#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব১১
“অঝোরে ভারি বর্ষণ হচ্ছে।দূর আকাশে মেঘের প্রতিধ্বনি,ঝিরিঝিরি মৃদু ঠান্ডা বাতাস বইছে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। শুধু বৃষ্টির শব্দ ই শোনা যাচ্ছে। বৃষ্টির জলধারা যেনো ধরণীকে সিক্ত করতে মরিয়া হয়েছে।এমন পরিবেশে এক ছাতার নিচে অবস্থান করছে সপ্তদশী এক কিশোরী আর চব্বিশ বছরের এক যুবক।
লিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে জারিফ কে দেখে অবাক হয়।অবাকের সাথে এক আকাশ ভালো লাগার অনুভূতি হয় ছোট্ট হৃদয় কুঠরিতে।লিয়ার যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না ওর মাথার উপর ছাতা ধরা মানুষ টি অন্য কেউ নয়,সেই মানুষটি লিয়ার একান্তই ভালোলাগার, মন থেকে সব সময় যাকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুলতা কাজ করে সেই মানুষটি।প্রিয় মানুষ টি আজ,এমন মূহূর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই লিয়ার খুবই কাছাকাছি অবস্থান করছে।মৃদু ঠান্ডা বাতাসে লিয়ার শরীরটা শিহরিত হয়ে উঠল। শরীরের সাথে সাথে মনটাও ভালো লাগায় শিহরিত হলো।লিয়ার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।লিয়া স্থির ভাবে শান্ত দৃষ্টিতে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,” স স্যার আপনি?”
জারিফ লিয়ার খুবই কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে।অথচ একটুও টাস লাগেনি লিয়ার গাঁয়ের সাথে খুব সতর্কতার সহিত এক হাতে ছাতা ধরে আছে। জারিফ নিরেট চোখে তাকিয়ে গম্ভীরভাবে বলে,,”কোচিং এ এক্সাম ছিলো। কোচিং থেকে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ তোমাকে দেখতে পেলাম।তা এই সময় তুমি এখানে?”
“আমি আমার ফ্রেন্ড এর বাসা থেকে আসছিলাম।রিকশা না পেয়ে হাঁটতে থাকি, আবার এদিকে বৃষ্টি শুরু হলো।”
জারিফ ছোট করে ,,”ওহ্।বলে লিয়ার দিকে তাকাতেই ওর দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় লিয়ার দৃষ্টিতে।লিয়ার মায়াবী চোখ এর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করেই জারিফ কোথায় যেনো হারিয়ে যায়।তাকাতেই জারিফের হৃদয়ে নতুন অনুভূতির সৃষ্টি হলো।যেনো লিয়ার মুখখানি শ্বেত শুভ্রতার নিষ্পাপ ছবি হয়ে জারিফ এর হৃদয়ে ধরা দিলো।জারিফ এর হৃদপিন্ডের চার প্রকোষ্ঠ সেই শুভ্রতার কারনে বিশুদ্ধরক্তের স্পন্দন গুলো হার্টবিট আকারে ধ্বনিত হতে লাগলো যে,বিধাতার সৃষ্টি যে এতো নিপুণ আজ তোমাকেই দেখে তা বুঝলাম। কিয়ৎক্ষন পরেই জারিফ দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।অন্যদিকে দৃষ্টি দিয়ে লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে ভাবে,এসব চিন্তা আমার মাঝে কি করে আসছে?জারিফ এর মন লিয়াকে নিয়ে ভাবছে,এই কথাটা জারিফ মানতে নারাজ।জারিফ এর মস্তিষ্ক মনের উল্টো দিকে চলছে।জারিফ গম্ভীরভাবেই ঠোঁট আওড়িয়ে বলে,,
“বৃষ্টি তো খুব জোরে পড়ছে।ভিজে যাচ্ছো তো।একটা দোকানের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে বলে,,আপাতত ওখানে চলো। বৃষ্টি টা একটু কমলেই রিকশা বা অটো করে বাসায় যেয়ো কেমন।”
লিয়ার মনে হচ্ছে সময় টা যদি এখানেই থেমে যেতো,তাহলে বোধহয় ভালো হতো।লিয়া নির্বিকার ভাবে শান্ত গলায় বলে,,”ঠিক আছে।”
একটা দোকানের ছাউনির নিচে গিয়ে দাঁড়ায় ওরা দুজনে।জারিফ দোকানদার কে উদ্দেশ্য করে বলে,,”ভাই কিছু মনে না করলে বলছি,বসার জন্য কিছু হবে?”
