#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব০৩
ঘড়ির কাঁটায় সন্ধ্যা সাতটা বাজে।ড্রয়িং রুমের সোফাতে একপাশে বসে লিয়া ফোন স্ক্রল করছে,অন্যপাশে রাহবার বসে ভিডিও গেইম খেলছে। মাগরিবের নামাজ শেষে তসবিহ পাঠ করে ধীর পায়ে এসে সোফাতে বসেন জান্নাত বেগম।আড়চোখে একবার লিয়া আর রাহবারের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে মনে মনে বলে,,এখনকার ছেলে মেয়েরা যে কি একখান যন্ত্র পেয়েছে, সারাক্ষন সেই যন্ত্র নিয়ে পড়ে থাকে।তারপর হালকা কেশে বলতে থাকে,,
“তোমরা তো নামাজ কালামের কথা ভুলেই গিয়েছো। সারাক্ষন এই সব যন্ত্র নিয়ে থাকলে আল্লাহর রহমত বরকত পাবে কিভাবে?”
জান্নাত বেগমের কথা শুনে লিয়া নড়েচড়ে বসে।এরমধ্যে রাজিয়া সুলতানা হাতে নাস্তা নিয়ে আসেন। নুডুলস আর পকোড়া সামনের টেবিলের উপর রেখে,এক কাপ চা জান্নাত বেগমের দিকে বাড়িয়ে দেন।
লিয়া নুডুলস খেতে থাকে।এরমধ্যে রাহবার নুডুলস খেয়ে পকোড়া নিতে গেলে লিয়া রাহবার কে উদ্দেশ্য করে বলে,,
“এই তুই যেভাবে খাচ্ছিস এইভাবে খেলে তো কয়দিনের মধ্যেই তোর ওয়েট দ্বিগুণ হয়ে যাবে।আর ওয়েট বাড়লে রিটেন এ টিকলেও সোজা মেডিকেল থেকে আউট হবি,ভাইবা অব্দি যাওয়াই হবে না।”
রাহবার কপাল কুঁচকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলে,,”এই আপু তুই থামবি।আ’ম ভেরি কনসাস এবাউট ফুড।”
লিয়া ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে,,”হ্যা তার নমুনা তো দেখতেই পাচ্ছি।”
হঠাৎ রাহবারের বেষম উঠে।রাজিয়া সুলতানা পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় রাহবারের সামনে। জান্নাত বেগম হাতে থাকা চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে কর্কশ গলায় বলে,,”লিয়া তুমি বড় হয়েছো কিন্তু তোমার বুদ্ধি হয়নি দেখছি।আদব কায়দা কমই তোমার মধ্যে আছে। খাওয়ার সময় এইভাবে কি কথা বলতে হয়।খাওয়ার সময় এতো কথা বললে তো বেষম লাগবেই।তোমার বলার জন্যই ছেলেটার বেষম উঠলো।”
“দাদিমনি আমি বুঝলাম না এখানে আদব কায়দা র কি ভুলটা হলো?আমি তো ওর ভালই চাই।ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোক সেটাই চাই।এটা তো আমাদের সবারই গর্বের বিষয়।”
“এই তো বললাম না তোমার বুদ্ধি শুদ্ধি কম।এই কথাটা তুমি রাহবার কে অন্য সময়ও তো বলতে পারতে।খাওয়ার সময় না বলে।”
এরমধ্যে রাজিয়া সুলতানা লিয়া আর রাহবার কে উদ্দেশ্য করে বলে,,” এই তোমরা দুজনে গিয়ে পড়তে বসো।”
ভোর হয়েছে তিন ঘন্টা হবে,,ঘড়ির কাঁটা আটটার ঘর ছুঁই ছুঁই।লিয়া ঘুমোচ্ছে।এমন সময় হুড়মুড় করে অরিন লিয়ার রুমে আসে।আর পিছনে ফিহা (অরিন আর ফিহা এই দুইজন লিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড)
“এই লিয়া লিয়া”
অরিনের ডাক শুনে পিটপিট করে নেত্র পল্লব দ্বয় মেলে এই সময় অরিন আর ফিহা কে দেখে লিয়া অবাক হয়।দুই হাতে চোখ ঢলে নিয়ে আবার দেখে শিওর হয় যে সত্যি এই সকাল সকাল ওরা এসেছে।লিয়া মৃদু কন্ঠে বলে,,
“এই সকাল সকাল তোরা আমি তো প্রথমে ভ’য় পেয়ে গিয়েছিলাম যে,অরিনের মতো দেখতে পেত্নী টা কি আমার ঘাড় মটকাতে আসছে নাকি?”
