শুধু_তোমাকেই_চাই #শারমিন_হোসেন #পর্ব০৯

0
525

#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব০৯

“এই চাঁদনি রাতে খোলা আকাশের নীচে একটা গান হলে কেমন হয় গাইস?”
এক নাগারে কথা গুলো বলে থামে তুলি।তুলির কথা শুনে এক সেকেন্ডও বুঝতে দেরি হয়না তাসনিমের।সাথে সাথেই বুঝে নেয় ওকে গান গাইতে বলছে।আলিফ বাদে বাকিরা এক বাক্যে বলে উঠে,,”একদম ঠিক বলেছিস।”

সবার দিকে তাকিয়ে তাসনিম শুকনো ঢোক গিলে নিয়ে বলে,,”গান গাইবো আমি।অন্য কিছু দিলে হতো না।”

লিয়া বলে,,”আপু অন্তত দু লাইন বলো।”
তাসনিম ঠোঁট কামড়ে ধরে ভাবতে থাকে কি গান গাইবে।সামনে তাকিয়ে আলিফের দিকে দৃষ্টি দিয়ে ভাবে, এখানে আলিফ ভাইয়া আছে ওনার সামনে গাইতে হবে,কি গান যে গাই?মিনিট খানেক ভেবে টেবে না পেয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আকাশের দিকে তাকায়।তারপর স্মিত হেসে হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে গাইতে থাকে,,

মিটি মিটি জ্বলছে ছোট্ট তারা
তোমাকে আমরা বুঝিনা,
আকাশের উঁচুতে থাকো তুমি
হিরের মতো জ্বলতে থাকো।

চারিদিকে শুনশান নীরবতা।মাঝে মাঝে ঝিঝিপোকার ডাক শোনা যাচ্ছিলো।খোলা আকাশের নিচে খালি গলায় তাসনিম এর গাওয়া প্রতিটি বাক্য আলিফ মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছিলো।লিয়া বিগ হ্যান্ড দিয়ে বললো,,”নাইস আপু। এক কথায় বললে অসাধারণ হয়েছে।”
তুষার দাঁত কটমট করে বলে,,”এ কি গাইলি তুই নার্সারির ছড়া।”

তাসনিম ভাবলেশহীন ভাবে শান্ত গলায় বলে,,”গাইতে বলেছিলি তাই কিছু একটা সুর করে গেয়েছি দ্যাটস এনাফ। কিরকম হলো সেটা ব্যাপার না।”

লিয়ার কাগজে ডেয়ার লেখা দেখে লিয়া নাক মুখ কুঁচকে বলে,,”এই তুলি কি ব্যাপার হ্যা।সব কাগজেই শুধু ডেয়ার লিখে রাখছিস নাকি? আশ্চর্য! শুধু ডেয়ার আর ডেয়ার ট্রুথ বেচারা কি দোষ করেছিলো।”

তুষার বলে,,”লিয়াকে কি ডেয়ার দেওয়া যায়?”

“লিয়া তুই তোর প্রিয় মানুষ কে নিয়ে দুই লাইন কিছু বল।সেটাও এক্টিং করে বলবি।”

তাসনিম এর কথা শুনে লিয়া আচমকাই মুখ ফোসকে বলে ফেলে,,”প্রিয় মানুষ টা কি এখানে আছে নাকি যে তাকে নিয়ে বলবো।সামনে থাকলে না হয় তার সামনে দাঁড়িয়ে এক্টিং করে না সত্যি সত্যিই মন থেকে বলতাম।”

লিয়ার কথা শুনে সাথে সাথে বলে,,”প্রিয় মানুষ আছে তোর?কে সে?আর আমার কথা তো ফিনিশ হয়েছিলো না।আমি বলতে চেয়েছিলাম প্রিয় বলতে এখানে,,যে কেউ হতে পারে।যেমন বাবা,মা,ভাই, বোন ও তো আমাদের খুব প্রিয়।”

তাসনিম এর কথা শুনে লিয়ার নিজের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করে।কেনো যে পুরো কথাটা না শুনে ঘনঘন কথাগুলো বলে ফেললো।লিয়া জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলে,,”আ আসলে আমিও তো প্রিয় বলতে কেউ আছে সেটা বলিনি। বলতে চাচ্ছি ভবিষ্যৎ প্রিয় মানুষ টা তো আর এখন এখানে নেই তাইনা।”