দোকানদার আড়চোখে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে একটা টুল এগিয়ে দেয় জারিফ এর দিকে।জারিফ টুল টা নিয়ে দোকানদারকে বলে,,”থ্যাংকস ভাই।”
দোকানদার মুখটা গম্ভীর করেই রাখে।ফেস দেখে বোঝা যায় উনি বেশ বিরক্তই।আসলে মানুষের অবস্থা এখন এরকম বিপদের সময় কেউ কাউকে হেল্প করবে না,বিপদে পড়লে হেল্প করা বাদ দিয়ে আরো মজা নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।একজন লোক যদি চলাচল করতে গিয়ে হঠাৎ করে পড়ে যায়,তাকে নিয়ে হাজার জন হি হি হি করে হাসবে তবুও তোলার জন্য সহজে কেউ হাতটা বাড়িয়ে দিবে না।এই ঝুম বৃষ্টির সময় একজন আশ্রয় নিতেই পারে এতে বিরক্ত হওয়ার কি আছে?
জারিফ টুলটা লিয়ার পাশে দিয়ে বলে,,”বসো।বৃষ্টি তো থামার নামই নিচ্ছে না।আর একটা অটোও দেখতে পাচ্ছি না,যে অটো ডেকে তোমাকে তুলে দিবো।”
লিয়ার প্রতি জারিফ এর এই ছোট কেয়ার গুলো লিয়ার খুব ভালো লাগছিলো।লিয়ার মনে প্রশান্তি বয়ে যায় যে,জারিফ ও’কে নিয়ে ভাবছে। প্রিয় মানুষ টার কাছ থেকে পাওয়া এতটুকু কেয়ার যে কারোরই মন ভালো করে দিতে সক্ষম।এইতো কিছুক্ষণ আগে লিয়া যখন রিকশা পাচ্ছিলো না।আবার বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো।সেই সময় লিয়ার নিজের উপর রাগের পারদ টা তরতর করে সর্বোচ্চ হয়েছিলো।যে বৃষ্টিকে খানিক আগে মনে মনে বকেছে,অথচ সেই বৃষ্টি কে এখন অসংখ্য ধন্যবাদ দিচ্ছে।এই বৃষ্টিই লিয়ার সব থেকে বড় উপকার করেছে। বৃষ্টির কারনেই আজ না চাইতেই প্রিয় মানুষটার কেয়ার লিয়ার কপালে জুটছে।
লিয়া টুলে বসতে গিয়ে আবার কিছু একটা ভেবে না বসে বলে,,”স্যার আপনি বসুন।”
জারিফ এক হাত দিয়ে চুলগুলো ঝেরে নিয়ে শান্ত গলায় বলে,,”সমস্যা নেই তুমি বসো।”
লিয়া ভালোভাবেই বুঝতে পারে লিয়াকে দাড় করিয়ে রেখে জারিফ বসবে না।তাই আর লিয়া কথা না বাড়িয়ে লিয়া টুলের উপর বসে পড়ে।জারিফ একটা সিমেন্টের খুঁটির সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রল করতে থাকে।
