শুধু_তোমাকেই_চাই #শারমিন_হোসেন #পর্ব০৬

0
629

#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব০৬

“এটা কি তুমি বাংলা সিনেমা পেয়েছো যে মন বসে না পড়ার টেবিলে।এরকম হলে আমি আন্টিকে বলি তোমার জন্য টিচার না রেখে গসিপ করার জন্য একটা গসিপপার রাখুক।আর আমাকে এখানে তোমার সাথে গল্প করার জন্য ঠিক করা হয়নি, মাইন্ড ইট।একদমে কথা গুলো বলে জারিফ থামে।”

এই তো একটু আগে লিয়া বলেছিলো,,”স্যার আজকে না পড়তে ইচ্ছে করছে না। তাই আজকে পড়া বাদ দিয়ে কিছু গল্প করুন।”

লিয়ার কথাটা শোনার সাথে সাথেই জারিফ একদমে কথাগুলো বলে।লিয়া আহত দৃষ্টিতে জারিফের মুখ পানে তাকায়, কিয়ৎক্ষন পরেই দৃষ্টি নিচু করে নেয়।লিয়া পুনরায় কোনো কথা না বলে বই মেলে ধরে জারিফ এর সামনে।জারিফ ব্যাকা হেসে বলে,,”গুড গার্ল।”

ওদিকে লিয়া মনে মনে বলে,,” গার্ল এর সাথে ফ্রেন্ড টা এ্যড করা যায় না?কবে আসবে আমার চাওয়ার সেই পরম কাংখিত দিন।আপনার পাশাপাশি হাতে হাত ধরে চলবো।শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের উপর খালি পায়ে আপনি আর আমি হেঁটে চলবো।এক রিকশায় দুজন পাশাপাশি বসে সারা শহর ভ্রমণ করবো। বৃষ্টিতে দুজন একসাথে ভিজব।জোসনা রাতে দুজনে খোলা আকাশের নিচে বসে চন্দ্র বিলাস করবো আর প্রেমালাপ করবো।রুপালি চাঁদের জোসনায় স্নান করবো। চাঁদের রুপালি আলো ঠিকরে পড়বে আমাদের মুখ অবয়বে।দুজন দুজনের দিকে মুগ্ধ নয়নে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রবো।আদৌ কি আমার এই ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্ন গুলো পূরণ হবে??পূরণ হওয়ার কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত আমি আপনার মধ্যে দেখতে পাচ্ছি না।আপনি আমার দূর্বলতা কেনো বুঝতে পারছেন না?”

সুন্দর ঝলমলে বিকেল।এই ঝলমলে বিকেলের মতই জারিফের মনটাও ঝলমল আছে।জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনের সামনে দিয়ে ফুরফুরে মেজাজে জারিফ সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে হাটছিলো।সেই সময় রোহান লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে হলে যাওয়ার সময় হঠাৎ জারিফ কে দেখে এগিয়ে গিয়ে বলে,,
“দোস্ত কি খবর?দেখে তো মনে হচ্ছে আজ ফুরফুরে মেজাজে আছিস।তা ছাত্রী কি কিস টিস করলো নাকি?”

রোহানের কথা শুনে জারিফ বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে বলে,,”কি যা’তা বাজে বকছিস।মাথা ঠিক আছে তোর?”

“আমার মাথা অলওয়েজ ই ঠিক থাকে।বেঠিকের কিছু নেই ‌তবে একটু আগে যা দেখলাম। সিঙ্গেল মানুষ তো তাই একটু বেশিই শরম পেয়েছি।”

জারিফ কপাল কুঁচকে ভ্রু নাচিয়ে বলে,,”কি এমন দেখলি শুনি।”

“এই তো লাইব্রেরী থেকে আসতে গিয়ে দেখি এক চিপায় দাঁড়িয়ে টুনা আর টুনি লিপ কিস করতে ব্যাস্ত।”

টুনা টুনি বলতে একটা ছেলে আর মেয়েকে বুঝিয়েছে তা জারিফ বুঝতে পারছে।জারিফ নিঃশব্দে হেসে বলে,,”তা তুই কি উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখতে গিয়েছিলি?”

