটু গিয়ে রাহবার কে কোচিং থেকে নিয়ে আয় কেমন।”

লিয়া গা থেকে কাঁথাটা নামিয়ে,,দুচোখের পাতা টেনে তুলে ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে,,

“ওহ্! আম্মু। অনেক দিন পর বাসায় এসে একটু শান্তি করে বেলা করে ঘুমাতে চেয়ে ছিলাম।”

“কাল থেকে ঘুম পাড়িস কেমন।আজ একটু রাহবার কে নিয়ে আয়,,আমার কাজ না থাকলে আমিই যেতাম।তোর বাবা গাড়ি নিয়ে গেছে।ড্রাইভার থাকলে কোনো অসুবিধা হতো না।”

লিয়া বিছানা থেকে নেমে এলোমেলো পা ফেলে সোজা ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে।হোয়াইট এর উপর ব্লু কালারের ছোট ছোট ফুলের একটা থ্রি পিচ পড়ে নেয়।কোমড় সমান চুলগুলো ক্লিপ দিয়ে আটকিয়ে নেয়।বাসা থেকে যেতে থাকে আর বিরবির করে বলে,,

” ওহ্ গড।বাসায় আসার তিন দিন আগে থেকে প্ল্যান করে আসছি যে,বাসায় গিয়ে প্রথম দিন অনন্ত দশটার আগে ঘুম থেকে উঠবো না।সেখানে কিনা সাতটা বাজতেই উঠতে হলো।ওখানে পড়াশুনা নিয়ে এতো প্যারায় থাকতে হয় যে,বলে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে।”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও মায়ের কথা রাখতে লিয়া রাহবার কে আনতে যায়।সত্যি ক্যাডেট এ পিটি প্যারেড, খেলাধুলা, পড়ালেখা,রুটিন মাফিক চলা আর অসংখ্য সীমাবদ্ধতার মধ্যে মানিয়ে থাকতে হয়।লিয়া যখন ছুটিতে বাসায় আসে তখন প্রাণ খুলে নিজের মতো থাকতে চায়।বাসায় থাকার সময়গুলো পরিবারের সবার সাথে মিলে আনন্দ করে কাটাতে ভালোবাসে লিয়া।

রাহবার ক্লাস সিক্সে পড়ে।আর কোচিং করছে ক্যাডেট এডমিশন দেওয়ার জন্য।লিয়ার বাবা মায়ের ইচ্ছা রাহবার কে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে পড়ানো।লিয়া রিকশা থেকে নেমে সোজা কোচিং সেন্টারের ভিতরে গিয়ে চেয়ারে বসে রাহবারের জন্য ওয়েট করছিলো।লিয়া নিজেও এই কোচিং এ পড়তো ক্যাডেটে এডমিশন দেওয়ার কোর্স কমপ্লিট করার জন্য।তাই এখানকার সব কিছুই ওর চেনা জানা আছে।

বাসায় এসে লিয়া ডায়নিং বসে খাবার খাচ্ছে,,আর সেই ছেলেটির কথা ভাবছে।”কিভাবে ছেলেটির ঠিকানা পাওয়া যাবে?”

ভার্সিটির মাঠের মধ্যে দুইটা মেয়ে আর একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।একটা মেয়ের পড়নে জিন্স টপ। বাঙ্গালি নারী শাড়িতেই সুন্দর মানায়,,এই কথাটি যেনো এই মেয়ের ক্ষেত্রে বিপরীত।কারন এই মেয়েটিকে এই পোশাকেই যেনো বেশি সুন্দর লাগছে,,মেয়েটির নাম রোজ।পাশের মেয়েটি শুভ্র রঙের থ্রি পিচ পড়ে আছে।মেয়েটির ফেস দেখলে নিঃসন্দেহে যে কেউ মেয়েটিকে ভদ্র, নম্র প্লাস সুন্দরী বলতে বাধ্য হবে।মেয়েটিকে দেখলেই মনে হয় শুভ্রতার প্রতীক।কথা বার্তায় সর্বদা মার্জিত।মেয়েটির নাম তাসনিম।ছেলেটির নাম রোহান।ওরা সবাই বাকৃবি র স্টুডেন্ট (ডিভিএম)ফাইনাল ইয়ারের।

জারিফ ত্রস্ত পায়ে হেঁটে সেখানে যেতেই ,,তাসনিম জারিফকে উদ্দেশ্য করে বলে,,

“আয়মান জারিফ অর জারিফ আয়মান তা আপনার আসতে এতো লেইট হলো যে?হুয়াই কাম টু লেট?”