লিয়া আড়চোখে জারিফ কে দেখতে থাকে।আর মনে মনে ভাবে,, গল্পে, সিনেমায় দেখেছি।নায়ক আর নায়িকা কখনো নির্জন জায়গায় একা একা থাকলে এলাকাবাসী ভুলভাল বুঝে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়।এখন গল্প সিনেমার ঐ ঘটনাটি যদি আমার আর জারিফ স্যারের সাথে ঘটতো,তাহলে নিজেকে আমি লাকি মনে করতাম।আর লোকজন বিয়ে দেওয়ার কথা বলার সাথে সাথেই আমি ফুরফুরে মেজাজে নাচতে নাচতে বিয়েটা করতাম। কিন্তু এসব কিছু কি আর বাস্তবে সম্ভব নাকি? গল্প সিনেমায়ই ওসব কাহিনী মানায় রিয়েল লাইফে নয়!এসব ভেবে লিয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে এক হাত দিয়ে নিজের মাথায় হালকা করে একটা চাটি দিয়ে মনে মনে আওড়ায়,,লিয়া দিন দিন তোর মাথা একেবারে খা’রাপ হয়ে যাচ্ছে। উল্টা পাল্টা চিন্তা ভর করছে তোর মাথায়। তবে কেনো জানি উদ্ভট চিন্তা ভাবনা করতে আমার মন্দ লাগে না বরঞ্চ আমার ভালই লাগে।এসব ভেবে লিয়া নিঃশব্দে হেসে ফেলে।
জারিফ লিয়ার দিকে তাকাতেই লিয়ার হাসি মুখটা দেখতে পায়।জারিফের মন চাইছে ঐ মায়াবী চোখ, ঠোঁটের কোণে হাঁসি লেগে থাকা ইন্নোসেন্ট ফেস টার দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে। কিন্তু জারিফ এর মস্তিষ্ক মন এর সাথে চরম বিরোধিতা করে বসে। মস্তিষ্ক আজ মনের এনিমি হয়ে উঠে।মস্তিষ্ক জানান দেয় জারিফ তুই তোর নৈতিকতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছিস।তোর নৈতিকতা আগে এমন ছিলো না। কোনো মেয়ের দিকে একদৃষ্টে তাকানো তাও আবার মেয়েটি তোর ছাত্রী।জারিফ ঠোঁট গোল করে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে রাস্তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে মনে মনে আওড়ায়,,এসব কি হচ্ছে আমার সাথে?আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।না চাওয়া সত্বেও ঘুরে ফিরে আমার দৃষ্টি কেনো বারংবার মায়াবী ফেসটাতে আটকিয়ে যাচ্ছে,স্ট্রেইন্জ।
ভেজা সন্ধ্যা অঝোর বৃষ্টি
দূর আকাশে মেঘের প্রতিধ্বনি
বাদলে ঘিরেছে আকাশ বইছে বাতাস
আড়ালে দাঁড়িয়ে তুমি আর আমি
হয়নি বলা কোনো কথা
শুধু হয়েছে অনুভূতি২
হালকা আঁধার দিচ্ছে ঘিরে
আবছা আলো নিচ্ছে ছুঁয়ে
অল্প করে হোক না শুরু
ভালোবাসা এখনো ভীরু
হয়নি বলা কোনো কথা
হয়েছে শুধু অনুভূতি২
ডাকছে সময় পিছু
বলবে কি মন কিছু?