“আরে আমার খেয়ে কাজ নেই।এসব ফালতু জিনিস দেখার জন্য টাইম ওয়েস্ট করবো।তবে দোস্ত দেখার পর থেকে একটা কিউরিওসিটি কাজ করছে।”

জারিফ বলে,,”কি?কিস করার কিউরিওসিটি কাজ করছে বুঝি?

জারিফের কথা শুনে রোহান হাত দিয়ে মশা তাড়ানোর ভঙ্গিতে হাত নাড়িয়ে বলে,,”আরে নাহ্।আমার জানতে ইচ্ছে করছে টেস্ট টা কিরকম।তুই কি জানিস টেস্ট টা কিরকম?”

রোহানের কথা শুনে হঠাৎ করেই জারিফ এর মনে ভেসে উঠে সেদিনের দৃশ্য।লিয়ার সাথে প্রথম দেখা হওয়ার এক্সিডেন্ট এর মূহুর্তের কথা।জারিফ হুট করেই মৃদু কন্ঠে বলে ফেলে,,”জানিনা। স্থায়িত্বকালটা খুবই কম ছিলো বড় জোর দুই সেকেন্ড হবে,তাই টেস্ট টা বুঝে উঠতে পারিনি।”

রোহান ড্যাবড্যাব করে জারিফের দিকে তাকিয়ে বলে,,”কি বললি?আবার বল বেটা বুঝতে পারলাম না।কিসের স্থায়িত্বকাল ?”

রোহানের কথায় জারিফের টনক নড়ে।শুকনো ঢোক গিলে নিয়ে বলে,,”ক ক কই কিছু নাতো।এমনি মজা করে বললাম আরকি।”

রোহান ব্যাকা চোখে জারিফ এর দিকে তাকিয়ে বলে,, “তুই আগে বল তোর ছাত্রী দেখতে কেমন?”

জারিফ মনে মনে বলে,,আবার এখন ছাত্রী নিয়ে পড়লো।তারপর গলা ঝেড়ে বলতে থাকে,,
“বাদ দে এসব।আমি কি লাইন করার জন্য যাই নাকি?
তুই তো গবেষণা করে বের হয়ে আসলি।লেখা পড়ায় মন দে এসব আলতু ফালতু কথা রেখে।”

“তুমি তো শা’লা একটা জড় পদার্থ।জীবনে প্রেম প্রীতি ভালোবাসা ছাড়া কি হয়। এগুলোই হলো জীবনের অংশ।মামা তুই ভালো ছাত্র প্লাস দেখতে সুদর্শন ।তোকে নিয়ে কত মেয়ে স্বপ্ন দেখছে।তুই শা’লা কারো অনুভূতি বুঝিস না।”

“থামবি তুই।কখন থেকে বা”জে বকবক করেই চলছিস।”

“তা এই সময় এখানে।দুপুরে ফোন করে আসার কথা বললাম তখন বললি ক্যান্টনমেন্টে পড়াতে যাবি।আর এখন আসলি যে।”

জারিফ এক হাত পকেটে গুঁজে অন্যহাত দিয়ে চুলগুলো ব্যাক ব্রাশ করে মৃদু স্বরে বলতে থাকে,,”পড়িয়েই তো আসলাম।আর তোর কাছে এইমাত্রই ফোন করতে যাবো আর তখনি তোর দেখা পেলাম।”