জারিফ কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলে,,”আজকে কোচিং এ আমার ক্লাস ছিলো। ক্লাস নিয়ে বাসায় গিয়ে নাস্তা করে আসতে দেরি হয়েছে।”

“তাসনিম ছোট করে বলে, “ওহহহ।”

রোজ আশে পাশে তাকিয়ে বলে,,
“তা তোর না হয় ক্লাস নেওয়ার জন্য দেরি হয়েছে। কিন্তু রুপক কই?এখনো আসছে না যে?ওর কাছে আমার এসাইনমেন্ট এর খাতা আছে।আজকে তো জমা দিতে হবে। লাস্ট ডেট আজকে।সময় মতো এসাইনমেন্ট টা
জমা দিতে না পারলে আমি সোজা পটল তুলবো।”

রোহান বলে,,
“তা পটল তুলিস আর যাই করিস,,আগে তুই আর রুপক বিয়েটা সেরে নে।তাহলে তোদের বিয়ে প্লাস খয়রাত দুইটাই খেতে পারবো।তোরা সবাই কি বলিস?”

রোহান এর কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসতে থাকে।জারিফ বলে,,” একদম ঠিক বলেছিস দোস্ত।”

ঝাঁঝালো গলায় রোজ বলতে থাকে,,”তোদের কি মনে হয় শুনি?তোদের কে আমার বিয়েতে ইনভাইট করবো?নেভার।তোরা একেক টা হা’রামি কোথায় আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে কিছু বলবে,তা না বলে আরো আমার মৃ”ত্যু কামনা করছে।তোরা একটাও এলাউ নয় আমার বিয়েতে বুঝলি, হুহ।”

তাসনিম ওর ব্যাগ থেকে সেন্টার ফ্রুট বের করে রোজ এর সামনে ধরে বলে,,”এটা চিবুতে থাক আর মেজাজটা একটু কন্ট্রোল করে,, তোর পেয়ারের রুপকের জন্য ওয়েট কর।”

তাসনিম বাকিদের কেও সেন্টার ফ্রুট দিয়ে নিজে ফান ক্যান্ডি বের করে ছিঁড়তে যাবে তখন,,”রোজ বলে,, এই আমি সেন্টার ফ্রুট খাবো না।আমাকে ফান ক্যান্ডি দে আমি ওটাই খাবো।”

ব্যাগ খুঁজে দেখে তাসনিম বলে,”অনলি ওয়ান পিস ফান ক্যান্ডি ই ছিলো দেখছি।”

“ঐ ওয়ান পিসই আমাকে দে।”

তাসনিম ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,”তুই তো দেখছি আমার কাজিনের মতো হয়ে গেলি।তখন আসার সময় আমার কাছে একটা ফুল ছিলো সেটা নিলি।আবার এখন একটাই ফান আছে সেটাই তোর চাই।আমার যে জিনিস টা প্রিয়,,সেটা আমার কাজিনেরও প্রিয় হয়ে যায়।আর ওর সেটা চাইই চাই।আর আমার ছোট চাচ্চু আমাকে সেই সময় বলবে,, তাসনিম আম্মু তুমি তো বড়,,তাই তুমি ছোট বোনকে দিয়ে দাও।”

“তা তোর কাজিনকে একবার মিট করিয়ে দিস তো।তোর থেকে ওর গল্প শুনতে শুনতে দেখতে ইচ্ছে করছে।”

“ওকে।তারপর তাসনিম ফোন বের করে একটা ছবি বের করে রোজের সামনে ধরে বলে,,এখন আপাতত ছবিতে দেখেনে।”

রোজ ফোনটা নিয়ে বলে,,”ওয়াও সত্যি তো বেশ দারুন দেখতে।অনেকটা তোর মতোই তো দেখতে।”

তাসনিম মৃদু হেসে বলে,,”উহুম! ও আমার থেকেও বেশি সুন্দর।আমার থেকে ওর গায়ের রং টা বেশি উজ্জ্বল।আর ও আর আমি কন্ট্রোভার্ট।”

রোজ কপাল কুঁচকে বলে,, “কি রকম?”