তুলি গমগমে স্বরে বলে,,”আচ্ছা সে না হয় বুঝলাম।এবার ঐ ভবিষ্যৎ মানুষ টাকে কল্পনায় ভেবে এক্টিং টা করে দেখায়ে ডেয়ার টা কমপ্লিট কর।”

লিয়া কিয়ৎক্ষণ ভেবে নিয়ে চোখ বন্ধ করে জারিফকে কল্পনা করে অস্ফুট স্বরে বলতে থাকে,,
ডিয়ার স্পেশাল পার্সন,,
খা’রাপ সময়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদার জন্য
আমার তোমাকে চাই,ঝগড়া করার জন্য
আমার তোমাকে চাই,হাতে হাত রেখে
ঘোরার জন্য আমার তোমাকে চাই।
মোট কথা আমার শুধু তোমাকেই চাই!!!

সব শেষে তুলির পালা,তুলি কাগজের টুকরা খুলে দেখে ঠোঁট উল্টে বলে,,”ডেয়ার।”
মনে মনে বলে,,আমি জানতাম লাস্ট টুকরায় ডিয়ার থাকবে কারন,আমিই তো মাত্র দুইটা কাগজে ট্রুথ লিখে ছিলাম।আর সব কয়টাতে ডেয়ার লিখেছিলাম।ব্যাড লাক ভেবেছিলাম দুইটা ট্রুথ এর একটা আমার ভাগ্যে হয়তো পড়বে।আমার সে ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে সর্বনাশা ডেয়ার পড়ল।এখন এরা কি যে দেয়? ট্রুথ দিলে তাও সত্যি মিথ্যা একটা কিছু বলে দিতাম।”

লিয়া মুচকি হেসে বলে,,”তুলি ডান্স করবে।”

ডান্স এর কথা শুনে তুলি বড়বড় চোখ করে লিয়ার দিকে তাকিয়ে অসহায় ফেস করে দুদিকে মাথা নাড়ায়ে ইশারায় বোঝাতে থাকে ডান্স বাদ দে বোইন।

লিয়া চঞ্চল কন্ঠে বলে,,তুলি ডান্স করবে,কোন গানে?দশ সেকেন্ড ভেবে বলে,,”ঐ যো একটা ভাইরাল গান আছে না।কি যেনো নামটা? ওহ্!মনে পড়েছে নোকায়ালি ইয়া।তুলি ইউ হেভ গন ফাস্ট ফর ডান্স।

লিয়ার কথা শুনে তুলির হার্ট অ্যাটাক করার অবস্থা হয়েছে।ডান্স করতে হবে তাও এই গানে।আবার কিনা এখানে ভাইয়ারা আছে তাদের সামনে।তুলি সাথে সাথে মনে বলে উঠে ইম্পসিবল।তুলির ইচ্ছে করছে এই ইম্পসিবল ওয়ার্ড টাকে,মোটু পাতলু কার্টুনের ইন্সপেক্টর চুইংগাম এর মতো একটু বিকৃত করে টেনে ইয়াম্পসিবল বলতে।তাতে যদি শেষ রক্ষা হতো। তুলি দুদিকে ঘাড় নাড়িয়ে বলে,,”অন্য কিছু বলো।ডান্স সম্ভব না তাও আবার এই গানে কখনোই না।”

তুষার বলে,,”আমি দিচ্ছি তোর ডেয়ার।তুই বাংলা সিনেমার কাজের বেটি মর্জিনার মতো কিচেনে গিয়ে এখন আমাদের সবার জন্য কফি বানিয়ে আনবি।ঠিক আছে।কারো হেল্প নেওয়া যাবে না।মা কিংবা চাচিমাদের কারোরই হেল্প নেওয়া যাবে না।লিয়া তুমি নিচে গিয়ে শাকচুন্নী টাকে ফলো করো যে,অন্য কারো দিয়ে যেনো কফি বানিয়ে না নেয়।”

তুলি ভেংচি কেটে নিচে নেমে যায় আর বিড়বিড় করে বলে,,”এ আবার এমন কি।কফি বানানোর কথা বানালেই হলো। স্বাদ কিরকম হলো সেটা ফ্যাক্টর নয়।আমার টাস্ক আমি পূরণ করলেই হলো।”

আলিফ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,আমি আসছি।গুড নাইট এভরিওয়ান।বলে আলিফ রুমে চলে যায়।”