নিবিড়ে এই ভালোবাসা
জড়ালো কিছু আশা
হয়নি বলা কোনো কথা
হয়েছে শুধু অনুভূতি২
ভেজা সন্ধ্যা অঝোর বৃষ্টি
দূর আকাশে মেঘের প্রতিধ্বনি
বাদলে ঘিরেছে আকাশ বইছে বাতাস
আড়ালে দাঁড়িয়ে তুমি আর আমি।
প্রায় আধা ঘন্টা পর বৃষ্টি একটু কমলো। এখনো ঝিরিঝিরি হালকা বৃষ্টি পড়ছিলো।জারিফ ফোন টা পকেটে পুরে লিয়াকে উদেশ্য করে বলে,,”বৃষ্টি মনে হয় আজ একেবারে না থামার প্ল্যান নিয়ে এসেছে।তুমি এখানে বসো আমি একটু এগিয়ে গিয়ে একটা রিকশা নিয়ে আসি। সামনে মোড়ের পাশে রিকশা পাবো মে বি।এভাবে এখানে বসে থাকলে তো সময় চলে যাবে।আর তোমার বাসার লোক তোমাকে নিয়ে টেনশন করতে পারে।”
লিয়ার ইচ্ছে করছিলো না এখান থেকে যেতে।মনে হচ্ছিলো সময়টা এইভাবে এইখানে আজ থেমে থাকুক।কি দরকার ভালো সময় গুলো বয়ে যাওয়ার?প্রিয় মানুষটার খুব কাছে তো অনন্ত থাকা যাচ্ছে।মিনিট পাঁচেক এর মধ্যেই জারিফ একটা রিকশা নিয়ে আসে।রাস্তার মাঝে যেখানে পানি জমে আছে সেই জায়গায় লিয়া ইচ্ছে করে পা দিয়ে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ করে যেয়ে রিকশাতে উঠে বসে।লিয়ার এইভাবে যাওয়া দেখে জারিফের খুব হাঁসি পায়।হাসিটা কে চেপে রাখে।জারিফ রিকশার ভাড়া দিতে গেলে লিয়া ঠোঁট প্রসারিত করে মৃদু কন্ঠে বলে,,”স্যার লাগবে না।আমি দিয়ে দেবো।”
জারিফ শান্ত কন্ঠে বলে,,”সমস্যা নেই। রিকশাওয়ালা কে উদ্দেশ্য করে বলে,,চাচা দেখে শুনে নিয়ে যাবেন।আর হুড টা তুলে দিন।”
বৃষ্টির পানি পড়ে বেশ চকচকে দেখাচ্ছে পিচের রাস্তাটা।জারিফ টানা পা ফেলে যেতে থাকে।গুড়িগুড়ি হালকা বৃষ্টি হচ্ছে এখনো।জারিফ এর মনটা বেশ ফুরফুরে আছে।অন্য সময় হলে এই বৃষ্টির সময় এভাবে চলাচল করতে বেশ বিরক্ত হতো।তবে আজ কেনো জানি মোটেও বিরক্ত হচ্ছে না, বরঞ্চ এই ঝিরিঝিরি বাতাসে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে পথ চলতে খুব ভালো লাগছে জারিফের।
সন্ধ্যার আগেই লিয়া বাসায় পৌঁছায়।বাসায় গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নেয় প্লাজু আর কুর্তি পড়ে নেয়। বৃষ্টির পানি কিছুটা পড়েছিলো মাথায়। চুলগুলো হালকা ভেজা থাকায়,টাওয়েল দিয়ে চুলগুলো মুছতে থাকে।রাজিয়া সুলতানা লিয়ার রুমে এসে গলা ঝেড়ে বলতে থাকে,,
“এই বৃষ্টির মধ্যে এভাবে না এসে আমার কাছে ফোন করে বলতি।আমি ড্রাইভার কে পাঠিয়ে দিতাম।আমি ভেবেছিলাম এই বৃষ্টির মধ্যে ভিজে পুরে আসবি না।তাই তোর ড্রাইভার আঙ্কেল কে ফোনও করেছিলাম অরিনদের বাসা থেকে তোকে যেনো নিয়ে আসে। এরমধ্যেই তুই চলে আসলি।”
লিয়া টাওয়েল টা ওর আম্মুর হাতে দিয়ে ইশারায় চুলগুলো মুছে দিতে বলে।তারপর মৃদু আওয়াজে বলে,,”সমস্যা নেই,চলে তো এসেছি অলরেডি।”