লিয়ার কথা শুনে ফিহা ফিক করে হেসে ফেলে।অরিন দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”রাখ তো তোর পেত্নী টেতনী। সারারাত আমার ঘুম হয়নি ঠিকমতো।বারবার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে আর শুধু ফিহার বলা কথাগুলো মনে পড়েছে।”
লিয়া ভ্রু কুঁচকে ছোট ছোট চোখ করে বলে,,”কি এমন মনে উঠে আপনার ঘুম হয়নি ঠিকমতো।”
ফিহা এক আঙ্গুল দিয়ে চোখে থাকা চশমাটা ঠিক করে নিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে বলে,,”এই অরিনের জন্য আমাকে সাত সকালে এখানে আসতে হলো।ভোর থেকেই নাহলে বিশবার কল দিয়েছে অবশেষে বাধ্য হয়ে আসতে হয়েছে।”
অরিন ফিহাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,,”এই লিয়া আমি খুব এক্সাইটেড জিজুকে দেখার জন্য।আপাতত ছবিতে দেখা,পরে নাহয় মিট করাস কেমন।”
লিয়া একহাত মাথায় দিয়ে বলে,”,এই তুই জিজু টিজু পেলি কোথায় শুনি?”
“কেনো??ফিহা বললো তুই নাকি ক্রাশ খাইছিস।সো তোর ক্রাশ আমাদের জিজু হবে না তো বফ হবে তুই বল? আমার আবার ইটিকেট আছে।আর যাইহোক বান্ধবীর ক্রাশের উপর চোখ দেওয়া যাবে না।তাই আগে ভাবেই জিজু বলে মন টাকে ঠিক করে নিচ্ছি।যাতে করে দেখলে পরে নিজেই ক্রাশ খেয়ে না বসি।আর আমার তো আবার ক্রাশ খাওয়ার রেকর্ড আছে।”
লিয়া রাগান্বিত দৃষ্টিতে ফিহার দিকে তাকাতেই ফিহা শুকনো ঢোক গিলে নেয়।লিয়া ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,”এই ফিহা তুই অরিন কে এতো তাড়াতাড়ি বলে দিয়েছিস।এই পেট পাতলার কাছে বলেছিস তুই?এখন এ একাই যথেষ্ট পুরা ময়মনসিংহ বিভাগে এনাউন্স করতে যে,, এনামুল জান্নাত খাঁন লিয়া ক্রাশড।আমার ক্রাশের কাছে আমার মনের কথাটা বলার আগেই আমার বাপ চাচার কাছে পৌঁছে যাবে আমি নিশ্চিত।”
“আরে দোস্ত টেনশন নিস না আমি এখন অনেক চেঞ্জ হয়েছি আমার পেট থেকে সহজে কোনো কথা এখন আর বের হয়না। আচ্ছা এখন এসব বাদ দিয়ে তুই আমাকে জিজুর ছবি দেখা।”
“কি জিজু জিজু করছিস। এখনো প্রেমিকাই হতে পারলাম না আর সোজা জিজু বলে আমাকে ওর বউ বানিয়ে দিলি।আর কোনো ছবি টবি নেই আমার কাছে।”
অরিন ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,,”ছবি দেখার জন্য ভোর হতে না হতেই চলে আসলাম। আচ্ছা ব্যাপার না। শুনলাম তুই তো তোর ক্রাশ কে সোজা তোর স্যার বানিয়ে ফেলেছিস।আজ কে যখন পড়াতে আসবে তখন কুটুস করে একটা ছবি তুলে নিবি।দেন আমাকে হটস আ্যপে ছবিটা সেন্ড করবি।ভালো বুদ্ধি না দোস্ত??”