পরেরদিন সকালে,,,
জাহানারা বেগম রান্না করছেন আর জারা সবজি কাটছে।গলা ঝেড়ে জাহানারা বেগম বলেন,,”বেলা আটটা বাজতে চললো জেরিন এখনো ঘুম থেকে উঠলোই না।জারা যাতো জেরিন কে ডেকে তোল।ঘুম থেকে উঠে তো আবার ব্রাশ মুখে নিয়ে আধা ঘন্টা সং সেজে থাকবে।ওদিকে কলেজে যাওয়ার সময় হয়ে যাবে তখন খাওয়ার সময় তাড়াহুড়া করবে।”

জারা বিরক্ত হয়ে বলে,, “আম্মু আমি ডাকলে তো আমার সাথে আবার ঝগড়া শুরু করে দিবে তোমার মেয়ে। তারচেয়ে বরং তুমি গিয়ে উঠতে বলো।”

“তুই গিয়ে বল আম্মু ডাকতে বলেছে তাই,ডাকছি।আমার কথা বললে কিছু বলবে না।”

জারা হাত ধুয়ে নিয়ে ওড়নার আঁচল দিয়ে মুছতে মুছতে রুমে গিয়ে দেখে,জেরিন ঘুমের মধ্যে কিসব বলছে আর মুচকে মুচকে হাসছে। জারা জেরিনের পাশে গিয়ে বসে মৃদু আওয়াজে ডাকতে থাকে,,”এই আপু উঠো।কিসব বিড়বিড় করে বলছো হ্যা।”

জেরিন নড়াচড়া করে একপাশ থেকে অন্য পাশ ফিরে ঘুমাতেই থাকে।আর ঠোঁট নড়াতেই থাকে।সেই সময় জারা হালকা করে জেরিনের পিঠের উপর থাপ্পড় দিয়ে বলে,,”এই আপু তখন থেকে কি এতো বিড়বিড় করছিস হ্যা?”

আচমকা জেরিন ঘুমের মধ্যে ধড়ফড়িয়ে উঠে চোখের পাতা টেনে তুলে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে নিয়ে বলে,,”আমি কোথায়।”

জারা অবাক হয়ে বলে,,”লে বাবা!আপু তোর স্মৃতি শক্তি হারিয়ে গেলো না তো।শুনেছি মানুষের মাথায় আঘাত পেলে স্মৃতি শক্তি লোপ পায়।আমি তো তোকে জাগানোর জন্য হালকা করে তোর পিঠে থাপ্পড় দিয়েছি মাথায় তো না।তারপরেও তোর স্মৃতি শক্তি হারিয়ে গেলো কিভাবে?”

“ধ্যাত ভালো লাগে না। মাত্রই স্বপ্ন টা দেখছিলাম আর ওমনি দিলি সব নষ্ট করে।যেই স্বপ্নের মধ্যে আমার রাজকুমার এর দর্শন পেতে যাচ্ছিলাম আর ওমনি সব স্পয়েল করে দিলি।”

জারা কপাল কুঁচকে ঠোঁট উল্টে বলে,,”রাজকুমার ”

জেরিন লাজুক হেসে বলে,,”হ্যা রে রাজকুমার আমাকে নিতে আসছিলো”

“এসব স্বপ্ন দেখা বাদ দিয়ে এখন উঠে কাজ কর। আম্মু ডাকছে তোকে।ও হ্যা আর একটা কথা রাজকুমার তো দূর কোনো রিকশাওয়ালা মামাও আসবে না তোকে বিয়ে করতে ।শেষের কথাটা খুব আস্তে বলায় জেরিনের কান পর্যন্ত পৌছায় না কথাটা”

জেরিন বিছানা থেকে নামতে নামতে বলে,,”ওহ্ খোদা তুমি কেনো আমাকে এই পরিবারে পাঠালে।জীবনটাই প্যারাময় হয়ে যাচ্ছে।”

জারা ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে,, ওহ্ খোদা ওনার তো রানি এলিজাবেথের ঘরে জন্মানোর কথা ছিলো।উনি থাকবেন রাজদরবারে ভুল করে এখানে ল্যান্ড করে ফেলেছেন প্রিন্সেস জেরিন।”