“হুম এসেছিস তো আধ ভেজা হয়ে।এখন তো ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা আছে।”
সন্ধ্যার পর জারিফ টেবিলে বসে পড়ছিলো।আজ কেমন জানি পড়াতে মন বসতে চাইছে না ঠিকমতো। মনের মধ্যে একটা টেনশন হচ্ছে লিয়া ঠিকমতো বাসায় পৌঁছায়ছে কিনা? জানতে খুব ইচ্ছে করছে। বৃষ্টির মধ্যে একটা মেয়ে সহিহ সালামতে বাসায় গিয়েছে কিনা এটা জানা একজন দায়িত্ববান মানুষের মধ্যে পড়ে।তবে জারিফ দ্বিধায় পড়েছে ফোন দিয়ে শুনবে কি? শুনবে না? অবশেষে দ্বিধা কে দূরে ঠেলে দিয়ে জারিফ লিয়ার নম্বরে কল দিয়ে বসে।
লিয়া ম্যাথ করছিলো এমন সময় টেবিলের উপর থাকা ফোনটা কেঁপে উঠে।ফোনের স্ক্রিনে জারিফ এর নামটা জ্বলজ্বল করে জ্বলতে দেখে লিয়ার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।লিয়া নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না যে,জারিফ ফোন দিয়েছে।লিয়া দুই হাত দিয়ে চোখ ঢলে নিয়ে আবার দেখে শিওর হয় যে,হুম স্বপ্ন নয় সত্যিই জারিফ কল দিয়েছে।লিয়া ভাবতে পারছিলো না যে, স্বয়ং জারিফ নিজ থেকে কল দিয়েছে।লিয়া খুব এক্সাইটেড হয়ে পড়ে।ভাবে স্যার কি জন্য হঠাৎ ফোন দিয়েছে।লিয়ার এত সব ভাবার মাঝে রিং হয়ে কল কে’টে যায়।লিয়ার এখন ইচ্ছে করছে দুই হাতে নিজের চুলগুলো টেনে ছিঁড়তে।লিয়া বিড়বিড় করে বলে,,ইশ কে বলেছিলো এতো সব ভাবতে?গেলো তো কলটা কে’টে।ধ্যাত ভালো লাগে না।কেনো যে অযথা এতো পন্ডিতি করতে যাই।পন্ডিতের মতো ভাবতে গিয়েই তো সব স্পয়েল করে দিলাম।স্যার কি আর দ্বিতীয় বার কল দেবে?আর কিজন্যই বা কল দিয়েছিলো?
লিয়া লাজুক হেসে ভাবে,,”স্যার মনে হয় আমাকে প্রপোজ করার জন্য ফোন দিয়েছিলো।এক আঙ্গুল মুখে দিয়ে ভাবে,স্যার এখন যদি ফোনে প্রপোজ করে তাহলে সাথে সাথেই কি আমি প্রোপোজাল টা আ্যকসেপট করে নিবো।না একটু এটিটিউট দেখিয়ে বলবো,,আমার একটু সময় চাই।এরকম করলেই মনে হয় ভালো হবে। নাচতে নাচতে রাজি হলে,স্যার আমাকে ঐসব ছেচড়া গাঁয়ে পড়া কোয়ালিটির মেয়ে ভাবতে পারে।সো একটু এটিটিউট দেখানো যেতেই পারে।
লিয়া ফোন রিসিভ করে নাই, সেইজন্য জারিফের টেনশন বাড়তে থাকে। জারিফ ভাবে কোনো বিপদ আপদ হয়নি তো, সেইজন্য ফোনটা রিসিভ করতে পারেনি। ঠিকঠাক বাসায় পৌছায়ছে তো? জারিফ চিন্তিত হয়েই দ্বিতীয় বার কল করে।
এবার কল আসার সাথে সাথেই লিয়া রিসিভ করে সালাম দেয়।লিয়ার কন্ঠস্বর শুনে জারিফের মনের মাঝে প্রশান্তি বয়ে যায়।তারপরেও উদ্বিগ্ন গলায় বলে,,”লিয়া তুমি ভালো ভাবে বাসায় গিয়েছো তো।আইমিন কোনো প্রবলেম হয়নি তো?”