লিয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,হ্যা কুটুস করে ছবি তুলি আর ফুটুস শব্দ করে ফ্লাশ জ্বলে উঠুক তখন।তখন কি হবে??”
“ব্যাপার না কিছু বলে ম্যানেজ করে নিবি।”
এরমধ্যে রাহবার এসে বলে,,”এই আপু আম্মু তোমাদের সবাইকে ব্রেকফাস্ট করার জন্য ডাকছে।”
লিয়া বিছানা থেকে নামতে নামতে বলে,,”অরিন তুই এখন এসব কথা বাদদে।আর মুখটা একটু অফ রাখিস।কারন আমার দাদিমনি আছে।ওনার সামনে কি বলতে কি বলে ফেলবি তাই বলছি ভুলেও কিন্তু জারিফ স্যারের নামটা দাদিমনির সামনে উচ্চারণ করিস না। আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে এখন খাবার খাবো।লিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে ওদের কে সাথে নিয়ে ডায়নিং এ চলে যায়।”
রাহবার আর জান্নাত বেগম আগে থেকেই বসে ছিলো।ওরা তিনজন গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ে। জান্নাত বেগম আড়চোখে অরিনের দিকে তাকিয়ে পরক্ষনে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। ওনার মোটেও অরিন কে পছন্দ হয়না।কারন অরিন জিন্স টপ, গেঞ্জি এসব পড়ে।আর একটু বাচাল স্বভাবের জন্য।ফিহাটা শান্ত শিষ্ট হওয়ায় ওকে ওনার মনে ধরে।
অরিন চঞ্চল কন্ঠে বলে,,”অনেকদিন পর দাদির সাথে দেখা হলো।তা কেমন আছেন দাদি?”
জান্নাত বেগম গম্ভীরভাবে বলে,, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
রাজিয়া সুলতানা খাবার সার্ভ করতে থাকে। খিচুড়ি,বেগুন ভর্তা,ডিম ভাজি আর ইলিশ মাছ ভাজি।
অরিন খাবার চিবুতে চিবুতেই বলে,,”ওয়াও!আন্টি ইলিশ মাছ ভাজিটা যা হয়েছে না এককথায় বলতে গেলে অসাম। ভাগ্যিস আজ এসেছিলাম না হলে আন্টির হাতের ইলিশ মাছ ভাজি টা মিস করে যেতাম।”
ফিহা ওর এক পা দিয়ে অরিনের পায়ের উপর হালকা গুঁতা দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,,”এই চুপ করে খাবি। খাওয়ার সময় এতো কথা বলা বাদ দে।”
ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে লিয়া অরিন আর ফিহা গল্প করছে।সেই সময় রাজিয়া সুলতানা ফোন এনে লিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,লিয়া তোর ফুপ্পি ফোন করেছে নে কথা বল।”
লিয়া ফোনটা নিয়ে দেখে হটস আ্যপে ভিডিও কলে আছে ওর ফুপ্পি।
“হ্যা ফুপ্পি কেমন আছো?”