ব্রহ্মপুত্র নদের পাশেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষেই বোটানিক্যাল গার্ডেন। সুলতানা রাজিয়া হলের খুব কাছেই বোটানিক্যাল গার্ডেন হওয়ায় মাঝে মাঝেই বিকেলে রোজ আর তাসনিম বিকেলে ঘুরতে আসে।বিকেল হলেই স্টুডেন্টরা ছাড়াও শত শত মানুষ ভিড় জমায় জায়গাটিতে। পাথর দিয়ে পাড় বাধা।অনেক কাপল এর দেখা মেলে জায়গাটিতে। নিরিবিলি একটা ফাঁকা যায়গা দেখে পাথরের উপর রোজ আর তাসনিম বসে পড়ে।হাওয়াই মিঠাই খেতে খেতে রোজ বলে,,
“তুই কালকে বাড়িতে যাবি। একা একা আমার তো ভালো লাগবে না। তাই ভাবছি কালকে আমিও বাড়ি যাবো।এমনিতেও অনেক দিন বাড়িতে যাওয়া হয়না”

তাসনিম ঠোঁট প্রসারিত করে বলে,,”ভালো কথা। কিছুক্ষণ থেমে আবার বলে,, আমার ডিজিস এর একটা নোট লাগবে।তোর কাছে তো নেই জারিফ এর কাছে ফোন করে দেখি।ওর কাছে থাকবে তো নিশ্চয়।”

তাসনিম জারিফের কাছে ফোন করে।ফোন রিসিভ করতেই তাসনিম নোটস টা আনতে বলে।

জারিফ বলে,,”এখন লাগবে কালকে ভার্সিটিতে নিয়ে আসবো।”
” কালকে আমি বাড়ি যাবো।আর বাড়ি থেকে এক সপ্তাহের আগে আসা হবে না মে বি।”
“ওকে আমি আসছি।”

ফোনে কথা বলার প্রায় আধাঘণ্টা পর জারিফ আর রোহান গিয়ে দেখে।রোজ তাসনিম আর রুপক বসে বসে গল্প করছে।ওরা দুইজন গিয়ে এক পাশে বসে পড়ে।নোট টা জারিফ তাসনিমের দিকে বাড়িয়ে দেয়।
তাসনিম নোট টা নিয়ে স্মিত হেসে বলে,,”থ্যাংকস”

লিয়া ওর রুমে বসে ফোন স্ক্রল করছিলো।সেই সময় রাজিয়া সুলতানা এসে লিয়াকে বলে,,”লিয়া রাতেই ব্যাগ গুছিয়ে রেখে দিস কেমন।কাল সকাল সকাল তো আমরা যাচ্ছি।”

লিয়া দুই কথায় বলে,,”ঠিক আছে।”

রাজিয়া সুলতানা চলে যেতে নিয়ে আবার ঘাড় ফিরিয়ে ঠোঁট প্রসারিত করে শুধায়,,”জারিফ কে বলে দিয়েছিস তো যে সামনের তিনদিন না আসতে।”

লিয়া জিহ্বায় কামুড় দিয়ে বলে,,”ওহ্ হো ভুলেই তো গিয়েছিলাম।স্যার কে তো বলা হয়নি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে আমি রাতে ফোন করে বলে দিবো।”

লিয়া উৎসুকভাবে চঞ্চল গলায় বলে,,”আম্মু আমিই ফোন করে বলে দিচ্ছি।”

রাজিয়া সুলতানা কপাল কুঁচকে লিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,”তোর কাছে জারিফের নাম্বার আছে ?”