লিয়া শান্ত গলায় জবাব দেয়,,”না স্যার কোনো অসুবিধা হয়নি।আমি ভালো ভাবেই বাসায় আসছি।”
জারিফ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে অস্ফুট স্বরে বলে,,”যাক টেনশন মুক্ত হলাম।”
জারিফের কথা শুনে লিয়া স্মিত হেসে মৃদু আওয়াজে বলে,,”টেনশন মানে?আপনি আমাকে নিয়ে টেনশন করছিলেন।”
লিয়ার কথা শুনে জারিফ নড়েচড়ে বসে জড়তা নিয়ে বলে,,”আসলে বৃষ্টির মধ্যে একা একা রিকশায় ছিলে তাই একটু টেনশন হচ্ছিলো।আর তুমি তো নরমালি একা একা কোথাও যাওনা।”
লিয়া ঠোঁট আওড়ায়ে অস্ফুট স্বরে বলে,,”থ্যাংকস আ লট স্যার।সেই সময় আমাকে হেল্প করার জন্য আর এখন আমাকে নিয়ে ভাবার জন্য।”
জারিফ দ্রুত বলে,,
“ওকে,ফাইন। তোমার তো বাসায় যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো মে বি।তাই ভাবলাম জেনে নেই বাসায় পৌছায়েছো কিনা।”
লিয়া কে নিয়ে জারিফ এতটা ভেবেছে।এটা দেখে লিয়ার ভালো লাগছে।খুশিতে তো লিয়ার কালা চশমা গানে ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে।
একটু থেমে ফোনের ওপাশ থেকে গমগমে কন্ঠে জারিফ,,আচ্ছা রাখছি।বলে ফোন কে’টে দেয়।
লিয়া ফোনটা নামিয়ে রেখে বিড়বিড় করে বলে,,ভেবেছিলাম স্যার প্রপোজ করার জন্য ফোন দিয়েছে।সেই ভাবনা আমার ভাবনাই রয়ে গেলো।তবে আমাকে নিয়ে যে আমার মাস্টার মশাই এতটা চিন্তা করেছে।এটাই বা কম কিসের।লিয়া কলম কামড়ে ধরে বলে,,”এখন আমার মনটা আমার হাতে নেই।তাই পড়ালেখায় আর মন বসবে না।তারপর বই খাতা গুলো গুছিয়ে রেখে। গুনগুন করে গাইতে গাইতে রুম থেকে পা পাড়ায় ড্রয়িং রুমের দিকে,লিয়া ওর রুমের দরজা থেকে দুই পা আসতেই থমকে দাঁড়ায়। এই মুহূর্তে যা নিজ কানে শুনলো। তা শুনে ওর মাথায় যেনো বাজ পড়ল।
সোফায় বসে এনামুল খাঁন পাশে বসা রাজিয়া সুলতানা কে বলছিলো,,”আজকে অফিসে একজন ভদ্র লোক আর সাথে উনার একমাত্র ছেলে ছিলো।লিয়ার সাথে ভদ্রলোকের ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছিলো।”
বিয়ের প্রস্তাব এই কথাটা শুনে রাজিয়া সুলতানা নিজেও বেশ অবাক হন। আশ্চর্য হয়ে ভরাট গলায় বলেন,,”বিয়ের প্রস্তাব মানে।তা তুমি কি বলেছো।এখনই মেয়ের বিয়ে নিয়ে চিন্তা করেছো নাকি?এত অল্প বয়সেই এরকম চিন্তা তুমি মাথায় আনলে কি করে?”