“আমি তো ভালো আছি। কিন্তু তোর তো কোনো খবরই নেই। ফুপ্পি কে তো একদম ভুলেই গিয়েছিস। আসতে বললে তো আসিসই না।আর ফোন করে খোঁজ খবর নেওয়ার কথাও তো ভুলেই গিয়েছিস।আমার ছোটো আম্মুর থেকে এটা আমি আশাকরিনি ভেরি ব্যাড ছোট আম্মু।”
লিয়া স্মিথ হেসে বলে,,”মোটেও তোমার ছোটো আম্মু তার মেয়েকে ভুলে যায়নি।মেয়েরই তো উচিত মাকে দেখতে আসা।তোমার বুড়ি মাকে না হোক ইয়াং ছোট মাকে তো দেখতে আসতেই পারো।”
আতিকা বেগম ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বলে,,ছোট আম্মুর সাথে কথা বলে পাড়া যাবে না।তা লিয়া তোর পড়াশুনার কি খবর?কেমন আছিস তুই?তোকে দেখতে তো শুকনো লাগছে।”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।এই ফুপ্পি তুমিও আম্মুর মতো শুরু করলে।আমার ওয়েট আরো বেড়েছে। আম্মু আমাকে শুকনো দেখাচ্ছে বলে বলে,জোর করে বারবার এটা সেটা খাওয়ানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আচ্ছা ফুপ্পি তোমার ছেলের আই মিন আলিফ ভাইয়ার কিউট খরগোশ টা কই?”
আতিকা বেগম এদিক সেদিক তাকিয়ে পরক্ষনেই বলে ঐ যে সিড়ির উপরই আছে দেখছি।তারপর ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে খরগোশটি কে দেখাতে থাকে।
খরগোশের কথা শুনে অরিন মাথা বাড়িয়ে দেয় ফোনের সামনে। হঠাৎ সেই সময় সিড়ি দিয়ে নামছিলো আলিফ গায়ে ক্যাট আইয়ের সাদার উপর নীলের চেইক শার্ট আর ডেনিম ব্লু প্যান্ট, চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা দেখতে অসাধারন লাগছিলো।অরিন হা করে তাকিয়ে ছিলো।লিয়া অরিনের ফেসের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বলে,,”তোর আবার কি হলো?”
“হায় আল্লাহ এতো দেখছি পুরাই একটা চকলেট ব
এরমধ্যে লিয়া ওর একহাত দিয়ে অরিনের মুখ চেপে ধরে।তারপর আতিকা বেগমের উদ্দেশ্যে বলে,, “ফুপ্পি এখন রাখছি হ্যা।পড়ে আবার কথা বলবো কেমন।বলে সাথে সাথে লিয়া ফোন কে’টে দেয়।”
(বিয়ের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও লিয়ার দাদা দাদী নিঃসন্তান থাকে।তারপর এতিম খানা থেকে আতিকা বেগম কে দত্তক নেন। দত্তক নেওয়ার বছর দুই পরেই জান্নাত বেগম কনসিভ করেন।লিয়ার বাবারা চার ভাই।লিয়ার বড় চাচা এনায়েত খান ব্যবসা করেন।মেজো লিয়ার বাবা,সেজো আশরাফ খান কলেজের প্রফেসর,আর ছোট মঈনুল খাঁন মাস্টার্স কমপ্লিট করে বিসিএসের জন্য ট্রাই করছে।লিয়ার নিজের একটা ফুপ্পি ছিলো মা”রা গিয়েছে।লিয়ার দাদা দাদি আতিকা বেগম কে নিজের সন্তান হিসেবেই দেখে বড় মেয়ের মর্যাদা দিয়েছেন।)
লিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”আরেকটু হলেই তো মান সম্মানের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছিলি।তোর কথা ওপাশে শোনা যেত না।আর ভিডিও কলে ছিলো ফুপ্পি লাউড স্পিকারের কারনে তোর ভয়েজ আলিফ ভাইয়ার কানে পৌঁছে যেত আর উনি শুনলে কি ভাবতো বলতো?”