তুলি সবার জন্য কফি বানিয়ে এনে দেয়।কফির মগে এক চুমুক দিয়ে সবাই একসাথে ওয়াক থু থু করতে থাকে।তুষার দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”এই এইটা তুই কি বানিয়েছিস। মনে হচ্ছে কফির মধ্যে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিস।এত তেতো কেনো?এটা মানুষ কেনো গরুও তো খেতে পারবে না।”

তুলি ব্যাকা হেসে বলে,,”আমার টাস্ক আমি কমপ্লিট করেছি। টেস্ট কিরকম হবে সেটা তো গেইমের অংশ ছিলো না।”

পরের দিন বিকেলে,,রুমে বসে লিয়া ফোনে অরিন আর ফিহার সাথে গ্রুপে চ্যাটিং করায় ব্যাস্ত ছিলো। তাসনিম বসে ম্যাগাজিন পড়ছিলো।এমন সময় তুলি এসে হাসি মুখে বলে,,”ফাস্ট রেডি হয়ে নে লং ড্রাইভে যাবো।”

তুলির কথা শুনে লিয়ার কপালে ভাঁজ পড়ে।লিয়া ইশারায় বলে,,”কে নিয়ে যাবে?”

“আলিফ ভাইয়া আমাকে ডেকে বলেছে।উনি আমাদের কে লং ড্রাইভে নিয়ে যাবে।”

তুলির কথা শুনে তাসনিম নড়ে চড়ে বসে।লিয়া অবাকের চরম সীমায় পৌছে যায়।অবাক গলায় বলে,,”
ব্যাপার কি ভাইয়া নিজে থেকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে।এটা শুনে তো আমার নিজেরই মাথা ঘুরছে।আমার তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না।”

“রাখ তোর বিশ্বাস।এখন রেডি হয়ে নে ফাস্ট।আপু বসে না থেকে যাও রেডি হও ভাইয়ারা এতক্ষণ হয়তো তৈরি হয়ে নিচে চলে গিয়েছে।”

তাসনিম তুলির দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধীর গলায় বলে,,”তোরা যা ঘুরে আয়।আমার এখন কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।”

তুলি মুখটা মলিন করে মৃদু আওয়াজে বলে,,”ভাইয়া কিন্তু সবাইকে যেতে বলেছে।আমাকে বলার সময় লিয়ার আর তোর নাম উল্লেখ করে বলেছে কিন্তু।”

তাসনিম বিরক্তিকর ফেস করে বলে,,”তোরা তো যাচ্ছিসই।সবারই যাওয়া লাগবেই এমন তো নয়।”

লিয়া ছোট করে শ্বাস নিয়ে বলে,,”আপু তুমি না গেলে আমিও যাবো না বলে রাখলাম।এবার তুমি কি করবে ভেবে দেখো।”

ছোট বোনদের মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,,”ওকে চল।”

লিয়া কফি কালারের গাউন পড়ে চুলগুলো খোলা রাখে। তাসনিম অফ হোয়াইট কালারের থ্রি পিস পড়ে নেয়।তুলি পিংক কালারের থ্রি পিস পড়ে। একসাথে তিন বোন নিচে নেমে আসে।বাড়ির সামনে গিয়ে দেখে গাড়ির সাথে হেলান দাঁড়িয়ে আছে আলিফ। স্কাই কালারের শার্ট, ব্লাক কালারের প্যান্ট,ইন করে পড়া ব্লাক সু,চোখে সানগ্লাস।সামনে দাঁড়ানো তুষারের সাথে কথা বলছে। ওরা তিনজন আসতেই আলিফ আড়চোখে একবার তাসনিম এর দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস টেনে নিয়ে গাড়ির ডোর খুলে দেয়।

আলিফ ড্রাইভিং সিটে বসে।সিট বেল্ট বাঁধতে বাঁধতে লুকিং গ্লাসে তাসনিম কে দেখতে থাকে।রাহবার আর তুষার দুইজন সামনে বসেছে।পিছনে মাঝে তুলি আর লিয়া আর তাসনিম দুইজন দুইপাশে বসেছে।

আলিফ একমনে ড্রাইভ করছে।গাড়িতে নীরবতা ভেঙ্গে লিয়া বলে,,”ভাইয়া আমরা কোথায় যাচ্ছি।”