“আমি একটু চুপচাপ।আর ও একটু চঞ্চল। আমি আমার চাওয়া পাওয়া সব কিছু মুখ ফুটে বলতে পারি না।অথচ ওর যেটা চাই যেভাবে হোক না কেনো সেটা ওর নিজের করে নেয়।আর সহজেই ও ওর কথাগুলো শেয়ার করতে পারে।যেমন ওর আম্মুর সাথে ও অনেক ফ্রী।আর আমি ছোট থেকেই নিজের সুখ দুঃখ,ভালোলাগা সব কিছুই নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখি।কারো কাছে শেয়ার করতে পারিনা।

রোজ ফোনটা নিয়ে জারিফের আর রোহানের দিকে ধরে বলে,”নে দেখ তাসনিম এর কাজিন কে।”

“জারিফ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,,” ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছে।তোরা যাবি,,নাকি বেক্কেল রুপকের জন্য দাঁড়িয়ে ওয়েট করবি।ও কখনো সময় মতো আসে নাকি?ঠিক আসবে একটা ক্লাস মিস দিয়ে।আমি গেলাম বলে জারিফ চলে যায়।বাকি সবাইও ক্লাসরুমের দিকে চলে যায়।”

পরপর দুইটা ক্লাস করে ওরা বাইরে আসতে থাকে তখন রোজ বলে খুব গরম পড়ছে,,”ক্যান্টিনে চল লাচ্ছি খাবো।”

জারিফ ফোন স্ক্রল করছে আর মাঝে মাঝে লাচ্ছি খাচ্ছে। বাকিরা এটা সেটা কথা বলেই যাচ্ছে আর খাচ্ছে। এরমধ্যে তাসনিম এর ফোন বেজে ওঠে। তাসনিম ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”এই তোরা একটু সাইলেন্ট থাক প্লিজ।আমার আব্বু ফোন দিয়েছে কথা বলে নেই।”

“সালাম দিয়ে বলে,,হ্যা আব্বু বলো?”
“কেমন আছো মামনি?”
“আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি। আম্মু, বাসার সবাই কেমন আছে?
“সবাই ভালো আছে।যেজন্য এই সময় তোমাকে ফোন দেওয়া।তোমার মেজো চাচ্চুরা কয়েকদিন পরই বাড়িতে আসবে।তাই বলছি তোমার কোনো সমস্যা না থাকলে তুমিও সেই সময় বাড়িতে এসো।”
“আচ্ছা আব্বু আমি আসবো।”
“আচ্ছা।আর কোনো সমস্যা হলেই আমাকে বা তোমার ছোট চাচ্চু বা মেজো চাচ্চুকে ফোন করে জানিয়ো।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”

ফোন রেখে বুক ভরে শ্বাস নিতে থাকে তাসনিম।সবাই ওর দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রয়।

রুপক বলে,,”তুই তো তোর পরিবার কে খুব ভ’য় পাস মনে হয়।তোর কথা শুনে তো এরকমটাই মনে হয়।”

“আমার বাসার সবাই খুব স্ট্রিক।বিশেষ করে আমার আব্বু,মেজো চাচ্চু আর সাথে আমার দাদিমনি তো আছেনই।আমার যে ছেলে ফ্রেন্ড আছে এটা আমার দাদিমনি জানলে,,পুরো বাড়ি মাথাই করে নিবে,,আর আমাকে হল এ থাকতেও নিশ্চয় বাধা দিয়ে বসবে।”