অরিন শুকনো ঢুক গিলে নিয়ে বলতে থাকে,,আরে দোস্ত এত সুন্দর একখান পোলা রেখে তুই অন্যকারো উপর ক্রাশ খাইছিস আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।তবে ভালই হয়ছে তোর কাজিনকে আমার জন্য ফাঁকা রাখছিস।পোলা তো নয় যেন আগুনেরই গোলা রে।এই চশমিশ মহাজ্ঞানী এই গান টা কোন শিল্পীর রে।”
ফিহা কপাল কুঁচকে বলে,,”সংসদ সদস্য ছিলো মমতাজ আন্টি ওনার গান এইটা।”
“মমতাজ আন্টির এই গানটা আমি তোর এই কাজিনের নামে ডেডিকেট করলাম। এখন ফাস্ট বল কি করে তোর কাজিন।অবশ্য কিছু না করলেও আমার কোনো প্রবলেম নেই।এমন ছেলের সাথে আমি নুন ভাত খেয়ে গাছ তলাতে থেকে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবো।”
ফিহা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,”নিরামিষ এর তরকারি হলেই যে খেতে পারে না।সে আবার নাকি না খেয়ে থাকবে।তাও আবার গাছ তলায়।”
লিয়া মৃদু কন্ঠে বলতে থাকে,,”সে গুড়ে বালি।আমার এই কাজিন আর তুই পুরোই কন্ট্রোভার্ট।ডা.আলিফ হোসেন খুব রাগী আর গম্ভীর স্বভাবের সাথে স্বল্পভাষী।আর দোস্ত তুই?”
অরিন দাঁত কেলিয়ে বলে,,”আরে ইয়ার এরকম হলে তো আমাদের কেমিস্ট্রিটা ভালো জমবে।আরে জানিস না মানুষের সব সময় বিপরীত দিকেই আকর্ষণ টা বেশি কাজ করে।তোর কাজিনের সাথে আমাকে সেট করিয়ে দেনা দোস্ত।”
“মাথা খা’রাপ তোর।আমি আলিফ ভাইয়াকে দেখলে পাঁচশো গজ দূরে হাটি। আর এই সব ব্যাপারে ওনাকে বলবো ইম্পসিবেল।আমি তোকে এতটুকু হেল্প করতে পারি।স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে গিয়ে ওনার সাথে মিট করতে পারিস।ভাইয়া ওখানকার ডক্টর প্লাস লেকচারার।”
“তোর দাদির সাথে ভাব জমাতে হবে।শুনেছি তোর দাদি এখনো তোদের ফ্যামেলির প্রধান ডিসিশান দাতা।তাই তোর দাদিকে হাত করে, দেন আমার আর ঐ খরগোশ এর মতো সাদা দেখতে ডক্টর আলিফ এর সেটেল করতে হবে।”
আলিফ চেয়ার টেনে বসে হাতে থাকা রিচ ওয়াচের দিকে তাকিয়ে টাইম দেখে বলে,, “আম্মু জলদি করে খাবার দাও,দশটায় আমার ক্লাস আছে তারপর রাউন্ড। তাড়াতাড়ি মেডিকেলে যেতে হবে।”
আতিকা বেগম খাবার সার্ভ করতে করতে বলে,, “তোর নানুমনি বারবার করে বলছে জামালপুরে যাওয়ার কথা।আম কাঁঠাল খাওয়ার জন্য যেতে বলছে।”
আলিফ কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলে,,আম কাঁঠাল কি ঢাকাতে নেই নাকি যে জামালপুরে গিয়ে খেতে হবে,স্ট্রেইন্জ।”
“ঢাকায় আবার নাই নাকি,তবে আমি বলবো ফরমালিন মুক্ত ফল ঢাকাতে নেই।আর ওখানে নিজেদের গাছের ফল।কোনো প্রকারের কীটনাশকের ব্যবহার করা নাই।তার থেকেও বড় বিষয় হলো সবাই একসাথে হওয়া।লিয়ারাও আসবে তাই বলছি তুই কয়েকদিনের জন্য মেডিকেল থেকে ছুটি নিস কেমন।”
