শুধু_তোমাকেই_চাই #শারমিন_হোসেন #পর্ব০৫

0
347

#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব০৫

“আপনার তো বয়স হয়েছে দাদিমা।এবার তো আপনি নাত বউয়ের সেবা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।নাতি দের কে বিয়ে দিয়ে কিউট কিউট নাত বৌ আনবেন। মিষ্টি নাত বৌয়ের হাতের মিষ্টি মিষ্টি সেবা আপনি ডিজার্ভ করেন।ঠিক বলছিনা দা দি মা।শেষের কথাটা টেনে বলে।”

অরিনের কথায় জান্নাত বেগমের কপাল খানিকটা কুঞ্চিত হয়। একটু নড়েচড়ে বসে গম্ভীরভাবে বলেন,,

“তা সময় হলে ঠিকই নাতিদের বিয়ে দেবো। আর আমার সেবা না করলেও চলবে।এখনকার মেয়েরা নিজের স্বামীর সেবাই ঠিকমতো করে না আর কিনা নানি দাদির সেবা করবে এতটা আমি আশাকরি না কখনো।এতটা আশা করা মানে বিলাসীতা ছাড়া কিছু নয়।”

অরিন চঞ্চল কন্ঠে বলে,,”কি বলছেন দাদিমা সবাই একরকম না তো।হাতের পাঁচটি আঙ্গুল কি সমান হয়,সমান নয়তো।ঠিক তেমনি সব মেয়েরাই এক রকম নয়।কিছু কিছু মেয়ে এখনো আছে যারা কিনা স্বামী সংসার ইভেন সংসারের প্রতিটি বস্তু কণা কেও খুব যত্ন করে। শুধু ভালো করে পরখ করে খুঁজে নিলেই সেই কিছু মেয়েদের পাওয়া সম্ভব।আর আমাদের একটা দোষ কি বলুন তো দাদি চোখের সামনে হিরে ফেলে অযথা সময় ন’ষ্ট করে বাইরে থেকে কাঁচ কুঁড়ে নেবো।”

লিয়া শুকনো ঢোক গিলে মনে মনে বলে,,”আরে বাবা!এতো নিজেকে সোজা হিরে বানিয়ে ফেললো।একে দাদিমনির কাছ থেকে দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে।এই পেট পাতলা, বাঁচাল টা কি বলতে কি বলে ফেলবে।লিয়া দ্রুত অরিন কে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,,এই অরিন তুই না আমাকে কিছু ম্যাথ নোট করতে হেল্প করবি বলেছিলি।চল আমাকে হেল্প করবি বলে লিয়া অরিনের হাত ধরে জোড় পূর্বক টেনে নিয়ে আসে ওখান থেকে।”

পরের দিন,,,,

লিয়া নেভি ব্লু কালারের গাউন পড়েছে।কোমড় সমান চুলগুলো খোলা রেখেছে।বারবার ঘড়ির দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে কখন পাঁচটা বাজবে।ঘড়ির কাঁটায় চারটা পঞ্চাশ বাজে। পাঁচটার সময় জারিফ আসে।লিয়া রুম জুড়ে পায়চারি করছে।আর গুনগুন করে গাইছে,,

Jis din tujhko na dekhun
যেদিন তোকে না দেখি

Pagol pagol phirti hoon
পাগল পাগল হয়ে যাই

Kaun tujhe yan payer kartega
কে তোকে এমন করে, ভালোবাসবে?

Jaise main korti hoon
যেভাবে আমি ভালোবাসি।

এরমধ্যে কলিং বেলের শব্দ হওয়ায় লিয়া ছুটে যায় দরজা খুলতে।দরজা খুলে দেখে কফি কালারের টিশার্ট গায়ে,অফ হোয়াইট কালারের জিন্স পড়নে স্ট্রেইট হয়ে জারিফ দাড়িয়ে আছে। ফর্সা গায়ে কফি কালারটা দারুন মানিয়েছে।লিয়া পলকহীন তাকিয়ে আছে।জারিফ এক নজর লিয়ার দিকে তাকিয়ে তারপর এহেম এহেম শব্দ করে।