জারিফ স্ট্রতে ঠোঁট ছোঁয়ায়ে ভ্রু কুঁচকে একবার তাসনিম এর দিকে তাকায়।

“ছেলে ফ্রেন্ড আছে শুনলে এরকম করবে আর যদি কখনো শুনে তোর একটা প্রেমিক আছে তখন কি করবে তোর দাদি,,রোজ বলে।”

“সোজা বিয়ে দিয়ে দিবে আমার আব্বু।কোনো সরকারি চাকরি জীবি দেখে,ফ্যামেলি থেকে পছন্দ করে।কারন আমি ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পরই আমার পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলো,,কোনো রকমে ছোটো চাচ্চু কে বুঝিয়ে ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করেছি। প্রমিজ করতে হয়েছে। পড়াশুনা কমপ্লিট করে পরিবারের পছন্দ মত ছেলে কেই বিয়ে করবো।আমার পরিবারে মেয়ে নিজে পছন্দ করে বিয়ে করতে পারবে না,,এরজন্য অবশ্য একটা মর্মান্তিক ঘটনা আছে।”

“তোর দ্বারাই এটা পসিবেল আমি হলে এই কড়া শাসনে থাকতে পারতাম না। আচ্ছা ধর তোর যদি কখনো কাউকে ভালো লেগে যায়,,আই মিন তুই যদি তাকে ভালোবেসে ফেলিস তখন কি করবি তুই?”

রোজের কথা শুনে তাসনিম জারিফের দিকে এক নজর তাকিয়ে,,” দীর্ঘ শ্বাস টেনে বলে,,এরকম যদি হয়েই থাকে।সত্যি যদি আমি কারো উপর ক্রাশড হয়ে থাকি।আই বিলিভ সে নিজেই আমার চোখের ভাষা পড়ে নিবে।আর সরাসরি সে আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিবে।আর আমি এটাও বিশ্বাস করি তার যোগ্যতা আর কোয়ালিটি দেখে আমার ফ্যামেলি রাজি হতে বাধ্য হবে। শুধু এসবের জন্য একটু সময় দরকার।”

রোজ কপালে এক হাত দিয়ে বলতে থাকে,,”হ্যা তুই সেই আশায় বসে থাক। আর তোর সেই ক্রাশ অন্য জনের প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাওয়া না শুরু করে দেয়।ইহজন্মে আর তোর চোখের ভাষা আর তার পড়া হলে হয়।তাই আমি বলছি,,সময় থাকতে থাকতে মনের কথাটা বলে দে।”

“হ্যা,রোজ যেরকম রুপকের গলায় ছু>রি ধরে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছে।তুইও পি”স্তল ঠেকিয়ে তোর ক্রাশ কে প্রেমে বাধ্য করা যায় কিভাবে সেটা রোজের থেকে শিখেনে কেমন।জারিফ বলে।”

রোজ বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে,,এই ভিতু রুপককে যদি সেদিন ফোর্স না করতাম।তাহলে আমি আজ অন্যর বউ হয়ে যেতাম।সেদিন আমার বলার কারনেই রুপক আমার ফ্যামেলির কাছে ওর বাবা মাকে পাঠানোর সাহস টুকু পেয়েছিলো,,হুহ।”

পড়ন্ত রোদের সোনালী বিকেলে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে লিয়া আর ওর বান্ধবী ফিহা।ফিহা শুকনো ঢোক গিলে নিয়ে এক আঙ্গুল দিয়ে চশমাটা ঠিক করে নিয়ে বলতে থাকে,,”কি এমন ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলার জন্য এতো জরুরী তলব করে ঢেকে আনলি যে?”

লিয়া বাইরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে সকালে কোচিং এ দেখা ছেলেটার কথা বলতে থাকে।আর ফিহা ছোট ছোট চোখ করে কপাল কুঁচকে মনযোগ দিয়ে শ্রবণ করতে থাকে।

“জানিস ফিহা ছেলেটা কে প্রথম দেখেই আমার মনে ঘন্টা বাজতে শুরু করে।এই গ্রীষ্মেও আমার মনে বসন্তের রঙ লাগতে থাকে।”

ফিহা চঞ্চল কন্ঠে বলে,,”তাইলে বেস্টু সামথিং সামথিং??”