লিয়া জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলে,,”নাহ্। তোমার মোবাইলে আছে তো।তোমার ফোন দিয়েই কল দিবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

রাজিয়া সুলতানা চলে যেতেই লিয়া দ্রুত ওর আম্মুর রুমে গিয়ে রাজিয়া সুলতানার ফোন নিয়ে জারিফের নম্বর টা খুঁজে বের করে। ইংরেজি ফন্টে জারিফ দিয়ে সেভ করা।লিয়া নম্বর টা ওর ফোনে সাথে সাথে সেভ করে নেয়।আর ভাবে ভুল থেকে ভালো কিছু হলে তবে ভুলই ভালো।এখন থেকে তাহলে জেনে শুনে ভুল করবো ভালো কিছু পাওয়ার জন্য।এই যে বিকেলে পড়ানোর সময় যদি স্যারকে মনে করে বলে দিতাম।স্যার আমরা বাড়ি যাচ্ছি তাই আগামী তিন দিন আসবেন না।তাহলে কি এই সময় হুট করে স্যারের সাথে কথা বলার সুযোগ টা মিলতো?না কখনোই এই সুযোগ টা পেতাম না,তারচেয়ে বড় ব্যাপার হলো স্যারের কন্টাক্ট নম্বর টা তো ইজিলি পেয়েছি।

লিয়া ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে কল করে,,ফোন রিসিভ করতেই লিয়া নরম কন্ঠে সালাম দেয়।জারিফ সালাম দিয়ে বলে,,
“কে বলছেন?”
“স্যার আমি লিয়া বলছি।”

লিয়ার ফোন পেয়ে জারিফ অবাক হয় সাথে বিরক্ত হয়। লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে জারিফ বলে,,”হ্যা বলো।”
“স্যার আমরা কালকে আমাদের দাদু বাড়িতে যাচ্ছি।তাই আগামী তিন দিন বাসায় থাকবো না।”
“ওকে ঠিক আছে।”
“আম্মুর ফোন থেকে আপনার নম্বর টা নিয়ে আমার ফোন দিয়ে কল দিলাম।”

জারিফ মনে মনে বলে,,”আমি বোধহয় শুনতে চেয়েছি এটা কার নম্বর।একটা কথা বলার জন্য ফোন দিয়ে সাথে আজগুবি হাজার টা কথা জুড়ে দেওয়ার ব্যাড হেবিট এই মেয়ের।তারপর জারিফ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জবাব দেয়,,”আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই।”

“স্যার আপনাকে খুব মিস করবো।”
“হোয়াট?”
লিয়া জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে জড়তা নিয়ে বলে,,”ই ইয়ে আসলে আপনার পড়ানো টা কে।আপনি কত সুন্দর করে জটিল জটিল বিষয় একদম ইজি করে বুঝিয়ে দেন সেইটা বলছি আরকি।”

“আমি রাখছি এখন বলে জারিফ ফোন কে’টে দেয়।”

চারজোড়া চোখ জারিফ এর দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রয়।এরমধ্যে রোহান ফিচেল হেসে বলে,,”হালকা ভয়েজ কানে আসলো মেয়েলি ভয়েজ মনে হলো দোস্ত গার্লফ্রেন্ড নাকি?তলে তলে টেম্পু চালাও আর আমাদের কে বলোনি।এটা কিন্তু ঠিক না।ভেরি ব্যাড।তোরা সবাই কি বলিস?”

তাসনিম বাদে রোজ আর রুপক বলে,,”একদম ঠিক বলেছিস।”

বন্ধুদের কথা শুনে আর মুখ অবয়ব দেখে জারিফের মনে হচ্ছে,কোনো বিশেষ কিছু গোপন করে মস্ত বড় অন্যায় করে ফেলেছে সে।আর এই গুরুতর অন্যায়ের শাস্তি যেনো কারাবাস।অথচ সত্যিটা হলো বন্ধুদের অনুমান সবটাই ভুল।বা কথায় আছে না,খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ না থাকলে, নিজের খেয়ে পড়ে বনের মোষ তাড়ানো কিছু মানুষের স্বভাব।জারিফের বন্ধুদের অবস্থা হলো সেই রকম।যেখানে জারিফের মন মস্তিষ্ক এসব কখনো কল্পনাও করে না।সেখানে বন্ধুরা নিছক একটা ফোন কল নিয়ে কত কি ভেবে বসেছে।

তাসনিম এর মনের ভেতর কালবৈশাখীর ঝড় শুরু হয়।ভাবতে থাকে ওদের কথাই কি ঠিক।ফোনের ওপাশের মেয়েটা কি সত্যিই জারিফের গার্লফ্রেন্ড?আর যদি গার্লফ্রেন্ড হয়েই থাকে তাহলে আমার মনে এতো কষ্ট অনুভব হচ্ছে কেনো?