লিয়া নিজেকে তটস্থ করে জড়তা নিয়ে বলে,,”আ আসসালামুয়ালাইকুম স্যার।”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
“কেমন আছেন?”
জারিফ এক কথায় বলে,,”ভালো।”

লিয়া দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়ে জারিফ কে ভেতরে যেতে বলে।আর মনে মনে বলে,, মিস্টার আয়মান জারিফ কে বলেছিলো আপনাকে এত সুন্দর হতে।ছেলে মানুষ কে এত সুন্দর হতে নেই। আপনাকে দেখলে কেনো যে আমি এলোমেলো হয়ে যাই তা আমি নিজেও জানিনা।আমার ভালোবাসার মাস্টার মশাই আমার তো মনে হয়,আপনার চারিপাশে প্রেমের জাল ছিটিয়ে রেখেছেন।সেই জালে আটকা পড়েছে সপ্তদশী এই কিশোরী।”

গ্রাভিটি পড়াচ্ছে তখন লিয়া চঞ্চল কন্ঠে বলে,,”স্যার বিজ্ঞানী নিউটনের মাথায় যদি আপেল না পড়ে আপেল গাছটাই উল্টে পড়তো তাহলে কি হতো?”

“জারিফ ভ্রু কুঁচকে ইশারায় বলে কি হতো?”

“ভালো হতো স্যার।আপেল গাছ পড়লে।নিউটন সাথে সাথেই পটল তুলতো।তাহলে আমাদের সবাইকে কষ্ট করে এতো জটিল জটিল সূত্রের সমাধান করা লাগতো না।”

লিয়ার কথা শুনে জারিফ স্মিত হাসে।লিয়া জারিফের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,,ইস!স্যার কে হাসি মুখে কত সুন্দর লাগছে।হাসলে স্যার কে আরো বেশি কিউট লাগে।

জারিফ মৃদু কন্ঠে বলতে থাকে,, “মহাবিশ্বের প্রত্যেক টা বস্তু কণা একে অপরকে আকর্ষণ করে আর এই আকর্ষণ বলের মান বস্তু দুইটির ভরের গুনফলের সমানুপাতিক বস্তু কণা দুইটির মধ্যবরতী দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক এবং এই বল বস্তু কণা দূইটির কেন্দ্রের সরল রেখা বরাবর ক্রিয়া করে।এর গাণিতিক ব্যাখ্যা লিখো।”

লিয়া তখন বিড়বিড় করে বলে,,নিউটন ঠিকই বলেছেন যেমন আপনি আমাকে আকর্ষন করেন স্যার।”

লিয়া শুকনো ঢোক গিলে নিয়ে বলতে থাকে,,”স্যার রাহবার আসছিলো ওর লাভ ক্ষতির অংক বুঝিয়ে নিতে আমাকে দিয়ে।আমি তো লাভ এর অংক টা একটু কম বুঝি।তাই বলছিলাম আপনি আমাকে যদি লাভ টা আই মিন লাভের অংক টা একটু বুঝিয়ে দিতেন,তাহলে আমি রাহবার কে বোঝাতে পারতাম আরকি।”

জারিফ গলা ঝেড়ে গম্ভীরভাবে বলে,,”এখন আমার হাতে সময় নেই।অন্যদিন বুঝিয়ে দেবো।আর রাহবার কে বলো কাল কোচিং এ আমার সাথে যেনো দেখা করে।ওর কোথাও প্রবলেম থাকলে সরাসরি যেনো আমাকে বলে।”

লিয়া মনে মনে বলে,,”আমার তো হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।আর কিভাবে বোঝাবো আমি?স্যার কি বুঝতে পারছেন না?নাকি ইচ্ছে করে না বোঝার এক্টিং করে আছে অদ্ভুত।আমি স্যারকে কি নজরে দেখি স্যার সেটা কবে বুঝবে?সরাসরি মুখে বলতেও পারছি না যে,স্যার আপনার অধম ছাত্রী আপনার প্রেমে দিওয়ানা হয়েছে।এই অধম ছাত্রী কে আপাতত প্রেমিকা হিসেবে গ্রহণ করে ধন্য করুন। বউ আর বাচ্চার মা না হয় পরেই করুন।”