লিয়া ফিহার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বলে,,”হুমম।আ’ম ক্রাশড অন হিম,ফিহা।আ’ম রিয়েলি ক্রাশড অন হিম।”

“কোথা কার কে চেনা নাই জানা নাই।প্রথম দর্শনেই ক্রাশ খেয়ে বসে আছিস।”

“কোনো কিছু জানার দরকার নেই,, আমি শুধু ছেলেটির সামনে বলতে চাই,,আই ওয়ান্ট অনলি ইউ।লিয়া সুর করে আরো বলতে থাকে,, তোমাকেই চাই শুধু তোমাকেই চাই,আর কিছু জীবনে পাই বা না পাই।শুধু তোমাকেই চাই।এ্যট এনি কস্ট।”

ফিহা দাঁত দিয়ে নখ কামড়ে ধরে বলে,,”তা তোর ক্রাশ কে এখন কোথায় খুঁজে পাবি শুনি?”

“যেখান থেকে হারিয়েছি সেখান থেকেই।”

“মানে?”

লিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”রাহবারের কোচিং সেন্টারে দেখেছিলাম ওখানে আবার গিয়ে খোঁজ নিতে হবে।ছেলেটা একটা ক্লাসরুম থেকে বের হয়েছিলো মে বি কোচিং এর টিচার হবে।”

“বাই এনি চান্স,,যদি না পাস,,তখন??যদি তোর গেস ভুল হয়?”

লিয়া কঠোরভাবে বলে,,”এই ফিহা অলক্ষুনে কথা বাদ দে বোন। নেগেটিভ চিন্তা বাদ দিয়ে কিছু পজেটিভ চিন্তা কর।আর আমাকে কিছু পজেটিভ কথা বলে উৎসাহ দে।”

ফিহা বিরবির করে বলে,”,ঠিক আমি বুঝতে পারছি লিয়া টা ক্রাশ নামক বাঁশ খাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।ফিহা গলা ঝেড়ে বলতে থাকে,,এই টপিক বাদ দিয়ে এখন একটু পড়াশুনার কথা বল।”

“পড়াশুনাতেও একটা প্রবলেম হয়েছে রে।”
“কি প্রবলেম?”
“আমি বাসায় এসে যে মিসের কাছে প্রাইভেট পড়তাম।সেই মিসের নাকি বিয়ে আর কয়দিন পরেই।তাই মিস আমাকে পড়াতে আসতে পারবে না।এখন নতুন টিউটর আব্বু খুঁজছে।টেনশনে আছি নিউ টিউটর খুঁজে পেতে না পেতেই আমার ছুটি না শেষ হয়ে যায়।”

আজ আকাশে তারার মেলা বসেনি। সমগ্র আকাশ জুড়ে থালার মতো চাঁদ টা তার সমস্ত আলো উজাড় করে দিয়েছে। জোসনা রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে একা একা চন্দ্র বিলাস করছে ছাব্বিশ বছরের সুদর্শন যুবক পেশায় একজন ডক্টর।হাতে থাকা ফোনের দিকে দৃষ্টি একটা শুভ্র রঙের ড্রেস পরিহিত মেয়ের ছবিটা জুম করে দেখছে।পরক্ষনেই চাঁদের দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার ছবির দিকে দৃষ্টি দিয়ে ঠোঁট আওড়িয়ে বলে,,
“মুন ইস প্রিটি বাট মাই ড্রিম গার্ল ইস দ্যা প্রিটিয়েস্ট।আমার শুভ্র পরি তোমাকে এই শুভ্র পোশাকে একদম রুপকথার রাজকন্যা মনে হচ্ছে।খুব শীঘ্রই তোমার সাথে দেখা হচ্ছে। তুমি রেডি তো আমার বেটার হাফ হওয়ার জন্য।আর সবার মতো তোমাকে আমি প্রেমের প্রোপোজাল দেবো না সরাসরি তোমাকে আমার অর্ধাঙ্গিনী বানানোর প্রপোজাল দেব।আই হোপ ইউ এ্যকসেপট মাই প্রোপোজাল।”