রুপক ব্যাকা হেসে মাথা চুলকিয়ে বলে,,”দোস্ত ভাবির বাড়ি কই?আমাদের ভার্সিটির জুনিয়র কোনো স্টুডেন্ট না বাইরের?”

জারিফের নিজের উপর খুব রাগ লাগছে। বন্ধু জুটিয়েছি কয়েকটা সব কয়টা এক ধাপ এগিয়ে বোঝে।সরি একধাপ বললে ভুল হবে এর থেকেও বেশি ধাপ এগিয়ে চলে।ফট করে একটা মেয়েকে কিনা ভাবি বলে ফেললো।আগে সবটা শুনবে তারপর না হয় বাছ বিচার করে বলে তা না করে।এসব ভেবে জারিফ গাল ফুলিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে রাগান্বিত স্বরে বলে,,”থামবি তোরা।না জেনে কি যা’তা বলছিস।আমার একটা স্টুডেন্ট ফোন করেছিলো।”

জারিফের কথা শুনে তাসনিম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।আর বন্ধুদের উপর বিরক্ত হয়।সব সময় না জেনে শুনেই যা মনে হয়,তাই বলে ফেলে।রোজ গমগমে কন্ঠে বলে,,
“তা না হয় বুঝলাম ছাত্রী ফোন দিয়েছিলো। কিন্তু কিজন্য ফোন দিয়েছিলো?”

“বুঝলাম না সবাই দেখছি একসাথে বাড়ি যাচ্ছে,স্ট্রেইন্জ।জারিফ বলে”

তাসনিম বলে,,”সবাই আবার কে যাচ্ছে?আমি আর রোজ আর কে?রোহান রুপক তো থাকছেই।”

“ওদের কথা বলছি না।আমার ছাত্রী ফোন করে বললো।ওরা নাকি কালকে বাড়ি যাবে।আবার তুইও বলছিস কালকে যাবি সেইজন্য কথাটা বললাম আরকি।”

পরের দিন,,,,

সুলতানা রাজিয়া হলের সামনে লিয়ার বাবার পাজেরো গাড়িটা দাড় করানো। সামনের সিটে রাহবার বসেছে লিয়া,তুলি,রাজিয়া সুলতানা,পিছনে বসেছে।রাহবার ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে বলে,,”আম্মু হলের নামটা তো ঠিক তোমার নামের উল্টো।”

রাহবারের কথা শুনে লিয়া হেসে ফেলে।তুলি রাহবার কে উদ্দেশ্য করে বলে,,” মানে”

রাহবার বলে,,”আরে আপু বুঝতে পারোনি আমি কি বললাম।হলের নামটা ভালো করে লক্ষ্য করো তাহলে বুঝতে পারবে।”

তুলি বড়বড় অক্ষরে সুলতানা রাজিয়া হল লেখা দেখে পরে বুঝতে পারে।ওর মেঝো চাচির নাম রাজিয়া সুলতানা আর হলের নাম সুলতানা রাজিয়া।মানে দাঁড়ালো আগ পিছ করা।লিয়া ফোন নিয়ে টাইম দেখে বলে,,”এই ফাইভ মিনিটস হয়ে গেলো আমরা আপুর জন্য ওয়েট করছি।আপুর আসতে লেইট হচ্ছে কেনো?”