প্রতিদিনের ন্যায় রাজিয়া সুলতানা নাস্তা নিয়ে আসেন।জারিফ রাজিয়া সুলতানা কে দেখে সালাম দেয়। সালামের উত্তর দিয়ে রাজিয়া সুলতানা কুশল বিনিময় করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। লিয়া একটা মিষ্টি জর্দার প্রিচ জারিফের দিকে বাড়িয়ে দেয়।লিয়া নিজেও অন্য প্রিচটা নিয়ে খেতে খেতে নরম কন্ঠে জারিফ কে শুধায়,,
“স্যার আপনি মাধ্যমিক দিয়েছেন কোন স্কুল থেকে?”
জারিফ দুই কথায় বলে,,”জিলা স্কুল”

লিয়া ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,,”ওহ্। চঞ্চল গলায় আরো বলতে থাকে,,আমার খুব ইচ্ছে আপনাদের ভার্সিটির ক্যাম্পাস টা দেখার।অনেক গল্প শুনেছি তো সেইজন্য।উইন্টার সিজনের শেষের দিকে নাকি বোটানিক্যাল গার্ডেনে বেড়ানোর মজাই আলাদা। বিভিন্ন রকমের ফুল ফোঁটে। আফসোসের সুরে বলে,,আমার না ব্যাড লাক এতো কাছে থেকেও এখনো দেখতেই পেলাম না শুধু গল্পই শুনতে হয়। গল্প শুনে মন ভরে গিয়েছে দেখে এবার চোখের তৃষ্ণা মেটাতে চাই।”

জারিফ চুপচাপ আছে বুঝতে পারছে না লিয়ার কথার উত্তরে কি বলা যায়। কিছুক্ষণ থেমে লিয়া আবার বলতে আরম্ভ করে,,”আম্মু কে বলে এর পরের বার ছুটিতে যখন আসি তখন আপনাদের ভার্সিটিতে যাবো।আপনি কিন্তু ঘুরে ঘুরে সবটা দেখাবেন কেমন।”

জারিফ নির্বিকার ভাবে জবাব দেয়,,”আমি কেনো?”

“আপনাদের ভার্সিটি আজ প্রায় চার বছর হতে চলছে আপনি ওখানে পড়াশুনা করছেন সব কিছু তো আপনার চেনা জানা আছে ঠিক না? সেইজন্য বলছি।”

“আচ্ছা আমি আসছি। তুমি হোমওয়ার্ক গুলো কমপ্লিট করে রেখো কেমন।”
লিয়াকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে জারিফ চলে যায়।লিয়া ওর কথার উত্তর না পেয়ে জারিফের কথা শুনে,জারিফের যাওয়ার দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে বলে,,

“রোবট একটা পড়াশুনার কথা ছাড়া অন্য কথা যেনো মুখ দিয়ে বেরই হতে চায় না।বাসর রাতে বউয়ের ঘোমটা খুলে রোমান্টিক কথা বাদ দিয়ে ঠিক পড়ার টপিক নিয়ে আলোচনা করবে।স্যারের ভবিষ্যত বৌয়ের কপাল পোড়া।ইশ কি বলে ফেললাম ভবিষ্যৎ বউ সেটা তো আমি নিজেই হতে চাই।”

সন্ধ্যা পর ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসে রাজিয়া সুলতানা লিয়ার চুল গুলো দুইপাশে দুইটা বেনুনি করে দিচ্ছে।সেই সময় রাজিয়া সুলতানা বলতে থাকে,,

“লিয়া আমরা তো সামনের সপ্তাহে তোর দাদু বাড়িতে যাচ্ছি।তাই বলছি তোর কি কি কেনা লাগবে লিস্ট করে নিস।দুই এক দিনের মধ্যেই শপিং করতে যাবো।”

দাদু বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনে লিয়া বিরক্ত হয়।কারন ওখানে গেলে এক সপ্তাহের আগে আসা হবে না।আর এই এক সপ্তাহ মাস্টার মশাই কে দেখতে পারবে না।এটা ভেবে লিয়ার মনটা খারাপ হয়ে যায়।লিয়া মৃদু আওয়াজে বলতে থাকে,,
“আম্মু বলছিলাম কি এবার দাদু বাড়িতে না গেলে হয়না।”