পরের দিন,,,,,
ভোরে লিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়।আড়মড়া ভেঙ্গে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। কিছুক্ষণ বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে,,”কিভাবে ছেলেটির খোঁজ পাওয়া যায়??গালে এক হাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে ভেবে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,,ইয়েস!গুড আইডিয়া।যাই আম্মু কে ম্যানেজ করে রাহবার কে আজ নিজে থেকে আনতে যাই।আর ছেলেটার ডিটেইলস জেনে আসি।”

ধীরে ধীরে পা ফেলে কিচেনে যায় লিয়া। কিচেনে গিয়ে দেখে রাজিয়া সুলতানা সবজি কাটতে ব্যাস্ত।লিয়া ওড়নার কোণা হাতের এক আঙ্গুলে পেচাতে পেচাতে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলে,,
“আম্মু তুমি তো ব্যাস্ত দেখছি।তাই বলছি আমি কী রাহবার কে নিয়ে আসবো?”

রাজিয়া সুলতানা কপাল কুঁচকে লিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার সবজি কাটায় মনোযোগ দিয়ে বলেন,, “রাহবার কে ড্রাইভার নামিয়ে দিয়ে আসছে।আর নিয়েও আসবে ।তাই কাউকেই যেতে হবে না আজ।”

লিয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,” বলছিলাম কি আম্মু আমি তো ক্যাডেটে সারাক্ষণ বন্দী হয়ে থাকি।কোথাও ঘুরাঘুরি হয়না।তাই রাহবার কে নিয়ে আসি আর সকাল বেলার ফ্রেশ হাওয়া খেয়ে আসি, প্লাস রিকশা ভ্রমণও হবে।

“তোর বড় আব্বুর সাথে তোর দাদিমনি আসবে আজ।সকাল সকালেই আসবে।তোর দাদিমনির নাকি হাঁটুর ব্যাথা টা বেড়েছে তাই ডক্টর দেখানোর জন্য আসছে।আর তুই তো জানিসই তোর দাদিমনি কিরকম।এসে তোকে না পেলে অযথা পেচাল শুরু করে দিবে।”

“ওহহহ! আম্মু তুমি টেনশন নিয়ো না।আমি দ্রুতই চলে আসবো।আর দাদিমনি আসলেও আমি ম্যানেজ করে নিবো।”

লিয়া মুখে মাস্ক পড়ে নেয় আর ওড়নাটা মাথায় দিয়ে নেয়।কালকে যারা ঐ এক্সিডেন্টের দৃশ্য দেখেছিলো তারা যেনো লিয়াকে দেখে চিনতে না পারে।তারা লিয়াকে দেখলে চিড়িয়াখানা বা সার্কাস এর প্রাণীর ন্যায় চোখ করে থাকতে পারে বলে লিয়া মনে করে। আবার কেউ কেউ তো এমন আছে যে,, ছোট্ট একটা ইস্যু কে কেন্দ্র করে বাজে ভাবে ভাইরালও করতে পারে।সেইজন্য লিয়া কোনো রিস্ক নিতে চায়না।

লিয়া কোচিং সেন্টারে গিয়ে চারিদিকে দৃষ্টি বুলাতে থাকে।কোথায় পাওয়া যাবে ছেলেটিকে?আর কারো কাছে কি বলে ছেলেটির কথা জিগ্গেস করা যায় এই নিয়ে কনফিউজড লিয়া।প্রায় টেন মিনিটস ধরে উঁকি ঝুঁকি দিয়েও ছেলেটিকে না দেখতে পেয়ে হতাশ হয়ে চেয়ারে বসে পড়ে,,পরক্ষনেই সামনে তাকিয়ে দৃষ্টি আটকিয়ে যায়…

[চলবে…ইন শা আল্লাহ]

#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব০১

(গল্পটিতে অনেক গুলো চরিত্র থাকবে। ভুলত্রুটি মার্জনীয়। ভুল গুলো ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ রইল। পরবর্তীতে শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবো,ইন শা আল্লাহ।আর ভালো লাগলে রেসপন্স করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here