আলিফ গম্ভীরভাবে বলে,,”ওকে ট্রাই করবো।”
জারিফ আর ওর ফ্রেন্ডরা ল্যাবে আছে। ব্লাড এক্সামিন করতে হবে।ডোমেনিস্টিটর স্যার দুইজন দুইজন করে একসাথে গ্রুপ করে এক্সামিন করতে দিয়েছেন।যার যার খুশি মতো পার্টনার বেছে নিচ্ছে এমন সময়
তাসনিম আগ বাড়িয়ে বলে,,”আমি আর জারিফ একসাথে।তারপর জারিফের দিকে তাকিয়ে জারিফ কে উদ্দেশ্য করে বলে,,জারিফ তুই কি বলিস।”
জারিফ মৃদু কন্ঠে বলে,,”ইটস ওকে।”
রুপক বলেছে ও আর রোজ একসাথে করবে।এটা শোনার পর থেকে রোজ রাগে গজগজ করতে করতে বলে,,”এই বেক্কেল এর সাথে আমি পারবো না।রুপক যে অলস আর ওর মনে কোনো মায়া দয়া নেই ও আমাকে গরুর কাছে পাঠাবে ব্লাড কালেক্ট করতে।গরু এক লা’থি দিলে আমি শেষ।”
রোহান মুচকি হেসে বলে,,”আমরা এত কিউট কিউট ছেলে থাকতে রুপক কে লাইফ পার্টনার হিসেবে বেছে নিলি এখন দোস্ত বুঝো ঠেলা সেই রুপকই কিনা তোমাকে বিপদের মুখে ফেলে দিবে।আমি হলে তো জান দিয়ে আগলে রাখতাম আর এতো সামান্য গরুর কাছ থেকে সেভ করা এমন কি?”
রুপক দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”থামবি তোরা আর এই যে ন্যাকা রানি আমি কি বলেছি তোকে ব্লাড কালেক্ট করতে।আমি নিজেই পারবো।তুই শুধু আমার সাথে সাথে থেকে মশা তাড়াস কেমন।”
জারিফ আর তাসনিম একসাথে মাইক্রোসকোপে পর্যবেক্ষণ করার সময়, জারিফের কপালের সাথে তাসনিমের কপালে গুতা লাগে।সাথে সাথেই দুজন ছিটকে দূরে সরে যায়।দুজনই একসাথে বলে উঠে,,সরি সরি।
জারিফ মৃদু হেসে বলে,,”আমি আরবিসি কাউন্ট করে বলছি তাসনিম তুই নোট কর কেমন।”
তাসনিম ঘাড় নাড়িয়ে হ্যা সম্মতি দেয়।জারিফ বলতে থাকে আর তাসনিম নোট করতে থাকে।
বিকেলে জারিফ লিয়া কে পড়াচ্ছে।জারিফ খাতায় লিখে বোঝাচ্ছে,লিয়া মাথাটা টেবিলের দিকে ঝুঁকে ঠোঁট কামড়ে ধরে বোঝার চেষ্টা করছে।ফ্যানের বাতাসে লিয়ার শ্যামপু করা খোলা চুল উড়ে এসে জারিফের মুখে পড়ছে।জারিফ বারবার এক হাত দিয়ে ওর মুখ থেকে চুলগুলো দূরে ঠেলে দিচ্ছে।আর চরম বিরক্ত বোধ করছে।জারিফের নিজের কাছে মনে হচ্ছে,,
” ইচ্ছে তো করছে কানের পাশে কয়েকটা ঠা’স করে চ’ড় দিতে। কিন্তু এত বড় মেয়ের গায়ে কি আর হাত তোলা যায় নাকি?জারিফ মনে মনে আরো বলে,,কতটা কেয়ালেস মেয়ে হলে এরকমটা হয়।স্যারের চোখে মুখে চুল এসে পড়ছে সে দিকে ওনার খেয়ালই নেই,,আজব প্রাণী নয়তো এলিয়েন একটা বলে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে, জারিফ চেয়ারটা টেবিলের থেকে এক হাত দূরত্বে নিয়ে বসে।
[চলবে…ইন শা আল্লাহ]
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)