লিয়ার কথা শুনে রাজিয়া সুলতানা কপাল কুঁচকে লিয়ার দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে শুধালেন,,
“ব্যাপার কি লিয়া? প্রতিবার তো বাসায় আসার পরের দিন থেকেই দাদু বাড়ি যাবো যাবো করে কানের পাশে ঘ্যানঘ্যান করতে থাকো।তাহলে আজ কেনো যেতে চাচ্ছো না,স্ট্রেন্জ।”

লিয়া জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলে,,”তেমন কিছু নয় আম্মু এমনিই বললাম।আর এবার পড়ায় অনেক গ্যাপ আছে বাসায় থেকেই সে গুলো রিকভার করতে চাচ্ছিলাম।আর তুমি তো জানোই দাদু বাড়িতে গেলে বই ছুঁয়েই দেখা হয়না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে বুঝলাম।তবে দুই দিনের জন্য হলেও যেতে হবে।তোমার ফুপ্পি আসবে,তোমার বড় আব্বু নিজেও ফোন করে যেতে বলেছে।এবার ভেবে দেখো না গেলে বিষয়টা কেমন দেখায় না?”

“আচ্ছা ঠিক আছে যাবো, কিন্তু যতো তাড়াতাড়ি আসা যায়।তুমি সবটা ম্যানেজ করবে কেমন।”

লিয়ার কথা শুনে রাজিয়া সুলতানা স্মিত হেসে ঘাড় নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর দেয়।এরমধ্যে জান্নাত বেগম এসে সোফাতে বসে গলা ঝেড়ে আচমকা বলতে থাকেন,,

“লিয়া তোমার ঐ বান্ধবী টা।ঐযো ছেলেদের মতো পোশাক পড়ে তার কথা বলছি।আমার কাছে সুবিধার ঠেকে না। তোমার বান্ধবী হয় তুমি একটু ওকে নিষেধ করতে পারো না ঐসব পোশাক পড়তে।আদব-কায়দা কমই আছে আর নয়তো মাথায় গন্ডগোল আছে নইলে কেউ এতো বকবক করে নাকি?”

“দাদিমনি তুমি অরিনের কথা বলছো।এম্পটি ভ্যাসেল সাউন্ড ম্যাচ।কথায় আছে না শুণ্য কলসি বাজে বেশি,ও ঠিক ঐরকম।তবে এমনি খুব ভালো,একটু কথা বলে বেশি এই আরকি।তাছাড়া ওর মনটা খুব ভালো।”

জারিফ ওর রুমে বসে পড়ছিলো এমন সময় ওর ছোটো বোন জারা এসে জারিফের এক পাশে দাঁড়িয়ে বলে,,”ভাইয়া পাশের বাড়ির এক চাচি এসেছিলো তোর খোঁজে।”

জারিফ ঘাড় ঘুরিয়ে জারার দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে ইশারায় বলে,,”কেনো?”

“ওনাদের একটা ছা’গলের নাকি মাথা ঘোরা রোগ হয়েছে।তাই তোকে একবার দেখতে যেতে বলেছে।”

“মাথা ঘোরা রোগের নাম নয়।এটাকে গিট রোগ বলে। আচ্ছা কাল সকালে যাবো এখন তো অনেক রাত হয়েছে।”

কিছু সময় থেমে থেকে জারা ঠোঁট উল্টে বলে,,”আচ্ছা ভাইয়া এত কিছু থাকতে তুই কেনো ভেটেরিনারি পড়তে গেলি বলতো?সেই তো পাশ করে গরুর ডাক্তার হয়ে বের হবি।লোকজন তো গরু ছাগলের ডাক্তার বলে বিদ্রুপ করতে পারে।”

ছোট বোনের বোকা বোকা কথা শুনে জারিফ স্মিত হাসে, মৃদু কন্ঠে বলে,,”কোনো কিছু কেই ছোট করে দেখা ঠিক নয়। মানুষের যেমন ডাক্তারের প্রয়োজন হয় তেমন পশু প্রাণীরও তো ডাক্তার প্রয়োজন। মানুষের চিকিৎসা করার চেয়ে পশুর চিকিৎসা করা জটিল।কারন মানুষ তার সমস্যার কথা বলতে পারে। মানুষের সমস্যার কথা আগে শুনে তারপর একজন ডক্টর প্রেসক্রিপশন করে।আর পশুরা তো বলতে পারে না,পশুর সিমটম দেখে পশু ডক্টর কে গেইস করে প্রেসক্রিপশন করতে হয়।”