তুষার বলে,,”আপাতত প্রথমে য
তুষারকে থামিয়ে দিয়ে আলিফ বলে,,”ওয়েট করো সময় হলেই দেখতে পারবে।আর দেখি কতদূর যাওয়া যায়।”

লিয়া আর কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকে।আর জানালার বাইরে দৃষ্টি দিয়ে জারিফ কে নিয়ে ভাবতে থাকে।লিয়া আফসোস করে মনে মনে আওড়ায়,,ইশ!জারিফ স্যারের সাথে যদি কখনো লং ড্রাইভে যাওয়ার সুযোগ হতো।জানালা দিয়ে বাতাস আসছিলো লিয়ার চুলগুলো উড়ে এসে বারবার মুখের উপর পড়ছিলো।লিয়া ভাবে,,এতো সুন্দর রোমান্টিক ওয়েদার বাট আফসোস রোমান্স করার মানুষ টাই নেই।লিয়া একধ্যানে জারিফ কে নিয়ে কল্পনা করতে থাকে।

যমুনা নদীর তীরে এসে গাড়ি থামায়।গাড়ির ডোর খোলার শব্দে লিয়ার ধ্যান ভাঙ্গে।গাড়ি থেকে নেমে ওরা তীরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।আলিফ গাড়ির সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রল করতে থাকে।তুষার আর রাহবার আরেক দিকে হাঁটতে যায়।

আকাশ পরিষ্কার।নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে। সামনে নদীর পানি তারপর বেশ বাতাস আছে সত্যিই আবহাওয়া প্লাস পরিবেশ দুইটাই বেশ চমৎকার।বাতাসে লিয়ার চুল উড়াতে লিয়া বিরক্ত হচ্ছে। তাসনিম বুঝতে পেরে বলে,,”ব্যান্ড কিংবা ক্লিপ দিয়ে চুলগুলো আটকিয়ে নিলে ভালো করতি লিয়া।”

লিয়া শান্ত গলায় বলে,,”হুম।কেনো যে তোমাদের মতো বেঁধে না এসে খোলা রাখলাম।এখন অসয্য লাগছে।”

“হাত খোঁপা করে রাখ না হয়।”

তুলির কথা শুনে লিয়া নাক মুখ সিঁটকে বলে,,”হাত খোঁপা করে রাখবো।বেড়াতে এসে খোঁপা করে রাখলে সবাই আমাকে দেখে কাজের বেটি ভাববে।”

তাসনিম কিয়ৎক্ষণ ভেবে বলে,,আমার ব্যাগের ভেতর ব্যান্ড আছে।বাট ব্যাগ তো গাড়িতেই রেখে আসছি। আচ্ছা তোরা ওয়েট কর আমি নিয়ে আসছি।বলে তাসনিম গাড়ির দিকে যেতে থাকে।

আলিফ ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে তাসনিম ধীর পায়ে হেঁটে এদিকেই আসছে। মুগ্ধ নয়নে তাসনিম এর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে।গাড়ির কাছে তাসনিম আসতেই আলিফ ফোনটা প্যান্টের পকেটে গুজতে গুজতে বলে,,”কিছু সমস্যা তাসনিম?না মানে ব্যাক করলে যে?স্যামথিং হ্যাপেনস?

তাসনিম দুদিকে হালকা মাথা নাড়িয়ে বলে,,”নাহ্ ভাইয়া।আসলে একটা ব্যান্ড দরকার ছিলো।আর ব্যাগটা তো গাড়িতেই তাই নিতে আসলাম আরকি।”

আলিফ ছোট করে বলে,,”ওহ্।তারপর দুই হাত পকেটে গুঁজে নিয়ে। শান্ত গলায় বলে,, পড়ন্ত বিকেল হালকা ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে পরিবেশ টা কিন্তু দারুন।কি বলো তুমি?”