হঠাৎ গাড়ির জানালা দিয়ে লিয়া মাথা বের করে তাকিয়ে দেখে,, মিষ্টি কালারের থ্রি পিস পড়া এক হাতে ব্যাগ নিয়ে জোড়ে পায়ে হেঁটে গাড়ির দিকে তাসনিম আসছে। তাসনিম গাড়ির কাছে আসতেই।ড্রাইভার গাড়ির ডোর খুলে দেয়। তাসনিম ভেতরে গিয়ে বসে বলে,,”সরি ওয়েট করানোর জন্য।আর মেজো চাচিমা কেমন আছো?”
রাজিয়া সুলতানা সৌজন্যমূলক হেসে বলেন,,”ব্যাপার না।আর ভালো আছি।”

লিয়া ঠোঁট প্রসারিত করে বলে,,”আপু তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।তুমি না আগের থেকেও বেশি সুন্দরী হয়েছো। দেখছি অনেকটা স্লিম হয়েছো।হলের খাবার টা তেমন খেতে পারো না না-কি?”

তাসনিম সিটে বসে সিটের হেডে মাথা রেখে মৃদু আওয়াজে বলে,,
“আমি তো হলের খাবার খাই না।আমরা মেস করে খাই।”

লিয়া উৎসুক ভাবে বলে,,”তুমি কি বাজার করো?”
“হ্যা করতে হয় তো।”
“বেশ ভালই তো।””

শহরের পিচ ঢালা রাস্তা দিয়ে শা শা শব্দে গাড়ি ছুটে চলেছে। সূর্য মামা তার তেজ ঢেলে দিচ্ছে, রোদের আলো উপচে পড়ছে পিচের উপর। রাস্তার দুপাশ দিয়ে স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা তাদের শিক্ষাঙ্গনে যাচ্ছে ব্যাস্ত পায়ে হেঁটে।

তাসনিম ঠোঁট প্রসারিত করে বলে,,”আচ্ছা দাদিমনি ছোট চাচ্চুর সাথে না গিয়ে আমাদের সাথেও তো যেতে পারতো?”

রাজিয়া সুলতানা বলেন,,”তোমার দাদিমনিকে বলেছিলাম যে আমাদের সাথেই না-হয় যাবেন। কিন্তু শুনলো না।চেনোই তো তোমাদের দাদিকে ওনার একবার যেটা মন চায় তাই করেন ।অন্যদের হাজার বলাতেও ওনার কথার নড়চড় করেন না।সেদিন মঈনুল এর সাথেই বাড়ি চলে গেলেন”

লিয়া আফসোসের সুরে বলে,,”ইস ভুল হয়েছে।এবার সবাই একসাথে বাড়ি যাচ্ছি গাড়িতে না গিয়ে ট্রেনে গেলে অনেক মজা হতো।”

তাসনিম লিয়ার কথার সাথে সহমত পোষণ করে বলে,,”একদম ঠিক বলেছিস।”
সারা রাস্তা তুলি আর লিয়া এটা সেটা বলায় ব্যস্ত ছিলো। তাসনিম মন দিয়ে ওদের কথা শুনছিলো আর মাঝে মাঝে তাল মিলিয়ে কিছু বলছিলো।লিয়া এক্সাইটেড হয়ে বলে,,
” আপু অনেক কথা জমিয়ে রেখেছিলাম তোমার সাথে দেখা হলে বলবো ভেবে। এখন নিজেকে অনেকটা হালকা মনে হচ্ছে।আর বাকি গল্প গুলো রাতে করবো।”

লিয়ার কথা শুনে তাসনিমের নিটোল কপাল খানিকটা
কুঞ্চিত হয় তারপরেও স্মিত হেসে বলে ,,”আরো বাকি আছে বোন। আচ্ছা ঠিক আছে সারারাত না ঘুমিয়ে তিনবোন মিলে রাত জেগে গল্প করে কাটিয়ে দেবো কেমন…

[চলবে…ইন শা আল্লাহ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here