এনামুল খাঁন ওনার স্ত্রীর কথা শুনে বেশ বিরক্ত হন। বিরক্তিকর ফেস নিয়ে গম্ভীরতা বজায় রেখে যথেষ্ট শান্ত ভাবে বলেন,,”এই হলো মেয়ে মানুষ।সব সময় এক ধাপ এগিয়ে বোঝা তাদের স্বভাব।আমি কি একবারও বলেছি যে, এখনই মেয়ের বিয়ে দেবো।ওনারা আমাকে বললো,আমি কিছুসময় ভেবে ধীর সুস্থে ঠান্ডা মস্তিষ্কে বললাম,দেখুন আমার মেয়ে মাত্র একাদশ শ্রেণীতে পড়ে।তাছাড়াও আমাদের ফ্যামেলিতে বড় দুইটা মেয়ে আছে।বড় মেয়েদের বিয়ের আগেই কোনো ভাবেই আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবো না।”
এনামুল খাঁন এর শেষের কথা শুনে রাজিয়া সুলতানা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।দরজার পাশে দাঁড়িয়ে লিয়া কান খাঁড়া করে সব কথা শুনছিলো।শেষের কথা শুনে লিয়া নিজেও প্রাণ ফিরে পায় এমন অবস্থা।লিয়া বুক ভরে জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস নেয়।লিয়ার মাথার উপর থেকে যেনো চিন্তার পাহাড় টা দূর হয়ে গেলো।তবে এই দূর হওয়াটা বুঝি ক্ষণিকের জন্য ছিলো। বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।
এনামুল খাঁন গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন,,”আমার কথা শুনে ভদ্রলোক বলেন, সমস্যা নেই ওনারা ততদিন ওয়েট করবেন।লিয়াকে দেখে ছেলেটির নাকি খুব পছন্দ হয়েছে।আর এখন না হয় আপাতত এনগেজ করে রাখি বলেছেন।আসলে ছেলেটাকে দেখে আর কথা শুনে মনে হলো বেশ ভদ্র,বিনয়ি, শিক্ষিত বলাবাহুল্য সুদর্শন ও।আমাদের লিয়ার সাথে মানাবে ভালো। ভদ্রলোক নিজেও বেশ প্রভাবশালী বিজনেসম্যান।ফ্যামেলিতে মানুষ জনও কম আছে,বাড়তি কোনো ঝুড় ঝামেলা হওয়ার চান্সও কম।তাই এতো ভালো প্রস্তাব টা আমি ফিরিয়ে দিতে পারলাম না।”
রাজিয়া সুলতানা বিস্ফোরিত নয়নে তাকান ওনার স্বামীর দিকে।উনি ভাবেন এত বড় একটা সিদ্ধান্ত একা একাই নিয়ে নিলেন।লিয়ার মতামত নেওয়ার এতটুকু প্রয়োজন বোধ করলেন না।যেখানে সামান্য একটা পোশাক কেনার ক্ষেত্রে লিয়ার থেকে কয়েকবার শুনে নেন যে,কোন কালারের কিরকম তা আনবো।আরে পোশাক তো তাও একটা গেলে আরেকটা আসে চেন্জ আ্যবেল জিনিষের ক্ষেত্রে আমরা এতটা এলার্ট হই।আর এখানে যেটা সারা জীবনের ব্যাপার, ইচ্ছে হলেই জামা কাপড়ের মতো বদলানো যাবে না।সেই ক্ষেত্রে কিভাবে এত বড় একটা মেয়ের মতামত না শুনেই উনি কথা দিয়ে আসলেন,রাজিয়া সুলতানার মাথায় ধরছে না। মেয়েরও তো নিজস্ব ভালো লাগা মন্দ লাগা আছে।মেয়ের চাওয়া পাওয়া টাকেই আগে প্রায়োরিটি দেওয়া ঠিক না? লিয়ার কাছ থেকে একবার অনন্ত শুনে নিয়ে কথা দিতে পারতো।
লিয়ার মনের মধ্যে কাল বৈশাখীর তান্ডব শুরু হয়েছে।তান্ডব শেষে অঝর ধারায় বর্ষণ নামবে লিয়া নিজেও বুঝতে পারছে।আর এই বর্ষণ আদৌ থামবে বলে লিয়ার মনে হয় না।লিয়া রুমে ব্যাক করার জন্য পা বাড়ায়।অথচ লিয়ার পা যেনো উঠতেই চাইছে না। এতটুকু শক্তি পাচ্ছে না।লিয়ার পুরো শরীর যেনো অসাড় হয়ে আসছে।