তাসনিম ঘাড় নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর দেয়। আলিফ নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে,,”তোমার ভালো লাগছে এখানে এসে। বিরক্ত হচ্ছো না তো।”

“নাহ্ বিরক্ত হবো কেনো?ভালো লাগছে তো।বেড়ানো টা উপভোগ করছি।আর আমার ভালোই লাগছে।”

বাতাসে তাসনিমের ছোট ছোট কিছু চুল কপালের উপর আসছিলো। আলিফের ইচ্ছে করছিলো ফুঁ দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিতে। কিন্তু তাসনিম হয়তো খারাপ ভাবতে পারে বলে,আলিফ সাথে সাথেই ইচ্ছে টাকে ধমিয়ে ফেলে।আলিফ দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে তাসনিম এর চোখের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে,,”এই সুন্দর পরিবেশে তোমাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।”

আলিফ এর কথা শুনে তাসনিম এর কেমন জানি অস্বস্তি ফিল হতে থাকে।কোনো কিছু না বলে,গাড়ি থেকে ব্যাগ নিয়ে ব্যান্ড খুঁজতে থাকে।

আলিফ তাসনিম কে উদ্দেশ্য করে শান্ত গলায় ভাবলেশহীন ভাবে বলে,,”সবাই তো দুজন দুজন করে একসাথে ঘুরছে।আর আমি এদিকে একা একা আছি,ফোন কে বানিয়েছি সঙ্গী।”

আলিফ এর কথা শুনে তাসনিম এর বুঝতে বাকি থাকে না যে আলিফ ইনডাইরেক্টলি তাসনিম কে এখানে থাকতে বলছে ওর সাথে।ওদিকে লিয়া, তুলি একসাথে।তুষার আর রাহবার একসাথে আছে।আলিফই শুধু একা ছিলো।তাসনিম কিছু না বলেই চলে যেতে নিলে।আলিফ হালকা কেশে মৃদু আওয়াজে বলে,,
“কিছু মনে না করলে বলছি।ওখানে তো ওরা দুজন দুজন করে আছেই।তাই তুমি আপাতত আমার সাথে থাকতে পারো।আসলে একা একা বোর হচ্ছিলাম তো সেইজন্য।”

কার্টেসির খ্যাতিরে তাসনিম অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলে,,”আচ্ছা, ঠিক আছে।তবে আমি লিয়াকে ব্যান্ডটা দিয়ে আসছি।”

দূরে দাঁড়ানো রাহবার কে ডাকে।কাছে আসতেই আলিফ বলে,,”তাসনিম ব্যান্ড টা রাহবারের কাছে দিয়ে দাও, লিয়াকে দিয়ে দিবে।”

রাহবার আর তুষার ওখান থেকে যেতেই,আলিফ মুচকে হেসে বলে,,”চলো ওদিকটায় যাই।কাছ থেকে নদীর পানি দেখবে।”

লিয়া আর তুলি একদম নদীর তীরে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।লিয়া হাঁটু গেড়ে বসে এক হাত দিয়ে পানি তুলে ছিটাতে থাকে।

দুইটা ছেলে, একজনের নাম অভ্র বয়স পঁচিশ কি ছাব্বিশ হবে।দেখতে বেশ সুদর্শন।সাথে তার থেকে দুই বছরের ছোট হবে আরেকটি ছেলে। অভ্র নাক মুখ কুঁচকে বলে,, দুপুরে রওনা দিলে এতক্ষণ বাসায় চলে যেতাম। শুধু শুধু খালামনি জোর করে আটকালো।আর তুই নিয়ে আসলি এইখানে।কি দেখার আছে এখানে হ্যা।উপরে আকাশ নিচে পানি ছাড়া তো আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।এই পানি দেখতে যে এত মানুষ কিজন্য হুদাই ছুটে আসে এখানে, আমার মাথায় ধরছে না।আমার খুব বিরক্ত লাগছে,চল বাসায় যাই,আর এক সেকেন্ডও থাকবো না।”

অভ্র এর কথা শুনে সাথে থাকা ছেলেটি কপাল কুঁচকে বলে,,আরে ভাই একটু মন দিয়ে সব কিছু দেখার চেষ্টা করো তাহলে ভালো লাগবে।একটু কবি কবি ভাব আনো,আর ভাবো খোলা আকাশের নিচে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে এক সুন্দরী কিশোরী।”

খালাতো ভাইয়ের কথা শুনে অভ্র বিরক্ত হয়ে ডান দিকে তাকাতেই দৃষ্টি আটকিয়ে যায়।কফি কালারের গাউন পড়া বড় বড় চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।একটা মেয়ে তীরে বসে হাতে পানি নিয়ে ছিটাচ্ছে আর খিলখিলিয়ে হাসছে।এই দৃশ্য দেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে আর অস্ফুট স্বরে বলে, “হুর পরী”

লিয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,”এই আপু গেলো তো আসার নামই নেই।”