ভাইয়ের কথাগুলো খুব মনোযোগ সহকারে জারা শুনছিলো। জারিফের কথাগুলো জারার বেশ মনে ধরে।জারা মনে মনে ভাবে,কেউ যদি কখনো ব্যাঙো করে কখনো আমার ভাইয়া কে গরুর ডাক্তার বলে।তাহলে আমি উচিত জবাব দিয়ে দেবো,হুহ।

জারিফ দুই আঙ্গুল দিয়ে হালকা করে জারার নাক টেনে দিয়ে শুধায়,,,”কি ভাবছিস ছুটকি?”

জারিফের আদুরে গলায় আদর মাখা ডাক শুনে জারা ঠোঁট প্রসারিত করে নিঃশব্দে হাসে।তারপর চঞ্চল গলায় বলে,,”তেমন কিছু না।”

পরের দিন,,,,
বেলা এগারোটার দিকে ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলো লিয়া।এমন সময় কলিং বেলের শব্দ হওয়ায়,কিচেন থেকে রাজিয়া সুলতানা লিয়াকে ডেকে দরজা খুলতে বলেন।লিয়া পাশে বসে থাকা রাহবার কে উদ্দেশ্য করে বলে,,
“এই রাহবার ভাই দেখতো কে এসেছে এই সময়।যা দরজা টা একটু খুলে দিয়ে আয়।”

রাহবার ফোনে ফ্রি ফায়ার খেলছিলো। রাহবার একবার লিয়ার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে আবার ফোনের দিকে দৃষ্টি দিয়েই বলে,,”কে আবার এই সময় আসবে। নিশ্চয় পাশের ফ্লাটের আন্টি হবে।এই অসময় উনি ছাড়া অন্য কেউ হবে না।”

“যা খুলে দিয়ে আয় না।এতো কথা বলা বাদ দিয়ে।”

“এই আপু আমি ব্যাস্ত আছি।তুমি যাও,আর ঐ আন্টি এসেই তো ফ্রিতে একগাদা উপদেশ দিতে থাকবে আর ওনার ছেলে মেয়ের গীত গাইতে থাকবে। জাস্ট বিরক্তিকর।তাই এখন আ’ম নট ইন্টারেস্টেড টু ওপেন ডোর।”

লিয়া কোলের উপর রাখা কুশন টা রাহবারের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলে,,”ফোন হাত থেকে এক সেকেন্ড নামালে মনে হয় মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে।”
লিয়া উঠে যায় দরজা খুলতে।দরজা খুলে লিয়া অবাক হয়ে বলে,,”তোমরা”

“সারপ্রাইজ।কেমন দিলাম সারপ্রাইজ টা?লিয়ার বড় চাচার মেয়ে তুলি কথাটা বলে।তুলি আর লিয়া সম বয়সী।তুলি মহিলা কলেজে একাদশ শ্রেণীতে পড়ে।তুলি লিয়ার থেকে ছয় মাসের বড়।”

লিয়া কে উদ্দেশ্য করে ওর ছোটো চাচ্চু মঈনুল খাঁন বলেন,,
“আমার ছোটো আম্মুর কি খবর? ছোটো আম্মুর সাথে তো অনেক দিন পর দেখা হলো।”
লিয়া মৃদু হেসে বলে,, “ভালো।আর আগে তোমরা ভেতরে আসো।”

ড্রয়িংরুমে বসে মঈনুল খাঁন বলতে থাকে,,”তুলি তো গতকাল থেকে বায়না ধরেছে এখানে আসবে বলে।বড় ভাবি কতবার করে তুলিকে বললো লিয়া রা তো আর কয়েকদিন পর আসবেই তাহলে এখন যাওয়ার কি দরকার। তারপরও তুলি মন খা’রাপ করে ছিলো তাই সকালে তুলিকে বললাম চল আমি নিয়ে যাচ্ছি।আর সাথে সাথে চলেও আসলাম।”
লিয়া হাসি মুখে বলে,,”খুব খুব ভালো করেছো এসে।চাচ্চু তোমার চাকুরীর কি খবর?