রাজিয়া সুলতানার ওনার স্বামীর উপর রাগটা তরতর করে বাড়তে থাকে।উনি প্রচন্ড ক্রুদ্ধ হন এনামুল খানের উপর।তবে নিজেকে স্বাভাবিক করে যথাযথ স্থির হয়ে শান্ত গলায় বলেন,,”তা তুমি মেয়ের থেকে না শুনেই।কথা দিয়ে আসলে এনগেজমেন্টের।”
এনামুল খাঁন হালকা কেশে বলেন,,”আসলে ভদ্রলোক এতো করে বললেন যে,আমি মুখের উপর না করতে পারলাম না।তবে বলেছি এখন এনগেজমেন্ট এসব কিছু করতে পারবো না।এখন এসব কিছু করলে আমার মেয়ের পড়াশোনার উপর প্রভাব পড়তে পারে। তাই এই মুহূর্তে এসব কিছু নিয়ে আমি ভাবতে চাচ্ছি না।আমার কথা শুনে ভদ্রলোক বললেন,সমস্যা নেই আপনার বাড়ির বড় মেয়েদের বিয়ের পরই,আমরা এদিকে আগাবো।ততদিনে লিয়ারও পড়াশোনা এগিয়ে যাবে।আর এদিকে আমার ছেলেও ওর ক্যারিয়ার টা গঠন করে নিক। অভ্র সবে মাত্রই আমার বিজনেস এ জয়েন করেছে। আমরা ওয়েট করবো।তবে আপনি কথা দিন,পরে কিন্তু আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না।”
এনামুল খাঁন থেমে একটু নড়েচড়ে বসে আবার বলেন,,”অবশেষে আমি ভেবে নিয়ে বলি,ইন শা আল্লাহ্।আমি ট্রাই করবো আমার কথা রাখতে।”
এনামুল খাঁন ডিটেইলসে সব বলেন রাজিয়া সুলতানার কাছে।ছেলেটির বাড়ি ময়মনসিংহে।লিয়াকে প্রথম দেখেছিলো যমুনা নদীর তীরে।বাড়িতে যাওয়ার পর লিয়ারা যেদিন যমুনা নদীতে বেড়াতে গিয়েছিলো সেই সময় লিয়াকে দেখেছিলো।
লিয়া রুমে গিয়ে সারা রুম জুড়ে পায়চারি করতে থাকে আর বলে,,ঐ হ্যাদারাম টা বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। উফ্!সেদিন বেড়াতে যাওয়াটা যে এইভাবে কাল হয়ে দাঁড়াবে তা ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি।এখন মনে হচ্ছে সেদিন ঘুরতে যাওয়াটা কোনো মতেই ঠিক হয়নি। আব্বু একজন কে কথা দিয়েছে মানে তো জান প্রাণ দিয়ে সেই কথা রাখবে।কথা রাখতে গিয়ে দরকার পড়লে নিজের মেয়েকে ব’লি দিতে দুইবার ভাববে না।এটা ভেবে লিয়া ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে ঠোঁট আওড়ায়,,একজনের থেকে প্রেমের প্রস্তাবের আশায় থাকতে থাকতে আমার চুল পেকে যাবে,তাও আসবে কিনা সন্দেহ।আরেক উজবুক কই থেকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। ওহ্!গড এতো প্যারা আমি আর নিতে পারছি না।কেবলই আজকে একটু আশার আলো দেখতে পাচ্ছিলাম আর অমনি হিমালয় পর্বত সমান আরেক দুশ্চিন্তা আমাকে গ্রাস করতে হাজির হলো।
[চলবে..ইন শা আল্লাহ]
(সুপ্রিয় পাঠক-পাঠিকা রেসপন্স টেসপন্স নাই,তাই ভাবছি আমি এখন দৌড়ে 🏃আগায়ে যাবো।কোনো উজবুক টুজবুক এর সাথে লিয়ার বিয়ে দিয়ে আন্ডা বাচ্চা কাচ্চা ফুটিয়ে দ্রুত বিদায় নেবো🥱।কি বলেন সবাই?ফান করলাম 🤗 ধন্যবাদ সবাইকে।)