তুলি বলে,,”হুম আমিও তো তাই ভাবছি।”

লিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে সাইডে তাকাতেই দেখে দুইটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।তার মধ্যে একজন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। লিয়ার ইচ্ছে করছে ছেলেটির চোখের ভিতর নাগা মরিচ ভেঙ্গে দিতে।অসভ্য কোথাকার এইভাবে কেউ অচেনা কারো দিকে দৃষ্টি দেয় ম্যানারলেস কোথাকার।লিয়া তুলিকে বলে,,”চল গাড়িতে যাই।এখানে ভালো লাগছে না।”

অভ্র এর দিকে তাকিয়ে পাশে থাকা ছেলেটি বলে,,”ভাইয়া কোথায় আঁটকে গেলে।”

অভ্র ইশারা করে সামনে দেখায়।ছেলেটি সামনে তাকিয়ে দেখে বলে,, “বাহ্ মেয়েটি তো খুব সুন্দরী।”

অভ্র রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বলে,,”ভাবি বলবি।আর অন্য নজরে দেখবি না। রেসপেক্ট করবি,বড় ভাবি হলো মায়ের সমান বুঝলি‌।আর জানিসই তো মা জাতিকে সম্মানের চোখে দেখতে হয়। খোঁজ লাগিয়ে মেয়েটির ঠিকানা বের করবি দ্রুত।”

অভ্র আর ছেলেটি লিয়াদের পিছু নেয়।লিয়া বুঝতে পারছে ওদের কে ফলো করছে।লিয়া তুলিকে বলে জোরে চল। এরমধ্যে লিয়ার সামনে তুষার আর রাহবার আসতেই লিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। রাহবার লিয়ার হাতে ব্যান্ডটা ধরিয়ে দেয়।পিছনে থাকা ছেলেটি অভ্র কে বলে,,”ভাই ঐ মেয়েদের সাথে যে বড় ছেলেটাকে দেখছেন ও তো আমার বন্ধু হয়।এক সেমিস্টারে আমরা।”

অভ্র ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,”তাহলে গাধার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?গিয়ে জিগ্গেস কর মেয়েটা কি হয় ওর।আর শোন কফি কালারের গাউন পড়া মেয়েটার কথা কিন্তু বলছি।চুল বড় বড় ঐটার কথা বলছি।তোর দ্বারা তো আবার খালি উল্টা পাল্টা হয়।বি কেয়ারফুল এ ব্যাপারে।কারন এখানে আমার লাইফ জড়িয়ে আছে।”

ওরা দুজন জোরে হেঁটে গিয়ে তুষার বলে ডাক দেয়।ডাক শুনে তুষার পিছনে তাকাতেই ছেলেটি কাছে গিয়ে বলে,,”আরে তুষার এখানে যে।বেড়াতে এসেছিস বুঝি?”

তুষার এক কথায় বলে,,”হ্যা।”

ছেলেটি লিয়া আর তুলি কে দেখিয়ে বলে,,”এরা কি হয় তোর?”

“ওরা আমার ছোট বোন।”
ছেলেটি মাথা চুলকিয়ে বলে,,”ওহ্। অভ্র কে দেখিয়ে বলে,আমার এক মাত্র খালার একমাত্র সন্তান অভ্র চৌধুরী। মাস্টার্স করছে সাথে বাবার বিজনেসেও জয়েন করেছে।”

অভ্র এক হাত বাড়িয়ে দেয় তুষারের দিকে হালকা হেসে বলে,,হাই,আমি অভ্র চৌধুরী।”

লিয়ার কাছে মনে হচ্ছে। অভ্র এর সাথে থাকা ছেলেটি মনে হয় ঘটকালি করতে আসছে।আগ বাড়িয়ে একে বারে ডিটেইলস বলে দিলো।পরিবারে কয়জন,ছেলে কী করে সব বলে দিলো দুই লাইনে।লিয়া তুষার কে উদ্দেশ্য করে বলে,,”ভাইয়া আমরা গাড়িতে ওয়েট করছি।আপনি কথা বলে আসুন।”

তুষার স্থির ভাবে শান্ত গলায় বলে,,”ওকে। তোমরা গিয়ে বসো আমি আসছি।”

সন্ধ্যা পেড়িয়ে গিয়েছে,ওরা একটা বড় রেস্টুরেন্টে ঢোকে স্নাক এর জন্য।

[চলবে…ইন শা আল্লাহ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here