“হ্যা মামুনি ট্রাই তো করতেছি।এবার কার বিসিএস টা ভালই হয়েছে আশা করা যায়।এবারই তো লাস্ট চান্স।এবার না হলে সরকারী চাকুরীর বয়স শেষ হয়ে যাবে তখন প্রাইভেট এ ট্রাই করতে হবে।তবে আই হোপ এবার আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে।”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।হলে আমরা সবাই খুব খুশি।আর চাচ্চু আমাকে কিন্তু ভালো গিফট দিতে হবে।”

“সে কথা বলতে মামনি। তুমি আমার ছোট আম্মু না।তোমাকে সব সময়ই আমি খুশি করার চেষ্টা করবো।”

“ঠিক আছে চাচ্চু।আর আমি কিন্তু ঠিক সময় মতো আমার গিফট টা চেয়ে নেবো তোমার কাছ থেকে।”

“সমস্যা নেই আমি হার্ট এন্ড সোল ট্রাই করবো তোমার কাংখিত গিফটটা দেওয়ার।”

“থ্যাংকস।”

মঈনুল খাঁন ফোনে সময় দেখে গলা ঝেড়ে বলতে থাকে,,”বিকেলে একবার আমার বড় আম্মু কে দেখতে যেতে হবে। ময়মনসিংহ এ এসেছি আর বড় আম্মুর সাথে দেখা করেনি শুনলে তো আম্মাজান ভীষণ অভিমান করে থাকবে।”

তুলি গমগমে কন্ঠে বলে,,”হ্যা উনার তো আবার বুক ফে’টে যায় তবু মুখ ফোটে না।মুখে কিছু বলবে না অথচ অভিমানের পাহাড় জমা করে রাখবে।”

“আসলে তোমাদের বড় আপু একটু বেশিই নরম মনের তো তাই।”

রাজিয়া সুলতানা এসে কুশল বিনিময় করে বলে,,”মঈনুল ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি খাবার রেডি করছি।”

সন্ধ্যার আকাশে আঁধার ঘনিয়ে আসছে।দূর আকাশে কয়েকটা পাখির দল দেখা যাচ্ছে।তারা যেনো ব্যস্ত তাদের নিজ নিজ নীড়ে ফিরতে।ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে লিয়া আর তুলি।নীরবতা ভেঙ্গে উৎসুক ভাবে তুলি বলে,,
“লিয়া তোর টিচার কে পড়া শেষে যাওয়ার সময় এক নজর দেখলাম। মাশাআল্লাহ এত্ত কিউট আর হ্যান্ডসাম দেখতে তোর নিউ টিচার।আমি তো এক নজর দেখেই ফিদা হয়ে গিয়েছি।তুই এতো সুন্দর টিচারের সামনে পড়িস কিভাবে মানে পড়ায় মনোযোগ দিস কিভাবে।আমি হলে তো মনেহয় পড়া লেখা বাদ শুধু ড্যাবড্যাব করে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম।”

তুলির শেষের কথা শুনে লিয়া মনে মনে জেলাসি ফিল করে আর রাগান্বিত হয়।আমার প্রিয় মানুষ টাকে নিয়ে এরকম চিন্তা ভাবনা করার রাইট একমাত্র আমার আছে তাছাড়া আর কারো নেই।তাকে শুধু আমিই দু নয়ন ভরে দেখবো আর কেউ নয়।সে শুধু একান্তই আমার হবে।তাকে নিয়ে রঙিন স্বপ্ন বুনব আমি আর কেউ নয়।মনে মনে ভেবে লিয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে।যতই মনে মনে বলুক মুখে কি আর এটা কাউকে বলা যায়?না কখনোই না।

“লিয়া তোর তো গুড লাক যে,তুই এতো হ্যান্ডসাম আর ড্যাশিং স্যারের ছাত্রী তো অনন্ত হতে পেরেছিস।”

লিয়া বিড়বিড় করে বলে,, “এখন ছাত্রী হয়েছি। আর কয়েকদিন পর ছাত্রী থেকে পাত্রী হবো,পাত্রী থেকে বউ হবো আর বউ থেকে বাচ্চার মা হবো…

[চলবে…ইন শা আল্লাহ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here